নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃমেঘের আড়াল

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৪১


ছেলেটার সেই ছেলেবেলা থেকে ইচ্ছে বড় হবে, শরীরে বড়, অবয়বে বড়, আশেপাশের মানুষ গুলোর ভাবনায় বড়। বড় হওয়া হয় না। বড় হয় না। যখন স্কুলে পড়ে সাইফের নামে আরেকটা ছেলে ছিল। সেই সাইফকে ডাকত সবাই 'দামড়া সাইফ' আর ওকে ডাকত 'ন্যাটা সাইফ।' সাইফ ভাবত অন্তত দামড়া ডাকলেও ভাল লাগত, ন্যাটা বলার কারণ, দেখতে শুনতে ছোটখাটো তাই। ক্লাস সেভেনের আগে মা সাইফকে একা বাজারে পাঠাতে ভয় পেতেন, পাছে আদরের ছেলে হারিয়ে যায়, ভিড়ের মাঝে মিলিয়ে যায়। প্রথম বার বাজার থেকে আনা জিনিসের তালিকাটা ছিল অতি ছোট। মোটে এক প্যাকেট 'মোল্লা সল্ট', তাও বাকীতে। নিয়মিত যে দোকান থেকে বাকী নেয় সাইফরা সে দোকান থেকে। বাকীতে কেনা তাই দামাদামির সুযোগ পায় নি। সুযোগ পেলে বুঝিয়ে দিত সাইফ আসলেই বড় হয়ে গিয়েছে। এরপর মাঝে মাঝে মা বাজারে পাঠাতেন, পাঠাবার আগে খুব করে বলে দিতেন, 'দেখে শুনে ফিরে আসিস।' পকেটে পুরে দিতেন পাশের বাসার টেলিফোন নাম্বারটা। যদি পথ হারিয়ে যায়, কোন দোকান থেকে যেন ফোন করে বলতে পারে। সাইফের এসব ভাল লাগত না। মাকে একটু ধমকের সুরে বলত, আমি বড় হইছি না?
মা হাসতেন। কোন উত্তর দিতেন না। স্কুলে যাবার আগে সাইফ প্রতিদিন পাঁচ টাকা করে পেত। সে টাকা খরচ করত না। জমিয়ে রাখত ব্যাগের ভিতরের গোপন পকেটে। বাজারে যাবার আগে সেখান থেকে কিছু টাকা নিয়ে যেত। মা বেশীর ভাগ দিন ছোট চিংড়ি আনতে দিতেন। নানা রকম নিরামিষ তরকারিতে আমিষের স্বাদ আনার জন্য। তখন চিংড়ির এক ভাগা বিক্রি হত দশ টাকায়। সাইফ নিজের পকেট থেকে দশ টাকা মিলিয়ে ত্রিশ টাকা দিয়ে তিন ভাগা চিংড়ি এনে মাকে বলত, মা, তিন ভাগা বিশ টাকায় নিয়ে আসলাম।
মা খুশি হতেন। বাবা যে কাজ পারেন না, সাইফ তা পারে। নিজেকে বড় মনে হত সে সময়টায়। বাবা কাজে ব্যস্ত থাকলে তবেই বাজারে যাবার সুযোগ মিলত সাইফের। এই সুযোগটা প্রায়ই খুঁজত সাইফ। ছোট তালিকার বাজার দেখেও মা বলতেন, বাহ, আমার ছেলেটা কত ভাল বাজার করে।
সাইফ কোথাও প্রথম হয় নি, শুধু স্কুলে এসেম্বলিতে লাইনের প্রথমে দাঁড়ানো ছাড়া। সাইফ যতই পিছনে দাঁড়াতে চাইত, ওর চেয়ে বিশাল দেহের ছেলেরা এসে ধাক্কা দিয়ে সামনে পাঠিয়ে দিত সাইফকে। এই প্রথম কখনই হতে চায় নি সাইফ। স্কুলের বার্ষিক ক্রিয়া প্রতিযোগিতায় কোন খেলায় টিকত না। বাছাই পর্বেই বাদ। তবুও আগ্রহ নিয়ে অংশগ্রহণ করত।
নবম শ্রেণিতে ক্লাসে এক নতুন মেয়ে এসে ভর্তি হল। নাম সীমা। নতুন মেয়ে স্কুলে ভর্তি হলে তার প্রতি আগ্রহ পুরো স্কুলের থাকেই, সুন্দরী হলে সে আগ্রহ বেড়ে যায় আরও। সাইফেরও ভাল লাগে মেয়েটাকে দেখে। বন্ধুদের ভাষায়, কোন মেয়েকে দেখে ভাল লাগা মানে সেটা ভালবাসা। আর কোন মেয়ের প্রতি ভালবাসা না আসা মানে সমস্যা আছে ছেলেটার। সে সমস্যা কী সমস্যা জানত না সাইফ। ভাল লাগে মানে এটা ভালবাসা। একদিন মাঠে টিফিন পিরিয়ডে আড্ডায় সাইফ বলেই দেয়, বন্ধু আমি বোধহয় সীমাকে ভালই বেসে ফেললাম।
তা নিয়ে তৎক্ষণাৎ হাসির রোল বয়ে যায়। ক্লাসে, স্কুলে ছড়িয়ে পড়ে কথাটা, সীমাকে ভালবাসে সাইফ। এ খবর সীমা পর্যন্ত যায়। ক্লাস টেনের এক ছেলে এসে সাইফকে শাসিয়ে যায়, ঐ নিজের দিকে তাকিয়েছিস? পড়ে তো থাকবি সীমার হাঁটুর কাছে, আবার ভালবাসা?
খবরটা চলে যায় স্কুলের শিক্ষক অবদি। শিক্ষকদের কাছে অন্য রকম করে কথাটা যায়, সীমাকে নাকি সাইফ ভালবাসার কথা লিখে চিঠি দিয়েছে।
সাইফকে ডেকে পাঠানো হল। শিক্ষকরা সাইফকে সামনে বসিয়ে আলোচনা শুরু করেন, পিচ্চি পিচ্চি ছেলে পেলে কীসব প্রেম ভালবাসা করে। আমরা কি এই বয়সে এসবের কিছু বুঝতাম?
সাইফকে জানানো হয়, এই বিষয় খুব গুরুতর। অভিভাবক ছাড়া এসব নিষ্পত্তি করা যাবে না। সাইফ অনেক করে পায়ে ধরে শিক্ষকদের সে বারের মত পার পেয়ে যায়। বাকী দুটি বছর কখনও সীমার সাথে কথা বলা তো দূরে থাক, ভাল করে তাকায়ও নি।
কলেজ জীবনে পা দেবার পরও সাইফের শিক্ষা সফরে যাবার ব্যাপারে ছিল নিষেধাজ্ঞা। বাবার এক কথা, ভার্সিটিতে উঠলে যাবি। এখন ছোট তুই।
বাবার কথার উপর কথা বলার সাহস ছিল না সাইফের। শিক্ষকরা যখন জানতে চাইত, যাবে না কেন তুমি?
সাইফ ক্লাসের মধ্যে বলে দিত, স্যার আমি বাসে বমি করি।
তা নিয়ে ক্লাসের সবাই হাসত, ন্যাটা সাইফকে সবাই ক্ষেপাত।
সন্ধ্যার পর বন্ধুরা সব বাহিরে বসে এলাকায় আড্ডা দেয়। সাইফের মাগরিবের আজানের সাথে সাথে ঘরে আসতে হয়। এমনকি ঈদের দিনেও সন্ধ্যার পর একটু আড্ডা দিতে পারত না সাইফ। মায়ের ডাকাডাকি, বাবার বকাবকি। মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত লাগত। ভাবত, কবে বড় হবে? কবে একটু স্বাধীন হবে। ইচ্ছেমত ঘুরতে পারবে, চলতে পারবে।
ভার্সিটির এডমিশনের দিন গুলোতেও বিরক্তি ছিল। সাইফ চাইত বন্ধুদের সাথে একা একা একটু বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা দিতে যাবে। বাকী সব বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেরাবে। সে সুযোগটাও হত না। বাবা সব জায়গায় সাথে সাথে যেতেন। গুটিসুটি মেরে বাবার পাশে বসে থাকত হত। বাবা বলতেন, এটা এই জায়গা, এখানে এই হয়েছে, ঐ হয়েছে। সাইফ সেসব বিরক্তি নিয়ে শুনত। বাবাকে একবার সাহস করে বলেই দিল, বাবা তোমার শরীর অত ভাল না। রাজশাহী আমি একাই যাই? আরিফ, মনির ওরা সবাই যাবে। ওরা একাই যাবে। ওদের সাথে যাই?
- বেশি বুঝবে না। তুমি ওখানকার কিছুই চিনো না।
সাইফ চুপ মেরে যায়। বড় হতে পারে না। ভার্সিটিতে ভর্তির পর ভেবে নেয় সাইফ, এবার নিশ্চিত স্বাধীনতা। হলে থাকবে, ইচ্ছে মত ঘুরে বেরাবে, বাবা মায়ের শাসন নেই। হলে ওঠার দিন সাইফ একাই চলে আসতে চেয়েছিল। তবুও বাবা সাথে সাথে আসলেন। নিজে সব ব্যাগ, ল্যাগেজ নিলেন। সাইফকে কিছুই নিতে দিলেন না। সাইফের মনে এ নিয়েও বিরক্তি। এতো বড় হয়েছে সাইফ, তবুও বাবার কেন টানতে হবে জিনিস গুলো? হলে এসে বাবা বিছানা গুছিয়ে দেন। আশেপাশের ছেলেদের বলে যান, বাবারা আমার ছেলেটাকে দেখে রেখো। ও কখনও বাহিরে থাকে নি। কিছুই বুঝে না বাহিরের। অনেক বোকাসোকা ছেলে আমার।
সে কথা শুনে সাইফের খুব লজ্জা লাগে, অপমানবোধ হয়। বাবা প্রথম দিন সাইফের রুমেই থেকে যান। বাবাকে বলতেও পারছিল না, বাবা তুমি বাসায় চলে যাও।
সবার সাথে ঠাট্টা আড্ডা এসবেও যোগ দিতে পারছিল না।
বাবা চলে যাবার পরের দিন গুলো বেশ শান্তিতেই কাটছিল। অন্য রকম স্বাধীনতা। ইচ্ছে মতন যা ইচ্ছা করা। সে স্বাধীনতাও মায়ের ফোন কলে ক্ষুণ্ণ হত। সন্ধ্যার পর কমপক্ষে তিন বার কল দিতেন। "কী করিস? খেয়েছিস? খারাপ লাগছে? মশারী টাঙিয়েছিস? রাতে বাহিরে যাবি না। হলে কোন সমস্যা আছে?" এটা ওটা নানা কথা। না চাইলেও হলের মধ্যেই ঘাপটি মেরে বসে থাকত। সপ্তাহ না পেরুতেই বাবা এসে হাজির হতেন। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন গুলোতে বাসায় কাটাবে সাইফ, তাই নিয়ে যেতে। ঢাকা থেকে মাত্র ৮০ টাকা বাস ভাড়া, তিন চার ঘণ্টার পথ। বাবা হুট করেই চলে আসতে পারতেন। সাইফের বাধ্য ছেলের মত সাথেই যেতে হত। বাবা সেদিন এসে পাশের বেডের নিচে সিগারেটের ফিল্টার দেখে, ঐ বেডের ছেলেটাকে নানা কথা শুনিয়ে দিলেন। সিগারেট খেলে আশেপাশের মানুষের ক্ষতি। এই সেই নানা কথা। সাইফের তা ভাল লাগে না। হলে কে সিগারেট খেলো, কে খেলো না, সেটা তো তারই ব্যাপার। বাবার কেন বলতে হবে?
এই ব্যাপার নিয়ে সাইফের অগোচরে হাসাহাসি হত। সাইফের বাবাকে নিয়ে নানা কথা বলত। সাইফ বাবাকে বলতে পারত না, বাবা তুমি আর এসো না। বলা যায় না।
হলে থাকার এক মাসের মাথায় সাইফ জণ্ডিস বাধিয়ে ফেলল। মারাত্মক মাত্রার জণ্ডিস। বাবা সাফ জানিয়ে দিলেন, হলে থাকা আর চলবে না। দরকার হলে বাসা থেকে ক্লাস করবে।
বাসায় থেকে বিশ্রাম নিয়ে ঠিক হবার পর বাবা জানালেন, ঢাকায় বাবার এক খালাতো ভাইয়ের বাসা আছে। সেখান থেকেই ক্লাস করবে সাইফ। বাবা সব ব্যবস্থা করেছেন। সাইফ চাচ্ছিল না হলে থাকার স্বাধীনতাটুকু হারাতে। তবু হারাতেই হল।
ক্লাস করত সাইফ দুঃসম্পর্কের চাচার বাসায় থেকেই। এতো দূরের সম্পর্কের হয়েও, তাদের আচরণে বিরক্তির কোন ছাপ ছিল না। বরং নিজের ছেলের মতই যত্ন-আর্তি করত চাচা চাচী। সময় পেলে তাদের ইন্টার পড়ুয়া মেয়ে চৈতিকে পড়াশুনা দেখিয়ে দিত সাইফ। মাঝে মাঝে সাইফের চৈতিকে দেখে বেশ খারাপই লাগত। মাত্র কলেজে পড়ে অথচ কত কিছু করতে পারে। কত স্বাধীন। ইচ্ছা মত বন্ধু নিয়ে ঘুরে বেরায়, বন্ধু বান্ধবীরা বাসায় আসে, বাসায় বসেই আড্ডা দেয়, হই হুল্লোড় করে, পার্কে বেরাতে যায়, শিক্ষা সফরেও বাসা থেকে বাঁধা নেই।
একদিন চৈতি সাইফকে জিজ্ঞেস করে, ভাইয়া আপনি যদি সুযোগ পান যে আপনি যা চাইবেন, তাই পাবেন। তাহলে আপনি কি চাইবেন?
- বড় হতে চাইব।
উত্তর শুনে চৈতি হেসে কুটিকুটি। ঠাট্টার ছলেই চৈতি বলে, ভাইয়া আপনি আর লম্বা হবেন না। এই পর্যন্তই।
সাইফ বুঝতে পারে ও যা বুঝাতে চেয়েছে চৈতি তা বুঝেনি। তাই আর কথাও বাড়ায় নি সাইফ।
ভার্সিটির একটা মেয়ের সাথে সাইফের ভাল বন্ধুত্ব হয়। নাম নীলা। বন্ধুত্ব একটা পর্যায়ে, কীভাবে কীভাবে যেন ভালবাসা হয়ে যায়। সাইফের দিন গুলো খুব রঙিন লাগে। এ নতুন ভালোলাগা গুলো আরও আগে পাওয়া দরকার ছিল ভেবে ভেবে দিন কাটে। সম্পর্ক গড়িয়ে যায় অনেকটা দূর। ভালবাসার গভীরতা বাড়ে অনেক খানি। বৃষ্টির দিনে একই ছাতার নিচে হাত ধরে হাঁটার সময় রাস্তায় জমে থাকা পানির দিকে তাকিয়ে সাইফ ভাবে, এই জমে থাকা পানির মত এতো কম নয় গভীরতা ভালবাসার। বেশী, অনেক বেশী আরও। অন্য সবার মত হুট করে ভেঙে যাবার মত ভালবাসা নয়, সারাজীবন পাশে থাকার মত, একসাথে চলার মত ভালবাসা।
কিন্তু হুট করেই কী যেন হয়ে গেল। মুখ গোমড়া করে একদিন নীলা সামনে এসে বলে, সাইফ আমার বিয়ের জন্য বাবা পাত্র ঠিক করেছেন। কী করব বুঝতে পারছি না। ছেলের বিশাল বড় ব্যবসা। খুব নাকি ভাল পাত্র। পাত্রকে বাবা মার পছন্দ হয়েছে খুব। পাত্ররও আমাকে। বিয়ে আটকাবো কীভাবে জানি না আমি।
সাইফ হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। কী উত্তর দেয়া উচিৎ বুঝতে পারে না। পড়াশুনা শেষ হতে আরও বছর দুয়েক বাকী। এমন অবস্থায় সাইফের কথা বাসায় বলতেও পারবে না নীলা। সাইফও গিয়ে বলতে পারবে না, আপনার মেয়েকে আমি বিয়ে করব।
অনেকক্ষণ নীরবতা আর কয়েকটা কথায় কিছুই সমাধান হয় না। নীলা শেষমেশ সাইফকে বলে, তুমি আর একটু বড় হলে না কেন? অন্তত তোমার পড়ালেখাটা শেষ হত। তোমাকে এখনও দেখতে বাচ্চা বাচ্চাই লাগে।
সাইফ চুপ করে নীলার ধরা থাকা হাতটা ছেড়ে দেয়। কোন উত্তর দেয় না। নিঃশব্দে নীলাও উঠে চলে যায়। অনেক গভীর ভালবাসাটাও এক নিমিষে শুকিয়ে যায়। কোথায় যেন বাষ্প হয়ে উড়ে যায়।
নীলার বিয়ে হয়ে যায় কয়েকদিন বাদেই। নীলাকে প্রতিদিন ওর স্বামী এসে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে যায় প্রাইভেট কার করে। শুকনো খোসার বাদাম চিবুতে চিবুতে তাই দেখে সাইফ। বুকের ভিতর কেমন যেন করে, খুব সূক্ষ্ম একটা ব্যথা, হয়ত সাইফের দিকে তাকালে নীলারও অমন হয়। দুজনে তবু পারতপক্ষে মুখোমুখি হয় না। কথা বলে না।
সাইফের বড় হওয়া হয় না। সাইফ এখনও বড় হতে চায়। আশেপাশের সবার কাছে বড়। বর্ষা পুরোদমে ঝেঁকে বসেছে। সারাদিন টুপটাপ বিরামহীন বৃষ্টি। জানালা মেলে নিষ্প্রাণ শহরে প্রাণ খুঁজে সাইফ বৃষ্টির ফোঁটা গুলোর সাথে। প্রাণ নেই কোন। কেমন যেন সব মেকী লাগে।
সেই সন্ধ্যাতেই সাইফের বাসায় যেতে হয়। সাথে করে যায় ঢাকার সেই চাচা, চাচী আর চৈতি। বাসায় গিয়ে বুঝতে পারে, সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠেনি সাইফ। দেরী হয়েই গেল। বাবার নিষ্প্রাণ দেহটা বিছানার উপর পড়ে আছে। প্রচণ্ড বুকে ব্যথা শুরু হয় বাবার হঠাৎ করেই। বুকে হাত দিয়ে বসে পড়েন বিছানায়। কাতরাতে কাতরাতে এলিয়ে পড়ে শরীরটা। জ্ঞান হারান বাবা। সে জ্ঞান আর ফেরেনি। আর ফিরবেও না কখনও। হাসপাতালে যাবার পর বলে দেয়, সাইফের বাবার দেহে আর প্রাণ নেই।
সাইফ কিছুক্ষণ নির্বিকার চোখে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বাবার নিথর দেহটার দিকে। এরপর হাউমাউ কান্না জুড়ে ধপ বসে পড়ে বাবার শরীরটা ধরে ধাক্কা দেয় সাইফ।
"বাবা, ও বাবা, ওঠো না বাবা। তোমার ছেলেটা বাসায় আসছে তো। একটু খোঁজ খবরও নিবে না? ও বাবা, তোমার বোকাসোকা ছেলেটাকে বোকা রেখেই চলে গেলে তুমি। চালাক করবে কে? তোমার ছেলেটা এই পৃথিবীর কিছুই চিনে না। ও বাবা, আমি একা কোথাও যেতে পারব না। আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাও। ও বাবা...।"
চিৎকার করে কাঁদে সাইফ। সে কান্নার শব্দে থমথমে পরিবেশটা আরও ভারী হয়ে আসে। মা একপাশে নিশ্চুপ বসে আছেন। পাথর হয়ে আছেন যেন। সাইফের মাথাটা ভন ভন করে ঘুরছে। চোখ ঘোলা হয়ে আসছে। দৃষ্টি বোধ হয় লোপ পাচ্ছে আস্তে আস্তে। কেউ একজন সাইফকে ধরে টেনে তুলছে। আর বলছে, বাবা এভাবে কাঁদে না। তুমি বড় হইছ। এভাবে কাঁদা মানায় না। অনেক কিছুর দায়িত্ব এখন তোমার।
সাইফের কানে কথা গুলো বিষ হয়ে বিঁধছে। সাইফ বড় হয়েছে এই কথাটা। সাইফ বড় হতে চায় না। একদম না। বাবার হাত ধরে হাঁটতে চায় আবার। বাবাকে হারিয়ে বড় হতে কখনই চায় নি সাইফ।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের আঁধার গাঢ় হচ্ছে আরও। আকাশের চাঁদটা মেঘের আড়ালে ঢেকে গেছে। টুপটাপ বৃষ্টিতে চারপাশ ভিজছে। মেঘ সরিয়ে বৃষ্টি দেখতে পাচ্ছে না চাঁদটা। সরু চাঁদ কিংবা জ্যোৎস্নার বড় চাঁদটা।

- রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:১২

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: বেশ রাশভারী গল্প ।

লেখা এবং কমন প্লট হলেও দুটোই চমৎকার । ভাল লেগেছে ।

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৮

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ। :) ভাল লাগা জানবেন।

২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৯

সাফিউল ইসলাম দিপ্ত বলেছেন: খুব সাধারনের সাধারন জীবন গাঁথাগুলো অসাধারনভাবে ফুটিয়ে তুলতে সবাই পারে না।
আপনি পেরেছেন!এগিয়ে যান।
শুভকামনা রইলো!

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৫০

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: সহজ আর সাধারণ কথাগুলো সহজ সাধারণ করে বলাটাই অনেক কিছু। সে চেষ্টাই করে যাচ্ছি ।

ধন্যবাদ :)

৩| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৩৬

ফয়সাল রকি বলেছেন: কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়।আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ।--- ব্যাপারটা এমন না আসলে.. ভাল লেগেছে লেখাটা।

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৫১

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: আমি তবু নিজেকে দ্বিতীয় দলেরই ভাবি। :)
ভাল লাগা জানবেন। :)

৪| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৪৮

রাজসোহান বলেছেন: জীবনটা আসলে থেমে থাকে। জীবন বেড়ে যাবার সাথে সাথে কমপ্লিকেটেড বিষয় বাড়তে থাকে, সেই সাথে বাড়ে হতাশা।

গল্পে প্লাস।

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৩

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: আসলে থেমে থাকে না কিছুই। নষ্ট ঘড়ির কাটা থেমে থাকলেও সময় ঠিকই চলে।

সুন্দর মন্তব্য ও গল্প পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৫| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৫৩

রাজসোহান বলেছেন: থেমে থাকে না*

ব্লগে কমেন্ট এডিট করা যায়না ফেসবুকের মত :(

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৪

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: এই সমসার সাথে আমিও পরিচিত। এই সুবিধা চালু করাটা উচিৎ।

৬| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:১২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হুম.. অনুভবের গভীরে ছুঁয়ে যাওয়া লেখা..

শেষটায় দারুন ভাবে বড় করে তুললেন!

+++

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৫

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: চাওয়া বা না চাওয়া, কিছু পাওয়া বা না পাওয়া, বড় একদিন হতে শিখেই যায় সবাই।

ধন্যবাদ। :)

৭| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:২১

আমি তুমি আমরা বলেছেন: চমৎকার গল্প। প্রতিটা ছেলেই জীবনের কোন এক পর্যায়ে বড় হতে চায়, সব বাধা বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে স্বাধীন হতে চায়। কিন্তু এভাবে যেন কারো বড় হতে না হয়।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:২২

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: এভাবে আর ওভাবে হোক, বাস্তবতায় একদিন সবারই বড় হতেই হয়।

ধন্যবাদ, :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.