নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………
পহেলা বৈশাখের পরিকল্পনা ছিল, জ্যোতি আর আমি পালিয়ে বিয়ে করে ফেলব। পরিকল্পনা গেল ভেস্তে, জ্যোতি গেল নিখোঁজ হয়ে। আমি ওর প্রেমিক, সবার আগে সন্দেহ আসলো আমার দিকে। দিন দুয়েক এদিক ওদিক পালিয়ে বেড়িয়ে, ধরা গেলাম জ্যোতির বড় ভাইয়ের হাতে। মাইক্রো করে তুলে নিয়ে এসে আমাকে আটকে রাখল ঘুপচি এক ঘরের মধ্যে। আলো নাই, বাতাস নাই, একটা টয়লেট পর্যন্ত নাই। সকালে একবার সন্ধ্যায় একবার, দুইবেলা আমাকে পিটিয়ে রেখে জ্যোতির বড় ভাই চলে যায়। আমার কাছে জানতে চায়, জ্যোতি কোথায়?
আমি বলি, জানি না।
জ্যোতির বড় ভাই জনি তা মানে না, আবার গোটা দুয়েক ঘা লাগিয়ে দেয়। কী এক বিপদ! আমার পরিকল্পনা ছিল, পহেলা বৈশাখে পালিয়ে আমরা বান্দরবান চলে যাব। আগে কেন পালাব? পালিয়ে থাকলে এখন আমাদের বান্দরবানে বসে প্রেম ভালোবাসা করার কথা। এখানে আমি কী করব?
হুট করে দৃশ্যপট গেল পাল্টে। জনি আমাকে সকালেও পিটায় না, সন্ধ্যায়ও না। সন্ধ্যার পর এসে আমার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে আমার সামনে শান্ত হয়ে বসে থাকে। আধো আলোর আবছা খেলায় আমি বুঝতে পারি, দারুণ বিধ্বস্ত জনি। আমার এখন উচিৎ, জনিকে মেরেধুরে পালিয়ে যাওয়া। আমি তা করি না। আমার শরীরে সে শক্তি অবশিষ্ট নেই। মারামারি করার মত ছেলে আমি না। আমিও চুপচাপ বসে থাকি। জনি শান্ত গলায় বলে, খারাপ খবর আছে।
আমি কিছু বলি না। চুপ করে অপেক্ষা করি, জনির কাছ থেকে খারাপ খবর শুনবার। জনি বলে যায় কাঁপা গলায়, জ্যোতির লাশ পাওয়া গিয়েছে। জ্যোতি খুন হয়েছে।
কথাটা শুনে আমার বুকের ভিতর কেমন ধ্বক করে উঠে। না চাইতেও মুখটা হাঁ হয়ে যায়। কেমন একটা অনুভূতিশূন্য ভাব হয়। আমি বুঝতে পারি না, আসলে কী ঘটছে, কী হচ্ছে। আমি আশেপাশে তাকাই। গলাটা কেমন ধরে আসে আমার। ধরে আসা গলায় আমি বলি, মানে?
- মানে জ্যোতি খুন হয়েছে। ওর লাশ পুলিশ খুঁজে পেয়েছে।
আমি মাথা চুলকে জনির দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার চারপাশটা কেমন ভনভন করে ঘুরছে। জ্যোতির সাথে আমার সম্পর্কের সময়কাল খুব বেশিদিনের না। ফেসবুকে আমি ওর ছবি দেখতাম, ভালো লাগত, ভালো লাগা জানাতাম। মাঝে মাঝে টুকটাক কথা হতো। আমার সাথে অনেক কিছু শেয়ার করত। খারাপ লাগা, মন খারাপ, বিষণ্ণতা। আমি সে সময় গুলোতে পাশে থাকতাম। আমরা বন্ধু হলাম, ভার্চুয়াল জগত থেকে বের হয়ে দেখা করলাম। একসময় ভালোবাসাও হয়ে গেল। ভালোবাসা হবার পর খেয়াল করলাম, ভীষণ একা মেয়েটা আদতে একা না। ওর অনেক বন্ধু বান্ধব। আমার তা সহ্য হয় না। জ্যোতি সবার সাথেই হেসে হেসে কথা বলে, সবাইকে অতি সহজেই আপন ভাবে। আমার ভালোবাসার মানুষ অন্য কারও সাথে এভাবে মিশবে আমার তা মেনে নেবার কথা না, মেনে নিতে পারিও না। সম্পর্কের প্রথম থেকেই আমার সাথে জ্যোতির অভিমানে, ঝগড়ায় বার কয়েক কথা বন্ধ থেকেছে। আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করেই ও অন্য ছেলেদের সাথে চুটিয়ে কথা বলত। আমাকে দিব্যি ভুলে থাকত। আমি চিৎকার করতাম, জ্যোতিকে ধমক দিয়ে কথা বলতাম এ বিষয়ে। জ্যোতি আরও রেগে যেত। আমাদের কথা বলা আবার বন্ধ হয়ে যেত। জ্যোতি বুঝতে চাইত না, ওসব করছি শুধুমাত্র ভালোবাসা থেকে। আমি জ্যোতিকে পুরোটাই নিজের করে চাইতাম। আর কিছুই না।
জনি কপালের ঘাম মুছে বলে, শামীম, আমি জানি তোমার সাথে আমি অপরাধ করেছি। এখানে আটকে রেখেছি, মেরেছি। যাই হোক পুরোটাই ভুল বোঝাবুঝি থেকে। তুমি যে জ্যোতিকে নিয়ে পালিয়ে যাও নি কিংবা খুন করো নি, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। কিন্তু পুলিশ কিংবা অন্য কেউ তা মানবে না। সবার আগে তোমাকে ধরবে।
আমি অত সাহসী ছেলে না। জ্যোতির সাথে যতই ধমক দিয়ে কথা বলি না কেন, আমার সাহস ও পর্যন্তই। জনির কথা শুনে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল। আমি বলি, আমি তো খুন করি নাই। আমাকে ধরবে কেন?
- সবার আগে তোমাকেই সন্দেহ করবে সবাই।
- এখন কী করা যায়?
জনি ভাবে, ভেবে ভেবে বলে, এখন তোমার এখানে পালিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
আমি চুপ করে জনির দিকে তাকিয়ে থাকি। জনি বলে যায়, জ্যোতিকে খুন করল কে, সেটা বের না হওয়া পর্যন্ত তোমার এখান থেকে বের হওয়া যাবে না।
আমি মেনে নেই। আমি ধরা পড়ে আবার পুলিশের মার খেতে চাই না। জনি চলে যায়। আমি পড়ে থাকি এখানে। জনির রেখে যাওয়া খাবার খাই, এটা ওটা ভেবে যাই। আমার ঘুম আসে না। জ্যোতির পরিবারের কাউকে আমি ওভাবে চিনতাম না। জ্যোতির বাবা নাকি আর্মি অফিসার, সে ভয়ে আমি আর তাদের সাথে পরিচিত হবার ব্যাপারে আগাই নি। মাঝ থেকে শুধু চিনেছিলাম জ্যোতির বড় ভাই জনিকে। জ্যোতিকে সেদিন ভার্সিটির পাশের শপিং মলটায় দেখে আমি ছুটে যাই, অন্য ছেলে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে; আমার কাছে ধরা খেয়েও গেলো, ভেবে আমি তৃপ্ত হই। জ্যোতির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে জ্যোতিকে চমকে দেই। জ্যোতি আমাকে দেখে চমকে যায় না। পাশে থাকা ছেলেটাকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, ও শামীম, আমার ফ্রেন্ড। আর এ আমার বড় ভাই।
উল্টা আমি চমকে, সালাম দিয়ে চলে আসি। জ্যোতির সাথে আমার খারাপ যায় সময়, ভীষণ খারাপ। আমি আমার ভালোবাসার জায়গা থেকে অধিকার খাটাই। জ্যোতির তা বিরক্ত লাগে। শেষমেশ দুজন মিলে ঠিক করি, বিয়ে করব। বিয়ে করলেই সব ঝামেলা শেষ। তারিখ ঠিক হয়, পহেলা বৈশাখ। জ্যোতি শাড়ি পরে বের হবে, আমি পাঞ্জাবি। দুজন মিলে বিয়ে করে পালিয়ে যাব বান্দরবান। কেউ খুঁজে পাবে না। আমরা আমাদের মত থাকব। মাঝ থেকে ঝামেলা শুরু হলো, ওর পরিবারের মানুষজন আমার ব্যাপারে না-কি জেনে গিয়েছে। একদিন ওর বাবা ফোন দিয়ে আমাকে বলে, আছাড় মেরে তোর গু করে ফেলব বদমাইশ ছেলে। আমার মেয়ের সাথে আর কখনও দেখা করা বা কথা বলার চেষ্টা করবি না।
আমি তাও ভয়ে ভয়ে দেখা করি, বুঝে শুনে কথা বলি।
আমাদের পরিকল্পনা ঠিক পহেলা বৈশাখেই আমরা বিয়ে করব। হুট করে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল। আমি জ্যোতিকে কল করি, ফোন ধরে না। কলের পর কল করে যাই, কাজ হয় না। আমি ওর বাসা চিনি না। গিয়ে খোঁজ নিব তাও পারি না। সারাদিন শেষে ওর এক বান্ধবী আমাকে বলে, ভাইয়া। জ্যোতি কি আপনার সাথে?
আমি অবাক হওয়া ভাবে বলি, না তো। আমিও তো ওকে কল করছি সকাল থেকে, পাচ্ছি না।
- ভাইয়া জ্যোতিকে পাওয়া যাচ্ছে না। জ্যোতির বাবা আমাদের এখানে এসেছিলেন। আপনার ঠিকানা চাচ্ছেন। আমি বলেছি, আমি জানি না। আপনি বাসা থেকে একটু দূরে থাকুন কয়েকদিন। আপনাকে নয়ত পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে আনবেন আংকেল।
আমি দুদিন পালিয়ে থেকে জ্যোতির বড় ভাই জনির কাছে ধরা খাই।
জনি আবার আসে তার পরদিন। জ্যোতিকে কে খুন করতে পারে, সে বিষয়ে আলাপ করতে। জনি জানায়, কাল পুলিশ এসেছিল, আর্মি অফিসার বাবার সাথে আলাপ করেছে। তিনি সোজা করে বলে দিয়েছে আমার নাম। জনি ওখানে কিছুই বলতে পারে নি। এখান একমাত্র উপায়, আসল খুনিকে খুঁজে বের করা। আর কিছুই না। আমার মাথায় কারও নাম আসে না। তবু অনেক ভেবে চিন্তে একখানা নামের তালিকা আমি জনিকে দিয়ে দেই। বাকী কাজ জনি করবে। সিয়ামকে রেখেছি তালিকার প্রথমে, জ্যোতির ক্লাসের ক্লাস রিপ্রেসেন্টেটিভ। ছেলেটার সাথে জ্যোতির নিয়মিত কথা হত। ভার্সিটির সামনে মাঝে মাঝেই দেখেছি ওর সাথে আলাপ করতে। একবার শুনেছিলাম, সিয়াম বলেছে, ও জ্যোতিকে পছন্দ করে। জ্যোতি না করে দিয়েছিল।
দ্বিতীয়ত, মেহেরাব। জ্যোতির প্রতিটা ছবির নিচে বিশাল সব কমেন্ট লিখে। জ্যোতি সে গুলোর খুব আগ্রহ সহকারে রিপ্লাই দেয়। ওর কথাবার্তার ধরণ আমার ভাল লাগে না।
এরপরের তালিকায় আরও পাঁচ ছয় জনের নাম আমি দিয়েছি, সবার সাথেই জ্যোতি হেসে হেসে কথা বলে, বেশ ভালো সম্পর্ক।
আমার জন্য খাবার রেখে, জনি আবার চলে যায়। আমার কেন যেন জ্যোতির বড় ভাইয়ের প্রতি একটা বিশ্বাস জন্মে গিয়েছে। আমি জানি জনি একটা ব্যবস্থা করবেই, কে খুন করেছে জ্যোতিকে সে ব্যাপারের একটা সমাধান দিবেই।
গত তিনদিন ধরে জনির কোন খবর নেই। আমার কাছে রেখে যাওয়া খাবার শেষ। ক্ষুধায় আমার পেট করছে চোঁ চোঁ। খুনি ধরতে গিয়ে ছেলেটা অতিব্যস্ত হয়ে গেল, না-কি নিজেই খুন গুম হয়ে গেল, আমি তাও বুঝতে পারছি না। এখান থেকে বের হব, তাও পারছি না। পুলিশ নিশ্চিত আমাকে খুঁজছে। বের হলেই ধরা খাবো। কিন্তু এখানে এভাবে বসে থাকলে, না খেয়ে মারা যাব। আমি অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্বের পর বের হয়ে আসলাম বাসাটা থেকে। আন্ডার কনস্ট্রাকশন একটা বিল্ডিং। অর্ধেক কাজ শেষ করে পড়ে আছে। আশেপাশে তাকালাম, লোকজন যাকেই দেখছি মনে হচ্ছে আমাকে দেখছে, আমাকে খেয়াল করছে। আমার ভিতর ভয় ঢুকে গিয়েছে। অথচ ভয় পাবার কিছু নেই। আমার পকেটে টাকা নেই। ক্ষুধায় অবস্থা বেগতিক। অনেক ভেবে চিন্তে দেখলাম, বাসায় যাওয়া জরুরী। কিছু টাকা নিয়ে বের হয়ে আসতে হবে। জানি বোকামি হচ্ছে। আমি খুনের আসামি, পুলিশের হাতে যে কোন সময় ধরা পড়তে পারি। তবুও সাবধানে আগাতে হবে। আমি আমার বাসার কাছে চলে যাই, দারোয়ান দরজা খুলে দিলো। ওর ভিতর কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না। আস্তে করে বাসায় ঢুকে আবার বেরিয়ে আসলাম। কোথায় যাওয়া যায় ভাবছি। আমার কাছে জনির নাম্বার নেই, থাকলে কথা বলা যেত। একটা সমাধান তো হতো।
সমাধানের কিছুই হলো না, আমি ধরা খেয়ে গেলাম আবার পুলিশের কাছে। পুলিশ আমাকে আটকে রাখে, আমি বলি, বিশ্বাস করেন আমি খুন করি নাই।
পুলিশ সে দিকে ভ্রুক্ষেপ করে না। ডেকে আনা হয়, জ্যোতির বাবাকে। আর্মি অফিসার লোকটা বিশাল দেহের অধিকারী। আমাকে এসে ঠাণ্ডা গলায় বলেন, বাবা, বলো আমার মেয়ে কোথায়? কোথায় রাখছ ওকে?
আমার পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা। আমার মস্তিষ্ক ঠিকঠাক কাজ করে না। আমি বলি, আংকেল বিশ্বাস করেন, আমি খুন করি নাই জ্যোতিকে।
আমার দিকে জ্যোতির আর্মি অফিসার বাবা এবং পুলিশ অফিসার চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। আমিও বুঝতে পারি, প্রশ্নের বিপরীতে উত্তর দিয়েছি ভুল। তিনি জানতে চেয়েছেন, তার মেয়ে কোথায়? আমি বলেছি, আমি খুন করিনি।
দুটো ব্যাপার সম্পূর্ণ আলাদা। বিশাল দেহী জ্যোতির বাবা আমার কলার চেপে ধরেন, কী বললি তুই?
পুলিশ অফিসার তাকে ছাড়িয়ে নেন। আমি বলি, পানি খাব।
পানি খেয়ে আমি জ্যোতির বাবাকে বলি, প্লিজ আংকেল জনি ভাইকে একটু ডাকুন। আমি যে কিছু করি নাই। সেটা উনি বলতে পারবেন।
- জনি কে আবার?
- আপনার বড় ছেলে।
জ্যোতির বাবা এবার আবার রেগে যান। আমার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলেন। সে চড় খেয়ে আমি অল্পের জন্য চেয়ার থেকে পড়ে যাই নি। উনি বলেন, ফাজলামি শুরু করছিস তুই? আমার বড় ছেলে না? জ্যোতি আমার একমাত্র মেয়ে। আমার কোন বড় ছেলে টেলে নাই। আর তুই সব খুলে বল, খুনের কথা তুই কেন বললি?
আমি বলি, জনি ভাই তো বলল, জ্যোতির লাশ পুলিশ খুঁজে পেয়েছে।
আমার দিকে একবার এবং পুলিশ অফিসার ও আর্মি অফিসার নিজেদের ভিতর একবার চোখাচোখি করলেন। আমি বুঝতে পারছি, আমি বিশাল এক ঝামেলায় ফেঁসে যাচ্ছি। জ্যোতির কোন বড় ভাই নেই। তাহলে জনি কে? আমাকে ধরে নিয়ে গেল কে? আমাকে পুলিশ জ্যোতির খুনের দায়ে গ্রেফতার করেনি। গতকাল ছিল পহেলা বৈশাখ। গতকাল থেকে জ্যোতিকে পাওয়া যাচ্ছে না। সবার ধারণা, জ্যোতিকে নিয়ে আমি পালিয়ে গিয়েছি। অথচ আমি পালাই নি।
পরিশিষ্ট
প্রথম বার যেবার জ্যোতির নিখোঁজ হবার খবর পেলাম, সেবার জ্যোতি হারায় নি। ইচ্ছা করে আমার ফোন ধরেনি। অন্য এক বান্ধবীকে দিয়ে আমাকে কল করিয়ে বলেছে, জ্যোতির বাবা আমাকে খুঁজেছে। পুলিশ আমাকে খুঁজবে। অমন কিছুই ছিল না। জ্যোতি দিব্বি বাসায় বসে ছিলো। জনি আমাকে ধরে নিয়ে গেল। মারধোর করল। এরপর আর একটা মিথ্যে সংবাদ দিলো, জ্যোতি মারা গিয়েছে, লাশ পেয়েছে পুলিশ। জ্যোতির কিছুই হয় নি। ভয়ে আমি খবর নেবার সুযোগ পেলাম না। জনিকে আমি বিশ্বাস করলাম। ভাবলাম, ছেলেটা আমাকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে। ছেলেটা আমাকে বাঁচায় নি, জনি আমাকে ব্যবহার করেছে, ব্যবহার করছে জ্যোতি। জনি এবং জ্যোতি এখন বান্দরবানে। দুজনে বিয়ে করেছে। এখন মেঘের রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি ছিলাম দুজনের সম্পর্ক মসৃণ করে দেবার সেতু। জনির সাথে সম্পর্ক থাকা অবস্থায় জ্যোতি আমার সাথে সম্পর্ক করেছে। সবাইকে দেখিয়েছে আমাদের সম্পর্ক, জনির সাথে সম্পর্কটা লুকিয়ে রাখার জন্য। সব সন্দেহ আমার দিকে আনার জন্য। আমাকে বলেছে জনি ওর বড় ভাই। দুজন মিলে দারুণ একটা পরিকল্পনা করেছিল এবং তা বাস্তবায়নও করেছে। আমি এসবের কিছুই জানি না। আমি থানায় বন্দী আছি, পুলিশের মার খাচ্ছি। জ্যোতিকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছি, তা আমার কাছে জানতে চাচ্ছে। জ্যোতি খুন হয়েছে, এ কথা কেন বললাম, তা জানতে চাচ্ছে। আমি কোন উত্তর দিতে পারছি না। জনি জনি বলে যাচ্ছি, অথচ জনি নামে কাউকেই কেউ চিনে না। ছেলেটা নিজের নাম পাল্টে পর্যন্ত আমার সাথে অভিনয় করে গিয়েছে। দুজন মিলে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে গিয়েছে।
২৭.০৩.২০১৯
রিয়াদুল রিয়াদ
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:২৩
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ, ভালোবাসা জানবেন।
২| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৮:৫০
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আপনার লেখার হাততো চমৎকার!
গো এহেড।
(আপনি অনেক পুরনো মানুষ, এতদেরিতে পরিচয় হল কেন বুঝতেছিনা)
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:১৭
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ। লিখে যাচ্ছি। মাঝে ৭ বছর ব্লগে আসি নি, তাই হয়ত।
৩| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:১৪
বিজন রয় বলেছেন: রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) ...... আপনার নিকটি সুন্দর।
আপনি তো অনেক পুরানো।
কিন্তু আপনার কথা মনে পড়ছে না।
এই কদিন ধরে আপনার লেখা পড়ছি।
আগে কি খুব বেশি একটিভ ছিলেন না ব্লগে?
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:২১
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ। আগে শেষ রাতের আঁধার্ নামেই লিখলাম। ফেসবুকে ও ব্লগ দুই জায়গাতেই। বই বের করার সময় নাম পরিবর্তন করে রিয়াদুল রিয়াদ করে ফেলেছিলাম, কিন্তু ব্লগের নাম পরিবর্তন করি নি।
আসলে মাঝে ৭ বছর ব্লগে লেখা হয় নি, তখনকার অধিকাংশ মানুষই আসলে এখন আর নাই। তবে এ বছর ইচ্ছা আছে ব্লগে নিয়মিত হওয়ার।
৪| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: এই প্রজন্মকে আমি বুঝি না।
এরা লেখাপড়াকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রেম ভালোবাসা আর বিয়েকে গুরুত্ব দেয়। দুঃখজনক কথা হচ্ছে এদের সংসার জীবন দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
এই প্রজন্ম বুঝে না আগে নিজেকে যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলাটা ভীষন দরকার।
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:৫৪
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: খুবই জটিল পরিস্থিতি ভাই। আমার রসায়ন পড়াই, মোটামুটি শ'দুয়েক ছাত্র ছাত্রী আছে আমার। আমি শ'দুয়েক ছেলেপেলের মাঝে পড়তে ভালো লাগে এমন ছেলেপেলে একজনও পাই নি।
বয়সের সাথে মানানসই কিশোর, গোয়েন্দা, থ্রিলার বা যা ইচ্ছা হোক, বই পড়বে এমন ছেলেপেলে হাতে গোনা এক দুইজন। এদের চিন্তাধারার জায়গাটা অন্য জায়গায়।
৫| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৫৭
মিরোরডডল বলেছেন:
এত কমপ্লিকেটেড রিলেশনশিপ হয়!!!!
লেখাটা পড়তে ভালো লেগেছে।
০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১:২৭
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: মানব মনের কত শত জটিলতা, কতটির আর আমরা খবর রাখি।
ধন্যবাদ, গল্প পড়ার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৪৮
নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: বাহ, চমৎকার লিখেছেন...
অনেক ভালো লাগলো...
চালিয়ে যান...
শুভ কামনা সবসময়...