নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসা দিবসে অনেকগুলো ভালোবাসার এক গল্প: তৃতীয় পক্ষ

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:২০


চার বছরের সম্পর্কে এটা নতুন কিছু না। ডান হাত দিয়ে শিলার বাম গালে একটা থাপ্পড় মেরে সোফার উপর ফেলে রেখে বেরিয়ে আসলো বাসা থেকে তুহিন। Allion A-15-টা স্টার্ট দিয়ে ছুটতে লাগল ফাঁকা রাস্তা ধরে। মাথার ভিতর জমে থাকা সব রাগ ঝাড়ছে, গাড়িতে স্পিড তুলে। রাত এখন প্রায় দুইটা, ঢাকার রাস্তা সুনসান। গাড়ি নিয়ে এসে থামল, সীমার বাসার সামনে। বাসার দারোয়ান ঝিমাচ্ছে, তুহিনের বার কয়েক হর্নের আওয়াজে তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়াল। স্যালুট দিয়ে গেট খুলে দিলো। তুহিনের এ বাড়িতে নিত্য যাতায়াত, দারোয়ানের পরিচিত মুখ তুহিন। শিলার সাথে ঝগড়া বাঁধলেই চলে আসে সীমার কাছে। বিয়ের আগে অন্য একটা ছেলের সাথে যা খুশি তাই শিলা করে বেড়াতে পারলে, বিয়ের পর সীমার সাথে থাকতেই পারে তুহিন। বিয়ের আগে থাকে নি, তেমন কিন্তু না। তবু রাগের সময়টায় সীমা খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারে তুহিনকে, আলতো করে জড়িয়ে ধরলেই মনে হয়, রাগ গুলো সব বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে। কলিং বেল বার কয়েক চাপতেই সীমা বেরিয়ে আসলো। নাইট গাউনের ভিতর দিয়ে শরীরের গঠন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। দরজা চাপিয়েই জড়িয়ে ধরল সীমাকে তুহিন।
- কী হয়েছে? আবার ঝগড়া?
- বাদ দাও। আমার মাথা গরম। এখন ঠাণ্ডা করো।

এটা সীমার ফ্ল্যাট। সীমার নিজের ফ্ল্যাট। তুহিনকে রুমে এনে দরজাটা চাপিয়ে দিলো। ডিম লাইটের মিটিমিটি আলোতে সীমাকে বড় রহস্যময় লাগছে, তুহিনকে প্রচণ্ড বিভ্রান্ত। এই বিভ্রান্ত ভাবটা কাটিয়ে দিতে পারবে সীমা।


- তুমি কি নতুন কোন পারফিউম কিনেছ?

তিয়াসের কথায় মুখ তুলে তাকালো সীমা। দৃষ্টি জুড়ে দ্বিধার একটা ভাষা ফুটিয়ে জবাব দিলো, না তো। কেনো?
তিয়াস হাতের ছুরি দিয়ে সবুজ রঙের আপেলটা কাটতে কাটতে বললো, আমার পারফিউমের ঘ্রাণ এমন না। তোমার পারফিউমের ঘ্রাণও আমার চেনা।
- তুমি কী বলছ বুঝতে পারছি না আমি।
- আমি সোজা ভাষায় কথা বলছি। তোমার শরীর থেকে যে ঘ্রাণ আসছে তা তোমার কিংবা আমার কারও পারফিউমের না। তাহলে তোমার শরীরে এই ঘ্রাণ আসল কোথা থেকে?

সীমা নিজের শরীর থেকে নাক দিয়ে কিছুক্ষণ ঘ্রাণ নিলো।
- কীসের ঘ্রাণ? আমি তো কোনো ঘ্রাণ পাচ্ছি না। অযথা সন্দেহ করাটা তোমার একটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
- আমি না পেয়ে আন্দাজে বলছি না। তোমার শরীর থেকে ঘ্রাণ আসছে সীমা। শুধু শুধু তর্ক করে মিথ্যা বলবে না।
- তুমি বলতে চাচ্ছ আমি অন্য একটা পুরুষ মানুষের সাথে সময় কাটিয়ে এসেছি?
- তা তুমিই ভালো জানো। আমি কী করে বলবো?

তিয়াসের সাথে বিয়ের বয়স দেড় বছর। এই দেড় বছরে তিয়াসকে যতটুকু দেখেছে, তিয়াস প্রচণ্ড সন্দেহবাতিক একটা ছেলে। অকারণেই সন্দেহ করে, কথায় কথায় মুখ খারাপ করে, কখনও কখনও গায়েও হাত তুলে। সীমাও চুপ করে থাকে না, চুপ করে থাকার মেয়ে সীমা নয়। মুখ খারাপের বিপরীতে মুখ খারাপ করে, গায়ে হাত তোলার বিপরীতে হাত পা নাড়ে, মুখে পিঠে খামচি বসিয়ে দেয়। সম্পর্ক দেড় বছরে কখনও ভালো যায় নি, কখনই নয়।

তিয়াস আজ বেশ শান্ত ভাষায় কথা বলছে, গলা উঁচু করছে না, গায়ে হাত তোলার জন্যও এগিয়ে আসছে না। তবুও সীমার খুব রাগ হচ্ছে। পার্সটা তুলে নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায় সীমা।
- কোথায় যাচ্ছ?
পিছন থেকে জিজ্ঞেস করলো তিয়াস। একটু মুখ ঘুরিয়ে সীমা বলল, আমি আর তোমার কাছে আসছি না। তোমার বাসায় তুমি থাকো। আমি আমার মতো থাকব, খবরদার আমার ওখানে যাবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করবে না।
- হাহা, কেন? আমি গেলে সব দেখে ফেলব, তোমাকে তার সাথে ধরে ফেলব তাই?

সীমা কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না। অনেক কষ্টে রাগ দমিয়ে শুধু আস্তে করে, বাই বলে বেরিয়ে আসলো।


তিয়াস ছুরি দিয়ে আপেল কেটে যাচ্ছে। একটা টুকরা মুখে দিয়ে, পকেটে বাম হাত ঢুকিয়ে কাগজটা বের করলো। নাম্বারটা তুলে নিলো মোবাইলে। কল করাটা জরুরী। হ্যাঁ অথবা না যে কোনো ব্যাপারে হোক। কাগজের নিচে সতর্কতা লেখা, পুলিশের কাছে খবর দিলে শিকার হবেন আপনি।
তিয়াস কল করলো নাম্বারটায়, ওপাশ থেকে বেশ ভারিক্কী গলায় আওয়াজ আসল, হ্যাঁ নাকি না?

তিয়াস একটু দম নিলো। দম ছেড়ে বলল, হ্যাঁ, আপনার সাথে কোথায় কীভাবে দেখা করবো বলেন?
- টাকা কিন্তু এডভান্স দিতে হবে।
- সেটা নিয়ে ভাবতে হবে না। টাকা পেয়ে যাবেন। জায়গাটা বলেন দেখা করার?

তিয়াস কিছুক্ষণ ঠায় বসে রইল। কিছুটা সময় কিছু ভাবলো। একটা নিঃশ্বাস ফেলে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। কাজ গুলো খুব দ্রুত গুছাতে হবে।


অফিস থেকে আসার পর আজও শিলার সাথে কথা কাটাকাটি হলো তুহিনের। তুহিন চড়া গলায় বলল, তুমি আমার চরিত্র নিয়ে কোনো ভাবেই প্রশ্ন তুলতে পারো না। বিয়ের আগে অন্য একটা ছেলের সাথে যে মেয়ে যা খুশি তাই করতে পারে, তার মুখে এসব মানায় না।

শিলা সোফায় বসে থেকেই বলল, আমি বিয়ের পর কিছু করছি না সেটা তুমি ভালো করেই জানো, তুহিন। আমাদের বিয়ে ঠিক হবার পরই আমি তোমাকে জানিয়েছি, আমার একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে। ছেলে খুব কম বেতনে চাকরি করে বলে বাসা থেকে মানছে না। তুমি তখন না করে দিতে পারতে, বিয়ে না করলেই পারতে। তুমি তখন বলেছ, তোমার সমস্যা নেই।

তুহিন ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে এসে শিলার সামনে মুখোমুখি দাঁড়ালো।
- এসব বালের প্যাঁচাল আমার সাথে বলবি না। তুই যে এতো বড় একটা খা** তা জানলে আমি তোকে আমি বিয়ে করতাম না। শুধুমাত্র বাবা অসুস্থ ছিলো বলে রাজী হয়েছিলাম।
- তুহিন, মুখ খারাপ করবে না একদম। তুমি আমার সাথে ঝগড়া করে যে সীমা নামের মেয়েটার ওখানে যাও, তা আমি বুঝিনা ভেবেছ?
- মুখ খারাপ করলে কী করবি তুই?
মাথার চুলের মুঠি ধরে জিজ্ঞেস করলো তুহিন।
- সীমার ওখানে যাই ভালো করছি। আবার যাব। তোর কী তাতে?

শিলাকে এক ঝটকায় সোফা থেকে ফেলে দিলো তুহিন। গাড়ির চাবিটা হাতে নিয়ে বলল, আমি যাচ্ছি। তুই আমার কোন বাল ছিঁড়তে পারিস, আমি দেখব।

তুহিন বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। শিলা সোফার কোণাটা ধরে অঝোরে কাঁদছে। এ সময়টায় পাশে এসে বসার, মাথায় হাত বুলিয়ে দেবার মত কেউ নেই পাশে। তুহিন যেমন করতে পারে, মেয়ে হয়ে চাইলেই তা করতে পারে না শিলা।

তুহিন গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আবার ছুটতে লাগল। সীমার ওখানেই যাচ্ছে। সীমা কিছুক্ষণ আগে ফোন দিয়েছে। বাসায় আছে। সীমা সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর কখনও ফিরে যাবে না তিয়াসের কাছে।


রাত এখন দেড়টা। সীমা শুয়ে আছে বিছানায়। মনে মনে ভাবছে, তুহিনের সাথে বিয়েটা হলে কত সুন্দর হতে পারত জীবনটা। সব কত সুন্দর চলছিল। তুহিন আর সীমার ভালোবাসার দিনগুলো। পরিবারেরও মত ছিল। হুট করেই একটা টেন্ডার নিয়ে সীমার বাবা আর তুহিনের বাবার মধ্যে ঝামেলা বাঁধল। দুই পরিবারে তা ছড়িয়ে পড়ল। তুহিনের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। হুট করে কোথা থেকে এক মেয়েকে এনে বিয়ে দিয়ে দিলেন তুহিনের সাথে। তুহিনের হয়ত না করার পথ ছিল না, বাঁধা দেয়ার কিছুই ছিল না সীমার। তুহিন বিয়ে করলো, সীমা অমনই রইলো। তুহিনের বিয়ের সম্পর্ক ভালো গেল না, সীমার সাথে মাঝে মাঝেই দেখা করত, সময় কাটাত। সীমার বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাবার মাথায় চিন্তার ভাঁজ দেখা দিলো, তার কোম্পানির এক ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলো সীমাকে। তিয়াস ছেলেটা যেভাবেই হোক বাবাকে জাদু করেছিল, নয়ত এমন একটা ছেলের সাথে কীভাবে নিজের মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজী হলো তাই বুঝতে পারে না সীমা। ভেবেছিল ডিভোর্স দিয়ে দিবে তিয়াসকে। তা সম্ভব হলো না। বাবা সব ব্যবসার দায়িত্ব দিয়ে দিলেন মেয়ে জামাইয়ের উপর। না চাইলেও এখন তিয়াসকে সমীহ করে চলতেই হয়। বাবা মারা যাবার পরও এই বিষের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সীমা। ভালো নেই তুহিন, ভালো নেই সীমা। ভালো থাকার সময়টুকুও খুব কম। শুধু অপেক্ষা করে থাকা, শিলার সাথে তুহিনের কিংবা তিয়াসের সাথে সীমার ঝগড়া বিবাদের।

শোবার ঘর থেকে খট করে একটা শব্দ শুনল সীমা। নাইট গাউনটা খুঁজে বের করে, অন্তর্বাসের উপরে জড়িয়ে, রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। লাইট জ্বাললো। বেলকনির এপাশের থাই গ্লাসের দিকে তাকিয়ে একটু চমকে উঠল। থাই গ্লাস খোলা। সীমার স্পষ্ট মনে আছে সীমা থাই গ্লাস লাগিয়েছিল। আকাশে মেঘ ডাকছে, একটু পর পর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, ঝড়ো বাতাসের ঝাপটা এসে লাগছে গায়ে। ঝড়ো বাতাসে থাই গ্লাসের লক খুলে যাবার প্রশ্নই উঠে না। সীমা এদিক ওদিক তাকাল। কেমন একটা গা শিরশিরে ভাব হচ্ছে। একবার ভাবলো দারোয়ানকে কল দিবে। কী ভেবে দিলো না। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে থাই গ্লাসটা আবার লাগাতে গেল। আশ্চর্য! থাই গ্লাসের লকটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে, কয়েকবার চেষ্টাতেও লাগানো গেল না। থাই গ্লাসটা অমন রেখেই ড্রয়িং রুমের দিকে তাকাল, মনে হলো অন্ধকারে কেউ একজন বসে আছে ওখানটায়। হাত পা কেমন ঠান্ডা হয়ে আসছে সীমার। শরীর জুড়ে ভয়ের একটা কাঁপন ছড়িয়ে পড়ছে। হুট করেই কলিং বাজার শব্দ আসলো। ভয়ের মাঝে সে শব্দেও চমকে উঠল। সন্তর্পণে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে, লুকিং হোল দিয়ে তাকাল। তুহিনকে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। দরজাটা খুলেই তুহিনকে জড়িয়ে ধরল, নিজের সাথে শক্ত করে। সীমার বুকের ধুকপুকানি টের পেল, তুহিন আরও শক্ত করে সীমাকে নিজের সাথে জড়িয়ে বলল, কী হয়েছে?
দরজাটা লাগিয়ে তুহিনের ঠোঁটের ভিতর নিজের ঠোঁটগুলো মিশিয়ে বলল, কিছু না। তুমি আর যেও না প্লিজ। আমার সাথেই থাকো।

তুহিন আলতো করে একটা হাসি দিলো। বাহিরে ঝড়ের মাত্রা বাড়ছে। বৃষ্টি বাড়ছে, বজ্রপাতের শব্দ আসছে। সব ওলট পালট করে দেয়া আবহাওয়া। ওলট পালট করে দিচ্ছে সীমার ভারী নিঃশ্বাসও তুহিনকে। তুহিন সীমার নাইট গাউনটা খুলে নিজেকে মিশিয়ে নিচ্ছে সীমার সাথে।
আজ বড্ড বেশি বজ্রপাত হচ্ছে। সে শব্দের তালে দুজনের মাঝে বিনিময় হচ্ছে ভালোবাসা।
গেস্ট রুমের বাথরুমটা খুলে গেল। সে শব্দ সীমা আর তুহিনের কানে পৌছাল না। দুজন এখন অন্য ভুবনে। এই ভুবনের যাবতীয় শব্দ এখানে মূল্যহীন। তুহিন আর সীমা যে ঘরটায়, সে ঘরটা অন্ধকার করা। সে ঘরে এসে নিঃশব্দে বসলো রকিং চেয়ারে কেউ। সীমা বলল, তুহিন, কেউ কি ঘরে এসেছে?
তুহিন সীমার বুকে মুখ রেখে বলল, কে আসবে ঘরে? আমাকে আদর করতে দাও।

কিন্তু সীমা কাউকে দেখেছে ঘরের মধ্যে রাখা রকিং চেয়ারে বসা। লোকটা বসে বসে সীমা আর তুহিনকে দেখছে। সীমা তুহিনকে সরিয়ে দিয়ে লাইটটা জ্বাললো। সীমা বিছানার চাদর নিজের শরীরে জড়িয়ে নিলো, তুহিন বিরক্তি নিয়ে ওদিক তাকিয়ে চমকে উঠল।
লোকটা রকিং চেয়ারে দুলতে দুলতে বলল, হাই।

তুহিন এদিক ওদিক দিগ্বিদিক তাকিয়ে বলল, এই কে আপনি? এখানে আসলেন কী করে?
লোকটা পকেট থেকে একটা পিস্তল বের করে একটা হাসি দিয়ে বলল, আপনারা শেষ করেন আপনাদের কাজ। আমি ওসবের মাঝে ডিস্টার্ব করি না।

তুহিন কী করবে বুঝতে পারে না। সীমা জড়িয়ে ধরে তুহিনকে। লোকটা আবার হাসি দিয়ে বলে, আপনাদের কাজ শেষ হলে, আমি আমার কাজ শেষ করি, কেমন?

লোকটা বাহিরে তাকাল, একটা বিজলি চমকিয়েছে, বজ্রপাতের শব্দের অপেক্ষা করে কিছুটা পিস্তলে চাপ দিলো। একটা গুলি দিয়ে লাগল তুহিনের কপালের মাঝ বরাবর। বিছানায় লুটিয়ে পড়ল তুহিন। সীমা দৌড়ে পালাতে গেল। লোকটা হাত ধরে টেনে এনে সামনে দাঁড় করালো। সীমার শরীরে কোনো কাপড় নেই। অন্য হাত দিয়ে লোকটা চাদর টেনে এনে গায়ে জড়িয়ে দিলো সীমার। সীমা কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমাকে মারবেন না, প্লিজ। আপনার যা লাগে নিয়ে যান।
লোকটা বাহিরে তাকিয়ে বিজলি চমাকাবার অপেক্ষা করছে।
- আমি যা পাবার কাল পাচ্ছি। আর কিছুর আপাতত দরকার নেই।
আবার একটা বিজলি চমকালো।
- আমি আমার কাজের ব্যাপারে সৎ।
বলে লোকটা বজ্রপাতের শব্দের সাথে সাথে আর একটা গুলি বসিয়ে দিলো সীমার কপালে। সীমাও লুটিয়ে পড়ল ফ্লোরে।

লোকটা বেলকনির থাই গ্লাস খুলে, বেলকনি বেয়ে নেমে গেল। কাজ শেষ খুব সাবধানে।


সীমা আর তুহিন মারা গিয়েছে এ খবর এখনও জানে না পুলিশ। জেনে যাবে অতি দ্রুত। পুলিশের কাছে কী বলবে সেসব গুছিয়ে নেয়া জরুরী। শিলা বসে আছে চিন্তিত মুখে তিয়াসের রুমে। কত বছর পর দেখা। শিলার বিয়ের পর আর কখনও দেখা করেনি তিয়াস শিলার সাথে। বিয়ে করাটা নিয়ে কখনও দোষ দেয়নি শিলাকে তিয়াস। তিয়াস অত কম বেতনে চাকরি করত, স্বাভাবিক শিলার পরিবার মেনে নিবে না। আবার শিলার সাথে দেখা হবে ভাবতেও পারেনি তিয়াস। যে কোনো একটা পদক্ষেপে ব্যর্থ হলেই শিলার সাথে আর দেখা হতো না। তিয়াস শিলাকে বলেছিল, আবার আমরা যখন একসাথে থাকতে পারব, অমন একটা ব্যবস্থা করতে পারত, তখন তোমার সাথে দেখা করব।

শিলার বিয়ের পরের আড়াইটা বছর লেগেছে, সব গুছিয়ে নিতে। শিলার বিয়ে হলো যে ছেলেটার সাথে, ঐ ছেলেটার একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল। একটা সময় জানতে পারল, তিয়াসের বসের মেয়ের সাথেই সম্পর্ক। খুব ধীরে ধীরে এগিয়ে, বসের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা থেকে সীমাকে বিয়ে করা সবটাই ছিল বেশ গুছিয়ে গুছিয়ে।
এরপর আরও অপেক্ষা। পরবর্তী ধাপ কী হবে, ভেবে পাচ্ছিল না তিয়াস। গত পরশু একটা খামে আসা চিঠি সে পথটাও সহজ করে দিলো। খামের চিঠিটা ছিল একজন ভাড়াটে খুনির। যদি একান্তই কাউকে খুন করার দরকার হয়, তবে যেন তার সাথে যোগাযোগ করে। যদি দরকার না হয়, তাও যেন জানায়। তিয়াসের দরকার ছিল, তিয়াস এই কাজটা নিজ হাতে কখনই করতে পারত না কোনো সন্দেহ না রেখে, প্রমাণ না রেখে। সে পথটা লোকটা সহজ করে দিলো।

তিয়াস শিলার একটা হাত ধরে বলল, এখন সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি আমি আমাদের মত থাকতে পারব। কোনো ঝামেলা নেই। পুলিশ জিজ্ঞেস করলে সত্যি কথা বলবে, বলবে যে তুহিন তোমার সাথে যে আচরণগুলো করত সব। আমিও বলব পুলিশকে সীমা আমার সাথে থাকত না। আর তোমার বাসায় চলো, ব্যাগ গুছিয়ে ফেলবে। আমরা বিয়ে করছি অতি দ্রুত। ঠিক আছে?

শিলা মাথা নাড়ল আলতো করে। স্বস্তির একটা আবেশ ছড়িয়ে গেল শরীর জুড়ে। এতদিনের অপেক্ষা কিংবা চাওয়া জিনিসের পাওয়াটা মেনে নিতেও কেমন সময় লাগছে।

তিয়াসের হাত ধরে গাড়িতে উঠলো শিলা। গাড়ি এসে থামলো শিলা আর তুহিনের বাসার সামনে। বাড়ির গেট খোলা। দারোয়ান এই সকাল দশটার সময় ঘুমাচ্ছে। তিয়াস গাড়িটা নিয়ে পার্কিং লটে রেখে উঠে গেল। শিলাকে নিয়ে ঘরের ভিতর গেল, সব গুছিয়ে নিবে শিলা। বেড রুমে ঢুকতেই চমকে উঠল। লোকটা বিছানার উপর বসা, শিলা আর তিয়াসকে দেখে বলল, হাই।

তিয়াস অবাক হওয়া চোখে বলল, আপনি এখানে কী করছেন? আপনার কাজ তো শেষ।
শিলা বিস্ময়ে মুখ চেপে ধরল। তিয়াস শিলার দিকে তাকিয়ে বলল, এর কথাই বলেছিলাম তোমাকে। উনিই মামুন। তুহিন আর সীমার কাজটা ওনাকে দিয়েই করিয়েছি।

শিলা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, আমি ওকে চিনি তিয়াস। ও এই এলাকাতেই থাকে। গত চার বছর ধরে আমার পিছনে ঘুরছে, আমি বিবাহিত বলার পরও আমার পিছু ছাড়েনি।

তিয়াস রাগী চোখে তাকাল মামুনের দিকে। মামুন স্বভাবত হাসি দিয়ে বলল, আপনি আপনার পথ ক্লিয়ার করেছেন। এবার আমি আমার পথ।

একটা শব্দ হলো গুলির, আশেপাশের পাখি গুলো সব উড়ে গেল, আকাশে বাতাসে সে শব্দ মিশে গেল। মামুন শিলার দিকে তাকিয়ে বলল, তো আমরা এখন যেতে পারি?
- অবশ্যই। কিন্তু পুলিশ?
- চিন্তা কোরো না। পুলিশ আমাদের খুঁজে পাবে না। তুমি আমি আমাদের মত থাকতে পারব।

শিলা মামুনের সাথে বেরিয়ে আসলো। বাড়িতে হুলস্থূল। গুলির শব্দ আসলো কোথা থেকে? দারোয়ান পড়ে ঘুমাচ্ছে, ও ব্যাটাকে অজ্ঞান করে রেখেছে মামুন। শিলা মামুনের সাথে গাড়িতে সাই সাই করে চলে যাচ্ছে। শিলার গত চার বছরের প্রেমিক মামুনের সাথে।

৪মে, ২০১৮

রিয়াদুল রিয়াদ


মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:১৮

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: মাগো মা এত প্যাঁচালো কাহিনী

মানুষের চরিত্র কত রকমের বাপ রে

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:৫৬

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য আন্তরিক ভালোবাসা।

প্যাঁচ শেষমেশ খুলেছে আশা করি। অবশ্য ভালোবাসা, প্রেমের ব্যাপারগুলো সবসময় এমন প্যাঁচালো তেমনও না। আমার স্ত্রীর সাথে আমার দশ বছরের সম্পর্ক বেশ সরলরেখায়, সাবলীলভাবেই চলছে।

আবার অনেকের জীবনে অনেক অনেক জটিলতাও দেখেছি এ সময়ের মাঝে।

২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: বাপরে টুইস্টের উপর টুইস্ট...
চরিত্রগুলোকে বুঝতে মনে হয়, ৩/৪ বার পড়েছি...
আমার চমৎকার লেগেছে...
ভালোই খেল দেখিয়েছেন লেখক সাহেব...

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৫৩

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: হায় হায় এত বড় গল্প ৩/৪ পড়েছেন? আপনার ধৈর্য আছে। আমার ধৈর্যশীল মানুষ পছন্দ। মনে হয় ভালো লেখক ও ভালো পাঠক উভয়েরই প্রথম বৈশিষ্ট হওয়া উচিত ধৈর্য।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

৩| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: পড়তে তো ভালৈ লাগলো।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:৩৯

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: গল্পে আপনার ভালো লাগা, আমার ভীষণ উৎসাহ। ধন্যবাদ।

৪| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:১৭

সোনালি কাবিন বলেছেন: বেশ খেলিয়েছেন গল্পটাকে।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:৪২

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: প্রায় বছর ছয় আগের লেখা। চেষ্টা করেছিলাম, এখন লিখলে হয়ত ভিন্নভাবে লিখতাম। ধন্যবাদ গল্পপাঠের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.