নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রাইম থ্রিলার: অভিসন্ধি

২৮ শে মে, ২০২৫ রাত ১২:০২


প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় হতে বাড়িটার দূরত্ব হবে বড়জোর মিনিট দশেকের হেঁটে আসলে। টেলিভিশন, সংবাদকর্মী আর সাধারণ উৎসুক জনতায় গিজগিজ করছে বাড়ির চারপাশ। সব টেলিভিশন চ্যানেল আর সংবাদপত্রের অনলাইন ভার্সনগুলো টানা খবর দিয়ে যাচ্ছে এখানকার। ভিতরে কী ঘটছে তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও ঝুঁকে আছে এই আলোচনায়। পুলিশ বারবার ঘোষণা দিচ্ছে, সবাইকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে। এই বাড়িটার তৃতীয় তলায় জিম্মি অবস্থায় আটকে আছে চার জন। এক সন্ত্রাসীর পিস্তলের মুখে ভয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছে তারা। আসাদ সাহেব বিমান বাহিনীর রিয়াটার্ড অফিসার। তৃতীয় তলায় এই ফ্ল্যাটে থাকেন কন্যা নিশি, পুত্র ফাহিম ও স্ত্রী তমাকে নিয়ে। পিস্তল হাতের সন্ত্রাসী প্রতি ঘন্টায় একবার করে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে, যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে। সাথে সাথে এ ব্যাপারেও ঘোষণা দিয়েছে, পুলিশ এখানে আসলে একজনও বাঁচবে না। আসাদ সাহেব বারবার করে তার বড় ভাই মোসলেম সাহেবকে বলেছেন, পুলিশ যেন না আসে। মোসলেম সাহেব সে কথা শোনেননি, পুলিশ নিয়ে হাজির হয়েছেন। পুলিশের লেজ ধরে, সাধারণ উৎসুক জনতা ও টিভি প্রেস। মোসলেম সাহেব জাতীয় সংসদের সদস্য। তার ছোট ভাই জিম্মি অবস্থায় আটকে আছে, আর তিনি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবেন, এটা সম্ভব না। ইতোমধ্যে দেশবাসীর কাছে এ খবর ছড়িয়ে পড়েছে, মোসলেম সাহেবের ছোট ভাই-ই নাখালপাড়ার এই বাড়িটায় জিম্মি। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, “আমার ধারণা এটা আমার শত্রুপক্ষের কারও কাজ। আসাদের কোনো শত্রু থাকার কথা না, ও নিতান্ত সহজ সরল মানুষ। কারও আগে পিছে নাই।”
সাংবাদিকরা যখন জানতে চাইল, এটা বিরোধী দলের কাজ বলে তার মনে হচ্ছে কিনা। মোসলেম সাহেব খুব সুন্দর সে কথা সামলে উত্তর দিয়েছেন, “আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এখানে আছে। প্রথম কাজ হলো, আসাদকে ওর ফ্যামিলিসহ উদ্ধার করা। দোষী কে, কেন তা পরবর্তী তদন্তে বের হবে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহেবের সাথে কথা বলেছি, উনি আশ্বাস দিয়েছেন, চিন্তার কোনো কারণ নেই। সব ধরণের সহযোগিতা আমরা পাব।”
সাংবাদিকদের পরের প্রশ্ন ছিল, ফোনে ওনার সাথে আসাদ সাহেবের কথা হয়েছে, জিম্মিকারীর কোন পরিচয় পাওয়া গিয়েছে কি-না?
মোসলেম সাহেব জানিয়েছেন এ ব্যাপারে কোনো তথ্য তিনি জানেন না।

ছয়তলা বাড়ির অন্য ফ্ল্যাটের লোকজন নিরাপদে বের হয়ে এসেছে। কোনো ধরণের ঝামেলা হয়নি। শুধুমাত্র তৃতীয় তলায় পাঁচজন মানুষ। পুলিশ প্রস্তুতি নিচ্ছে আসাদ সাহেবের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে অ্যাকশন নেবার। তবে উপর মহল থেকে নির্দেশনা না পেলে এই অ্যাকশনে যাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া হুট করে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করলে প্রাণনাশের আশঙ্কা আছে। সন্ত্রাসী এখন পর্যন্ত কোন সহিংস ঘটনা না ঘটালেও, পুলিশি তৎপরতায় ভড়কে গিয়ে যে কোনো সময় কিছু করে ফেলতে পারে। আপাতত তাই প্রস্তুতি পর্যন্তই অগ্রগতি।

মোসলেম সাহেবের মোবাইলে আবার কল এসেছে। আসাদ সাহেব কাঁদো কাঁদো গলায় বলছেন, “পুলিশ সরিয়ে নিতে বলো, ফাহিমের মাথায় ফরহাদ পিস্তল ধরে বসে আছে।”
“ফরহাদটা কে? সন্ত্রাসীর নাম?”
“আর কিছু বলতে পারব না। পুলিশ সরিয়ে নাও। আমার ছেলেটাকে বাঁচাও।”
“সন্ত্রাসীটা বুঝল কীভাবে পুলিশ এসেছে?”

কল কেটে গেল। খানিক সময় ধরে কী যেন ভাবলেন মোসলেম সাহেব। কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা গেল তাতে। হুট করে দরদর করে ঘামা শুরু করল শরীর। হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছে মাটিতে বসে পড়লেন মোসলেম সাহেব। বুকের ভিতর চিনচিন করে ব্যথা করছে। তিনি যা আশঙ্কা করছেন তা সত্যি হলে কী করবেন? কী বলবেন? কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দিবেন? তাই ভাবছেন। সাংবাদিকরা জোঁকের মত লেগে আছে মোসলেম সাহেবের সাথে। একের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছে, “কী বলল আসাদ সাহেব? আপনি একজনের নাম বলছিলেন, উনি কে?”

মোসলেম সাহেব চুপচাপ উঠে গাড়ির ভিতর গিয়ে বসে রইলেন। মোবাইল বের করে বড় ছেলেকে কল করলেন- একবার, দুইবার, তিনবার - নাম্বার বন্ধ বলছে। বুকের চিনচিনে ব্যথাটা এখন স্থূল হচ্ছে। বুকের উপর ভার বাড়ছে। গাড়ি থেকে নেমে দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তার কাছে গিয়ে বললেন, “যদি সম্ভব হয়, আপনারা এখান থেকে চলে যান। ভিতরে খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারে। আপনারা চলে গেলে, জিম্মিকারী নিজে থেকেই চলে যাবে।”
পুলিশ কর্মকর্তা শুধু চুপচাপ শুনলেন, কিছু বললেন না। মোসলেম সাহেব ছোটো একটা নিঃশ্বাস ফেললেন। পুলিশ কর্মকর্তা আস্তে করে বললেন, “স্যার, সাংবাদিকদের সাথে কথা বলবেল না প্লিজ। এরা প্যানিক ছড়াবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। খারাপ কিছু হবে না।”
মোসলেম সাহেব স্থির দৃষ্টি ছুড়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন পুলিশ কর্মকর্তার দিকে। পুলিশ কর্মকর্তা সে দৃষ্টি উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন। কিছু একটা নির্দেশনা দিলেন বাকি দায়িত্বরত পুলিশদের। মোসলেম সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ির দিকে এগিয়ে আসলেন। এখানে পুলিশ নিয়ে আসাটা তার একদম উচিৎ হয়নি। পরিস্থিতি খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে, আশঙ্কা আর দুশ্চিন্তা ঝেঁকে বসছে, হয়ত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে সব।

গাড়িতে উঠে আবার মোবাইলটা বের করলেন। বড় ছেলের নাম্বারে কল দিয়ে এবারও বন্ধ পেলেন। বড় ছেলের সাথে এক মেয়ের সম্পর্ক আছে। মোসলেম সাহেব সে ব্যাপারে অবগত। মেয়েটার সাথে তার বার কয়েক কথা হয়েছে। মোবাইল থেকে আনুশার নাম্বারটা বের করে কল দিলেন, “হ্যালো মা, চিনতে পেরেছ আমাকে?”
আনুশা বেশ স্বাভাবিক গলায় উত্তর দিলো, “জি, আংকেল। কেমন আছেন আপনি?”
“এইতো মা চলছে। আচ্ছা, ফরহাদের সাথে তোমার আজ দেখা বা কথা হয়েছে?”
“না আংকেল। আমি কয়েকবার কাল থেকে ওকে কল করছি, নাম্বার বন্ধ।”
“আচ্ছা, আচ্ছা। ঠিক আছে। আমি কল করে পাচ্ছি না তো, তাই জিজ্ঞেস করলাম। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
মোবাইলটা রেখে ড্রাইভারের দিকে তাকালেন। ড্রাইভার অপেক্ষা করছে তার নির্দেশের।
“মোহাম্মদপুর যাও। ফরহাদের বাসায়।”

গাড়ি ছুটতে লাগল। আসাদ সাহেব এখনও কোনো এক সন্ত্রাসীর পিস্তলের মুখে পরিবার সমেত বসে আছেন। আসাদ সাহেব হয়ত জানেন না এই অবস্থা থেকে কীভাবে মুক্তি পাবেন, সামনে কী ঘটতে যাচ্ছে। মোসলেম সাহেবও জানেন না, মোহাম্মদপুর গিয়ে কী দেখবেন! সামনে কী অপেক্ষা করছে! তবে তিনি এতোটুকু বুঝতে পারছেন, ফরহাদের মোহাম্মদপুরের বাসায় থাকার সম্ভবনা শূন্যের কোঠায়। তবু তিনি মনে প্রাণে চাচ্ছেন ফরহাদ যেন মোহাম্মদপুরের বাসায় থাকে। খুব করে চাওয়া জিনিসের পাওয়া হবার অনুভূতি মোসলেম সাহেব অনেক দিন পর অনুভব করতে চাচ্ছেন, খুব করেই চাচ্ছেন।



জিম্মি ঘটনার পাঁচ দিন পর।
যে পাঁচ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে পাঁচ জনকেই চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। একজন ব্যতীত বাকি সবার সবার শরীরে ভালো মাত্রায় আঘাতের চিহ্ন উপস্থিত। তদন্তকারী পুলিশ অফিসার ইমরুল কায়েস হাসপাতালের বারান্দায় পায়চারি করছে। তার মানসিক অবস্থাও খুব একটা সুস্থির নয়। অদিত সাহেবের প্রস্থানের ধকল এখনও কায়েস কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তবু সব কিছু একপাশে রেখে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া ছাড়া ভিন্ন কোনো পথ নেই। পাঁচজনের মধ্যে শুধু রক্তিম নামে একজনের পরিচয় জানা গিয়েছে। একমাত্র রক্তিমের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। তবে রক্তিম মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। বছর ছাব্বিশের এক যুবক অথচ একটু পর পর ভয়ে কেঁপে উঠছে বাচ্চা ছেলেদের মতন। এক দুইবার টুকটাক কথা হয়েছে কায়েসের, রক্তিমের সাথে। সেখান থেকে খুব একটা কিছু জানা যায়নি।
“আপনি ঠিক আছেন এখন?” কায়েস প্রশ্ন করে নরম সুরে, “কিছুক্ষণ কথা বলা যাবে আপনার সাথে?”
রক্তিম শূন্য দৃষ্টি ছুড়ে এদিক ওদিক তাকায়। মুখটা অল্প একটু হাঁ করে উত্তর দেয়, “ভালো আছি।”
কায়েস গলার স্বর নামিয়ে আরও নরম করে জিজ্ঞেস করে, “আপনি ঠিক কতদিন ওখানে আটকা ছিলেন, মনে পড়ে?”
“আমি ঠিক জানি না”, আবারও মুখটা অল্প হাঁ করে উত্তর দিলো। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে খুব হাঁপিয়ে উঠেছে রক্তিম। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
“আপনি বিশ্রাম নিন”, রক্তিমের কাছ থেকে সরে আসতে আসতে বলল কায়েস। “আমি পরে আসছি।”
কায়েস সরে এসে একটু দূরে দাঁড়াল। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রক্তিমের দিকে। উচ্চতা পাঁচ ফিট আট নয় হবে, মাঝারি গড়নের শরীর। গায়ের রং হালকা শ্যামলা। নাকের নিচে এলোমেলো পুরু গোঁফ, মসৃণ গালে দাড়ির কোনো দেখা নেই। থুতনির কাছে অল্প কিছু দাড়ি জানান দিচ্ছে, এই গণ্ডি পার হওয়া হয়নি। মাথার উসকোখুসকো চুলে লালচে ভাব বলে দিচ্ছে, বহুদিন পানির সংস্পর্শে যাওয়া হয়নি।

“স্যার”, অধস্তন এক পুলিশ অফিসার এসে দাঁড়াল কায়েসের সামনে। “কারও সাথে এখনও পর্যন্ত কথা বলতে পারিনি। ডাক্তার বলছে সময় লাগবে।”
“সময় নিন, তাড়াহুড়া করবার মতন কিছু হয়নি।”
“জি স্যার।”
কায়েস বুকের কাছে নেইম প্লেটটা দেখল, পুলিশ অফিসারের নাম সিয়াম।
“সিয়াম সাহেব।”
“জি স্যার!”
“কারও খোঁজে আত্মীয় স্বজন এসেছিল?”
“না স্যার, এখনও আসে নাই। তবে চলে আসবে।”
কায়েস আগ্রহ উৎসুক চোখে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি জানলেন কীভাবে?”
“স্যার, এদের যখন গাড়ি থেকে নামানো হলো, কয়েকজন ছবি তুলছে। এখন স্যার ছবি তোলা মানে সব শেষ। এই জিনিস সিওর থাকেন ছড়াই গেছে এতক্ষণে।”
কোথায় ছড়িয়ে গেছে সে ব্যাপারে কায়েসের মাঝে কোনো আগ্রহ বা উত্তেজনা দেখা গেল না। ভাবলেশহীনভাবে, “আচ্ছা”, বলে শুধু মাথা নাড়ল।

গত কয়েক রাত ঘুম হয় না ঠিকঠাক। কায়েসের শরীরটা ভীষণ অবসন্ন। হাসপাতালের বারান্দায় রাখা একটা বসার চেয়ারে আস্তে করে বসে পড়ল কায়েস। চোখটা লেগে আসছে। গা একটু এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। ডান হাতের দুটো আঙুল দিয়ে দুই চোখের পাতায় আলতো করে ঢলে দিলো। আঙুল দুটো চোখে পাতার উপরেই রেখে দিলো। বন্ধ চোখের সামনে এলোমেলো অনেক গুলো দৃশ্য ভাসছে। খণ্ড খণ্ড সে দৃশ্যের একটার সাথে অন্যটার কোনো যোগসূত্র নেই। অনেক গুলো মানুষ হুট করে সারি বেঁধে এসে দাঁড়াচ্ছে, হাসছে, কাঁদছে। কেউ কায়েসের পরিচিত নয়, একদম অপরিচিত। হঠাৎ করে পাতলা গোঁফের একজন কায়েসের মুখের একদম কাছে চলে আসলো। ধপ করে কায়েসের তন্দ্রা কেটে গেল। ধড়ফড়িয়ে উঠে সোজা হয়ে বসল। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখল কায়েসের মুখের সামনে একজন মাঝ বয়সি লোক ঝুঁকে আছে। কায়েস উঠে বসতেই বলল, “ঘুমাচ্ছিলেন বুঝি স্যার?”
কায়েস কোনো উত্তর দেয় না। ডান হাতের তালু দিয়ে মুখটা মুছে নিল। ঘেমে গেছে একদম। লোকটা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, “ঘুমান স্যার, কোনো সমস্যা নাই।”
কায়েস বাম পাশের কপাল চুলকাতে চুলকাতে বলল, “আপনি কে?”
“আমি স্যার হাদি”, হলদে দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে বলল লোকটা। “আমি এইখানে হাসপাতালে ঝাড়ু টাড়ু দেই।”
কায়েস নিজের ঘাড়ের পিছনটায় হাত দিয়ে আস্তে আস্তে চাপ দিতে দিতে বলল, “আচ্ছা।”
“স্যার”, আবার ঝুঁকে পড়ল লোকটা। এদিক ওদিক তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, “আমি একজনরে চিনি।”
কায়েস ঘাড় থেকে হাত নামিয়ে বলল, “কাকে?”
আরও ফিসফিস করে বলল, “ঐ লোক স্যার বিশাল বড় জ্যোতিষী, এই অবস্থা হইল কীভাবে বুঝলাম না কিছু।”
“কে?”
“হাত টাত দেইখা স্যার, অনেক কিছু বইলা টইলা দিতে পারে।”
“কে?”
“আপনারা যাদের নিয়ে আসছেন না? তাদের মধ্যে একজন।”
কায়েস এবার একটু মনোযোগ দিলো লোকটার কথায়। একটু টানটান হয়ে বসে বলল, “স্বাভাবিকভাবে বলুন আপনি কী জানেন, এভাবে ফিসফিস করে বলার মত কোনো ঘটনা না এটা।”
লোকটা গলা ঝাড়া দিয়ে পরিষ্কার করে বলল, “পুলিশি ব্যাপার স্যাপার দেইখাই তো ভয় লাগে। কখন কোন ঝামেলা টামেলায় ফাঁইসা যাই।”
“আপনার এখানে ফেঁসে যাবার কিছু নেই। নাম জানেন আপনি যার কথা বলছেন তার?”
“জি স্যার”, আবার গলার স্বর নামিয়ে বলল হাদি। “দুলাল বিশ্বাস। গ্রিন রোডে বসত।”
কায়েস উঠে দাঁড়াল। হাসপাতালের চারপাশে তাকিয়ে বলল, “আপনার সাথে দুলাল বিশ্বাস সাহেবের কখনও দেখা হয়েছিল?”
“জি স্যার। আমি গত মাসেই তার কাছে গেছিলাম।”
“কী ব্যাপারে?”
হাদি এবার মাথাটা একটু নিচু করে ফেলল। কায়েস উত্তরের আশায় তাকিয়ে রইল হাদির দিকে। হাদি মিনমিনে গলায় উত্তর দিলো, “বউকে নিয়ে গেছিলাম। সমস্যা টমস্যা আছে কিছু বউয়ের।”
কায়েস কিছু বলল না, চুপ করে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ হাদির দিকে। ছোট করে নিশ্বাস ফেলে আবার চেয়ারে বসে পড়ল।
“আচ্ছা, এসব কাউকে বলবেন না। ব্যাপারটা চাপিয়ে রাখেন। আমি আপনার সাথে আবার কথা বলব," কায়েস শান্তস্বরে বলে যায়। “আর আপনার ভয়ের কিছু নেই। আপনি কোনো ঝামেলায় পড়বেন না।”
হাদি আস্তে করে মাথা নাড়ে। ভয়ের কিছু নেই, তবুও কেন যেন মনে হচ্ছে ব্যাপারটা পুলিশকে জানানো উচিত হয়নি। নিজের মধ্যে চাপিয়ে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হতো।
কায়েস আবার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “শুধু ছোট একটা সাহায্য করতে হবে আপনাকে।”
হাদি আগ্রহ উৎসুক চোখে কায়েসের দিকে তাকায়। কায়েস নরম গলায় বলে, “দুলাল বিশ্বাসকে আমাকে একটু দেখিয়ে দিবেন।”
হাদি সাথে করে নিয়ে যায় কায়েসকে। হাসপাতালের ৩০২ নাম্বার কেবিনে শুয়ে থাকা লোকটাকে দেখিয়ে দেয় হাদি। কায়েস সূক্ষ্ম দৃষ্টি মেলে দুলাল বিশ্বাসের দিকে তাকিয়ে থাকে খানিক সময়। হয়ত ব্যাপারটা কায়েস আগে লক্ষ্য করেনি। দুলাল বিশ্বাসের উচ্চতা পাঁচ ফিট আট নয় হবে, মাঝারি গড়নের শরীর। গায়ের রঙ হালকা শ্যামলা। নাকের নিচে পুরু গোঁফ, গালে কোনো দাড়ি নেই। থুঁতনির কাছে অল্প কিছু দাড়ি।

কায়েস চোখ বড় করে হাদির দিকে তাকাল। হাদি এই দৃষ্টির মানে জানে না। কিন্তু কায়েস জানে, অন্য কেবিনে বাকি তিনজনকে কেমন দেখবে। অদিতকে ছাড়া কায়েসের প্রথম কেস। ঠান্ডা মাথায় সব কিছু সমাধান করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।

বাইরে হট্টগোল বেঁধে গেছে। এক ঝাঁক মানুষকে দেখা যাচ্ছে হাসপাতালের সামনে। কায়েস একটু এগিয়ে যায়। হাসপাতালের মধ্যে সাংবাদিকরা আসতে চাচ্ছে, বাধা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। সাংবাদিকদের উৎস মোসলেম সাহেব। জাতীয় সংসদের সদস্য। তিনি খবর পেয়েছেন এই হাসপাতালে তার ছেলে ভর্তি আছে। হাসপাতালে এসে চিৎকার করে তিনি বলছেন, “আমার ছেলে কোথায়? ফরহাদ কোথায়?”
কায়েস অল্প করে হাসি দিলো। গত কয়েকদিনে দারুণ পরিচিত মুখে পরিণত হয়েছেন মোসলেম সাহেব। নির্বাচনের আগে ভালো আলোচনায় চলে এসেছেন। কায়েসের উচিত এগিয়ে গিয়ে মোসলেম সাহেবকে সহায়তা করা। কায়েস সেদিকে এগিয়ে গেল না। হাদিকে দেখা গেল মোসলেম সাহেবকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যেতে। তিনি এক এক করে হাসপাতালের কেবিন ঘুরে দেখছেন। অবশেষে দুলাল বিশ্বাসের পাশের দিকের এক কেবিনে গিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়ালেন। কায়েস উঠে দাঁড়াল সে দৃশ্য দেখে। সমস্যা হয়ত গড়িয়ে যাচ্ছে বিশাল কোনো জটিলতার দিকে।

১ম পর্ব


মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার।
একদম সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.