![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
``কেন কবি খালি খালি হলিরে চোখের বালি, কাঁদাতে গিয়ে অবশেষে নিজেই কাঁদিলি...''
আমার চাকুরী নাই চার মাস চলছে। এদিকে সাদিয়া গর্ভবতী। কি যে করি, আমি একেবারে হতাশ হয়ে পড়লাম। চারদিকে পরিচিত সবার সাথে যোগাযোগ করলাম একটা চাকুরীর ব্যাবস্থা করে দিতে। কিন্তু না, কেউ আমাকে বিন্দু পরিমাণ সাহায্য করলো না। তখন আমি কুষ্টিয়াতে । আমার এক বন্ধু ছিলো, যে শান্তা ইন্ডাষ্ট্রিতে চাকুরী করত। হঠাৎ একদিন ওর ফোন, ও বল্লো; ভাই! আপনার কথা আমাদের ম্যানেজার স্যারকে বলেছি, তিনি আপনাকে দেখা করতে বলেছেন সাথে আপনার সিভিটা দেখতে চেয়েছেন। আমি যেন শূণ্য হাতে আকাশের চাঁদ পেলাম। পরের সপ্তাহে আমি কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আসলাম। সিভি নিয়ে শান্তা ইন্ড্রাষ্ট্রিজ লিঃ এর সামনে দাড়িয়ে ঐ বন্ধুকে ফোন দিলাম। কিছুক্ষন পর এক ভদ্রলোক এসে আমাকে বল্লেন, আপনি মাহমুদ? জ্বি। তিনি আমার সিভিটা নিয়ে দীর্ঘক্ষন নাড়াচাড়া করে বল্লেন, ঠিক আছে পরে আপনাকে ফোনে জানানো হবে। ঐ পর্যন্তই ccJmশেষ। ঐ ভদ্রলোক আমাকে আজও ফোন দেননি। এর ঠিক ১৫/২০ দিনের মাথায় আমার ঐ বন্ধুর চাকুরী চলে যায়। এখন আমি আর আমার বন্ধু দু’জনে মিলে চাকুরী খুঁজতে শুরু করি। কোথাও চাকুরী নেই, সবাই শুধু মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে, কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। অবশেষে ও একদিন বল্লো, ভাই! আমরা তাহলে আপাতত ডেইলি ব্যাসিকে কাজ করি? আমরা এ পর্যায়ে ডেইলি ব্যাসিকে কোথায় কোথায় কাজ করায় খোজ-খবর নিতে শুরু করলাম, কিন্তু কোথাও লোক নিচ্ছে না। সবাই শুধু বলছে ঈদের পরে যোগাযোগ করেন। এভাবেই অতি কষ্টে দিন কাটতে লাগলো আমার।
এত কষ্টের মধ্যেও একটি সুখবর আমার মনকে প্রশান্তি এনে দেয়; আর তাহলো আমার বাবা হওয়া। যাইহোক, বাবা-মা আমার ও সাদিয়ার উপর ভীষণ ক্ষীপ্ত ছিলো, যকন শুনলো তাদের নাতনী হয়েছে, তারা সব দুঃখ কষ্ট ভুলে আমাদেরকে বাড়ীতে নিয়ে যাবার জন্য উঠেপড়ে লাগলো। অবশেষে কোন এক শুক্রবারে বাবা-মা এসে আমাদেরকে ঢাকা থেকে জিরানীর বাসায় নিয়ে আসলো, আসার সময় মা বলেছিলো, আমার যে পর্যন্ত চাকুরী না হবে সব দায়িত্ব তার কিন্তু সে তার কথা রাখেনি বেশিদিন। কিছুদিন না যেতেই সে আমাদের সাথে নানান ভাবে কটু কথা আর সাদিয়ার প্রতিটি কাজে ভুল ধরতে শুরু করলো। আমার ছোট্র মেয়েটার জন্য আমি কিছু কিনতে পারতাম না। কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যেত কিন্তু প্রকাশ করতে পারতাম না। আমরা আবার শুরু করলাম ইপিজেডে সেই সকাল ৭.০০টা থেকে ১১.০০টা পর্যন্ত চাকুরীর জন্য ঘুরে বেড়ানো। এভাবে কতদিন যে না খেয়ে সকাল ৭.০০টা থেকে ১১.০০টা পর্যন্ত ঘুরেছি তার ইয়ত্তা নাই।
একদিন ভোরে আনুমানিক ৬.৪৫ মিনিটের দিকে সাঙ্গনাম নামক ফ্যাক্টরীর সামনে দিয়ে আমরা হাটছিলাম। হঠাৎ আমার বন্ধুটি আমায় বল্লো, ভাই! একটু দাড়ান, আমি আসছি। এটা বলে ও একটু দুরে দাড়িয়ে থাকা এক লোকের সঙ্গে কিছুক্ষন কথা বলে ফেরৎ আসলো। এসে আমাকে বলছে, ভাই! চাকুরী হবে, তবে কিছু টাকা লাগবে। কত? ১০,০০০/- (দশ হাজার) টাকা। চাকুরী হবেতো? ভাই! আমি আছি না, টাকা নিয়ে গড়িমসি করলে ওর খবর আছে।
আমি বাড়িতে এসে সাদিয়ার সাথে কথা বল্লাম। ও বল্লো, দেখো, যদি সত্যি চাকুরী দিতে পারে, তাহলে না হয় আমার একটা গয়না বিক্রি করে দিলাম। এভাবে কথা এগুচ্ছিলো, একদিন সিভিও দিতে আসলাম কথিত ব্যক্তির কাছে। কিন্তু না সে কোন ব্যবস্থা করতে পারলো না। আমি আরো নিরাশ হলোম আর মানসিক ভাবে পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়লাম। আর ঐ বন্ধর উপর ভীষণ রাগ হলো। তাই এবার একা একা ডিইজিডে ঘুরাঘুরি করতে লাগলাম।
এভাবে একদিন হাটতে হাটতে নতুন ইপিজেডের একটা টেক্সটইল মিলের সামনে লক্ষ্য করলাম বেশ কিছু মানুষ জটলা বেঁধে দাড়িয়ে আছে। খুব কৌতুহল জাগলো মনে। আমিও এগিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি হেলপার পদে কিছু লোক নিবে তাই সবাই সিভি জমা দিচ্ছে। আমিও ওদের সাথে তাল মিলিয়ে আমার সিভিটা জমা দিলাম। আমাদেরকে বলা হলো, বিকালের দিকে রিপোর্ট দিবে। আমি বাড়ীতে না গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। বিকালে রিপোর্ট টাঙ্গিয়ে দেয়া হলো, সেখানে আমার নাম দেখে আমি যে কি খুশি....সে খুশি দেখে কে। পরে মনে হলো আরেকবার ভালো করে দেখি। ভালো করে দেখতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম নামের ডান পাশে পিতার নাম উল্লেখ করা আছে। নামের সাথে মিল থাকলেও পিতার নাম ভিন্ন। তার মানে ওটা আমি না অন্য কেউ। আমি আবারও হতাশ হলাম। জীবন কিভাবে আমাকে নিয়ে খেলা করছে। ভাবলাম ধুর আর ইপিজেডে আসবোনা চাকুরীর জন্য।
বেড়িয়ে যাচ্ছিলাম মেইন গেট দিয়ে, হঠাৎ চোখে পড়লো আপনার টাঙ্গানো বিজ্ঞপ্তি। একজন দক্ষ কম্পিউটার অপারেটর প্রয়োজন দোকানের জন্য। মোবাইলে তেমন ব্যালেন্স ছিলোনা, বিকাশ একাউন্টে ২০/- (বিশ) টাকা ছিলো সেটা লোড দিয়ে আপনাকে ফোন দিলাম, এন্টারভিউ দিলাম। আসলে দোকানের চাকুরী আমার পছন্দ না কিন্তু রাতে সাদিয়ার সাথে কথা বল্লাম ব্যাপারটা নিয়ে সাদিয়া আমার ও ওর কথা না ভেবে আমাদের বাচ্চাটার কথা গুরুত্ব দিয়ে বল্লো....তুমি অন্য কিছু না হওয়া পর্যন্ত দোকানেই চাকুরী করো। অন্তত বাড়ীর এই অশান্তি একটু হলেও কমবে। আমিও ভেবে দেখলাম, অন্য কোন উপায় নেই আমার।
জানেন ভাই! এত বড় পৃথিবীতে আমি বড়ই একা। আগে খুব হিন্দি, বাংলা ও ইংলিশ ছবি দেখতাম। সেখানে লক্ষ্য করতাম নায়ক বা নায়িকা যখন বিপদে পড়ে, কেউ না কেউ তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। তার মামা, কাকা অথবা নায়ক। আমার জীবনে এরকম কেউ নেই। একজন কাকা ছিলেন, রিকশা চালাতেন বড় কষ্ট নিয়ে দুনিয়ার মায়া ছেড়ে ওপারের দেশে চলে গেছে।
আমি যা করেছি সব নিজের ইচ্ছেতে। ছেলেবেলা থেকে কেন যেন আমার মেধাবী আর ভালো মানুষদের ভালো লাগতো। আমি তাদেরকে ফলো করতাম। তাদের কাজ নকল করার চেষ্টা করতাম। আর মনে মনে বলতাম আমি বড় হয়ে এমন হবো। আমার সব কিছু থেকেও কিছু নেই। তাই ভাবতাম ইস্ যদি একটা বড় ভাই, মামা অথবা কাকা থাকতো যে, আমার বিপদে আপদে আমার সামনে এসে দাড়াবে আর বলবে এই তোর মুখটা শুকনা লাগছে কেন? কি হয়েছে তোর বলতো? কিন্তু কেউ আসেনি আমার জীবনে এমন করে।
আপনার সাথে পরিচয় হওয়ার পর একটা বিষয় ভীষণভাবে লক্ষ্য করলাম, আপনি আমার চোখ দেখেই সব বুঝে ফেলতেন। এমন কতদিন হয়েছে, মনে মনে ভেবেছি আজ আপনার কাছে কিছু টাকা চাবো কিন্তু আমি চাওয়ার আগেই আপনি দিয়ে দিয়েছেন। আমি খুব অবাক হতাম, এই মানুষটা আমাকে এত বুঝে কি করে....? ইচ্ছে করতো, চিৎকার করে আপনাকে ভাই বলে ডাকি কিন্তু সাহস হয়নি কোনদিন।
কতদিন এমন হয়েছে, আপনার দেয়া টাকা নিয়ে আমি বাজার করে নিয়েছি তারপর রান্না হয়েছে আমাদের বাড়ীতে। সে দিনগুলোর কথা ভাবতে খুব কষ্ট হয় আমার। আমি মনের গভীর থেকে আপনাকে শ্রদ্ধা করতাম। কোনদিন ভাবিনি আপনি আমাকে বকতে পারবেন, তুমি থেকে তুই করে কথা বলতে পারবেন। আমি আপনার কাছে চির ঋণী, আপনার উপকারের কথা কোনদিন ভুলতে পারবোনা। আপনার কাছ থেকে শিখা জ্ঞান আমার সর্বক্ষেত্রে এখন কাজে লাগছে। আপনার ওখানে জব করা অবস্থায় আমার একটা জব হয়েছিলো ঢাকাতে। একটা বাইং হাউজের কম্প্লাইন্সে কিন্তু আমার বউ আমাকে দূরে থাকতে দিবে না তাই সেখানে জয়েন করা হয় নাই।
আমি যা করেছি ভুল করেছি, ওমন করে মাথা গরম করে আমার আসা মোটেও ঠিক হয়নি। আমি জানি এটা আমার মস্ত বড় ভূল। আর এটাও জানি, আমার ভূল যতবড় আমার ভাইয়ের মনটা তার তুলনায় অনেক বেশি বড়। তাই আমার ভুলের দিকে না তাকিয়ে ঐ বিশাল আকৃতির মনের দিকে তাকিয়ে আমাকে ক্ষমা করে দিলে চির কৃতজ্ঞ থাকবো।
টাকা- পয়সাতো হাতের ময়লা, এক দিকে আসবে আরেকদিকে দিয়ে ঠিক চলে যাবো। আমি এখন যেখানে জব করি, সেখানকার বেতন আপনার ওখানের চেয়ে দ্বিগুন। তাই মাসখানেক খুব কষ্টে কাটলেও একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে, এটাই আমার চাওয়া। আমি আপনার কাছে টাকা-পয়সা কিছুই চাই না, শুধু চাই আপনি আমাকে মন থেকে ক্ষমা করে দিবেন আর আমার জন্য দোয়া করবেন। সেটাই আমার চরম পাওয়া হবে। ঐ দিন আপনার ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছিলাম। তাই আপনার নং গুলোও সাথে সাথে ডিলেট করে ফেলেছি। তাই না বলা কথাগুলো বলতে এই লেখালেখি।
আপনি ভাল থাকুন আপনার পরিবারের সবাই আপনার এই ভাল লাগার সঙ্গী হোক, আর সফলতা আসুক আপনার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে, সেই শুভ কামনায়........
২৭ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:০৫
চোখেরবালি বলেছেন: ধন্যবাদ, শুভ কামনা রইল আপনার জন্যও। ভাল থাকা হয় যেন।
২| ২৬ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৮
সোহানী বলেছেন: ক্ষমা চাওয়া বা ভুল স্বীকারের মধ্যে কোন লজ্জা নেই। আপনি অবশ্যই ওনার সাধে দেখা করবেন, তার কাছে কৃতঙ্গতা প্রকাশ করবেন। দেখবেন আপনার মনে প্রশান্তি মিলবে।
ভালো থাকুন।
২৭ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:০৭
চোখেরবালি বলেছেন: একেবারে ঠিক কথা বলেছেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৩১
মীর মফিজুল ইসলাম মানিক বলেছেন: আপনাদের ফ্যামিলির জন্য শুভ কামনা থাকল।