![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জানি সত্য নয় শুধু কল্পনায় ইচ্ছের ঘুড়ি আমরাই উড়াই, স্বপ্ন গুলো সত্যি হবে তারি অপেক্ষায়......
আল-কুরআন ও হাদীসের আলোকে কবর আযাব -
আল-কুরআন : প্রথমেই দেখা যাক পবিত্র কুরআনে এ বিষয়ে কি আছে। আল্লাহ তায়ালা ফেরাউনের ব্যাপারে বলেছেন, ‘‘ফেরাউন ও তার অনুচরদেরকে শোচনীয় আযাব গ্রাস করে ফেললো। সকাল-সন্ধায় তাদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হয়। আর যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন আদেশ করা হবে, ফেরাউন ও তার দলবলকে কঠিনতর আযাবে দাখিল কর।’’ -(সূরা আল-মু'মিন : ৪৫-৪৬)
উপরোল্লিখিত আয়োতগুলোতে কঠিনতর আযাব বলতে হাশরের ময়দানে চূড়ান্ত ফায়সালার পর জাহান্নামে নিক্ষেপ বুঝানো হয়েছে। আর সকাল-সন্ধ্যায় আগুনের সামনে পেশ করার ব্যাপারটা বরযখের (কবরের) জিন্দেগীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মুফাসসেরিনে কেরাম বলেছেন, কবরের আযাব যে সত্য উপরোক্ত আয়াত তার প্রমাণ। (দেখুন : তাফসিরে কুরতুবী, ইবন কাছির, সূরা : আল মু'মিন : ৪৫-৪৬)।
আল্লাহ তায়ালা আরও এরশাদ করেছেন, ‘‘তাদেরকে ছেড়ে দিন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তাদের মাথায় বজ্রাঘাত পতিত হবে। সেদিন তাদের চক্রান্ত তাদের কোন উপকারে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। গোনাহগারদের জন্য এ ছাড়াও শাস্তি রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।’’ -(সূরা আত্তূর : ৪৫-৪৭)
উপরোল্লিখিত আয়াতগুলোতে ‘‘এছাড়াও শাস্তি রয়েছে’’ বলে কবরের আযাবের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। (দেখুন : আক্বীদা তাহাবিয়া, পৃ: ১৩৩, শরহু আল ফিকহুল আকবার, পৃ: ১৭১)। আর কবরে সওয়াল-জওয়াবের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘‘আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাতের মজবুত রাখেন এবং জালিমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আর আল্লাহ যা চান তা করেন।’’ -(সূরা : ইবরাহিম : ২৭)। বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে এসেছে এ আয়াতে আখেরাত বলতে বরযখ অর্থাৎ কবরের জগত বুঝানো হয়েছে। দেখুন : মাআ'রেফুল কুরআন, পৃ: ৭১৭, শারহুল ফিকহুল আকবর, পৃ: ১৭০)। আল্লাহ তায়ালা মোনাফেকদের শাস্তির ব্যাপারে আরও এরশাদ করেছেন, ‘‘আমি তাদেরকে দু'বার আযাব প্রদান করবো। তারপর তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে বৃহত্তম আযাবের দিকে।’’ -(সূরা তাওবা : ১০১)। এখানে বৃহত্তম আযাব বলতে হিসাব-নিকাশের পর জাহান্নামের আযাব, আর প্রথম দু'বারের আযাব বলতে মু'মিনদের হাতে নিহত হওয়া এবং বরযখ অর্থাৎ কবরের আযাবের কথা বুঝানো হয়েছে। (দেখুন : আল ইবানাহ, পৃ: ৮৮)
আল হাদীস : কুরআনের পর আমরা দেখি এবার হাদীসে এ বিষয়ে কি এসেছে। কবরের আযাবের বিষয়ে এত সংখ্যক হাদীস এসেছে যে, শব্দের ঈষৎ তারতম্যের কারণে শব্দের দিক থেকে মুতাওয়াতির না হলেও মূল বক্তব্যের দিক থেকে তা মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ফরে এ বিষয়ে ঈমান আনা ওয়াজিব (দেখুন-আক্বীদা তাহাওয়ীয়া, পৃ: ১৩৬ ও শারহ আল ফিকহুল আকবার, পৃ: ১৭১)। তন্মধ্য থেকে নিম্নে কতিপয় হাদীস উল্লেখ করা হচ্ছে :
-বারা বিন আযেব (রা.) কর্তৃক বর্ণিত একটি বিশাল হাদীসে এসেছে, নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বাকী আল গারকাদ অর্থাৎ জান্নাতুল বাকীতে আমরা একটি জানাযায় এসেছিলাম। নবী করীম (সা.) আমাদের কাছে এসে বসলেন। আমরা তাঁকে ঘিরে বসলাম। সবাই এত চুপ যে মনে হয় মাথার উপর পাখি বসে আছে। কবর খোঁড়ার কাজ চলছে। তিনি তিনবার করে বলে উঠলেন, আমি আল্লাহর কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই ........ (আহমাদ/আবু দাউদ/ইবনে মাযাহ/হাকেম/ইবনে হাববান/আবু আওয়ানা)
-ইবনে আববাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা.) দুটো কবরের পাশ দিয়ে যাবার সময় বলছিলেন, তাদের কবর আযাব চলছে। তবে তেমন কোন বিরাট কারণে তাদের এ আযাব হচ্ছে না। একজন প্রশ্রাব করার পর ভাল করে পবিত্র হতেন না। আর দ্বিতীয় জন চোগলখুরী করে বেড়াতেন। তারপর একটা তাজা ডাল নিয়ে দু'ভাগ করে দু'কবরে গ্রোথিত করে বললেন, আশা করছি এ দু'টা ডাল না শুকানো পর্যন্ত তাদের আযাব কিছু লঘু করা হবে। -(বুখারী, মুসলিম)
-আনাস বিন মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন, যদি তোমরা দাফন-কাফন ছেড়ে না দিতে, তাহলে আল্লাহর কাছে চাইতাম, তিনি যেন তোমাদেরকে সরাসরি কবর আযাব শোনার ব্যবস্থা করে দেন। যা আমাকে শুনানো হয়েছে। -(মুসলিম, নাসাঈ, আহমদ)
-নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বান্দাকে যখন কবরে রেখে তার সাথীরা বিদায় নিয়ে চলে যায়, সে তাদের পায়ের জুতা/স্যান্ডেলের আওয়াজও শুনতে পায়। ঐ সময়েই দু'জন ফিরিশতা এসে তাকে বসিয়ে দেন। জিজ্ঞেস করেন, ‘‘এ লোকটি অর্থাৎ মোহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে তোমার ধারণা কি? মু'মিন ব্যক্তি তখন বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তখন তাকে বলা হয়, তাকিয়ে দেখ, ঐ যে জাহান্নামে তোমার আসনটা, সেটার পরিবর্তে আল্লাহ তোমাকে জান্নাতের আসন বরাদ্দ করে দিয়েছেন। উভয় আসনই সে দেখতে পাবে। মুনাফিক বা কাফিরকে যখন প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি বলতে পারো এ লোকটা সম্পর্কে? সে বলবে, আমি তো কিছু জানিনা। লোকেরা যা বলতো, আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি জানতে চাওনি, অনুসরণও করনি। আর ঐ মুহূর্তেই বিশাল এক লৌহ হাতুড়ি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হবে। আঘাতের ফলে সে বিকট স্বরে আর্তচিৎকার করে উঠবে, যা তার আশপাশে জিন, ইনসান এ দু'সৃষ্টি ছাড়া আর সবাই শুনতে পাবে। - (বুখারী)
অন্যান্য হাদীসে এসেছে, প্রথম প্রশ্ন হবে, তোমার রব কে? দ্বিতীয় প্রশ্ন হবে, তোমার দ্বীন কি? তৃতীয় প্রশ্ন থাকবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সম্পর্কে। এ ব্যাপারে এত প্রচুরসংখ্যক সহীহ হাদীস রয়েছে, সবগুলোর উল্লেখ এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে সম্ভব নয়। প্রচুরসংখ্যক হাদীস এসেছে নবী করিম (সাঃ) নামাযের ভেতরে সালাম ফেরানোর পূর্বে আল্লাহর কাছে যে কয়টা বিষয় থেকে সব সময় পানাহ চাইতেন এবং উম্মতকে পানাহ চাইতে তাকিদ করে গেছেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কবরের আযাব। উদাহরণ হিসাবে নিম্নতম হাদীসটি উল্লেখ করা হচ্ছে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দোয়া করেছেন, ‘‘হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই, কবর আযাব থেকে, জীবন-মৃত্যুকালীন সকল ফিৎনা থেকে, আর মসীহ দাজ্জালের ফিৎনা থেকে’’ - (বুখারী)।
যেখানে সহীহ হাদীসে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কবর আযাব থেকে পানাহ চেয়েছেন, সেখানে এ বিষয়ে শোবা সন্দেহ প্রকাশ করা হাদীস অস্বীকার করার পাঁয়তারা নয় কি? এমন দুঃসাহসই করা হয়েছে শুরুতে উল্লেখিত লেখকের নিবন্ধে। নিবন্ধকার আযাব সংক্রান্ত হাদীসসমূহের সনদের বিশ্বস্ততা স্বীকার করার পরও বলতে পিছপা হননি ‘‘তা যতই সহীহ ও নির্ভরশীল হোক কুরআনের মোকাবিলায় তা সব বর্জনীয়।’’
উপরোক্ত বক্তব্যের আলোকে আমরা বলতে চাই, প্রথমত কবর আযাব সংক্রান্ত হাদীসসমূহ কুরআনের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। কারণ, কুরআনের কোন আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘কবর আযাব বলতে কিছু নেই’’ যার ফলে বলা যাবে যে, হাদীসগুলো কুরআনের আয়াতের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বরং তার উল্টো আমরা ইতিপূর্বেই উল্লেখ করেছি, কুরআনের একাধিক আয়াত কবর আযাবের প্রতি সুষ্ট ইঙ্গিত প্রদান করেছে। এমনকি এমন যদি হতো যে, কুরআনে কবর আযাব সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। শুধু হাদীসেই বলা হয়েছে এবং হাদীসের বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হয়ে যায়, তাহলে তার প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব হয়ে যায়। কুরআনে নেই এ যুক্তি দিয়ে হাদীস বর্জন করার ভয়াবহ পরিণতি থেকে প্রিয় নবী (সাঃ) উম্মাতকে সতর্ক করে গেছেন।
সাহাবী মিকদাম বিন মা'দীকারব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, অচিরেই এমন লোকের আবির্ভাব ঘটবে যে আরাম কেদারায় গা এলিয়ে বসে থাকবে (অর্থাৎ কষ্ট করে হাদীসের জ্ঞান অর্জন করবে না), আমার হাদীস সম্পর্কে তাকে বলা হলে সে বলবে, তোমাদের আর আমাদের মধ্যে ফায়সালার জন্য আল্লাহর কিতাবই (কুরআন) যথেষ্ট। তাতে যা হালাল হিসাবে বলা আছে, সেটাকেই আমরা হালাল মনে করব, আর তাতে যা হারাম হিসেবে বলা হয়েছে, শুধু সেটাকেই আমরা হারাম মনে করব। সাবধান, আল্লাহর রাসূল যা হারাম করবেন, সেটা আল্লাহ কর্তৃক হারাম করার মতই। - (আবু দাউদ/ তিরমিযী/ ইবনে মাযাহ/ দারেমী)।
শুধু হালাল, হারাম নয়, শরীয়তের যাবতীয় ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম জানার সূত্র যেমন কুরআন, তেমনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হাদীসও। স্বয়ং আল্লাহতায়ালা এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন একাধিক আয়াতে। যেমন তিনি এরশাদ করেছেন, ‘‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর, আর যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক...’’। -(হাশর : ৭)
আরেকটি হাদীসে নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, তোমাদের কাছে দুটো বিষয় রেখে গেলাম, সে দুটোকে অাঁকড়ে ধরলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না, আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাত অর্থাৎ হাদীস। -(হাকেম)
হাশরের ময়দানে বিচারের আগে দুনিয়াতে মৃত্যুর আগে এবং মৃত্যুর পর বরযখী যিন্দেগীতে যে কোন অপরাধীকে যে কোন অবস্থায় শাস্তি দেয়ার অধিকার ও ক্ষমতা আল্লাহর অবশ্যই আছে। উপরোল্লিখিত আলোচনায় তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো। কাজেই এ সংক্রান্ত বিপরীত কোনো যুক্তির অসারতা একেবারেই দিবালোকের মত সুস্পষ্ট।
আরেকটি যুক্তি হল, কবর আযাব সংক্রান্ত দৃশ্যগুলো শুধু কবরে সমাহিত ব্যক্তির সাথেই সামঞ্জস্যশীল। কিন্তু যেসব মানুষের মৃতদেহ সমাহিত করা হয়নি, চিতায় ভস্মীভূত করা হয়েছে অথবা বাঘের পেটে বা হাঙ্গরের উদরে হজম হয়ে গেছে, তাদের তো কবরই নেই, কবর আযাব হবে কোথায়! আর ফিরিশতা এসে প্রশ্নগুলো করবেন কিভাবে, কোথায়?
এসব প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে, কবরের যিন্দেগীকে দুনিয়ার যিন্দেগীর মত মনে করার কারণে। কবর অর্থাৎ বরযখ সে এক অন্য জগত। পার্থিব জগতের সাথে তার কোন মিল নেই। বরযখের যিন্দেগী সবার জীবনেই ঘটবে। যাকে কবর দেয়া হয়েছে তার জীবনে যেমন বরযখের যিন্দেগী হবে, যে বাঘের পেটে হজম হয়ে গেছে তার জন্যও একই বরযখের যিন্দেগী অনুষ্ঠিত হবে। সে যিন্দেগীর প্রকৃত অবস্থা দুনিয়ার বস্তুগত প্রক্রিয়ার মত হবে না। কাজেই দুনিয়ার প্রক্রিয়া ও উপায় উপকরণ হুবহু যেমন আখেরাতের জন্য প্রযোজ্য নয়, তেমনি তা বরযখের যিন্দেগীর জন্যও প্রযোজ্য নয়। এ তিন জগতের প্রত্যেকটির রয়েছে আলাদা সিস্টেম। এক জগতের সিস্টেম দিয়ে অন্য জগতকে বিচার করাটাই বড় ভুল। এমনকি যাদেরকে কবর দেয়া হয়েছে, তাদের লাশও তো পচে গলে শেষ হয়ে যাবে। তখন তাদের বরযখের যিন্দেগী যেভাবে হবে, যাদেরকে কবর দেয়া হয়নি, তাদের বরযখের যিন্দেগীও সে প্রক্রিয়াতেই হবে।
একজন নেক বান্দাহ আর একজন কাফের, মুনাফেক বা পাপিষ্ঠ ব্যক্তির কবর যদি একদম পাশাপাশি থাকে, তাহলে হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী একজনের কবর হবে জান্নাতের টুকরার মত। অনেক প্রশস্ত করে দেয়া হবে, আলোকিত করে দেয়া হবে, বইতে থাকবে জান্নাতের সুবাতাস। আর আরেকজনের কবরকে সঙ্কুচিত করে দেয়া হবে, তা হবে জাহান্নামের গর্ত সদৃশ। সেখানে চলতে থাকবে আযাবের বিভীষিকা। পাশের কবরের এ বিভীষিকা তার প্রতিবেশীর শান্তিতে এতটুকুনও বিঘ্নতা সৃষ্টি করবে না। দুনিয়ার হিসেবে এটা কি করে সম্ভব! মৃত্যুর পরবর্তী যিন্দেগী, চাই সেটা বরযখ হোক আর আখেরাত- পুরোটাই গায়েব (অদৃশ্য)-এর অন্তর্ভুক্ত। এসব গায়েবের খবরের ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেছেন, (তারাই প্রকৃত মুত্তাকী) যারা গায়েবের প্রতি বিশ্বাস করে। এমন কোন যুক্তি প্রমাণ ও বিজ্ঞান নেই যা দিযে বরযখ ও আখেরাতের সবকিছুকে বুঝে তারপর ঈমান আনা যাবে, না হলে নয়। তাহলে গায়েবের উপর ঈমান আনা হলো কি করে? যা না হলে ঈমানই আনা হলো না। যার উপর সবকিছু নির্ভরশীল। তবে সময়মত সবই বুঝে আসবে যখন প্রকৃত পরিস্থিতির বাস্তব চেহারা সামনে আসবে ও তার মোকাবিলা করতে হবে। যখন গায়েবসমূহ প্রকাশিত হয়ে পড়বে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তোমার (চক্ষুর) পর্দা সরিয়ে দিয়েছি, আজকে তোমার দৃষ্টি সুতীক্ষ্ণ। (সূরা ক্বাফ : ২২)।
আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে সহীহ হাদীস অস্বীকার করার প্ররোচণা থেকে হেফাযত করুন। আমীন!
২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৭
রাজনীতির ভাষা বলেছেন: ১। মহাগ্রন্থ থেকে যতগুলো কথা উল্লেখ করলেন, সবগুলোকেই আবার অন্যকোন গ্রন্থের বা কথার সাহায্যে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হল যে কবরে আযাব হবে। কেন? মহাগ্রন্থ কুরআ'ন থেকে একথা সরাসরি উদ্ধৃত করা গেলনা?
২। সারা পৃথিবীতে বর্তমানে যারা মুসলমান হিসেবে পরিচিত, তাদের সবাই কি অন্যান্য ধর্মের সব মহামানবের নাম বা কথা বা কাজ সম্পর্কে জানে? তেমনিভাবে অন্য ধর্মের লোকেরা মহামানব মুহাম্মদ সম্পর্কে নাও জানতে পারে। মুসলমানরাই ঠিকমতো জানেনা, তো অন্য ধর্মের মানুষ কিভাবে জানবে? এখন মুসলমানদেরকে যদি কবরে প্রশ্ন করা হয়, তবে তাদের অনেকেই সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেনা। তাহলে একই প্রশ্ন যদি অন্যধর্মের মানুষদেরকেও কবরে জিজ্ঞেস করা হয় তবে তারা কিভাবে উত্তর করবে?
৩। সুরা হাশরের ৭ নং আয়াত থেকে আপনি হাদীস প্রমাণের চেষ্টা করলেন, কিন্তু এই আয়াতের আগের এবং পরের কথাগুলোকে এড়িয়ে গেলেন, সেখানেই সুস্পষ্ট বর্ণনা করা আছে, এই কথার দ্বারা কি বলা হচ্ছে। একটা সম্পূর্ণ বক্তব্যের মাঝখান থেকে সম্পূর্ণ বক্তব্যকে বাদ দিয়ে একটি কথা নিয়ে আসলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বক্তব্যটি বিকৃত হয়ে পড়ে।
৪। বিশ্বপ্রভু এবং মহাগ্রন্থ কুরআ'নের উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস রেখেই বলছি, কারো ব্যাখ্যা মানতে আমি বাধ্য নই। যদি কুরআ'নের সাথে সাংঘর্ষিক হয়, কিংবা সুস্পষ্ট(মুবি'ন) কুরআ'ন-এ সে বিষয়ে কোন ইংগিতও না থাকে, তবে সেটি মানতে আমি অবশ্যই বাধ্য নই। অতিরিক্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ না করে, আমরা মূল গ্রন্থটিই কেন জানতে যত্নবাণ হজাবে?
৫। রাসূলের সুন্নাত বলতে আপনি হাদীস বুঝাচ্ছেন, বিষয়টিকে তো এভাবেও বলা যায়, রাসূলের সুন্নত হচ্ছে সেই জিনিস, যা রাসূল অপরিহার্যভাবে করেছেন। যেমন তিনি আল্লাহর প্রেরণকৃত মহাগ্রন্থকে অপরিহার্যভাবে অনুসরণ করেছেন, এবং এখানে যা করতে আদেশ করা হয়েছে তিনি কখনোই তার ব্যতিক্রম করেননি এবং যা করতে নিষেধ করা হয়েছে তা কখনোই করেননি, এবং এই আদেশ ও নিষেধের বাইরে তাঁর তো একটি স্বাধীন সত্ত্বা ছিল, সেগুলোও কি তিনি আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়েছে? তাহলে রাসূল যেমন মহাগ্রন্থ অনুসরণ করে চলেছেন, তেমনিভাবে আমরাও যদি মহাগ্রন্থকে অনুসরণ করে চলি তবে এর মাধ্যমে মহাগ্রন্থকেও আঁকড়ে ধরা হবে এবং একই সাথে রাসূলের সুন্নতকেও আঁকড়ে ধরা হবে। কিন্তু এই কথাটুকু বলতে যেয়ে আপনি যে 'দুটো' শব্দ ব্যবহার করেছেন, মূল আরবি হাদিসে যেয়ে দেখুনতো সেখানে এই শব্দটি আছে কিনা? মূল শব্দের দিকে লক্ষ্য না করে, শুধুমাত্র অনুবাদের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া বা তর্ক-বিতর্কে অংশ নেয়া কি ঠিক হবে?
৬। আমার কথা শুনে যদি আপনি মনে করেন আমি হাদীস অস্বীকারকারী, তবে সেকথাটিও সত্য নয়। হাদীস বলতে আমরা প্রচলিত অর্থে যা বুঝি, সেই সকল সংকলন যেমন বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসাঈ, মুয়াত্তা এবং আরো অনেকগুলো সংকলন, যেগুলোতে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এগুলোর সংকলকরা অনেক কষ্ট করে এগুলো সংকলন করেছেন। কিন্তু একটা বিষয় কি স্পষ্ট নয় যে, এই সংকলনগুলো মানুষই সংগ্রহ, সংরক্ষণ, সংকলন বা রচনা করেছেন। কাজেই এই সংকলনগুলোতে ভুল বা সীমাবদ্ধতা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। এখন কোনটা ভুল,কোনটা শুদ্ধ সেটা আমরা কেমন করে বুঝব? সেটাও সহজ। আল্লাহ আমাদের জন্য চির-সংরক্ষিত, সুস্পষ্ট মহাগ্রন্থ ও ফুরকা'ন দিয়েছেনে। এর মাধ্যমে আমরা হাদীস থেকে শুরু করে যেকোন বিষয়ের সত্য-মিথ্যা যাচাই করে নিতে পারবো। মহাগ্রন্থের বক্তব্যের সাথে যদি মিলে যায় তবে অবশ্যই নির্দ্বিধায় তা গ্রহণ করব, আর যদি মহাগ্রন্থে এ বিষয়ে কোন বক্তব্য না থাকে তাহলে সেটি আমাদের জন্য কি অপরিহার্য্য হবে? আর যদি মহাগ্রন্থের বক্তব্যের বিরোধী হয় তবে নির্দ্বিধায় তা বর্জন করবো। কিন্তু সবার আগে এই মহাগ্রন্থটাতো আগে ভালোভাবে জানতে হবে তাই নয়কি? কুরআ'ন বা বারবার সম্পূর্ণ গ্রন্থটি না পড়ে কি সেসম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যাবে?
৩| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৩
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর বলেছেন: সত্যিই একদিন জীবনের সব লীলা সাঙ্গ হয়ে যাবে। মৃত্যুর পর কবরদেশে সবাইকেই যেতে হবে এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন পাকের সূরা আনকাবূত এর ৮নং আয়াতে এরশাদ করেন “হে নবী আপনি বলুন, যে মৃত্যুর কবল থেকে আত্মরক্ষার জন্য তোমরা পলায়নপর, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখোমুখি হবে, অনন্তর তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহ তায়ালার দরবারে। তখন তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন সেসব কর্ম যা তোমরা করতে”। রাতের অন্ধকার বিদীর্ণ করে সুবহি সাদিক যখন পূর্বাকাশে আলোর আভা ছড়িয়ে দেয়, তখন হয়ত আল্লাহর কোন কোন বান্দা তাঁর একান্ত সান্নিধ্য লাভের আশায় একাগ্রতার সাথে তাঁরই ইবাদতে মশগুল থাকে। চারদিকে নীরব নিস্তব্ধতা বিরাজ করে। দু একটি পাখির কলরব শুনতে পাওয়া যায়। একটু পরেই মোয়াজ্জিনের সুললিত কণ্ঠে ফজরের আজানে ভেসে আসে মহান আল্লাহ তায়ালার নাম এবং সাথে তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর অনন্য নাম।
নিদ্রা দেবীর কোলে সমর্পিত ঘুমন্ত মানব জাতিকে কবর এবং পরকালের পাথেয় সঞ্চয়ের কথা স্মরণ করে দিয়ে মসজিদের মিনার থেকে মোয়াজ্জিনের আবেগ ভরা দরদী কণ্ঠে মাঝে মাঝে আজও ভেসে আসে “আজ না হয় কাল তুমি যাইবা কবরে, যাইবার সময় দেখবে চেয়ে তোমার সবই রইল পড়ে। ঘর করলা, বাড়ি করলা, চলো গাড়ি করে, হঠাৎ আজরাঈল সামনে খাড়া চলো অন্ধকার কবরে”। সত্যিই এ মায়াময় দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী সুখ এবং শান্তি ছেড়ে একদিন আমাদের সবাইকে অন্ধকার কবরে যেতে হবে। মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষ তার প্রকৃত গন্তব্যের দিকে যাত্রা করে। পাড়ি জমায় সুবিশাল ও চিরস্থায়ী জগতের উদ্দেশ্যে। আখেরাতের ক্ষেত স্বরূপ এবং আমাদের সাময়িক যাত্রা বিরতীর নির্ধারিত স্থান এ দুনিয়া। আখেরাতের পাথেয় উপার্জনের জন্য এ দুনিয়ায় সাময়িক যাত্রাবিরতী শেষে আমাদের সবাইকে চলে যেতে হবে আমাদের স্থায়ী নিবাস কবরে। কবরের জীবন খুবই ভয়াবহ, যার শুরু আছে শেষ নেই। বিশ্বের আদি মানব আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে অদ্য পর্যন্ত যে সকল মহামানব কিংবা সাধারণ মানব যারাই দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়ে চলে গেছেন তারা সবাই এখন কবরের স্থায়ী বাসিন্দা।
বর্তমানে যারা বেঁচে আছি এ নশ্বর পৃথিবীতে তারাও একদিন চলে যাব কবরে। ভবিষ্যতে যারা আসবেন তারাও চলে যাবে। প্রবাহমান নদীর মতোই বয়ে চলছে পৃথিবীর সময় এবং কালের স্রোতধারা। এভাবেই অতিক্রম করছে দিন রাতের গতিধারা। এর মাঝে চলতে থাকবে হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে কেয়ামত পর্যন্ত বনি আদমের সিলসিলা। এ নশ্বর পৃথিবীতে কোন সৃষ্টিই স্থায়ী নয়। স্থায়ী শুধু আল্লাহর অস্তিত্ব। যা আছে এবং থাকবে অনাদি অনন্তকাল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনের সূরা কাসাসের ৮৮নং আয়াতে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেন “আল্লাহর সত্তা ব্যতিত সব কিছুই ধবংসশীল”। সূরা আর রাহমানের ২৬নং আয়াতে আরও বলেন “ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে সব কিছুই নশ্বর”। মৃত্যুর পর প্রতিটি মানুষের জন্য আসবে কবর জীবন। যেহেতু কবর জীবন স্থায়ী জীবন, সেহেতু দুনিয়া থেকেই কবর জীবনের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে। আয় করে নিতে হবে কবর জীবনে চলার পাথেয়। দুনিয়ার জীবনে প্রত্যেক মানুষকে শিশু, কিশোর, যৌবন, এবং বার্ধক্য এই চারটি অধ্যায় অতিক্রম করতে হয়। ঠিক তেমনিভাবে মৃত্যুর পরেও প্রত্যেককে কবর, হাশর, মিজান এবং পুলসিরাত সহ মোট চারটি অধ্যায় অতিক্রম করতে হবে। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের মতে এই চারটি অধ্যায়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য একান্ত জরুরি। যদিও খারেজী সম্প্রদায় সর্বপ্রথম কবরের আজাব অস্বীকার করে বাতিল ফিরকা হিসেবে মুসলিম জগতে পরিচিতি লাভ করেছে। তারা তাদের ভ-ামী যুক্তি এভাবে তুলে ধরে যে, হাশরের ময়দানে বিচারের পূর্বে কবরের শাস্তি দেয়া কিভাবে মেনে নেয়া যায় (নাউযুবিল্লাহ)।
কবর জীবন যেমন সত্য ঠিক তেমনি কবর আজাবও সত্য। এতে কারো বিন্দুমাত্র সন্দেহ, সংশয় নেই এবং তা থাকতেও পারে না। কেননা কবর আজাবের ওপর বিশ্বাস স্থাপন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ওয়াজিব। আর এ বিশ্বাস দেড়হাজার বছর থেকে শুরু হয়ে অদ্য পর্যন্ত প্রত্যেক মুসলমানের অন্তরে আছে এবং থাকবে তা কেয়ামত পর্যন্ত। কবর আজাব সর্ম্পকে স্বয়ং রাসূল (সা.) আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। এই প্রসঙ্গে বুখারী শরীফে রাসূল (সা.) কর্তৃক বর্ণিত আছে তিনি বলেন “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই, কবরের আজাব, জীবন মৃত্যুকালিন সকল ফিৎনা আর মসীহ দাজ্জালের ফিৎনা থেকে”।
কবরের ছাওয়াল জওয়াব এবং আজাবের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনের সুরা ইব্রাহিমের ২৭নং আয়াতে এরশাদ করেন “আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাতে মজবুত রাখেন, এবং জালিমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন, আর আল্লাহ যা চান তা করেন”। অন্যদিকে পবিত্র কোরআনের সূরা আত-তুর এর ৪৫-৪৭নং আয়াতে আল্লাহ পাক আরও উল্লেখ করেন “তাদের কে ছেড়ে দিন সে দিন পর্যন্ত, যে দিন তাদের মাথায় বজ্রঘাত পতিত ।।
৪| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৭
হানিফঢাকা বলেছেন: কোরানে কবরে আযাব বলে কিছু নাই। এই ব্যপারে আপনি Click This Link লিঙ্কে দেখতে পারেন। এটা আমার প্রথম দিকের লেখা বলে ইংরেজীতে লেখা। যদি চান তবে বাংলাতেও লিখে দেব।
ধন্যবাদ।
৫| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৩১
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর বলেছেন: আল-কুরআন : প্রথমেই দেখা যাক পবিত্র কুরআনে এ বিষয়ে কি আছে। আল্লাহ তায়ালা ফেরাউনের ব্যাপারে বলেছেন, ‘‘ফেরাউন ও তার অনুচরদেরকে শোচনীয় আযাব গ্রাস করে ফেললো। সকাল-সন্ধায় তাদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হয়। আর যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন আদেশ করা হবে, ফেরাউন ও তার দলবলকে কঠিনতর আযাবে দাখিল কর।’’ -(সূরা আল-মু'মিন : ৪৫-৪৬)
উপরোল্লিখিত আয়োতগুলোতে কঠিনতর আযাব বলতে হাশরের ময়দানে চূড়ান্ত ফায়সালার পর জাহান্নামে নিক্ষেপ বুঝানো হয়েছে। আর সকাল-সন্ধ্যায় আগুনের সামনে পেশ করার ব্যাপারটা বরযখের (কবরের) জিন্দেগীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মুফাসসেরিনে কেরাম বলেছেন, কবরের আযাব যে সত্য উপরোক্ত আয়াত তার প্রমাণ। (দেখুন : তাফসিরে কুরতুবী, ইবন কাছির, সূরা : আল মু'মিন : ৪৫-৪৬)।
আল্লাহ তায়ালা আরও এরশাদ করেছেন, ‘‘তাদেরকে ছেড়ে দিন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তাদের মাথায় বজ্রাঘাত পতিত হবে। সেদিন তাদের চক্রান্ত তাদের কোন উপকারে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। গোনাহগারদের জন্য এ ছাড়াও শাস্তি রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।’’ -(সূরা আত্তূর : ৪৫-৪৭)
উপরোল্লিখিত আয়াতগুলোতে ‘‘এছাড়াও শাস্তি রয়েছে’’ বলে কবরের আযাবের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। (দেখুন : আক্বীদা তাহাবিয়া, পৃ: ১৩৩, শরহু আল ফিকহুল আকবার, পৃ: ১৭১)। আর কবরে সওয়াল-জওয়াবের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘‘আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাতের মজবুত রাখেন এবং জালিমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আর আল্লাহ যা চান তা করেন।’’ -(সূরা : ইবরাহিম : ২৭)। বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে এসেছে এ আয়াতে আখেরাত বলতে বরযখ অর্থাৎ কবরের জগত বুঝানো হয়েছে। দেখুন : মাআ'রেফুল কুরআন, পৃ: ৭১৭, শারহুল ফিকহুল আকবর, পৃ: ১৭০)। আল্লাহ তায়ালা মোনাফেকদের শাস্তির ব্যাপারে আরও এরশাদ করেছেন, ‘‘আমি তাদেরকে দু'বার আযাব প্রদান করবো। তারপর তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে বৃহত্তম আযাবের দিকে।’’ -(সূরা তাওবা : ১০১)। এখানে বৃহত্তম আযাব বলতে হিসাব-নিকাশের পর জাহান্নামের আযাব, আর প্রথম দু'বারের আযাব বলতে মু'মিনদের হাতে নিহত হওয়া এবং বরযখ অর্থাৎ কবরের আযাবের কথা বুঝানো হয়েছে। (দেখুন : আল ইবানাহ, পৃ: ৮৮)
৬| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৩৮
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর বলেছেন: কুরআনের পর আমরা দেখি এবার হাদীসে এ বিষয়ে কি এসেছে। কবরের আযাবের বিষয়ে এত সংখ্যক হাদীস এসেছে যে, শব্দের ঈষৎ তারতম্যের কারণে শব্দের দিক থেকে মুতাওয়াতির না হলেও মূল বক্তব্যের দিক থেকে তা মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ফরে এ বিষয়ে ঈমান আনা ওয়াজিব (দেখুন-আক্বীদা তাহাওয়ীয়া, পৃ: ১৩৬ ও শারহ আল ফিকহুল আকবার, পৃ: ১৭১)। তন্মধ্য থেকে নিম্নে কতিপয় হাদীস উল্লেখ করা হচ্ছে :
-বারা বিন আযেব (রা.) কর্তৃক বর্ণিত একটি বিশাল হাদীসে এসেছে, নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বাকী আল গারকাদ অর্থাৎ জান্নাতুল বাকীতে আমরা একটি জানাযায় এসেছিলাম। নবী করীম (সা.) আমাদের কাছে এসে বসলেন। আমরা তাঁকে ঘিরে বসলাম। সবাই এত চুপ যে মনে হয় মাথার উপর পাখি বসে আছে। কবর খোঁড়ার কাজ চলছে। তিনি তিনবার করে বলে উঠলেন, আমি আল্লাহর কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই ........ (আহমাদ/আবু দাউদ/ইবনে মাযাহ/হাকেম/ইবনে হাববান/আবু আওয়ানা)
-ইবনে আববাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা.) দুটো কবরের পাশ দিয়ে যাবার সময় বলছিলেন, তাদের কবর আযাব চলছে। তবে তেমন কোন বিরাট কারণে তাদের এ আযাব হচ্ছে না। একজন প্রশ্রাব করার পর ভাল করে পবিত্র হতেন না। আর দ্বিতীয় জন চোগলখুরী করে বেড়াতেন। তারপর একটা তাজা ডাল নিয়ে দু'ভাগ করে দু'কবরে গ্রোথিত করে বললেন, আশা করছি এ দু'টা ডাল না শুকানো পর্যন্ত তাদের আযাব কিছু লঘু করা হবে। -(বুখারী, মুসলিম)
-নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বান্দাকে যখন কবরে রেখে তার সাথীরা বিদায় নিয়ে চলে যায়, সে তাদের পায়ের জুতা/স্যান্ডেলের আওয়াজও শুনতে পায়। ঐ সময়েই দু'জন ফিরিশতা এসে তাকে বসিয়ে দেন। জিজ্ঞেস করেন, ‘‘এ লোকটি অর্থাৎ মোহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে তোমার ধারণা কি? মু'মিন ব্যক্তি তখন বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তখন তাকে বলা হয়, তাকিয়ে দেখ, ঐ যে জাহান্নামে তোমার আসনটা, সেটার পরিবর্তে আল্লাহ তোমাকে জান্নাতের আসন বরাদ্দ করে দিয়েছেন। উভয় আসনই সে দেখতে পাবে। মুনাফিক বা কাফিরকে যখন প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি বলতে পারো এ লোকটা সম্পর্কে? সে বলবে, আমি তো কিছু জানিনা। লোকেরা যা বলতো, আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি জানতে চাওনি, অনুসরণও করনি। আর ঐ মুহূর্তেই বিশাল এক লৌহ হাতুড়ি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হবে। আঘাতের ফলে সে বিকট স্বরে আর্তচিৎকার করে উঠবে, যা তার আশপাশে জিন, ইনসান এ দু'সৃষ্টি ছাড়া আর সবাই শুনতে পাবে। - (বুখারী)
অন্যান্য হাদীসে এসেছে, প্রথম প্রশ্ন হবে, তোমার রব কে? দ্বিতীয় প্রশ্ন হবে, তোমার দ্বীন কি? তৃতীয় প্রশ্ন থাকবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সম্পর্কে। এ ব্যাপারে এত প্রচুরসংখ্যক সহীহ হাদীস রয়েছে, সবগুলোর উল্লেখ এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে সম্ভব নয়। প্রচুরসংখ্যক হাদীস এসেছে নবী করিম (সাঃ) নামাযের ভেতরে সালাম ফেরানোর পূর্বে আল্লাহর কাছে যে কয়টা বিষয় থেকে সব সময় পানাহ চাইতেন এবং উম্মতকে পানাহ চাইতে তাকিদ করে গেছেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কবরের আযাব। উদাহরণ হিসাবে নিম্নতম হাদীসটি উল্লেখ করা হচ্ছে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দোয়া করেছেন, ‘‘হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই, কবর আযাব থেকে, জীবন-মৃত্যুকালীন সকল ফিৎনা থেকে, আর মসীহ দাজ্জালের ফিৎনা থেকে’’ - (বুখারী)।
যেখানে সহীহ হাদীসে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কবর আযাব থেকে পানাহ চেয়েছেন, সেখানে এ বিষয়ে শোবা সন্দেহ প্রকাশ করা হাদীস অস্বীকার করার পাঁয়তারা নয় কি?
৭| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৪২
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর বলেছেন: উপরোক্ত বক্তব্যের আলোকে আমরা বলতে চাই, প্রথমত কবর আযাব সংক্রান্ত হাদীসসমূহ কুরআনের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। কারণ, কুরআনের কোন আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘কবর আযাব বলতে কিছু নেই’’ যার ফলে বলা যাবে যে, হাদীসগুলো কুরআনের আয়াতের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বরং তার উল্টো আমরা ইতিপূর্বেই উল্লেখ করেছি, কুরআনের একাধিক আয়াত কবর আযাবের প্রতি সুষ্ট ইঙ্গিত প্রদান করেছে। এমনকি এমন যদি হতো যে, কুরআনে কবর আযাব সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। শুধু হাদীসেই বলা হয়েছে এবং হাদীসের বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হয়ে যায়, তাহলে তার প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব হয়ে যায়। কুরআনে নেই এ যুক্তি দিয়ে হাদীস বর্জন করার ভয়াবহ পরিণতি থেকে প্রিয় নবী (সাঃ) উম্মাতকে সতর্ক করে গেছেন।
সাহাবী মিকদাম বিন মা'দীকারব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, অচিরেই এমন লোকের আবির্ভাব ঘটবে যে আরাম কেদারায় গা এলিয়ে বসে থাকবে (অর্থাৎ কষ্ট করে হাদীসের জ্ঞান অর্জন করবে না), আমার হাদীস সম্পর্কে তাকে বলা হলে সে বলবে, তোমাদের আর আমাদের মধ্যে ফায়সালার জন্য আল্লাহর কিতাবই (কুরআন) যথেষ্ট। তাতে যা হালাল হিসাবে বলা আছে, সেটাকেই আমরা হালাল মনে করব, আর তাতে যা হারাম হিসেবে বলা হয়েছে, শুধু সেটাকেই আমরা হারাম মনে করব। সাবধান, আল্লাহর রাসূল যা হারাম করবেন, সেটা আল্লাহ কর্তৃক হারাম করার মতই। - (আবু দাউদ/ তিরমিযী/ ইবনে মাযাহ/ দারেমী)।
শুধু হালাল, হারাম নয়, শরীয়তের যাবতীয় ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম জানার সূত্র যেমন কুরআন, তেমনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হাদীসও। স্বয়ং আল্লাহতায়ালা এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন একাধিক আয়াতে। যেমন তিনি এরশাদ করেছেন, ‘‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর, আর যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক...’’। -(হাশর : ৭)
আরেকটি হাদীসে নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, তোমাদের কাছে দুটো বিষয় রেখে গেলাম, সে দুটোকে অাঁকড়ে ধরলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না, আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাত অর্থাৎ হাদীস। -(হাকেম)
হাশরের ময়দানে বিচারের আগে দুনিয়াতে মৃত্যুর আগে এবং মৃত্যুর পর বরযখী যিন্দেগীতে যে কোন অপরাধীকে যে কোন অবস্থায় শাস্তি দেয়ার অধিকার ও ক্ষমতা আল্লাহর অবশ্যই আছে। উপরোল্লিখিত আলোচনায় তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো। কাজেই এ সংক্রান্ত বিপরীত কোনো যুক্তির অসারতা একেবারেই দিবালোকের মত সুস্পষ্ট।
আরেকটি যুক্তি হল, কবর আযাব সংক্রান্ত দৃশ্যগুলো শুধু কবরে সমাহিত ব্যক্তির সাথেই সামঞ্জস্যশীল। কিন্তু যেসব মানুষের মৃতদেহ সমাহিত করা হয়নি, চিতায় ভস্মীভূত করা হয়েছে অথবা বাঘের পেটে বা হাঙ্গরের উদরে হজম হয়ে গেছে, তাদের তো কবরই নেই, কবর আযাব হবে কোথায়! আর ফিরিশতা এসে প্রশ্নগুলো করবেন কিভাবে, কোথায়?
এসব প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে, কবরের যিন্দেগীকে দুনিয়ার যিন্দেগীর মত মনে করার কারণে। কবর অর্থাৎ বরযখ সে এক অন্য জগত। পার্থিব জগতের সাথে তার কোন মিল নেই। বরযখের যিন্দেগী সবার জীবনেই ঘটবে। যাকে কবর দেয়া হয়েছে তার জীবনে যেমন বরযখের যিন্দেগী হবে, যে বাঘের পেটে হজম হয়ে গেছে তার জন্যও একই বরযখের যিন্দেগী অনুষ্ঠিত হবে। সে যিন্দেগীর প্রকৃত অবস্থা দুনিয়ার বস্তুগত প্রক্রিয়ার মত হবে না। কাজেই দুনিয়ার প্রক্রিয়া ও উপায় উপকরণ হুবহু যেমন আখেরাতের জন্য প্রযোজ্য নয়, তেমনি তা বরযখের যিন্দেগীর জন্যও প্রযোজ্য নয়। এ তিন জগতের প্রত্যেকটির রয়েছে আলাদা সিস্টেম। এক জগতের সিস্টেম দিয়ে অন্য জগতকে বিচার করাটাই বড় ভুল। এমনকি যাদেরকে কবর দেয়া হয়েছে, তাদের লাশও তো পচে গলে শেষ হয়ে যাবে। তখন তাদের বরযখের যিন্দেগী যেভাবে হবে, যাদেরকে কবর দেয়া হয়নি, তাদের বরযখের যিন্দেগীও সে প্রক্রিয়াতেই হবে।
একজন নেক বান্দাহ আর একজন কাফের, মুনাফেক বা পাপিষ্ঠ ব্যক্তির কবর যদি একদম পাশাপাশি থাকে, তাহলে হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী একজনের কবর হবে জান্নাতের টুকরার মত। অনেক প্রশস্ত করে দেয়া হবে, আলোকিত করে দেয়া হবে, বইতে থাকবে জান্নাতের সুবাতাস। আর আরেকজনের কবরকে সঙ্কুচিত করে দেয়া হবে, তা হবে জাহান্নামের গর্ত সদৃশ। সেখানে চলতে থাকবে আযাবের বিভীষিকা। পাশের কবরের এ বিভীষিকা তার প্রতিবেশীর শান্তিতে এতটুকুনও বিঘ্নতা সৃষ্টি করবে না। দুনিয়ার হিসেবে এটা কি করে সম্ভব! মৃত্যুর পরবর্তী যিন্দেগী, চাই সেটা বরযখ হোক আর আখেরাত- পুরোটাই গায়েব (অদৃশ্য)-এর অন্তর্ভুক্ত। এসব গায়েবের খবরের ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেছেন, (তারাই প্রকৃত মুত্তাকী) যারা গায়েবের প্রতি বিশ্বাস করে। এমন কোন যুক্তি প্রমাণ ও বিজ্ঞান নেই যা দিযে বরযখ ও আখেরাতের সবকিছুকে বুঝে তারপর ঈমান আনা যাবে, না হলে নয়। তাহলে গায়েবের উপর ঈমান আনা হলো কি করে? যা না হলে ঈমানই আনা হলো না। যার উপর সবকিছু নির্ভরশীল। তবে সময়মত সবই বুঝে আসবে যখন প্রকৃত পরিস্থিতির বাস্তব চেহারা সামনে আসবে ও তার মোকাবিলা করতে হবে। যখন গায়েবসমূহ প্রকাশিত হয়ে পড়বে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তোমার (চক্ষুর) পর্দা সরিয়ে দিয়েছি, আজকে তোমার দৃষ্টি সুতীক্ষ্ণ। (সূরা ক্বাফ : ২২)।
আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে সহীহ হাদীস অস্বীকার করার প্ররোচণা থেকে হেফাযত করুন। আমীন!
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪১
হানিফঢাকা বলেছেন: কবরে আজাব বলে কোরানে কিছু নেই। বরং এর বিপরিত কথা বলা আছে।