নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাহরিয়ারের ছেঁড়া পাতার ডায়েরি

শাহরিয়ার বুলবুল

মুক্ত বিহঙ্গের মত খোলা আকাশে বিচরণের আশায় স্বপ্ন দেখি। মেঘের সাথে খেলা করার প্রত্যয়ে উদ্দীপ্ত হই প্রতিটি ক্ষণ।

শাহরিয়ার বুলবুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজও সেই বৃষ্টি আছে, শুধু নেই...

১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:৪৪




পশ্চিম আকাশে ঘন কালো মেঘ। আজ অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি বের হচ্ছি। না, বৃষ্টি আসার ভয়ে নয়। আজ আকাশের মত আমারও মন খারাপ, কাজে মন বসছে না। আনিস ভাইকে গাড়িটা বের করতে বলে ফাইলগুলো ব্যাগে পুরে নিলাম। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতেই বৃষ্টি চলে এলো। আজ যেন বিশাল আকাশও আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামিয়ে দিয়েছে। আনিস ভাইও গাড়ি নিয়ে হাজির। আনিস ভাই আমার গাড়ির চালক, অবশ্য আমার গাড়ি বললে অনধিকার চর্চা হয়ে যাবে। অফিসের গাড়ি, আমার নয়। আনিস ভাই বেশ চৌকশ লোক, তার কর্তব্যপরায়ণতা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। আমাকে বাসা থেকে অফিসে নিয়ে আসতে একদিনও দেরি করেছেন বলে মনে পড়ে না। গাড়িতে উঠেই আজ তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করায় কোন সদুত্তর দিতে পারলাম না। মনে হল পৃথিবীর সব চালকেরাই বোধয় অহেতুক কথা না বলে থাকতে পারে না। আনিস ভাইও তাই। কিন্তু আমার মনের অবস্থা আঁচ করেই হয়তো আনিস ভাই আর কোন প্রশ্ন করলেন না।
জীবনের গল্পটা তো অন্যরকম হলেও হতে পারতো! কেন জানিনা আজ ষোল বছর পর এ কথাটাই বারবার মনে হচ্ছে। মনে হবার কারণ অবশ্য খুবই স্বাভাবিক। ষোল বছর পর যদি কারো সাথে হঠাৎ দেখা হয়ে যায়, তখন কত স্মৃতিই না এসে ভিড় করে চোখের সামনে। সব কিছুই কত জীবন্ত! না, স্মৃতিগুলো শুধুই আনন্দের নয়, নয় শুধুই বিভীষিকাময়ও। সেগুলি কেবল নির্বিকার, নির্লিপ্ত অমাবস্যার রাতের আঁধার, যেখানে ইচ্ছে করলেই কবির মনেও কাব্যি আসে না।
বৃষ্টি এমনিতেই আমার ভীষণ প্রিয় কিন্তু আজ যেন কোনভাবেই আমার মনকে নাড়া দিতে পারছে না, কেবল জানালার কাচে আছড়ে পড়ছে আর অসহায় ভাবে আমার মনে জায়গা না পেয়ে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ছে। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম গাড়ির চাকা বৃষ্টির পানিতে প্রায় তলিয়ে গেছে, তলিয়ে গেছে আমার মনও, বারো বছর আগের ঠিকানায়।
নীলা। হ্যাঁ, ষোল বছর আগের নীলা। আমার অনেক প্রিয় একটি নাম। নীলার সাথে আমার প্রথম আলাপ সেই কলেজ লাইফে, একটি সায়েন্স অলিম্পিয়াডে। অলিম্পিয়াডটি হচ্ছিল নীলার কলেজেই, আমি ছিলাম পরীক্ষার্থী আর নীলা ভলান্টিয়ার। সেদিন নীলার কাছে গিয়েও ওর সাথে কথা বলতে পারিনি। পারিনি বললে ভুল হবে, সাহসে কুলায় নি। কতটা লাজুক ছিলাম আমি! এখন ভাবলেই হাসি পায়। ঐ কলেজেই অনার্স পড়তো আমার মামাতো বোন, বন্যা আপু। তার কাছ থেকেই নীলার নামটা আর নীলাও যে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে সেটা জেনেছিলাম। পরে অবশ্য বন্যা আপুই আমাদের দুজনকে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমাদের মধ্যে পড়াশুনার বাইরে তেমন কোন কথাই হত না, অন্তত এইচএসসি পরীক্ষার আগে পর্যন্ত । আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে, যেদিন এইচএসসির রেজাল্ট দিল, সেদিনও আজকের মত খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। আর এই বৃষ্টির মাঝেও নীলা আমাকে ওর সাথে দেখা করতে বলল। নীলার ভালো রেজাল্টের পেছনে নাকি আমারও ততটাই ভূমিকা যতটা ওর। আসলে নীলা পড়াশুনার বাইরেও বিএনসিসি, বিতর্ক এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। তাই ওর যত নোট, গাইড, সাজেশন লাগতো সব কিছুই আমি জোগাড় করে দিতাম। নীলা বলতো বন্ধু হিসেবে আমার কাছ থেকে নাকি এসব ওর প্রাপ্য অধিকার! আর আমি যে কি কারণে ওর জন্য এসব করতাম তা শুধু আমিই জানতাম।
সেদিনের অতো বৃষ্টির মাঝেও আমরা দুজন দুজনকে ট্রিট দিয়েছিলাম, আইসক্রিমের ট্রিট, দুজনেরই অনেক পছন্দের। নীলার ইচ্ছাতেই সেদিন বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আইসক্রিম খেয়েছি। হয়তো সেদিন থেকেই বৃষ্টি আমার এতো ভালো লাগে!
ফাঁকা রাস্তায় নীলার সাথে বৃষ্টিতে ভিজে আইসক্রিম খাওয়ার মুহূর্তগুলো আজও ভুলতে পারি না।
বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটাই যেন নতুন এক অনুভূতির সৃষ্টিতে ব্যস্ত, কোন এক অজানা শক্তি বলে আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখছে। বৃষ্টি যে আরও জোরে আসছে! আমাদের তা নিয়ে কোন মাথা ব্যথাই নেই। পাশাপাশি হেঁটে চলেছি অজানা গন্তব্যের দিকে, বৃষ্টির বহমান ধারার ঠিক বিপরীত গতিতে। নীলা আইসক্রিম খেতে খেতে কি সব বলে চলেছে, ঠিক বুঝতে পারছি না। বুঝবই বা কি করে, আমি তো এক স্বপ্নরাজ্যে ভাসমান! আশেপাশের কোন কিছুই আমাকে প্রভাবিত করছে না। কত কাল ধরে যেন দুজন এভাবেই পাশাপাশি হেঁটে চলেছি। এভাবেই তো হাঁটতে চাই নীলার সাথে, আজীবন। কিন্তু নীলাকে কখনো মুখ ফুটে বলতে পারলাম না। আমি না হয় নাই পারলাম বলতে, তা বলে নীলা কি বুঝতে পারে না! পারে হয়তো। হাতের আইসক্রিম ততক্ষণে দুজনেরই শেষ। নীলার কথা যে চলছেই, সাথে বৃষ্টিও! ধীরে ধীরে কথাগুলো বোধগম্য হচ্ছে। ক্রমেই স্পষ্টতর হয়ে উঠছে প্রতিটা কথার মর্মার্থ। আচ্ছা, বৃষ্টির তেজ কেন ক্রমেই বাড়ছে, মাথার উপর আকাশটাও কেমন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে, ধরণীর সকল আভা কেড়ে নিয়ে স্বার্থপরের মত সূর্যটাও তার গন্তব্যে পা বাড়িয়েছে, আর আমার অনুভূতিগুলোও যেন সে পথেরই পথিক হয়ে আমাকে বিদায় জানাচ্ছে।
হঠাৎ সামনে থেকে আনিস ভাই ডেকে জানিয়ে দিল বাসায় পৌঁছে গেছি। গাড়ি থেকে নামতেই আমার নীলা মামনি দৌড়ে এসে আমার কোলে উঠে গেল। হ্যাঁ, ওর নামও নীলা, আমার চার বছরের ছোট্ট নীলা। প্রতিদিনই আমার নীলা এই সময়ে আমার অপেক্ষায় থাকে, আর আমি ওর...

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:০৯

বিজন রয় বলেছেন: মনে হলো সুন্দর একটি সাহিত্য পড়লাম। আসলে বৃষ্টির মিশেলে কোন কিছু একটু হৃদয় দিয়ে লিখলে তা হৃদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে।

ভাল লেগেছে।
সকালীয় শুভেচ্ছা।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৬

শাহরিয়ার বুলবুল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আপনাকেও সকালীয় শুভেচ্ছা। ভালো থাকবেন।

২| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:১৯

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: ভালো লেগেছে।





ভালো থাকুন নিরন্তর। ধন্যবাদ।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৭

শাহরিয়ার বুলবুল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.