নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কেন নজরুল ভাই হোস্টেলে থেকে গিয়েছিলেন তা তিনি নিজেও জানেননা । হোস্টেলটা খালি হয়ে গিয়েছিল আগেই । নজরুল ভাই মানে কার্টুনিস্ট নজরুল । পাক সেনা এসে গেটে দাড়িয়েই গুলিবর্ষণ করে তারপর ভিতরে ঢুকল । নজরুল ভাই নিজের রুমে এক কোনে গুটিয়ে বসে , ভীত এবং সন্ত্রস্ত ।
আবারো গুলির শব্দ এবং মনে হলো শব্দ খুব কাছে । নজরুল ভাই ভাবছিলেন তিনি তো কোন অপরাধ করেননি , তার কিছু হবেনা । বুটের মচমচ শব্দ এগিয়ে আসছে তার রুমের দিকে। দরজা বন্দ । কটা লাথি পড়ল দরজায় । চিৎকার এলো দরওয়াজা খোল । নজরুল ভাই ভয়ে দরজার ছিটকিনি খুলে দিলেন । ঢুকে খাটের নিচ , আলমিরা দেখল । তার আগেই নজরুল ভাইকে দেয়াল বরাবর দাড় করিয়ে দিয়েছে। এরপরও নজরুল ভাইএর বিশ্বাস ছিল তাঁকে কিছু করবে না । জিজ্ঞাসা করল স্টুডেন্ট ? নজরুল ভাই মাথা ঝাকালেন । সেনারা দেওয়ালে রাখা বোর্ডের উপরে কাগজে আকা কিছু ছবি দেখল । নজরুল ভাই উর্দু বোঝেন না এবং যতটুকু বুঝতেন তা ঐ মুহূর্তে ভুলে গেছেন । সেনারা তাঁকে মারধর , লাথি গুতা এসব কিছুই করেনি । একটা সাহস পাচ্ছিলেন তিনি । ওদেরও বেশ নরম দেখা গেল । এবার তারা নজরুল ভাইকে মাটিতে বসতে বলল । নজরুল ভাই বসে পড়লেন দেওয়ালের গায়ে যেখানে দাড়িয়ে ছিলেন । বাইরে থেকে হুংকার এলো কিছু । সবাই বেরুতে লাগলো । শেষজন দরজায় দাড়িয়ে রাইফেল উচু করে কোন রকম দেরি না করেই গুলি ছুড়ল । নজরুল ভাই এলিয়ে পড়লেন কাত হয়ে । যে সেনাটি গুলি করেছিল সে চলে গেল কিছু না দেখেই । গুলি ঢোকাটা টের পাননি কিন্তু এবার আস্তে ধীরে ব্যথা তীব্র হতে লাগলো । নজরুল ভাই দেখতে পেলেন তার দৃষ্টি ঝাপসা হচ্ছে । সেই কোন কালে বৃদ্ধ লোকটি তার বাড়ির সামনে দাড়িয়ে যা বলছিলেন , তা ভেসে উঠলো চোখের সামনে । খুব দ্রুত পুরনো দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভেসেই মিলিয়ে যেতে লাগলো । মা , বাবার মুখ ভেসে উঠতে লাগলো চোখের সামনে । নজরুল জ্ঞান হারালেন। কতক্ষন বাদে তার জ্ঞান ফিরেছে তিনি জানেননা । তার ভাষায় “ অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম বাইরের আলোর দিকে । নড়তে গিয়ে প্রচণ্ড এবং অসহনীয় ব্যাথা , মনে পড়তে লাগলো আমিতো গুলি খেয়েছি, ভয় চেপে উঠলো ওরা আসছে, আবারো রাইফেল তাক করে গুলি করবে”। শুয়ে থেকে ব্যথার উৎসে বা হাত দিলেন । ডান হাতের কলার বোনের নিচে গুলি লেগেছে । হাত দিয়ে টের পেলেন রক্ত শুকিয়ে গেছে । এবার তার বোধ হল তিনি বেচে আছেন । মেঝের দিকে তাকিয়ে দেখলেন রক্তে ভেসে গেছে এবং তাও প্রায় শুকিয়ে গেছে । অনুমান করলেন বেশ আগে কিন্তু কতক্ষন আগে ঘটেছে তা বলতে পারলেন না । শুয়ে থাকলেন , ওঠার কোন শক্তি শরীরে নেই । পানির পিপাসা লেগেছে , শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে গলা । একটা জগে পানি ছিল কিন্তু কে এনে দেবে পানি । কথা বলার শক্তি নেই । একবার ভাবলেন দারোয়ানকে ডাক দেবেন কিন্তু গলা থেকে স্বর বেরুলনা । দুপুরের পর বারান্দায় ফিসফিস শব্দ । দুজন লোক দরজার কাছে দাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো । তিনিও অপলক তাকিয়ে বুঝলেন এরা তাদের হোস্টেলের পিছনের বস্তিতে থাকে । তারা বোধকরি বুঝতে পারছিলনা এই লোকটি বেচে আছে না মরে গেছে । এবার তিনি সর্বশক্তি নিয়ে গলায় আওয়াজ তুললেন । ওরা দ্রুত তার কাছে এগিয়ে আল্লাহকে শুকরিয়া জানাতে থাকলেন , দোয়া পড়তে লাগলেন । নাম জিজ্ঞেস করে তার ক্ষত দেখলেন । বিছানার চাদর ছিঁড়ে তাঁকে বাধন দিলেন । তারা বললেন এখন বেরুলে সেনা টহলের মুখে পড়লে আর বাঁচানো যাবেনা । নজরুল পানি খেতে চাইলেন । পাশেই বাথরুম , সেখানের কল থেকে পানি এনে ওরা পানি খাওয়ালো । সন্ধ্যা হতেই একটা ভ্যানে শুইয়ে তাঁকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে গেল ওরা । এমারজেন্সিতে নেওয়ার আগে লোকটি ভিতরে গেল আলাপ করতে । তাঁকে ওরা নিল ও টিতে সরাসরি । বলল এমারজেন্সিতে মাঝে মধ্যেই মিলিটারি আসছে গুলিবিদ্ধ লোকের খোজে । অপারেশন হল, গুলিও বেরুলো , নজরুল ভাইকে বেডে নিল । যারা তাঁকে নিয়ে এসেছিল তারা বোধকরি চলে গেছে । নজরুল ভাইকে ডাক্তার বলল এতক্ষন যে বেচে ছিলেন এটা একটা মিরাকল ঘটনা । হোস্টেলে একজন ছাত্র গুলিতে নিহত হয়েছিল, তিনি শাহনেওয়াজ । তার নামেই শাহনেওয়াজ হল হয়েছে , নিউ মার্কেটের পশ্চিম দিকে । হোস্টেলের কুকটি মারা গিয়েছিল গুলিতে ।
নজরুল ভাইয়ের সাথে দীর্ঘদিন দেখা হয়না । প্রতিবছর তার অসুখ বেড়ে যায় । এগুলো ঐ একাত্তরের সিন্ড্রোম । তখন খুব খারাপ ব্যাবহার করেন মানুষের সাথে । আমার সাথে তার সখ্যতা ছিল ছাত্র জীবনে (৭৬-৮১)। কার্টুন করতেন কিন্তু পরে তাও বন্দ হয়ে গিয়েছিল ।
নজরুল ভাই এখন কেমন আছেন জানিনা ।
২৫ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:২২
শাহ আজিজ বলেছেন: প্রবাস জীবনে একবার গেলে সব বদলে যায় । দেখি চেষ্টা করব খুজে নেবার ।
ধন্যবাদ আপনার ইনফোর জন্য ।
২| ২৫ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৫৪
স্টকহোম বলেছেন: লেখক@ ঠিক বলেছেন।
তবুও এইযে ব্লগ, অনলাইন লেখাজোকা এটাই বা্ঁচতে শেখায়, মনে করা, শেক্ঁড় খু্ঁজতে শেখায়।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:১৩
স্টকহোম বলেছেন: হ্যা, কার্টুনিস্ট নজরুলের কথা আজকে অনেকেই জানে না। আমি দেখেছি, মনে আছে।
আমিই আপনার এই লেখা পড়ে গুগুল সার্চ দিয়ে এটা পেলাম।
In the event, the association also presented a crest to senior cartoonist and artist Nazrul Islam for his lifetime contribution to cartoons in Bangladesh. Nazrul was active in the post liberation
Click This Link