নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

২৫শের রাতে কার্টুনিস্ট নজরুলের বেচে যাওয়ার কাহিনী

২৫ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৩

কেন নজরুল ভাই হোস্টেলে থেকে গিয়েছিলেন তা তিনি নিজেও জানেননা । হোস্টেলটা খালি হয়ে গিয়েছিল আগেই । নজরুল ভাই মানে কার্টুনিস্ট নজরুল । পাক সেনা এসে গেটে দাড়িয়েই গুলিবর্ষণ করে তারপর ভিতরে ঢুকল । নজরুল ভাই নিজের রুমে এক কোনে গুটিয়ে বসে , ভীত এবং সন্ত্রস্ত ।
আবারো গুলির শব্দ এবং মনে হলো শব্দ খুব কাছে । নজরুল ভাই ভাবছিলেন তিনি তো কোন অপরাধ করেননি , তার কিছু হবেনা । বুটের মচমচ শব্দ এগিয়ে আসছে তার রুমের দিকে। দরজা বন্দ । কটা লাথি পড়ল দরজায় । চিৎকার এলো দরওয়াজা খোল । নজরুল ভাই ভয়ে দরজার ছিটকিনি খুলে দিলেন । ঢুকে খাটের নিচ , আলমিরা দেখল । তার আগেই নজরুল ভাইকে দেয়াল বরাবর দাড় করিয়ে দিয়েছে। এরপরও নজরুল ভাইএর বিশ্বাস ছিল তাঁকে কিছু করবে না । জিজ্ঞাসা করল স্টুডেন্ট ? নজরুল ভাই মাথা ঝাকালেন । সেনারা দেওয়ালে রাখা বোর্ডের উপরে কাগজে আকা কিছু ছবি দেখল । নজরুল ভাই উর্দু বোঝেন না এবং যতটুকু বুঝতেন তা ঐ মুহূর্তে ভুলে গেছেন । সেনারা তাঁকে মারধর , লাথি গুতা এসব কিছুই করেনি । একটা সাহস পাচ্ছিলেন তিনি । ওদেরও বেশ নরম দেখা গেল । এবার তারা নজরুল ভাইকে মাটিতে বসতে বলল । নজরুল ভাই বসে পড়লেন দেওয়ালের গায়ে যেখানে দাড়িয়ে ছিলেন । বাইরে থেকে হুংকার এলো কিছু । সবাই বেরুতে লাগলো । শেষজন দরজায় দাড়িয়ে রাইফেল উচু করে কোন রকম দেরি না করেই গুলি ছুড়ল । নজরুল ভাই এলিয়ে পড়লেন কাত হয়ে । যে সেনাটি গুলি করেছিল সে চলে গেল কিছু না দেখেই । গুলি ঢোকাটা টের পাননি কিন্তু এবার আস্তে ধীরে ব্যথা তীব্র হতে লাগলো । নজরুল ভাই দেখতে পেলেন তার দৃষ্টি ঝাপসা হচ্ছে । সেই কোন কালে বৃদ্ধ লোকটি তার বাড়ির সামনে দাড়িয়ে যা বলছিলেন , তা ভেসে উঠলো চোখের সামনে । খুব দ্রুত পুরনো দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভেসেই মিলিয়ে যেতে লাগলো । মা , বাবার মুখ ভেসে উঠতে লাগলো চোখের সামনে । নজরুল জ্ঞান হারালেন। কতক্ষন বাদে তার জ্ঞান ফিরেছে তিনি জানেননা । তার ভাষায় “ অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম বাইরের আলোর দিকে । নড়তে গিয়ে প্রচণ্ড এবং অসহনীয় ব্যাথা , মনে পড়তে লাগলো আমিতো গুলি খেয়েছি, ভয় চেপে উঠলো ওরা আসছে, আবারো রাইফেল তাক করে গুলি করবে”। শুয়ে থেকে ব্যথার উৎসে বা হাত দিলেন । ডান হাতের কলার বোনের নিচে গুলি লেগেছে । হাত দিয়ে টের পেলেন রক্ত শুকিয়ে গেছে । এবার তার বোধ হল তিনি বেচে আছেন । মেঝের দিকে তাকিয়ে দেখলেন রক্তে ভেসে গেছে এবং তাও প্রায় শুকিয়ে গেছে । অনুমান করলেন বেশ আগে কিন্তু কতক্ষন আগে ঘটেছে তা বলতে পারলেন না । শুয়ে থাকলেন , ওঠার কোন শক্তি শরীরে নেই । পানির পিপাসা লেগেছে , শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে গলা । একটা জগে পানি ছিল কিন্তু কে এনে দেবে পানি । কথা বলার শক্তি নেই । একবার ভাবলেন দারোয়ানকে ডাক দেবেন কিন্তু গলা থেকে স্বর বেরুলনা । দুপুরের পর বারান্দায় ফিসফিস শব্দ । দুজন লোক দরজার কাছে দাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো । তিনিও অপলক তাকিয়ে বুঝলেন এরা তাদের হোস্টেলের পিছনের বস্তিতে থাকে । তারা বোধকরি বুঝতে পারছিলনা এই লোকটি বেচে আছে না মরে গেছে । এবার তিনি সর্বশক্তি নিয়ে গলায় আওয়াজ তুললেন । ওরা দ্রুত তার কাছে এগিয়ে আল্লাহকে শুকরিয়া জানাতে থাকলেন , দোয়া পড়তে লাগলেন । নাম জিজ্ঞেস করে তার ক্ষত দেখলেন । বিছানার চাদর ছিঁড়ে তাঁকে বাধন দিলেন । তারা বললেন এখন বেরুলে সেনা টহলের মুখে পড়লে আর বাঁচানো যাবেনা । নজরুল পানি খেতে চাইলেন । পাশেই বাথরুম , সেখানের কল থেকে পানি এনে ওরা পানি খাওয়ালো । সন্ধ্যা হতেই একটা ভ্যানে শুইয়ে তাঁকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে গেল ওরা । এমারজেন্সিতে নেওয়ার আগে লোকটি ভিতরে গেল আলাপ করতে । তাঁকে ওরা নিল ও টিতে সরাসরি । বলল এমারজেন্সিতে মাঝে মধ্যেই মিলিটারি আসছে গুলিবিদ্ধ লোকের খোজে । অপারেশন হল, গুলিও বেরুলো , নজরুল ভাইকে বেডে নিল । যারা তাঁকে নিয়ে এসেছিল তারা বোধকরি চলে গেছে । নজরুল ভাইকে ডাক্তার বলল এতক্ষন যে বেচে ছিলেন এটা একটা মিরাকল ঘটনা । হোস্টেলে একজন ছাত্র গুলিতে নিহত হয়েছিল, তিনি শাহনেওয়াজ । তার নামেই শাহনেওয়াজ হল হয়েছে , নিউ মার্কেটের পশ্চিম দিকে । হোস্টেলের কুকটি মারা গিয়েছিল গুলিতে ।
নজরুল ভাইয়ের সাথে দীর্ঘদিন দেখা হয়না । প্রতিবছর তার অসুখ বেড়ে যায় । এগুলো ঐ একাত্তরের সিন্ড্রোম । তখন খুব খারাপ ব্যাবহার করেন মানুষের সাথে । আমার সাথে তার সখ্যতা ছিল ছাত্র জীবনে (৭৬-৮১)। কার্টুন করতেন কিন্তু পরে তাও বন্দ হয়ে গিয়েছিল ।
নজরুল ভাই এখন কেমন আছেন জানিনা ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:১৩

স্টকহোম বলেছেন: হ্যা, কার্টুনিস্ট নজরুলের কথা আজকে অনেকেই জানে না। আমি দেখেছি, মনে আছে।
আমিই আপনার এই লেখা পড়ে গুগুল সার্চ দিয়ে এটা পেলাম।
In the event, the association also presented a crest to senior cartoonist and artist Nazrul Islam for his lifetime contribution to cartoons in Bangladesh. Nazrul was active in the post liberation
Click This Link

২৫ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:২২

শাহ আজিজ বলেছেন: প্রবাস জীবনে একবার গেলে সব বদলে যায় । দেখি চেষ্টা করব খুজে নেবার ।
ধন্যবাদ আপনার ইনফোর জন্য ।

২| ২৫ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৫৪

স্টকহোম বলেছেন: লেখক@ ঠিক বলেছেন।
তবুও এইযে ব্লগ, অনলাইন লেখাজোকা এটাই বা্ঁচতে শেখায়, মনে করা, শেক্ঁড় খু্ঁজতে শেখায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.