নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গুয়ের্নিকা - পাবলো পিকাসো

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:১১



গুয়ের্নিকার দীর্ঘ ক্যানভাস যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিমণ্ডলে হাজারো মানুষের দিগ্বিদিক ছুটোছুটি, আর্তচিৎকার এবং মৃত্যুর খসড়া। এখানে মোট ছয়টি মানুষের দেহাঙ্গ পরিলক্ষিত হয়, যার চারটি নারী, একটি পুরুষ এবং একটি শিশু। এছাড়া একটি ঘোড়া, ষাঁড়, মাথার ওপর আলোকিত বিজলী বাতি এবং আবছা আঁধারে চিৎকার করে উঠা একটি পাখিও ক্যানভাসে আঁকা হয়েছে। পুরো ছবিটি সাদাকালো রঙে আঁকা। এর মাধ্যমে এক অদ্ভুত আবহের সৃষ্টি হয়েছে, যা শান্তিপ্রিয় দর্শকের মনে ভয়ের সঞ্চার করতে সক্ষম। পুরো ছবিটি জুড়ে প্রকাশিত হয়েছে বহু প্রতীকী উপাদান।

প্রথমেই বাঁদিকে আঁকা ষাঁড়ের দিকে লক্ষ করা যাক। এখানে ষাঁড়ের মাধ্যমে পাবলো পিকাসো স্পেনের বিখ্যাত ষাঁড়ের লড়াইকে ফুটিয়ে তুলেছেন। আর ছবির এই ষাঁড়টি তাই সমগ্র স্পেনের সাধারণ মানুষের প্রতিচ্ছবি। ছবিতে দেখা যায়, আক্রমণে আহত ষাঁড়টি এক সন্তানহারা নারীর ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এই নারী সমগ্র স্পেনের সন্তানহারা, যুদ্ধ নির্যাতিতাদের প্রতিচ্ছবি। মাঝখানে পিকাসো অঙ্কন করেছেন জখমে চিৎকার করতে থাকা এক ঘোড়াকে। এই ঘোড়ার প্রতীকী অর্থ নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। অনেকের কাছে, ঘোড়া এবং ষাঁড় দু’টোই ফ্র্যাঙ্কোর ফ্যাসিবাদের প্রতিচ্ছবি।

আবার অনেকে এই ঘোড়াকে যুদ্ধাহত নিরীহ মানুষের দুর্গতির প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ঘোড়ার পদদলিত হয়ে ছিন্নদেহে শায়িত এক মৃত সৈনিক। তার হাতের ভগ্ন তরবারির মুখে জন্ম নিচ্ছে এক মলিন ফুল। তার অপর হাতে যিশুখ্রিস্টের ক্রুশের চিহ্ন স্পষ্ট ইঙ্গিত করে সৈনিক যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন। এই সৈনিক প্রজাতন্ত্রের আশা-ভরসার প্রতীক। ছবির মাঝখানে উজ্জ্বল বিজলী বাতি দিয়ে হয়তো চিত্রকর যুদ্ধে ব্যবহৃত আধুনিক প্রযুক্তি এবং সমরাস্ত্রের কথা বুঝিয়েছেন। আবার এই বাতি কারাগারের টর্চার সেলের বাতির প্রতীক হিসেবেও ব্যাখ্যায়িত হয়েছে।

আর এই ভয়াবহ অবস্থা দেখে ঘোড়ার পাশে ঘরের জানালা দিয়ে এক নারী প্রদীপ হাতে উঁকি দেয়ার দৃশ্য ফুটে উঠেছে। এর নিচে আরেক নারীর অবয়ব ফুটে উঠেছে। তার এক পা মাটিতে স্থায়ীভাবে আবদ্ধ হয়ে আছে। তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে পালানোর চেষ্টা করেও যেন ব্যর্থ হচ্ছেন বারবার। একদম ডানদিকে হাত-পা ছুঁড়ে পলায়নরত এক আতঙ্কিত নারীকে দেখা যাবে। তার চেহারার ভাবভঙ্গি দেখে বোঝা যায়, মানব সভ্যতার পাশবিক রূপ দেখে তিনি চমকে উঠেছেন। তাছাড়া পুরো ছবিটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দর্শকের উৎসাহী চোখে আরো বহু প্রতীকী বিষয় ধরা দেবে, যা ছবিটিকে আরো মর্মান্তিক করে তুলবে।

সংগৃহীত -রামকৃষ্ণ মহাপাত্র


প্রযুক্তির স্পর্শে গুয়ের্নিকার রঙিন সংস্করণ Image Souce Behance

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:২৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই ধরনের ছবিকে কি abstract art বলে? এই সব ব্যাপারে আমি জানি কম। তাই জিজ্ঞাসা করলাম।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৫০

শাহ আজিজ বলেছেন: এটি পিকাসোর কিউবিসট Cubist style করা পেইন্টিং ।

২| ০৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: ষাড়ের লড়াই এই খেলাটা আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি। শুধু মাত্র এই খেলা নিজের চোখে দেখার জন্য আমি স্পেনে যাব।

০৫ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:১৯

শাহ আজিজ বলেছেন: অনেকেই বলেন এমন যুদ্ধবিরোধী মানুষ ষাঁড়ের রক্তাক্ত লড়াই কেন দেখেন ?

৩| ০৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:০৬

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: যুদ্ধের প্রতি একটি প্রতিবাদ

০৫ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:১৮

শাহ আজিজ বলেছেন: ঘোড়ার চি হি হি শব্দ আর মুখভঙ্গি যুদ্ধকে মনে করিয়ে দেয় ।

৪| ০৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৪৭

এইচ তালুকদার বলেছেন: নিউ মার্কেটে গুয়ের্নিকা ছাড়াও নেপোলিয়ন এর বিখ্য্যাত আল্পস পাড়ি, রেনেল অথবা ডয়েলির আকা ঢাকার পুরনো অবস্থা সহ অনেক বিখ্যাত পেইন্টিং বিক্রি হতে দেখেছি।এগুলো আকার অথবা কিনে নেবার ক্ষেত্রে কি কোন আইনি বাদ্ধবাদ্ধকতা আছে?

০৫ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:০১

শাহ আজিজ বলেছেন: এই ছবি বহুলক্ষ বার মুদ্রিত হয়েছে । আদৌ এর কপি রাইট আছে কি নেই জানিনা । যা নিউ মার্কেটে পাওয়া যায় তা নিশ্চিন্তে সংগ্রহ করতে পারেন ।

৫| ০৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:২৪

মা.হাসান বলেছেন: এটা সাদা-কালোতে আঁকার কোনো বিশেষ তাৎপর্য আছে কি?
আমাদের জয়নুল আবেদিনও সম্ভবত অনেক ছবিই সাদা-কালোতে করেছেন।

এ সময়ে সবই সম্ভব, কিন্তু ঐ সময়ে পিকাসো এত বড় সাইজের ক্যানভাস কোথায় পেলেন এই কৌতুহল রয়েই গিয়েছে।

রামকৃষ্ণ মহাপাত্রর পরিচয় জানতে পারলে ভালো লাগতো।

০৫ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:১৬

শাহ আজিজ বলেছেন: সাদা কালো ওই সময় এবং এখনও বিশেষ গুরুত্তের সাথে ব্যাবহার হয় । সাদা কালোতে গুয়ের্নিকা বা জয়নুল যতটা শক্ত দাবি নিয়ে আলোড়ন জাগায় রঙ্গিন ততটা নয় । ক্যানভাস নয় জোড়া দেয়া কাগজে একেছিলেন ।

রামকৃষ্ণ মহাপাত্র আমার ফেসবুক সজ্জন , কলকাতা থাকেন ।তার শখ ছবি পোস্ট করা ।

৬| ০৫ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪১

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:


প্রাঞ্জল ভাষায় গোয়ের্নিকাকে ইন্টারপ্রিট করার জন্য ধন্যবাদ, শাহ্ ভাই!
এটি শুধু একটি চিত্রকর্ম নয়, একটি ঐতিহাসিক দলিল।

০৫ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫০

শাহ আজিজ বলেছেন: পিকাসো অন্য শিল্পকর্মের জন্য আমার কাছে ভাল না লাগলেও গুয়ের্নিকার জন্য শ্রেষ্ঠ শিল্পীর মর্যাদা পেয়েছেন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.