নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চুই ঝাল

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০৯





খুব ছোট বেলা থেকে দেখতাম গাছের কাটা ডাল খাসীর মাংসে দেওয়া হচ্ছে । এটা বাড়ির গাছের ডাল নয় বাজার থেকে আনা । মা বললেন এতে ঝাল আছে খাসনে । কিছুদিন গেল , এক কুরবানিতে মুখে নিয়ে চাবিয়ে দেখলাম বেশ ঝাল । লাফ দিয়ে উঠে পানি খেলাম । একসাথে বসা বড়রা হেসে দিল । আমাকে বলল মাতব্বর হয়ে গেছিস । কিছুক্ষনের মধ্যে ঝাল কমলো কিন্তু মুখে অদ্ভুত একটা স্বাদ লেগে রইল । এরপর থেকে চুইঝাল ভেঙ্গে ছোট টুকরো চাবিয়ে আমি স্মার্ট হয়ে গেলাম । মুরগিতেও চুই দেওয়া হত তাতে ঝোলের স্বাদ বাড়ত । বড় বাজারে মন্দিরের সাথে চুইঝাল বিক্রেতা বসত । চুই চাইলেই সে দেখিয়ে বলত কোনটা দেব । চিকন ডালপালা থেকে মাঝারি ও মোটা সবি আছে । বাবার পছন্দ মাঝারি । একবার বড় কিনল । ওটা গরুর মাংসে চিবিয়ে মনে হল এটাই বেস্ট কারন শাঁস আছে মোটা অংশে । দামও খাসা । খাসীর মাংসে চুই এর সাথে আস্ত রসুন দেওয়া হত । রসুন মুখে ধরে টান দিলেই ফুড়ুৎ করে মুখে ঢুকে যেত । মোটা চুই এর শাঁস মাংসে মিশে যায় তাতে মাংসের একটা লোভনীয় গন্ধ স্বাদ দুটোই বাড়ে । ৫/৬ বছর আগে শেষ চুই খেয়েছিলাম ঢাকাতে । দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের শহর গ্রাম ছাড়া চুইএর ব্যাবহার নেই বা সবাই চেনেওনা । তো চুই বা চই এর কিছু পুস্তক বা পুথিগত বিবরন না দিলেই নয় । মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোডে একটা রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে চুইঝাল দেওয়া মাংস খাওয়া যায় ।
চুই ঝাল, বা চই ঝাল (বৈজ্ঞানিক নাম: Piper chaba) হচ্ছে পিপারাসি পরিবারের সপুষ্পক লতা। পান ও চুই ঝাল একই পরিবারের। চুই ঝাল গাছ দেখতে পানের লতার মতো। পাতা কিছুটা লম্বা ও পুরু। পাতায় ঝাল নেই। এর কাণ্ড বা লতা কেটে ছোট টুকরো করে মাছ-মাংস রান্নায় ব্যবহার করা হয়। রান্নার পর এই টুকরো চুষে বা চিবিয়ে খাওয়া হয়। ঝাল স্বাদের হলেও চুইয়ের নিজস্ব স্বাদ ও ঘ্রাণ আছে। চই ঝাল দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় প্রজাতি। এটি গোটা ভারত এবং এশিয়ার অন্যান্য উষ্ণ এলাকাসহ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিংগাপুর ও শ্রীলংকায় ও বাংলাদেশে জন্মে। উঁচু জায়গায় চুইঝালগাছ ভালো হয়। গোড়ায় পানি জমলে গাছ পচে যায়। গাছে ফুল-ফল হয়। বীজ থেকে চারাও হয়। তবে শিকড়সহ গিঁট কেটে লাগালে সহজে চারা হয়। গাছটির কাণ্ড বা লতা মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়। খুলনা অঞ্চলে চুইঝালকে মসলা হিসেবে ব্যবহার করে চুইঝালের মাংস রান্না করা হয়। রান্নায় এর ঝাল খাবারের স্বাদ বাড়ায় আবার শরীরেরও কোনো ক্ষতি করে না। ঝোল জাতীয় মাছ-মাংস সব কিছুতেই স্বাদ তৈরি করে। এদের কাণ্ড, শিকড়, পাতা, ফুল, ফলের ঔষধি গুণ আছে। বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলের জেলা খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট এবং নড়াইল এলাকায় এই চুইঝাল মসলা হিসেবে খুব জনপ্রিয়। চুইঝালে দশমিক ৭ শতাংশ সুগন্ধি তেল, ৫ শতাংশ অ্যালকালয়েড ও পিপালারটিন আছে ৫ শতাংশ ও ৪ থেকে ৫ শতাংশ পোপিরন থাকে। এছাড়া পোলার্টিন, গ্লাইকোসাইডস, মিউসিলেজ, গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সিজামিন, পিপলাসটেরল থাকে। এর কাণ্ড, শিকড়, পাতা, ফুল, ফল ইত্যাদি ভেষজগুণ সম্পন্ন। শিকড়ে থাকে দশমিক ১৩ থেকে দশমিক ১৫ শতাংশ পিপারিন।
চুইঝালের ঔষধিগুণ
• গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
• খাবারের রুচি বাড়াতে এবং ক্ষুধামন্দা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে
• পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ সারাতে চুইঝাল অনেক উপকারী;
• স্নায়ুবিক উত্তেজনা ও মানসিক অস্থিরতা প্রশমন করে;
• ঘুমের ওষুধ হিসেবে কাজ করে এবং শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে এবং শরীরের ব্যথা সারায়;
• সদ্য প্রসূতি মায়েদের শরীরের ব্যথা দ্রুত কমাতে ম্যাজিকের মতো সাহায্য করে;
• কাশি, কফ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও রক্তস্বল্পতা দূর করে;
• এক ইঞ্চি পরিমাণ চুই লতার সাথে আদা পিষে খেলে সর্দি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: চুই ঝাল সম্পর্কে আমার কোনো ধারনাই নাই।
শহরের মানুষ কি চুই ঝাল খায়? বা জানে চুই ঝাল কি?

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২৭

শাহ আজিজ বলেছেন: অনেকেই জানেনা । অনেকে জানে , সংখ্যা কম ।

২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২৮

কবিতা পড়ার প্রহর বলেছেন: চুই ঝাল কেমন জানিনা তবে এই মাংস দেখে আমি মাংসাসীর দুপুরবেলা খিধা লাগলো।

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৩০

শাহ আজিজ বলেছেন: গুগলে মিরপুর চিড়িয়াখানা রোড ---------------------

৩| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪৬

জুন বলেছেন: খুলনায় একবার চুই ঝাল খেয়ে ঝালের চোটে আমার হার্ট ফেল করার দশা।
এইটা খেয়েই মনে হয় আমার ঘেষ্টিক =p~

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৫০

শাহ আজিজ বলেছেন: উ হু হু হু হু হু হু হু হু হু হু হু হু এইডায় ঘেষ্টিক মেরামত করে :``>>

৪| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪৮

ওমেরা বলেছেন: প্রথমে মনে করেছিলাম আপনি মনে হয় দারুচিনির কথা বলছেন । পড়ার মনে হল এটা তা না !
চুইঝাল জীবনে নাম ও শুনি নাই।

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৫১

শাহ আজিজ বলেছেন: অনেকেই জানে না নামও শোনেনি ।

৫| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৫৪

কবিতা পড়ার প্রহর বলেছেন: থ্যাংক ইউ শাহ আজিজভাই।

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:১৪

শাহ আজিজ বলেছেন: ইউ আর ওয়েলকাম

৬| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২২

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: খুলনা শহরে এক মাছের বাজারে একটা অদ্ভুত মাছ দেখলাম। ওটা কখনো খাই নি। মাছওয়ালা বললেন, এটা চুই ঝাল দিয়া রান্না করলে মাংসের মতো স্বাদ লাগে। চুই ঝাল কী জিনিস? মাছওয়ালা বর্ণনা করলেন। দোকানদারের বর্ণনা শোনার পর আমি মাছটা টেস্ট করতে আগ্রহী হয়ে উঠি। আমি একা মানুষ। এক কেজির নীচে মাছ চাওয়াটা খুব লজ্জাকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো। সাহস করে বললাম, আড়াইশ গ্রাম মাছ দেন। উনি একটুকরো মাছ ওজন করে দেখলেন ৩০০ গ্রাম। তারপর চুই ঝালের দোকান দেখিয়ে ওখান থেকে ২ টাকার চুই ঝাল কিনতে বললেন।

চুই ঝালের দোকানে গিয়া যেই না বলছি ২ টাকার চুইঝাল দেন, দোকানদার ফিক করে হেসে দিলেন। হাসার কারণ জিজ্ঞাসা করতেই উনি বললেন, ১০টাকার নীচে দেওয়া যাবে না :) আমি ১০টাকার চুইঝাল আনলাম। বাসায় এসে রাঁধুমিয়াকে (রাঁধুনির পুংলিংগ, আমার বানানো :) ) বুঝাইয়া বলার পর চুই ঝাল দিয়া মাছ রান্না হলো। ৩০০ গ্রাম মাছ বাসায় দুইজন মানুষ খেয়ে শেষ করতে পারি নাই। মাছটা ছিল অপরিচিত। তরকারিতে চুই ঝালের স্বাদ পেলাম, নাকি ওরিজিন্যাল মাছের স্বাদ পেলাম, বুঝি নাই। ১০টাকার চুই ঝালের বাকি অংশ বাসায় অনেকদিন পড়ে ছিল, যদ্দিন না আমার স্ত্রী গিয়ে ওটার বর্ণনা শোনার পর মাংসের সাথে রান্না করেন।

এর কিছুদিন বাদে একজন চুইঝাল পাগলের সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাদেরকে চুকনগর বাসস্ট্যান্ডের মোড়ে এক রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলেন। সেখানেই প্রথম চুই ঝালের স্বাদটা বুঝতে পারি। এরপর মাঝে মাঝে সেই রেস্টুরেন্ট থেকে তরকারি আনা হতো। বাচ্চারা বাসায় গেলে ওদের জন্যও আনা হতো। খুলনায় যতদিন ছিলাম, চুই ঝাল দিয়ে তরকারিও রান্না করা হতো।

চুই ঝাল নিয়ে এই হলো আমার বিরাট ইতিহাস। এই ইতিহাস মনে করাইয়া দেয়ার জন্য ধন্যবাদ শাহ আজিজ ভাই :)

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৬

শাহ আজিজ বলেছেন: চুকনগরের আগে ওই রেস্টুরেন্ট খাসীর মাংসর জন্য বিখ্যাত । আমি কয়েক দফা খেয়েছি। নামটা ভুলে গেছি । মেদ মাছ । এই মাছেই মাংসের মশলা দেয় । সাধারনত মাছে চুই দেয় না । চুই এখন অনেক দামি । ২ টাকা আর ১০ টাকা পইড়া হাসলাম কিছুক্ষন । ৩০০ গ্রাম মাছের কাহিনী পড়ে কলকাতার ২৫০ গ্রাম মুরগির জোকস মনে পড়ে গেল ।

৭| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৫৯

মুরাদ বেগ বলেছেন: চুই ঝাল সম্পর্কে প্রথম শুনলাম

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৮

শাহ আজিজ বলেছেন: আমি জানতাম অনেকেই শোনেননি চুই এর কথা।

৮| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: LinkedIn এ এক লোক তার হোটেলের এড দেয়। সেখানে দেখে গেলাম একদিন খেতে চুই ঝাল

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩০

শাহ আজিজ বলেছেন: যাক খেয়েছেন তাহলে ।

৯| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৬

ইসমত বলেছেন: আমাদের বাগেরহাট খুলনায় চুই ঝাল ছাড়া মাছ-মাংসের তরকারী কেউ কি ভাবতে পারে! সেটা ভাবছি।

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩১

শাহ আজিজ বলেছেন: হ্যা তাই । চুই স্বাদ বাড়ায় ।

১০| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: সাতক্ষীরা দিয়ে সুন্দরবন বেড়াতে গিয়ে ফেরার সময় খেয়ে ছিলাম, তেমন আহামরি কিছু মনে হয়নি।

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩২

শাহ আজিজ বলেছেন: তাইলে দুই নম্বরি চুই দিছিল :((

১১| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৩৬

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: আমি খেয়েছি। ঝাল কিন্তু মজাই লাগে।

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৪২

শাহ আজিজ বলেছেন: চুইএর ঝাল দীর্ঘ সময় থাকেনা । অল্প খেলে মজাই লাগে ।

১২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৪৫

আমি সাজিদ বলেছেন: খুলনা ট্যুরে শুধু চুই ঝালের মাংসটাই খাওয়া হয়নি। সামনে খুলনা গেলে লিস্টের শুরুতেই চুই ঝাল রাখবো।

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৫

শাহ আজিজ বলেছেন: শিওর , ওয়েলকাম

১৩| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৫৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমার ছোট বেলায় একবার মরিচের দাম খুব বেড়ে গেলেে
আমাদের ঘরে চুই ঝালে রান্না হতো।
একবার লবনের দাম বেড়ে যাওয়াতে নারিকেলের ড্যাগা
মুচড়িয়ে তার রস জাল দিয়ে লবন বানানোর চেষ্টাও করেছিলাম।
ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটা চুই ঝাল রেস্তোরা নজরে পড়েছিলো
সম্ভবত শ্যামলী বা কলেজ গেটের কাছে !

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০১

শাহ আজিজ বলেছেন: মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে আছে একটা , এখন ডরে বাইরাই না , টিকা লইয়া যামু ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.