নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহিষের বাথান

১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:০৪






সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে নিচে নেমে রান্না ঘরে ঢুকে খেতে বসেছি , কাকিমা বললেন কাল রাতে আমাদের মহিষগুলো দড়ি ছিঁড়ে গেট ভেঙ্গে পালিয়ে গেছে । বেশ চমকিত খবর । স্কুলে যাওয়ার আগে রাস্তার মোড়ে দাদা আর দু তিনজন আলাপ করছেন দাড়িয়ে । দাড়িয়ে শুনলাম দু তিন মিনিট । মমিনুদ্দিন মিয়া রওনা হয়ে গেছে হুড়কার পথে । সময়টা মহিষদের ঘাস খাবার , কয়েকদিন দেরি হয়েছে ব্যাস রেগে মেগে দড়ি ছিঁড়ে নিজেরাই সম্ভবত চলে গেছে । এইটাই যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত । স্কুল থেকে ফিরে বাড়ির উঠোনে মিয়া আর দাদা আলাপ করছে , তাদের ঘিরে বাড়ির অন্য মানুষেরা । আমিও দাড়িয়ে পড়লাম । হুড়কার এক হিন্দু গেরস্থ সকাল সকাল ১৪ টি মোষ একসাথে যাচ্ছে দেখে বুঝলেন কিছু বিপত্তি হয়েছে । রাখালহীন এই মহিষ পালিয়েছে । তিনি কায়দা করে মোষ গুলোকে খাবারের লোভ দেখিয়ে বাড়ির ভেতরে আটকে ফেললেন । মিয়া ১১ টা নাগাদ হাজির ঐ বাড়িতে । বাইরে থেকে দেখাই যাচ্ছিল মোষগুলো আমাদের । মিয়াকে পেয়ে তারা সমস্বরে হাম্বা হাম্বা শুরু করল । মিয়া তাদের গায়ে হাত বুলিয়ে গেরস্থকে মোষের মালিকের পরিচয় দিতেই তিনি শ শ ব্যাস্ত হয়ে আরও কিছু খড় কুটো আর চেয়ার এনে দিলেন । গেরস্থকে অনুরধ করলেন তাদের কাছাকাছি ঘাসের সন্ধান থাকলে কাউকে দিয়ে কেটে খাওয়াতে , টাকা পয়সা যা খরচ হয় দিয়ে দেব বলে অনুরোধ । সব রক্ষা হল মায়কি সন্ধ্যায় ভুষি খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেন গেরস্থ । মিয়া আগামিকাল ভোরে নাস্তা খেয়েই একটা নৌকা ধরে হুড়কার ঐ গ্রামে গিয়ে মোষ নিয়ে বাজুয়া যাবে পশুর নদী পার হয়ে । রাতে কিষানদের থাকার জায়গায় বসে মিয়ার সাথে আড্ডা । মিয়া আমায় বললেন মোষরাও রাতের আকাশে তারা দেখে চলে । বুড়ো মোষ গুলো অনেক দফা বাজুয়া গেছে লালন পালনের জন্য ।
মোষ খুব স্পর্শকাতর প্রাণী গরুর চেয়েও । মিয়া কাল ভোরে রওনা হবেন , আমি হুক্কাতে দুটো টান দিয়ে দোতালায় আমার থাকার রুমে চলে এলাম । চাদের আলোয় সয়লাব চারিদিক । ইজি চেয়ারে বসে একটা সিগারেট ধরিয়ে বেশ ভাবনায় ডুবে গেলাম মোষের জীবন আর প্রকৃতির রুপ নিয়ে ।
আজ রবিবার । ভোরে উঠেই নাস্তা না খেয়ে আমাদের বাথানে চলে এলাম । বাঁশের গেট ভেঙ্গেছে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে । ভেতরে শক্ত কাঠের খুঁটির সাথে পুরাতন মোটা দড়ি যেভাবে ছিঁড়েছে দেখে আশ্চর্য স্তম্ভিত হয়ে গেলাম । কেউ সাহায্য করেনিত !! না তেমন লক্ষন নেই । চাচাত ভাই এসে গেছে , তার সাথে দাড়িয়ে একটা সম্ভাব্য পরিনতির কথা গাতথে লাগলাম । আমরা একই ক্লাসে পড়ি , একই রুমে ঘুমাই । শেষ প্রান্তে গরুগুলো নির্জীব দাড়িয়ে , ওরাই একমাত্র সাক্ষী ঐ রাতের ঘটনার । ভাই তাদের দিকে চেয়ে বলল তোদের চান্স নেই তাই তোরা পারিসনি দড়ি ছিঁড়তে । বোকা হাদারাম । আসলে মহিষের সাথে গরুগুলোও যায় , এবার মিস হয়ে গেল ।
মাথার মধ্যে মহিষ ঘুরছে । খেতে খেতে কাকিমাকে গোয়াল ঘরের গল্প বললাম । বাড়ির অন্যান্য মহিলারা রান্না ঘরের বারান্দায় বসে আমার গল্প বলা শুনছিল । কাকিমা অভয় দিলেন দেখ ওরা ঠিক সময়ে বাজুয়া পৌঁছে চার মাস বাদে এসে পড়বে । কাণ্ডারি ঐ মিয়া মাত্র । তাকেও পশুর নদী সাঁতরে পার হতে হয় মোষদের সাথে । কুমির আছে নদীতে । মিয়া হেসে ফেলেছিলেন আমার আতঙ্ক দেখে ।
বাজুয়া বাধ ঘেরা বিশাল এলাকা । এখানে সবুজ কচি ঘাস ভর্তি । দেখভাল করার মানুষেরা চুক্তি করে নেয় তবে মাদি মোষ পয়দা হলে তারা রেখে দেয় । এঁড়ে মোষ চলে মায়ের সাথে , কয়েক বছরে সেও জোয়াল টানতে শিখে যায় , তারপর আমৃত্যু তার সেবা গ্রহন করি আমরা ।
মিয়া ওদের পৌঁছে দিয়ে ফেরত এসেছিল পরদিন । চারমাস পরে আবার বাজুয়া গিয়ে মোষ নিয়ে ফেরত এলো মিয়া । আমি বাথানে গিয়ে মোষগুলোকে হাত বুলিয়ে আদর করতে লাগলাম । বাবা জীবিত থাকতে আমার নামে দুটো মোষ কিনেছিলেন । মিয়া দেখিয়ে দিলেন কোন দুটো তারা । ওরা সবাই সিমেন্টের ট্যাঙ্কি থেকে গরম ভুষি খাচ্ছে । আমি আদর করছি আমার মোষ দুটোকে । বাথানের গেটে ভিড় জমেছে গায়ের ছেলেপিলের । তারা পালিয়ে যাওয়া মহিষ দেখতে এসেছে ।

কপিরাইটঃ শাহ আজিজ

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:১৮

শায়মা বলেছেন: এইভাবে মোষ পালায় জানতাম না।

তবে শরৎবাবুর মহেশকে মনে পড়ে গেলো।

আহারে দুঃখী অবলা প্রাণীটা।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:২২

শাহ আজিজ বলেছেন: কিন্তু পালিয়েছে ।

২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:১৯

সোনাগাজী বলেছেন:



কোথায় এই যায়গা?
এখনো ঐ এলাকায় মহিষের বাথান আছে?

১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:২৫

শাহ আজিজ বলেছেন: মংলার কাছে রামপাল উপজেলা । বাজুয়া পশ্চিমে দাকোপ থানার ভিতরে । নোনা পানিতে সব শেষ । আমাদের মহিষ গরু কিচ্ছু নেই এখন ।

৩| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:২৮

শায়মা বলেছেন: রাজশাহীতেও একটা জায়গার নাম মহিশবাথান

১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:৪৫

শাহ আজিজ বলেছেন: উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় এই বাথান আছে । বাথান গুগল করে দেখ ।

৪| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:৪০

সোনাগাজী বলেছেন:


লেখক বলেছেন: মংলার কাছে রামপাল উপজেলা । বাজুয়া পশ্চিমে দাকোপ থানার ভিতরে । নোনা পানিতে সব শেষ । আমাদের মহিষ গরু কিচ্ছু নেই এখন ।

-দেশের ৫ ভাগের ২ অংশে নোনাজল ঢুকে যাবে ২০৪৫ সালের মাঝেই; মেঘনা হয়ে নোনাজল উপরের দিকেও আসবে।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:৪৯

শাহ আজিজ বলেছেন: আমরা শেষ , এবার উপরের দিকে পানি উঠলে আরও কৃষি আবাদি জমি শেষ হবে। পদ্মা , মেঘনা ,যমুনায় পানি লোনা হওয়া আমার দৃষ্টিতে সম্ভব হবে না কারন এই নদীতে উজান থেকে আসা স্রোত খুব তীব্র । আমি নদীর কাছে দাড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করেছি।

৫| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১১:৩১

সোবুজ বলেছেন: আমাদের মহিষ ছিল।আমি মহিষ চড়িয়েছি,মহিষের গাড়ি চালিয়েছি।তখন প্রচুর পতিত জমি ছিল।আমাদেরই প্রচুর জমি ছিল যেখানে আবাদ হতো না।এক ধরনের ছন হতো যা দিয়ে ঘর ছাওয়া হতো।প্রচুর জংগল ছিল।বেশি দিন আগের কথা না ৬০/৭০ বছর আগের কথা।আজকে গ্রামে গরুও নাই।কারো কারো বড়িতে গাভী আছে।গোয়াল ঘরেই পালে।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১১:৫১

শাহ আজিজ বলেছেন: তাহলে মহিষের ব্যাপারে আপনিই জানবেন ভাল । কোন এরিয়া আপনার ?

৬| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১১:৪০

সোনাগাজী বলেছেন:



সমুদ্রের পানি যদি গড়ে ১ ফুট বাড়ে, তখন জোয়ারের পানি অনেকটুকু উপরের দিকে আসবে।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১১:৫৬

শাহ আজিজ বলেছেন: ভারত থেকে আসা পানির স্রোত কিন্তু বেশ গতিময় । দেশের নদীর চর ড্রেজিং এখন মুখ্য বিষয় । আমি দেখেছি ফরিদপুর কুষ্টিয়ায় ছোট নদী বেধে মাছ চাষ হচ্ছে । এতে খুলনা এলাকায় নোনা পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে । একটা বোধগম্য সরকার আর রাজনীতিবিদ থাকলে ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিত ।

৭| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১১:৪৭

ঊণকৌটী বলেছেন: ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়া মানুষের বিপর্যয় এড়ানোর একটাই পথ জন সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং জনগণ কে বাস্তবিক জ্ঞানে শিক্ষিত করা

২০ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১২:০০

শাহ আজিজ বলেছেন: নদী ড্রেজিং এবং নদীর বাধ কেটে দিলে অনেক কাজ হবে । ভবিষ্যতের কথা ভাবিনা কারন বঙ্গোপসাগরে যে বিশাল চর জেগেছে তা দিয়ে দুটো বাংলাদেশ বানানো যাবে । ৯৪ তে আমি সমুদ্রে ভ্রমনের সময় আবিস্কার করি গভীর সমুদ্দুরে মাত্র তিন ফিট পানি ।

৮| ২০ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ২:১২

গরল বলেছেন: মহিষের দুধ আমার খুব ভালো লাগত আর মহিষের দুধ দিয়ে বানান খীড়ষা কি যে মজা। মহিষ পালনের গল্পটা খুব ভালো লাগল, মহিষ পালা এত কষ্ট জানা ছিল না। অনেকটা মঙ্গলিয়নদের পশুপালননের মত, পশু খাদ্যের যোগান দেওয়ার জন্য তারা শত শত মাইল পরিভ্রমণ করে পরিবার ও বাসস্থান সহ।

২০ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৮:০১

শাহ আজিজ বলেছেন: এই মহিষ জমি চাষ থেকে শুরু করে অনেক গুলো কাজ করে আমাদের উপকৃত করে। মহিষের দুধ খেয়েছি তবে পাতলা করে নাহলে পেট ছেড়ে দেবে । আমার দু বছর গ্রাম বাস বেশ শিক্ষণীয় ছিল ।

৯| ২০ শে এপ্রিল, ২০২২ ভোর ৪:৫৬

সোবুজ বলেছেন: খুলনা বিভাগ

২০ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৮:০২

শাহ আজিজ বলেছেন: আচ্ছা তো আমাদের এলাকা ।

১০| ২০ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ১১:২০

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: মহিষেরও অভিমান আছে রাগ আছে

২০ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ১১:২৯

শাহ আজিজ বলেছেন: এই জন্যই বলেছি মহিষ খুব সেন্সেটিভ প্রাণী ।

১১| ২০ শে এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ২:৫২

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: মোষ একসংগে চলতে পছন্দ করে।

২০ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:১৪

শাহ আজিজ বলেছেন: ঠিক বলেছেন , ওরা বেশ যুথবদ্ধতা পছন্দ করে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.