নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডাক্তার আমায় ফানেল হোল্ডারে চেপে ধরে স্পিরিট ল্যাম্প জ্বালিয়ে বললেন পটে বাবার ইউরিন ধরতে । ফানেল আধা ভরে একটা তরল জাতীয় কিছু বোতল থেকে মিশিয়ে জাল দেওয়া শুরু করলেন । মিনিটেরও কম সময় জ্বালিয়ে ল্যাম্প নিভিয়ে ফানেল ঠাণ্ডা করে এবার আমায় বললেন প্রস্রাব কেমন রঙ হয়েছে দেখেছ ? এবার সব ফেলে ধুয়ে একটা কাগজে টিক দিতে হবে ঠিক কি রঙ হবে । গাড় ইট , হাল্কা লাল , সবুজ ইত্যাদি । সকালে এবং বিকাল ৩টায় দুদফা এটা করতে হবে । বাবা প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় । ডাক্তার প্রতিদিন সকালে আসেন বাবার প্রেশার , তাপ মেপে বাবার সাথে কথা বলেন বাবা হাউমাউ করে কিছু বলেন কিন্তু তা কারো বোধগম্য নয় । আমি ভোরে এমনিতেই উঠি কারন ৭টায় আমার স্কুল । প্রথম কাজ বাবার পেসাব কালেক্ট করা । বাবার পেসাব কালেক্ট করতে প্রথম প্রথম খুব লজ্জা পাচ্ছিলাম , আস্তে ধীরে সহজ হয়ে এলো ব্যাপারটা । দ্রুত খেয়ে ছুট লাগালাম স্কুলের দিকে । ক্লাস সেভেনের ছাত্র আমি । ক্লাস সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত হয়ে ছুটি । আগে রাস্তায় কিছুক্ষন আড্ডা মেরে বা পশ্চিমের মাঠে বল খেলে বাড়ি ফিরতাম । এখন প্রায় সব কিছু বন্ধ । ফিরে গেলে মা বাবার পাশে গিয়ে তাকে দুজন মিলে টেনে ওঠালাম , তারপর আবার দুজন মিলে দাড়া করিয়ে বাবার পুরো ভর আমাদের উপর নিয়ে টুক টুক করে হেটে বারান্দায় একটা চৌকির উপর বসিয়ে মা তাকে হাল্কা গরম পানিতে শরীর ধুয়ে দিলেন । আমি সাবান দিয়ে পিঠটা ডলে দিলাম । এভাবেই বাবাকে গোসল করিয়ে আবার কসরত করে বিছানায় । গৃহকর্মী বিছানার চাদর পাল্টে দিয়েছে । আমার ছোট ভাই , মেজ ভাই কেউই আসেনা এইকাজে হাত দিতে কারন আমি তার অসুস্থ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত একান্ত সঙ্গী ছিলাম । আমাকে নিয়ে তিনি বাজারে লুকিয়ে মিষ্টি খেতেন , আমিও খেতাম , তারপর আমার হাতে ৪ আনা দিয়ে বলতেন কাউকে না বলতে । তার কি হয়েছে আমি জানতাম না তবে এসব অসুখে মিষ্টি বন্ধ , ভাতের বদলে রুটি ইত্যাদির ফরমায়েশ ডাক্তার আগেই দিয়েছেন । তিনি শোনেননি । তারপর একদিন তিনি আমার উপর এলিয়ে পড়ে বললেন আমাকে ধর । কুলি আর বাজারের দোকানদাররা সবাই উচু করে ঐ বিশাল শরীরটা রিকশায় তুলে দিল । সেই থেকে জানলাম বাবার ডায়াবেটিস হয়েছে । বাবা ক্রমশ ক্ষিপ্ত স্বভাবের হয়ে গেলেন । বাহাত দিয়ে আমার মুখে খামচাতেন এবং আমার মুখ রক্তাক্ত হতো । তিনি পরে কাছে ডেকে বা হাত দিয়ে বুলিয়ে দিতেন এবং উচ্চস্বরে কাঁদতেন । বিকাল ৩টায় আবারো পেসাব চেক এবং আমার ছুটি । আমি একটা গনতান্ত্রিক আবহ পেয়ে গেলাম এবং বড় মাঠ আর পার্কে গিয়ে ম্যাজিক দেখতাম বা বল খেলতাম । তবে সন্ধ্যা হলেই বাসায় ফিরে অজু করে মাগরিবের আজান দিয়ে বাবার পাশে বসে নিয়ত পড়তাম এবং স্বর উচু করে নামাজ আদায় করতাম । বাবা আমার সাথে সাথে ইশারায় নামাজ আদায় করতেন । আজানের ডিউটিটা বেশ আগেই পালন করতাম এবং একসাথে নামাজ আদায় বাধ্যতামুলক ছিল । আগে বাবা ইমামতি করতেন এখন আমি করি বাবা আমার সাথে নামাজ আদায় করেন । মা ই বাবার খাবার দাবার সামলাতেন । সন্ধ্যার পর আমি বাবার দু পা টিপে দিতাম যা বাবা সুস্থ থাকতেও করতাম ।
আস্তে ধীরে বাবা আরও অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং ৯ মাস ভুগে একদিন আমাদের দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলেন । আমরা তার মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে তার ইচ্ছা মত জায়গায় দাফন করলাম । বাবাকে কবরে শুইয়ে এতো কেঁদেছিলাম যে আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল । আজ ৫২ বছর পরও বাবা আমার কাছে সজীব এবং অমলিন ।
কপিরাইটঃশাহ আজিজ । জুন ২০২২ গল্প কবিতা ডট কমে প্রকাশিত ।।
১৯ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১০:১৯
শাহ আজিজ বলেছেন: তাইতো মনে হয় এখন এই সময়ে ।
২| ১৯ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১০:৩২
কামাল৮০ বলেছেন: জীবনে কষ্টের অভিজ্ঞতা নাই এমন মানুষ নাই।আমার বাবা মারা গেছেন যখন আমার ৬০ বছর বয়স।কিন্তু আমি যখন স্কুলে পড়ি তখন আমার ছোট তিন ভাই বোন বসন্ত রোগে একদিনে মারা যায়।এই দুঃখ মনে হলে এখনো কান্না পায়।গত বাইশ বছর ডায়াবেটিক্স ও হার্টের সমস্যা নিয়ে বেঁচে আছি।সন্তানরা কোন কাজই করতে দেয় না,সেটাও অনেক বছর।অনেক সময় ভাবি এই বেছে থেকে লাভ কি?
১৯ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১০:৪২
শাহ আজিজ বলেছেন: খুব দুঃখজনক ।
ভাল থাকুন ।
৩| ২১ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১২:৩৭
ঈশ্বরকণা বলেছেন: শাহ আজিজ
বাবাকে নিয়ে আপনার লেখাটা চমৎকার হয়েছে ! মন ভার হলো । আপনার লেখাতে একটা কমেন্ট করার জন্যই লগ ইন করলাম । তবে আমাদের ব্লগের এবং ব্লগারদের করুন দশা দেখে মনটা আরো খারাপ ।এই চমৎকার লেখাটাও পড়া আর মন্তব্যে করার মতো ব্লগারের এতো অভাব ! আর হেনো তেন ব্লগাররা এক সাথে ব্লগে পোস্ট করলে কি হবে সে রকম অর্থহীন লেখাতেও দেখি কমেন্ট করার জন্য ব্লগারের অভাব হয় না ! সেলুকাস ! অদ্ভুত সময় আর অদ্ভুত সব কাজ কারবার !
২১ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১২:৫১
শাহ আজিজ বলেছেন: খুব ভাল লাগলো আপনার উচ্ছসিত প্রশংসায় ।
ব্লগে কেমন একটা ঝিমুনি ভাব এসে গেছে । আমি ফ্লুতে পড়ে এখন একটা ঝিমুনির মধ্যে থাকি । এখন লোড শেডিঙ পর্ব উপভোগ করছি যদিও আমাদের দালানে জেনারেটর আছে ।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১০:১২
সোনাগাজী বলেছেন:
আপনি ডেডিকেটেড সন্তান।