নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৮৫ সাল । দেশ ঘুরে আমি ও আমার স্ত্রী , দুজনেই চীনা সরকারের বৃত্তিতে পিকিঙ্গে পড়ছি ফেরত যাচ্ছি । ব্যাংকক থেকে হংকং যাওয়ার পথে বিমানে পাশে বসা বৃদ্ধা চোখ মুখ পাকিয়ে অবাক হয়ে শুনল আমরা চীনা ভাষায় কথা বলছি । শুরু হল গল্প । শেষে ভদ্র মহিলা একজোড়া অসাধারন দেখতে প্লাস্টিকের তৈরি কানের দুল পরিয়ে দিলো আমার স্ত্রীকে । মনে হচ্ছিল বড় এক পিস মুক্তা , হাতে ধরে দেখলাম যা আমরা আগে দেখিনি । তার ছেলে এসবের কারখানা দিয়েছে , ব্যাবসা তুমুল , বুড়ো বুড়ি ছেলের দেওয়া প্যাকেজে থাইল্যান্ড ঘুরে থাইবেই ফেরত যাচ্ছে । বুড়ো বুড়ি দুজনের মুখ উজ্জ্বল , জীবনটা পরিপূর্ণ হলে যা হয় সেই উজ্জলতা পেলাম । চীনে বসে তাইওয়ানকে জানা কঠিন কিন্তু এই বুড়ো বুড়ির দেওয়া কানের দুলের উজ্জ্বল রঙ দেখে একটু বুঝলাম । এরপর দীর্ঘ ৩৮ বছর পেরিয়েছি । এর মধ্যে কর্মসূত্রে তাইওয়ানিজদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে অনেক দফা ।
তাইওয়ানের অর্থনীতির ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। সারা বিশ্বে দৈনন্দিন ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি - ফোন থেকে ল্যাপটপ, ঘড়ি থেকে কম্পিউটর গেমসের কনসোল - সব কিছুই চালায় যে কম্পিউটার চিপস তার সিংহভাগ তৈরি হয় তাইওয়ানে।একটি হিসাব অনুযায়ী - শুধু একটিমাত্র তাইওয়ানিজ কোম্পানি - তাইওয়ান সেমিকন্ডাকটার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি বা টিএসএমসি- বিশ্ব বাজারের অর্ধেকের বেশি কম্পিউটার চিপস উৎপাদন করে।টিএসএমসি একটি "উৎপাদন কারখানা" - এমন একটি প্রতিষ্ঠান যারা ভোক্তা এবং সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজাইন করা চিপস তৈরি করে। এটি একটি বিশাল শিল্প যার ব্যবসার পরিমাণ ২০২১ সালে ছিল দশ হাজার কোটি ডলার।
চীন যদি তাইওয়ান দখল করে নেয়, তাহলে বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি শিল্প বেইজিং নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।চীন এবং তাইওয়ানের মধ্যে সম্প্রতি উত্তেজনা বাড়া সত্ত্বেও জরিপ বলছে যে তাইওয়ানের বহু মানুষ এ নিয়ে তেমন মাথা ঘামাচ্ছে না।
তাইওয়ান পাবলিক ওপিনিয়ন ফাউন্ডেশন ২০২১ সালের অক্টোবরে মানুষের কাছে জানতে চেয়েছিল তারা কি মনে করে - এই উত্তেজনার জেরে শেষ পর্যন্ত চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে যুদ্ধ লাগবে?
তাদের দুই-তৃতীয়াংশের (৬৪.৩%) উত্তর ছিল যে তারা সেটা মনে করে না।
সেই তাইওয়ানের চারদিক জুড়ে চীন যে তাফালিং করছে গত দুদিন যা অসহ্য এবং পুতিনকে ছাড়িয়ে গেছে শি ফাজলামোতে । চীন এখনো গরীব যার ৪০ কোটি মানুষের নিশ্চিত খাদ্য নেই । ৯৬/৯৭ এ জিয়াং জে মিন সাংহাইয়ে ধরিত্রি সন্মেলনে বলেছিলেন ৬০ কোটি । আমি কিছু মানুষের কর্মসংস্থান ধরে নিয়ে ৪০ কোটিতে নামালাম । সারা পৃথিবীর মৌলিক বিষয়ের কপিরাইট ভেঙ্গে চীন যা করেছে তা চরম বরখেলাপি । চীন এই তাইওয়ান তার অংশ ছিল বলে নানা রকম ফালতু যুক্তিতে চারিদিক বড্ড দুর্গন্ধময় করে ফেলেছে । তিব্বত আর শিঞ্চিয়াং কাদের ? বিশাল দুটি রাষ্ট্র করায়ত্ত করে কিছু থালা বাসনের ভাঙ্গা চুরা অংশ দেখিয়ে বলছে এ এলাকায় চীনারা ছিল মানে আমাদের এলাকা । মিসাইলের মহড়া চলছে । এক জেনারেল ভুল করে এত গতির হাইপার স্পীডের মিসাইল মেরেছে যে তা জাপানের এক্সক্লুসিভ ইকনোমিক জোনে পড়েছে , এক দুটো নয় পাচ পাঁচটা । হয়ত চৈনিক সেনারা মনে করে জাপানও তাদের ।
তবে সামরিক সংঘাতে জড়ালে তাইওয়ানের সশস্ত্র বাহিনী চীনের সামরিক সক্ষমতার কাছে নগণ্য হয়ে যাবে।আমেরিকা ছাড়া প্রতিরক্ষা খাতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে চীন। নৌবাহিনীর শক্তি থেকে শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি, বিমান ও সাইবার হামলার সক্ষমতা - সব দিক দিয়েই চীনের শক্তি অনেক বেশি।চীন তার সামরিক শক্তি ব্যবহার করে থাকে অন্যত্র। কিন্তু সক্রিয় সেনা মোতায়েনের সার্বিক ক্ষমতা দিয়ে বিচার করলে চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে ভারসাম্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ।যদি মুখোমুখি লড়াই শুরু হয়, তাহলে কিছু পশ্চিমা বিশেষজ্ঞের অনুমান যে, তাইওয়ান চীনের হামলার ব্যাপকতা যাতে কম হয় সেজন্য চেষ্টা চালাবে, তারা চেষ্টা করবে চীনের জল ও স্থলে একসঙ্গে হামলা চালাতে সুদক্ষ অ্যাম্ফিবিয়ান বাহিনীর উপকূলে নামা ঠেকাতে, এবং বাইরের দেশগুলো থেকে সাহায্য না আসা পর্যন্ত গেরিলা আক্রমণ চালাতে।
বাইরের সাহায্য আসবে আমেরিকা থেকে, যারা তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে।এ যাবৎ ওয়াশিংটন "অস্পষ্ট কৌশল"এর যে নীতি নিয়েছে, তার অর্থ হল চীন তাইওয়ান আক্রমণ করলে আমেরিকা তাইওয়ানকে প্রতিরক্ষা দেবে কিনা বা দিলে কীভাবে সেটা দেবে সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে অস্পষ্ট রাখা।কূটনৈতিক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে "এক চীন" নীতির সমর্থনে অটল রয়েছে, যে নীতি মেনে তারা শুধু বেইজিংএর চীনা সরকারকেই স্বীকৃতি দেয় এবং তাইওয়ানের বদলে চীনের সাথেই আনুষ্ঠানিক যোগাযাগ রাখে।তবে মে মাসে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দৃশ্যত ওয়াশিংটনের অবস্থান আরও কঠোর করেছেন।তাইওয়ান আক্রান্ত হলে আমেরিকা তাইওয়ানকে প্রতিরক্ষা দেবে কিনা এ প্রশ্নে মি. বাইডেনের উত্তর ছিল: "হ্যাঁ।" হোয়াইট হাউস জোর দিয়ে বলেছে যে ওয়াশিংটন তার অবস্থান বদলায়নি।
এই পর্যায়ে বলি চীন তার রোমাঞ্চকর ঈর্ষনীয় রফতানি আয় বাদ দিয়ে যুদ্ধে লগ্নি করবে না তাইওয়ান প্রসংগ বাদ দিয়ে ভাল হয়ে যাবে । খুব শিঘ্রি চীনা কংগ্রেসের বৈঠক যেখানে শি আরও পাচ বছরের মায়কি সারা জীবন ক্ষমতায় থাকতে চাইবে । এই যুদ্ধ মহড়া কি তারই লক্ষন ? কংগ্রেসে দুঁদে কমিউনিস্টরাও আছে যারা চীনের ক্যাপিটালিসট পদ্ধতিতে ভ্রমন অর্জন পছন্দ করে না । শি কে কংগ্রেসে বেশ কঠিন সময় পার করতে হবে ।
একটি আধুনিক চীন গড়তে যেমন বুড়ো তেং এর অবদান আছে তেমনি তারও আগে আধুনিক তাইওয়ান গড়তে জেনারেল চিয়াং কাই শেক এর অবদান বিপুল ।
ছবি , তথ্য বিডি রাইজিং রয়টার গেটি
০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২৫
শাহ আজিজ বলেছেন: ধন্যবাদ আরাফাত ।
২| ০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪৪
ককচক বলেছেন: চীন যুদ্ধে জড়াবে বলে মনে হচ্ছে না। তার মহাড়া দিয়ে, ভয় দেখিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চাইবে।
পুতিনের রাশিয়া বিশাল বড় দেশে, তাদের প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ আছে তবুও সে ইউক্রেন, বেলারুশ... সহ অন্যান্য ছোট ছোট দেশের উপর খবরদারি করতে চায়। ইন্ডিয়ার মুদি, চীনের শি জিন এরা এক ইন্ডিয়া, এক চীন প্রতিষ্ঠার জন্য কোটি কোটি মানুষরে জীবন নিয়ে খেলতে চায়।
কয়েকলাখ মানুষের ভূখণ্ড ঠিকঠাকভাবে চালানোর ক্ষমতা নেই, তারা কোটি কোটি মানুষরে দায়িত্ব নিয়ে বসে আছে কিংবা নিতে চায়।
০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫২
শাহ আজিজ বলেছেন: চমৎকার যুক্তি দিয়েছেন । আধুনিক সময়ে একটা দেশকে পুরোপুরি দখলে নেয়া যায় না তবে অর্থনৈতিক খবরদারি করা যায় । আগে মানুষের খাদ্য নিশ্চয়তা দিতে হবে তারপর প্রয়োজন দেখা দিলে যুদ্ধ । শি জিন পিং অতি আবেগি যার পতন সম্পর্কে ধারনা নেই ।
৩| ০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫৩
কামাল৮০ বলেছেন: চীন আপাতত তাইওয়ানে আক্রমন করবে না।চীন অনেক গরম গরম কথা বলে ছিল তারই প্রতিক্রিয়া এই মহড়া।একেবারে কিছু না করলে মুক রক্ষা হয় না।চীন আরো বহু দিন অপেক্ষা করবে যুদ্ধ ছাড়া একিভূত করার জন্য।তবে একথা সত্য তাইওয়ান চীনের অংশ ছিল।কমিউনিষ্ট পার্টি যখন ক্ষমতা দখল করে চিয়াং কাই শেককে পরাজিত করেই ক্ষমতা দখল করে।সে তার সেনা বহর নিয়ে পালিয়ে যায় তাইওয়ান।
০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০০
শাহ আজিজ বলেছেন: চিয়াং কাই শেক একজন চীনা জেনারেল । তিনি তাইওয়ান পালিয়ে গিয়ে ভাল করেছিলেন । পরাজিতরাই ভাল কিছু করে দেখায় ইতিহাসে । একীভূত কখনই হবে না জানবেন তাহলে পৃথিবী সস্তায় চিপস পাবে না । মার্কিনীদের বিনিয়োগ নষ্ট হবে তাইওয়ান দখল হলে । চীনও এই ঝুকি নেবে না ।
৪| ০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৭
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে চীন আমেরিকা, ব্রিটেন আরে ফ্রান্সের পক্ষে ছিলো।
ইউটার্ন নেওয়া আসলে সম্ভব না।
০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৬
শাহ আজিজ বলেছেন: নৈতিকতা বোধ না থাকলে আর অর্থ লোলুপতা বেশি থাকলে এরকমই হবে । অর্থনীতিতে মাসল দেখিয়েছে ভাল কিন্তু তা সমর ক্ষেত্রে উজ্জ্বল হবে এটা অনিশ্চিত । খুব দ্রুত আগুয়ান পৃথিবী অনেক ভাবেই তাইওয়ানের ওপর নির্ভরশীল । তারা চীনকে বিশ্বাস করে না । আমি খুব বাস্তব সম্পন্ন কথা বলছি । চীন শ্রীলঙ্কাকে রাস্তায় নামিয়েছে , পাকিস্তানও সেই পথে । একে বিশ্বাস করা যায় ??
৫| ০৫ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:০৯
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: সুন্দর পোস্ট।
০৫ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:৫৫
শাহ আজিজ বলেছেন: ধন্যবাদ
৬| ০৬ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৯:৫১
খাঁজা বাবা বলেছেন: আমেরিকা বিরোধীদের অর্থনীতির পরিমান এখনো আমেরিকান মিত্রদের অর্ধেক। তবে পরিস্থিতি খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে।
আমেরিকা ও তার বন্ধদের সম্মিলিত জিডিপি বিরোধীদের চেয়ে ছোট হয়ে গেলে অনেক হিসেব নিকেশ বদলে যাবে।
হয়ত যুদ্ধ ছাড়াই অনেক কিছু হয়ে যাবে।
চীন আপাতত যুদ্ধে যাবে না।
০৬ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:২৯
শাহ আজিজ বলেছেন: পুতিন যেমন লাফ দিয়ে এখন পেছতে পারছেনা । চীন যুদ্ধে যাবে না এটা আমিও জানি ।আমেরিকা সরাসরি কোন যুদ্ধে জড়াবে না তবে বিলিয়ন ডলারের আর্মস সাপ্লাই চালু রাখবে । আমরা দেখছি এবং দেখতে থাকব ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২১
আরাফাত৫২৯ বলেছেন: দারুন লেখা। অনেক কিছুই জানলাম। আরো লেখা চাই।