নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পুরো লেখা আর ছবি সন্তোষ রবিদাস অঞ্জনের , আমি শুধু ব্লগের পাতায় তুলে দিলাম
মৌলভীবাজার জেলার শমসেরনগরে ফাঁড়ি কানিহাটি চা-বাগানের এক চা শ্রমিক পরিবারের ছেলে আমি। জন্মের ছয় মাসের মাথায় বাবাকে হারিয়েছি। মা চা-বাগানের শ্রমিক। তখন মজুরি পেতেন দৈনিক ১৮ টাকা।
সেই সময় আমাকে পটের দুধ খাইয়ে, অন্যের বাসায় রেখে মা যেতেন বাগানে কাজ করতে।
২০০৭ সালে আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। মায়ের মজুরি তখন ৮৮ টাকা। এক দিন বললেন, ‘বাজারে গিয়ে পাঁচ কেজি চাল নিয়ে আয়।’ সেই চাল দিয়ে এক মাস চলেছে আমাদের। পরদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে দেখি মা চাল ভাজলেন। পলিথিনে সেই ভাজা চাল, আটার রুটি আর লাল চা একটা বোতলে ভরে গামছায় প্যাঁচালেন। আর আমাকে আটার রুটি ও লাল চা দিলেন। দুপুরে খেতে গিয়ে দেখি শুধু পেঁয়াজ, শুকনা ভাত, তেল আর লবণ আছে। তা দিয়ে মেখে খেলাম। রাতেও কোনো তরকারি ছিল না। তখন পাশের বাসার কাকু আমাকে ডেকে কুমড়া আর আলু দিয়েছিলেন, যা দিয়ে আমরা দুইটা দিন পার করেছিলাম। তখন কুপি বাতির আলোয় পড়তাম। মা আগেই রেডি করে দিতেন বাতি। তেল শেষ হয়ে গেলে আর পড়া হতো না। দোকানদার বাকিতে তেল দিতেন না।
পঞ্চম শ্রেণির পর ভর্তি পরীক্ষায় পাস করে ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন স্কুলে পাঁচ বছরের জন্য ফ্রি পড়ালেখার সুযোগ পাই। মা অনেক খুশি হয়েছিলেন। তখন তাঁর সামান্য আয়ের একটা অংশ থেকে আমাকে টিফিন খাওয়ার জন্য প্রতি সপ্তাহে ৭০-৮০ টাকা দিতেন।
২০১৩ সালে বিএএফ শাহীন কলেজে ভর্তি হই। তখন মা ১০২ টাকা করে পেতেন। এই সময়ে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কিস্তি তুলে আমার ভর্তির টাকা, ইউনিফর্ম আর বই-খাতা কিনে দিয়েছিলেন।
২০১৪ ডিসেম্বর। মায়ের হাতে টাকা নেই। তখন এইচএসসির রেজিস্ট্রেশন চলছিল। মা ৫০ টাকার একটা নোট দিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বলেছিলেন, ‘কেউ ধার দেয়নি রে বাপ।’ কলেজের এক শিক্ষকের কাছ থেকে ধার নিয়ে সেবার রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়েছিলাম।
এইচএসসির পর ভর্তি পরীক্ষার কোচিং। মা তখন আবার লোন নিলেন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে। লোনের কিস্তির জন্য এই সময় মা বাড়ি থেকে অনেক দূরে গিয়ে বালু শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। বিনিময়ে পেতেন ৩০০ টাকা। আমি জানতাম ঘরে চাল নেই। শুধু আলু খেয়েই অনেক বেলা কাটিয়েছিলেন মা।
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলাম। মা তখন কী যে খুশি হয়েছিলেন! কিন্তু ভর্তির সময় যত ঘনিয়ে আসছিল, মায়ের মুখটা তত মলিন দেখাচ্ছিল। কারণ চা-বাগানে কাজ করে যা পান তা দিয়ে তো সংসারই চলে না। ভর্তির টাকা দেবেন কোথা থেকে। পরে এলাকার লোকজন চাঁদা তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সহায়তা করল। বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশনি করেই চলতাম। হলের ক্যান্টিনে ২০ টাকার সবজি-ভাত খেয়েই দিন পার করেছি। অনেক দিন সকালে টাকার অভাবে নাশতাও করতে পারিনি। দুর্গাপূজায় কখনো একটা নতুন জামা কিনতে পারিনি।
২০১৮ সালে শ্রেষ্ঠ মা হিসেবে উপজেলায় মাকে সম্মাননা দেওয়া হবে বলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জানানো হয়। পরে মায়ের নামটা কেটে দেওয়া হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, মা আমার চা শ্রমিক। স্টেজে উঠে নাকি কিছু বলতে পারবেন না। তাই নাম কেটে দিয়েছে! মা এখনো প্রতিদিন সকালে একটা বোতলে লবণ, চা-পাতা ভর্তা, আটার রুটি, সামান্য ভাত পলিথিনে ভরে নিজের পাতি তোলার গামছায় মুড়িয়ে নিয়ে দৌড়ান চা-বাগানে। আট ঘণ্টা পরিশ্রম করে মাত্র ১২০ টাকা মজুরি পান! এই মজুরিতে কিভাবে চলে একজন শ্রমিকের সংসার? আজকাল মায়ের শরীর আর আগের মতো সায় দেয় না।
বলেন, ‘তোর চাকরি হইলে বাগানের কাজ ছেড়ে দেব।’ আমি এখন সেই দিনের প্রতীক্ষায় আছি....!
-সন্তোষ রবিদাস অঞ্জন,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ফেসবুকে সুদর্শন বালার পোস্ট
১৮ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০০
শাহ আজিজ বলেছেন: এবার ওদের বেতন বাড়লে বাজারে চায়ের খুচরা দাম বাড়িয়ে দেবে । সম্ভবত চা শ্রমিকরা এমন আন্দোলন করেনি আর বাহাতি কমিউনিস্টরা ভুলেও এদের পাশে দাড়ায়নি ।
২| ১৮ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৫:৫৪
ককচক বলেছেন: ছেলেটা আমাদের পাশের এলাকার।
চা শ্রমিকদের মজুরি দ্বিগুন করা দরকার, কিন্তু দুঃখজনক আমাদের সরকার এদিকে নজর দিয়েও দিচ্ছেনা।
১৮ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০২
শাহ আজিজ বলেছেন: সরকারগুলো যে এদের মানুষ বলে জ্ঞান করে তাইইত পরম পাওয়া । বেহেশ্তি চা শ্রমিক ।
৩| ১৮ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪৮
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
ছেলেটা চাকুরী পেয়ে পোস্ট দিলে ভালো হতো।
১৮ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৩
শাহ আজিজ বলেছেন: হয়তোবা চাকুরি পেয়ে , বাসা ভাড়া নিয়ে পোস্ট দেবে , অপেক্ষায় ----------------
৪| ১৮ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৪
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই চা শ্রমিকদের এই দুরবস্থা। সমাজের মধ্যে এরা আরেকটা সমাজ যাদের খবর কেউ কখনও রাখেনি। হিরক রাজার দেশের খনি শ্রমিকদের মত এদের অবস্থা। কয়েকটা বিদেশী কোম্পানি আছে যাদের চা বাগান আছে। তারাও এদের বঞ্চিত করছে যুগের পর যুগ।
১৮ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:০৭
শাহ আজিজ বলেছেন: ১৮০০ সালের দিকে উড়িষ্যা থেকে এদের নিয়ে এসেছিল ব্রিটিশরা । শ্রীমঙ্গলে ওদের বাড়িঘর দেখেছি । অবাক হলাম একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে দেখে । মুভমেন্ট চলুক যাতে শুধু চা পাতা সংগ্রহ নয় লভ্যাংশ দিতে হবে শ্রমিককে ।
৫| ১৮ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:১৯
অধীতি বলেছেন: একটা দীর্ঘ নিঃস্বাস বয়ে নিয়ে চলতে হচ্ছে।
১৮ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:৫৯
শাহ আজিজ বলেছেন: সাথে অকথ্য ব্যথা ----------------------
৬| ১৮ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:৩৬
কামাল৮০ বলেছেন: চা শ্রমিকদের সুধু বাচিয়ে রাখা হয় বাগানে কাজ করার জন্য।মরেগেলে কাজ করবে বে।সেই হিসাবে তাদের বেতন দেয়া হয়।অমানবিক
১৮ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১০:০০
শাহ আজিজ বলেছেন: খুবই অমানবিক । শুনেছেন কোন চা বাগান মালিক লসে আছে ?
৭| ১৮ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:৪৪
সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: এই নিয়ে আমিও সামান্য চিন্তা করেছিলাম। আমার ব্লগে আপনার এই ব্লগের রেফারেন্স দিয়েছি।
আমন্ত্রনঃ Click This Link
১৮ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১০:০১
শাহ আজিজ বলেছেন: ধন্যবাদ সাহাদাত ।
৮| ১৯ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:৫৭
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: ভদ্রলোক সুন্দর লিখেছেন।
১৯ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:২৫
শাহ আজিজ বলেছেন: হৃদয় নিংড়ে লেখা । এ জন্যই ছেপে দিলাম ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৫:৫৩
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ভাইজান,
আমার জীবনে একসময় অনেক অনেক চাওয়া ছিল চা বাগানে চাকুরী করার।কারন, চা বাগানের মনোরম পরিবেশ ও অপূর্ব প্রকৃতি টানতো আমাকে।
পড়াশোনা শেষ করে পেয়েছিলাম ও একবার সুযোগ দেশের প্রথম সারির একটা চা বাগানে । তবে ঢাকা শহরের জ্যাম-ঘামকে ছাড়তে না পারার ব্যর্থতা ও তুলনামূলক কম নগদ নারায়নের জন্য সেই ইচছা আর এ জীবনে পূর্ণ হলোনা।
আমি আমার অভিজ্ঞতায় যা দেখেছি তা আসলেই বড় অমানবিক জীবন,একজন চা শ্রমিকদের জীবন।( তবে আমার টিভি বিজ্ঞাপনে চায়ের যে রংগীণ দুনিয়া দেখি তার মাঝে আর বাস্তবতার মাঝে যোজন যোজন ফারাক)।