নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। জীবনানন্দ দাশ - Poet of Surrealism

০৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:১৭



© গৌতম মিত্র ।। লেখাটি © গৌতম মিত্র বাবুর ।


বাস্তবের যে ক-জন মহিলার ভাবনা জীবনানন্দ দাশকে বারবার আলোড়িত করেছে, ঘাড়ে থাবা বসিয়ে লিখিয়েছে, স্বপ্ন কীভাবে দেখতে হয় শিখিয়েছে, মনিয়া তাদের মধ্যে অন্যতম।
জীবনানন্দ দাশের ডায়েরিতে সংক্ষেপে মনিয়া বা মনির পরিচয় এইরকম। পর্তুগিজ পাদ্রি বাবার ঔরসে ও বাংলা দেশের মায়ের গর্ভে জন্ম ‘নীলনয়না’ মনির। মনির ছোটো বয়সে পাদ্রি বাবা বেপাত্তা হলে, অনেক ঘাটের জল খেতে খেতে মনির মা ‘সর্বানন্দ ভবন’-এরই কাছাকাছি কোনও জায়গায় থিতু হলেন।
ডানপিটে ছিল মনি। একটু স্বপ্নপ্রবণ। হুজুগে। সমবয়সিদের কাছে আকর্ষণীয়া। পড়াশোনাও করত মনিয়া। জীবনানন্দর মা কুসুমকুমারী ‘রবিবাসরীয় নীতি-বিদ্যালয়’-এ মনির শিক্ষক ছিলেন।
‘অনুশীলন সমিতি’ থেকে পুলিশের লাঠির আঘাত.... কোথায় না মনিয়া নেই। মনিয়া কি একটু একটু বন্য ধরনের? মনিয়া কাঁঠাল গাছ থেকে বাড়ি মেরে পাখি ফেলল, কী যেন পোকা খাচ্ছিল।
মায়ের সঙ্গে বাড়ি বাড়ি ঘুরে কাজ করে মনি। জীবনানন্দর শহর-ফেরত ভাইদের কাছে মনিয়া একজন ‘ঝি’। তারা তাকে ‘পারস্যুয়েড’ করে। বন্ধু অবনী তাকে 'অপব্যবহার' করে।
মনিয়ার ‘উল্লাস’, মনিয়ার ‘বিষাদ’, মনিয়ার ‘কোমলতা’ এবং মনিয়ার ‘desire’ জীবনানন্দকে স্পর্শ করে যায়। ঠিক স্পর্শও হয়তো নয় বরং বলা চলে আক্রান্ত করে। এবং শেষে মনিয়ার ‘নিয়তি’র সঙ্গে জীবনানন্দ নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন।
এতটাই যে, ১৯৩১-৩২-এ কবিতায় লিখবেন :
‘...মনিয়ার ঘরে রাত, শীত আর শিশিরের জল।’
‘কুড়ি বছর আগে একদিন’ কবিতায় যে ‘সরু-সরু কালো-কালো’ ডালপালা মুখে নিয়ে চাঁদ নামে মাঝরাতে, তা কি যৌনতার ইঙ্গিত করে না? প্রতিটি দেশকালে যুগে যুগে ‘চাঁদ’ যৌনতার প্রতীক হিসেবে ধরা দিয়েছে। শিশিরের জল আজ মনিয়ার ঘরে। রাতে— শীতে— ঘরে শিশিরের জল! তার আগে ‘ছড়াতেছে’ শব্দটি লক্ষণীয়। ‘desire’ কি কামনা, বাসনা, সাধ, অভিপ্রায়, অভিলাষ, ইচ্ছা, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, প্রবৃত্তি, খাঁই, মতি, কামনালালসা? জীবনানন্দ ‘desire’ লিখে সবগুলি সম্ভাবনাকে কি জাগ্রত রাখতে চেয়েছেন?
আমার স্থির বিশ্বাস ‘মনিয়া’ ভাবনা ধীরে ধীরে ‘ওয়াই’ ভাবনায় রূপান্তরিত হয়েছে। জীবনানন্দর প্রেম সবসময় আমরা দেখি স্নেহ, করুণা, মমতার ঘাট ছুঁয়ে চলে। মনিয়া ও বেবি, এরা দুজনেই জীবনানন্দ থেকে ১৩/১৪ বছরের ছোটো। ততটা তীব্র প্যাশন জীবনানন্দে আমরা কখনোই পাই না। যৌনতার কদর্য রূপ আছে, যৌনতার সৌন্দর্য আছে, যৌনতার পরিণাম আছে কিন্তু, যৌনতার ছটা নেই— বিস্তার নেই— ঝালা নেই।
আসলে সবসময় রূপসীর শিয়রে যে একজন মৃত্যু বসে থাকে তা বুঝি মনিয়ার অকালমৃত্যু। এই মৃত্যু সারাজীবনের মতো জীবনানন্দকে বিষণ্ন হতে শিখিয়েছে। একখানা দেহ হারায়ে গিয়েছে কঙ্কালে-কাঁকরে। এই দেহ ব্যথা পায় । দেহ-ফাঁস। অন্ধকার সাগরের জল এসে ছেনে যায় দেহ। শীতল চোখ-ঠোঁট-নাক-আঙুল৷ কোনও পরিত্রাণ নেই যেন।
জীবনানন্দর নারীরা কখনও একা আসে না, যূথচারী তারা, হাত, ধরাধরি করে আসে। যখন একাও আসে, ধরা যাক শঙ্খমালা, তখনও আসলে একা আসে না। আসলে একজন রমণী জীবনানন্দ বাস্তব, কল্পনা ও স্বপ্নের সমস্ত রমণীর রূপ ধরে আসে। সেজন্য জীবনানন্দর নায়িকা বদলে যায়৷
সুরঞ্জনা, শ্যামলী, অরুণিমা, মনিয়া, শঙ্খমালা, অরুণিমা, বনলতা। মনিয়া জীবনানন্দর জীবনে প্রথম প্রেম। এবং জীবনানন্দ সৃষ্ট সকল নারীর মধ্যে মনিয়ার চিহ্ন থেকে যায়৷
গঙ্গাসাগরে মনিয়া ডুবে মারা গেছে জানা যায়। অপঘাতে মৃত্যু? তাকে কি হত্যা করা হয়েছিল?
১৯৩২-৩৩-এ মারা গেছে মনিয়া? জীবনানন্দ ১৯৩৪-এ লিখবেন :
‘কামরাঙা লাল মেঘ যেন মৃত মনিয়ার মতো/ গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে—'
ডায়েরিতে পরিকল্পনা করছেন, মনিয়াকে নিয়ে উপন্যাস লিখবেন। শিরোনামও দিয়েছেন সেই ভাবনার।
‘A Girl's World : A Novel’ অতঃপর কেমন হবে সেই উপন্যাস, তার বিস্তারিত নোটস রাখছেন।
বড়ো গূঢ় কথা বলছেন জীবনানন্দ মনিয়া প্রসঙ্গে। ডায়েরিতে লিখছেন : ‘বাংলা দেশ... The Author’s poetry and philosophising... মনির বাংলা... Bengal containing such girls.’
১৯৩৪-এ যে ‘রূপসী বাংলা’ লেখা হবে, সেপ্টেম্বর ১৯৩৩-এ ‘প্রেতিনীর রূপকথা’। তা কি তবে ‘philosophising’‘মনির বাংলা’? খোড়ো বনের ভিতর থেকে পাড়াগাঁ-র দুঃখিনী রূপমতীর উনুনের ধোঁয়া। সজনে গাছের ডালে জোনাকি। কাঠমল্লিকার গন্ধ। তার পাশেই তো বেল ও বাঁশের জঙ্গলের ভিতর থেকে যুগান্তরের প্রেতিনীদের রূপকথা। সুন্দরীর শব চন্দন চিতায় চড়ে। বিশালাক্ষী যেখানে নীরব। কাকের তরুণ ডিম পিছলায়ে পড়ে যায় শ্যাওড়ার ঝাড়ে।
বাংলার মধ্যে মনিয়াকে খুঁজেছিলেন কবি, মনিয়ার মধ্যে বাংলাকে। মনিয়া জীবনানন্দর জীবনে অনিবার্য এক ‘প্রেরণা’।
© গৌতম মিত্র

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: লেখাটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

০৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:৪৪

শাহ আজিজ বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১০:০৬

জগতারন বলেছেন:
জ্বনাব আজিজ সাহেব;
আমি পর দুইটি পোষ্ট করিলাম।
আমার সর্ব শেষ পোষ্টে আপনার চিন্তশীল মনের ও যুক্তি সঙ্গত অভিমত আশা করি।

০৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১০:১২

শাহ আজিজ বলেছেন: আমি দেখিনি ------- এখানে আবার পোস্ট করুন ।

৩| ০৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১০:১৮

জগতারন বলেছেন:

আমি দেখিনি ------- এখানে আবার পোস্ট করুন ।
আবার পোষ্ট করা সম্ভব না
আপনার ইচ্ছা হইলে আমার ব্লগে গিয়া দেখিয়া আসুন।

০৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১০:২২

শাহ আজিজ বলেছেন: এখন বুঝেছি জগতারন - আমি পেজ খুলেই রেখেছি - পড়ে মন্তব্য করব ।

৪| ০৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১০:৩২

জগতারন বলেছেন:
মন্তব্য যেন যুক্তি সঙ্গত ও আপনার চিন্তাশীল মন থেকে হইয়া থাকে।

(লক্ষণীয়ঃ রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়া পোষ্ট আমার গত ৩০ বছরের পর্যবেক্ষন,
তবে আমি ব্যাখ্যা বিহীন অতি সংক্ষে লিখিয়াছি।)

০৬ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৩

শাহ আজিজ বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৫| ০৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১১:৩১

কামাল১৮ বলেছেন: বিচিত্র অভিজ্ঞতার মানুষ জীবনানন্দ।তিনি নাটোর গিয়েছেন বলেও প্রমান পাওয়া যায়।

০৬ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:২০

শাহ আজিজ বলেছেন: আমার প্রিয় কবি ঠিক কি কি খুজতে নানা জায়গায় গেছেন আমিও বুঝতে পারি না ।

৬| ০৬ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১২:৪১

আহমেদ জী এস বলেছেন: শাহ আজিজ,




লেখাটি শেয়ার করেছেন মাত্র। সাথে জীবনানন্দের অতল জলে ঘূর্ণির মতো কথা কয়ে যাওয়া রমনীপ্রেমের ব্যাপারে আপনার নিজস্ব কিছু কথা থাকলে ভালো হতো।

০৬ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:২৮

শাহ আজিজ বলেছেন: আমার এখন জীবনানন্দকে নিয়ে লেখার চে পড়তে ভাল লাগে বেশি । গৌতম মিত্রের বই ২খানি অর্ডার করলাম বাতি ঘরে । নতুন অনেক কিছু পাব মনে হয় ।

৭| ০৬ ই জুলাই, ২০২৩ সকাল ৭:৫৮

সোহানী বলেছেন: জীবনান্দকে নিয়ে আমার একরাশ দু:খ আছে। অকালে মৃত্য, অবহেলা, সংসারের অশান্তি, ব্যার্থতা................... কিছুই যেন পাননি তিনি এ জীবনে।

০৬ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৩

শাহ আজিজ বলেছেন: বড় দুঃখী মানুষ ছিলেন কবি , দুঃখ না থাকলে সৃষ্টি হয়না -কথাটা আমিও বিশ্বাস করি ।


সুররিইয়ালিজমের কবি শব্দটি আমিই উচ্চারন করি প্রথম ১০/১২ বছর আগে । কেউ না কেউ শব্দটির সু প্রয়োগ করেছে ।

৮| ০৬ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৫

শেরজা তপন বলেছেন: মনিয়া মনির আর মনি তিনিটে নাম মিলে কেমন এলোমেলো হয়ে গেল।
অজানা কাহিনী- শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

০৬ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১:৪৩

শাহ আজিজ বলেছেন: বই দুখানি অর্ডার করেছি । হাতে পেলে আরও জানতে পারব ।

৯| ০৬ ই জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০৪

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: ইতিহাস এখন কেহ পড়তে চায় না, সবাই বর্তমান নিয়ে ব্যস্ত।

০৬ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:২৯

শাহ আজিজ বলেছেন: সবাই ব্যাস্ত কাচা মরিচ নিয়ে ---------------------

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.