নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বি বি সি
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবারও নির্বাচিত হয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। ২০০০ সাল থেকে দেশটিতে ক্ষমতায় তিনি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা জোসেফ স্তালিনের পর রাশিয়ার সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছেন পুতিন।
সব ঠিকঠাক থাকলে ৭১ বছর বয়সী পুতিন পঞ্চমবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিচ্ছেন। এই নির্বাচনে তাঁর কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না। আপাতত রাশিয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে লড়বার মতো কোনো বিরোধী নেতা নেই। পুতিন চাইলে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন। তাঁকে ঠেকানোর সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
ভ্লাদিমির পুতিন ছিলেন রাজপথের লড়াকু এক বালক। তাঁর শৈশবের বেশির ভাগ সময়ই কেটেছে লেনিনগ্রাদে অনেক মানুষের সঙ্গে এক ঘরে বসত করে।ইতিহাস বিষয়ে পুতিন তাঁর অদ্ভুত ধ্যানধারণা ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রতি তীব্র ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে নিজের কৃতকর্মকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বারবার।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর আগে ও পরে একাধিকবার পুতিন দাবি করেছেন, ইউক্রেন নব্য-নাৎসি অধ্যুষিত একটি কৃত্রিম রাষ্ট্র। ইউক্রেন যাতে ন্যাটো জোটের ঘনিষ্ট হতে না পারে, এ বিষয়ে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন তিনি।
পশ্চিমা নেতাদের মধ্যে প্রশ্নাতীতভাবে পুতিনকে সবচেয়ে ভালো চিনতেন জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল। তিনি অসংখ্যবার পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পুতিন যখন কিয়েভে হামলা চালাতে সেনা পাঠালেন, তখন ম্যার্কেল রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে নিয়ে এই উপসংহারে পৌঁছান যে— ‘তিনি (পুতিন) ইউরোপকে ধ্বংস করতে চান।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার সাত বছর পর ১৯৫২ সালের ৭ অক্টোবর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের লেনিনগ্রাদে (বর্তমানে সেন্ট পিটার্সবার্গ) জন্ম পুতিনের। তাঁর বাবা স্পিরিডোনোভিচ পুতিন, মা মারিয়া ইভানোভানা পুতিনা। এই দম্পতির তিন ছেলের মধ্যে পুতিন সবার ছোট।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান পুতিন বেড়ে ওঠেন লেনিনগ্রাদে। লেলিনগ্রাদ দখলের সময় পুতিনের ভাই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। প্রাণে বেঁচে যান তাঁর মা-বাবা। শৈশবের এসব চড়াই-উতড়াই পুতিনের বাকি জীবনে বড় রকমের প্রভাব ফেলেছে।
২০০০ সালে এক সাক্ষাৎকারে পুতিন তাঁর শৈশবের সেই লেলিনগ্রাদের বাড়ির সিঁড়ির কোনায় ঠাঁই নেওয়া একটি বড়সড় ইঁদুরের স্মৃতিচারণা করেন। পুতিন বলেন, ইঁদুরটির কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিল না। ইঁদুরটি যে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে ছিল, তার সঙ্গে নিজের তুলনা করেন তিনি। বলেন, ‘সেখান থেকে আমি কোণঠাসা হওয়ার বিষয়টি কেমন, সেই শিক্ষাটা পাই।’
ছোটবেলা থেকেই পুতিন ছিলেন লড়াকু। মহল্লায় বয়সে বড় ও তাগড়া যুবকদের সঙ্গে মারামারিতে জড়াতেন। পরে সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে পুতিন নিজেকে একজন ‘গুন্ডা’ বলে বর্ণনা করেন।
প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় জুডো ও মার্শাল আর্ট সাম্বোতে ব্ল্যাক বেল্ট অর্জন করেন পুতিন। শৈশবের সঙ্গী আরকাডি ও বরিস রটেনবার্গের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন তিনি।
২০১৫ সালে পুতিনের এক মন্তব্যে শৈশবের লেলিনগ্রাদের রাস্তাঘাটে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা উঠে আসে।
তিনি বলেছিলেন, ‘অর্ধশতাব্দী আগে লেনিনগ্রাদের পথঘাট আমাকে একটি নিয়ম শিখিয়েছে। আর তা হলো, যদি দেখো লড়াই করা ছাড়া তোমার কোনো উপায় নেই, তাহলে প্রথমেই আঘাত হানো।’
পুতিন পড়েছেন আইনশাস্ত্রে। লেলিনগ্রাদ স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৭৫ সালে যোগ দেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে। তখন কেউ আইন বিষয়ে স্নাতক করলে ধরেই নেওয়া হতো যে তিনি গোয়েন্দা হিসেবে যোগ দিচ্ছেন। গোয়েন্দা পেশাটাও মানিয়েছিল তাঁকে।
জার্মান ভাষায় ভালো দখল থাকায় ১৯৮৫ সালে পুতিনকে জার্মানির ড্রেসডেনে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সেখানে থাকার সময়ই ১৯৮৯ সালে প্রথম কোনো কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের পতন প্রত্যক্ষ করেন তিনি।
সেখানে কেজিবি সদরদপ্তর থেকে পূর্ব জার্মানির গোপন পুলিশের সদরদপ্তরে উত্তেজিত জনতাকে হানা দিতে দেখেন পুতিন। উত্তেজিত জনতার ছোট একটি দল এ সময় কেজিবির সদরদপ্তরের দিকেও যাচ্ছিল। তবে উত্তেজিত জনতাকে সতর্ক করার পর তারা কেজিবে দপ্তরে আর হানা দেয়নি।
পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে নিজেদের সুরক্ষার জন্য রাশিয়ার রেড আর্মির কাছে সহায়তা চান পুতিন।
কিন্ত এরপর বুঝতে পারেন, সাহায্য করার মতো পরিস্থিতিতে রাশিয়া নেই। সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করে পুতিন বলেছিলেন, ‘মস্কো থেকে আদেশ ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারি না। কিন্ত মস্কো ছিল নীরব।’
পরের বছরে পুতিনের পদোন্নতি হয়। লেফটেন্যান্ট কর্নেল হন তিনি। নিকোলাই লেনোভ নামে পুতিনের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা তাঁকে ‘মাঝারি মানের গোয়েন্দা’ হিসেবে বিবেচনা করতেন।
কেজিবিতে থাকার সময় লেলিনগ্রাদে যাঁরা সহকর্মী ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে এখনো ঘনিষ্ট সম্পর্ক বজায় রেখেছেন পুতিন। তাঁর দীর্ঘদিনের মিত্রদের মধ্যে অন্যতম রাশিয়ার নিরাপত্তা পর্ষদের সচিব নিকোলাই পাত্রুশ্চেভ।
পুতিন তাঁদের নিয়োগ দিয়েছেন বলে তাঁরা বিশ্বস্ত ছিলেন, বিষয়টি এমন নয়। তাঁর প্রবীণ জুডো কোচ আনাতোলি রাখলিন একদা স্মরণ করে বলেছিলেন, ‘আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন, এমন ব্যক্তিদেরই নিয়োগ দিয়েছেন পুতিন।’
পুতিন যাঁদের বিশ্বাস করেন, তাঁদের অর্থকড়িও দেন। আরকাডি রোটেনবার্গ নামের এক বাল্যবন্ধুকে তিনি দখল করা ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার সাড়ে ৩০০ কোটি ডলারের সেতু নির্মাণের ঠিকাদারি দিয়েছিলেন।
পুতিনের তাঁর ব্যক্তিজীবন নিয়ে সব সময় গোপনীয়তা বজায় রেখে এসেছেন। স্ত্রী লুদমিলার সঙ্গে ৩০ বছরের দাম্পত্যজীবন শেষে ২০১৩ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। এই দম্পতির দুই মেয়ে রয়েছেন। তাঁদের একজন মারিয়া ভরোনসতোভা শিক্ষক ও ব্যবসায়ী। ক্যাটেরিনা টিখোনোভা নামের আরেক মেয়ে একটি গবেষণা ফাউন্ডেশনের প্রধান।
১৯৯১ সালে লেনিনগ্রাদের মেয়র হন আনাতোলি সবচাক। তাঁর ডেপুটি ও পরামর্শক হিসেবে যোগ দেন ভ্লাদিমির পুতিন। মেয়াদ শেষে নির্বাচনে সবচাক পরাজিত হলে মস্কোতে প্রেসিডেন্টের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ পান পুতিন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের অবস্থা ছিল শোচনীয়। এ দিকে পুতিনের উত্থান ঘটতে থাকে।১৯৯৯ সালের ৯ আগস্ট ইয়েলৎসিন তাঁর প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেন। ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে ৪৬ বছর বয়সী পুতিনকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসান ইয়েলৎসিন।
পুতিন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে দারুণ একজন প্রার্থী হতে পারেন—ইয়েলৎসিনকে এ কথা বলেছিলেন ভ্যালেন্তিন ইউমাশ্চেভ। তিনি বলেন, ‘পুতিন নিজেকে উদার ও গণতন্ত্রবাদী হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি অর্থনীতিতে সংস্কার আনতে চেয়েছিলেন।’
ইয়েলৎসিনের মেয়াদের শেষ দিকে মস্কোতে একের পর এক প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে। এসব হামলা ছিল অনাকাঙ্খিত। এ সময় বড় ধরনের অভিযান চালিয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছ থেকে চেচনিয়া পুনর্দখলে নেতৃত্ব দেন পুতিন।এ ঘটনার পর থেকেই পুতিনের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাশিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান পুতিন। এর তিন মাস পরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হন তিনি।
২০০০ সালে ব্যারেন্টস সাগরে পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ কুরস্ক দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশে প্রথবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন পুতিন। এ দুর্ঘটনায় সাবমেরিনের ১১৮ নাবিকই মারা যান। ওই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। উদ্ধার কাজে বিলম্ব হওয়ায় অনেক নাবিকের মৃত্যু হয়।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুতিনের প্রথম বছরটি যেমন উত্তাল ছিল, তেমনি রক্তপাতের ঘটনাও ঘটেছে। তবে অধিক দামে তেল বিক্রির আয়ে রাশিয়ার অর্থনীতি চাঙা হতে থাকে।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথম দিকে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল পুতিনের। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর (নাইন-ইলেভেন নামে পরিচিত) তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ প্রথম যে রাষ্ট্রপ্রধানের ফোন পান, তিনি ছিলেন পুতিন। শুধু তা-ই নয়, ওই ঘটনার পরে আফগানিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো জোটের অভিযানেও যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্যও করেছিলেন তিনি।
তবে শিগগিরই পুতিনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁর মিত্রদের মোহভঙ্গ হয়। সাবেক কেজিবি এজেন্ট ও ক্রেমলিনের সমালোচক আলেক্সান্দার লিতভিনেনকো লন্ডনে খুন হওয়ার পর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কে তিক্ততা দেখা দেয়। পরে যুক্তরাজ্যের করা একটি তদন্তে জানা যায়, কেজিবির ওই অভিযানে ‘সম্ভবত পুতিন অনুমোদন’ দিয়েছিলেন।
কপি অ্যান্ড পেস্ট ।।
২০ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:২৬
শাহ আজিজ বলেছেন: দেখা যাক পাগলের দৌড় কতদুর ।
২| ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১১
শেরজা তপন বলেছেন: আমি যখন শেষবার রাশিয়া ছেড়েছি তখন থেকে তাঁর মেয়াদ শুরু। এখনো যেমন তরতাজা আছে আরো কতকাল ক্ষমতায় থাকেন মাবুদ জানেন!!!
২০ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:২৮
শাহ আজিজ বলেছেন: খুন না হওয়া পর্যন্ত টিকে থাকবে ।
৩| ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১২
সোনাগাজী বলেছেন:
পুটিন, শি জিনপিং, ট্রাম্প, কিম, মোদী ও আয়াতোল্লাহ বিশ্বের জন্য ভয়ংকর হুমকী।
২০ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:২৮
শাহ আজিজ বলেছেন: উত্তম বয়ান ।
৪| ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:৩০
কামাল১৮ বলেছেন: @ গাজী সাহেব,পশ্চিমাদের জন্য আসলেই ভয়ংকর হুমকি ।
২০ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩০
শাহ আজিজ বলেছেন: পশ্চিমারাও বসে নেই হাত গুটিয়ে । কখন পুডিঙের মাথার ওপর নিউক ছেড়ে দেয় তাই ভাবছি ।
৫| ২০ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: আচ্ছা, ইউক্রেন কি রাশিয়ার অংশ?
২০ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৬
শাহ আজিজ বলেছেন: না । ইউক্রেন একদা সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল । ইউক্রেনে কিছু রাশিয়ান বাস করে । এই সুত্র ধরেই পুতিন তাদের নিজের লোক মনে করেন ।
৬| ২০ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:০৭
আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: সুন্দর লেখা ।পড়ে ভালো লাগলো।
২১ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:১১
শাহ আজিজ বলেছেন: বি বি সির কারো লেখা , ভালো হতেই হবে ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:০৮
কামাল১৮ বলেছেন: আরেক মেয়াদ থাকার সম্ভাবনা।