নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাঙা ডানার পাখির গান

http://100fanush.blogspot.com

ভাঙ্গা ডানার পাখি

চাই বলতে, শুনতে, শোনাতে। আকাশকে ছুতে চাই, মেঘের সাথে পাখা মেলতে চাই। চাই বদলাতে-নিজেকে, অপরকে।\n\nফেসবুকে আমাকে খুঁজে নিনঃ\n\nhttp://www.facebook.com/shahed.invictus\n\nemail: [email protected]\n\nBlogspot: 100fanush.blogspot.com\n\nফ্লিকারঃ\nhttp://www.flickr.com/photos/hell_is_my_heaven\n\nআমার রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ। কারও যদি রক্তের প্রয়োজন হয় আমার ফেসবুক ঠিকানায় যোগাযোগ করবেন দয়া করে।

ভাঙ্গা ডানার পাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ ছায়াস্বপ্ন

৩১ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫

১।

প্রবল বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে আছি আমি।

কোদালে করে দফায় দফায় মাটি ছুড়ে দেয়া হচ্ছে আমার সামনে সদ্য খোঁড়া দুটো কবরে। কবর দুটোয় শুয়ে আছে এই পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে প্রিয় দু’জন মানুষ। একজন আমার স্ত্রী শায়লা, সাত বছর ধরে আমার সঙ্গে সব সুখ দুঃখ, ভালবাসা ভাগাভাগি করে নিয়েছিল যে মানুষটা।

আরেকজন আমার মেয়ে মিতু। আমার পাঁচ বছর বয়েসি ফুলের মত নিষ্পাপ, হাসিখুশি একটা বাচ্চা মেয়ে। আমার কোলের ভেতর গুটিশুটি হয়ে শুতে না পারলে রাতে ঘুম হত না ওর। ওই অন্ধকার কবরের ভেতর কিভাবে ঘুমাবে ও আমাকে ছেড়ে?

প্রতিবার মাটি ছুড়ে দেয়ার সাথে সাথে একটু একটু করে ওরা আড়াল হয়ে যাচ্ছে আমার চোখের সামনে থেকে। আর কয়েক মিনিট, তারপরেই ওদের অস্তিত্ব থাকবে শুধু আমার কল্পনায়। আর সবাই ভুলে যাবে, শায়লা আর মিতু নামে দু’জন মানুষ ছিল পৃথিবীতে।

আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী। কবরে মাটি দেয়া শেষ হয়ে গেলে এক এক করে সবাই চলে গেল। দাঁড়িয়ে থাকলাম শুধু আমি। একা। বৃষ্টির সাথে ধুয়ে যাচ্ছে আমার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া নোনা পানি।



২।

হাসপাতাল থেকে ফোনটা যখন আসে তখন আমি অফিসে।

অচেনা, যান্ত্রিক একটি গলা ভেসে এল ফোনের ওপাশ থেকে। রফিক সাহেব, এক্ষুনি একবার এপোলো হাসপাতালে আসতে পারবেন?

কেন? কি হয়েছে? জানতে চাই আমি।

আপনার স্ত্রী এক্সিডেন্ট করেছেন। উত্তেজিত হবেন না, তেমন কিছু হয় নি। সেই একই নিরুত্তাপ গলা।

আর কিছু শোনার ধৈর্য হয় নি আমার। ফোন রেখে এক দৌড়ে ছুটে গেছি হাসপাতালে।

রক্তে ভেজা, প্রাণহীন দেহ দুটো দেখে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, ঘন্টাখানেক আগেও ওদের সাথে কথা বলেছি আমি।

পরদিন ছিল আমার জন্মদিন। মা আর মেয়ে মিলে গিয়েছিল জন্মদিনের কেনাকাটা করতে। ঠিক হয়েছিল অফিস থেকে আমি একটু তাড়াতাড়ি ফিরব সেদিন। সবাই মিলে একসাথে একটা সিনেমা দেখব।

সব কেনাকাটা শেষ করে একটা রিকশায় বাড়ি ফিরছিল ওরা দু’জন। আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তাটা সাধারনত ফাঁকাই থাকে। গাড়িঘোড়ার চলাচল নেই খুব একটা।

বাড়ি থেকে সামান্য দূরে যখন ওদের রিকশা, তখনই একটা ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ। হাসপাতালে আনতে আনতেই দু’জন মারা যায়। ডাক্তার আমাকে খবরটা ফোনে জানাতে চান নি।

সেদিন রাতে আমাদের ছোট্ট ফ্ল্যাটটায় প্রথম বারের মত একলা একলা ঘুমোলাম আমি। আমাদের ছিমছাম, ছোট্ট সুন্দর ফ্ল্যাটটা। সারাদিন মিতু আর শায়লার উচ্ছাসে ভরে থাকত। সেদিনের পর থেকে ফ্ল্যাটটা একেবারে নিরানন্দ, প্রাণহীন হয়ে গেল।

আর সেদিন রাতেই প্রথম দেখলাম আমি স্বপ্নটা।



৩।

দেখলাম, একটা নির্জন জঙ্গলের মাঝে দাঁড়িয়ে আছি আমি। এখানে কি করছি, কেন এসেছি বা কিভাবে এসেছি- এসব কোন চিন্তা কাজ করছিল না মাথায়। তারপর কার কথা শুনে কে জানে, একটা দিক বেছে নিয়ে আস্তে আস্তে হাটতে লাগলাম আমি।

কিছু দূর হাটতেই জঙ্গল পাতলা হয়ে এল। জঙ্গলের শেষ সীমায় একটা রাস্তার আভাস দেখা যাচ্ছে। রাস্তাটা আমার খুব চেনা। কারন এই রাস্তা ধরে বাম দিকের বাঁকটা পেরোলেই আমার বাড়ি।

মন্ত্রমুগ্ধের মত হেটে হেটে রাস্তার কিনারে এসে দাঁড়ালাম। আর সাথে সাথেই, একটা ভারি ইঞ্জিনের আওয়াজ ভেসে এল। শব্দটা এল বাঁকের ওপাশ থেকে। তারপরেই ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার।

এলার্মের তীব্র ক্রীইইইং... ক্রীইইইইং শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেছে। বিছানায় উঠে বসে কিছুক্ষণ জানালার বাইরে ভোরের আলোর দিকে চেয়ে রইলাম।

এই স্বপ্ন কেন দেখলাম আমি?

রাস্তাটা আমার বাড়ির সামনে। আর ওই ইঞ্জিনের শব্দটা কিসের সেটাও আমি খুব ভাল মত বুঝতে পারছি। এটা ওই ঘাতক ট্রাক ছাড়া আর কিছুই নয়। এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে না গেলে হয়তো ঘটনার বাকিটুকুও দেখতে পারতাম।

দেখতে হয়তো পারতাম, কিন্তু দেখে সহ্য করতে পারতাম? একটা কঠিন প্রশ্ন দোলা দিয়ে গেল আমার মনে।



৪।

পরদিন রাতে আবার দেখলাম আমি সেই স্বপ্নটা। সেই একই স্বপ্ন, একই জায়গা। শুধু, এবার আগের বারের চাইতে কয়েক সেকেন্ড বেশি হল স্থায়িত্ব। ইঞ্জিনের গর্জনটা আগের চেয়ে তীব্র।

এভাবে চলতে লাগল প্রতিরাতে। আর প্রতিবারই, আগের বারের চাইতে স্বপ্নের স্থায়িত্ব হল কয়েক সেকেন্ড বেশি। এলার্ম বন্ধ করে রেখে দেখেছি, লাভ হয় না। স্বপ্নের শেষটা দেখতে পারি না কোনদিন, তার আগেই ঘুম ভেঙ্গে যায়।

শেষে একদিন রাতে, উল্টোদিকের রাস্তা দিয়ে আসতে দেখলাম রিকশাটাকে। আমার স্ত্রী আর কন্যা বসে আছে তাতে। দুজনের মুখ আনন্দে উদ্ভাসিত, নিশ্চই আমাকে সারপ্রাইজ দেবার প্ল্যান করছে।

আমি বুঝতে পারছি এটা নিছক একটা স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। তাও মুচড়ে উঠল আমার বুকের ভেতরে। রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছি আমি, হাত তুললাম ওদের সাবধান করব বলে। কিন্তু, তার আগেই ভেঙ্গে গেল ঘুমটা।

পরদিন রাতে, ওদের দেখামাত্র চিৎকার করে ডাকতে চাইলাম। কিন্তু কে যেন চেপে ধরে রাখল আমার গলাটা, একটা শব্দও বের হল না গলা দিয়ে।

আমি জানি, আর খুব বেশি দিন লাগবে না। আর মাত্র কয়েক রাত, তারপরেই আমাকে দেখতে হবে কিভাবে ওই ট্রাকটা আমার সবচেয়ে ভালবাসার দু’টো মানুষের দেহ ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল। কিন্তু রাস্তার পাশে দাঁড়ানো অসহায় দর্শক হয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই কি করার নেই আমার?

হঠাৎ বেডসাইড টেবিলে রাখা এলার্ম ঘড়িটার দিকে চোখ গেল। একেবারেই কিছু করার নেই সেটা বোধহয় ঠিক নয়। একটা কাজ আমি করতে পারি, অন্তত চেষ্টা করে দেখতে পারি।



৫।

আমি বুঝতে পারছিলাম, কবে আসবে সেই দিনটা। অর্থাৎ যেদিন ওই দৃশ্যটা দেখতে হবে আমাকে। ইতোমধ্যে আমি কেন এই স্বপ্ন দেখছি সে বিষয়ে মাথা ঘামানো ছেড়ে দিয়েছি। এখন আমার বিশ্বাস, প্ল্যানমাফিক কাজ করতে পারলে আর এই স্বপ্ন দেখতে হবে না আমাকে।

অবশেষে সেই দিন আসলো। রাতের বেলা দুরু দুরু বুকে ঘুমাতে গেলাম আমি। নিজের মনকে প্রবোধ দিচ্ছি, অবশ্যই কাজ হবে। বালিশে মাথা রেখে হাত বাড়িয়ে মাথার পাশ থেকে তুলে নিলাম এলার্ম ঘড়িটা। স্প্রিং লাগানো পুরানো দিনের, ভারী লোহার তৈরি ঘড়িটা হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম।

একদম যেন কম্পিউটারে প্রোগ্রাম করা, এমন ভাবে সেই স্বপ্নের মাঝে ফিরে গেলাম আমি। দেখলাম, সেই জঙ্গলের ভিতর দাঁড়িয়ে আছি। হেটে হেটে রাস্তার ধারে এসে দাঁড়িয়ে পড়লাম। অপেক্ষা করতে লাগলাম সেই মূহুর্তটার। হাতে কিসের শক্ত স্পর্শ পাচ্ছি। তাকানোর প্রয়োজন বোধ করলাম না। জানি কি রয়েছে আমার হাতে।

ওইতো, শোনা যাচ্ছে ইঞ্জিনের শব্দ! বাঁক ঘুরে বেরিয়ে আসছে ট্রাকটা। মাটি হালকা হালকা কাঁপছে, সেটা স্বপ্নের ভেতরও বুঝতে পারলাম। কিন্তু ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের সমস্ত মনোযোগ ওই ট্রাকটার দিকে নিবদ্ধ করে আমি অপেক্ষা করলাম আমি। একটাই সুযোগ পাব আমি। যেভাবেই হোক, সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে, মিস করা চলবে না।

উল্টোদিক থেকে এগিয়ে আসছে শায়লা আর মিতুর রিকশাটা। রিকশাওয়ালা দেখতে পেয়েছে ট্রাকটা, কিন্তু গুরুত্ব দেয় নি। হয়তো ভাবছে সাইড দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবে।

আমার কাছ থেকে একটু দূরে থাকতে ড্রাইভারের চেহারা দেখতে পেলাম আমি। মোবাইলে কথা বলছে কারও সাথে। দাঁতে দাঁত চেপে একটা গাল দিলাম আমি। আমার সামনে চলে আসলো ট্রাকটা।

ড্রাইভারের জানালাটা আমার সমান্তরালে আসতেই আমি হাত উঁচু করলাম, তারপরে গায়ের সব শক্তি এক করে ছুড়ে মারলাম এলার্ম ঘড়িটা ড্রাইভারের দিকে। ড্রাইভারের মাথার পাশে লাগল ঘড়িটা, ছিটকে বেরিয়ে গেল সাথে সাথে।

আঁতকে উঠল ড্রাইভার। চোখে সর্ষেফুল দেখছে নিশ্চয়ই। আমার চোখের সামনে দিয়ে তীরবেগে ছুটে গিয়ে রাস্তার পাশে একটা বড় গাছে ধাক্কা খেল ট্রাকটা।

চিলের মত চিৎকার করে উঠল মিতু। কিন্তু আমি জানি, সম্পূর্ণ নিরাপদে আছে ওরা। বাঁচাতে পেরেছি আমি ওদের।



৬।

হ্যাপি বার্থডে আব্বু! হ্যাপি বার্থডে...!!

মিতুর গলার তীক্ষ্ণ চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। লাফ দিয়ে এসে আমার বুকের উপর পড়ল ছটফটে মেয়েটা। বার বার চিৎকার করছে, হ্যাপি বার্থডে আব্বু!

দুই হাতে শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরলাম আমার বুকের সাথে। চোখ থেকে ঝর্ণার মত বেরিয়ে আসতে চাইছে অশ্রু, কিছুতেই আটকাতে পারছি না। মনে মনে অজস্র ধন্যবাদ জানাচ্ছি আল্লাহকে, ওদের ফিরিয়ে দেয়ার জন্য।

কি, ঘুম ভাঙল তোমার?

মিতুর পিছন পিছন শায়লাও এসে দাঁড়িয়েছে কখন যেন। মুখে মিটিমিটি হাসি। ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম আমি। হাতটা ধরে আমার পাশে এসে বসল শায়লা। দুই হাতে কাছে টেনে নিলাম আমি দু’জনকে।

এই পরিচিত হাসি, পরিচিত মুখ গুলো দেখার জন্য কতখানি ব্যাকুল হয়ে ছিলাম, সে কথা কিভাবে বোঝাবো? বিশ্বাস হচ্ছে না ওদের সত্যি সত্যি হারিয়ে ফেলেছিলাম। মনে হচ্ছে, গত কয়েকটা দিন কোন দুঃস্বপ্নের ঘোরে কাটিয়েছি। এই মাত্র সেই দুঃস্বপ্নের ঘুম ভাঙল।

তারপর আমার খেয়াল হল। ওদের জড়িয়ে ধরে রেখেই আড়চোখে তাকালাম বেডসাইড টেবিলের দিকে।

নেই। অদৃশ্য হয়েছে এলার্ম ঘড়িটা।



(বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:৫৪

িমবন বলেছেন: অনেক ভাল হয়েছে...তবে তোমার নিজের লেখাগুলান এর থেকেও বেশী ভাল।

০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ১:১৬

ভাঙ্গা ডানার পাখি বলেছেন: কি যে বলেন ভাই! তবে অনুবাদ লেখার একটা সুবিধা আছে, গল্পের কাহিনীর কোন ঝামেলা মূল লেখকের উপর চাপিয়ে দেয়া যায়!!

২| ০২ রা জুন, ২০১৪ রাত ১১:১৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: সেও কী ছায়াজগতে বিলীন হয়ে গেলো? ভালো লেগেছে লেখাটা।

০৩ রা জুন, ২০১৪ রাত ১১:৫০

ভাঙ্গা ডানার পাখি বলেছেন: এইভাবেও বলতে পারেন, আবার পুরো ব্যাপারটাকেই স্বপ্ন বলে ধরে নিতে পারেন, ইচ্ছা করেই কনফিউশন রেখে দিলাম! অনেক ধন্যবাদ হাসান ভাই কষ্ট করে আমার অখাদ্য সব লেখা পড়ার জন্য :)

৩| ০৭ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:০৭

আহসানের ব্লগ বলেছেন: হাসান ভাইয়ার সাথে একমত ! :)

০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৫৩

ভাঙ্গা ডানার পাখি বলেছেন: একই উত্তর তাহলে আপনার জন্যও প্রযোজ্য :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.