নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাংবাদিক দৈনিক মুক্ত বলাকা, গাজীপুর

শহিদুল৯৩৫

প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, গাজীপুর বিজ্ঞান কলেজ

শহিদুল৯৩৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এরি নাম কি জীবন

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫১

হে পরমাত্মীয়া,
কেমন আছ তুমি? আজ এ ভাদ্রের শেষ দিকে এসে যখন মেঘেরা বসুন্ধরা ভেজানোর কাজ থেকে প্রায় ছুটি নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে চায়, সেই লগনে তুমি আজ কেমনে টিকে আছ এ ধরার মাঝে? কত সপ্তাহ, মাস, বছর তুমি এই আমার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছ; কিন্তু তোমার সাথে দু’দন্ড বসে আলাপের অবকাশ নেই। তাই আজ এসেছি তোমার কাছে, বহুকলের তীব্র বাতাস, রোদ, বৃষ্টিতে জমে থাকা ঝং পরে যাওয়া আবরণ থেকে নিজেকে অন্তত একটু ঝঞ্জা মুক্ত করতে। তুমি কি আমার মাঝে বসেও আমাকে ভুলে গেছ এ স্বার্থান্বেষী দুনিয়ার মস্ত প্রাচীরে বাস করা সুন্দর আকৃতির রঙ্গমঞ্চের এক একটি অভিনেতার মত? জানোতো, আজও এ অন্তরের নরম তুলতুলে আবরণ ভেদ করে কী যেন একটা বিধল? বোধহয় তীর-টীর কিছু একটা হবে। আচ্ছা, তুমি বলতে পারো এ ক্ষণিকের মোহমায়া বেষ্ঠিত পাপিষ্ঠা ধরণীর বুকে কেন মানুষের প্রতিনিয়ত স্বার্থ উদ্ধারের এত প্রচেষ্ঠা? কেন আজকের এ ধরা দূষিত অনিলে ভারাক্রান্ত হয়ে আছে? কেন আজ আমি সৃষ্টিকূলে সেরা হয়ে জন্ম নিয়েও বোঝা হয়ে দাড়িয়েছি কোন কোন মনুষ্য আবরণ দিয়ে ঢাকা জীবের কাছে? এত নিষ্ঠুর নির্মমতা যা আমার হৃদয়টাকে বিষিয়ে দিয়েছে, তিলে তিলে আমার অস্থি-মজ্জাতেও অগ্নিফুলকি দ্বারা প্রজ্জ্বলিত করে প্রতিনিয়ত। আমি কি জড়বস্তু? যে তাদের সকল কিছু নীরবে অন্ধ, বধির আর বোকার মত সহ্য করব? কোথায় থাক তুমি? পারোনাকো সে ব্যথানলে একটু একটু করে জল ছিটাতে? আমি এ কোটি লোকের মাঝে কাউকে না খুঁজে পেয়ে আজ তোমায় খুঁজে নিলাম। তুমি যে আমার পরমাত্মীয়া, আমার পিতৃ-মাতৃ-ভ্রাতৃ তুল্য;আমার স্বজন আর বন্ধু সমতুল্য। কেন এখনও নিশ্চুপ তুমি? একটি কথা তো বলো। আর চুপ করে থেকোনা, আমি যে জীবনের বোঝা বয়ে ক্লান্ত হতে হতে আজ তোমার কাছে এসে দাড়িয়েছি। তুমি কি ঘুমন্ত? না কি জীবনে তোমায় একবারও আপন ভাবিনি সে অভিমানে নিশ্চুপ? নাই বা বললে তুমি, একটু শুনে যাও এ অভাগার কথা। তবু এ মনের ব্যথা থেকে পরিত্রান পাওয়ার যদি একটা পন্থা পাই। আমি কতযে একাকী হেটেছি বেদনাকে বুকে চাপা দিয়ে তুমি আমার এত কাছে থেকেও কেন সে ধোয়ার স্তুপে ক্ষণে ক্ষণে আমায় জ্বলতে দেখে ও নিশ্চুপ হয়ে ছিলে বলনা? আজ তোমার সাথে অনেক কথা, যদিও সব জানো তবু ও সহস্র ভাগের এক ভাগ বলে যদি একটু হালকা হওয়া যায় সে লক্ষেই তোমার ঘুম ভাঙানোর প্রয়াস। তুমি বুঝি খুব অভিমানি? কথা যে বলছনা। ঠিক আছে পরমাত্মীয়া একটু শোন। মানব কূলে জন্ম নিয়েছি আমি পৃথীবিতে বয়ে চলা কোন এক সময়ের গতিতে। সেই যে চিৎকার, তা আর বুঝি থামবে না কোন কালে। জননী যেন কোথায় মিলিয়ে গেল বিদ্যুতের বেগে, আর সে বর্ণচোরা জনক তো কোকিল সমতুল্য;এর চেয়ে আর বেশি কি বা বলবো তাকে? আমার মুখ না দেখেই যার তৃপ্তি মিটেছে শুধু নব আলিঙ্গনে। আমি পক্ষীমুখ থেকে খসে পড়া দানার মতই মাটির বুকে অযতেœ অবহেলায় রোদে জলে দোল খেতে খেতে বড় হই। কি-বা সেই বড়ো? হাত-পা গুলো একটু সবল মাত্র। সেই শৈশব থেকে কত মোড়ে, কত গলিতে, কত হিন্দু- মুসলমানের চরণের দাস হয়ে সময় কেটেছে প্রতিনিয়ত; সেকি আর ভুলবার কথা যতই রবি-শশীর বদল আসুক। কত দোকানের নিচে, কত ড্রেনের পাশে, রাস্তার ফুটপাতে, কখনও বা পাইপের ভেতর, কখনও গাছের মাথায়, ল্যাম্প পোস্টের নিচে বস্ত্রহীন গাত্রে শক্ত পিচের রাস্তায় কেটেছে সময়, কখনো এক টুকরো পোড়া মাটির খন্ডে মাথা রাখার ঠাঁই হয়েছে আবার কখনো তাও না। আবার চঞ্চল দিনে গা ভাসিয়ে চলেছি লোকের ভিড়ে। কত শিশুকে দেখেছি অপলকে ,অধ্যায়নের জন্য দৌড়ে স্কুলে ঢুকছে, পাঠ শেষে বেড়িয়ে হাসিমুখে মায়ের কোলে উঠছে। আমার কি গো আর মা আছে? পাছে কোলে নিয়ে ভুলাবে ক্লান্ততা, আর দেখাবে নবনির্মিত যে পৃথিবী প্রতিনিয়ত তার বুকে কিভাবে নিজেকে ধরে রাখবো? আমি কার দিকে তাকিয়ে নিজের আশ্রয় খুজবো? আমি যে এক অনাথ। কত অনিয়ম এ শূন্য দেহমনে। না ভালো আহারের সন্ধান, না ভালে বস্ত্র। শিক্ষা সে তো স্বপ্ন। আর আনন্দ সে তো স্বপছোঁয়া আকাশের মত দূরে বসে থাকে । আমি কত যে স্বপ্ন দেখেছি, আর ভেঙেছি তার চেয়েও বেশি । চুরি না করেও চোর সাব্যস্ত হওয়া, অন্যায় না করলেও মার খাওয়া, বহু কষ্টে অর্জিত মাইনে থেকে বঞ্চিত আরও যে কত ভুলে যাওয়া কথা....। জানো সে রাস্তার বালি আর কাঁদামাটির সাথে আমার যে কত নিবির সম্পর্ক! ও মাটির বুকটা যে কত ঠান্ডা বুঝি গো অনেকেই জানার সুযোগ পায়না এ বিলাস বহুল জীবনে । কিন্তু আমি একেবারে কাছ থেকে দেখেছি , সেও কিন্তু সংখ্যায় কম নয়; দেড় যুগের ও বেশি । কিন্তু আমি একেবারে কাছ থেকে তাকে দেখেছি, সে ও কিন্তু সংখ্যায় কম নয়, দেড় যুগের ও বেশি। তুমি আমার মাঝে বসে কত যে কষ্ট পেয়েছ তার ও কোন ইয়ত্তা নেই; নেই কোন মাধুর্যতা,থাকবেই বা কি করে? তুমি আর আমি মিলেই তো একজন। এই তো গেল মঙ্গলবারে কনকনে কাঁপা শীতে ছেড়াঁ বস্ত্রে আমি তোমাকে বক্ষে ধারণ করে রেলস্টেশনে তীব্র বেগের বাতাসে ও শুয়ে ছিলাম। একটু ঘুমাতে চাইলাম কিন্তু পুলিশের বুটের শক্ত লাথি যে এই মাটির শরীরকে রক্তাক্ত করে দিল; তুমি ও তো তখন ক্লাস্ত, কারণ সবে মাত্র বিশ্রামের পার্টটি শুরু হয়েছিল । তারপর ব্যথাতুর মনে আর আধঘুমো চোখে দোকানের নিচে কাদাজলে রাত কাটালাম । তবে পরিস্থিতির কারণে জায়গা বদল হলেও তোমাকে আমার কাছ থেকে একটুর জন্য ও বিচ্যুত করিনি। জানো,তুমি যে আমার এত কাছে থাকো, এত পরমাত্মীয় এ কথা ভাববার সুযোগ আজকের আগে আর কখনও হয়নি। এ ছোট্ট জীবনে ন’বার জেল ও খেটেছি। কি বা আমার অপরাধ? আর আমার বিরুদ্ধে কিসের আনিত অভিযোগ? কে বা সেটা করলো? আর ঘটনাটা কখনই বা ঘটলো জেলে পৌঁছার আগে তো টের পাইনি পাছে বের হয়েও বুঝতে পারিনি। তবে যতই অনাহারে, অনিদ্রায় দিবা-রজনী কাটুক না কেন, আঘাতে ক্ষত হোকনা কেন, প্রত্যেক মানুষর অভিজ্ঞতা সঞ্চারের জন্য একবার হলেও জেলের ভেতর ঢোকা উচিত। কিন্তু কারণে অকারণে বারবার না যাওয়াই ভাল। জানো, পুরো সময়টা হিসেব করলে এ জীবনের । অর্ধেকটাই কেটেছে অনাহারে। আর কোন রোগের জন্য যে ডাক্তার আর ঔষধ কে কাজে লাগিয়েছি সেতো মনেই পরছেনা। এ কয়েক বছরেও ন’জোড়া নতুন কাপড় জোটেনি অধমের ভাগ্যে। আর চোখের জলতো বোধহয় কয়েক ট্যাংকি পানির চেয়েও বেশি হবে। আর আঘাতের চিহ্ন শরীরের কোথায় যে বাকি আছে সেটাই খঁজে বের করতে কয়েকজনের কয়েকদিন লাগবে; পাছে পায় কি না তাও সন্দেহ। আজ প্রশ্ন জাগে বারবার, এরি নাম কি জীবন? আরো একটা কথা কখনও হাসায়, কখনও কাঁদায়, আবার কখনও ভাবায় যে,আমি কোন ধর্মের? আর কি বা পালন করব সংসার মাঝে বসে? কারো কারো পৌষ মাস অনেক এসেছে জীবনে, আর আমি চৈত্র আর মাঘেই বার মাস কাটাই। কখন যে শরৎ, ফাগুন,হেমন্ত আর পৌঁষ আসে মানব মনে তা আমি জানতেই পারিনা। তবে বর্ষা কিন্তু আমাকে এড়ায় না। ঐ যে বলেছিলাম না, কয়েক ট্যাংকির জল! বর্ষা না হলে আসলো কিভাবে? আমার এ দেহের মাঝে অবিচ্ছেদ্য করে শুধু তোকেই দিয়েছে রে। আর কাউ কে-ই কাছে কি দূরে দেয়নি বোধহয়। দিলে তো এতকাল খুঁজে পাওয়ার-ই কথা। জানিস তো, আমি মাটির বুকে কত ঘুমিয়েছি আর তুই যখর আমায় ছেড়ে যাবি অজানায়, তখন অচেতন দেহটাকে নিয়ে মাটির পেটে ঘুমাব। কে জানে তাও কি জুটবে এ পেড়া ভাগ্যে? না কি ময়লা জলে ভেসে মৎস্য প্রজাতির পেটে বাসস্থান গড়বো না কি শেয়াল- কুকুরে খাবে দাড়ালো ছুরি (নখ) দিয়ে? আমার কাছে জীবনের কোন মানে নেই, নেই সংজ্ঞা, উদাহরণ, কোন যুক্তি বা সৌন্দর্য। আচ্ছা সবাই তো আর আমারি মত না। তবে কেন কঠিন এ জলস্রোতে আমার একা বাস? সুখ কাকে যে বলে আমি জানিনা। আর কতজনে বলে সুখেই আছি। আমি ঠিক মেলাতে পারিনা যে তারা ঠিক কিসের কথা বলছে। দেখতেই বা সেটা কেমন? কোথায় পেল তার খোঁজ? বলোতো আমি কি বোকা? কিছুই বুঝিনা? চেষ্টা করলে ও না? আজ এ গাছের নিচে বসে শান্ত মাঠকে সামনে রেখে তোমাকে কত কথাই না বললাম, জানো নিজেকে একটু হালকা লাগছে । আবার যদি কখন ও বরল তুমি বিরক্ত হবেনা তো? কোন উত্তর দিলেরো যে? ঠিক আছে, আবার এমন কোন নির্জনে বসে দুজনাতে হবে কথার ভাগাভাগি। তবে আর এখন জ্বলাবোনা। তুমি ঘুমাও পরমাত্মীয় আর আমি ও একটু নিদ্রাচ্ছন্ন হতে চেষ্টা করি। তবে আজ আসছি কেমন...........................................।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.