নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বই পড়, বইকে বন্ধু বানাও, এই বন্ধু কখনও তোমাকে ছেড়ে যাবে না।
আজ রুপকথার বিয়ে, ওর আসল নাম রুপকথা নয়। রুপকথার আসল নামটি খুবই মিষ্টি, তানজিলা মেী। গত পাঁচ বছর আগে যেদিন আমাদের প্রথম ভাললাগা শুরু দু'জন-দু'জনার সেইদিন থেকেই আমি ওকে রুপকথা বলে ডাকি, এরপর থেকেই রুপকথা আমার সবকিছুই। খেতে, ঘুমাতে, বসতে- হয় রুপকথার কল না হয় ম্যাসেজ নয়তো কারোর মাধ্যমে উপহার। আমার জীবন হয়ে উঠেছে রুপকথাময়।
আমাদের এই বিচ্ছেদ ধনী বা গরীবের জন্য নয়, হাস্যকর একটি বিষয় বলতেই পারেন, আমি গ্রামের ছেলে, রুপকথা শহরে বেড়ে উঠা এক দুরন্ত কন্যা। এখনও আমি গ্রামের সেই নির্মল বাতাস, সবুজের হাতছানি, পাখিদের মিষ্টি কোলাহল ভুলতে পারিনি, তাই আমার ইচ্ছে বিয়ের পরে চাকরি ছেড়ে গ্রামেই কিছু একটা করব। রুপকথার এতেই সমস্যা, সে গ্রামের নাম শুনলেই নাম কুচকায়, বলে- ওখানে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব, বিদ্যুৎ থাকে না, ইন্টারনেট নাই, আমি কাটাবো কি করে সারাদিন? আমি তাকে বুঝালাম- গ্রাম আগের মত অজ পাড়গাঁটি নাই, শহরের সবকিছুই প্রায় পাওয়া যায়। তাছাড়া তোমার সারাদিন রান্না-বান্না আর ঘর সামলাতেই তো দিন শেষ হবে। রান্নার কথা শুনতেই রুপকথার বেহুঁশ হওয়ার উপক্রম। তবে সে যে একবারে রান্না পারে না তা নয়, সে এ পর্যন্ত আমাকে বহুবার নুডুস রান্না করে খাওয়াছে। প্রতিবারেই ভিন্ন স্বাদের, কখনও লবণ ছাড়া, কখনও পূর্বের লবণসহ, কখনও মরিচমুক্ত আবার কখনও মরিচ নুডুস। তবুও আমাকে হেসে বলতে হয়েছে- রুপকথা তোমার রান্না সত্যি অসাধারণ। আমি রুপকথাকে খুশি করার জন্য এ কথা বলতাম না। আমি চাইতাম সে আমার জন্য কিছু করুক কারণ আমি রুপকথাকে খুব ভালবাসি।
গত পনের দিন আমি ও রুপকথা যোগাযোগ ছাড়া। আজ সকালে ওর এক বান্ধবী একটি বিয়ের কার্ড দিয়ে বলল- বিয়ের দাওয়াত, আসবেন কিন্তু।
আমি বললাম- কার বিয়ে?
অবণী বলল- রুপকথার।
আমার মাথায় উপর মহাবিশ্বের সব নক্ষত্র আঁচড়ে পড়ল, তবুও নিজেকে সামলিয়ে বললাম- চেষ্টা করব।
অবনীর জন্য চা আনা হয়েছিল আগেই, কিন্ত সে চা না খেয়েই চলে গেল। অবণী হল রুপকথার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী।
আমার ঘোর এখনও কাটেনি, অবণী কি বলে গেল, এটা কি করে সম্ভব? রুপকথা আমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে! ভাবতেই পারছি না কিছুই। রুপকথাকে কি ফোন দিব, না দিব না, ওর সঙ্গে যে এখন আমার আঁড়ি চলছে। শেষ দিন আমাদের তর্ক যুদ্ধ হয়েছিল সেদিন ও বলেছিল- দেখো, এই শহরের নামকরা কাউকে বিয়ে করে নিব। আমি বলেছিলাম- বিয়েতে গিয়ে দাওয়াত খেয়ে আসব।
সত্যি কি রুপকথা কাউকে বিয়ে করে নিচ্ছে! না এখন কিছুই আর ভাবতে পারব না, এখনি গ্রামে যেতে হবে, বটতলায় বসতে হবে তাহলে একটা ভাল উপায় মাথায় আসবে। আমার গ্রামের দক্ষিনে প্রাইমারী স্কুলের সম্মুখে একটি বটগাছ আছে আমি কোন সমস্যায় পড়লেই এর নিচে গিয়ে বসি, একটা উপায় বের হবেই। অন্য কোন একদিন বটগাছের বিস্তারিত বলব।
কার্ডটি টেবিলে রেখেই ব্যাগ গুছানো শুরু করলাম, একবার ভাবলাম অফিসে একটি ফোন করে বলি- আজ থেকে আমি আর আসব না, অন্য কাউকে নিয়োগ দিয়ে দিতে। যে শহরে থেকে রুপকথার সাথে দেখা করতে পারব না সেই শহরে আর একদিনও নয়। কিন্তু আমার মেজাজ এখন সুবিধা অবস্থায় নাই, স্যারের সাথে কথা বলতে গেলে ঠিকমত বলতে পারব না, আমি চাই না আমার কোন কথায় স্যার কষ্ট পাক কারণ আমাকে স্যার খুব স্নেহ করেন।
দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে বের হয়ে পড়লাম, বের হওয়ার সময় কার্ডটি নিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলাম, হাজার হলেও রুপকথার পাঠানো শেষ কিছু।
বাস টার্মিনালে বসে আছি, দুই ঘন্টা পরে বাস ছাড়বে। অন্যসময় হলে পুরো টার্মিনাল ঘুরতাম, আজ ভাল লাগছে না তাই স্থির বসে আছি। এক বাদামওয়ালা ছেলে এসে বলল- মামা বাদাম লাগবে?
আমি বললাম- তোর সব বাদাম কত?
তের-চেীদ্দ বছরের মত বয়সী ছেলেটি কিছু না বলেই চলে যেতে লাগল, আমি ওকে ডেকে বললাম- বললি না, তোর সব বাদাম কত?
ছেলেটি বলল- মামা আজ বুঝি আপনার মন খারাপ?
আমি বললাম- হুম। তবে তুই কি করে বুঝলি?
ছেলেটি বলল- আগে যখন আপনি এখানে আসতেন পুরো টার্মিনাল হাঁটতেন আর আমার কাছ থেকে দুই-তিনবার বাদাম নিতেন, আমাকে নানান প্রশ্ন করতেন। আজ আপনার চোখ দু'টো খুব ভিজে, মনে হয় আপনি কান্না লুকিয়ে রাখছেন।
ছেলেটির মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম- হুম, আমার মন আজ খুবই খারাপ। তুমি এখন আমাকে ২০ টাকার বাদাম দাও।
ছেলেটি বাদাম দিল, আমি তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বললাম- জানি, তোমার কাছে ভাংতি নাই, ফেরত দিতে হবে না, তুমি রেখে দাও।
ছেলেটি বলল- মামা আমি বেশি টাকা নিতে পারব না, এমন সময় আবিদের ফোন এল, আমি ফোনে ব্যাস্ত হয়ে গেলাম, ছেলেটি কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেল।
আবিদ আমার আর রুপকথার প্রিয় বন্ধু, আবিদের ফোন রিসিভ করতেই বলল- পরিবহনের নাম কি? ছাড়বে কয়টায়? সিট নাম্বার কত?
ভাবছেন আবিদ আমাকে ফলো করছে, না, সে আমাকে ফলো করছে না। আবিদ জানে আমার কিছু হলেই গ্রামে যাই তাই সে আমাকে স্বাভাবিক করার জন্যই প্রথমেই ফাজলামো করে। ও সবসময় এমনই করে।
আজ আমার মন খুব বেশি খারাপ তাই আবিদের সাথে বেশিক্ষন কথা বলতে ইচ্ছে করচ্ছে না, আমি ঝটপট ওর প্রশ্নের উত্তর দিয়ে লাইন কেটে দিলাম।
বাস ছাড়ল প্রায় আধা ঘন্টা লেটে। আমার পাশের সিটে বোরখা পরিহিত একটি মেয়ে। বাস কিছুক্ষন চলার পর মেয়েটি বলে উঠল- কা--, বিয়ের ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। কথাগুলো আমার কানে আসতেই আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। এ যে রুপকথার কন্ঠ! আমি কিছু বলার আগেই মায়াবী মুখটি বের করে বলল- পনের দিন কিভাবে থাকলে? ওর চোখে ঝড়ের পূর্বাভাস।
কিছুক্ষন নিরবে দু'জন বসে রইলাম। তারপর ও বলল- অবণীর দেওয়া কার্ডটি খুলে দেখেছো?
মাথা নাড়িয়ে বললাম- না।
জানতাম দেখবে না, কেন খুলে দেখনি? ওর সেই শাসন, যার জন্য আমি ওকে খুব ভালবাসি। আমি বললাম- স্বামীকে একটু আস্তে বকা দাও, বাসের লোকজন তাকাচ্ছে।
রুপকথা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। এই রুপের বর্নণা নাইবা দিলাম, এটা শুধু আমার জন্য।
পাঠকবৃন্দ ভাবছেন কার্ডটিতে কি লেখাছিল- হুবহু তুলে দিচ্ছি,-
"তুমি একটা পাথর, পাথর না লোহা, লোহা না ইস্পাত। না, তাও না--------।
আমি আগামী ১লা বৈশাখ তোমাদের গ্রামের বটতলার মেলায় তোমার হাত ধরে ঘুরতে চাই, ধরবে কি এই অভাগিনীর হাত?"
রুপগন্জ,
১৭ই মার্চ ২০১৮
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
১৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:০৫
শাহিন বিন রফিক বলেছেন: আপনাকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। আমার বিশ্বাস, আপনাদের অনুপ্রেরণা আমার লেখায় উন্নতি করবে।
২| ১৮ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৩০
বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: শাহিন ভাইয়ের পোষ্টটি পড়ে আবেগাপ্লুত হয়ে গেলাম।
বড়ো ভাল লাগল। আমার শুভেচ্ছা রইল।
১৮ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৪৯
শাহিন বিন রফিক বলেছেন: ভাই প্রিয় কবি, আমার আন্তরিক ধন্যবাদ রহিল!
৩| ২০ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৫৮
মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: শুভ সকাল, শাহিন ভাই।
আপনার নতুন লেখা কই?
২০ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৫
শাহিন বিন রফিক বলেছেন: আজ কিছু একটা লিখব, ইনশাল্লাহ।
মন্তব্যর জন্য আপনাকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।
৪| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:১৫
মনিরুল ইসলাম বাবু বলেছেন: নাটকীয়তা ভাল্লাগ্লো
০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১২
শাহিন বিন রফিক বলেছেন: মন্তব্যর জন্য আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:০০
আহমেদ জী এস বলেছেন: শাহিন বিন রফিক ,
বাহ..... নাটকীয় হলেও বেশ হয়েছে লেখা । ভালো লাগলো ।