![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বঙ্গদেশের জীবনযাত্রার মান ইওরোপীয় স্ট্যান্ডারডে পৌছতে চললেও পুলিশ পুলিশই রইয়া গেল মানুষ হইলো না
হেফাজতি বীরপুরুষেরা ৫ মে লাঠি-পতাকা হাতে পালে পালে এসে জিহাদি জোশে ঢাকাকে অবরোধবাসিনী করার মহড়া দিলেন। এই ভ্রান্ত সহিংসতার দাম দিতে অনেক প্রাণ গেল।
শুনলাম, কোথাও কোথাও এই বীরপুঙ্গবেরা পথচারী জেনানাদের মাথায় কাপড় দিতে হুকুম করেছেন।
তাঁদের ঢলে মাদ্রাসার বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের চেহারাগুলো চোখে ভাসে। বহু অবহেলা-অসংগতির সুযোগে ফেনিয়ে তোলা অবিশ্বাস্য, অশালীন ও বিষাক্ত এই পরিস্থিতিতে রাগে, দুঃখে, জিদে মাথায় আগুন জ্বলছে।
যেকোনো বড় ঘটনা ঘুরেফিরে দেখা-বোঝার জন্য আমার দুই পা নিশপিশ করে। এর আগে গত ৬ এপ্রিল হেফাজতের ঢাকাযাত্রার ঢাকঢোলও আমাকে টেনেছিল। কিন্তু দিগন্ত টেলিভিশনে সেই জমায়েতের শুরুটা দেখার পর কেমন একটা বিতৃষ্ণা হলো।
বিতৃষ্ণাটা হয়েছিল মূলত সেই মহাসমাবেশের সর্বাঙ্গীণ ‘পুরুষ’ চেহারার কারণে। বিকট এই ‘পৌরুষ’ সেবার ইটিভির নাদিয়া শারমিনকে সাংবাদিক নয়, ‘মেয়েমানুষ’ হিসেবে দেখে আক্রমণ করেছিল। তখন থেকেই আসলে রাগে আমার গা জ্বলছে।
হেফাজতের নেতারাও সেই ইস্তক অপূর্ব সব বাণী দিয়ে চলেছেন—১৩ দফা দাবির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ না করে নারীদের উচিত নফল নামাজ পড়া; বিক্ষুব্ধ নারীসমাজ মাঠে নামলে আল্লাহর গজব নেমে আসবে; মেয়েদের উচিত প্রধানমন্ত্রীর সাজে চলাফেরা করা...
বিকট অথবা সরল ‘পৌরুষ’
হেফাজতের অবরোধ-সমাবেশের মতোই এর দাবিগুলোও সর্বাঙ্গীণ ‘পুরুষ’। শুধু তা-ই নয়, এ ‘পৌরুষ’ নিজের আদলের ইসলাম-বিশ্বাস ছাড়া অন্য সব মত-পথকে খারিজ করে দেয়। এ পৌরুষ সম্মিলিত সুস্থ জনজীবনের জন্য হানিকর।
হেফাজতের দাবি ও আন্দোলনের প্রতি যাঁরাই সমর্থন জানাচ্ছেন, তাঁরাও আত্মধ্বংসী এ পৌরুষের ভাগীদার। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এই পৌরুষ এ ধারার বা এ ধারাকে ব্যবহারকারী রাজনীতিকদের একচেটিয়া নয়।
কয়েক বছর আগে ধানমন্ডি ৫ নম্বর সড়কের মোড়ে শেখ হাসিনার বাড়ি পাহারায় নিযুক্ত এক পুলিশ আমাকে মাথায় কাপড় দিতে আদেশ করেছিলেন। ক্রুদ্ধ বাগিবতণ্ডার পরও পুলিশিয়ানায় দৃপ্ত বীরপুরুষ বলে চলেছিলেন, তিনি কোনো অন্যায় আবদার করেননি। সব শুনে আমার ধর্মপ্রাণ বাবা খেপে উঠে বলেন, ‘ওকে পথচারী নারীর দিকে তাকানোর অধিকার কোন ধর্ম দিয়েছে!’ পরে ওই পুলিশ দল সেখান থেকে বদলি হয়েছিল।
এরশাদ যখন ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করলেন, তখন একজন রিকশাচালকের সঙ্গে কথা হয়েছিল। সরল মানুষটি ধর্মীয় অনুশাসনের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য আমাকে সবিস্তারে বলেছিলেন, মেয়েরা মাথায় কাপড় না দিলে কীভাবে কবরে তাঁদের চুলগুলো অযুত-নিযুত কালসাপ হয়ে তাঁদের কামড়ায়।
সম্প্রতি শাহবাগের জমায়েত ঘুরে বাসায় ফেরার পথে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের সঙ্গে গল্প হচ্ছিল। তাঁর মতে, আগামী নির্বাচনে দুই নারী নেতার কেউই ক্ষমতায় আসবেন না। আসবেন ‘চাচা’ মানে এরশাদের দল, যেটার তিনিও সমর্থক। পরে তিনি বলেছিলেন, ‘জামায়াত’ও আসতে পারে। কেননা, মানুষ ইসলামের প্রতি সহানুভূতিশীল। ‘হ্যারা আইলে অ্যামনে ঘোরাঘুরি সব শ্যাষ।’ কাদের ঘোরাঘুরি? মেয়েমানুষের! সেটা কেমন হবে? ‘সেইটা উচিতই হইব।’
‘মুক্তমনা’ সাহিত্যিকের কলমেও তো ছদ্ম-সহানুভূতির মোড়কে এমনধারা পৌরুষের ছটা দেখতে পেলাম! আরও মনে পড়ছে, যশোরে হিন্দুপ্রধান এক গ্রামে মেয়েরা বলেছিলেন, তাঁদের বিয়ের নিবন্ধন, বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার ও সম্পত্তির উত্তরাধিকার থাকা খুব দরকার। আর তাঁদের পুরুষ স্বজনেরা বলেছিলেন, সমাজ এগুলো ছাড়াই ভালো চলছে!
সুকৌশলী বয়ান ও রত্নের হেফাজতি!
২০০৪ সালে যশোরেরই প্রত্যন্ত আরেক গ্রামে এক নারীর কণ্ঠে বিশুদ্ধ উচ্চারণে সূরাপাঠ শুনে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তাঁর নাম তিনি প্রথমে বলেন, পারুল। পরক্ষণেই সেটা শুধরে নিয়ে বলেন, ‘জান্নাতি’।
তাঁর নামের ইতিহাসটি চমকপ্রদ। ছয় বছর আগে গ্রামে একজন বড় মাওলানা এসে বলেছিলেন, স্বপ্নে তিনি এখানকার একটি কবর জিয়ারত করার আদেশ পেয়েছেন। চমৎকৃত গ্রামবাসী তাঁকে কবরটি দেখিয়ে দেন। পরে তাঁর সূত্র ধরে গ্রামে মেয়েদের ধর্মীয় অনুশীলনের নিয়মিত বৈঠক হতে থাকে। প্রশিক্ষকেরা পারুলের নতুন নাম দেন জান্নাতি। গত সংসদ নির্বাচনের আগে ওই গ্রামের আরেকটি নারী-বৈঠকে জামায়াতপ্রার্থীর পক্ষে ভোটের প্রচারণা হতে দেখেছি।
‘বৈঠক’ জামায়াতে ইসলামপন্থী। চুয়াডাঙ্গার গ্রামে এক অংশগ্রহণকারিণীর কাছে জামায়াতের ‘সহযোগী সদস্য’ পরিচয়পত্র দেখেছিলাম। তাবলিগ জামাতের ধারায়ও মেয়েদের নিয়মিত ধর্মীয় ‘তালিম’ হয়, তবে সেখানে নাকি ইহজাগতিক আলোচনা থাকে না।
সম্প্রতি অনুজপ্রতিম এক গবেষক একটি মহিলা কওমি মাদ্রাসায় তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। মেয়েটি নিজে হিজাব পরেন। কিন্তু তিনিও বহু চেষ্টা করে ছাত্রীদের সঙ্গে মাপা কথা বলার অনুমতি পেয়েছিলেন। সেখানে তিনি শোনেন, মেয়েরা মহার্ঘ রত্নের মতো। কেউ যেন প্রলুব্ধ না হয়, সে জন্য তাঁরা দেহ পুরো ঢেকে কঠোর পর্দা করবে; ছেলেদের সঙ্গে বাইরে কাজ করবে না।
একবার সিলেটের এক গ্রামে বড় একটি কওমি মাদ্রাসার ছোট হুজুরের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। মাদ্রাসাটির বড় হুজুর ওই অঞ্চলে মেয়েদের হাটবাজারে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছিলেন। তিনি বেগানা নারীর সঙ্গে কথা বলেন না। ছোট হুজুরের কথাও রেকর্ড করতে হয়েছিল দরজার কপাটের আড়াল থেকে, মাইক্রোফোন ধরা হাতটা বাড়িয়ে ধরে। সাক্ষাৎকার শেষে প্রবল কৌতূহলে তাঁকে একনজর দেখব বলে দরজার ফাঁক দিয়ে চোখ চালাতেই চার চোখের মিলন ঘটে যায়! কৌতূহলের সর্বজনীনতা দেখে আশ্বস্ত হই!
‘তৌহিদি জনতা’ ও পর্দা
এ দেশে হেফাজতে ইসলামসহ সবার মতপ্রকাশের অধিকার অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু সেটা অন্য কারও ন্যায্য অধিকার বা সম্মিলিত সুস্থ জনজীবনের দাবিকে খর্ব করে নয়। তীব্র ক্রোধ হয়, যখন ধর্ম-কর্ম সবকিছু শুধু পুরুষের ও মুসলমানের একচেটিয়া সম্পত্তি বলে প্রতিভাত হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারবিরোধীরা এঁদের সঙ্গে যোগ দেওয়ায় ষোলোকলা পূর্ণ হয়েছে।
এঁরা ‘তৌহিদি জনতা’র সমর্থনের গৌরব করেন। তৌহিদি জনতার মধ্যে কি মেয়েরা আছেন? কত ভাগ? দরিদ্র-সাধারণ যে নারীরা ঘরে-বাইরে কাজ করে পরিবার সচল রাখছেন, জানতে ইচ্ছা করে, তাঁরা হেফাজতের দাবিগুলো নিয়ে কী জানেন আর কী ভাবেন?
জানতে ইচ্ছা করে, মেয়েরা শরীর ঢাকলে কি ‘পর্দারক্ষা’ হয়? পর্দা বলতে বুঝি শালীনতা, অন্যের মর্যাদা ও অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা। সে জিনিসটা একা মেয়েদের পালনীয় হয় কীভাবে? পুরুষের ‘প্রলুব্ধ হওয়া’র দায় তো মেয়েদের হতে পারে না।
ক্রোধ এবং ক্রোধ
যশোরে হেফাজত তাদের গত ২৭ এপ্রিলের সমাবেশে নারী সাংবাদিকদের যেতে নিষেধ করেছিল। লন্ডনে ১৮-দলীয় জোটের প্রতিবাদ কর্মসূচির খবর সংগ্রহ করার সময় নারী সাংবাদিক এমি হোসেনের ওপর জামায়াত-সমর্থকদের হামলার খবর পড়েছিলাম প্রথম আলোর ২১ এপ্রিল সংখ্যার ১৭ পাতায়।
একই তারিখে পত্রিকাটির সম্পাদকীয় পাতায় গণমাধ্যমকর্মী মিথিলা ফারজানা ঢাকায় নাদিয়া শারমিনের ওপর ৬ এপ্রিলের হামলার বিচার চেয়ে লিখেছিলেন, হামলাকারীদের শনাক্ত করার মতো ভিডিও ছবি রয়েছে। সরকার কি এদের ধরবে না?
হেফাজতের নেতৃত্ব অবশ্য নাদিয়াসহ সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। নেতারা থুক্কু বলে ১৩ দফা দাবিতে ভিন্নধর্মীদের অধিকার নিয়ে কিছু কথা যোগ করেছেন। সম্প্রতি তাঁরা কর্মজীবী নারীদের ‘ভয় পেয়ো না’ও বলেছেন।
ভয় পাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। তবে ক্রোধ বেড়েই চলেছে। ক্রোধ নিজেসহ সমমনা মানুষের ওপরেও।সাধারণজনের ধর্মভীরু চিন্তাচেতনাকে সম্মান করে কখনো কি সত্যিই আমরা তাদের কথা শুনেছি? আমাদের কথা তাদের বুঝিয়ে বলেছি? ধর্ম ব্যবহারজীবীদের গোল দেওয়ার জন্য বৈষম্য ও দূরত্বে বিভক্ত মাঠটা ফাঁকাই ছিল এবং আছে।
কুর্রাতুল-আইন-তাহিমনা: সাংবাদিক।
Click This Link
২| ০৮ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১২:২৪
মো ঃ আবু সাঈদ বলেছেন: শহাবাগে কি বাচ্চাদের কে নেওয়া হয়েছে ইচ্ছা করে...
এখনে নাবাল বাচ্চদের নিষেধ করা হয়,,তবু কিছু বাচ্চ সেখানে য়ায়,এইটা হেফাজত সমর্থন করে না।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:৫৬
মুর্তজা হাসান খালিদ বলেছেন: পড়লাম