নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাহজাহান হোসেন আহমেদ, কবিতা, অকবিতা।

শাহজাহান আহমেদ

• ধুমপানের বদ অভ্যাসটা সামান্য আছে। ( ঈদে চাঁন্দে আর কি) •মানুষের সাথে মিশতে ভাল লাগে। তবে সবার সাথে না। যাদের মাথায় সামান্য পরিমান হলেও গিলু নামের বস্তুটি আছে তাদের সাথে। • গান শুনতে ভাল লাগে। প্রিয় শিল্পিঃ প্রিতম আহমেদ। কুমার বিশ্বজিৎ। চন্দনা মজুমদার। আইয়ুব বাচ্চু। প্রয়াত সন্জিব চৌধুরী। • বই পড়তে ভালবাসি। যে কোন বই। গল্প উপন্যাস কবিতা সব কিছু। রাতের বেলায় ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভুতের গল্প পড়ে ভয় পেতে ভাল লাগে। •রাত জাগতে ভাল লাগে। দু চোখে প্রচণ্ড ঘুম এবং সীমাহিন ক্লান্তি নিয়েও মাঝে মাঝে সারা রাত জেগে থাকি।

শাহজাহান আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট-ছোট ঘর! (১)

১৭ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৫৬

অনেক সময় গ্রাম-গঞ্জে তুলনামূলক অনেক বড় বড় অপরাধ সংগঠিত হয়ে গেলেও সেই তুলনায় শাস্তি খুব একটা হয়না। তার কারণ সম্ভবত অশিক্ষিত-চালবাজ সর্দার শ্রেনীর ব্যক্তিবর্গের গ্রাম্য-রাজনীতি। প্রত্যেক গ্রামেই আদালতের আদলে বিচার-সভার প্রচলন আছে। সেই বিচার সভা নিয়ন্ত্রন করে গ্রামের মাতবর শ্রেনীর প্রতিনিধিরা। তাদের মধ্যে কেউ-কেউ স্থানীয় ইউনিয়নের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। কেউ-কেউ সাধারণ মানুষ থেকে উঠে আসা চতুর প্রকৃতির মানুষ।

গ্রামীণ সমাজে জাত-গোষ্ঠি, ধনি-গরিব, দুর্বল-সবলের বৈষম্য প্রবল থাকার ফলে সেখানকার বিচার বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই স্বচ্ছ হয়না। স্বজন-প্রীতি, ঘুষ গ্রহণ করে প্রায়ই বিচারের রায় পাল্টে ফেলা হয়।

ধর্ষণের মত প্রধান একটি অপরাধকে আজও গ্রামের বিচারসভায় ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয়না। অপরাধীর কাছ থেকে সামান্য কিছু অর্থ জরিমানা আদায় করেই সেই বিচার নিষ্পত্তি করে ফেলা হয়। সেই সামান্য অর্থও অনেক সময় ধর্ষিতার পরিবার পায়না। জরিমানার সেই অর্থ বেশ কয়েকটি ভাগ হয়ে খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্থরা পায়।

একটা গল্পঃ আমাদের গ্রামের এক কিশোরী মেয়ে তাদেরই পাড়ার একটি পুরুষ দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে। এই খবর জানাজানি হলে মান-সম্মান সব ধূলোয় মিশে যাবে এই চিন্তায় মেয়ের পরিবার কোন ঝামেলায় না গিয়ে ধর্ষকের পরিবারের কাছে ধর্ষিতার বিয়ের প্রস্তাব দিল। ছেলে যেহেতু অপরাধী সেহেতু তারাও রাজি হল। কিন্তু, সন্ধ্যা পাড় হতে না হতেই ধর্ষকের পরিবার তাদের মত পাল্টে ফেলল। কারণ কী?

তারা কোন কারণ দেখাতে পারছেনা। ধর্ষিতার অসহায় পরিবারের কোন কাকতি-মিনতিই তারা শুনতে রাজি না। অবশেষে ধর্ষিতার পরিবার বাধ্য হয়ে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে সু-বিচার চাইল। তথাকথিত গণ্যমান্যরাও সু-বিচার করে দেবার আশা দিয়ে ধর্ষিতার পরিবারকে আশ্বস্ত করল।

"সু-বিচার করে দিব। আমাদের কিছু খরচ লাগবে। খরচ ছাড়া আমরা কেন কষ্ট করতে যাব।"

সেই খরচের পরিমানও বিশাল। লক্ষ টাকা! উপায়ান্তর না দেখে ধর্ষিতার পরিবার এতে রাজি হল। কলঙ্কের দাগ মুছতে টাকা পয়সা কিছু খরচ হলে হবে। তাছাড়া উপায়তো নাই।

যথা সময়ে সালিশ বসল। উভয় পক্ষের সর্দারগণ উপস্থিত। যুক্তি পাল্টা যুক্তি চলছে। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছেনা। গ্রামের মানুষও বিচার দেখতে এসেছে। গ্রামের প্রায় সকল মানুষই মনে মনে ধর্ষকের শাস্তি চায়। ধর্ষিতার প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন ও সহানুভতি।

হঠাৎ দৃশ্যপট পাল্টে গেল। বিচারকদের মধ্য থেকে একজন চতুর ধান্দাবাজ লোকের একটা কথায়। সে বলল "আপনাদের সবার কথা শুনলাম। ছেলে যে অপরাধী তাও বুঝলাম। কিন্তু আমার একটা কথা আছে। মনে করেন আমার হাতে একটা সুই আছে। আপনি সেই সুইয়ে সূতা পড়াবেন। এখন আমি যদি আমার হাতটা নাড়তে থাকি তাহলে আপনি কিভাবে সূতাটা পড়াবেন?"

সবাই নিরব। যেই গ্রামবাসি এতক্ষণ ধর্ষককে শাস্তি দেওয়ার পক্ষে ছিল তারাও এখন নড়ে-চড়ে বসেছে। ফিসফিস করে একজন অন্যজনকে বলছে "ছিঃ কি কলঙ্কিনী মেয়ে!"

বিচার শেষ। রায় দেওয়ার পালা। যদিও ধর্ষকের দোষ একার না, যেহেতু ধর্ষকের কারণে মেয়ের একটা দুর্নাম রটে গেছে সেই জন্য ধর্ষক মেয়ের ক্ষতিপূরণ হিসাবে এক লক্ষ টাকা দিয়ে দেবে!

সঙ্গে-সঙ্গেই সর্দারদের হাতে এক লক্ষ টাকা বুঝিয়ে দিয়ে ধর্ষক বীরের বেশে বিচারের মঞ্চ থেকে বের হয়ে এল।

আর এদিকে সর্দারগণ মেয়ের বাপের হাতে সেই টাকা তুলে দিয়ে বলল "দেখছ তুমারে কেমনে জিতাই দিলাম! এবার আমাদের পাওনা টাকা দিয়ে দাও।"

অসহায়-বিপর্যস্ত বাবা সেই টাকাগুলোই বিচারকদের হাতে তুলে দিয়ে ধর্ষিতাকে নিয়ে মাথা নিচু করে ঘরে ফিরে গেল। গ্রামবাসীও যে যার কাজে চলে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই জেনে গেল অমুকের মেয়ে অসতী-নষ্টা-কলঙ্কিনী



(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.