![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
• ধুমপানের বদ অভ্যাসটা সামান্য আছে। ( ঈদে চাঁন্দে আর কি) •মানুষের সাথে মিশতে ভাল লাগে। তবে সবার সাথে না। যাদের মাথায় সামান্য পরিমান হলেও গিলু নামের বস্তুটি আছে তাদের সাথে। • গান শুনতে ভাল লাগে। প্রিয় শিল্পিঃ প্রিতম আহমেদ। কুমার বিশ্বজিৎ। চন্দনা মজুমদার। আইয়ুব বাচ্চু। প্রয়াত সন্জিব চৌধুরী। • বই পড়তে ভালবাসি। যে কোন বই। গল্প উপন্যাস কবিতা সব কিছু। রাতের বেলায় ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভুতের গল্প পড়ে ভয় পেতে ভাল লাগে। •রাত জাগতে ভাল লাগে। দু চোখে প্রচণ্ড ঘুম এবং সীমাহিন ক্লান্তি নিয়েও মাঝে মাঝে সারা রাত জেগে থাকি।
গভীর রাত। আকাশে পূর্ণ চাঁদ। চাঁদের আশে-পাশে সাদা মেঘের উড়াউড়ি। জোৎস্না গায়ে মেখে সাদা মেঘের দল জ্বলজ্বল করে কচ্ছপ গতিতে ভেসে বেড়াচ্ছে এদিক সেদিক। মেঘ গলে গলে একটা কাঁচে ঘেরা ঘরে পড়ছে জোৎস্নার প্রতিবিম্ব। সেই ঘরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন এক যুবক!
কিভাবে সেই যুবক এখানে এল আমি তা জানিনা। কিছুক্ষণের মধ্যে যুবকের ঘুম ভাঙবে। ঘুম ভাঙার পর যুবকের ভয় পাওয়ার কথা। কিন্তু সে ভয় পাবেনা। কাঁচের দেয়ালের ওপাশ থেকে আকাশের দিকে তাকাবে। চাঁদের দিকে, শুভ্র মেঘের দিকে তাকিয়ে সে মুগ্ধ হয়ে যাবে। আমাদের গল্প শুরু হবে সেখান থেকে।
যুবকের এলোমেলো চুল তাঁর দু-কান ঢেকে দিয়েছে। কিছু চুল এসে পড়েছে ডান চোখের উপর। ঘুম ভাঙার পর সে উঠে বসল। কাঁচের ঘরের মেঝেও কাঁচের তৈরি। কাঁচের মেঝেতে স্পর্শ করা মাত্রই একটা শীতল আবেশে তাঁর সকল ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। ফুঁ দিয়ে চোখের উপরে পড়ে থাকা চুল সরিয়ে সে আকাশের দিকে তাকাল। চাঁদের আশে পাশে ছড়ানো ছিটানো অজস্র তারকা। খণ্ড-খণ্ড মেঘ। যুবকের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল।
হাঁটুতে ভর দিয়ে এবার সে উঠে দাঁড়িয়েছে।
ঘাড় ঘুরিয়ে চারদিকটা একবার দেখে আবার আকাশের দিকে তাকাল। এবার আর তাঁর ঠোঁটের কোণে হাসি নেই। এক সীমাহীন বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে গেল সে। একাকিত্বের বিষাদ!
রাত আরো গভীর হল। চাঁদের আলো হল আরো তীব্র। কাঁচের ঘরের মেঝেতে দু পা ছড়িয়ে যুবক বসে আছে। এমন সময় লক্ষ্য করল একটা অস্পষ্ট ছায়া এসে কাঁচের দেয়ালের ওপাশে দাঁড়িয়েছে। যুবক সেদিকে তাকাল। তাঁর ঠোঁটের কোণে আবারো হাসি ফুটেছে। সে ছায়াটার কাছে গিয়ে হাত বাড়াল। ছুঁতে পারলনা।
ভারি দেয়ালে হাত ঠেকে গেছে!
দেয়ালের ওপাশে এক কিশোরী। কিশোরীর জোৎস্না দেখার শখ। প্রতি পূর্ণিমায় সে এখানে আসে। জোৎস্না দেখে। নিজের মনে কথা বলে। কিশোরীর মেঘ-কালো চুল কোমর ছড়িয়ে প্রায় হাঁটু স্পর্শ করছে। ছড়ানো চুলের কারণে যুবক কিশোরীর মুখ দেখতে পারছেনা। সে দেয়ালে কয়েকবার আঘাত করল। কিশোরী ঠক ঠক আঘাতের প্রতিউত্তরে বলল "কেমন আছ রাজপুত্র?" কথাটা প্রতিধ্বনি হয়ে বারবার বাজতে লাগল। "কেমন আছ রাজপুত্র, কেমন আছ রাজপুত্র, কেমন আছ রাজপুত্র....।"
কিশোরীর জলতরঙ্গ-কিন্নর কন্ঠ যুবকের অস্থিরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। তাঁর হাত কাঁপছে। বুকের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়ে গেছে। সে কাঁচের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে পড়ল। এপাশে যুবক, ওপাশে কেশবতী কিশোরী। দু-জনে চুপচাপ।
নিরবতা ভেঙে কিশোরী কথা বলছে
"রাজপুত্র জানো, আমি তোমাকে খুব মিস করি। হয়তো ভালও বাসি। না না। এটা ঠিক ভালবাসা না।তোমাকে ভাবলে আমার বুকের ভিতর এক ধরনের ব্যথা বোধ হয়। হাজারো মানুষের ভিড়ে নিজেকে খুব নিঃসঙ্গ মনে হয়। একটা হাহাকার, ভয়-ভয়... আমি ঠিক তোমাকে বুঝাতে পারছিনা।
যুবক দেয়ালে কান পেতে থাকে। তার শরীরের কাঁপন আরো বাড়তে থাকে। এক অদ্ভুত আলস্যে তার চোখ বুজে আসে।
"রাজপুত্র তুমি কিছু বল।"
যুবক কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে। বাতাসে কিশোরীর কণ্ঠের প্রতিধ্বনি ভেসে বেড়ায়
'তুমি কিছু বল..। তুমি বল... তুমি বল..."
গাঢ়-গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে যুবক।
এক অমানিশার অন্ধকারচ্ছন্ন রাতে ক্ষণিকের জন্য চোখ মেলে সে। তখনও কিশোরী-কণ্ঠের প্রতিধ্বনি বাজছিল। 'তুমি... বল...' কিশোরীর জলতরঙ্গ কন্ঠ মাথায় নিয়ে যুবক আবার ঘুমিয়ে পড়ল।
বহুদিন পর, এক জোৎস্না রাতে যুবকের ঘুম ভেঙেছে। কাঁচের দেয়ালের ওপাশে একটা ছায়ামূর্তি। যুবক আগের মত আবারো ছায়ার দিকে হাত বাড়াল। আবারো আগের মত হাত ঠেকল ভারি কাঁচের দেয়ালে।
ওপাশের ছায়ামূর্তি একটু একটু কাঁপছে। বাতাসে তার বিবর্ণ মলিন চুল উড়ছে। ওপাশের ছায়া মানবী এখন বয়সের ভারে ক্লান্ত-বিপর্যস্ত! আর এপাশের যুবক আগের মতই আছে। তাঁর বয়স বাড়ছেনা।
যুবক দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছায়ামূর্তির দিকে তাকাল। দেয়ালে কান পেতে কিছু শুনতে চেষ্টা করল।
কাঁপা-কাঁপা কণ্ঠে ওপাশের ছায়ামূর্তি কিছু বলছে। "রাজপুত্র তোমার প্রতিক্ষায় দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী আমি একা একা কাটিয়ে দিলাম। কত রাজার কুমার আমার পায়ে তলে তাদের রাজ্য বিলিয়ে দিল। তাদের ফিরিয়ে দিলাম। আমার হৃদয় বাগানে ফুল ফুটবে আশায় কত বসন্ত মলিন হল। ফুল ফুটলনা। তোমার আসার পথে কত জল গড়ালো। তুমিও এলেনা। এখন আর তোমাকে চাইনা। শুধু একবার যদি তোমার পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় চড়ে আমাকে এসে দেখা দিতে, আমি দূর থেকে দেখে চলে যেতাম।"
ছায়ামানবী উঠে দাঁড়িয়েছে। যুবক আৎকে উঠল। সে কি চলে যাচ্ছে নাকি! যুবক প্রাণপন চেষ্টা করছে কিছু একটা বলতে। সে বলতে পারছেনা। তাঁর কাছে ভাষা নেই। কাঁচে ঘেরা চারদেয়ালের পৃথিবীতে তাঁর জন্য প্রকৃতি কোন ভাষা সৃষ্টি করেনি। ভাষাহীন সেই পৃথিবীতে সেও খুব অসহায়।
পৃথিবীর কোটি-কোটি মানুষের প্রত্যেকের পাশেই এমন একজন কাঁচের দেয়ালে ঘেরা ভাষাহীন রাজপুত্র এবং রাজকন্যা বসবাস করে। কখনো কখনো পৃথিবীর মানুষদের হাহাকার তাদেরকেও স্পর্শ করে। তখন হয়তো তাদের চোখও ছল-ছল করে উঠে।
২| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩১
নেক্সাস বলেছেন: শুভ কামনা
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৭
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালোই।
শুভকামনা রইল