![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আদালতের রায়ে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছিল দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় গণতন্ত্র রক্ষার একটি অত্যবশ্যকীয় অনুষঙ্গ এবং কার্যকর ব্যবস্থা। এ সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে একসময় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আজ তাদেরই নেতৃত্বে আদালতের রায়ের অজুহাতে এ সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে এবং এ সরকার ব্যবস্থা আজ প্রশ্নবিদ্ধও বটে। এর জন্য দায়ী কে বা কারা? যারা সুস্থ ধারার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়; যারা ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চায়; যারা গণতন্ত্রের আড়ালে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পাঁয়তারা করে; তারাই এ সরকার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাই বলে মাথাব্যথা করলে মাথা কেটে ফেলা মাথাব্যথার প্রতিষেধক হতে পারে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ত্রুটিগুলো দূর করতে পারলেই জনগণ এর সুফল পেতে শুরু করতো। আসলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা এ ব্যবস্থায় সরকার গঠন নিয়ে। বিগত ক্ষমতাসীন দলগুলো ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার জন্য বিভিন্ন উপায়ে তাদের অনুগত লোককে এ সরকারের প্রধান করার বিভিন্ন ফন্দি-ফিকির করে আসছিল। সর্বশেষ বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে যে নাটকের অবতারণা করেছে তার বদৌলতে দেশের দু'প্রধান দলের অনেক নেতা-কর্মীকেই ভুক্তভোগী হতে হয়েছিল। সে শিক্ষা থেকেই রাজনীতিক মহলে এ ব্যবস্থা বাতিলের দাবি জোরালো হতে থাকে এবং অবশেষে বাতিল হয়। যাই হোক, এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, ক্ষমতায় থাকাকালীন বিগত সব সরকারই যার যার মতো করে এ সরকার ব্যবস্থাকে নিজেদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। আর তাই এ সরকার ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হবার পিছনে একক কোনো রাজনৈতিক দল দায়ী বলে আমি মনে করি না। যে কারণেই হোক, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনকে জনগণ অধিক নিরপেক্ষ হিসেবে মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল এবং এখনও আছে। এ সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের একটা দুর্বলতাও ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হতেই পারে না— এমন একটি বিশ্বাস জনমনে বিরাজমান। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর যথেষ্ট কারণও রয়েছে। জনগণ সংবিধান বোঝে না; জনগণ চায় নিরপেক্ষ এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন। এদেশের জনগণ স্বভাবগতভাবে শান্তিপ্রিয়। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিরোধী দল তা পক্ষপাতিত্বের অজুহাতে প্রত্যাখ্যান করবে; শুরু হবে অস্থিতিশীল পরিবেশ, যা জনগণ চায় না। আজ আদালতের দোহাই দিয়ে বর্তমান সরকার এ সরকারকে বাতিল করেছে। কিন্তু বিরোধী দল তা মানতে নারাজ। একটু উলটোভাবে যদি চিন্তা করি, আজ যদি বর্তমান বিরোধী জোট ক্ষমতায় থাকতো এবং ক্ষমতাসীন জোট বিরোধী দলে থাকতো, তবে কি ক্ষমতাসীন দল বা মহাজোট (বিরোধী দলের অবস্থান থেকে) তা মেনে নিতো? বিগত সরকারগুলোর দিকে তাকালে খুব সহজেই অনুমেয় যে, এদেশে ক্ষমতাসীন দল সব সময় জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। সে হিসাবমতে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর এদেশে ক্ষমতার পট পরিবর্তন হয়েছে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ভবিষ্যতেও হবে বলে আমার বিশ্বাস। আজ যে সরকার ব্যবস্থা বর্তমান ক্ষমতাসীনরা বাতিল করেছে, বিরোধী দলে গেলে এ সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের জন্য আবার আন্দোলন করবে। আজ যে আদালতের দোহাই দেওয়া হচ্ছে, কাল সে আদালতের রায়ের কোনো তোয়াক্কাই হয়তো তারা করবে না।
আদালত দেশ পরিচালনা করে না। দেশ পরিচালনা করে সরকার বা সংসদ। সংবিধান বা আইনের জন্য জনগণ নয়, জনগণের জন্যই সংবিধান বা আইন। তাই আইন বা সংবিধানের দোহাই দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। জনগণ দেশে একটি নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় এবং জনমনে একটি বদ্ধমূল বিশ্বাস আছে যে, কোনো ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নিরপেক্ষ এবং অধিকতর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। এদেশের জনগণ চায়, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক; তা হতে পারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অথবা অন্য যে কোনো ফর্মে গঠিত কোনো সরকার ব্যবস্থার অধীনে। জনগণই যেহেতু সকল ক্ষমতার উত্স, তাই জনগণের এ চাওয়া-পাওয়ার মূল্য দেওয়াই বর্তমান ক্ষমতাসীনদের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
©somewhere in net ltd.