নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I am a Verb

মোহাম্মদ শাহ জালাল সরকার

বাংলাদেশ

মোহাম্মদ শাহ জালাল সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

এভাবে হরতাল সফল করা কি সংবিধান সমর্থন করে?

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০২

জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস। গনতন্ত্রের সংজ্ঞা বিশ্লেষন করলে এ কথাটি অস্বীকার করার কোন অবকাশ থাকেনা। বাস্তব চিত্রটা কিন্তু ঠিক উল্টো। তথাকথিত ক্ষমতার উৎস্য হিসাবে পরিচিত জনগনকে বোকা বানানোর উদ্দেশ্যে নির্বাচনপূর্ব প্রচারনায় তৈরী পোস্টার, ব্যানার ও লিফলেট গুলোতে সেবা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য হৃদয় নিংড়ানো আকুতি এবং নির্বাচনী ইশতিহারসহ সভা-সমাবেশে পাহাড়সম প্রতিশ্র“তির ফুলঝুড়ি লক্ষ্য করা যায়, নির্বাচনে জয়লাভ করে তার ধারে কাছেও হাটতে নারাজ আমাদের দেশের তথাকথিত জনসেবকগন। হাটবেইবা কেন! জনগনইতো তাঁদের পিছনে হাটবে। তাদের ক্ষমতার কাছে জনগনতো সম্পূর্নরুপে অসহায়। একবার ভোট দিয়ে ফেললে, তা যে ফিরিয়ে নেওয়ার কোন সুযোগ সংবিধানে নেই! প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি আর সেবা করার সুযোগদানের হৃদয় নিংড়ানো আকুতির কথা দিব্যি ভুলে গেলেও তাঁদের যে কারো কাছে জবাবদিহী করতে হয় না বা প্রতিশ্র“তি দিয়ে রক্ষা না করার জন্য প্রতারনার দায়েতো তাঁদের আদালতের কাঠগড়ায় দাড়াতে হয় না! তাছাড়া একবার ক্ষমতায় গেলে ক্ষমতা কিভাবে পাকাপোক্ত করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে জনগনকে নিয়ে ভাবার সময়ইবা কোথায়? বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট এবং বাংলাদেশ আ’লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় থাকাকালে তাঁরা তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে কিনা করেছেন। বিএনপি ক্ষমতা পাকা পোক্ত করতে না পারলেও বাংলাদেশ আ’লীগ কিন্তু ঠিকই পেরেছেন। তবে চেষ্ঠা কেউ কম করেননি। সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য সংবিধান যেভাবে সংশোধন করা দরকার, সেভাবেই সংশোধন করতে প্রস্তুত আছে আমাদের দেশের রাজনীতিকগন। এ নিয়ে কোন রাজনৈতিক দলেরই মত পার্থক্য নেই। শুধুমাত্র একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেই হল। বিরোধী দলকে দমন পীড়ন করতে যেয়ে যে সংবিধান লংঘিত হচ্ছে, তা নিয়ে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই। বর্তমান সরকারের কথাই একটু ভাবেন। কোর্টের রায়ের দোহাই দিয়ে তত্তাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে সংবিধান অনুসারে নির্বাচন করার জন্য মড়িয়া হয়ে উঠল তাঁরা, কোন বাধা, কোন দাবী বা জনগনের আশা আকাঙ্খার প্রতি বিন্দুমাত্র সম্মান দেখানোর প্রয়োজন বোধ করল না। যে সংবিধানের বড়াই করে মোটামোটি একক নির্বাচনে জয়লাভ করে বাংলাদেশ আ’লীগ নেতৃত্বাধীন চৌদ্দ দলীয় জোট এখন সরকার গঠন করেছেন, সেই একই সংবিধান ৩৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে বিরোধী দলগুলোকে জনসভা ও শোভাযাত্রা করার অধিকারও প্রদান করেছে, বিরোধী দলের এ সাংবিধানিক অধিকারের প্রতিতো জনগন বর্তমান সরকারের কোন শ্রদ্ধাবোধ লক্ষ্য করেননি। ৫ জানুয়ারীর সমাবেশ বা হেফাজতের সমাবেশ, আর গনজাগরন মঞ্চ এর সমাবেশ কি আলাদা আলাদা সংবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত! এ দেশের সংবিধান কি সরকারী দল, আর বিরোধী দলের জন্য আলাদা ভাবে রচিত হয়েছে? এদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আধিষ্ট সকল দলকেই এমন দুমুখো নীতি গ্রহন করতে দেখা গেছে। ৫ জানুয়ারী থেকে কখনো হরতাল কখনো অবরোধ বা কখনো হরতাল ও অবরোধ দুটোই একযোগে চলছে। এ হরতাল অবরোধের মধ্যে সাধারন কর্মজীবী মানুষেরা জীবীকার অন্বেষনে যার যার কর্মস্থলে যাওয়ার পথে পেট্রোল বোমা বা অন্য কোন হিংস্র প্রকৃতির আক্রমনের স্বীকার হচ্ছেন, য্ াসংবিধানের মৌলিক অধিকারের অনুচ্ছেদ ৩৬ ও ৪০ এর সুনির্দ্দিষ্ট লংঘন। যে সংবিধানের বলে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় গ্রহন করেছেন, সে সংবিধানের সুস্পষ্ট লংঘন কি তাদের চোখে পড়ে না। ক্ষমতাসীনরা হয়ত বলবেন, বিরোধী দল এ কাজ করছে। হ্যা তাও যদি হয়, তবে এ লংঘন এর দায় কার? বর্তমান সরকার যদি সংবিধান অনুসারে তাঁদের ক্ষমতায় থাকার অধিকার আছে বলে মনে করেন, তবে এ ক্ষমতায় থাকাকালীন বিরোধী দলের ডাকা হরতাল অবরোধ এর কারনে যদি জনগনের মৌলিক অধিকার লংঘিত হয়, তবে এর দায়ভারও সরকারের উপরই বর্তায়। আমি বিরোধী দলকে এর দায়ভার দিব না, কারন দেশে যত অপ্রীতিকর ঘটনাই ঘটুক না কেন, ইহা সামলানোর দায়িত্ব সরকারের। বিরোধী দলের হরতাল দেওয়ার অধিকারও সংবিধান স্বীকৃত। হরতাল মানেই কিন্তু জালাও পোড়াও নয়। হরতালের নামে জালাও পোড়াও কারা করছে তাদের খুঁজে বের করাও সরকারের দায়িত্ব। আবার হরতাল দিয়ে যদি কেউ জ্বালাও পোড়াও করার কথা ভেবে থাকে। তাও কিন্তু সমর্থনযোগ্য নয়। জালাও পোড়াওতো দূরের কথা হরতাল কাউকে মানতে বাধ্য করাই উচিত নয়। যে কেউ হরতাল ডাকতে পারেন, কিন্তু কে মানবে আর কে মানবে না, সেটা যার যার ব্যক্তি স্বাধীনতা। কেউ যদি মনে করেন বিরোধী দলের আহুত হরতালের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা জানানো উচিত, তবে সে মানবে, অন্যথায় নয়। কাউকে হরতাল মানতে বাধ্য করাও সংবিধান পরিপন্থী। বিরোধী দলের দাবীর প্রতি জনগনের শ্রদ্ধা না থাকলেও মাঝে মাঝে শুনা যায় হরতাল সফল হয়েছে! আসলে এ তথাকথিত সফলতা কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হরতালের ইস্যুকে সমর্থন করা নয়। হরতাল আহবানকারীগন আক্রমন করতে পারে, এ ভয়ে অনেকে বাসা থেকে বের হন না, আর সেটাকেই এদেশে সফল হরতাল বলে চালিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে প্রচলিত হরতালের জালাও পোড়াও এর মত ন্যাক্কারজনক দৃশ্যপট এর জন্য যে বর্তমান বিরোধী দলই দায়ী তা নয়, সকল বিরোধী দলের ক্ষেত্রেই এ অপ্রিয় বিষয়টিই সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠত ছিল। এভাবে হরতাল সফল করা কি সংবিধান সমর্থন করে? এ দেশে এমন কি কোন হরতাল কখনো বিরোধী দল কর্তৃক আহবান করা হয়েছিল, যার পিছনে জনগনের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ছিল? এদেশের জনগনের জন্য কেউ রাজনীতি করে না। আর যে গনতন্ত্রের বুলি জনগনকে শুনানো হয়, সে গনতন্ত্র আড়ালে ক্ষমতা তন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.