নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কোন এক সময় লেখালেখি শুরু করবো। এখন যা লিখছি তা সেই সময়ের জন্যে প্রস্তুতি আসলে। আর লেখার জন্যে নতুন নতুন তথ্য যোগাড় করছি আপাতত।

ফায়েজুর রহমান সৈকত

মুক্ত সকল চিন্তা করি, নিজের সাথে নিজেই লড়ি।

ফায়েজুর রহমান সৈকত › বিস্তারিত পোস্টঃ

হোটেল রুয়ান্ডা_ এক কলঙ্কিত ইতিহাসের গল্প লেখা হয়েছে

১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪০

অনেক জানাশোনা নিয়েও বসে থাকার জো নেই। দেখবেন হঠাৎ করে এমন এক মহা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সামনে এসে পড়েছে যা আপনি কখনো জানতেনই না। এই ঘটনাও অজানা ছিল! এই ভেবে নিজে নিজে লজ্জিত অনুভব হয়।

রুয়ান্ডার গণহত্যা নিয়ে নির্মিত হোটেল রুয়ান্ডার গল্প বলি।

অসহায়ত্বের শেষ মূহুর্তে দাঁড়িয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও কেউ কেউ পথ খুঁজতে চায়। সে যদি পথ নাও খুঁজে পায় তবু যেন পথ না হারায়। তারচেয়ে বরং আরেকটু ধৈর্য ধরা যাক, আরেকবার চেষ্টা করা যাক।

আচ্ছা, হুতু আর তুতসিদের মাঝে মূল পার্থক্যটা কি?

বেলজিয়ান ঔপনিবেশকদের মতে তুতসিরা লম্বা আর অভিজাত। বেলজিয়ানরাই এই বিভেদ তৈরি করেছিল।

কিভাবে?

তারা সেই লোকদেরকেই বাছাই করে যাদের চামড়া উজ্জ্বল আর নাক লম্বা। তারা নাক দিয়ে জাত বিবেচনা করতো। বেলজিয়ানরা দেশ চালনার কাজে তুতসিদের ব্যবহার করতো। এরপর বেলজিয়ানরা যখন রুয়ান্ডা ছেড়ে চলে যায় তখন তারা হুতুদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে যায়। তখন হুতুরা ধনী তুতসিদের উপর মারাত্মক প্রতিশোধ নিতে চায়।
তাই তুতসিরাও বিদ্রোহী হয়ে উঠে। তারা নিজেদের রক্ষা করতে চায়।
এদিকে হুতুরা সারাদেশে প্রতিশোধ আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। যেখানেই তুতসি তেলাপোকাদের দেখা মিলবে সেখানেই তাদের হত্যা করা হবে। এই কাজে হুতুদের সহযোগিতা করে স্বয়ং ফ্রান্স এবং রুয়ান্ডার সেনা বাহিনী। হুতুদের তারা প্রশিক্ষণ দেয় এবং অস্ত্র সরবরাহ করে।

এমনি এক বিশৃঙ্খলার সময়ে আমরা পরিচয় পাই মিল কোলিন হোটেলের কর্মকর্তা পল রুসেসাবেগিনার। অভিজাত এই হোটেলটি রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে। দেশের সবচেয়ে নামকরা হোটেলটিতে অভিজাত দেশীয় এবং বিদেশী অতিথিরা অবস্থান করে। সেইখানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ডার এক সংবাদ সম্মেলন করে জানায় যে তুতসি বিদ্রোহীদের সাথে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট শান্তি চুক্তি করেছে। শীঘ্রই দেশে শান্তি ফিরে আসবে। কিন্তু হুতুরা সেই চুক্তি মেনে নেয় না। তারা প্রতিশোধ নিতে চায়। তারা প্রেসিডেন্টকে হত্যা করে ফেলে। “কাট দা টল ট্রিস“ রেডিওতে এই সংকেত ছড়িয়ে দিয়ে হুতু সৈনিকরা হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। দেশে শুরু হয় মারাত্মক গৃহযুদ্ধ।

মিল কোলিন হোটেলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা বাহিনীর সৈন্যরা এবং বিদেশী অতিথিরা অবস্থান করে বলে সেখানে হুতু সৈন্যরা ঢুকতে পারেনা। কিন্তু সুযোগ পেয়ে তারা জাতিসংঘের কয়েকজন নিরাপত্তা সেনাকেও হত্যা করে। তাই সেখানে জরুরি ভিত্তিতে আরো সেনা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। সবাই নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। একদিন পরে সেখানে কয়েক ট্রাক নিরাপত্তা বাহিনী আসে কিন্তু তারা মিল কোলিন হোটেলে আশ্রিত সাধারণ হুতু আর তুতসিদের নিরাপত্তা দেবার জন্য আসেনা। তারা আসে বিদেশী অতিথিদের সুরক্ষা দিয়ে সেখান থেকে নিয়ে যাবার জন্য।

নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ডার পলকে ডেকে নিয়ে বলে, পল, তোমার উচিত আমার মুখে থুথু ফেলা।

তার কথা শুনে পল অবাক হয়। সে জিজ্ঞেস করে, কমান্ডার আপনার কথার মানে আমি বুঝতে পারছিনা।

কমান্ডার রেগে বলে, তোমরা যাদের সুপার পাওয়ার মনে করো সেই পশ্চিমারা এবং জাতিসংঘ তোমাদের নিরাপত্তা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কারণ তোমরা কালো জাতি। এমনকি তোমরা নিগ্রোও নও। তোমরা আফ্রিকান নিচুজাত। তোমাদের জন্য পশ্চিমাদের কোন মায়া নেই। এই বলে শুধু বিদেশীদের নিয়ে কমান্ডার চলে যায়। যাবার কালে সেখানে এক মানবেতর দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। গীর্জার পাদ্রী, সিস্টার, জাতিসঙ্ঘের নিযুক্ত ডাক্তার, নার্স কেউই অসহায় রুয়ান্ডিয়ানদের ছেড়ে যেতে চায় না। সবাই অশ্রুসিক্ত হয়।

তারপর দিনই হুতু সৈন্যরা মিল কোলিন হোটেলে হানা দেয়। তারা সেখানের সব তুতসিদের তালিকা চায়। শেষ চেষ্টা হিসেবে পল তাড়াতাড়ি তার হোটেল মালিক মিস্টার টিলেন্সকে ফোন দেয়। টিলেন্স সে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করে সেখান থেকে সেনাদের সড়ে যেতে বলে। সে যাত্রায় হত্যাযজ্ঞ থেকে মিল কোলিন হোটেল রক্ষা পায়।

এভাবে প্রতিদিন মৃত্যুর সাথে লড়তে থাকে তারা। তারা আর কোন উপায় খুঁজে পায় না। এক মারাত্মক পরিণতির দিকে এগুতে থাকে হোটেল মিল কোলিনের প্রায় ১২৬৮ জন হুটু ও টাট্সি শরণার্থী যাদের রক্ষা করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন পল রুসেসাবেগিনা। এদের মাঝে পলের প্রিয়তমা স্ত্রী আর সন্তানরাও আছে। যেকোন মূল্যে তাদের বাঁচাতে হবে। পল একজন হুতু কিন্তু পলের প্রিয়তমা স্ত্রী তুতসি জাতের।

উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ১৯৯৩ সালে সংগঠিত রুয়ান্ডা গণহত্যায় মাত্র তিন মাসে ৮লক্ষ সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এই বিশাল হত্যাযজ্ঞ আরো আগেই থামানো যেত যদি জাতিসংঘ থেকে প্রথমেই এই ঘটনাকে গণহত্যা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হতো। মিডিয়ায় সচিত্র সংবাদ পরিবেশন সত্ত্বেও জাতিসংঘের এমন ব্যবহারে সবাই মর্মাহত হয়েছিলেন এবং জাতিসংঘকে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এই অনীহার কারণেই রুয়ান্ডায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে গণহত্যা মোকাবেলার মত যথেষ্ট সৈন্য ও কর্মকর্তা ছিল না। Roméo Dallaire এর নেতৃত্বে এই শান্তিরক্ষী দলটি তাই কার্যকরী কিছু করতে পারেনি। একসময় রুয়ান্ডা থেকে সব বিদেশী লোকদেরকে সরিয়ে আনা হয়। কিন্তু সেখানকার অধিবাসীদের রক্ষার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম ও ফ্রান্স সরকারকে এ কারণে এখনও সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। রুয়ান্ডায় শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছিল United Nations Assistance Mission for Rwanda। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি এদিকে আকর্ষিত না হওয়ায় তারা কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। এক সময় সমগ্র রুয়ান্ডার জন্য মাত্র ৩০০ শান্তিরক্ষী মোতায়েন ছিল।

পরিচালক টেরি জর্জের পরিচালনায় ২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হোটেল রুয়ান্ডা সিনেমাটি রুয়ান্ডা হত্যাযজ্ঞের কালো ইতিহাসের সামান্য চিত্র গল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছে। সিনেমাটির গল্প লিখেছেন কিয়ার পিয়ারসন এবং টেরি জর্জ। এই সিনেমাতে হোটেল কর্মকর্তা পলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডন ছেডল আর তার স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোফি অকনেদো। কি ভয়াবহ গল্প আর তার সাথে অভিনয়, চিত্রায়ন এবং সংলাপ। হিংসা মানুষকে কতটা বর্বর করতে পারে সেটি রুয়ান্ডার ইতিহাস পড়লে বুঝা যায়।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:০৩

মনিরা সুলতানা বলেছেন: কি অমানবিক কি নিশংস !
হিংসা মানুষকে কতটা বর্বর করতে পারে সেটি রুয়ান্ডার ইতিহাস পড়লেই যে কেবল বোঝা যায় তা নয় সকল জাতীর ইতিহাসে কিছু
বর্বরতার কাহিনী আছে । একেবারেই সামনে ঘটে যাচ্ছে রোহিঙ্গা দের জাতিগত নির্মূলের যে বর্বর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হচ্ছে সেটা। একদিন হয়ত এদের নিয়েও এমন সিনেমা বানানো হবে ;দর্শক মর্মস্পর্শী গল্পে অশ্রু ঝরাবে , কেবল ভুক্তভোগী রাই বেদনা অনুভব করতে পারবে ।

এই বিশাল হত্যাযজ্ঞ আরো আগেই থামানো যেত যদি জাতিসংঘ থেকে প্রথমেই এই ঘটনাকে গণহত্যা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হতো। মিডিয়ায় সচিত্র সংবাদ পরিবেশন সত্ত্বেও জাতিসংঘের এমন ব্যবহারে সবাই মর্মাহত হয়েছিলেন এবং জাতিসংঘকে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল।

এখন ও একই ইতিহাস পুনরায় রচিত হচ্ছে মিয়ানমারে !

আপনার রিভিউ ভালো হয়েছে ,মুভি টা দেখার ইচ্ছে রইলো ।

২| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:২০

ফায়েজুর রহমান সৈকত বলেছেন: Click This Link


এটিও দেখবেন।

৩| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:২৮

আখেনাটেন বলেছেন: যে কোনো মানুষের এই মানবিক সংকটের ছবিগুলো বার বার দেখা উচিত।


১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৮

ফায়েজুর রহমান সৈকত বলেছেন: এ ধরণের আর কি সিনেমা দেখেছেন?

৪| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৪৮

কালীদাস বলেছেন: রুয়ান্ডার জেনোসাইড চলার সময় আমি খুব ছোট, কিছুই ভালভাবে মনে নেই এখন। অনেক পরে বুঝতে পেরেছি যে জেনোসাইডের খবর তখন ঠিকমত আসেওনি সব মিডিয়ায়।

মুভির প্লটটা দেখে দেখার আগ্রহ জাগল। থ্যাংকস।

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৮

ফায়েজুর রহমান সৈকত বলেছেন: গণহত্যা নিয়ে হলিউডে এমন আরো কিছু বিশেষ সিনেমা আছে।

৫| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ২:১৫

জেন রসি বলেছেন: মুভিটা দেখেছি। চমৎকার মুভি। ইতিহাসের পালসটা টের পাওয়া যাচ্ছিল।

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৯

ফায়েজুর রহমান সৈকত বলেছেন: এমন আর কি সিনেমা দেখেছেন বলুন তো। দেখি।

৬| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:০২

জেন রসি বলেছেন: স্পিলবার্গের “ schindler's list", রোমান পলনস্কির " the pianist" ....আরো আছে।



১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৬

ফায়েজুর রহমান সৈকত বলেছেন: দেখেছি এগুলো :)

৭| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:০৮

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: রুয়ান্ডা এখন খুব শান্তিতে আছে। আমার পরিচিত অনেকেই থাকে রুয়ান্ডা।

এসব ইতিহাস তাদের কাছেও শুনেছি।

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৭

ফায়েজুর রহমান সৈকত বলেছেন: ভাল একটা তথ্য দিলেন। ধন্যবাদ।

৮| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:০০

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: মনে হয় ঐ অবস্থা নেই।





ভালো থাকুন নিরন্তর। ধন্যবাদ।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:০২

ফায়েজুর রহমান সৈকত বলেছেন: ভাল থাকুন। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.