নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কোন এক সময় লেখালেখি শুরু করবো। এখন যা লিখছি তা সেই সময়ের জন্যে প্রস্তুতি আসলে। আর লেখার জন্যে নতুন নতুন তথ্য যোগাড় করছি আপাতত।

ফায়েজুর রহমান সৈকত

মুক্ত সকল চিন্তা করি, নিজের সাথে নিজেই লড়ি।

ফায়েজুর রহমান সৈকত › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুড়াকাহিনী

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৩



ঘুম থিকা উইঠা ঝিমাইতেছিলাম তখন কাক্কা ফোন করে কইলেন হাসপাতাল যাইতে হইব রেডি হ। আমি জিগাইলাম অসুখ কার? তিনি জানাইলেন গ্রাম থিকা এক আত্মীয় আইছে, তারে ডাক্তার দেখাইতে হইব।

বুড়াডি একটুখানিও স্মার্ট না। অহেতুক কুসংস্কার লালক গোয়ার লাগে তারারে। কিন্তু আমার দাদী আছিলেন পড়ালেখা না জানা সচেতন বুড়ি। তার যখন ক্যান্সার ধরা পড়ল তখন তিনি আগ্রহ সহকারে হাসপাতালে ভর্তি থাইকা চিকিৎসা নিলেন। এমনকি যদি সুস্থ না হন এই ডরে হাসপাতাল ছাড়তে চাইতেন না। ক্যান্সার ধরা খাওয়ার ছয়মাসের মাঝে মারা যাইবার আগে পর্যন্ত তার ধারণা আছিল তিনি বেঁচে যাইবেন। আমরা তারে স্বান্তনা দিমু কি, তিনি নিজেই কইতেন এইটা ক্যান্সার ম্যান্সার না। গলাডাত একটু ঘাও হইছে, ডাক্তার অষুধ দিছে ভাল হইয়া যাইবো।

দাদীর পরে গ্রামের এই আত্মীয়রে দেইখা আবার অবাক হইছি। আমি ভাবছিলাম তারে বুঝাইয়া সুজাইয়া ডাক্তারের কাছে নিয়া যাইতে হইব কিন্তু তিনি নিজে থিকাই যাইতে চাইলেন। বুড়াডিও অবাক জীবনের মায়া ছাইড়া মরতে চায়না এই ভেবে তার লাইগা আমার মায়া লাগলো। ওসমানী হাসপাতালের গেইটে লাইনে দাঁড়াইয়া দশ টাকার স্লিপ কাইটা আমরা ডাক্তারের চ্যাম্বারে ঢুকলাম। বুকে বেদনা করে শুইনা ডাক্তার ইসিজি করতে দিলেন। আশি টাকা দিয়া হাসপাতালেই ইসিজি করলাম। ইসিজির ফল নিয়া আবার ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার তক্ষুণি হাসপাতালে ভর্তি হইতে কইলেন।

সিদ্ধান্ত নিবার লাইগা তার পোলা মাইয়ারে জিগাইলাম আপনেরা কী চান? হেরা কয় ভর্তি না কইরা আব্বারে বাড়িত নিয়া যাইগা। অষুধ খাওয়াইলে ঠিক হইয়া যাইব। দিলাম এক রাম ধমক। অশিক্ষিতগুলার সব আনস্মার্ট স্ববিরোধী চিন্তা। তারপরে মাথা ঠান্ডা কইরা বুঝাই সুজাইয়া ভর্তি করাই দিলাম। রোগিরে কইলাম এইখানে আপনেরে তিন চাইর দিন থাকতে হইব, পারবেন না? হেয় কয়, পারুম। দরকার হইলে আরো বেশি দিন থাকুম। তার বেঁচে থাকনের আগ্রহ আমারে মুগ্ধ করলো। অষুধ পত্র কিনে তার পোলা মাইয়ারে সবকিছু বুঝাই দিয়া চলে আসলাম।

হাসপাতাল কি এক অবাক করা জায়গা। এটি আমরারে শুধু সুস্থ কইরাই তুলেনা, আমরারে ধৈর্য ধরতেও শিখায়। চারপাশে এত বেদনা, এত কাতরতা, বেঁচে থাকনের এত আগ্রহ দেখে আমরার অহংকার ভাইঙ্গা চুইরা ছারখার হইয়া যায়। সব মানুষরে এক কাতারে নিয়া আইসা হাসপাতাল আমরারে বাঁচতে শিখায়। হাসপাতালের ডাক্তাররা এনাদার গড, নার্সরা গডের এঞ্জেলস, আর আমরা রোগিরা একেকটা মানব। আমরার সেবা করাই গডের কাজ। সেবা না কইরা ছলচাতুরী করলে আমরা এক গডরে ছাইড়া আরেক গডের কাছে চইলা যাই। বেশি টেকা থাকলে দামি গডের কাছে চইলা যাই, দামি এঞ্জেলসদের কাছে সেবা পাই, হিহিহি।

(এক বছর আগের গল্প এটি। এই বুড়া লোকটি ছিলেন কনা মেম্বার। সম্পর্কে আমার দাদা হতেন। কয়েক মাস আগে তিন মাসের মতন শয্যাশায়ী থেকে কনা মেম্বার মারা গেছেন।)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: গল্পটি ভালো ।

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:২২

মোঃ ফখরুল ইসলাম ফখরুল বলেছেন: :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.