![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ হতে চেয়ে কি যে হচ্ছি তা নিজেও জানিনা
আজকাল রাত বাড়ার সাথে সাথে কমলাপুর রেলস্টেশনে প্লাটফর্ম এর ঝাড়ুদার সোবহান মিয়ার ভয় বাড়তে শুরু করে। সে রাতে প্লাটফর্ম গুলো ঝাড়ু দেয়। পাচ নম্বর প্লাটফর্ম এ এলেই তার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায়। তার কারনও আছে। গত পরশু রাতে সে এখানে একটা আজব জিনিস দেখেছে। ভয়ে কাউকে বলতে পারছে না। মতির মা কে বলেছিলো। সে হেসেই লুটোপুটি । বলে ব্যাডা মাইনষে ভুতেরে ডরায়। কিন্তু লাল কাপড়ে জড়ানো যে জিনিশ সে দেখেছে সেটা নিঃসন্দেহে মানুষের লাশ। হাত পা বাংলার দ করে রাখা হয়েছে। সে ভয় পেয়ে আর্ত চিৎকার দিয়ে যেই লোক ডাকতে গিয়েছে এসে দেখে লাশ উধাও। বেমালুম হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে। লাশের ল ও পড়ে নেই সেখানে। আশেপাশে না ছিল ট্রেন না কিছু যে উঠিয়ে নিয়ে যাবে। তবে কি চোখের ভুল? হতে পারে ভুল দেখেছিল সে।
ভৈরব জংশনের চা পান বিড়ি বিক্রেতা কিবরিয়া বিরাট বড় ধন্ধে পড়ে গেছে। সে আলো আধারিতে কি দেখেছে রাতে ঠিক ঠাওর করে উঠতে পারে না। মনে হয় এক অতিরিক্ত রাত জাগার কারনে তার মতিভ্রম ঘটেছে। সে রাতে যখন চিটাগাং মেইল জংশন ছেড়ে চলে যায়, ঘুমানোর জন্য ফুট ওভার ব্রিজে উঠেছিল। উঠে দেখে রক্তা রক্তি কারবার। কারা যেনো একটা ছেলে আর একটা মেয়েকে জঘন্যভাবে কুপিয়ে রেখে মেরে ফেলে গিয়েছে। সে ওরে আল্লাহরে বলে চিৎকার করে নিচে নেমে লোক ডেকে জোড় করে হেচকি খেতে খেতে বিষম গিয়েছে। জ্ঞান ফিরলে খালি বলে লাশ। ব্রিজের উপরে লাশ। পুলিশ আনসার ভাইরে ডাকেন। সবাই তরি ঘড়ি করে উপরে উঠে দেখে ফক ফকা কিছু নেই। সবাই কিবরিয়াকে গালাগালি দিতে লাগলো। নেশা ভাং কিছু করেছে বোধ হয়। সবাই ভুলে গেলেও সে ভুলে না। খালি বলে লাশ লাশ দেখছি ভাই।
এদিকে টংগীতে কে যেনো গুজব রটিয়ে দিয়েছে যে রেল লাইন রক্ত পিপাসু হয়ে গিয়েছে। ঢাকা টংগী রুটে হর হামেশাই ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। তিলকে তাল করে ঘটনার রটনাতে এখন এই রুটের চারিধারের বস্তি থেকে শুরু করে রেল লাইনের পাশের ঘর বাড়ি গুলোতে অজানা ত্রাস আক্রমন করে বসেছে। সবচাইতে আতংক কাজ করছে কারওয়ান বাজারের বস্তিগুলোতে। কারন প্রতি মাসেই এক জন করে কাটা পড়তেছে এই রুটে। এটা কি দূরঘটনা নাকি কোন পরিকল্পিত খুনের ঘটনা তা জানা নেই। তবে সবাই কু ঘটনাতেই কান পেতেছে ।আর রাতের পর রেল লাইনের ধারে কাছে ঘেষা বন্ধ করে দিয়েছে।
চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর রেল স্টেশন থেকে কমলাপুর রেল স্টেশনে এক অদ্ভুত মেসেজ আসা শুরু করেছে। যার বেশির ভাগই নাকি এরকম যে হঠাত করেই স্টেশন মাস্টাররা খুব আতংকের মধ্যে আছেন।মধ্য রাত থেকে ভোর পর্যন্ত এই আতংক থাকে। সকাল বেলা মিলিয়ে যায়। স্টেশন মাস্টাররা রাতের বেলা ফ্ল্যাগ দেখানো বন্ধ করে দিচ্ছেন জানের ভয়ে। সব স্টেশানে যে এরকম হচ্ছে তা নয়। বড় বড় স্টেশন গুলোতেই এরকম ঘটনা গুলো ঘটে চলেছে। এর ঠিক কি কারন তা এখনো কেউ বলতে পারেনি।
সবাই বলছে রাত বাড়ার সাথে সাথে আতংক কাজ করে। তাই যারা বুঝতে পারে তারা রেল ট্র্যাকের ধারে কাছেও ঘেষে না। এদিকে রেল প্রশাসন পড়েছে মহা ঝামেলায়। কেউ রাতের বেলা ডিউটি করতে চায় না। সবাই যে কি পরিমান আতংকে আছে তা খুব ভালো বুঝতে পারলেন রেল পরিদর্শন মন্ত্রী। একবার যদি মিডিয়ার কানে যায় নাকি ইতিমধ্যে চলে গিয়েছে তা আল্লাহ জানে তবে আর দেখতে হবেনা। এমনিতেই রেল যাচ্ছে লোকসানে তার উপর এমন কাহিনীতে রাতের ট্রেন তো কংকাল হয়ে ছূটবে শুন্য স্টেশন ধরে। আর রাতে চালাবেই বা কে। ইঞ্জিন চালকের সাথে তিন চারজন অতিরিক্ত আনসার দেওয়া থেকে শুরু করে সব জায়গায় পাহাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেসব স্টেশন থেকে বেশি গুজব শোনা যাচ্ছে সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তারা তাদের ডিউটি দিচ্ছে কিনা তা তারাই জানে।
রেলের উচু পর্যায়ে বৈঠক হচ্ছে। হেনো সমস্যার কি করে গতি করা যায়। ইতি মধ্যে যে চাউর হয়ে গিয়েছে নিউজ তা রাতের ট্রেনের টিকেট কাটতি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। উপ পরিদর্শক একটা প্রস্তাব রাখলেন। বললেন
দেখেন অনেক পানি ঘোলা হইছে। এরকম আর কিছু দিন চললে আমাদের চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে হবে। আমার কাছে রিপোর্ট আছে যে দুই তিনটা স্টেশানে লাশ দেখতে পাওয়া গিয়েছে অথবা গুম করা হচ্ছে। এরকম সংক্রান্ত ঘটনা ডিবি পুলিশ অথবা সিয়াইডি করে তাই নয় কি। আমরা এই কেসটা পি আই বি অথবা ডিবি র কাছে হস্থানান্তর করলে কি মনে হয়? সবার সম্মতিতে পি আই বি র কাছে কেস ফাইল চলে গেলো।
পি আই বি মানে পুলিশ ইন্টেলিজেন্সে ব্যুরো এর ইন্টেলিজেন্স অফিসার জায়েদ কবির খান দেখতে সুদর্শন হলেও মহা জাঁদরেল টাইপের। তিনি পারেন না এমন কাজ খুব কমই আছেন। তার অধনিস্থরা খুব সমীহ করে চলেন তাকে। তার বুদ্ধি যেমন প্রখর তেমন শিকারি চোখ গলে কোন অপরাধীই বেরোতে পারেনা। তার কাছেই পাঠানো হলো এই ফাইল। জায়েদ কবির রেলের এই কেস ফাইল স্টাডি শুরু করে দিলেন। একে টপ প্রায়োরিটি দেওয়া হয়েছে মন্ত্রনালয় থেকে। কেস স্টাডি শুরু করে তো চক্ষু ছানাবড়া অবস্থা। কিছু দিন আগেও রাতের ট্রেনে নিজের ভাই আর ভাবীকে তুলে দিয়ে এসেছে। আর এই রকম ত্রাস চলে আসছে গত এক মাসের বেশী সময় ধরে! সে মনোযোগ দিয়ে একটার পর একটা রিপোর্ট পড়া শুরু করলো। কখন কবে কোন ট্রেন স্টেশন আতংক সব সাজাতে লাগলো। প্রথমেই চোখ গেলো যে সব স্টেশনগুলোতে আতংক ছড়ানো হয়েছে সেগুলোর দিকে। সব ছোট ছোট স্টেশন এর নাম। মাঝে মধ্যে বড় কয়েকটা ডুকে গিয়েছে। পুরো বাংলাদেশ রেলওয়ে জুড়ে এই ঘটনা। নাহ এখানে আপাতত কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। গুজবের গুলোতে নোট দেখলো শুধু মাত্র টংগী পর্যন্ত ভৈরবো আছে অবশ্য। তবে বেশিরভাগ এই লাইনেই। সে নোট বুকে নোট করা শুরু করলো ১. যারা যারা কিছু দেখেছে বলেছে তাদের সাথে দেখা করা।
২. স্টেশন মাস্টারদের অনুভুতি নোট করা
৩. সরেজমিনে একবার ভৈরব পর্যন্ত দেখে আসা
৪. প্রত্যেক বড় বড় স্টেশন এর নিকটস্থ থানাপুলিশ এর সাথে কথা বলা।
৫. এ পর্যন্ত যত জন রেলে কাটা পড়ে মারা গিয়েছে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা আর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট কালেক্ট করা।
একটা বড় সর টিমের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলো জায়েদ। প্রত্যেকটা কাজের জন্য দুই জন করে মোট দশ জন কাজের লোক চাই। সে তার জুনিয়রদের থেকে দশ জনকে বাছাই করে কাজে লেগে যেতে বললো।
তিন জনকে বললো বড় বড় স্টেশন গুলোর থানা পুলিশের কাছে এই বিষয়ে খবরাখবর নিয়ে পয়েন্ট বাই পয়েন্ট লিখে রাখতে।
অন্য তিন জনকে পাঠালো রেল অধিদপ্তরে কাটা পড়া ব্যক্তিদের বায়োডাটা আর পোস্ট মরটেম রিপোর্ট নিয়ে আসার জন্য।
দুই জনকে পাঠালো যারা যারা কিছু ঘটনা দেখেছে বলেছে তাদের জবানবন্দী করতে।
বাকি দুই জনকে স্টেশন মাস্টার দের অনুভুতি সম্পরকিত ডিটেইলস আনতে বলে নিজে গেলো রাতের ট্রেনের একটা টিকেট কাটতে। সরে জমিনে সে ঢাকা টংগী রুটের অবস্থা দেখতে চায়। অশরীরী কিছুতেই জায়েদের বিশ্বাস নেই। কিছু হচ্ছে আবার ভেলকি বাজি ঘটছে এরকম কিছু মানেই ফটকাবাজদের উপস্থিতি। সে তার ক্যারিয়ারে দেখেছে সরিষা বোতলের মধ্যেই ভুত বেশি থাকে।
রাত সাড়ে এগারোটার ট্রেনে উঠে পড়লো। ট্রেন প্রায় ফাকা। এরকম কি সব বগিতেই নাকি! তাহলে তো বাংলাদেশ রেলওয়ে উচ্ছন্নে যাবে। ট্রেনের গতি বাড়তে শুরু করে দিয়েছে। খিলগাঁও সিগন্যাল পার হয়েই দুইপাশে হালকা ঝাপড়ি পড়লো। সব নিকোষ কালো। জন মানব হীন। ট্রেনে আস্তে আস্তে একটার পর একটা ক্রসিং পার হতে লাগলো আর মনে হলো নিঝুম অরন্যের মধ্য দিয়ে ট্রেন যাচ্ছে। সবচাইতে বড় খটকা কারওয়ান বাজারে এসে। এখানে যেনো মৃত্যু থাবা পেতে বসে আছে। কেউ নেই কালো হয়ে আছে বস্তির ছাপড়া ঘর গুলো। বুঝতে আর বাকি থাকলো না জায়েদের যে বাকি পথটুকুও এই অবস্থাই হবে। লোকাল ট্রেন চলছে স্টেশন ধরে ধরে ধুকে ধুকে। একটু গতি বাড়িয়েই আবার ঝিমিয়ে পড়ছে। ট্রেনের ভিতরে এক ভবঘুরে সবুজ তামাক পাতার রোল বানাচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসা করতে বোঝা গেলো সে কিছুই জানেনা অথবা হুশে নেই। দুই তিন জন আনসার পুলিশ আছে। এরকম বোধ হয় প্রতি কামড়াতেই। তাদের সাথে খাতির জমাতে চাইলে। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিলো তাদের কোন ইচ্ছা নেই। নিজের চড়কায় তেল দিতে। ভৈরবে ট্রেন থামতেই মালের আপলোড ডাউনলোড শুরু হয়ে গেলো। কিন্তু পুলিশ ইন্সপেকশনে কাউকে দেখা গেলো না। আরে আজব তো। এমনেই চলছে নাকি রেলের কাজ কারবার। বাহ বেশ মজার কাহিনী তো। স্টেশন মাস্টারকে অনেক হাক ডেকে পাওয়া গেলো সাথে চার পাচজন পুলিশ আনসার। বোঝা গেলো স্টেশন গাড়ড না দিয়ে তারা মাস্টারকে গারড দিচ্ছিলো। জায়েদ জিজ্ঞাসা করলো কি ব্যাপার! ট্রেন থামলো আপনার দেখা নাই। মাল নামলো উঠলো তার কোন ইন্সপেকশন নেই। কি হচ্ছেটা কি?
জায়েদের মেজাজ আর গরম কথা শুনেই মাস্টার বুঝে গেলো এ হোমড়া চোমড়া টাইপের কেউ।
সে বললো স্যার গরীবের জান। ঘরে বিবি বাচ্চা আছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে যে সব ঘটছে না স্যার তাতে আর ধরে প্রানটা থাকে না।
চলেন ভিতরে চলেন ঘটনা শুনি।
স্টেশন মাস্টার প্রথমে কিবরিয়ার ঘটনা দিয়ে শুরু করে। বলে তার দুই দিন পর স্যার একটা যুবতী মেয়ের রেলে কাটা লাশ পাওয়া যায় স্টেশনের একটু সামনে। মেয়ের পরিবারের সে কি কান্না। যদি দেখতেন। খুব সুন্দরী মেয়ে ছিলো। জিন্সের প্যাণ্ট শার্ট পড়া মাইয়া।
জায়েদ ভ্র কুচকে জিজ্ঞাসা করলো স্থানীয় না?
না স্যার। চট্টগ্রামের মেয়ে।
মেয়ে কে সনাক্ত করলো কে? কিভাবে বুঝলে?
স্যার তার বাপ মা ই এসে নিয়ে গিয়েছে। তারা কিভাবে জানছে তাতো আমি জানি না। রেল পুলিশ পোস্টমর্টেম করে নি?
স্যার আমাকে এক প্রকার উহ্য করেই তারা তাদের মেয়েকে নিয়ে গিয়েছে। শুধু বলেছে কতৃপক্ষকে যা কথা বলার তা তারাই বলবে।
পাওয়ারফুল ফ্যামিলি মনে হচ্ছে। আনমনে বললো জায়েদ। তারপর কি হলো?
স্যার তারপর কেন জানি না কি হয় স্যার স্টেশন চত্ব্ররে টেকা যায় না ঘরে টেকা যায় না। কেমন জানি ভয় ভয় করে। আয়তুল কুরসি পড়ি তাও ভয় যায় না। বাড়তে বাড়তে মাথার তালুতে চাপ পড়ে মনে হয় উপর থেকে কেউ যাতা দিয়া ধরছে। সবার সাথেই এরকম হয়। সবার সাথেই হয় তবে আব্দুলের সাথে কম হয়। আব্দুল? আব্দুল কে?
আনসার স্যার। ডাইলখোর। সারাক্ষন ডাইলের উপরে থাকে।
তাকে ডাকো এখানে, দেখি সে কি বলে ডাইল নাকি ভুট্টা।
একটা চ্যাংড়া গোছের ছেলে দেখলেই বোঝা যায় নেশাসক্ত।
জায়েদকে দেখেই বললো স্যার ইয়েস স্যার। আব্দুল রিপোর্ট ইং স্যার।
এদের সবার সাথে যা ঘটে তা বলে তোমার ক্ষেত্রে ঘটে না আব্দুল। সবাই ভয়ে মরে আর তুমি বলে সাহসে বিড়ি ফুকো।
না স্যার। আসলে আমিও ভয় পাই। যেদিন নেশা পাতি করিনা অই দিন ভয় পাই।
নেশাপাতি? কি ধরনের নেশা করো তুমি?
ইয়ে মানে স্যার। লজ্জা দিয়েন না স্যার।
জায়েদ ধমকে উঠলো বললো, ন্যাকামো হচ্ছে! এক থাপ্পড়ে দাত ফেলে দেবো। যেটা জিজ্ঞাসা করেছি সেটা বলো।
চমকে উঠে বললো, স্যার ফেন্সি ডাইল, গাজা, দেশী মদ এই সব স্যার। একেক দিন একেক্টা। যেদিন যেটা জুটে কপালে।
কে জুটায় কপালে?
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো স্যার কেমনে জানি জুটে যায়। মাঝে মধ্যে কেউ দেয়। আবার মাঝে মইধ্যে নিজে কিনে খাই।
যেদিন খাও না সেদিন কি হয়?
স্যার খুব ভয় লাগে। খালি বুকের মধ্যে গুড়ুম গুড়ম করে।
আজকেও খেয়েছো নাকি?
না স্যার। তাই একটু পেরেশান আছি। আজকা ডর করতাছে না।
স্টেশন মাস্টার বলে উঠলো স্যার প্রতিদিন এই রকম ভয়ে থাকতে থাকতে এক প্রকার অভ্যস্থ হয়ে গেছি। আজকে নাই দেখে আরো বেশি ভয় লাগতেছে।
ঘটনার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলো না জায়েদ। বুঝলো এটা যে প্রতিদিন যা ঘটে আজ তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। তার আসার জন্যি কি এই পরিবর্তন? নাকি এটা কাকতালীয় কোন ব্যাপার? জানতে হলে তাকে ভৈরবে থাকতে হবে। সে অইদিন থেকে যাওয়ার প্ল্যান করলো। পর দিন সকালে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে চললো নিকটস্থ থানায়। নিজের পরিচয় দিয়ে বলা শুরু করলো
ঘটনা শুনেছেন নিশ্চই?
এরকম অদ্ভুতুড়ে ঘটনা ঘটেছে এর আগে আমি দেখিনি শুনিনি। কিছু একটা হচ্ছে কিন্তু কি হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না পরিষ্কার। তাই এই আতংক বলে আমার মনে হয়।
ঠিক ধরেছেন। ঢাকা থেকে কি কোন ফোন এসেছিলো?
হ্যা রফিক নামে একজন পি আই বি থেকে খোজ খবর করছিল।
তা কোন খবরের মতো কিছু আছে আপনার কাছে?
দেখুন এটা একে জংশন এলাকা। তার উপর নদী পথে আর সড়ক পথে অনেক মানুষের আসা যাওয়া। সাত রংের মানুষের মিলন ক্ষেত্র বলা যেতে পারে। নির্দিষ্ট কিছুকে সাস্পেক্ট করাটা খুবই টাফ।
আমি গত এক মাসের হিস্ট্রির সার সংক্্ষেপ চাচ্ছি। প্লিজ যদি কিছু মনে না করেন আরেকবার বলুন।
একটা জিনিস এটা কাজের কিনা জানি না। হঠাত করে এই এলাকার চোর বদমাশেরা একে বারে সাধু হয়ে গিয়েছে। ক্রাইম প্রায় নেই বললেই চলে।
এটাতো সুখবর বলে মনে হচ্ছে।
আর হঠাতি এই শহরের তরুন যুবক যতো নেশাখোরেরা নতুন কোন এক নেশায় মেতেছে। কি সাবস্টেন্স নিচ্ছে তা জানি না। তবে কোন আক্ষেপ নেই কারো কোন মারামারি নেই। সবাই সুবোধের মতো আচরন করছে
শহরের সবার এই অবস্থা নাকি?
মানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই।
শেষ ক্রাইম রিপোর্ট ফাইল হয়েছে কবে?
তা প্রায় সপ্তাহ তিনেক আগে।
তার আগে ক্রাইম রেট কেমন ছিলো আপনার সিটিতে?
আচ্ছা হ্যা মাসের প্রথম দিকে খুব চুরি চামারি বেড়ে গিয়েছিলো এখানে। হঠাত করেই যেনো সবাই সব কিছু পেতে চাইছিলো। তাই যে যারটা পারে নিয়ে নিয়ে থ মেরে আছে। কেউ কিছুই বলছে না। যারা রিপোর্ট করেছিল তাদের মধ্যেও অপরাধীদের প্রতি কোন ইচ্ছা কাজ করছে না।
স্ট্রেঞ্জ বিহেভিয়ার। ডক্টর সাইকোলজিস্ট কারো সাথে যোগাযোগ করেন নি। ডক্টররা বলছেন পেশেন্ট নাকি খুব কম হাস্পাতাল গুলোতে। তাও মেজর কেসের ক্ষেত্রে। সব রোগীরা সুস্থ হয়ে যার যার ঘরে ফিরে গিয়েছে। ড্রাগস কোম্পানীগুলো বলছে তাদের ড্রাগ সেলস রেট সব থেকে নিচের দিকে। এমনকি নিয়মিত প্রেস্কাইবড করা পেশেন্টরাও ফার্মাসি গুলতে ভীড় জমাচ্ছে না।
কি বলেন এটা তো অসম্ভব একটা ব্যাপার। খোদ ঢাকায় এরকম হলে হতে পারে তার চান্সও খুব কম। তাই বলে এখানে, নেভার। আর কোন সাস্পেসিয়াস কিছু?
না আপাতত এই। অই স্টেশানের এক আতংক ছাড়া আমি মহা আনন্দে আছি ভাই। কোন খুন জখম কেস নেই।
আচ্ছা এখানে থাকার জায়গা হবে নকি আজকের জন্য কোথাও?
কি বলেন হবে না কেন! অবশ্যি হবে। আমার পাশের গেস্ট হাউস খালি আছে। আপনি খুব ইজি ভাবেই থাকতে পারবেন।
সারা রাত জেগে ক্লান্ত। তাই একটু ঘুমিয়ে নেওয়াটাই উচিত বলে জায়েদ ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুম ভাংলো বিকেলের পড়ন্ত আলোয়। খিদেয় পেট চিড়মিড় করছে। তাড়াতাড়ি গোসল সেরে এক হোটেলে গিয়ে ডুকলো। দেখলো এখানকার সবাই বোধ হয় ঘুম থেকে ঊঠে এসেছে অথবা ঘুম পেয়েছে। নিজের খাওয়ার দিকে বেশি মনোযোগ থাকায় সে অন্য দিকে আর তাকালো না। খাওয়া দাওয়া সেরে সে স্টেশন মাস্টারের রুমে চলে এলো। দেখলো কি যেনো লেখালেখি করছেন মাস্টার।
তাকে দেখেই বললেন
আচ্ছা কখন থেকে এই আতংক শুরু হয়?
রাত এগারোটা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত। মাঝে মাঝে কম বেশি।
কম বেশী বলতে বুঝলাম না ঠিক। একেক দিন কি একেক রকম নাকি?
না আসলে যেদিন প্রচুর হাওয়া থাকে সেদিন যেনো বাতাসের সাথে এসে বাতাসের সাথেই চলে যায় আতংক। অন্যান্য দিন জেকে বসে থাকে।
জায়েদ কপাল কুঁচকে বললো আচ্ছা এই অবস্থা তাহলে। বাতাসে ভেসে আসে আতংক। অনেক ধন্যবাদ মাস্টার। আপনি আমার কেইস বোধ হয় আংশিক সমাধান করে দিয়েছেন মাত্রই।
মাস্টার থতমত খেয়ে বললো বুঝলাম না স্যার।
আমি নিজেও কিছু বুঝতে পারছি না মনে হচ্ছে আজ রাতেই বুঝতে পারবো আর আপনিও পারবেন।
ক্রমে ঘড়ির কাটা দশটা থেকে এগারোটা বাজলো। হঠাত জায়েদের নাকে তীব্র একটা ঝাঝালো গন্ধ এসে আস্তে আস্তে তা মিষ্টি বাতাসে পরিনত হলো, যেনো কোন হালকা ফুলের সুভাস মোহিত করে রেখেছে পুরো জংশন এলাকা। আচমকা মাথায় সাইরেন বেজে উঠলো। যেন স্নায়ুগুলোকে কেউ খামচে ধরে টানা হেচড়া করছে প্রচন্ড বেগে। বুঝলো এরপরি আতংক গ্রাস করবে। সে তাড়াতাড়ি ফেইস মাস্ক পড়ে ফেললো এবং দেখলো পুরোপুরি না হলেও কিছুটা এখনো আতংক কাজ করছে সারা শরীর জুড়ে।স্টেশন মাস্টার আর পুলিশ আনসারদের বললো নাকে মুখে যতো দ্রুত পারে গামছা পেচিয়ে ধরতে। কিছু ক্ষন পর তারা অবাক হয়ে ভাবলো। ঘটনা কি হলো? আমি বললাম কেউ নিউরোসিন্থেটিক ড্রাগ ব্যবহার করছে আতংকের সৃষ্টি করার জন্য। তারা কিছুই বুঝতে পারলো না। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো। আজ কোন মাল আপলোড হলো না ডাউনলোডো হলো না। ট্রেন থেমে থেকে নিরদিষ্ট সময় পড়ে ছেরে চলে গেলো। এত বড় জংশনে দাঁড়িয়ে একটা খালি ট্রেনের চলে যাওয়া দেখাটাও কম ভয়ংকর অভিজ্ঞতা নয়। মনে মনে ভাবলো সে। পরদিন সকাল বেলা স্থানীয় পুলিশ সুপারের সাথে কিছু কথা বললো। ঘটনার পরিস্থিতি সম্পরকে জানান দিলো। আর বললো যেন ট্রেন থেকে আগামী এক সপ্তাহে কোন মাল ডেলিভারী না হয়। কিছু যাবেও না আসবেও না। আর থানার ওসি কে বলে রাখলো দু তিন দিন পর জরুরি অবস্থার প্রয়োজন হতে পারে শহরে। ফোরস প্রস্তুত রাখতে বলে রাখলো। আর হাস্পাতাল গুলো যেন কার্য্ক্ষম থাকে।
অফিসার কিছু না বুঝে বললো। আপনি কি বলছেন আমি তার বিন্দু মাত্র বুঝতে পারছি না।
এক ভয়ানক ড্রাগ মাফিয়া কাজ করছে এই চক্রান্তের পিছনে। তারা প্রথমে আতংক ছড়াচ্ছ এ ছোট ছোট স্টেশন গুলোয়। তারপর বড় স্টেশনে আতংক আর ড্রাগ দুইটারি সাপ্লাই করছে। কি জিনিয়েটিক প্ল্যান। কিছুই বুঝলাম না মিস্টার। ভেংে বলুন।
আপনি বললেন যে শহরের যুবকেরা কি নতুন নেশায় মত্ত হয়ে আছে। তা আর কিছু নয় নতুন কোন নারকোটিক ড্রাগ। যা সবার চোক্ষের অলখ্যে চলে যাচ্ছে ড্রাগ ডিলারদের কাছে আর তারা এতেই মত্ত থাকছে। আর স্টেশনের ব্যাপারটা তো বললামি। তাহলে গুজব? আর কিছু না তাদেরই সাজানো লোক। আরো কিছু আছে যা এক হচ্ছেনা। তার জন্য ঢাকায় যেতে হবে। সূত্র গুলো গাথতে হবে। গাড়ি পাওয়া যাবে ঢাকায় যাওয়ার?
কি বলেন অবশ্যই।
দুপুরের মধ্যে জায়েদ ঢাকায় এসে পড়লো। এসেই অফিসে দিলো ছূট। মাথায় অজস্র প্রশন পাক খাচ্ছে। গিয়ে দেখে ডেস্কের উপর তার জুনিয়রদের রিপোর্ট রাখা সারি বদ্ধ ভাবে।
প্রথমেই দেখলো গুজব সংক্রান্ত ব্যাক্তিরা লাপাত্তা না হয় গুম হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত প্রত্যেক স্টেশন মাস্টারের একি মন্তব্য যা সে শুনে এসেছে। তারপর আসে স্টেশনের নিকটস্থ থানা পুলিশের খোজ খবর করা নিয়ে। জানা গেলো সব গুলোই আশ্চর্য রকম ঠান্ডা হয়ে আছে। জায়েদ বুঝতে পারছে তা ঝড়ের পূর্বাভাস মাত্র। সাপ্লাই বন্ধ হয়ে নেশার ঘোর কাটতেই তুলকালাম কাহিনী হয়ে যাবে। চতুর্থত রেলে কাটা পড়া মৃত ব্যক্তিদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট। রিপোর্টে দেখা গেলো প্রায় আটটা টা খুন হয়েছে গত এক মাসে যে গুলো কে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধরা হয়েছিলো। তার মধ্যে চট্টগ্রামের সুমি নামে আঠারো বছরের এক মেয়ের খোজ পাওয়া গেলো। বাকি গুলো পুরো বাংলার বিভিন্ন রেলওয়ে ট্র্যাকে পাওয়া গিয়েছে।
সে এই সব ভিক্টিমদের ডিটেইলস কালেক্ট করতে বলে নিজে ছুটলো সুমির বাসা চিটাগাং এর দিকে। ফাইলেই ভিক্টিমের বাসার ঠিকানা ছিল তাই খুজে নিতে কষ্ট হলোনা তেমন। বাসায় তখনো শোকের মাতম চলছে। সুমির বাবা আব্দুর রহমান কে ডেকে নিয়ে ধীরে ধীরে কথা বলা শুরু করলো জায়েদ।
আংকেল সুমি আমার বোনের মতো। আমি চাই তার হত্যাকারীদের বিচার হোক আর এও জানি আপনিও চান তাদের বিচার হোক। আমি পুলিশ ইন্টেলিজেন্স এর লোক। আপনি আমাকে এমন কোন তথ্য দিন যেটা অপরাধীদের খুজে বের করতে সাহায্য করবে। নতুবা এরা আরো সুমিকে মেরে ফেলবে। এই পর্যন্ত আনুমানিক আরো ছয় সাত জনের একি ভাবে মৃত্যু হয়েছে। কোন একটা সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করছে এর পিছনে। ব্যাপারটা ড্রাগ রিলেটেড। আংকেল সুমিতো ড্রাগ নিতো। তার পোস্টমর্টেম এ তা ধরা পড়েছে। সে কি ধরনের ড্রাগ নিতো? অথবা কে তাকে সাপ্লাই করতো তার কিছু কি আপনি জানেন।
আংকেল মৃদু গলায় বললেন আমার এক মাত্র মেয়ে। তাকে এভাবে মেরে ফেললো ওরা। কি দরকার ছিল টাকার? আমি আমার সব কিছু দিয়ে দিতাম।
সুমি খুব সম্ভবত তাদের গোপন কোন প্ল্যান অথবা বিষয় জেনে ফেলেছিলো। যার কারনে তারা তাকে।
একটা ছেলের সাথে মাঝে মাঝেই ঘুরতে যেতো সুমি। ল্যান্সার চালাতো ছেলেটা। হাতে স্বস্তিকা চিহ্ন ছিল।
জায়েদের মাথায় এলারম বেজে উঠলো। স্বস্তিকাতো ড্রাগ কারটেল সারঙ মাও এর ব্র্যান্ড। কাকতালীয় হতে পারে আবার মিলে যেতেও পারে।
সুমির বাবা আর কিছুই বলতে পারলেন না। মাথার মধ্যে সারঙ মাও এর চিন্তা নিয়ে সে সন্ধ্যার ফ্লাইটে ঢাকা ব্যাক করলো।
ব্ল্যাক লিস্টেড ফ্যামিলি গুলোর মধ্যে সারঙ মাও প্রথম সারিতে রয়েছে।
সারঙ মাও হলো বাংলাদেশের কুখ্যাত এক স্মাগলার। যার কাজ চোরাকারবারি থেকে শুরু করে ড্রাগ, অস্ত্র আর প্রস্টিটিউশন নিয়ে কাজ করা। সে মায়ানমার থেকে ইয়াবা সাপ্লাই এর এক বড়সর হোমড়া চোমড়া ব্যক্তি। কোন প্রমান নেই তাই তার টিকিটাও কেউ ধরতে পারছে না। গত বছর সরকার প্রায় নব্বুই কোটি টাকার নেশা জাতীয় দ্রব্য ধ্বংস করেছিল সরকার যার বেশিরভাগ ছিল মাও এর। সে তার ঘাড়ে আর হাতে স্বস্তিকা চিহ্ন ব্যবহার করে দেখে তার লোকেরা তাকে অনুকরণ করে শুধু ডান হাতে স্বস্তিকা ব্যবহার করে। যা একই সাথে পুলিশ আর সাধারন মানুষকে ইংগিত দেয় যে তারা কার লোক।
এই লোকের কর্ম তত্পরতা এমন জটিল আর স্বচ্ছ যে পুলিশ র্যাব তার বিরুদ্ধে সরাসরি কোন অভিযোগ আনতে ব্যর্থ হয়েছে বার বার। তার বিরুদ্ধে লাগতে গেলে অবশ্যই শক্ত কোন প্রমান দরকার।
জায়েদ অফিসে এসেই ব্যুরো চিফ মান্নান স্যারের সাথে দেখা করতে গেলো।
চিফ সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে বললেন, তুমিতো ঠিক নিশ্চিত না তাই না জায়েদ? শুধু এক ছেলের হাতে স্বস্তিকা আর ড্রাগ দেখেই উঠে পড়ে মাও এর পেছনে লাগাটা কি ঠিক হবে? তুমি তো আনাড়ি এজেন্ট না। শক্ত কোন প্রমান জোগাড় কর। ব্ল্যাক লিস্টেড হোলেও তার আর তার ফ্যামিলির যে পরিমান টাকা আছে তা দিয়ে সে সরকারি বেসরকারি সব অফিসারদের কিনে ফেলতে পারবে।
........স্যার আমার কিছু কনফেডেনশিয়াল ফাইলের উপর ক্লিয়ারেন্স লাগবে মাও এর ব্যাপারে খোজ খবর করার জন্য। আপনি যদি পাশ দেন তাহলে আমি একটু ঘাটাঘাটি করে দেখতে পারি। টপ প্রায়োরিটিতে পড়ছে মাও এর ফাইল। কারনটা আপনার অজানা না স্যার। মাফিয়া পরিবারগুলোর বিরুদ্ধে লড়তে গেলে আট ঘাট না বেধে এগোলে পরে খাবি খেতে খেতে জান কয়লা হবে।
ক্লিয়ারেন্স না হয় দিলাম। কিন্তু তুমি কি খুজছো বলতো ঠিক করে? সামান্য সূত্র দিয়ে তুমি আকাশ পাতাল তোলপাড় করতে চাচ্ছো।
আমি নিজেও জানিনা ঠিক কি খুজছি! তবে আমি নিশ্চিত পেয়ে যাবো।
ওকে পেলে আমাকে জানিও। এখন আপাতত বিদায় হও। প্রধানমন্ত্রীর অফিস কার্যালয়ে যেতে হবে। আমি পাস দিয়ে দিচ্ছি।
জায়েদ নিজের রুমে ফিরে দেখলো তার জুনিয়র এজেন্টরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। একজন বললো জায়েদ ভাই সবার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হয়ে গেছে। প্রত্যেকেরই বয়স পঁচিশ থেকে ত্রিশের মধ্যে। পাচ জন যুবক আর তিন জন নারী খুন হয়েছে। এদের দেশের বাড়ি একেক জায়গায়। তবে প্রত্যেকের মধ্যেই মিল হচ্ছে তারা সবাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী, হয় ছিল না হয় রানিং চলছিলো। একেক জন একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের। বুমেরাং ব্যাপার ভাই। হযবরল হয়ে আছে সব জায়গায়।
প্যাচের কি আছে? তোমাদের বলেছি ব্যাকগ্রাউন্ডের রিপোর্ট দিতে। প্যাচাল পাড়তেতো বলি নাই! জায়েদ বললো।
তা আর কি বের করলে শুনি?
থতমত খেয়ে কুতুব বললো ভাই আসলে আপনি এই কেস নিয়ে অনেক খাটছেন তাই আমরা চেষ্টা করছিলাম নিজেরা কিছু বের করে আপনাকে সাহায্য করতে।
কি ডিটেইলস পেলে তা বলো ভনিতা না করে।
ভাই আসলে সব লেজে গবরে এক হয়ে গিয়েছে। এই যেমন রংপুরের ছেলে রাসেল পড়তো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার লাশ পাওয়া গেলো সিলেট রুটে। চট্টগ্রামের মেয়ে সুমির লাশ পাওয়া গেলো ভৈরবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পাভেলের লাশ পাওয়া গিয়েছে টংগীতে। এরকম একেক অঞ্চলে বাড়ির লোকের লাশ ভিন্ন ভিন্ন রুটে পাওয়া গিয়েছে।
এদের প্রত্যেকেরই পারিবারিক আর্থিক অবস্থা নিম্ন মধ্যবিত্ত ধরনের। তবে তাদের নিজস্ব চালচলন ছিল অনেক চাকচিক্যময়।
কিভাবে জানলে? এরা কি করতো পেশায় কিছিল?
পেশায়তো স্যার সবাই ছাত্রই ছিল। শুধু তিন জন এর পেশা সম্পরকে কিছু জানা যায়নি। কোন অজানা উতস থেকে এদের আয় হতো এবং তা ভালোই হতো।
ক্যাম্পাসগুলোতে খোজখবর করেছো ওদের সম্পর্ক এ?
জ্বি ভাই। এরা প্রত্যেকই ক্যাম্পাসে থাকাকালীন ক্ষমতাসীন দলের লোকের হয়ে কাজ করতো। প্রত্যেকেই বাইক চালাতো নিজ নিজ ক্যাম্পাসে। চিহ্নিত সন্ত্রাসী ছিল এরা। তবে কোথাও কোন রিপোর্ট নেই এসবের।
আচ্ছা অনেক তথ্য দিয়েছো এখন তোমরা সবাই হাতের শিটগুলো রেখে ভাগো এখান থেকে।
সবাই তড়িঘড়ি করে বের হয়ে গেলে জায়েদ পি আই বির সেণ্ট্রাল কপিউটারে নিজের আইডি দিয়ে লগ ইন করলো। তারপর কনফেডেনশিয়াল ফাইলে টিপ দিয়ে পাস এন্ট্রি করলো। টপ মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টে সারঙ মাও নেই। কারন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। ব্ল্যাক লিস্টেড এর প্রথম এই এর নাম। ক্লিক করতেই বিশাল মেগাবাইটের একটা ফোল্ডার সামনে চলে এলো। ভিতরে ডুকতেই অজস্র তথ্য সামনে চলে এলো। গোপন ক্যামারায় তোলা অজস্র ছবি থেকে শুরু করে প্রতিদিন পত্রিকায় ছাপা হওয়া তার এবং তার ফ্যামলির মেম্বার দের কার্য কলাপ সব সামনে চলে এলো।
সারঙ মাও এর জন্ম ১৯৬২ সালে বিহারী পল্লিতে। তার মা ছিলেন বাঙালি । কিন্তু বাপ ছিল এক বিহারি। বিহারি সম্পর্ক এ পাকি সেনার কোন যোগাযোগ ছিল কিনা তা জানা যায় নি। তবে বিহারির দেশের বাড়ি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্তান এ। ছোটবেলা থেকেই মাও কে জারজ শুনতে শুনতে বিহারি ক্যাম্পে মানুষ হতে হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সে তার বাবার সাথে মাত্র দশ বছর বয়সে মুক্তি সেনাদের হাত থেকে বাচতে পালিয়ে বান্দরবান চলে যায়। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের সাথে মিশে তাদের আচরন শিখতে থাকে। এক অদ্ভুত প্রতিভা এই মাও। যা দেখতো হুবুহু কপি করে ফেলতে পারতো। তখন আসাম প্রদেশ থেকে চোরাপথে অনেক ড্রাগস আর অস্ত্র আসতো। সে সেখানে এসব আনা নেওয়া করতো। এক সময় নারী নক্ষত্র চিনে ফেলে নিজেই চোরাকারবারির ব্যবসা খুলে বসলো। মাত্র সাতাশ বছর বয়েসেই পার্বত্য অঞ্চলের ত্রাস হয়ে উঠেছিল এই মাও। তার বিহারী পিতা ছিল তার দিক নির্দেশক। কিন্তু অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা আর অনেক ক্ষেত্রে কপালগুনে বার বার প্রশাসনের নাক গলে বেড়িয়ে গিয়েছে। তার বিয়েও হয় এক পাহাড়িয়ার সাথে আটাশ বছর বয়েসে। তারপর থেকে এ পর্য্ন্ত দেশে মোট চোরাচালানের এক তৃতীয়াংশের একা হকদাতা এই সে নিজে। কিন্তু এই বিশাল সাম্রাজ্য থমকে যায় গত বছর তার বড় ছেলের রোড এক্সিডেন্টে। কিন্তু শোক কাটিয়ে ঊঠে বাকি দুই মেয়ে কে নিয়ে সে চালিয়ে যাচ্ছে তার মাফিয়া সংগঠন।
বড়ছেলে জিম মাও এর সড়ক দূরঘটনায় মৃত্যুর সংবাদ বেশ ফলাও করেই ছাপা হয়েছিল পত্রিকাগুলোতে। জায়েদ দেখলো লেখা আছে “ নির্মম সড়ক দূর্ঘটনায় মাও ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার সারঙ মাও এর জ্যেষ্ঠ পুত্র জিম মাও এর মৃত্যু। নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে অতিরিক্ত স্পিড এ গাড়ি চালানোর ফলেই এই দূর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। তার সাথে থাকা দুই বন্ধু মারাত্নক ভাবে আহত হয়েছেন। তারা বর্তমান এ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে চিকিৎসারত রয়েছেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।“
অনেক ছবি দেখা গেলো। বড় ছেলের জন্মদিনের বিশেষ করে। অনেক উচু মহলের ব্যক্তি, সুপারস্টার, ইয়াং গার্লস, আমলা থেকে শুরু করে প্রচুর মানুষের এলোপাথারি ছবি। এক জায়গায় পার্কিং লটের ছবি দেখা গেলো। অনেক দামি দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি শোভা পাচ্ছে। তার মধ্যে একটা গাড়ির দিকে জায়েদের চোখ আটকে গেলো। ব্ল্যাক ল্যান্সার। গাড়ি নং দেওয়া আছে। সে দ্রুত টুকে নিলো নাম্বারটা।
এই গাড়ির ঠিকুজিকোষ্ঠী বের করতে নেমে পড়লো। বের হলো ছাব্বিশ বছর বয়েসের এক যুবকের বায়োডাটা। নাম সোহেল আহমেদ। বাড়ি চট্টগ্রামে। যোগাযোগের ঠিকানা নিয়ে ছবিটা এনলার্জ করলো সে। দেখলো তার সাথে জিমের প্রচুর ছবি আছে। বন্ধু পর্যায়ের কেউ হবে।
সে যেই হোক একে বের করার একটা মোক্ষম প্রচেষ্টা চালাতে হবে তাকে।
সে সোহেলের বাড়ি যে থানার আন্ডারে পড়েছে সেখানের ফোন নাম্বার ডায়াল করলো। ফোন করে জানালো সোহেলের কার্যকলাপ যেনো এখন থেকে নোট করা হয়।নজরবন্দি করে রাখার নির্দেশ দিয়ে সে বাকি ফাইলগুলো নিয়ে পড়লো।
ফাইলে মাও এর দুই মেয়ে সম্পর্ক এও যথেষ্ট তথ্য আছে। দুই জনই খুব মারাত্নক ধরনের মেয়ে। এরা প্রায় প্রকাশ্যে সব ধরনের ইলিগ্যাল কাজ করে বেড়ায়। বিভিন্ন আমলা মন্ত্রী দের বিভিন্ন গোপন বিষয় এদের নখদর্পণ এ নয় শুধু সাথে যথেষ্ট নথিপত্রও রয়েছে। এদের প্রধান কাজ শহরের কোটিপতি ছেলেদের সাথে ডেট করা আর নতুন নতুন নেশার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। একমাত্র ভাই জিমকে যে তারাও খুব ভালোবাসতো তা ছবি ঘাটলেই বোঝা যায়। চিটাগাং পোরটের কাস্টমসের উর্দ্ধত্বন কত্পক্ষের সাথে বেশ দহরম আছে এই দুই কন্যার। বোঝা যাচ্ছে বৃদ্ধ বাবাকে বেশ ভালো ভাবেই সাহায্য করছে তারা বিভিন্ন ভাবে। কিন্তু এইগুলোর সাথে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ড্রাগের এমন আধিপত্য এর যোগাযোগ যে কি তা বুঝতে পারলো না জায়েদ। একমাত্র ভরসা সোহেল আহমেদ। সে যদি কোন তথ্য দিতে পারে।
জায়েদ স্বস্তিকা চিহ্ন নিয়ে পড়লো। এই চিহ্নের অনেক বড়সর ইতিহাস আছে। হিটলারের নাত্সি বাহিনীর সিম্বল ছিল স্বস্তিকা। ভারতীয় শাস্ত্রে বরণিত শান্তি আর নিরবিচ্ছিন্নতার প্রতীক স্বস্তিকা চিহ্নকে হিটলার ব্যবহার করেছিলেন আর্য রক্তের বিশুদ্ধতা বোঝাতে। গবেষকরা বলেছেন, এই স্বস্তিকা চিহ্ন প্রায় এগারো হাজার বছরের পুরনো। হিন্দু ধরমে স্বস্তিকা অত্যন্ত তাতপর্যপূরন একটি বিষয়। স্বস্তিকা শব্দের অরথ হল সৌভাগ্য, ভালো থাকা, ভালো অস্তিত্ব।বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে এর পরিচিতি। চিনে একে ওয়ান, জাপানে মানজি, ইংল্যান্ডে ফাইলফট। স্বস্তিকা চিহ্নকে পবিত্র বলে মনে করা হলেও এর ভালো খারাপ দুইটি দিকই আছে। ডানহাতি স্বস্তিকা হল ভগবান বিষনু ও সূর্য র প্রতীক আর বামহাতি স্বস্তিকা চিহ্ন মা কালী ও জাদুর প্রতীক।
জায়েদ আবার তাকালো মাও এর সিম্বলের দিকে। দেখলো হারামীপনায় মাও কম যায় না। সে বামহাতি স্বস্তিকাই ব্যবহার করছে তার ব্র্যান্ড হিসেবে। ইবলিশ আর কাকে বলে। সে আরো কিছু তথ্যের আশায় ইন্টারনেট ঘাটতে শুরু করলো। তেমন কিছুই পেলো না। এই চিহ্নের উত্পত্তি আর বিকাশ নিয়ে ভালো রকমের দ্বন্দ্ব আছে ইতিহাসবিদ আর নৃতাত্ত্বিকদের ভিতরে।
ঘাটা ঘাটি রেখে সে মাও এর বর্তমান এক্টিভিটিজের দিকে মন দিলো। তার আজকের শিডিউল ম্যানেজ করে দিয়েছে তথ্য মন্ত্রনালয়। জায়েদ চিন্তা করলো মুখোমুখি দেখা করার। সে তার পি এস কে বললো যে ভাবে হোক আজ যেন মাও এর সাথে সে একটা এপয়েন্টমেন্ট করে রাখে।
সন্ধ্যা সাতটার সময় পাওয়া গেলো এপয়েন্টমেন্ট রূপসী বাংলা হোটেলে কি এক ব্যবসায়িক মিটিংে থাকবেন মাও। পনেরো মিনিটের সময় পাওয়া গিয়েছে।
নিজের ছদ্ম পরিচয়টা ঝালাই করে নিলো জায়েদ। সে এক প্রখ্যাত ইন্টারন্যাশনাল এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কর্পোরেশনের বিজনেস এক্সিকিউটিভ অফিসার যে মাও ইন্ডাস্ট্রিজের সাথে ব্যবসায়িক চুক্তি করতে চায়।
সন্ধ্যার দিকে সে রূপসী বাংলায় এসে দেখে সেখানে ঢাকা ক্লাবের অনেক গণ্যমান্য মেম্বার উপস্থিত আছেন। প্রায় প্রত্যেকেই পরিচিত মুখ। তার মাঝে মাওকে দেখে চিনে নিতে অসুবিধা হলোনা জায়েদের। তার মনে হলো রাজকীয় চালে এক সিংহ ঘুরে বেড়াচ্ছে সাপের শীতলতা আর বিষদাঁত নিয়ে। সবাইকে তার কাছে নস্যি বলে মনে হলো। নীল রঙ এর একটা ফুল হাতা শার্ট পড়েছেন সাথে হালকা বেগুনী রঙ এর টাই আর কালো প্যান্ট। পায়ের জুতো জোড়া নির্ঘাত কোন কুমির এর চামড়া দিয়ে বানানো। হাটা চলা ফেরায় দাম্ভিক এক কোটিপতির ছাপ স্পষ্ট।ক্ষমতার বিচ্ছুরণ ঘটছে তার সমস্ত শরীর থেকে। শার্ট এর হাতা গুটিয়ে রেখেছেন বলে স্বস্তিকা চিহ্নটা দেখা যাচ্ছে। যেনো দেখাতেই তিনি হাতাটা গুটিয়ে রেখেছেন।
জায়েদ হাতে একটা শ্যম্পেনের গ্লাস নিয়ে মৃদু চুমুক দিতে দিতে মাও এর দিকে এগোলো। মাও এর কাছে গিয়ে নিজের পরিচয় দিতে যাবে সাথে সাথে মাও বলে উঠলো
আরে জায়েদ কবির সাহেব যে! কি সৌভাগ্য আমার! আসুন আসুন। ইন্টেলিজেন্স অফিসার আমার ঘরে।
জায়েদ থতমত খেয়ে গেলো। তার পরিচয় এই খবিশ জানলো কিভাবে?
মাও ভ্র নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো
কি চমকে গেলেন নাকি মিস্টার কবির? নাকি জায়েদ বলবো? আচ্ছা সে যে টাই বলি। কি চমকে গেলেন বলে মনে হচ্ছে?
তাতো কিছুটা চমক দেখিয়েই দিয়েছেন আপনি। আমার পরিচয় জানলেন কিভাবে?
আমার পিছনে টিকটিকি লাগবে আর আমি জানবো না মিস্টার? আমাকে আণ্ডারস্টএমীট করে ফেলছেন না তো জায়েদ কবির।
জায়েদ কি বলবে ভেবে পেলো না। এতো সব জানে দেখছি। তার মানে তার সন্দেহ অমূলক নয়। আগ বাড়িয়ে যদি এই চমক মাও না দিতো তাহলে জায়েদ অন্ধ গলিতে কানা হয়ে ঘুরতো। এখন সে প্রায় নিশ্চিত যে সে ঠিক পথেই আগাচ্ছে। অতি চালাক ব্যক্তিও যে ভুল করে ফেলে মাও এর এই কাজই তার প্রমান। সে দেখলো মাও ঢুলে ঢুলে কথা বলছে। এতো সকাল সকাল মাতাল হয়েছেন কেন তাও একটা প্রশন। হয় সন্তানের মৃত্যু শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেন নি নতুবা বেশ উত্ফুল্ল হয়ে আছেন কোন বিষয় নিয়ে।
বললেন তা কি জিনিষ এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট করতে চান আপনি? পুরো মাও ইন্ডাস্ট্রিজ নয়তো? হা হা হা। রসিকতা করলাম।
আপনি সুদর্শন, হ্যান্ডসাম। বিয়ে করেননি এখনো। তা কেন এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করছেন? বিয়ে করুন, হানিমুনে যান। চানতো আপনার জন্য মেয়ে দেখতে পারি। আমারই আছে। কি করবেন নাকি বিয়ে? প্রচুর বিত্ত আর ক্ষমতা সাথে সুন্দরী মেয়ে। আনন্দ ফুরতি করুন মজা করুন এখোন তো তাই করার বয়েস। কেন ঝামেলায় পড়ছেন? আমার ছেলেটা বেচে থাকলে তার........।
কথাটা শেষ করতে পারলেন না। তার আগেই তার গলাটা কেমন ধরে এলো। জায়েদ বুঝতে পারলো ছেলের মৃত্যু শোক এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেন নি মাও।
জায়েদ বললো, আপনার ছেলের জন্য আমি খুবই দুঃখিত মিস্টার মাও। খুব অল্প বয়েসেই তার এমন মৃত্যু আসলেই মেনে নেওয়া যায় না। আসলে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে।
জায়েদ কথা শেষ করতে পারলো না। তার আগেই মাএ উন্মাদের মতো চিৎকার করে বলে উঠলো,
এক্সিডেন্ট! কি বলছো তুমি এক্সিডেন্ট। না এটা মার্ডার। আমি জানি আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছে। আর তুমি বলতে চাচ্ছো ইট ওয়াজ যাস্ট আ ড্যাম এক্সিডেন্ট। আই উইল পানিশ ইচ এন্ড এভ্রি ফ্যামিলি ফর দেয়ার ডিড।
কথাটা বলতে বলতে মাতাল মাও ধরাম খেয়ে আছাড় খেয়ে কারপেট এর উপর পড়ে গেলেন। তার চেঁচামিচি তে এমনিতেও সবাই জড় হয়ে গিয়েছিলো। কেউ ভয়ে এগিয়ে আসিছিলো না। অজ্ঞান হওয়ার সাথে সাথ তার দেহ রক্ষীরা এসে তাকে ধরাধরি করে তার স্যুইটে নিয়ে গেলো।
জায়েদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কি করবে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারলো না। কি ঘটলো এটা? বোঝা যাচ্ছে মাও পুত্র শোকে মাতাল হয়ে আছে। আর এই মৃত্যুকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছেন না। এটাকে পরিকল্পিত হত্যা বলে ধরে নিয়েছেন। শেষের লাইনটাই মারাত্নক। প্রত্যেক পরিবারকে তিনি শাস্তি দিবেন। কেন? কি করেছে তারা? এমনিতেই তো তিনি ড্রাগসের কালো ছায়া আমদানি করে পুরো বাংলার মানুষকে বিষিয়ে রেখেছেন। নতুন করে আবার কি শুরু করবেন তিনি? যে কারনে এই রেল লেইন আতংক তার সাথে এর যোগাযোগ কোথায় তা চিন্তা করতে গিয়ে জায়েদের মাথা ঘোরা শুরু করলো
জায়েদ রাতে আর অফিসে ফিরলোনা। সে চিন্তা করলো বাসায় গিয়ে লম্বা একটা ঘুম দিবে। শেষ কয়েক দিন ধরে অনেক ধকল গিয়েছে তার উপর দিয়ে। বাসায় ফিরে একটা শাওয়ার নিলো। অনেক ক্লান্তি মুছে গেলো তার। টাওয়াল কোমড়ে পেচিয়ে বেড রুমে গিয়ে রেডিও ছেড়ে দিলো। এফ এম রেডিও তে কণ্ঠশিল্পী অর্ণব এর তখন জোনাক জ্বলে রাত হয় ধীর গানটা বাজছেন এই গানটা যতোবার শুনেছে জায়েদ ততবার তার ভিতরে গ্রামের মেঠো পথের স্মৃতি মনে ভেসে উঠে। এক ধরনের অদ্ভুত পুলকতা কাজ করে। বিভোর হয়েছিল গানে এমন সময় মোবাইল বেজে উঠলো। অফিস থেকে ফোন করেছে জুনিয়র এজেন্ট কাওসার অভি। বলছে
ভাই খুব জরুরী একটা ম্যাসেজ পাঠিয়েছেন ভৈরব থানার ওসি। বলেছেন এক্ষুনি আপনাকে যোগাযোগ করতে। আর বড় স্যার বলেছেন আপনাকে দেখা করতে। কেইসের ব্যাপারে ডিটেইলস জানতে চান। আপনি অফিসে এলে ভালো হয়।
জায়েদ বললো, আমি আসছি এখুনি। অফিসে কে কে আছো তোমরা?
আমি, আসিফ, জিহান আর হাসান আছি ভাই। বাকিরা কোথায় আছে জানি না।
ওকে আমি না আসা পর্যন্ত তোমরা অফিসে থাকো। কিছু কাজ করতে হতে পারে।
জায়েদ তৈরি হয়ে দ্রুত অফিসের দিকে রওনা দিলো। অফিসে এসেই সে ইন্টার কমে বড় সাহেবের সেক্রেটারিকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো মান্নান স্যার অফিসে আছেন নাকি চলে গিয়েছেন। সেক্রেটারি জানালো যে স্যার অফিসেই আছেন।
নক করলে মান্নান স্যারের রুমে ডুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।
স্যার জিজ্ঞাসা করলেন, তা কি খবর জায়েদ? কেইস ডিটেইলস বলো।
জায়েদ বললো স্যার আমি যা ভেবেছিলাম তাই স্যার। মাও এর পিছনেই লেগেছি আমরা আবার। সেই ড্রাগ সাপ্লাই করছে।
কেন কোন মোটিভ পেয়েছো?
স্যার অপরাধীর অপরাধ করতে কোন মোটিভ এর প্রয়োজন হয় না। আর এ তো মাও। অপরাধীদের সর্দার। সারা দেশে এইতো বিভিন্ন মাদকের বিষ ছড়িয়ে রেখেছে। কিন্তু এবার সে ক্ষেপেছে অন্য এক কারনে।
কি কারন বলে মনে হচ্ছে?
স্যার তার একমাত্র ছেলে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গিয়েছে এক মাস হলো। মাও একে পরিকল্পিত হত্যা ভেবে বসে আছে। তার মৃত্যুর জন্য বাংলাদেশের প্রতিটা পরিবারকে দায়ী করছে মাও। এবং আমার মনে হয় তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য নতুন এই মাদক সে আমদানি করেছে দেশের বাইরে কোথা থেকে।
কিন্তু এরকম ভাবছে কেন লোকটা? পাগল হয়ে গিয়েছে নাকি?
স্যার উন্মাদ হলেতো ভালোই হতো। সোজা পাগলা গারদে চালান দেওয়া যেতো। কিন্তু যে বুদ্ধিমত্তার সাথে সে তার সাম্রাজ্য চালাচ্ছে আর সবার চোখ ফাকি দিয়ে ড্রাগস সেবা সবার কাছে পৌছে দিচ্ছে তার তো তুলনা নেই।
সায়েন্টিফিক ক্রিমিনাল এই লোক। মাথায় এর মারাত্নক বিদ্ধ্বংসি প্ল্যান আছে কোন এর। সে যে ড্রাগ ছড়াচ্ছে তা কি ধরনের? এর সাইড ইফেক্ট কি?
সমস্যাতো এখানেই। এখোনো এই ড্রাগস এর কোনো চালান ধরা পড়েনি।ড্রাগস এর সেম্পল পাওয়া গেলে ভালো হতো।
তার এতো বড় সর একটা এক্সপোর্ট আর ইম্পোর্ট এর বিজনেস আছে যে সে কোন দিক দিয়ে আমদানি করছে বোঝা যাচ্ছে না স্যার। তবে সে ডিস্ট্রিবিউশানের জন্য যে রেল পথ ব্যবহার করছে তা তো আমরা এখন জানি। কিন্তু কোন ট্রেনে যে মাল যাচ্ছে তা এখনো পরিষ্কার না। এতে যে রেলের লোকও জড়িত তা বোঝা যাচ্ছে।
এটাতো স্বাভাবিক। এতো বড় একটা অপারেশন সে করছে তার নিজস্ব নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে। এবং সে তার ইন্ডাস্ট্রিজের এর মস্ত ঝুকি নিয়ে এই কাজ করছে। মড়িয়া হয়ে এই কাজ করছে সে।
হাতে কোন সুত্র আছে? স্যার একটা হালকার উপর ঝাপসা সূত্র আছে। আর আজ সন্ধ্যায় মাও এর সাথে সাক্ষাত করেছি। সেখান থেকেই জিমের হত্যা সম্পর্কিত ব্যাপারে মাও এর অভিব্যাক্তি জানতে পারি।
তা এখন কি করবে বলে চিন্তা করছো?
স্যার ভৈরব থেকে সেখানকার থানার অফিসার ইন চারজ ফোন করে কি যেনো বলতে চাচ্ছিলেন। আপনার এখানে সরাসরি চলে আসার জন্য তার খোজ নিতে পারিনি। আপনার এখান থেকে গিয়েই যোগাযোগ করবো।
ঠিক আছে যোগাযোগ করো আর বাকি খবর আমাকে আপ টু ডেট জানিও।
ঠিকাছে স্যার বলে জায়েদ স্যারের রুম থেকে বেড়িয়ে নিজের অফিসে গিয়ে ডুকলো। ভৈরবে ফোন দিতেই অফিসার বললো,
স্যার এখানে তুলকালাম ঘটনা ঘটে গিয়েছে। আবার চুরি বেড়ে গিয়েছে। আর নেশাখোরেরা একেক জন হিস্টিরিয়াগ্রস্থের মতো আচরন করছে। হাসপাতাল গুলোতে আবার রোগী ভরতি শুরু হয়ে গিয়েছে আর ভিমড়ি খাচ্ছে ডাক্তাররা। কেউ কোন হদিস পাচ্ছে না কিছুর। অভিভাবকেরা থানায় এসে জ্বালিয়ে মারছে।
জায়েদ নিরুত্তাপ কন্ঠে বললো, আমিতো আপনাকে বলেই এসেছিলাম এসব ঘটতে পারে। আচ্ছা আর কোন মাল আপলোড অথবা আন লোড হয়েছে স্টেশনে?
আপনিইতো নিষেধ করে গেলেন। আর তাছাড়া এখন সবাই ফেইস মাস্ক পড়েই ইন্সপেকশন করে স্টেশনে। তবে আতংক কাটেনি জন সাধারনের মন থেকে।
কোন ড্রাগসের সেম্পল পেয়েছে আপনার ফোরস? স্যার অনেক মাদকের সাথে কিছু ভিন্ন রকমের মাদক ধরা পড়েছে আমাদের কাছে। এর সাথে পূরবের মাদক গুলোর কোন মিলই নেই।
আপনি এক কাজ করুন দ্রুত তা কুরিয়ারে আমাদের অফিসে পাঠিয়ে দিন। আমাদের ফরেন্সিক ডিপার্টমেন্ট ব্যাপারটা দেখবে। আর কিছু হলে জানাবেন।
জায়েদ চিন্তিত মুখে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে থাকলো। হঠাত মনে হলো সোহেলের ব্যাপারে কোন খোজ খবর নেওয়া হয়নি।
থানায় ফোন করলে জানানো হলো সোহেলের ফ্যামিলি কি নিয়ে যেনো খুব ব্যস্ত আছে। সোহেল বাসা থেকে বের হয়নি। এর মধ্যে। তবে ইন্ডিয়ান এমব্যাসি তে সোহেল আহমেদের নামে ভিসার এপ্লিকেশন্স জমা পড়েছে।
তার মানে সোহেল ইন্ডিয়ায় যেতে চাচ্ছে। এমন সময়ে এরকম ভাবে দেশ ত্যাগ করতে চাওয়ার অর্থ পরিষ্কার। সে পালাতে চাচ্ছে।
অফিসার এক কাজ করুন সোহেলকে আপনি কাস্টডিতে রাখুন আমি না আসা পর্যন্ত। নন বিয়ারেবল ওয়ারেন্ট জারি করুন। তাকে যত দ্রুত পারেন ধরুন। নজরবন্দি রাখার সময়সীমা শেষ। আমি কাল সকালের ফাস্ট ফ্লাইটেই চিটাগাং থাকবো। আপনার সাথে সকালে দেখা হচ্ছে তাহলে। ভালো থাকবেন। এখোন রাখি।
সকাল বেলা প্রথম ফ্লাইট ধরে জায়েদ চিটাগাং পৌছালো।
থানায় গিয়ে অফিসারের সাথে দেখা করলো। অফিসার বললো
স্যার কি যে ঝামেলায় আছি আপনি জানেন না। সোহেল আহমেদের নামে ওয়ারেন্ট নিয়ে ওকে ধরতে গিয়ে বিষম খেতে হয়েছে। একে পলিটিক্যাল ফ্যামিলি তার উপর মাফিয়া পরিবার মাও এর সাথে ওঠাবোসা তাদের। উপর মহলের চাপে জান অতিষ্ট হয়ে গিয়েছে। গত রাতে এক ফোটা ঘুমাতে পারিনি। এই মন্ত্রী সেই মন্ত্রী অমুক সেমুক ফোন করে করে মেজাজ এর বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।
আপনি তো স্যার মৌচাক এ ঢিল মেরে বসে আছেন। আর কামড় খাচ্ছি আমরা। কি যে অদ্ভুত পিরিস্থিতি স্যার বোঝানো যাবে না।
সোহেল কোথায়?
কোথায় আবার স্যার, গারদে। তাকে ইন্টারোগেশন রুমে নিয়ে আসুন। তার সাথে কিছু কথা বলি। দেখি সোনার চাঁদ কি বলে।
সোহেলকে দেখে জায়েদ খুব অবাক হলো। নায়ক বললেও কম বলা হবে একে। খুব সুদর্শন এক যুবক। বড় চুল রেখেছে। পাচ ফুট এগারো হিবে উচ্চতায়। গায়ের রং ফরসা। কেমন মেয়ে মেয়ে চেহারা। তার হাতে একটা স্বস্তিকা চিহ্ন।
জায়েদ আর অফিসারকে দেখে সোহেল বলে উঠলো, অফিসার সময় থাকতে ছেড়ে দিন। এখনো সময় আছে। নতুবা বিপদে পরবেন। আপনই জানেন না আমি কে!
জায়েদ বললো, আমরা জানি আপনি কে। আপনার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউওন্ড অ আমরা জানি আর এটাও জানি যে মাও এর ছেলে জিম আপনার বন্ধু ছিল।
সোহেল অবাক হয়ে জায়েদের দিকে তাকালো। বললো জানা সত্বেও আপনারা ধরে রেখেছেন আমাকে? মাথা খারাপ নাকি আপনাদের? আপনাদের ধারনাতেও নেই কি হতে পারে। আমাকে এরেস্ট করার সাথে সম্পর্কিত সবার জীবন তো ভোগে যাবেই পাশাপাশি তাদের ফ্যামিলি গুলোও হাওয়া হয়ে যাবে।
এইসব হুমকি ধামকি দিয়ে লাভ নেই। এখন বলো সুমিকে কারা হত্যা করেছে?
সাথে সাথে যেন চুপসে গেলো সোহেল। এতক্ষন ধরে তার লাফালাফি, বক্তৃতা সব যেনো মিলিয়ে গিয়েছে বাতাসে। সে বললো, কোন সুমি? আমি কোন সুমিকে চিনিনা।
জায়েদ বললো,কিন্তু সুমিদের বাসার বাইরে ফিট করা সিসি টিভি ক্যামেরা তো তা বলছে না। সেখানে স্পষ্ট তোমাকে আর সুমিকে দেখা গিয়েছে অনেক বার। এখন বলো দ্রুত কিভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং কেন?
খাবি খেতে খেতে সোহেল বললো আমি কিছু জানি না। আমি আমার আইনজীবীরর সাথে কথা বলা ছাড়া কোন কথা বলবো না।
জায়েদ হেসে ফেললো সোহেলের কথা শুনে। বললো, নায়ক ভাই আমার। তুমি বুঝতে পারছোনা। কি জটিল প্যাচে পড়ে গিয়েছো তুমি। সোজা কথায় যা জানো বলো নতুবা একশো একটা পদ্ধিতি জানা আছে আমার তোমার পেট থেকে কথা বের করার। আইনজীবি? আইন আমি তোমার গুহ্যদ্বার দিয়ে ঢুকাবো।
জায়েদ অফিসারকে বললো, আপনি ফাস্ট ট্রিটমেন্ট চালু করে দিন অফিসার। এ মহা ত্যাঁদড়। বিপ্লবী ভাব সাব দেখাচ্ছে।
প্রথম শক হিসেবে তাকে কারেন্টের মৃদু ঝটকা দেওয়া হলো। সাথে সাথে পাখি গাইতে শুরু করলো
জায়েদ জানতো এই সব বড় লোকের ছেলেরা কষ্ট সহ্য করতে পারে না। মুখে মুখে বীরত্ব দেখালেও এরা কাপুরুষ প্রজাতির।
হ্যা বলো পাখি। আমি শুনতে চাই।
সুমি কে আমি মারিনি। ওরা মেরে ফেলেছে।
তুমি যে মারোনি তা আমি ভালো মতোই জানি। মাছি মারার যোগ্যতাও তোমার নেই।কেন মেরে ফেলেছে?
সুমি ড্রাগ সিণ্ডিকেট এর সদস্যদের ব্যাপারে জেনে ফেলেছিলো। আর মাও এর ড্রাগ ট্রাফিকিং এর ব্যাপারে সে খুব বেশী জেনে ফেলেছিলো।
তাকে এই পথে কে নিয়ে এসেছিল? তুমি তাই না?
সোহেল অস্বীকার করতে পারলো না। নতুন এই ড্রাগ কি রকম কোথা থেকে আসে?
আর কিচ্ছু জানি না। আল্লাহর কসম আমি কিচ্ছু জানি না। জিম আমাকে এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
জিমের ব্যাপারে কি জানো তুমি? তার মৃত্যু সম্পর্ক এ? জায়েদ অন্ধকারে একটা ঢিল ছুড়লো। জিজ্ঞাসা করলো তাকেতো হত্যা করা হয়েছে তাই না?
সোহেল পুরোপুরিভাবে ভড়কে গেলো। সে বললো আপনি কিভাবে জানলেন? তারপর বললো, জিম খুব বেপরোয়া ধরনের ছেলে ছিল। নিত্য নতুন জিনিসের দিকে তার আগ্রহ ছিল মাত্রাতিরিক্ত। সেই এই সিন্থেটিক ড্রাগ প্রথম নিয়ে আসে বাংলাদেশে দুবাই থেকে। চিটাগাং বিশ্ববিদ্যালয়ে সে এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে এই ড্রাগ বিক্রি করা শুরু করে। বাবার মতোই ছিল সে। কিন্তু তার এই ড্রাগ ধরা পড়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের কাছে। তারা জিম এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যা তার বাবা মাও জানতো না। জিম তার এই ড্রাগের কবলে আনতো সেই সব ছাত্র ছাত্রীদের যাদের ক্রিয়েটিভিটি অনেক বেশি। দেখা যায় এই ড্রাগ ব্যবহারের কারনে তাদের সৃজনশীলতার মাত্রা বহুগুনে বেড়ে যায়। আর এতে প্রচুর নেশাও হয়। কম মূল্যে বাজারে ছাড়ার প্ল্যান ছিল জিমের এই ড্রাগস। কিন্তু ছয়মাস পড়েই হীতে বিপরীত ঘটে গেলো। দেখা গেলো যারা ডোজ রেগ্যুলার নিচ্ছে না তাদের মারাত্নক শারিরীক এবং মানসিক অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে। একে বারে বন্ধ করে দিলে পাগলের মতো আচরন করছে। হিস্টিরিয়াগ্রস্থ রুগি যেনো একেক জন। বিশ্ববিদ্যালয় এর মেডিক্যাল বিভাগ এক সময় এই ড্রাগসের ভয়াবহতা ধরতে পারলো। আর সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিলো। কিন্তু ততোদিনে অনেক ছাত্র ছাত্রীদের জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাদের অধিকাংশই ছিল সংস্কৃতি ধারার অথবা মেধাবী পরিবার। যারা বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে দেশের বিভিন্ন খাতে অবদান রেখে চলেছেন। তেই পরিবারেরা একত্র হয়ে জিমের মৃত্যু ঘটালো। তারই আনা ড্রাগ তাকেই খাইয়ে, গাড়ির ব্রেক ফেল করিয়ে জিমকে মেরে ফেলে তারা।
অনেক ক্ষন এক নাগাড়ে কথা বলে থামলো জায়েদ। পানির তৃষনায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। অফিসারকে পানি দিতে বললো জায়েদ। পানি খাওয়া শেষ হলে জিজ্ঞাসা করলো।
কিন্তু গাড়ির ব্রেকতো ঠিক ছিল।
তারাই দূর্হটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্রেক ঠিক করে দিয়ে ছিল গাড়ির। এটা ছিল পরিকল্পিত একটা হত্যা। তাদের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করার জন্য তারা জিমকে সড়ক দূর্হঅটনায় মৃত্যু নিশ্চিত করে।
শুধু জিমকেই মারলো কেন? তার বন্ধুরাতো এখনো চট্টগ্রাম মেডিক্যাল এ ভরতি আছে। তাদেরকে ছেড়ে দিলো কেন?
আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না। তারা কেন তাদের সেদিন মেরে ফেলেনি। নিশ্চই তাদের অন্য পরিকল্পনা আছে।
জায়েদ বুঝতে পারলো কি ভয়ংকর ঘটনা ঘটতে চলেছে। এক মাফিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে একত্র হয়ে গোটা সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞান পরিবার নেমেছিলো শিক্ষা দেওয়ার জন্য। তাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেওয়ার জন্য। আবার সেই একই চাল চেলেছে মাও তার ছেলেকে মেরে ফেলার জন্য। আগে এটা ঘটেছে শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন গোটা বাংলাদেশে ঘটতে চলেছে এই ব্যাপার।
তার মানে এক অদৃশ্য স্নায়ু যুদ্ধ চলছে পরিবারগুলোর মধ্যে। কিন্তু গোটা বাংলাতো আর জানে না। কারন কোন সংবাদপত্রে এই বিষয় নিয়ে লেখা লেখি হয়নি। কারো মাথাতেই আসেনি ব্যাপারটা। সবার মাথার উপর দিয়ে চলে গিয়েছে।
জায়েদ জিজ্ঞাসা করলো, পরিবারগুলো সম্পরকে কি জানো তুমি?
জিম বললো, তাদেরকে আপনারা কিছুই করতে পারবেন না। তারা স্রেফ অস্বীকার যাবে। কিছুই হয় নি এরকম ভাব দেখাবে। এটা এমন এক অদৃশ্য ঘটনা যার প্রমান আপনি পাবেন না কোন ভাবেই।
তবে তুমি জানলে কিভাবে? জিমের এই ড্রাগ কারটেলে আমিও ছিলাম। তবে শুধু সদস্য হিসেবে। সে যখন সেবন করতো তখন আমাকেও দিতো। আর কোন কাজের পর কি করবে বলতো।
সুমিকে তুমি জড়ালে কেনো?
সুমি খুবই স্মার্ট আর সুন্দরী মেয়ে ছিল। জিম তাকে ড্রাগ কারটেলে টেনে আনে কারন তার রূপ যৌবন সবাইকে আকৃষ্ট করতো। সুমির কারনে তার ড্রাগ বিক্রির হার বেড়ে গিয়েছিলো। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছেলে মেয়েই সুমিকে চিনতো। আমার সাথে ক্লাবে সুমিকে দেখে জিম তাকে এই কাজে ব্যবহার করতে চায় তাকে না জানিয়ে। একদিন সুমি বুঝে ফেলে যে তাকে ব্যবহার করে ড্রাগস বিক্রি করছে জিম। সে আমাদের গ্যাং ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু এই মাদকে সেও আসক্ত হয়ে পড়েছিলো। তাই আমার সাথে যোগাযোগ রেখেছিল ড্রাগস এর জন্য।
শুধু যোগাযোগ রাখলে ভালো হতো। কিন্তু সে ময়লা ঘাটতে শুরু করলো। সে জানতো না জিম মাও আসলে কে। না জেনেই সে এমন অনেক তথ্য আবিষ্কার করে ফেলে যে হতভম্ব হয়ে যায়। সেই তথ্য গুলো দিয়েছিলো পরিবারগুলোকে।
এতোক্ষনে পরিষকার হলো জায়েদের কাছে সুমি হত্যার রহস্য।
মূলত সোহেল হলো মিডল ম্যান। রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে তাই মধ্যস্থতাকারীর মতোই আচরন ছিল তার। তার বিরুদ্ধে শক্ত কোন প্রমান নেই বলে জায়েদের মন বিষিয়ে উঠলো। অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে সবাইকেই সে মারাত্নক ঘৃণা করে।
অনেক সময় চুপ থাকার পর সে বললো এতো জঘন্য কাজ তোমার সামনে ঘটে গেলো আর তুমি চুপ করে থাকলে? কিছুই করলে না! কেমন চপুরুষ তুমি? তোমার কি কোন বিবেক বোধ নেই?
কি করতে পারতাম আমি?একে জিম ছিল মাফিয়া পরিবারের ছেলে তার উপর সারঙ্ মাও তার বাবা। মাও পরিবারের ইতিহাস আমরা খুব ভালো জানি। খুন করা তাদের বা হাতের কাজ। এরা যা খুশি তাই করতে পারে।
তাই বলে এভাবে অন্যায় সহ্য করলে? আমিও কাকে কি বলছি? জায়েদ মনে মনে বললো। চোরকে উপদেশ দিচ্ছি।
ইন্টারোগেশন রুম থেকে বের হয়ে গেলো জায়েদ অফিসারকে নিয়ে।
অফিসারের রুমে গিয়ে সোফায় বসে চিন্তা করতে লাগলো। অফিসার রাশেদ অনেক ক্ষন ধরে উসখুস করছিলো। কিছু বলার জন্য কিন্তু জায়েদের চিন্তিত চেহারা দেখে কিছুই বলতে পারছিলো না। এক সময় বলে বসলো।
স্যার এতো দেখি রূপকথার গল্পের মতো ঘটনা ঘটে চলেছে। ড্রাগ এর ব্যবসা করতে গিয়ে খুন। তাকে ঢাকতে আরেকটা খুন। এইসব খুনোখুনিতে কিভাবে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনি যদি একটু খোলামেলা করে বলেন তবে খুব সুবিধা হয়।
হঠাতই জায়েদের মনে হলো আরে এই লোক তো আসলেই কিছু জানে না। তাকে জানানোই হয়নি। তাই সে অন্ধকারে হাতড়ে মরছে শুধু শুধু। রাশেদকে জায়েদ রেল লাইনের আতংক থেকে শুরু করে গোটা কাহিনীটা খুলে বললো। রাশেদ বললো
স্যার আপনি আমাকে আগে জানালে কিছু তথ্য আমিও দিতে পারতাম।
কিভাবে?
আসলে আমাদের এখানেও ওই ড্রাগ এডিক্টেড কিছু আসামী ছিল। তাদের আচরন বিশ্লেষন করে দেখা গিয়েছে তারা এক সময় পর এক দম বাচ্চা মানুষের মতো আচরন শুরু করে। পরিনত বয়সের কোন মানুষ যদি বাচ্চাদের মতো আচরন করে পাগলামি শুরু করে আর কিছুক্ষন পরপর চরিত্র বদল করে তবে কি রকম হয় এক বার ভেবে বলুন স্যার।
আর কি কি জানেন আপনি?
প্রথম দিকে খুব চিল্লাপাল্লা করে পরে ঠান্ডা মেরে যায়।
অফিসার আপনাকে একটা কাজ করতে হবে। সোহেল আহমেদকে এমন কোথাও আপনাকে কয়েক দিনের জন্য রাখতে হবে যেনো কেউ তাকে দেখাতো দূরের ব্যাপার তার কিছুই খুজে না পায়।
এ আর এমন কি কাজ স্যার। হাওয়া করে দিতে বলছেন অপরাধীকে?
আপনার উপরে কিন্তু অনেক চাপ আসতে পারে। যেমন জীবন নাশের হুমকি থেকে শুরু করে অনেক উতপাত।
পুলিশের চাকরীতো স্যার এমনি এমনি নেই নি। প্রতিদিনতো কবরে যাওওয়ার নিয়ত নিয়েই বাসা থেকে বের হই। রাতের বেলা যে বাসায় ফিরি তাই তো অনেক স্যার। সমস্যা নেই। আমি ছুটিতে চলে যাচ্ছি ওকে হাওয়া করে দিয়ে। আপনি যখন বলবেন আবার জয়েন করবো।
কেইসটার গুরুত্ব বুঝতে পারছেন বলে ধন্যবাদ।
তা আর বলতে স্যার। এই মাও বাহিনীর কার্যকলাপে এখানকার প্রত্যেক্টা থানা পুলিশ হত চকিত অবস্থায় আছে। কোন দিক দিয়ে যে এরা কি কি করে বেড়ায় তা ইবলিশেও জানে না বোধ হয়। আর আপনি পড়েছেন পালে গোদা সারং মাও এর পিছনে। আপনাকে সাহায্য করবো নাতো আর কাকে করবো বলেন।
অনেক ধন্যবাদ অফিসার। আপনাকে আমার মনে থাকবে।
অনেক রাতে জায়েদ অফিসে পৌছালো। সারা দিন অনেক ধকল গিয়েছে। দুই বার প্লেন জার্নি করে কেমন যেনো লাগছে। এর আগে এরকম দৌড়ের উপর ছিল না কখনো জায়েদ। এই কয়েকদিন অনেক দৌড় দৌড়ালো সে কিন্তু কেইসের সমাধান দূরে থাক শুধু তথ্যই পেয়েছে সে। আর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। যদি এর কোন তথ্য লিক হয়ে পত্রিকা অফিসের কোন জারনালিস্টের কাছে যায় তবেই কাজ সেরেছে। ঝাকে ঝাকে মৌমাছির মতো হামলে পড়বে গোটা মিডিয়া প্রশাসনের উপর। আর এর সুবিধা ভোগ করবে একমাত্র সারঙ মাও। বাকি পরিবার গুলো কিছুই করতে পারবে না। জিমের মৃত্যুর তদন্ততো আর তার কাছে পড়েনি। আর এই ঘটনার এস্পার অস্পার হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। জিমের কারনে কিছু মেধা হারিয়েছে সমাজ, তাই সমাজ প্রতিশোধ নিয়েছে জিমকে হত্যা করে।
এমন সময় টেবিলের সাদা টেলিফোন টা বেজে উঠলো কর্অকশ সুরে। ভ্রু কুচকে ট্রলিফোন্টার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন জায়েদ।
ও যে অফিসে তা কেউই জানে না একমাত্র গারড ভাই ছাড়া। কে ফোন করেছে এতো রাতে?
জায়েদ টেলিফোন ধরে বললো, জায়েদ বলছি, কে?
কিছুক্ষন নীরব থাকার পর একটা ভারী কন্ঠ ভেসে এলো অপর প্রান্ত থেকে। বললো প্লেন জার্নি কেমন হলো মিস্টার জায়েদ?
কোথায় যেনো শুনেছে শুনেছে বলে মনে হলো কন্ঠ স্বরটা।
সোহেল আহমেদ কোথায় জায়েদ কবির? আবার বলে উঠলো লোকটা।
কে, কে বলছেন আপনি?
অপাশ থেকে হাহা করে উঠে বললো আপনি কিন্তু সাপ নিয়ে খেলছেন মিস্টার জায়েদ। কেইসটা ছেড়ে দিন। শুধু শুধু কেন প্রানটা খোয়াবেন? জীবনের প্রতি কি মায়া নেই আপনার?
হঠাতই কন্ঠটা চিনতে পারলো এটা মাও এর কন্ঠস্বর। গা শিউড়ে উঠলো গতকাল সন্ধ্যায় মাও এর কথা চিন্তা করে। অই সাপ নিজে ফোন দিয়েছে। যাকে সে ধরতে চাচ্ছে সে নিজেই দেখি বাক্সে ঢুকতে চাচ্ছে।
মিস্টার মাও! কেমন আছেন আপনি? জানেন আপনার হায়াত বোধ হয় অনেক দিনের। কারন গত এক সপ্তাহ ধরে আপনার নামই জপে চলেছি আমি বার বার।
চিনে ফেলেছেন? হাহা। তার মানে আমার সম্পর্ক এ আপনি সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। আমার ক্ষমতাও জানেন নিশ্চয়ই।
তাতো জানি। ইদুর মারতে নেমেছি জানবো না সে ধেড়ে নাকি নেংটি? তা যতো ক্ষমতাই থাক আপনার নিজের ছেলেকেতো আর বাচাতে পারলেন না তাই না।
অপর পাশ নিরব রইলো অনেক ক্ষন। জায়েদ বুঝতে পারলো বেমক্কা দুই প্রান্তে দুই ঘুসি খেয়ে টাসকি খেয়ে গিয়েছেন মাও। একে তাকে ইদুর বলা হচ্ছে তার উপর তার ছেলেকে বাচাতা না পারার অক্ষমতা।
কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে মাও বললেন, আপনার মতো অনেক মানুষকেই দেখেছি। যারা সিংহ আর ইদুরে পার্হথক্য বোঝে না। আপনাকে বুদ্ধিমান ভেবেছিলাম এখন দেখছি আপনি একটা আহাম্মক।
আপনার কোন ঘটনাই আর অপ্রকাশিত নেই মিস্টার মাও। সব জানা হয়ে গিয়েছে। নিজের পুত্রের হত্যার প্রতিশোধ নিতে দেশের মেধা নিধন যজ্ঞে যে আপনি নেমেছেন তার জবাব খুব ভালো ভাবেই পাবেন। আপনার ছেলে ঠিক এই কাজ করেছিলো তাই তাকে নিকাশ করে দেওয়া হয়েছে। আপনিও আপনার ছেলের পথেই হাটছেন। মেধাশূন্য করার আপনার এই অপচেষ্টা খুব ভালো ভাবেই জব্দ করা হবে।
হা হা হা। আপনি একটা পাগল মিস্টার জায়েদ কবির। পুরো পুরি পাগল। পাগল না হলে কেউ এরকম কথা বলে না।
আমি আমার কাজ শুরু করে দিয়েছি এক মাস আগেই। জিমের মৃত্যুর তিন দিন পরেই এই কার্যক্রম চালু হয়ে গিয়েছে গোটা বাংলায়। আমার ছেলেকে মেরেছে যেসব পরিবার সেসব পরিবারের কোন ছেলে মেয়েদের আমি জীবিত আবিস্থায় মৃত বানিয়ে ছাড়বো।
আ এক অদ্ভুত ম্যানিয়াকের পাল্লায় পড়েছে বাংলাদেশ দেখা যাচ্ছে। আগে ছিল সায়েন্টিফিক ক্রিমিনাল এখন পুত্র শোকে সাইকো হয়ে গিয়েছে।
আপনি কি জানেন আপনার মতিভ্রম ঘটেছে? কি করেছেন আর কি করতে চলেছেন তার কোন হদিস নেই আপনার। আপনার সাম্রাজ্যর এবার পতন অনিবার্য। আপনি বাচতে চাইলে তল্পিতল্পা গুটিয়ে বাংলা ছাড়ুন।
দেখা যাবে কে কোথায় যায়! সাবধানে থাকবেন মিশটার জায়েদ।
টেলিফোন রেখে দিলো জায়েদ। শুধু শুধু এই ফাতরার সাথে কথা বলে আর কোন লাভ নেই। সে হুমকি দিবেই। এখোন ভাবার বিষয় কিভাবে এই ড্রাগ আমদানি বন্ধ করা যায়। মাও কে ধরা যে যাবে না তা ভালো করেই জানে জায়েদ। কোন কিছুর সাথেই তার সম্পৃক্ততা নেই আবার সবার উপরে ছড়ি সেই ঘুরাচ্ছে। প্রথম কাজ কমলাপুর রেল কতৃপক্ষকে সুতর্ক করা। যেনো যথাযথ ইন্সপেকশন না করে কোন মাল আপলোড করা হয় ট্রেনে। দ্বিতীয়ত এই ড্রাগ কারটেলে এর সাথে কারা কারা জড়িত তাদেরকে খুজে বের করা। যার জন্য নিষ্পাপ একটা মেয়েকে নিজের প্রাণ দিতে হয়েছে। সব জায়গায় দোজখ নেমে যাবে যদি এই ড্রাগ ট্রাফিকিং বন্ধ করা না হয়।
পরদিন সকালে কুরিয়ারে একটা ফাইল এসে হাজির অফিসে। ভৈরব থেকে পাঠিয়েছেন অফিসার। সেখান থেকে ড্রাগ সেম্পল বের করে ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট এর হেড ডক্টর রুস্তমের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হলো।
জায়েদ কেইসের রিপোর্ট দেওয়ার জন্য মান্নান স্যারের রুমে গেলো।
ঘটনার আদ্যোপান্ত শোনার পর বললেন এরকম উদ্ভট পাগল মাফিয়ার বিরুদ্ধে কি করে প্রমান আনবে যে মাও এই ড্রাগ ট্রাফিকিং এর মূলে রয়েছে? তাকে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে আজ থেকে নয়। তার সাগরেদ দের হয়তো ধরা যেতে পারে কিন্তু কিসের বিরুদ্ধে ধরবো? আর নিশ্চয়ই চ্যালা চামুন্ডাদের ধরলে পালের গোদা নিশ্চ্যই বসে থাকবে না। সে তার কল কাঠি নাড়িয়ে ঠিকিই তাদের বের করে আনবে। এক উপায় এই মাদক যেনো কেউ সেবন না করে। এর ভয়াবহতা সম্পরকে জনগনকে সতর্ক করা। এর এন্টিডোজ প্রস্তুত করা। রিহ্যাব সেন্টার গুলোতে এন্টিডোট পাঠানো। আর আরেকটা কাজ করা যায় কিন্তু তার জন্য অন্য প্রস্তুতির দরকার।
কি রকম স্যার?
আর্মি নামিয়ে মাও সাম্রাজ্যকে একেবারে গুড়িয়ে দেওয়া। আমরা সাধারন সরকারী চাকরী করি। সরকারের অনেক কে কিনে ফেলতে পারবে মাও। কিন্তু প্রধান মন্ত্রী আর তার নির্দেশে চলা কাউকে মাও কিনতে পারবে না। এমন পরিস্থিতিতে যদি মাঠে আর্মি নামে তবে মাও একা পেরে উঠবে না। ঘটনা যে ভাবে এগোচ্ছে তাতে আমাদের করার কিছুই থাকবে না। তুমি তোমার সাধ্যমত চেষ্টা করেছো কেইস সলভ করার। এক ম্যানিয়েকের জন্য আমি আমার এক সেরা এজেন্ট খোয়াতে চাই না। আমি আজি প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে তাকে সব জানিয়ে আসবো।
আপাতত তুমি এই কেইসের ডিটেইলস লিখে আমার কাছে জমা দাও। আমি দেখছি তারপর কি করা যায়।
জায়েদ বললো, কিন্তু স্যার আমি প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। এখন আমাকে এই কেইস থেকে সড়িয়ে দিলে আমি খুবই মর্মাহত হবো স্যার।
তোমাকে যেটা করতে বলেছি সেইটা করো
এতো কথা বলছো কেন? এখন যাও বলে ফাইলে মুখ গুজলেন।
হত বিহবল হয়ে জায়েদ কামড়া ছেড়ে বেড়িয়ে এলো। সে চিন্তা করতে থাকলো এও কি সম্ভব? খোদ পি আই বির হেড কে কিনে ফেলেছে মাও। এতোই তার শক্তি? এতো দিন ধরে জমে রাখা সমস্ত সম্মান এক নিমেষে মাটি হয়ে গেলো জায়েদের। মান্নান স্যারকে সে অন্য রকম ভেবেছিলো। যে দেশের জন্য দশের জন্য কাজ করেন। নিজের কথা না ভেবে অন্যের বিপদে ঝাপিয়ে পড়েন। সেই স্যার সামান্য কয়টা টাকার লোভে বিকিয়ে গেলেন। এমন নানান চিন্তা করতে করতে মন বিষিয়ে উঠলো তার ডিপার্টমেন্ট এর উপর। পাবলিক আসলে ঠিকই বলে। সব পুলিশ শালার ঘুষখোর।
নিজের অফিস কামড়ায় বসে সে কেইস রিপোর্ট এর ডিটেইলস লেখা শুরু করলো। কোন কিছুই বাদ দিলোনা। আগা গোড়া সমস্ত কথা লেখা শেষ করে সে তার রিজাইন লেটার লেখা শুরু করলো।
লেখা শেষে সে তার জুনিয়র এজেন্ট জিহান কে ডেকে বললো, জিহান দ্রুত এটা কম্পিউটারে টাইপ করে নিয়ে এসো।
জিহান হাতে নিয়ে দেখলো তার স্যারের রিজাইন লেটার। চোখে প্রশন নিয়ে তাকালো একবার ভাই এর দিকে।
জায়েদ শুধু বললো ঠিকি দেখছো জিহান। আমি হয়তো আজকের পর আর আসবো না অফিসে। সব কিছু দেখে শুনে রেখো। আর আরেকটা কথা এখোনি কাউকে বলতে যেয়ো না। সময় হলে এমনিতেই সবাই জানবে।
কেইস রিপোর্ট নিয়ে জায়েদ মান্নান স্যারের রুমে গিয়ে দেখলো কেউ নেই। সে তার সেক্রেটারির কাছে রিপোর্ট জমা দিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে গেলো।
এমন মন খারাপ জায়েদের আগে কখনো হয় নি। একবার হয়েছিল ছোটবেলায়। যখন তার মা মারা যায়। সেই বিষন্নতা, ক্লান্তি, আর বিষাদ সব ঘিরে ধরলো তাকে। একটা রিক্সা নিয়ে সে হাতির ঝিল চলে গেলো। রাতের হাতির ঝিল অনেক সুন্দর। সারি সারি বাতি এক অদ্ভূত মোহ মায়া নিয়ে আলো ছড়িয়ে দেয় রাস্তা পথিক সব কিছুর উপর। জায়েদ ভাবতে লাগলো মাও এর কাছে এভাবে হেরে যাবে বাংলাদেশ। তার ছোটবেলায় স্কুল মাঠে পাঠ করা শপথের কথা মনে পড়ে গেলো। কিভাবে রক্ষা করবে সে এই মেধা ধ্বংসকারীর হাত থেকে বাংলাদেশকে। যেখানে নিজের দলের মানুষ বিপরীতে চলে যাচ্ছে। শত শত চিন্তা ভাবনা করতে করতে সে এক সময় বিরক্ত হয়ে উঠলো। এমন সময় তার মোবাইল বাজতে শুরু করলো। প্রাইভেট নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। রিসিভ করার সাথে সাথে বলা হলো,
মিস্টার জায়েদ আপনি দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চলে আসুন। খোদ প্রধানমন্ত্রী আপনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আপনার বসও এখানে আছেন। আপনি শীঘ্রই চলে আসুন। বলে ফোন কেটে গেলো।
ব্যাপারটা কি হলো? ঘটনা কোন দিকে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না জায়েদ।
সে দ্রুত একটা উবারে যোগাযোগ করলো। উবারে করে যখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌছালো তখন রাত নয়টার মতো। দেখল গোল টেবিল বৈঠক বসেছে। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সেখানে আর্মি জেনারেল, পুলিশ প্রধান, ইন্টেলিজেন্স চিফ, এবং আরো কয়েক জন বসে আছেন। এক কোনে মান্নান স্যার দাঁড়িয়ে আছেন। কি বলবে প্রথমে কিছু ভেবে উঠতে পারলো না সে। ভিতরে ভিতরে সে ঘেমে গেলো।এতো উচু পর্যায়ের মানুষদের দেখে বুকের রক্ত হিম হয়ে এলো। তার দোউর ছিল মান্নান স্যার পর্যন্ত কিন্তু এক সাথে সবাইকে দেখে সে কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না।
মান্নান স্যার বললেন জায়েদ এসো। এঁদের সবাইকেই তো তুমি চিনো।
তটস্থ হয়ে সে দাঁড়িয়ে রইলো সবার সামনে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে তার।মান্নান স্যার বলা শুরু করলেন ম্যাডাম এই সেই ছেলে যার কথা আমি বলছিলাম। সেই মাও এর এই চক্রান্ত ধরতে পেরেছে।
জায়েদ সালাম দিবে না কি বলবে কিছু খুজে পেলো না।
ম্যাডাম বললেন, তুমিতো দেখি একটা বাচ্চা ছেলে। এই ছেলে এই কেইস এর সমাধান করে দিয়েছে? তুমিতো দেশের গর্ব, দেশের ভবিষ্যৎ। তোমার হাত ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তার কাংখিত লক্ষ্যের দিকে।
লজ্জায় লাল হয়ে গেলো জায়েদ। এরকম জয়ধ্বনি শুনে।
আর্মি জেনারেল বললেন ব্রাভো মাই বয়। তোমারতো আর্মিতে আসা উচিত ছিল।
এদিকে জায়েদ মনে মনে নিজেকে অভিসম্পাত দিতে থাকলো। কি সব উলটা প্লাটা ভেবে সে বসে ছিল মান্নান স্যার সম্পরকে। নিজেকে কষে দুই ঘা দিতে ইচ্ছে করলো জায়েদের।
মান্নান স্যার বললেন তুমি কি অপারেশন মাও এ যোগ দিতে চাও? নিশ্চয়ই বাকিটা দেখতে চাও কি হয় তারপর!
জায়েদ বললো অবশ্যই স্যার। আমি এই অপারেশনে থাকতে চাই।
প্রধান মন্ত্রী বললেন, তুমি অনেক আগেই আমাদের সাথে এই অপারশনে যোগ দিয়ে ফেলেছো। তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো বসো। আমার ছেলের থেকেও তুমি বয়সে ছোট তাই তুমি করে বলছি। আর্মি জেনারেল বললেন তাহলে ম্যাডাম বিসমিল্লাহ্ বলে শুরু করি।
জেনারেল তার হাতে থাকা একটা যন্ত্রে বললেন স্টার্ট দ্য মিশন। ঘরের পূর্ব দিকের দেয়ালে থাকা একটা স্ক্রিনে ফুটে উঠলো ডিজিটাল ছবি। লাইভ একশন দেখানো হচ্ছে। আর্মি আর পুলিশ বাহিনীর থেকে বেছে বেছে এক প্যারা কমান্ডো বাহিনী গঠন করা হয়েছে অপারেশন মাও এর জন্য। তাদেরকেই দেখা যাচ্ছে একশানে। গুলশানের একটা আলিশান বাড়িতে রেইড হচ্ছে একটা স্ক্রিনে দেখা গেলো। অন্য আরেকটা স্ক্রিনে দেখা গেলো পাহাড়তলির একটা বাড়িতে রেইড দিচ্ছে পুলিশ। জায়েদ বুঝতে পারলো মাও এর সব বাড়িগুলোতে কমান্ডোরা রেইড দিয়েছে একসাথে। কিন্তু মাওকে পাওয়া গেলো না কোথাও। ঘন্টাব্যাপি এই রেইড আর ধরপাকড়ে অনেক আমলা আর সচিব ধরা পড়লো যারা ড্রাগ ট্রাফিকিং এর সাথে যুক্ত। প্রচুর পরিমানে মাদক জাতীয় দ্রব্য ধরা পড়লো তাদের হাতে। কয়েকশো কোটি টাকার এই মাদক যদি সমস্ত বাংলায় ডিস্ট্রিবিউট হতো তবে বাংলাদেশ নেশায় ভেসে যেতো।
অপারেশন শেষ শুধু মাও ছাড়া বাদ বাকিরা ধরা পড়েছে। জায়েদ তখন চিন্তা করে চলেছে কি ব্যাপার মাও কোথায় গেলো।
সে মান্নান স্যার কে জিজ্ঞাসা করলো, স্যার এয়ারপোর্ট, আর বর্ডার গুলোতে কি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
হ্যা তা অনেক আগেই নেওয়া হয়েছে।
মাও আর তার দুই মেয়ে কে কি কোথাও দেখা গিয়েছে এই কয়েক দিনে?
কেনো মাও কোথায় থাকতে পারে তার কোন ধারনা দিতে পারো নাকি তুমি?
স্যার মাও এর অনেক দূরবলতা আছে তার মধ্যে একটা হলো সিম্বোলজি। সে স্বস্তিকা চিহ্ন কে নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের আবেগ দেখিয়েছে অনেক জায়গায়। আমার মনে হয় স্যার আপনি স্বস্তিকা রিলেটেড রিনোওন সব জায়গা গুলোতে একবার খোজ করে দেখতে পারেন। আমি ঠিক শিওর না তবে পেলেও পেয়ে যেতে পারেন আপনি মাওকে।
২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৫১
সজীব ঘোষ শুভ্র বলেছেন: ধন্যবাদ বিজয়
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৫০
বিজন রয় বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম।
শুভকামনা।