নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

০১৭৩৭৯২২৪২৯

সাখাওয়াত রহমান

সাখাওয়াত রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিপদে, অসুখ, ক্ষতিকর কিছু হলে ধৈর্য ধারণ করা ও সবর করার ফযীলত

১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৭:৩৫


মহান আল্লাহ বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং ধৈর্য ধারনের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কর” (সূরা আল ইমরানঃ ২০০ আয়াত)।

“আমি অবশ্যই তোমাদেরকে ভয় ক্ষুধা এবং তোমাদের জান, মাল ও শস্যের ক্ষতি সাধন করে পরীক্ষা করব।(এ পরীক্ষায়) ধৈর্যশীলদেরকে সুখবর দাও”(সূরা বাকারাঃ ১৫৫ আয়াত)।

“ধৈর্যশীলদেরকে অগণিত পুরস্কার পূর্ণভাবে দেয়া হবে” (সূরা যুমারঃ ১০আয়াত)।

“যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে দেয়, সেটা দৃঢ় মনোভাবেরই অন্তর্ভুক্ত” (সূরা শূরাঃ৪৩)।

“ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর। আল্লাহ নিশ্চয় ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন” (সূরা বাকারাঃ ১৫৩ আয়াত)।
“আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব, যাতে তোমাদের মধ্যকার মুজাহিদ ও ধৈর্যশীলদেরকে চিনে নিতে পারি” (সূরা মুহাম্মাদঃ ৩১ আয়াত)।

আবু মালেক আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন পবিত্রতা ঈমানে অর্ধেক। আলহামদু লিল্লাহ যমীনকে পূর্ণ করে দেয় এবং সুবহানাল্লাহ ও আলহামদু লিল্লাহ আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানের সব কিছুকে ভরে দেয়। নামায হচ্ছে আলোকবর্তিকা এরং সদকা(ঈমানের) হচ্ছে দলিল স্বরুপ, সবর বা ধৈর্য হচ্ছে জ্যোতি এবং কুরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে একটি দলীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি সকালে উঠে নিজেকে বিক্রয় করে এবং তাতে সে নিজেকে মুক্ত করে অথবা ধ্বংস করে।(মুসলিম)

আবু সাঈদ খুদরী(রা) থেকে বর্ণিত। আনসারদের কতিপয় লোক রাসূল(সাঃ)-র নিকট সাহায্য চাইল। তিনি তাদের দান করলেন। আবার তারা চাইল। তিনি আবার তাদের দান করলেন, এমনকি তাঁর নিকট যা কিছু ছিল সবই শেষ হয়ে গেল। তাঁর হাতের সব কিছু দান করার পর তিনি তাদের বললেনঃ যা মাল আসে তা আমি তোমাদেরকে না দিয়ে জমা করে রাখি না। যে ব্যক্তি পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন । যে ব্যক্তি কারও মুখাপেক্ষী হতে চায় না, আল্লাহ তাকে স্বাবলম্বী করে দেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করতে চায়, আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দারন করেন।ধের্যর চেয়ে উত্তম ও প্রশস্ত আর কোন কিছু কাউকে দেয়া হয়নি।(বুখারী ও মুসলিম)

সুহাইব ইবনে সিনান (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেনঃ মুমিনের সকল বিষয় আশ্চর্যজনক। তার সমস্ত কাজই কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্যের ব্যাপার এরুপ নয়। তার জন্য আনন্দের কোন কিছু হলে সে আল্লাহর শোকর করে। তাতে তার মঙ্গল হয়। আর ক্ষতিকর কিছু হলে সে ধৈর্য ধারণ করে ।এও তার জন্য কল্যাণকর হয়।(মুসলিম)

আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূল(সা.) বলেছেনঃ আল্লাহ বলেন, আমার মুমিন বান্দার জন্য আমার নিকট জান্নাত ছাড়া আর কোন পুরস্কার নেই, যখন আমি দুনিয়া থেকে প্রিয়জনকে নিয়ে যাই আর সে সওয়াবের আশায় সবর করে।(বুখারী)

আবু হুরায়রা(রা) থেকে বর্ণিত। রাসূল(সা.) বললেনঃ ওয ব্যক্তি (মল্লযুদ্ধে) অন্যকে ধরাশয়ী করে সে শক্তিশালী নয়, বরং শক্তিশালী হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংযত রাখে।(বুখারী ও মুসলিম)

মুআয ইবনে আনাস(রা) থেকে বর্ণিত।রাসূল(সা.) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ কার্যকর করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা দমিয়ে রাখে, তাকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন সব মানুষের উপর মর্যাদা দিয়ে ডাকবেন, এমনকি তাকে তার ইচ্ছামত বড় বড় চোখবিশিষ্ট হূরদের মধ্য থেকে বেছে নেয়ার স্বধীনতা দিবেন।
ইমাম আবু দাঊদ ও ইমাম তিরমিযী এ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন এবং তিরমিযী একে হাসান হাদীস হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

অাবু হুরায়রা(রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূল(সা.)-কে বলল, আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন, রাগ করো না। সে ব্যক্তি বারবার উক্ত কথা বলতে থাকল, আর (সা.)ও বললেনঃ রাগ করো না।(বুখারী)

আবু হুরায়রা(রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বালেন, রাসূল(সা.) বলেছেনঃ মুমিন নর-নারীর জান, মাল ও সন্তানের উপর বিপদ-আপদ আসতেই থাকে। অবশেষ আল্লাহর সাথে সে সাক্ষাত করে এমন আবস্থায়, যে তার আর কোন গুনাহ থাকে না।
ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং একে হাসান ও সহীহ হাদীস রুপে আখ্যায়িত করেছেন।

সবর বা ধৈর্য ধারণ করা আকীদার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। জীবনে বিপদ-মুসিবত নেমে আসলে অস্থিরতা প্রকাশ করা যাবে না। বরং ধৈর্য ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি আল্লাহর নিকট প্রতিদান পাওয়ার আশা করতে হবে। ইমাম আহমদ রহঃ বলেন, “আল্লাহ তায়ালা কুরআনে নব্বই স্থানে সবর সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।”
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
الصبر ضياء
“সবর হল জ্যোতি।” (মুসনাদ আহমদ ও মুসলিম)
উমর রা. বলেন,
“সবরকে আমরা আমাদের জীবন-জীবিকার সর্বোত্তম মাধ্যম হিসেবে পেয়েছি।” (বুখারী)
আলী রা. বলেন, “ঈমানের ক্ষেত্রে সবরের উদাহরণ হল দেহের মধ্যে মাথার মত।” এরপর আওয়াজ উঁচু করে বললেন, “যার ধৈর্য নাই তার ঈমান নাই।”
আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَا أَعْطَى اللَّهُ أَحَدًا مِنْ عَطَاءٍ أَوْسَعَ مِنَ الصَّبْرِ
“আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যের চেয়ে উৎকৃষ্ট এবং ব্যাপকতর দান কাউকে দেন নি।” (সুনান আবু দাঊদ, অনুচ্ছেদ: নিষ্কলুষ থাকা। সহীহ)
সবরের প্রকারভেদ: সবর তিন প্রকার:
১) আল্লাহর আদেশের উপর সবর করা।
২) আল্লাহর নিষেধের উপর সবর করা।
৩) বিপদাপদে সবর করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَمَنْ يُؤْمِنْ بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُ
“আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন বিপদ আসে না। আর যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে তিনি তাঁর অন্তরকে সঠিক পথের সন্ধান দেন।” [সূরা তাগাবুনঃ ১১]
আলকামা বলেন, “আল্লাহ তায়ালা ‘যার অন্তরকে সঠিক পথের সন্ধান দেন’ সে হল ঐ ব্যক্তি যে বিপদে পড়লে বিশ্বাস করে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। ফলে বিপদে পড়েও সে খুশি থাকে এবং সহজভাবে তাকে গ্রহণ করে।”
অন্য মুফাসসিরগণ উক্ত আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, “যে ব্যক্তি বিপদে পড়লে বিশ্বাস রাখে যে এটা আল্লাহর ফায়সালা মোতাবেক এসেছে। ফলে সে সবর করার পাশাপাশি পরকালে এর প্রতিদান পাওয়ার আশা রাখে এবং আল্লাহর ফয়সালার নিকট আত্মসমর্পণ করে আল্লাহ তায়ালা তার অন্তরকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন, আর দুনিয়ার যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তার বিনিময়ে তিনি তার অন্তরে হেদায়াত এবং সত্যিকার মজবুত একীন দান করেন। যা নিয়েছেন তার বিনিময় দান করবেন।”

সাঈদ বিন জুবাইর রা. বলেন, “যে ব্যক্তি ঈমান আনে আল্লাহ তার অন্তরকে হেদায়াত দেন।” এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, অর্থাৎ সে কোন ক্ষয়-ক্ষতি ও বিপদের সম্মুখীন হলে বলে ‘ইন্নাল্লিাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেঊন’ অর্থাৎ আমরা আল্লাহর জন্যই আর তাঁর নিকটই ফিরে যাব। [সূরা বাকারাঃ ১৫৬]
উক্ত আয়াতে প্রমাণিত হয় যে, আমল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। আরও প্রমাণিত হয় যে, ধৈর্য ধরলে অন্তরের হেদায়াত অর্জিত হয়।

জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধৈর্যের প্রয়োজন:
প্রতিটি পদক্ষেপে মুমিনের ধৈর্যের প্রয়োজন। আল্লাহর নির্দেশের সামনে ধৈর্যের প্রয়োজন। আল্লাহর পথে দাওয়াতের ক্ষেত্রে ধৈর্যের প্রয়োজন। কারণ, এ পথে নামলে নানা ধরণের কষ্ট ও বিপদের মুখোমুখি হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ… وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللَّهِ
“তোমার প্রভুর পথে আহবান কর হেকমত এবং ভাল কথার মাধ্যমে। আর সর্বোত্তম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। তোমার প্রভু তো সব চেয়ে বেশি জানেন, কে তাঁর পথ থেকে বিপথে গেছে আর তিনিই সব চেয়ে বেশি জানেন কারা সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন।…আর ধৈর্য ধর। ধৈর্য ধর কেবল আল্লাহর উপর।” [সূরা নাহল: ১২৫-১২৭]
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে গেলেও চরম ধৈর্যের পরিচয় দেয়া প্রয়োজন। কারণ, এ পথে মানুষের পক্ষ থেকে নান ধরণের যাতনার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন আল্লাহ তায়ালা লোকমান সম্পর্কে বলেন, (তিনি তার সন্তানকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন):
يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
“হে বৎস, নামায প্রতিষ্ঠা কর, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ কর। আর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্য ধারণ কর। বিপদে ধৈর্য ধরণ করা তো বিশাল সংকল্পের ব্যাপার।” [সূরা লোকমান: ১৭]

মুমিনের ধৈর্যের প্রয়োজন জীবনের নানান বিপদ-মুসিবত, কষ্ট ও জটিলতার সামনে। সে বিশ্বাস করে যত সংকটই আসুক না কেন সব আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। ফলে সে তা হালকা ভাবে মেনে নেয়। বিপদে পড়েও খুশি থাকে। এ ক্ষেত্রে ক্ষোভ, হতাশা ও অস্থিরতা প্রকাশ করে না। নিজের ভাষা ও আচরণকে সংযত রাখে। কারণ, সে আল্লাহর প্রতি গভীরভাবে বিশ্বাসী। সে তকদীরকে বিশ্বাস করে। তকদীরকে বিশ্বাস করা ঈমানের ছয়টি রোকনের একটি।
তাকীরের উপর ঈমান রাখলে তার অনেক সুফল পাওয়া যায়। তন্মধ্যে একটি হল, বিপদে ধৈর্য ধারণ। সুতরাং কোন ব্যক্তি বিপদে সবর না করলে তার অর্থ হল, তার কাছে ঈমানের এই গুরুত্বপূর্ণ খুঁটিটি অনুপস্থিত। অথবা থাকলেও তা খুব নড়বড়ে। ফলে সে বিপদ মূহুর্তে রাগে-ক্ষোভে ধৈর্যহীন হয়ে পড়ে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খবর দিয়েছেন যে, এটা এমন এক কুফুরী মূলক কাজ যা আকীদার মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করে।

বিপদ-আপদের মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মোচন হয়:
আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে বিভিন্ন বালা-মুসিবত দেন এক মহান উদ্দেশ্যে। তা হল এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দার গুনাহ মোচন করে থাকেন। যেমন আনাস রা. বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
إِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الْخَيْرَ عَجَّلَ لَهُ الْعُقُوبَةَ فِي الدُّنْيَا وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الشَّرَّ أَمْسَكَ عَنْهُ بِذَنْبِهِ حَتَّى يُوَافِيَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“আল্লাহ যখন কোন বান্দার কল্যাণ চান তখন দুনিয়াতেই তাকে শাস্তি দেন। কিন্তু বান্দার অকল্যাণ চাইলে তিনি তার গুনাহের শাস্তি থেকে বিরত রেখে কিয়ামতের দিন তার যথার্থ প্রাপ্য দেন।”

ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন, “বিপদ-মুসিবত হল নেয়ামত। কারণ এতে গুনাহ মাফ হয়। বিপদে ধৈর্য ধারণ করলে তার প্রতিদান পাওয়া যায়। বিপদে পড়লে আল্লাহর কাছে আরও বেশি রোনাজারি করতে হয়। তার নিকট আরও বেশি ধর্না দিতে হয়। আল্লাহর নিকট নিজের অভাব ও অসাহয়ত্তের কথা তুলে ধরার প্রয়োজন হয়। সৃষ্টি জীব থেকে বিমুখ হয়ে এক আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হয়।…বিপদের মধ্যে এ রকম অনেক বড় বড় কল্যাণ নিহিত রয়েছে।”
বিপদে পড়লে যদি গুনাহ মোচন হয়, পাপরাশী ঝরে যায় তবে এটা তো বিশাল এক নেয়ামত। সাধারণভাবে বালা-মসিবত আল্লাহর রহমত ও নেয়ামত লাভের মাধ্যম। তবে কোন ব্যক্তি যদি এ বিপদের কারণে এর থেকে আগের থেকে আরও বড় গুনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ে তবে তা দ্বীনের ক্ষেত্রে তার জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, কিছু মানুষ আছে যারা দারিদ্রতায় পড়লে বা অসুস্থ হলে তাদের মধ্যে মুনাফেকি, ধৈর্য হীনতা, মনোরোগ, স্পষ্ট কুফুরী ইত্যাদি নানান সমস্যা সৃষ্টি হয়। এমনকি অনেকে কিছু ফরয কাজ ছেড়ে দেয়। অনেকে বিভিন্ন হারাম কাজে লিপ্ত হয়। ফলে দ্বীনের ক্ষেত্রে তার বড় ক্ষতি হয়ে যায়। সুতরাং এ রকম ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিপদ না হওয়াই কল্যাণকর। মুসীবতের কারণে নয় বরং মুসীবতে পড়ে তার মধ্যে যে সমস্যা সৃষ্টি তার কারণে বিপদ না আসাই তার জন্য কল্যাণকর।
পক্ষান্তরে বিপদ-মুসীবত যদি কোন ব্যক্তির মধ্যে ধৈর্য ও আনুগত্য সৃষ্টি করে তবে এই মুসীবত তার জন্য দ্বীনের ক্ষেত্রে বিশাল নেয়ামতে পরিণত হয়….।”
বিপদ-আপদ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বান্দার ধৈর্যের পরীক্ষা নেন:
বিপদ দিয়ে আল্লাহ পরীক্ষা করেন কে ধৈর্যের পরিচয় দেয় এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকে পক্ষান্তরে কে ধৈর্য হীনতার পরিচয় দেয় ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
إِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلَاءِ وَإِنَّ اللَّهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلَاهُمْ فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ
“বিপদ যত কঠিন হয় পুরস্কারও তত বড় হয়। আল্লাহ কোন জাতিকে ভালবাসলে তাদেরকে পরীক্ষা করেন। সুতরাং যে তাতে সন্তুষ্ট থাকে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান আর যে তাতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান।”
অত্র হাদীসে আমাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় দিক রয়েছে। যেমন:
১) বান্দা যেমন আমল করবে তেমনই প্রতিদান পাবে। “যেমন কর্ম তেমন ফল।”
২) এখানে আল্লাহর একটি গুনের পরিচয় পাওয়া যায়। তা হল ‘সন্তুষ্ট হওয়া’। আল্লাহ তায়ালার অন্যান্য গুনের মতই এটি একটি গুন। অন্য সব গুনের মতই এটিও আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য হবে যেমনটি তার জন্য উপযুক্ত হয়।
৩) অত্র হাদীসে জানা গেল যে, আল্লাহ তায়ালা এক বিশাল উদ্দেশ্যে বান্দা উপর বিপদ-মসিবত দিয়ে থাকেন। তা হল তিনি এর মাধ্যমে তার প্রিয়পাত্রদেরকে পরীক্ষা করেন।
৪) এখানে তকদীরের প্রমাণ পাওয়া যায়।
৫) মানব জীবনে যত বিপদাপদই আসুক না কেন সব আসে আল্লাহর তকদীর তথা পূর্ব নির্ধারিত ফয়সালা অনুযায়ী।
৬) এখান থেকে শিক্ষা পাওয়া যায় যে, বিপদ নেমে আসলে ধৈর্যের সাথে তা মোকাবেলা করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি মূহুর্তে প্রতিটি বিপদের মুখে আল্লাহর নিকটই ধর্না দিতে হবে এবং তার উপরই ভরসা রেখে পথ চলতে হবে।
ধৈর্যের পরিণতি প্রশংসনীয়:
জীবনের সকল কষ্ট ও বিপদাপদে আল্লাহ তায়ালা নামায ও সবরের মাধ্যমে তাঁর নিকট সাহায্য চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ, এতেই মানুষের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। ধৈর্যের পরিণতি প্রশংসনীয়। আল্লাহ তায়ালা খবর দিয়েছেন যে, তিনি ধৈর্যশীলদের সাথেই থাকেন। অর্থাৎ তাদেরকে তিনি তাদের সাহায্য করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা নামায ও সবরের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য অনুসন্ধান কর। নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সাথে থাকেন।” [সূরা বাকরা: ১৫৩]
য়া বানি য়্যাযহাবূ ফাতাহাস্সাসূ মিন য়ূসুফা ওয়া আখীহি ওয়া লা- তাইআসূ মির রাওহিল্লা-হি, ইন্নাহূ লা য়ায়আসু মির রাউহিল্লা-হি ইল্লাল কাউমিল কা-ফিরূন। সুরা ইউসুফ।

অনুবাদ : হে আমার সন্তানরা, তোমরা ইউসুফ এবং তাঁর ভাইয়ের সন্ধান করো। তোমরা কখনো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহর রহমত থেকে কেবল কাফেররাই নিরাশ হয়ে থাকে।*
তাফসির : *
হজরত ইয়াকুব (আ.) আল্লাহর নবী ছিলেন। তিনি বিশেষ মর্যাদার কারণে বিশ্বাস করতেন, ইউসুফ কোথাও না কোথাও আছে। তার মৃত্যু হয়নি। হারানো সন্তান বা আপনজনের ক্ষেত্রে যে কেউ এমন ধারণা বা বিশ্বাস করতেই পারেন। কিন্তু ইয়াকুব (আ.)-এর বিশ্বাসটি ছিল স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের এবং তা কেবল নবী হওয়ার কারণেই। অন্যদিকে বিনয়ামিন আটক অবস্থায় মিসরে আটক থাকার বিষয়টি তো নিশ্চিতই জানতেন। ফলে তিনি সন্তানদের নির্দেশ করলেন, তোমরা গিয়ে ইউসুফ এবং বিনয়ামিনের সন্ধান করো। তালাশ করলে তোমরা তাদের সন্ধান পাবে। আল্লাহর রহমত অফুরন্ত। তাঁর রহমতের ক্ষেত্রে নিরাশ হওয়া মুসলমানের কাজ নয়। আল্লাহর রহমতে আশা করি তাদের পাবেই। দীর্ঘকাল ইয়াকুব (আ.) ইউসুফের সন্ধানে সন্তানদের কোনো নির্দেশ না করে হঠাৎ তিনি এই নির্দেশ কেন দিলেন? ইউসুফকে জড়িয়ে ভাইদের ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পরপরই দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই নির্দেশ দান করলে তখনই না সবচেয়ে বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ ছিল তাঁকে খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে। তিনি তো তা করেননি। এর কারণ হিসেবে বিভিন্ন তাফসিরের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, বিনয়ামিন মিসরে আটক থাকার বিষয়টি ইয়াকুব (আ.) জানলেও ইউসুফের বিষয়টি একদম জানতেন না। তাই মিসরে গিয়ে ইউসুফকে খোঁজ করার বাহ্যিক কোনো কারণ ছিল না। এর পরও এই নির্দেশ দানের প্রকৃত কারণ ছিল, মিসরের আজিজের যে ধরনের গুণাবলি তিনি সন্তানদের কাছ থেকে শুনেছিলেন, তাতে ইয়াকুব (আ.) মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে পড়েছিলেন, এমন গুণাবলিসম্পন্ন মানুষটিই হয়তো আমার সন্তান ইউসুফ! আল্লাহর কুদরত সবার পক্ষে বোঝা মুশকিল। ইয়াকুব (আ.)-এর এই বিশ্বাসই শেষতক বাস্তব হয়ে দেখা দেয়।

মাসআলা : ০১. ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেছেন, ইয়াকুব (আ.)-এর ঘটনা থেকে প্রমাণ হয়, জান-মাল ও সন্তান-সন্তুতির ব্যাপারে কোনো বিপদ বা কষ্ট দেখা দিলে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ওয়াজিব হলো ধৈর্য ধারণ করার মাধ্যমে আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকা। সেই সঙ্গে তা কাটিয়ে উঠতে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার পাশাপাশি সম্ভব সব রকম চেষ্টা করা। এসব ক্ষেত্রে ইয়াকুব (আ.) ও অন্য নবী-রাসুলদের তরিকা অনুসরণ করা উচিত।

আবু হুরাইরা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, 'যে ব্যক্তি নিজের বিপদ মানুষের কাছে বলে বেড়ায়, (বাহ্যিকভাবে মনে হলেও) মূলত তা সবরের অন্তর্ভুক্ত হয় না'।

হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাযি. এর ঘটনা
হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাযি.। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী। খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। হাঁটা-চলা করতে পারেন না। এমনকি বসতেও পারেন না। নামায আদায় করতেন শুয়ে শুয়ে। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বৎসর এ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। অত্যন্ত কষ্ট স্বীকার করেছেন। সবর করেছেন। মাওলায়ে পাকের ফায়সালার উপর রাজি থেকেছেন। এভাবে অসুস্থ অবস্থায় যখন তিনি মৃত্যুর কাছাকাছি, মূমুর্ষু অবস্থায়। তখন দেখা যেত তিনি শুয়ে শুয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে হাসতেন। পরিবারের লোকজন দীর্ঘ ৩০ বৎসরের রোগে-শোকে আক্রান্ত মৃত্যুপথ যাত্রী এ সাহাবীকে দেখে আশ্চর্য হলেন। ব্যাপার কী? তিনি কেন হাসেন?
পরিবারের কেউ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুস্থ অবস্থায় আমি আমল করে ঐ মর্যাদা লাভ করতে পারিনি যা লাভ করেছি এ অসুস্থ অবস্থায় সবর করে। আল্লাহ তাআলা আমাকে সে মর্যাদা দেখিয়ে দিয়েছেন।
তারা বললেন, কীভাবে? তিনি বললেন, তোমরা তো উপরের দিকে তাকালে ঘরের ছাদ দেখ। আর আমি যখন উপরের দিকে তাকাই তখন সপ্তম আসমানের উপর আল্লাহ তাআলার আরশ পর্যন্ত দেখতে পাই। আমি ঊর্ধ্বজগতের সবকিছু দেখছি। জান্নাতের নেয়ামতসমূহ দেখছি আর শুয়ে শুয়ে হাসছি।
অসুস্থতাও আল্লাহ পাকের নেয়ামত
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, উত্তম সবরের কারণে আল্লাহ তায়ালা ইয়াকুব (আ.)-কে শহিদের সওয়াব দান করেছেন। এ উম্মতের মধ্যেও যারা বিপদাপদে সবর করবে, তারাও তেমনি প্রতিদান পাবে। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, মানুষ যত ঢোক গিলে, এর মধ্যে দুটি ঢোকই হলো আল্লাহর দরবারে সবচেয়ে প্রিয়। তাহলো-
০১. বিপদে সবর করা এবং ০২. ক্রোধ সংবরণ করা।
তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন অবলম্বনে হাসানুল কাদির

আল্লাহ্‌ বলেছেন, “সবর ও নামাজ সহকারে সাহায্য চাও” – সুরা বাকারা ৪৫

বিপদে শোকে বা রোগগ্রস্ত অবস্থায় আল্লাহ্‌কে স্মরণ করে তাঁর আনুগত্যের
শপথ করা উচিত আমাদের। আর নামাজের মাধ্যমে ধৈর্য সহকারে আল্লাহ্‌র কাছে
সাহায্য চাওয়া উচিত। এতে করে আল্লাহ্‌ আমাদের কষ্ট আর বিপদকে কাটিয়ে দিবে
আর বিনিময়ে আত্মার এক নির্মল প্রশান্তি আমাদের দান করবেন।

সবরের ব্যাপারে একটা দ্বিধা আমাদের সবার মধ্যেই কাজ করে। তা হলো সবরের
পদ্ধতি কি হবে তা নিয়ে। শাব্দিক ভাবে সবর মানে “বাধা দেয়া” বা “বিরত রাখা”।
অর্থাৎ বিপদে নিজেকে হতাশ হতে বাধা প্রদান করা এবং বিপদ থেকে উত্তরণের আশা
মনে রেখে আল্লাহ্‌র সাহায্য প্রার্থনা করা।
ইমাম ইবনে কাসীর তাঁর তাফসীরে
সুরা বাকারার ৪৫ নং আয়াতের তাফসীরে বলেছেন, “রোযা রাখা ও এক প্রকারের সবর”।
তিনি আরো বলেন,
রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “রোযা হলো অর্ধেক সবর”। হযরত
উমার (রা) বলেন, “সবর দুই প্রকার। ১। বিপদের সময় সবর ২। পাপের কাজ হতে বিরত
থাকার ব্যাপারে সবর। দ্বিতীয় প্রকারের সবর প্রথম প্রকারের সবর থেকে উত্তম”
– ইবনে কাসীর

সাইদ ইবনে যুবাইর (রাহ) সবরের খুব সুন্দর একটা সংজ্ঞা দিয়েছেন, তিনি
বলেন, “প্রত্যেক জিনিস আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে হয়ে থাকে মানুষের এটা স্বীকার
করা, পুণ্য চাওয়া এবং বিপদের প্রতিদানের ভাণ্ডার আল্লাহ্‌র নিকট রয়েছে, এই
কথা মনে করার নাম সবর” – ইবনে কাসীর

আল্লাহ বলেন, وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوفْ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الأَمَوَالِ وَالأنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ অর্থাৎ এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবর তথা ধৈর্যধারনকারীদের।
الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُواْ إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ অর্থাৎ যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো।

সূত্রঃ http://www.islamhaq.com [পূর্বে প্রকাশিত]
http://www.islamicambit.com/
http://www.quraneralo.com
http://www.kalerkantho.com
http://www.womenexpress.net/
http://www.jagonews24.com/

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.