নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সহজ মানুষ। পড়া এবং জানা আমার নেশা।[email protected]

মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন

সহজে জেতার আনন্দ কোথায়? বাধা যত বিশাল, বিজয়ের আনন্দও ততোই বাঁধভাঙ্গা!

মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডাইয়ার কুম টু মৈনট

০৮ ই মে, ২০২১ রাত ১:১৪


লোকমুখে যখন থেকে শুনতে শুরু করি মিনি কক্সবাজার খ্যাত অপরূপ মৈনটের সৌন্দর্যের কথা তখন থেকেই মৈনটের প্রতি গভীর ভালবাসা আর নির্মল প্রেম অন্তরে জাগ্রত হতে শুরু করে। মনে প্রবল স্বাদ জাগে একটিবার হলেও মৈনটের অপার সৌন্দর্য অবলোকন করতে যাব।
তবে, এইবার শীতে আমার একটা শখ জাগলো, আমি একা গ্রামের ভিতর দিয়ে গ্রামের অপরূপ বৈচিত্র্য দেখতে দেখতে হেঁটে মৈনট দেখতে যাব।

যেই কথা সেই কাজ, মুয়াজ্জিনের সুমধুর কন্ঠে আযানের সুরে ঘুম ভাঙ্গে, নামাজ পড়ে দিলাম রওনা।
আমাদের গ্রাম ডাইয়ার কুম গ্রামের আঁকাবাঁকা রাস্তার ভিতর দিয়ে হাঁটছি, চারদিকে সবুজের সমারোহ, পাখি কিচিরমিচির গান করছে।পথের দুইপাড়ে নাম না জানা বাহারি ফুল। কোনটা লাল, কোনটা সাদা, আবার কোনটা নানা রংয়ের। কুয়াশার ফাঁক ভেদ করে কেবল সূর্যের আলো উঁকি দিচ্ছে। মিষ্টি শীতল বাতাস এক অপূর্ব মাদকতা। গাছি গাছ থেকে খেজুরের রস নামাচ্ছে। আরেকটু আগাতেই দূর থেকে ঢেঁকির আওয়াজ পেলাম, মনে হলো কেউ যেন চাউল কাটছে পিঠা বানাবে। খেজুরের রসে ভিজানো পিঠা খেতে জবর মজা।

গ্রামের ভিতর দিয়ে হাঁটছি তো হাঁটছি, অনেক দূর। উঠানে বোনেরা নকশা আঁকা কাঁথা সেলাই করছে, আবার কেউ রোদ পোহাচ্ছে আর খেজুর পাটি বুনাচ্ছে, মনোরম সুন্দর এক দৃশ্য। দোহার খাল পাড় আসতেই দেখি একদল পোলাপানে হাত দিয়ে খালের নিশ্চল পানিতে মলা মাছ ধরছে। মলা মাছের চড়চড়ি খেতে দারুণ মজা এই কথা মনে হতেই যেন ক্ষুদায় পেট চোঁ চোঁ করতে শুরু করছে । দেখি এক চাচা কটকটি বিক্রি করছে, তার কাছথেকে কটকটি খেলাম। তাদের গ্রামে আসছি তাই দাম নিলেন না, খুশি হয়ে আরো কতখানি বেশি করে দিলেন।

আকাশে প্রচন্ড রোদ, কিন্তু বাতাস বেশ ঠান্ডা মনে হচ্ছিল।
হাঁটতে হাঁটতে যখন মৈনটের কাছাকাছি এসে পরি তখন দেখি পথে বালু আর বালু, পা যেন আর চলতে চায়না। নিচ থেকে পা কে যেন টেনে ধরে রাখছে। বালি কয়- কই যাও, এতদিন পরে আইছাও আমার এইহানেই থাহো। বালু দিয়ে পোলাপান ঘর বানাচ্ছে আর ঝিনুক দিয়ে মালা গাঁথছে। আমিও কতগুলো ঝিনুক টুকিয়ে কোছরে গুঁজে নিলাম।
নৌকায় চড়ে পদ্মার অপরূপ সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে পদ্মার মাঝবুকে যাই। জেলেরা জাল দিয়ে রুপালী ইলিশ মাছ ধরছে। এই প্রথম আমি জীবিত ইলিশ মাছ দেখলাম, দারুণ এক শিহরন। সারি সারি নাম না জানা পাখি ভেসে বেড়াচ্ছে পদ্মার নির্মল জলে। শীতের নানা অতিথি পাখির কিচিরমিচির গানে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছিলাম প্রকৃতির মাঝে। আমার কাছে এরচেয়ে আর রোমাঞ্চকর কি হতে পারে। যতদূর চোখ যায় অপলক চেয়ে থাকি। আহ্ কি রূপ, কি সৌন্দর্য! পৃথিবীর সমস্ত সুখ আর সৌন্দর্য যেন এসে ধরা দিল একসাথে, যেন পৃথিবীর বুকে একটুকরো জান্নাত।
ঠান্ডা বাতাস, শীত শীত অনুভব হচ্ছিল, গরম কাপড় পড়ে নিলাম। মৈনটের রাস্তায় রয়েছে সারি সারি টংঘর ও ফাস্টফুডের দোকান। সেখানে থেকে পদ্মার ইলিশ ভাজার সাথে পান্তাভাত খেলাম। দারুণ এক মজা, না খেলে বুঝা যায়না এর অপার স্বাদ। মৈনটের চারপাশ বেশ পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন, মনে হল এখানকার সবাই পরিবেশ সচেতন। আমিও ময়লা, আবর্জনা এখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেল্লাম।
সারাদিন পদ্মার পাড়ে ঘুরে বেড়ালাম, দারুণ মজা। যেদিকে তাকাই কেবল প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যের সমারোহ। সৃষ্টি কর্তার এক নিখুঁত সৃষ্টি এই মৈনট। প্রায় পাঁচ ঘন্টা হেঁটে এসে মৈনটের সকল সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে পথের ধকল ভুলে মনটা সতেজ হয়ে উঠলো।
মৈনটের অপার সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গেলে দিনশেষ হয়ে যাবে। আবার পরে কমু, সূর্য্য ক্রমশ পশ্চিম দিকে হেলে পরছে, সাঁঝ নামতাছে, বাইত্তে যামু। ঝিঁঝি পোকা ঝিঁ ঝিঁ করতাছে, মায়েরা তই তই কইয়া য়াঁস টুকাইয়া খোঁয়াড়ে ঢুকাইতাছে। মিনি কক্সবাজার খ্যাত অপরূপ মৈনটের অপার সব সৌন্দর্য দেখে তৃপ্তি মিটেনা মনের। বাইত্তে যাইতে দিলে টানে না, ইচ্ছা হয় আরো থাহি। মৈনটের কানে কানে বলি আবার আসব এই বলে মনকে শান্তনা দিয়ে বাড়ির পথে রওনা করি।

বাইত্তে আইয়া দেহি মায় খুন্তি হাতে নিয়া খাঁড়াইয়া রইছে। মায় চিল্লাইয়া কয়- হারাদিন না খাইয়া কই আছিলা? আইজক্যা বাইত্তে আহো দিমুনে ঠ্যালা।
মায়ের হাতের বাড়াভাত খাইয়া ঝিনুক দেখতে দেখতে কহন ঘুমাইয়া পড়ছি জানিনা। স্বপ্নে দেখি আমি পদ্মা নদীতে দুইহাত ওপরে দিয়া হাঁতরাইতাছি।
সকালে ঘুমে থেকে উঠে দেখি গতর আর পা বিষ্যে বিছানা থেকে ওঠতে পারিছিনা।
এই বিষ যেন আনন্দের কাছে কিছুই না।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মে, ২০২১ রাত ১:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: মা গুলো সন্তানকে বকে। বকে আনন্দ পায়।
পদ্মা নদী খুব খারাপ। সাবধান থাকবে। পদ্মা নদী মানুষের অনেক ক্ষতি করেছে।

০৮ ই মে, ২০২১ রাত ১:৩৯

মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন: মায়ের বকনি খেতে দারুণ ভাল লাগে।
অনেকসময় ইচ্ছেকরেই বকনি খাই।
আপনিও ভাইয়া নিরাপদে থাকবেন।

২| ০৮ ই মে, ২০২১ রাত ৩:২০

জটিল ভাই বলেছেন: আমারও বড্ড ইচ্ছে ছিলো মৈনটঘাট যাই। কিন্তু প্ল্যান করেও আর যাওয়া হলোনা........ :(

০৮ ই মে, ২০২১ ভোর ৬:০৩

মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন:
একদিন সময় করে চলে আসুন,
অনেক মজাকরে ঘুরে বেড়াব।

৩| ০৮ ই মে, ২০২১ সকাল ৯:৪৭

ইসিয়াক বলেছেন: এই জায়গায় কথা জানতাম না। ছবিটা সুন্দর।

০৮ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:২৯

মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন:


দোহারে এটি একটি চমৎকার মনোরম পরিবেশে ঘুরার মত জায়গা।
নিশ্চয়ই একদিন আসবেন। শুভেচ্ছা জানাই অবিরাম।

৪| ০৮ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:৪২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
এখানে নৌকার ভাড়ার চেয়ে ঘাটের ভাড়া ডবল।

০৮ ই মে, ২০২১ রাত ৯:১৮

মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন: এ সমস্যা প্রায় সব জাগায়ই দেখা যায়। আসলে এর পিছনে একটি প্রভাবশালী মহল জড়িত।
ভাল থাকবেন ভাইয়া।

৫| ০৮ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:২০

শেহজাদী১৯ বলেছেন: যেন নিজেই ঘুরে এলাম। অপরূপ বর্ণনা।

০৮ ই মে, ২০২১ রাত ৯:২১

মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন: বাস্তবে একবার এসে বেড়িয়ে যাবেন।
অনেক ভাল লাগবে।

৬| ০৯ ই মে, ২০২১ সকাল ৯:১৭

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



ডাইয়ার কুম টু মৈনটের খুব সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন, ছবিটিউ খুব সুন্দর হয়েছে।
ঢাকার দোহার উপজেলার পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর কোলে মৈনট ঘাট।
মৈনট ঘাট থেকে দূরে তাকালে সমুদ্রের বেলাভূমির খানিকটা আভাস মেলে এ কথা সত্য ।
দিগন্ত ছুঁয়ে থাকা পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ের মাথায় দুলতে থাকা নৌকা, প্রায় ডুবুডুবু
স্পিডবোটের ছুটে চলা, পাড়ে সারিবদ্ধ বাহারি রঙের ছাতার তলায় পেতে রাখা
হেলান-চেয়ার। ঘাটের কাছাকাছি দুই পাশে হোটেলের সারি। সেগুলোর সাইনবোর্ডে
ঘাটের পরিচিতি লেখা আছে ‘মিনি কক্সবাজার’।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে বাড়ির কাছেই সমুদ্রসৈকতের আবহ উপভোগ
করতে প্রচুর লোকসমাগম হচ্ছে এখানে। গড়ে উঠেছে বেশ কিছু খাবার হোটেল।
শুকনো মরিচ সহযোগে ডুবো তেলে ইলিশ ভাজার সৌরভ ছড়িয়ে পড়ছে পদ্মার বুক
ছুঁয়ে ধেয়ে আসা ঘাটপাড়ের ভেজা হাওয়ায়। আপনিউ মঝা করে পান্তা ভাত দিয়ে
খেয়েছেন ইলিশ ভাজা।

অনেকের ধারণা, কক্সবাজারের মতো জায়গাটি ক্রমশ ঢালু হয়ে নেমে গেছে জলে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো এটি নদী, সমুদ্র নয়। এখানে পাড় একেবারে খাড়া। সে কারণে
পানিতে নামলেই গভীরে পড়তে হয়। দক্ষ সাঁতারু না হলে সেখান থেকে ওঠে আসা
মুশকিল। এ কারণেই নদীতে নামতে নিষেধ করা হচ্ছে। সমুদ্রসৈকত ভেবে গোসল
করতে নেমে গত দুই বছরে সেখানে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। তাই মৈনটে যারা
যাবেন তাদের বেশ সতর্ক থাকতে হবে ।

শুভেচ্ছা রইল

০৯ ই মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫১

মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন: হ্যা ভাইয়া, আপনি ঠিকই বলেছেন মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনটের সৌন্দর্য অবলোকন করতে প্রচুর লোক আসে, আবার অনেক দুর্ঘটনা ও ঘটে। আপনি একটি বিষয় যথাযথই বলেছেন আমরা যারা ভাল সাঁতার জানি না তাদের পদ্মা নদীতে নামা ঠিক না।
সবশেষে বলব মৈনটের অপার সৌন্দর্য আপনার মন্তব্যে চমৎকার ভাবে উঠে এসেছে যা আমাকে দারুণভাবে উচ্ছ্বসিত করেছে। ভাল থাকবেন ভাইয়া, শুভেচ্ছা জানাই অবিরাম।

৭| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:১৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: "দূর থেকে ঢেঁকির আওয়াজ পেলাম" - ঢেঁকি এখনো গ্রাম বাঙলায় ব্যবহৃত হচ্ছে নাকি? আমি তো ভেবেছিলাম গ্রামের কুটীরগুলো থেকে ঢেঁকি ইতোমধ্যে তিরোহিত হয়ে গেছে।

আপনার পোস্টে 'ডাইয়ার কুম টু মৈনট' এর যাত্রাপথের সুন্দর বর্ণনা পড়ে আমারও মনে পড়ে গেল যে ২০১৮ এর এক শীতের সকালে আমি সবান্ধব, সপরিবারে মৈনটঘাটে বেড়াতে গিয়েছিলাম। পথে হলুদ সর্ষে ক্ষেতে নেমেছি, টং দোকানে বসে দুধ চা খেয়েছি, ঘাটে গিয়ে ইলিশমাছ দিয়ে ভাত খেয়েছি, ইঞ্জিন চালিত বোটে পদ্মার বুকে ঘুরেছি এবং হঠাৎ আসা আচমকা বাতাসে উড়ে যাওয়া আমার মাথার হ্যাটটিকে পদ্মার বুকে বিসর্জন দিয়ে এসেছি। ফেরার সময় কিছু চিতল মাছ কিনেও এনেছি। পথে কবি কায়কোবাদের জন্মস্থলে গিয়েছি, কায়কোবাদ হাইস্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছি। সেই ভ্রমণকে স্মরণ করে একটা পোস্টও লিখেছিলাম, যেটা পড়তে পারবেন এখানেঃ একটি হ্যাটের আত্মকাহিনীঃ

শেষের দিকের কথাগুলো আঞ্চলিক ভাষায় না হলেই ভালো হত বলে মনে হয়।

পোস্তে পঞ্চম ভাললাগা। + +

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.