![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি শাকিল সহজ সরল
ধূপের ধোঁয়া কুয়াশার চাদরের মত ঢেকে রেখেছে গোটা
রায় বাড়ি। বেলা বাড়ার সাথে সাথে লোকসমাগমও
বাড়তে লাগলো। কান্নাকাটি তো সেই ভোররাত থেকে
চলছে। ঘণ্টা দুয়েক আগে এম্বুলেন্স এসে জয়িতা'র লাশ
দিয়ে সাঁই সাঁই করে চলে গেল। বাড়ির কর্তা নিখিলেশ
বাবু রোদন দেখে কে? তাঁর ফোঁপানোর সাথে সাথে
ভুঁড়িটা তালে তালে কী অদ্ভুত ভাবে উঠানামা করছে।
নিখিলেশ বাবুর পাশে থাকা উনার বাল্যবন্ধু উদয়দেব
ঠাকুর কিছুক্ষণ পরপর বলেই যাচ্ছেন, "আরে নিখিল তুই
আচ্ছা ঝামেলা পাকালি তো দেখি! সবাইকে তো
একদিন যেতে হবে। কেউ তো আর অমর না।"
উদয় বাবু ঠিকই বলেছেন। কেউ তো আর অমর না। সবাইকেই
যেতে হবে। তাই বলে রাত ন'টার যাত্রীকে বিকেল সাড়ে
ছ'টার ট্রেনে তুলে দেওয়া কি ঠিক হবে ?
রায় বাড়ির এক কোণে অমিতকেও দেখা যাচ্ছে।
ছেলেটা তার ডান হাতে চিবুক এলিয়ে দিয়ে কী বিষণ্ণ
ভাবেই না দাঁড়িয়ে আছে।
অথচ গেল রোববারেও জয়িতাকে বলেছিল "তুই আমার
পিছু ছাড়লি? কৃষ্ণকলি কোথাকার!"
আজ মনে হয় অমিত সব শ্লেষামুক্ত। তার পিছু নিবে না
ভার্সিটির কৃষ্ণকলি। সে হিসেবে অমিতের খুশির
ফোয়ারা তুঙ্গে।
লিখিলেশ বাবুর কলিগ সুজয় মিত্রও এসেছেন।
ভদ্রলোক গতকাল এ বেলায় অট্টহাসিতে পুরো রায়
বাড়িই না কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। অথচ আজ উনাকে
দেখে মনেই হচ্ছে না উনি গতকালকের সুজয় বাবু। সুজয়
বাবুর পাশে দাঁড়িয়ে আছে উনার পিতৃভক্ত ছেলে সৈকত।
বেচারা গতকাল জয়িতাকে দেখে বলেছিল, "বাবা
আমার মেয়ে দেখেই অম্বল হওয়ার উপক্রম, আর একে
বিয়ে করলে কী হবে একবার ভেবে দেখো তো?" সুজয় বাবু
ছেলের কথায় সায় দিয়ে বলেছিলেন, "কি ব্যাপার
লিখিল বাবু? রাজকুমারী দেখাবেন বলে এনে
মহাকালী'র পূজো করতে বসিয়ে দিলেন। তা আগে বললে
পারতেন। পূজোর থাল টাল নিয়ে আসতাম। হা হা।" সেকি
বিশ্রী হাসি!
গতকাল জয়িতা খুব করে চাইছিল তার বাবার কলিগ সুজয়
মিত্রকে খুব করে কয়েকটা খিস্তি শুনিয়ে দিতে। তা আর
হলো কোথায়! উঠোনে খাটিয়ায় তার নিথর দেহ।
জয়িতার ছোট'কা বিষ্ণু রায় গতকাল তো খুব করে
বলছিলেন "তোর জন্য আমাদের মাথা কাটা গেল। তোর
মৃত্যু হয় না?"
সেই রাত দুপুরে জয়িতা গলায় দড়ি দিয়েছে। এতোক্ষণে
তো জয়িতার ছোট'কা বিষ্ণু বাবুর কাটা মাথা জোড়া
লাগার কথা। কিন্তু তিনি কেন কেঁদে কেটে এতো উতলা
হয়ে পড়ছেন?
বাড়ির গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে বিমল। নিচু জাতের
বলে আর এগুতে তার বাঁধছে। লাশের খাটিয়া তার পাশ
দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই।
সে একমনে ভাবছে জগতের এ কী অদ্ভুত নিয়ম? অদ্ভুত
বললে অবশ্যি ভুল হবে। নিষ্ঠুর বলতে হয়। আচ্ছা দুয়েকটা
তারার মতো সূর্যটাও একদিন খসে পড়ে না কেন ? খসে
পড়লে ভালোই হত। অমানিশার ক্রোড়ে জায়গা করে নিত
সমস্ত পৃথিবী। যেখানে থাকত না বর্ণ বা জাত-পাতের
কোন ভেদাভেদ। নিজেকে কৃষ্ণকলি ভেবে গর্বে বুক
চওড়া হত।রায় বাড়ির বড় মেয়ের হাত চাইতে এসে "জ্বে,
আমি পাড়ার নাপিতের ছেলে বিমল" কথাটা বলতে একটুও
আড়ষ্টতা বোধ হত না।
কেউ একজনের ঘাড়ধাক্কা খেয়ে বিমলের ধ্যান ভাঙল।
সে ভাবল এখানে আর থাকা ঠিক হবে না। হাতে বহু কাজ
আছে। রমেন'দার ছেলের মাথা ন্যাড়া করার জন্য থাকে
ডাকা হয়েছিল। সে সেদিকেই পা বাড়ালো।
.
রবিউল হাসান
©somewhere in net ltd.