নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সবার উপরে দেশ - আমার স্বদেশ। ভাল লাগে সততা, সরলতা। খারাপ লাগে নোংরামি, মিথ্যা, অহমিকা, কুটিলতা।
রাজনীতি এখন মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এর মত। যারা উপরে থাকে তারা স্বর, দুধ সবই খেয়ে পেলে। আর নিছে যারা থাকে তাদের জীবন ওষ্টাগত। যত বড় নেতা তত বেশী আয়, আর নিছের গুলা অন্ধভাবে সমর্থন দিয়ে যায়। মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তোলে।
মানব জমিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে আবুল হোসনের ৪% ঘুষ দাবীর মিমাংসার মাধ্যমে কাজ দেয়া হয়। সরকারী কেনা কাটায় আর কে কত ঘুষ নেন? সাম্প্রতিক ১২০০০ কোটি টাকার রাশিয়ার ক্রয় চুক্তিতে কে কত ঘুষ পেয়েছেন?? মজার বিষয় হচ্ছে স্হানীয় নেতাদের জন্য ব্যংক, টেন্ডার লুটপাট, আর বড় নেতাদের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ের লুটপাট। রাশিয়ার কেনাকাটায় চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে রাণীপুত্রকেও দেখা গেছে!!!
মানব জমিনের রিপোর্ট:
Click This Link
পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ দেয়ার জন্য সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ৪ শতাংশ ঘুষের ফয়সালা করেছিলেন কানাডিয়ান কোম্পানী এসএনসি লাভালিনের সঙ্গে। সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার মধ্যস্থতায় লাভালিনের ম্যানেজারের সঙ্গে আবুল হোসেনের বৈঠকে মন্ত্রীকে ৪ শতাংশ ঘুষ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
গত ৯ই জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান গোলাম রহমানকে দেয়া বিশ্বব্যাংক গঠিত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দলের চেয়ারম্যান লুই মোরেনো ওকাম্পোর চিঠিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। ওই চিঠিতে সাবেক মন্ত্রী আবুল হোসেনকে ওই দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে প্রধান ব্যক্তি বলে উল্লেখ করা হয়। দুদকের করা মামলার এজাহারে আবুল হোসেনের নাম না থাকায় হতাশা প্রকাশ করা হয় চিঠিতে। এ প্রসঙ্গে দুদক যুক্তি দিয়েছে, এজাহারে মন্ত্রী হোসেনের নাম যোগ করা হলে রাজনৈতিক হট্টগোল সৃষ্টি হবে। দুদকের এই যুক্তিতে প্যানেল খুবই মর্মাহত।
চিঠির সারসংক্ষেপে ওকাম্পো বলেন, প্যানেল মনে করে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রথম পদক্ষেপ দুদকের এজাহার বা এফআইআর দাখিল। তবে, পুরো ঘটনা প্যানেল যেভাবে বিবেচনা করছে এবং দুদকের কার্যক্রমে যেটা প্রতিষ্ঠিত করল, তা থেকে এই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, ওই দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যক্তি হলেন মন্ত্রী হোসেন (সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন)। ওই কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে তাঁর চূড়ান্ত সম্মতি প্রয়োজন ছিল। অবৈধ লেনদেন নিয়ে দর-কষাকষির জন্য সচিব ভূঁইয়ার (সাবেক সেতুসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া) মধ্যস্থতায় তিনি এসএনসি-লাভালিনের ম্যানেজারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মন্ত্রীসহ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের ঘুষ দেওয়ার তালিকায় মন্ত্রীকে ৪ শতাংশ দেওয়ার পরিকল্পনার বিষয়টি জানা গেছে। কাজেই এই তদন্তের যথার্থতা ও স্বচ্ছতার জন্য সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করতে হবে এবং অভিযুক্তদের সঙ্গে তাঁর নামও তালিকাভুক্ত করতে হবে। দুদক চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্যে ওকাম্পো বলেন, তার পরও আপনি জানিয়েছেন, তদন্ত কালে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। প্যানেল এটি নজরে নিয়েছে। তদন্ত চলাকালে দুদক অতিরিক্ত কোন তথ্য-প্রমাণ পেলে তা এবং তাদের তদন্ত পরিকল্পনা প্যানেলের কাছে পাঠানো হলে প্যানেল তা সাদরে গ্রহণ করবে। দুদকের কাজে প্রয়োজন হলে সহযোগিতা দেয়ার জন্য প্যানেল পস্তুত। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, ফরেনসিক পরীক্ষার মতো কারিগরি সহযোগিতা এবং তদৗল্প পরিকল্পনা প্রণয়নেও দুদক সহযোগিতা চাইলে তা দেয়া হবে বলে চিঠির সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠির বিস্তারিত অংশে বলা হয়, গত বছরের ডিসেম্বরে আমাদের সফরের সময় দুদক ও প্যানেলের বৈঠকে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর বিষয়টিসহ তদন্তের অন্যান্য প্রেক্ষাপট নিয়ে খোলামেলা বিশদ আলোচনা হয়। এই আলোচনার জন্য প্যানেল সত্যিই দুদকের প্রশংসা করে। আমাদের মধ্যকার এই পারস্পরিক সহযোগিতা আরও স্বচ্ছ রাখার স্বার্থে এফআইআরের আগে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে প্যানেল মতামত সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরছে।
অধিকতর তদন্তের জন্য প্যানেল যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে তা হলো-
ক. কেনাকাটার প্রক্রিয়ার সময় কাজী মো. ফেরদাউসসহ (মূল্যায়ন কমিটির সদস্যসচিব) দুই সরকারি কর্মকর্তা তাঁদের দায়িত্ব লঙ্ঘন করে এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তাদের কাছে গোপন তথ্য ফাঁস করে দেন এবং তাঁদের কাছ থেকে আরও নির্দেশনা ও সহযোগিতা চান। এ ক্ষেত্রে দুদক যথার্থই অনুধাবন করেছে যে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তাঁদের যোগসাজশ তদন্তের সময় বিবেচনায় নিতে হবে।
খ. এ ছাড়া দুদক আরও বিবেচনা করেছে, সেতুসচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এটা মনে রাখতে হবে যে সচিব ভূঁইয়া এবং কর্মকর্তা ফেরদাউস ২০১০ সালের ২৩শে জুন থেকে মূল্যায়ন কমিটির (কারিগরি ও আর্থিক) সদস্য ছিলেন।
গ. মূল্যায়ন-প্রক্রিয়ার সময় এসএনসি-লাভালিনের সহযোগী একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইসমাইল হোসেন কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করতেন। এসএনসির এক কর্মকর্তার মতে, ‘সচিব এবং মন্ত্রী তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। ২০১১ সালের ১৪ই মার্চ এসএনসি-লাভালিন ইন্টারন্যাশনালের ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ জানতে চান, প্রকল্পের কাজ পেলে ‘পিসিসি কস্ট’ কত দিতে হবে। এখানে পিসিসি কস্ট বলতে এসএনসি-লাভালিন বুঝিয়েছে, কত ঘুষ দিতে হবে।
ঘ. দরপত্রের আর্থিক প্রস্তাব খোলা হয় ২০১১ সালের ২৮শে মার্চ। এতে প্রথম হয় হালক্রো এবং দ্বিতীয় অবস্থানে থাকে এসএনসি-লাভালিন।
ঙ. দরপত্রের আর্থিক পস্তাবের ওই ফলাফলে চিন্তিত হয়ে পড়ে এসএনসি-লাভালিন। ফলাফল পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করতে থাকেন তাদের কর্মকর্তা ইসমাইল। পরের ১লা এপ্রিল তিনি বাংলাদেশি কর্মকর্তা ফেরদাউসের সঙ্গে নিউইয়র্কে বৈঠকের পরিকল্পনা করেন। এর মধ্যে ৫ই এপ্রিল রমেশ শাহ বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দিয়ে জানান যে ইসমাইল আর তাঁদের কোম্পানির সঙ্গে নেই।
চ. ২০১১ সালের ১০ই এপ্রিল এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় পরামর্শক কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জেনারেল ম্যানেজার কেভিন ওয়ালেস একটি গোপন ই-মেইল পাঠান। এতে তিনি লেখেন, হালক্রো সর্বনিম্ন দর দেয়ায় আমরা দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছি। কিন্তু সবকিছু এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তাদের প্রস্তাব বড় ধরনের জালিয়াতি ধরা পড়েছে। প্রধান প্রতিষ্ঠান এবং এসএনসির কর্মকর্তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়ার কথা চিন্ত করছে ক্লায়েন্ট। এ বিষয়ে এসএনসি শিগগিরই ক্লায়েন্টের কাছ থেকে একটি চিঠি পাবে।
ছ. স্থানীয় ওই পরামর্শক আরও লেখেন, ‘বিপণনের সব কাজ করেছি আমি ও ইসমাইল। ক্লায়েন্ট সব ধরনের দেনদরবারে ইসমাইলের সঙ্গে যোগাযোগে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ বোধ করতেন। কিন্তু চিঠিটি পাওয়ার পর তাঁরা বেশ দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েছেন এবং আমাদের ওপর আস্থা হারাতে চলেছেন। এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আমাদের ওপর তাঁদের আস্থা ফেরাতেই হবে। সচিবের প্রত্যাশা অনুযায়ী আপনি শিগগিরই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তাঁর নাম মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, মুঠোফোন নম্বর- +৮৮০১৭১৪০৭৯৩৭২। আপনাকে আগেও জানিয়েছি, আগের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কারণে রমেশকে যোগাযোগের ব্যক্তি হিসেবে নেবে না ক্লায়েন্ট।
জ. ২০১১ সালের ১২ই এপ্রিল বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কাজী ফেরদাউস এসএনসি-লাভালিন এবং হালক্রোকে জানান যে, মূল্যায়ন কমিটি তাদের প্রস্তাব মূল্যায়ন করছে। নিজেদের কর্মকর্তাদের সম্পর্কে তথ্য দেয়ার জন্য কোম্পানি দুটিকে অনুরোধ করেন তিনি।
ঝ. স্থানীয় ওই পরামর্শক ভিন্ন ভিন্ন তিনটি পরিস্থিতিতে দাবি করেছেন, সচিব ভূঁইয়া এসএনসির ওয়ালেসের কাছ থেকে ফোন পাবেন বলে প্রত্যাশা করছিলেন। তিনি (পরামর্শক) ওয়ালেসকে এটা বোঝান যে প্রকল্পের কাজ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে তাঁর বাংলাদেশে যাওয়া প্রয়োজন। কেননা, এ ক্ষেত্রে সচিব ভূঁইয়ার চেয়ে বড় অন্য কারও স্বার্থ আছে। ওই পরামর্শক লেখেন, ‘প্রধান কর্তাব্যক্তিটি কানাডার কোন সাদা মানুষকে দেখতে বা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান।’
ঞ. ২০১১ সালের ২৯শে মে কেভিন ওয়ালেস এবং রমেশ শাহ বাংলাদেশ সফর করেন। তাঁরা বৈঠক করেন সচিব ভূঁইয়া এবং মন্ত্রী হোসেনের সঙ্গে। বৈঠকের পর রমেশ শাহ তাঁর নোটপ্যাডে ‘পদ্মা পিসিসি’ শিরোনাম দিয়ে এর নিচে লেখেন, ‘৪% মন্ত্রী, ... ১% সচিব...’।
ট. এর কয়েক দিন পর ২০১১ সালের ১৩ই জুন বিশ্বব্যাংকে মূল্যায়ন প্রতিবেদন দাখিল করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে এসএনসি-লাভালিনকে কাজ দিতে সুপারিশ করা হয়।
ঠ. এসএনসি-লাভালিন এই যে বিশেষ সুবিধা পেল, তা স্বীকার করল তারা এভাবে, ‘আমাদের কর্মকর্তাদের জীবনবৃত্তান্ত পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন ছাড়াই কাজের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।’ স্থানীয় ওই পরামর্শক ই-মেইলে কর্মকর্তা ফেরদাউস সম্পর্কে লেখেন, ‘বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ তাদের চূড়ান্ত সুপারিশ পাঠালেও তাদের তথ্য প্রমাণ (যাচাইবাছাই) দরকার হবে...অনুগ্রহ করে এই বিষয়গুলো একটু দেখেন, তা না হলে ফেরদাউস ঝামেলায় পড়বেন।’
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত নীতিমালার বিষয়ে ওকাম্পোর দেয়া চিঠিতে বলা হয়-
ক. সরকারি ক্রয় নীতিমালা ২০০৬-এ সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কাজের জন্য সরকারি কিছু কর্মকর্তার দায়দায়িত্ব ও ক্ষমতা নির্ধারিত আছে। সরকারি কর্মকর্তারা এই নীতিমালা লঙ্ঘন করলে পেশাগত অসদাচরণের দায়ে দায়ী হবেন।
খ. মন্ত্রী পর্যায়ের কারও বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের এই ধারা প্রযোজ্য হবে কি না, সেটা নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। কার্যত বাংলাদেশে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত সব ধরনের সিদ্ধান্ত কর্মকর্তারাই নিয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে। যে কোন ধরনের পরিস্থিতিতেই মন্ত্রীসহ সব সরকারি কর্মকর্তার জন্য নির্দেশিকা হলো সরকারি ক্রয় নীতিমালা। সে অনুযায়ী, মূল্যায়ন কমিটি কোন ক্রয় সংক্রান্ত সুপারিশ চূড়ান্ত সম্মতির জন্য মন্ত্রীর কাছে পাঠানোর আগ পযর্ন্ত মন্ত্রী নিজেকে এই কাজের সঙ্গে জড়াতে পারেন না। এ ছাড়া, দুর্নীতি দমন আইনের ৫(১)(ডি) ধারা অনুযায়ী, ‘অপরাধমূলক কর্মকা-ের দায় থেকে মন্ত্রী অব্যাহতি পেতে পারেন না। দুর্নীতি দমন আইনের ৫(১)(এ) এবং (বি) ধারাও প্রযোজ্য হতে পারে।
চিঠিতে বলা হয় উল্লেলিত তথ্য-প্রমাণ এবং ঢাকা সফরের অভিজ্ঞতা থেকে প্যানেল মনে করে, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীসহ সরকারের অন্তত চার ব্যক্তির নাম এফআইআরে থাকা উচিত ছিল। সাবেক মন্ত্রীর বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ করে দেয়ার জন্য দুদকের প্রতি প্যানেল কৃতজ্ঞ। তবে প্যানেল মনে করে, সাবেক মন্ত্রীকে অভিযুক্তদের বাইরে রাখার পক্ষে দুদক যেসব যুক্তি দিয়েছে, তার কিছু কিছু প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অথবা বাংলাদেশি আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে তা করা হয়েছে। দুদকের প্রতিনিধিরা স্বীকার করেছেন যে, মন্ত্রীর কার্যক্রমও স্বচ্ছ ছিল না। এটাও স্বীকার করেছেন যে, তাঁর বিরুদ্ধেও সন্দেহের কিছু আছে। কিন্তু তাঁরা এটা বলেছেন যে, ‘তদন্ত শুরু করার জন্য শুধু সন্দেহ যথেষ্ট নয়।’ তবে বাংলাদেশী আইন অনুযায়ী, তদন্ত শুরু জন্য সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নয়, ‘যুক্তিসংগত সন্দেহ’ যথেষ্ট।
প্যানেল মনে করে, সাবেক একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যুক্তিসংগত সন্দেহ যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা ও বিচক্ষণতা দেখানো উচিত। এ ধরনের বিচক্ষণতার জন্য যুক্তিসংগত সন্দেহের পেছনে যেসব তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়, তা পরীক্ষায় দুদককে সতর্ক হতে হবে। তার পরও এসব কারণে যেখানে তদন্ত করা উচিত, সেখানে তদন্ত শুরু না করার দায় থেকে দুদক মুক্তি পেতে পারে না। সতর্ক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যদি এটা প্রতীয়মান হয়, যুক্তিসংগত সন্দেহ করার মতো কিছু আছে, তাহলে তিনি যে রাজনৈতিক ব্যক্তিই হোন না কেন, বা রাজনৈতিক হট্টগোলের যত সম্ভাবনাই থাকুক না কেন, তদন্তে অগ্রসর হওয়াই দুদকের উচিত। তা না হলে তদন্ত পূর্ণ ও স্বচ্ছ বলে বিবেচিত হবে না।
চিঠিতে প্যানেলের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বলা হয়-
ক. ঘটনাপরম্পরা বিবেচনা করে প্যানেল মনে করে, একটি অপরাধের ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং সাবেক মন্ত্রী হোসেন এর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে জড়িত। ওই কাজের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য তাঁর সম্মতি প্রয়োজন ছিল। কাজের জন্য দর-কষাকষি করতে তিনি সচিব ভূঁইয়ার মধ্যস্থতায় এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। ওই বৈঠকের পর ষড়যন্ত্রে জড়িতদের ঘুষ দেওয়ার জন্য যে তালিকা এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তা করেছিলেন, তাতে সাবেক ওই মন্ত্রীর নাম ছিল। তাঁকে ৪ শতাংশ ঘুষ দেওয়ার কথা ছিল।
খ. বিষয়ভিত্তিক প্রেক্ষাপট (ষড়যন্ত্রে মন্ত্রী জড়িত ছিলেন বলে যুক্তিসংগত সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ তদন্ত কর্মকর্তারা পেয়েছেন) এবং বাস্তবভিত্তিক পরীক্ষা উভয় থেকে এটা প্রতীয়মান হয়েছে যে, অভিযুক্ত হিসেবে এফআইআরে সাবেক মন্ত্রীর নাম থাকা প্রয়োজন ছিল।
গ. অভিযুক্ত হিসেবে এফআইআরে সাবেক মন্ত্রীর নাম না থাকায় বিশেষজ্ঞ প্যানেল এটা বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছে যে দুদক পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছভাবে তদন্ত করছে না।
দুদকের করা মামলার এজাহারের বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়-
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্মাণ তত্ত্বাবধায়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, তা উঠে এসেছে এজাহারে। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত হিসেবে সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এঁরা হলেন: সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং এসএনসি-লাভালিনের চার কর্মকর্তা। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দরপত্র-প্রক্রিয়ায় নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে এসএনসি-লাভালিনকে সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে নিজেদের এবং অন্যদের জন্য আর্থিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে দ-বিধির ১৬১ ও ৫(২) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ লঙ্ঘিত হয়েছিল বলে মনে হয়েছে এবং এই অপরাধ দ-বিধির ১২০(বি) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য।
‘অনুসন্ধান পর্যায়ে দেখা গেছে, দরপত্রের প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠকে মধ্যস্থতা করেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী। এসএনসি-লাভালিন কাজ পেলে কর্মকর্তাদের পিসিসি (প্রজেক্ট কমার্শিয়াল কস্ট/প্রজেক্ট কমিটমেন্ট কস্ট) হিসেবে কাকে কত শতাংশ দেয়া হবে, তার যে তালিকা রমেশ শাহ তৈরি করেন, তাতে সাবেক ওই দুই মন্ত্রীর নাম ছিল। যদিও অনুসন্ধান পর্যায়ে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সৈয়দ আবুল হোসেন ও আবুল হাসান চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতার পক্ষে কোন সুনিশ্চিত প্রমাণ বা সাক্ষী সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তবে তদন্ত পর্যায়ে আবুল হোসেন ও আবুল হাসানের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হবে।’
তদন্ত পর্যায়ে দুদক তাদের কাজ কীভাবে এগিয়ে নেবে, তা জানতে চায় প্যানেল।
যে সব প্রশ্নের জবাব চায় প্যানেল
চিঠিতে কিছু প্রশ্নের জবাব চেয়েছে প্যানেল। বলা হয়েছে এসব প্রশ্নের দ্রুত জবাব পেলে প্যানেল খুশি হবে। এসব প্রশ্নের মধ্যে আছে-
ক. ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সাবেক মন্ত্রী মি. হোসেনের জড়িত থাকার সম্ভাব্যতা নিয়ে উল্লিখিত প্যানেলের পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষাপটে দুদক কীভাবে হোসেনের ভূমিকা মূল্যায়ন করছে? এই প্রেক্ষাপটে নিচে বর্ণিত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো দুদক কীভাবে দেখে
১. ২০১১ সালের ২৯শে মে এসএনসি প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের বৈঠক
২. ওই বৈঠকে মন্ত্রী হোসেনের যোগ দেওয়া, এবং
৩. এসএনসি-লাভালিন যেভাবে তালিকার প্রথমে উঠে এল এবং নোটপ্যাডে মন্ত্রীর নামের পাশের ৪%-এর উল্লেখ?
খ. এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে, দরপত্রের প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন।’ ওই বৈঠক সম্পর্কে ইতিমধ্যে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা কি প্যানেলকে দিতে পারবে দুদক? এসব বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কোন পরিকল্পনা কি আছে?
গ. এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্ত পর্যায়ে আবুল হোসেন এবং আবুল হাসানের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রেও দুদক কি তাদের তদন্ত পরিকল্পনা প্যানেলের সঙ্গে ভাগাভাগি করবে?
ঘ. এফআইআরে উল্লেখ আছে, ‘জিজ্ঞাসাবাদে কমিটির সদস্য তরুন তপন দেওয়ান, প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ইশতিয়াক আহমেদ ও মকবুল হোসেন জানান, সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং কাজী মোহাম্মদ ফেরদাউস প্রথম থেকেই বলে আসছিলেন, সরকার এই কাজ জাপানি প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট কোম্পানি লিমিটেডকে দিতে চাইছিল। এবং কাজী মো. ফেরদাউস তাঁর নিজের উদ্যোগে তৈরি ভ্রান্ত একটি মূল্যায়নপত্র অন্য সদস্যদের কাছ থেকে সই করে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। এ-সংক্রান্ত বিবৃতির অনুলিপি কি প্যানেলকে দেবে দুদক?
ঙ. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও কাজী মোহাম্মদ ফেরদাউসকে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য কি প্যানেলকে দেবে দুদক এবং এজাহার দাখিলের পর তদন্তের অন্য কোন পদক্ষেপ কি নেয়া হয়েছে?
চ. গত ডিসেম্বরের বৈঠকের সময় আদালতে দাখিলের জন্য বাংলাদেশের বাইরে থেকে নথিপত্র তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়। বিশ্বব্যাংক বা তৃতীয় কোনো পক্ষ যেসব প্রমাণ বা তথ্য পাঠাবে, তা বাংলাদেশের আদালতে উপস্থাপন নিশ্চিত করতে দুদক কি ইতিমধ্যে কোন পদক্ষেপ নিয়েছে বা নেবে?
ছ. কানাডার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রমাণ বা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ কোন অবস্থায় আছে?
জ. সংশ্লিষ্ট পক্ষের কম্পিউটার বা ই-মেইল অ্যাকাউন্ট থেকে যেসব ই-মেইল মুছে ফেলা হয়েছে, তা উদ্ধারের প্রচেষ্টা কোন অবস্থায় আছে?
চিঠির শেষাংশে দুদক চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে ওকাম্পো বলেন, আপনার সুবিধামতো দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওপরের প্রশ্নগুলোর জবাব দিলে আমি কৃতজ্ঞ থাকব। দুদকের চলমান তদন্ত প্রক্রিয়ায় যদি কোন সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাদের জানাতে ইতস্ততবোধ করবেন না।
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫২
সরলপাঠ বলেছেন: সরকারের পদত্যাগে কি সমস্যার সমাধান হবে????????????
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৮
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আয় হায়!!!!!
করছে কি এক্কেবারে ন্যাংটো কইরে ফেললোরে!!!!
প্রধানমন্ত্রীর সার্টিফাইড দেশপ্রেমিকরে লইয়া এ কেমন কথা
৪% আবুল হোসেন!!!!!
দুদক দেশের ইজ্জত বাঁচা! দলিয় চামচামী কইরা, আর ব্যাক্তি প্রীতি দেখাইতে গেলে যেমনে ন্যাংটো হইতাছে দেশ!!!
ছি ছি ছিঃ
পদ্মা কেলেংকারীর পর সরকারের পদত্যাগ মিনিমাম নৈতিকতায় আবশ্যক।