![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেশ স্বাধীনের পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে একটি প্রশ্ন বারবার উঠে আসছে ত্রিশ লক্ষ লোক কি আসলেই শহীদ হয়েছিলেন?
এই প্রশ্ন অনেকেই উত্থাপন করে বেশ আনন্দ পান আবার কেউ স্বার্থ সিদ্ধির জন্যও এই প্রশ্নটি করেন। প্রশ্নের উত্তর হলো একটাই- হ্যাঁ,
অবশ্য সংখ্যাটা বেশীও হতে পারে। যারা নদীর ধারে বাস করতেন, যারা পিতার লাশ শনাক্ত করার জন্যে নদীর স্রোতে ভেসে যাওয়া অগনিত লাশের মিছিল দেখেছে, তাদের কাছে ৩০ লক্ষ সংখ্যাটা অনেক কম মনে হতে পারে।
আরো একটা প্রশ্ন আসে,
কেন আমাদের জানতে হবে একটা নিদিষ্ট সংখ্যা !!
কেন কিছু মানুষ প্রকৃত সংখ্যা জানার জন্য অধীর? যদি আমরা বিস্তর শুমারী বা পরিসংখ্যানের পর জানতে পারি যে, প্রকৃত শহীদের সংখ্যা ৩০ লক্ষের থেকে ১ লক্ষ কম বা এক লক্ষ বেশী তাতে কি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস ভিন্ন ভাবে লিখা হবে? শহীদের সংখ্যা কমলে কি হানাদার পাকিস্তানি কিংবা দালাল-রাজাকারদের অপকর্মের দায় কমে যাবে, নাকি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের গুরুত্ব কমে যাবে?
যুদ্ধে নিহতদের নিয়ে সবচেয়ে অবাক হবার মতো সংখ্যা পাওয়া যাবে আশির দশকে ঘটে যাওয়া ৯ বছর ব্যাপী ইরান- ইরাক যুদ্ধে। সেখানে ইরান এবং ইরাকের প্রদত্ত্ব সংখ্যা যোগ দিলে দেখা যাবে যে, ইরাকের হিসাব মতে ইরানে মোট জনগোষ্ঠিকে কয়েকবার হত্যা করেছে ইরাক। ঠিক একই ভাবে ইরানও তাদের হিসাব মতে কয়েকবার ইরাকের মোট জনগোষ্ঠীকে হত্যা করতে সমর্থ হয়েছিল।
এবার দেখা যাক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের সংখ্যা গননায় কি হয়েছিল। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ঐ যুদ্ধে বিবদমান সকল দেশের হতাহতের নিজস্ব হিসাব আছে। এখানে বিজয়ী দল যা বলেছে পরাজিতরা সেটাই মেনে নিয়েছে। যেমন বলা হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ৬০ লক্ষ ইহুদী নিহত হয়েছে। এটা এখন পশ্চিমা বিশ্বের জন্য আইন হিসাবে চালু হয়েছে। এটাকে এন্টি সেমেটিক আইনের আওতায় বিবেচনায় যদি কেহ ৬০ লক্ষ ইহুদী নিধন নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলে বা গবেষনা করার চেষ্টা করে তবে তাকে জেলে যেতে হবে। এই অপরাধে জেনডাল নামে এক জার্মান দেশ থেকে পালিয়ে ক্যানাডা এবং পরে আমেরিকা গিয়ে বাঁচতে পারেনি। ফেরত নিয়ে গিয়ে তার বিচার চলছে জার্মানের এক আদালতে। কয়েক বছর আগে অস্ট্রিয় এক আদালতে ডেভিড আরভিং নামে এক ইতিহাসবিদকে "হলোকাস্ট" অস্বীকার করার অপরাধে জেলে পাঠানো হয়।
মুল কথা হলো ২য় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ইহুদীদের সংখ্যা ৬০ লক্ষ এবং সেটা নিয়ে কেহ প্রশ্ন করতে পারবেন না। কেহ জানতে চাইতে পারবেন না কিভাবে এই সংখ্যাটা পাওয়া গেলো।
এবার আসা যাক ২য় প্রশ্নে:
একটা যুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো নারী নিযার্তন। কিন্তু তার প্রকৃত সংখ্যা কি নির্ধারন সম্ভব? উত্তর নেতিবাচকই হবে।
আমরা দেখেছি মাত্র কয়েক বছর আগে ভয়াবহ নারী নিযার্তনের ঘটনা ঘটে বসনিয়ায়। যদি পৃথিবীর সকল বিশেষজ্ঞকে এক করে প্রশ্ন করা হয় বসনিয়ায় নিযার্তিত নারীর প্রকৃত সংখ্যা কত, নিশ্চিত ভাবে এরা কোন সুনির্দিষ্ট সংখ্যা দিতে ব্যর্থ হবেন।
এখানে বিষয়টা অত্যন্ত বাস্তব যে,
একজন নিযার্তিত নারী রেডক্রসের রিলিফের জন্য " নিযার্তিত নারী" হিসাবে নাম লিখাতে যাবে না বা এরা বলে বেড়াবে না যে এরা নিযার্তিত হয়েছিলেন।
এটা বাংলাদেশের মতো রক্ষনশীল দেশের জন্যে আরো বেশি সত্য।
তবে এটাও সত্য যে, যদি কোনও দিন সুযোগ আসে (আসবে ইনশাআল্লাহ) তখন নিশ্চয় অনেক সাহসী নারী এগিয়ে আসবেন তাঁদের অপমানের কথা বলতে।
সুতরাং একটা যুদ্ধে নিহত এবং নিযার্তিতাদের সংখ্যা নির্নয়ের ক্ষেত্রে আদমশুমারীর মতো শান্তিকালীন প্রক্রিয়ার প্রয়োগের চিন্তা করা একটা কল্পনা মাত্র। তার পরও একটা প্রাক্কলিত সংখ্যাকে বাস্তবতার নিরিখে গ্রহন করার প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন মিডিয়াতে যে হিসাব দিয়েছিলো, তার থেকেই বাংলাদেশের তৎকালীন নেতারা সর্বোচ্চ সংখ্যাটা গ্রহন করেছেন। এবং ওই সুত্রেই সংখ্যার হিসাবটা প্রায় ৩০ লাখ ধরা হয়।।
আমাদের মনে রাখতে হবে আত্নত্যাগকারী মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবন দিয়ে যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে আমাদের জন্যে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। সেই মহামূল্যবান সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশ কোনও দলবিশেষের সম্পদ নয়, সমগ্র বাঙ্গালী জাতির।
দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হওয়া উচিত...
©somewhere in net ltd.