![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা সমস্যা বারবার সামনে এলে বারবার মুখ ঘুরিয়ে রাখা যায়না।
ছোটখাটো সমস্যাগুলো জটলা বেঁধে একসময় সমাধানঅযোগ্য হয়ে ওঠে।
তখন যেকোনো উপায়ে একটা বিহিত করতেই হয় মানুষের।
বর্তমানে আমাদের রাষ্ট্রীয় সমস্যা রোহিঙ্গা ইস্যু।
এই একটি মহাসমস্যা যুগ যুগ ধরে জিইয়ে রাখা হয়েছে। দুইদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকায় রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কখনো ডিপ্লোম্যাটিক আলোচনা হয়না।
দীর্ঘদিন থেকে মায়ানমার দাবী করে আসছে জাতিগতভাবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক।
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম রোহিঙ্গাদের পৈত্রিক নিবাস। বৃটিশ সরকারের আমলে রোহিঙ্গারা আরাকানে এসে বাসা বেঁধেছে।
ধীরে ধীরে বাংলাদেশ থেকে তারা মায়ানমারে প্রবেশ করে তাদের ভুমিদখল করে যাচ্ছে কয়েকদশক ধরে। তাদের রাষ্ট্রীয় পরিবেশ নষ্ট করছে।
রোহিঙ্গারা সেখানে নানাবিধ অপরাধকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগও তুলছে বার্মার সরকার।
যদিও ঐতিহাসিকভাবে ব্রিটিশরা বার্মায় শাসক হিসেবে আসার কয়েক শতাব্দী আগে হতেই রোহিঙ্গারা আরাকানের প্রতাপশালী জাতি হিসেবে বিকশিত হয়েছিলো।
বর্তমান সহিংসতার মুল উৎস হলো,
গতমাসের অর্থাৎ অক্টোবরের নয় তারিখে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশের কয়েকটি চেক পোস্টে নয়জন পুলিশকে হত্যা করে অজ্ঞাত দুবৃত্তরা।
মায়ানমার সেনাবাহীনি এই ঘটনার জন্য রোহিঙ্গাদের দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অ্যাকশনে নামে। সন্দেহভাজনদের তালিকা তৈরী করে তাদের ধরে এনে প্রত্যেককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এতে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়।
শুরু হয় সহিংসতা।
সেনাবাহিনীর অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে স্লোগান তোলে নিরীহ নিরস্ত্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি। সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে রোহিঙ্গাদের আকুল আর্তনাদের আওয়াজ। মজলুম রোহিঙ্গাদের পক্ষে বিশ্বব্যাপী বার্মাবিরোধী আন্দোলন করে লক্ষ লক্ষ মানুষ।
এতে করে আরো অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে লা-পরওয়া বার্মিজ সেনাবাহিনী।
অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হয়।
বাছবিচারহীনভাবে নারী পুরুষ বৃদ্ধদের গুলি করে হত্যা করা, রোহিঙ্গাদের ঘর বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া, নারীদের ধর্ষন করা ইত্যাদি।
সেনাবাহিনীর এসব কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কথা বলার ক্ষমতা স্বয়ং অং সাং সুচিরও নেই। কারন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা মায়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে নেই। নির্বাচনে সুচির বিজয়ের পর কয়েকটি ক্ষমতা সরকারকে দেয়নি মায়ানমার সেনাবাহিনী। ২০০৮ এর সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রনে থাকবে। সুতরাং সেনাবিহিনীর যেকোনো পদক্ষেপে সরকারের নাক গলানোর অধিকার নেই।
প্রশ্ন উঠছে সুচি চাইলে অবশ্যই নিরীহ রোহিঙ্গাদের উপর চলমান নির্যাতন বন্ধ করতে পারেন।
কিন্ত সেই সুযোগও বন্ধ করে রেখেছে সেনাবাহিনী।
সাধারণ বার্মিজদের কাছে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে আসা ভুমিদখলকারী বলে তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলা হচ্ছে। অস্ত্রহাতে কয়েকজন রোহিঙ্গা মুজাহিদের প্রকাশ করা ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে রোহিঙ্গাদের জঙ্গী হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। IS ইসলামিক স্টেট সন্ত্রাসীদের সাথে যোগসাজশের অভিযোগ আনা হচ্ছে।
আর তাই বার্মিজরা প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গাবিরোধী র্যালী করে রোহিঙ্গাদের মায়ানমার থেকে বিতাড়ন করার জোর দাবী জানাচ্ছে। সেজন্যই মুলত রোহিঙ্গা ইস্যুতে সুচির সরকার নির্বিকার।
চলতি সপ্তাহে সুচির ইন্দোনেশিয়া সফরে যাওয়ার কথা ছিলো। জাকার্তায় মায়ানমারবিরোধী বিক্ষোভের কারনে তাঁর সফর বাতিল করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধ ইন্দোনেশিয়ানরা বার্মিজ দুতাবাসে ভাংচুর করেছে। বিশ্বজুড়ে চলছে বার্মাবিরোধী আন্দোলন...
২০১২ সালে রোহিঙ্গা মুসলিম কতৃক একজন বার্মিজ বৌদ্ধ নারী ধর্ষিত অতঃপর নিহত হওয়ার পর বৌদ্ধরা অস্ত্রহাতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে নেমেছিলো। একটি ধর্ষনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার মানুষকে ঘরছাড়া হতে হয়েছিলো। ভয়াবহ সেই সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো দুপক্ষই। নাফ নদী পাড়ি দিয়ে মায়ানমার থেকে অসংখ্য রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছিলো বাংলাদেশে।
কিন্ত এবার নয়জন পুলিশ হত্যায় রোহিঙ্গাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া না গেলেও তাদের দায়ী করেই ক্লিনিং অপারেশনে নেমেছে বার্মিজ মিলিটারী।
রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেয়া সমস্যার সমাধান নয়, বরং সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলা।
কারন মায়ানমার চাইছে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে চলে যাক। তাদের প্রকৃত বাসস্থান বাংলাদেশ। অথচ ঐতিহাসিকভাবে রোহিঙ্গারা মায়ানমারের স্থানীয় অধিবাসী !
আমরা সরকারের বিরুদ্ধে কথা না বলে বরং দেশের কথা ভাবতে হবে। দেশের সার্বভৌমত্বের কথা ভাবতে হবে।
কোনো ব্যক্তি যেমন তার মালিকানাধীন জমিতে অন্যকাউকে স্থায়ীভাবে চাষবাস করতে দেয়না। একটি দেশও অন্যদেশের বিরাট এক জনগোষ্ঠিকে নিজদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে দেবেনা।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কয়েক মিলিয়ন বাংলাদেশী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলো। দেশ স্বাধীনের পর পরই সবাইকে ফেরত পাঠিয়েছে ভারত।
ইসরাঈল ফিলিস্তিন লড়াইয়ে মিশর তুরস্ক তাদের বর্ডার বন্ধ করে রেখেছিলো যাতে ফিলিস্তিনিরা পালিয়ে তাদের দেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে।
অথচ তারা ধর্মীয় পরিচয়ে মুসলিম এবং জাতিগতভাবে আরব। তারা ধর্ম এবং জাতির উর্ধ্বে দেশের সার্বভৌমত্বকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলো।
বি এন পি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আজ পর্যন্ত সীমান্ত খুলে দেয়ার পক্ষে কোনো স্টেটমেন্ট দেন নি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি সুচি সরকারের সমালোচনা করেছেন। কিন্ত বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেয়ার দাবী জানান নি। একজন সচেতন বাংলাদেশী হিসেবে কেউই তা চাইতে পারেনা।
বিগত সময়ে মায়ানমার থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে আসা রোহিঙ্গাদের কেউই আর ফেরত যায়নি। বর্তমানে সরকারী হিসেব মোতাবেক বাংলাদেশে প্রায় আট লক্ষ রোহিঙ্গা অবৈধভাবে বসবাস করছে। যাদেরকে বাংলাদেশ সরকার মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর কোনো উদ্যেগ নেয়নি। আশা করি কোনোদিন নেবেওনা।
কিন্ত নতুন করে রোহিঙ্গাদের আর আসতে দেয়া যায়না। তাদের আসতে দেয়া মানে মায়ানমারকে রোহিঙ্গা বিতাড়নে সুযোগ করে দেয়া।
তাছাড়া দুর্বল-দরিদ্র অর্থনীতি ও অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে পিষ্ট বাংলাদেশের পক্ষে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দেয়াটা বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা দুপক্ষের জন্যই ক্ষতিকর।
বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন উপায়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে। শুধুমাত্র দলবদ্ধভাবে আসা রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করছে বিজিবি সদস্যরা।
পুরুষরা দলবদ্ধভাবে নৌকায় চড়ে বিজিবিকে ফাঁকি দিয়ে ঠিকই বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। কিন্ত থেকে যাচ্ছে অসহায় নারী আর শিশুরা। যাদের উপর অত্যাচারের স্টিম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে নির্দয় সেনাবাহিনী সদস্যরা।
মানবিক দৃষ্টিতে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের জন্য আমাদের অবশ্যই করণীয় আছে।
আন্তর্জাতিকভাবে মায়ানমার সরকারকে চাপ প্রয়োগের জন্য যথাযোগ্য পদক্ষেপ নেয়া। সদিচ্ছায় মায়ানমারের সাথে বৈঠক করে এর একটি সুষ্ঠ সমাধান বের করা। বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর উদ্যেগ নেয়া।
এতে করে মায়ানমার বর্তমান রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের বিষয়ে শিথিল সিদ্ধান্তে আসতে পারে।
মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার প্রদানের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানানো।
আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার আদালতে মায়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে প্রমাণসহ আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কাজ করা।
মানুষ হিসেবে আমাদের সবারই রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো জরুরী। রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো, রোহিঙ্গাদের উপর হওয়া নিপীড়নের প্রতিবাদ করা মানে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়াকে সমর্থন করা নয়।
২| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২৪
শামীম শাহ বলেছেন: সরকারের সাথে সেনাবাহিনীর সম্পর্কে শুরু থেকেই কোন্দল রয়েছে। জনগণের চাহিদা পুরণে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিলো সেনাসরকারকে। সেনাবাহিনী প্রদত্ত শর্তসাপেক্ষ নির্বাচনে বিজয়ী সরকারের ক্ষমতা সেনাবাহিনীর উর্ধ্বে নয়। দেশের গুরুত্বপুর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত সেনাবাহিনীর অনুমোদন ব্যতীত নেয়া যায়না।
অন্যদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সাধারন জনগনও সেনাকর্মকর্তাদের সমর্থন দিচ্ছে।
এখানে জোরালোভাবে সরকারের করার কিছুই নেই। তবে হ্যাঁ,
সমস্যা সমাধানে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত ছিলো। কিন্ত সুচীর নীরবতায় ধরে নেয়া যায় রোহিঙ্গা বিতাড়নে তারও পুর্ণসমর্থন রয়েছে।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:০৪
সৈয়দ আবুল ফারাহ্ বলেছেন: সাধারণ বার্মিজদের কাছে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে আসা ভুমিদখলকারী বলে তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলা হচ্ছে। অস্ত্রহাতে কয়েকজন রোহিঙ্গা মুজাহিদের প্রকাশ করা ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে রোহিঙ্গাদের জঙ্গী হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। IS ইসলামিক স্টেট সন্ত্রাসীদের সাথে যোগসাজশের অভিযোগ আনা হচ্ছে।
আর তাই বার্মিজরা প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গাবিরোধী র্যালী করে রোহিঙ্গাদের মায়ানমার থেকে বিতাড়ন করার জোর দাবী জানাচ্ছে। সেজন্যই মুলত রোহিঙ্গা ইস্যুতে সুচির সরকার নির্বিকার।
সুচি সরকারের নিরবতা কোন ক্রমেই যৌক্তিক নয়। প্রকৃত অবস্থা জানার মেকানিজম নিশ্চয়ই সরকার বা রাজনৈতিক দলের রয়েছে।