নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইদের শুভেচ্ছা

শামীম শাহ

শামীম আহমেদ

শামীম শাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের কাছে পরাজিত কিংবদন্তিরা

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:১৭

আনোয়ার পারভেজের কথা হয়তো অনেকেরই এখন মনে নেই।



মনে থাকারও কথা না… কারন তিনি রাজনীতিবিদ ছিলেন না।
তিনি ছিলেন একজন সুরকার।
সঙ্গীত জীবনের ৪০ বছরে এক হাজারেরও বেশি গানের সুর করেছেন কিংবদন্তী এই সুরকার আনোয়ার পারভেজ।
তিনি বরেন্য সঙ্গীতশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ এবং প্রয়াত চলচ্চিত্র অভিনেতা জাফর ইকবালের বড় ভাই।
আনোয়ার পারভেজ মরণব্যাধী ক্যান্সারের কাছে পরাজয় বরণ করেছিলেন। আর গোটা জাতি পরাজিত হয়েছিলো তাঁর কাছে। এই পরাজয় ক্ষমতার পরাজয় নয়, অকৃতজ্ঞতার পরাজয়।
বিবিসির জরিপে যে ২০টি বাংলা গান সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বলে স্বীকৃতি পেয়েছে তার তিনটি গান,
-জয় বাংলা বাংলার জয় (মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সর্বাধিক প্রচারিত গান)
-একবার যেতে দে না
-একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’-এই কালজয়ী গানগুলোর সুরকার আনোয়ার পারভেজ৷
এই গুনী মানুষটা অনেক জনপ্রিয় গানের সুর করেও তাঁর জীবদ্দশায় কৃতিত্বের কোনো মুল্যায়ন পান নি।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালের বেডে পড়ে থেকে অতঃপর চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
আবেদন করার পরও সরকারীভাবে কোনো সহায়তা পান নি তিনি। তাঁর চিকিৎসা সাহায্যে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসেনি।
বর্তমানে আমাদের কর্পোরেট সিঙ্গাররা একাত্তরের এসব কালজয়ী গানকে রিমিক্স করে বাহারী সব মিউজিকে দেশবাসীকে নতুন করে দেশপ্রেম শেখায়।
অথচ এই গানগুলোর শিল্পী সুরকাররা অবহেলিত হয়ে মনে ক্ষোভ নিয়ে সবার অলক্ষ্যে এক সময়ে হারিয়ে যায় নীরবে।
কি অদ্ভুত অকৃতজ্ঞ জাতি আমরা। আমাদের সেরা মেধাগুলোকে প্রতিনিয়ত আমরা অপমান করি !
মরণাপন্ন একজন গুনী শিল্পীর একটু খোঁজ নেয়ার সময় আমাদের হয়না।
মৃত্যুর পর গাঁটের পয়সা খরচা করে পুস্পমাল্য কিনি। হা হুতাশ করে পত্রিকায়/ব্লগে বড় বড় আর্টিকেল লিখি।
আহা লোকটা কত ভালো ছিলো...

মৃত্যুর আগে গনমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাতকারে আনোয়ার পারভেজ আক্ষেপ করে বলেছিলেন, অনেক ভালো গানের সুর করেও আমি কোনো স্বীকৃতি পাইনি। মৃত্যুর পর আমাকে যাতে কেউ মরণোত্তর পুরস্কার না দেয়।
কিন্ত তিনি পুরস্কার পেয়েছিলেন। জীবদ্দশায় নয়, মৃত্যুর পরে।
ওয়ান ইলেভেনে সেনাসমর্থিত সরকারের আমলে মরনোত্তর একুশে পদক দেয়া হয়েছিলো তাঁকে।
তাঁর শেষ আকুতিটা পুরস্কারের জন্য ছিলোনা। তিনি বাঁচতে চেয়েছিলেন।

গুরু আজম খান:



আজম খান ছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার ও সুরকার৷ বাংলাদেশে পপ সংগীতের অন্যতম পথপ্রদর্শক৷
তাঁর পপ সংগীতের জন্য শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা উপ মহাদেশে এক জনপ্রিয় শিল্পী তিনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও রেখেছেন বীরত্বপুর্ণ অবদান।

অথচ এই মানুষটা চিকিৎসাব্যয়ের অপ্রাতুলতার কারনে চিকিৎসা অসম্পন্ন রেখেই হাসপাতাল থেকে ফেরত এসেছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদে আজম খানের চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন ছিলো ৩০ লক্ষ।
মাত্র ১৫ লাখ টাকা জোগাড় না হওয়ায় তাঁর চিকিৎসা বন্ধ করতে হয়েছিলো।

আমাদের দেশের নেতা নেত্রী বা সরকার প্রধানরা দেশের কোটি মানুষকে চিকিৎসা সেবার বাইরে রেখে নিজেরা সামান্য হাঁচি-কাশিতেও সিংগাপুর-আমেরিকা দৌড়ান। আবার নির্লজ্জের মত সে খবর বেতার টেলিভিশন বা পত্রিকাতে ফলাও করে প্রকাশও করেন। অথচ এই মুক্তিযোদ্ধা-বীর সন্তানরা যথাযথ চিকিৎসার অভাবে হাসপাতালে ধুঁকেধুঁকে মরছে তাঁদের জন্য দেশপ্রেমিকের দাবীদার এসব নেতা নেত্রীদের করনীয় কিছুই নেই।

সেজন্যই মাঝে মাঝে বলি এদেশে জীবিত মানুষের চেয়ে মরা মানুষের কদর বেশি।

তাঁরা তো নিজেদের সংসার খরচ চান নি। চেয়েছিলেন চিকিৎসা খরচ। নিজেদের সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে নিরূপায় হয়ে মানুষের কাছে হাত পেতেছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে অশেষ অবদানের স্বীকৃতি এইভাবে প্রাপ্য ছিলো তাঁদের?
রাষ্ট্রের তহবিল থেকে এই মহান সুর্য সন্তানদের জন্য সামান্য অর্থ বরাদ্দ করা কি খুব বেশী কঠিন হয়ে যাবে?

মৃত্যুর আগে আজম খান খুব অভিমান নিয়ে বলেছিলেন,
আমার কারো সাহায্য লাগবে না। আপনারা আমাকে আমার গানের রয়্যালিটির টাকা বুঝিয়ে দিন।

আমাদের দেশের আরেকজন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী মুক্তিযোদ্ধা বিপুল ভট্টাচার্য।



যাঁর দরাজ কণ্ঠে উৎসাহিত হয়ে দলে দলে মানুষ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন।
১৯৭১ সালে মেশিনগানের বিরুদ্ধে তাঁর গান এবং গলা দিয়ে যুদ্ধ করেছেন।
মুক্তির গানে ১১টি গান আছে, যার অধিকাংশই লোকসুরভিত্তিক। এই গানগুলোর মধ্যে একটি ছাড়া বাকি সব গানই গেয়েছেন বিপুল ভট্টাচার্য।
১৯৭১ সালে গান নিয়ে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছিলেন মাইলের পর মাইল। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত তাঁর গাওয়া গান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রেরণা জুগিয়েছে। বিপুল ভট্টাচার্য শরণার্থী শিবিরের হাজার হাজার মানুষের মনে সাহস সঞ্চার করেছিলেন গানের মাধ্যমে। তিনি ছিলেন মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্থার সদস্য।
আনোয়ার পারভেজের মতো বিপুল ভট্টাচার্যও রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁর কৃতিত্বের কোনো স্বীকৃতি পান নি।
মারাত্মক অসুস্থ হয়ে বিপুল ভট্টাচার্য যখন দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারের সাথে লড়ছিলেন, সিঙ্গাপুর তো দূরের কথা অর্থের অভাবে তিনি সামান্য পিজি হাসপাতালেই চিকিৎসা নিতে পারছিলেন না তখন তাঁর মুক্তিযুদ্ধকালীন সহ-শিল্পীরা একত্রিত হয়ে তাঁর জন্য অর্থ সংগ্রহের চেষ্টায় বিভিন্ন জায়গা আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনে উল্লেখযোগ্য সাড়া পাওয়া যায়নি।
সঙ্গীতশিল্পী আসিফের কথাটা জানি। ব্যাক্তিগতভাবে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়ে বিপুল ভট্টচার্যের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
রেডিওফুর্তি অনুদান দিয়েছিলো এক লক্ষ টাকা। কিন্ত সরকারীভাবে তাঁর জন্য কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
একবুক অভিমান নিয়ে চলে গেলেন বিপুল ভট্টাচার্য।
.

এবার আমরা আরেকজন কিংবদন্তী সুরস্রষ্টাকে হারাতে যাচ্ছি।
তিনি হচ্ছেন লাকী আখন্দ।

সুরসম্রাট লাকী আখন্দ দীর্ঘদিন যাবত মরণব্যাধি ক্যান্সারে ভুগছেন।
গত বছর গুরুতর অসুস্থ হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন লাকী আখন্দ। তখন চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন তাঁর ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়েছে।
এরপর ঢাকা থেকে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চি‌কিৎসায় পাঁচ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন। গত বছরের নভেম্বর থেকে ব্যাংককের পায়থাই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি।
সেখানে দফায় দফায় তাকে কেমোথেরাপি দেয়া হয়। কেমো শেষে ২৬ মার্চ তিনি দেশে ফেরেন।



লাকী আখন্দ বর্তমানে ঢাকায় ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
দুইমাস আগে তাঁকে ফুসফুসে ক্যান্সারের জন্য কেমোথেরাপি দেয়া হয়েছে। যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
চিকিৎসাব্যয় বহনের অক্ষমতার কারনে তাঁকেও হাত পাততে হচ্ছে দেশবাসীর কাছে।

সঙ্গীতশিল্পী ফাহমিদা নবী সেদিন আক্ষেপ করে ফেসবুকে লিখেছিলেন,
আমাদের নামের আগে বিশেষণ হিসেবে এখন থেকে দয়া করে 'দুস্থ শিল্পী' লিখলেই খুশী হবো। কিংবদন্তি বা প্রখ্যাত, বিখ্যাত লেখার কোন প্রয়োজন নাই।
শিল্পীরা দেশের সম্পদ।
অথচ আমাদের শেষ জীবনে কোন পেনশন নাই কোন জমা হিসেব নাই!
জমার খাতা শূন্য! আমাদের কোন ভবিষ্যত নাই।
আর কতো?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৫১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: খুব কষ্টের কথা। যে জাতি তার সূর্য সন্তানদের সম্মান করতে জানে না, সেই জাতি অর্থে বিত্তে যতই ধনী হোক, মন মানসিকতায় চরম দরিদ্র।

পোস্টে বর্ণিত মেধাবী মানুষদেরসহ দেশের সকল অবহেলিত শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি রইল।

ধন্যবাদ ভাই শামীম শাহ।

২| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫৬

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: সঙ্গীতশিল্পী ফাহমিদা নবী সেদিন আক্ষেপ করে ফেসবুকে লিখেছিলেন,
আমাদের নামের আগে বিশেষণ হিসেবে এখন থেকে দয়া করে 'দুস্থ শিল্পী' লিখলেই খুশী হবো। কিংবদন্তি বা প্রখ্যাত, বিখ্যাত লেখার কোন প্রয়োজন নাই।


ভাগ্যিস তারা বঙ্গ দেশে জন্ম গ্রহন করেছেন।

৩| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৫১

শামীম শাহ বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৫৯

শামীম শাহ বলেছেন: মৃত্যুর আগে আনোয়ার পারভেজ অভিমান নিয়ে কিছু কথা বলেছিলেন, অনেকেই ভাবে জয় বাংলা গানের সুর করেছি বলে আমি বিশেষ কোনো দলের। এমন ভাবনা দুঃখজনক। শিল্পীর কোনো দল নেই। শিল্পীরা সর্বদলীয়। বলতে বলতে দুর্বল হয়ে পড়েন। তবুও বলে যান।
ভাই, শুনলাম এবার একুশে পদকে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি পেলাম না। সামনে স্বাধীনতা পদক আসছে, হয়তো পাবোনা। তবুও দুঃখ নেই। কোনও কষ্ট থাকবেনা। আপনারা আমাকে ভালোবাসবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার একটাই অনুরোধ, মৃত্যুর পর কেউ যেনো আমাকে মরনোত্তর পুরস্কার না দেয়। বিছানার শুয়ে চোখ বুজেন আনোয়ার পারভেজ। যেনো কোথাও পালাতে চান।
অতঃপর...
অনেক অভিমান নিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
এই লজ্জা এই ব্যার্থতা আমাদের।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.