নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শানজিদ অর্ণবের ব্লগ

শানজিদ অর্ণব

শানজিদ অর্ণব › বিস্তারিত পোস্টঃ

অমরত্বের খোঁজে নেমে মিললো বারুদ

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৫৪

মধ্যযুগের বিখ্যাত ইংরেজ দার্শনিক, বিজ্ঞানী, কূটনীতিক ফ্রান্সিস বেকন ১৬২০ সালে তার দর্শন বিষয়ক গ্রন্থ নোভাম ওরগানাম এ লেখেন : আবিষ্কারের শক্তি, গুণাগুণ এবং তার প্রভাব পর্যবেক্ষণ করাটা সত্যিই অসাধারণ। আর কোনো কিছুই মুদ্রণ, বারুদ এবং চুম্বক আবিষ্কারের মতো এত উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠেনি। এগুলো প্রাচীন যুগের মানুষের কাছে অজানা ছিল আর এগুলোর উৎপত্তি কোথায়, কীভাবে হয়েছে সেটা এখনো অস্পষ্ট, অজানা।

বেকন সেদিন জানতেন না তখন থেকে প্রায় সাতশ বছর আগে ইউরোপ থেকে বহু দূরে দুনিয়ার এক প্রান্তে এ তিনটি আবিষ্কার হয়েছিল। আজ থেকে প্রায় ১৫শ বছর আগে চীনা আলকেমিস্টরা জীবনের মহৌষধ সৃষ্টি করতে গিয়ে তার বদলে আবিষ্কার করেন বারুদ। বারুদ দুনিয়ার প্রথম বিস্ফোরক। বহুদিন ধরে ইউরোপীয়দের দাবি ছিল বারুদের আবিষ্কার হয়েছিল ইউরোপে কিন্তু বিশ শতকের মধ্যভাগে সবর্জনসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে যে চীনই বারুদের উৎপত্তিস্থল। আবিষ্কারের পর চারশ বছর ধরে চীন এ রহস্য এমনকি তাদের দেশেই গোপন রেখেছিল। তারপর এক মোঙ্গল এ রহস্য ফাঁস করে ইসলামি দুনিয়ার কাছে। তারপর একদিন বারুদ পৌঁছায় ইউরোপের রণাঙ্গনে। ঐতিহাসিকভাবে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে, চীনারা বারুদ আবিষ্কারের পর সেটাকে সামরিক কাজে ব্যবহার না করে শুধু আগুন সংশ্লিষ্ট কাজেই সীমাবদ্ধ রেখেছিল। কিন্তু এ ধারণাটি মোটেই সঠিক নয়। আবিষ্কারের পর দ্রুতই চীনারা বারুদকে সামরিক কাজে লাগাতে শুরু করে এবং ১২০০ সাল নাগাদ চীনারা বারুদ ব্যবহার করে বিভিন্ন অস্ত্রও তৈরি করে ফেলে, যেমন আগুন বোমা, অগ্নি নিক্ষেপক, বোমা, রকেট এবং হাত চালানো বন্দুক। সে যুগে পুরো যুদ্ধব্যবস্থাকে আমূল বদলে দিয়েছিল বারুদ, সেই সঙ্গে এ আবিষ্কার বৃহৎ পরিসরে রূপান্তর ঘটিয়েছিল সমাজ জীবনেরও। উনিশ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত বারুদই ছিল দুনিয়ার একমাত্র বিস্ফোরক।

গত শতকের আগ পর্যন্ত পুরো দুনিয়ার কাছেই চীন ছিল এক দুর্গম, অদ্ভুত আর ভিন্ন দেশ। এ দেশের বর্ণমালাও দুনিয়ার আর সব এলাকা থেকে একটু ভিন্নতর। সব মিলিয়ে প্রাচীর আর পর্বতবেষ্টিত এ দেশটি বাকি দুনিয়া থেকে এক রকম বিচ্ছিন্নই ছিল। প্রাচীন চীনা ধর্মদর্শনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ তাওবাদ। তাওবাদের মূলকথা মূলত গ্রন্থিত হয়েছে তাও তে চিং (তাওয়ের ধর্মের অনুশাসন) বইয়ে। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে এ গ্রন্থ লিখেছিলেন লাও জু। তাওবাদ তৎকালীন চীনের রাজতন্ত্রের আদালত এবং আমলতন্ত্রের বিরোধিতা করে। তারা প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণভাবে মানুষের বসবাসের ওপর জোর দেন। তাওবাদীদের সন্ধান ছিল অমরত্বের, এ জন্য তাদের ছিল নানা প্রচেষ্টা। যেমন-শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম, শরীরে সূর্যের আলো লাগানো, শারীরিক কসরৎ প্রভৃতি। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সু ফু এবং হান চুং নামের দুজন মানুষ ফেং-লাই নামক এক দ্বীপের সন্ধানে পূর্বদিকের সাগরে যাত্রা করেছিলেন। সে সময় বিশ্বাস ছিল সেই দ্বীপে অমরত্বের মহৌষধ পাওয়া যায়। এরপর অমরত্বের উপাদান তৈরি করতে শুরু হয় তাওবাদীদের গবেষণা। তাওবাদীরা বিভিন্ন ধাতব উপাদান মিশ্রিত করে নতুন নতুন যৌগ তৈরি করতে শুরু করেন। সেসব উপাদান মানুষের শরীরে গ্রহণ করার পর বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে তারা সে ঘটনাকে ইতিবাচক বলে মনে করতেন। তাদের ধারণা ছিল, শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়া মানে নতুন ওষুধ শরীরে কাজ করতে শুরু করেছে এবং শরীরের বিভিন্ন বিষের সঙ্গে লড়াই করছে। গানপাউডার বা বারুদ প্রধানত তিনটি উপাদান নিয়ে গঠিত কাঠকয়লা, সালফার এবং সল্টপিটার (পটাসিয়াম নাইট্রেট)। সাধারণভাবে এ তিনটি উপাদানের নির্দিষ্ট মাত্রার মিশ্রণ বারুদের কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। কাঠকয়লা বহু হাজার বছর ধরেই মানুষের পরিচিত। সালফারের ব্যবহার চীনাদের মধ্যে প্রচলিত হয় দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দে। সল্টপিটারের ব্যবহার চীনাদের মধ্যে শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে। সল্টপিটার তাদের কাছে সিয়াও শিহ নামে পরিচিত ছিল। সিয়াও শিহ মানে সমাধান পাথর। সে যুগের এক পান্ডুলিপি লাইভস অব দ্য ফেমাস সিয়েন-এ উল্লেখ আছে যে সিয়াও শিহ খেলে জীবনীশক্তি বাড়ে। চীনা আলকেমিস্টদের মধ্যে প্রথম সালফার এবং সল্টপিটারের মিশ্রণ তৈরি করেছিলেন কো হাং ৩০০ খ্রিস্টাব্দে। এর প্রায় সাড়ে তিনশ বছর পর ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে আলকেমিস্ট সান সু-মো সালফার, সল্টপিটার এবং কাঠকয়লার একটি মিশ্রণ তৈরি করেন। এটা ছিল বারুদ তৈরি হওয়ার আগে বারুদের একেবারে কাছাকাছি চলে যাওয়া। এ সময় চীনা আলকেমিস্টরা সালফার, সল্টপিটারের সঙ্গে বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রণ তৈরি করছিলেন। সালফার, সল্টপিটারের সঙ্গে গাছের শুকনো অংশ যোগ করে তৈরি করা মিশ্রণকে বলা হতো অ্যারিসটোলোচিয়া। গাছের শুকনো উপাদান সরবরাহ করতো কার্বন, যা ওই মিশ্রণকে জ্বলে উঠতে সাহায্য করত, যদিও এতে কোনো বিস্ফোরণ হতো না। এটা নিঃসন্দেহে এক রকম বারুদ ছিল। এ সময় আলকেমিস্টদের তৈরি করা অমরত্বের মিশ্রণগুলো দাহ্য হয়ে উঠছিল, আর তাই এগুলো ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা। ৮৫০ খ্রিস্টাব্দে লিখিত ক্লাসিফাইড এসেনশিয়ালস অব দ্য মিস্টেরিয়াস তাও অব দ্য ট্রু অরিজিন অব থিংস-এ এ রকম ৩৫টি অমরত্বের মহৌষধের বিবরণ রয়েছে। উপাদানের বিবেচনায় এদের মধ্যে তিনটি ছিল বারুদের সদৃশ। আর তাই বারুদের আবিষ্কারের সময়কাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ৮০০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়কে। এভাবে অমরত্বের দাওয়াই আবিষ্কার করতে গিয়ে চীনা আলকেমিস্টরা কাকতালীয়ভাবে আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন দুনিয়ার প্রথম বিস্ফোরক, যা সমাজ আর যুদ্ধকে চিরদিনের জন্য বদলে দিয়েছিল। সেসময় চীনারা বারুদের নাম দিয়েছিল হুয়ো ইয়াও, যার অর্থ আগুন-ওষুধ।

আজ থেকে ১২শ বছর আগে চীনে যখন বারুদ আবিষ্কার হয় তখন পশ্চিমা দুনিয়ার চেয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় চীনাদের সাফল্য ছিল অনেক বেশি। সে যুগে চীনের লোকসংখ্যা ছিল সাড়ে ছয় কোটি। পৃথিবীর চার ভাগের একভাগের বেশি মানুষ তখন চীনের অধিবাসী। সেসময় দুনিয়ার সবচেয়ে সুগঠিত রাষ্ট্র কাঠামো ছিল চীনে। চীনের সেনাবাহিনীতে তখন সাড়ে ১২ লাখ সেনা ছিল, যা তখনকার ইংল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার সমান। চীনের অর্থনীতিতে তখন লোহা ও অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার ভালভাবেই শুরু হয়ে গেছে। এমন এক প্রেক্ষাপটে তাই আগুন-ওষুধকে দ্রুতই বারুদের রূপ দিয়েছিল। এবং তৈরি হয়েছিল দুনিয়ার প্রথম বারুদ ব্যবহারকারী আগ্নেয়াস্ত্র। দুনিয়ার প্রথম বারুদ ব্যবহারকারী আগ্নেয়াস্ত্রের বর্ণনা পাওয়া যায় কালেকশন অব দ্য মোস্ট ইমপরট্যান্ট মিলিটারি টেকনিকস নামক চীনা এক গ্রন্থে। ১০৪০-৪৪ খ্রিস্টাব্দে সাং দরবারের রাজকীয় জ্যোতির্বিদ সেং কুং লিয়াং লিখেছিলেন সেই গ্রন্থ। তবে এ গ্রন্থ লেখা হয়েছে বারুদনির্ভর আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের দেড়শ বছর পর। বারুদের গুরুত্ব খুব দ্রুতই উপলব্ধি করে ফেলেন চীনা রাষ্ট্রের কর্তারা এবং সে কারণে বারুদ তৈরির ফর্মুলা রাষ্ট্রীয় গোপনীয় বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ১০৬৭ খ্রিস্টাব্দে চীনা সরকার বারুদ এবং এর উপাদান বিদেশে রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়। এর নয় বছর পর ব্যক্তিপর্যায়ে সালফার এবং সল্টপিটারের বিনিময় নিষিদ্ধ করা হয়। বারুদের মাধ্যমে প্রথম কবে বন্দুক তৈরি হয় তা নিয়ে অস্পষ্টতা ও বিতর্ক আছে। প্রথমে ধারণা করা হতো ১২৮০ খ্রিস্টাব্দে চীনারা প্রথম বন্দুক ব্যবহার করেন। এটা ছিল ইউরোপে বন্দুক ব্যবহার শুরুর ৫০ বছর আগের কথা। কিন্তু গত দু দশকের গবেষণায় এটা নিশ্চিত হয়েছে যে, চীনারা ইউরোপের চেয়ে কমপক্ষে দুশ বছর আগে বন্দুক ব্যবহার করেছে। ১৩৩০ সাল নাগাদ চীনে বৃহৎ পরিসরে বন্দুক তৈরি শুরু হয়। এটা নিশ্চিত যে, ১৩০০ সালের আগে ইউরোপে কোনো বারুদনির্ভর অস্ত্র ছিল না। অন্যদিকে ৯০০ খ্রিস্টাব্দের পর চীনারা পরবর্তী চারশ বছরে বারুদনির্ভর বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র তৈরি করে ফেলেছিল।

৮০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বারুদ আবিষ্কারের পরবর্তী চারশ বছর চীনারা বারুদ এবং বারুদনির্ভর অস্ত্রের রহস্য তাদের দেশেই আটকে রাখতে পেরেছিল। সাং সাম্রাজ্য তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল বারুদের রহস্য তাদের দেশে গোপন রাখতে। ১০০০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে সাং সাম্রাজ্য স্তেপ অঞ্চলের যাযাবরদের আক্রমণের মুখে পড়তে থাকে। ১১২৬ খ্রিস্টাব্দে চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে আসা জুরচেনরা সাং রাজধানী কাইফেং দখল করে নেয়। এরপর বারুদের রহস্য জেনে নেয় তারা। এরপর প্রায় ১০ বছর সাং ও জুরচেনদের মধ্যে যুদ্ধ চলে। ১১৩১ সালে সাংরা পুনরায় জুরচেনদের পরাজিত করে। কিন্তু বারুদের রহস্য ততদিনে সাংদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। কিন্তু ১২০০ সালের পর জুরচেনরা নিজেরাই আরেক দুর্ধর্ষ হামলাকারীদের কবলে পড়ে। আর তারা হলো স্তেপ থেকে আসা মোঙ্গল, যাদের নেতা ছিলেন চেঙ্গিস খান। ১২১৪ সালে মোঙ্গলরা জুরচেনদের রাজধানী দখল করে নেয়। এ সময় মোঙ্গলরা বারুদের ব্যবহার শেখে। ১২৩৫ সালে জুরচেনরা পুরোপুরি পরাজিত হয়। এরপর মোঙ্গলরা নজর দেয় সাংদের দিকে। ১২৭৬ সালে সাংদের রাজধানীর পতন হয়। জুরচেন এবং মোঙ্গলরা বারুদের ব্যবহার শিখে নিলেও তা এ অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকে। চীন এবং সংলগ্ন অঞ্চলে মোঙ্গলদের অভিযানের সময় তাদের দলে ছিল দুজন মুসলিম প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। তাদের একজন ছিলেন ইরাকের মসুলের আলা আল-দিন এবং হেরাতের ইসমাঈল। মোঙ্গল এবং চীনাদের যুদ্ধ থেকে এ দুই মুসলিম বিশেষজ্ঞ বারুদের ব্যবহার জেনে নেন। ১২৮০ সালে তারা ইরান-ইরাকের দিকে ফিরে যান। এখান থেকেই বারুদের জ্ঞান ছড়িয়ে পড়ে মুসলিম দুনিয়ায়। মুসলিমদের কাছেই ইউরোপীয়রা প্রথম বারুদের ব্যবহার দেখেছিল। এবং সেটা হয়েছিল মোঙ্গলদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা ইরানে। ইতালীয় বণিক লুচেট্টো দে রেক্কো ১২৮০ সালে ইরানে পৌঁছান। ধারণা করা হয় এই রেক্কোই প্রথম ইউরোপীয় যে বারুদের ব্যবহার দেখেছিল। এক্ষেত্রে আরও একটি সম্ভাবনার কথা প্রচলিত আছে। বিখ্যাত পরিব্রাজক মার্কো পোলোর পিতা এবং চাচা যথাক্রমে নিক্কোলো ও মাফিয়ো পোলো ১২৬১ থেকে ১২৬৯ সাল সময়কালে চীনে ছিলেন। এ দুজনও বারুদের রহস্য পশ্চিমে নিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন বলে কারো কারো ধারণা। তবে মোঙ্গলদের বিবরণ মতে, ১২৮০ সালে মোঙ্গল গোলন্দাজ শি-উ-ওয়েন বারুদের ব্যবহার পশ্চিমের দুনিয়ার কাছে প্রকাশ করেন। যদি এমনটা হয় তাহলে ধরে নিতে হবে যে সাংদের পরাজিত করার পর মোঙ্গলদের সেই মুসলিম উপদেষ্টাদের সঙ্গে শি-উ-ওয়েন ফিরে গিয়েছিলেন।

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ দালিলিক প্রমাণ রয়েছে যে বারুদ চীনেই উদ্ভব হয়েছিল। বিস্ফোরক দ্রব্য বলতে মুসলমানরা প্রথম পরিচিত হয়েছিল সল্টপিটারের সঙ্গে যা তাদের এলাকায় পাওয়া যেত না। ১২৪০ সালে ইবন আল-বাইথারের লেখা বুক অব দি অ্যাসেম্বলি অব মেডিক্যাল সাপ্লাইজ বইয়ে উল্লেখ পাওয়া যায় সল্টপিটারের। আর আরব দুনিয়া সল্টপিটারকে থালজ আল-সিন নামে ডাকত যার অর্থ চীনা বরফ। পঞ্চদশ এবং ষষ্ঠদশ শতকে অটোমান এবং মুঘলরা বারুদের ব্যবহার রপ্ত করে নেয়। দ্বিতীয় সুলতান মোহাম্মদ কনস্ট্যান্টিনপোল দখলের পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন বারুদের ওপর। এজন্য আক্রমণের আগে তিনি বারুদের বিরাট ভান্ডার গড়ে তোলেন। সুলতান মোহাম্মদ কামান তৈরির জন্য নিয়োগ করেন হাঙ্গেরির বিশেষজ্ঞ উরবানকে। উরবান সুলতানকে ছাব্বিশ ফুট লম্বা একটি কামান তৈরি করে দেন। আর এ কামানই কনস্ট্যান্টিনপোল দখলের মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৫২৬ সালে মুঘল বাদশাহ বাবর বারুদের অস্ত্র নিয়ে আসেন ভারতে এবং ইব্রাহিম লোদীকে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে পরাজিত করেন। গানপাউডার নিয়ে ইউরোপের প্রথম দালিলিক সাক্ষ্য পাওয়া যায় ১৩০০ সালে লিখিত লাইবার ইগনিয়াম এড কমবুরেন্ডোজ হস্তেজ বা বুক অব ফায়ারস ফর দ্য বার্নিং এনিমেজ নামের ছয় পাতার এক নোটে। ধারণা করা হয়, মার্কাস গ্রিকাস নামক এক ব্যক্তি এ লেখা লিখেছিলেন যদিও এ ধারণা প্রমাণিত নয়। তবে এ লেখার ভিত্তি ছিল কোনো আরবি দলিল, এটা নিশ্চিত।



তথ্যসূত্র :

Ponting, Clive, Gunpowder An Explosive History: From the Alchemists of the China to the Battlefields of Europe, Pimlico, London, 2006.

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৮

নিঃসঙ্গ অভিযাত্রিক বলেছেন: নির্ভুল বানানে লিখা একটা সুন্দর পোস্ট পড়লাম। ধন্যবাদ লেখককে এমন উপহার দেওয়ার জন্য। !:#P

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৩৪

শানজিদ অর্ণব বলেছেন: নিঃসঙ্গ অভিযাত্রিক , অাপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:২২

যাযাবর বেদুঈন বলেছেন: হুয়ো ইয়াও সম্পর্কে অনেক কিছু জানা গেল। চীনারা আসলেই জন্মগত জিনিয়াস। কিন্তু এত আগে তারা বারুদ তৈরি করেও যে কেন ক্ষমতায় পিছিয়ে ছিল বুঝলাম না। আলকেমি সম্পর্কে জানা ছিল কিন্তু আপনার মাধ্যমে হুয়ো ইয়াও সম্পর্কে জানতে পারলাম। লেখাও খুব চমৎকার তাই পড়ে তৃপ্তি পাওয়া গেল।

বারুদ নিয়ে এমন চমৎকার একটি পোস্টের জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৪

শানজিদ অর্ণব বলেছেন: যাযাবর বেদুঈন , আপনার মন্তব্যটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। চীনারা যে জিনিয়াস এ বিষয়ে আমি আপনার সঙ্গে একমত। শুধু চীন কেন পুরো পূর্ব গোলার্ধই ১৭ শতক পর্যন্ত পশ্চিমের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। কিন্তু আজকে পশ্চিম অনেক এগিয়ে। বিষয়টা নিয়ে আমিও আগ্রহী। আমি মোটামুটি যেটা মনে করি সেটা হল, পশ্চিমের মনোভাব ছিল বণিক এবং দস্যু। তারা পূর্বে ব্যবসা করতে এসে দেশ দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষ এসব নিয়ে কখনো ভাবেনি। শিল্প বিপ্লবটা শেষ পার্থক্যটা গড়ে দিয়েছে। এখানেও কয়েকজন গবেষক বলেছেন যে পশ্চিমাদের মতো চিন্তা করলে শিল্পবিপ্লব চীন, ভারত, মিশরে সহজেই হতে পারতো।
বিষয়টির অবতারনা করায় আপনাকে ধন্যবাদ।

৩| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০২

যাযাবর বেদুঈন বলেছেন: এইটা একটা গুরুত্ব পূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন। কিন্তু তারা যদি সেই প্রথম থেকেই শিল্প বিপ্লব নিয়ে ভাবত তাহলে আজকে এই অঞ্চলের মানুষই হত শক্তশালী। ইউরোপ কিংবা আমেরিকা এভাবে পৃথিবী শাসন করতে পারত না। কিন্তু এই অঞ্চলের মানুষ সেটা বুঝলেও অনেক দেরী হয়ে গেছে।

আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ চমৎকার একটা ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য।

৪| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:১৯

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.