নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখন আর কিছু নেই, কেবল তুমি, আমি আর মাঝখানে এক অবিন্যস্ত উঠোন!

শানরাইনা

লিখতে পছন্দ করি, পাশাপাশি ছবি তুলতে (আরও অনেকের মতই)!

শানরাইনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মা কি মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকবে?

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:২০

রেনে দেকার্তের একটি থট এক্সপেরিমেন্ট যার ভিত্তিতে এই ছোট লিখাটি (ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক শেলী ক্যাগান এর বক্তৃতা অবলম্বনে)

দেকার্তের পরীক্ষা
এই পরীক্ষাটার শুরুই চিন্তা থেকে যেখানে আমি একটা সকালের কথা ভাবছি। ধরি, একদিন সকালে ঘুম ভেঙে আমি হেটে বাথরুমে যেয়ে আয়নায় তাকাতেই দেখলাম যে আমি আমাকে আয়নায় দেখতে পাচ্ছি না (মানে আমার শরীরকে দেখা যাচ্ছে না), আয়নায় কিছুই নেই। যেখানে আমার মাথা থাকার কথা (অন্তত যেখানে আমার মাথা থাকবে বলে আমি ভাবছি) সেখানে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেয়ার চেষ্টা করলাম; আমার মাথা তো দূরে থাক, কোন কিছুই অনুভব করতে ব্যর্থ হলাম। হাতের দিকে তাকালাম, কিছু নেই, আংগুলের দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম, সেখানেও কিছু নেই। আমার গোটা শরীরটাই নেই, কিন্তু আমি আছি, কারণ আমি যেহেতু এরকম একটা চিন্তা করতে পারছি, যার অর্থ যেকোন উপায়েই হোক আমার অস্তিত্ব বর্তমান! এই ‘আমি’ টাই দেকার্তের ‘চিন্তা করতে পারা সেই অস্তিত্ব’—মন কিংবা আরও নির্দিষ্ট করে বললে ‘আত্মা।’
দেকার্তের সিদ্ধান্ত হচ্ছেঃ আমি যেহেতু আত্মাকে (আমাকে) দেহের অস্তিত্ব ছাড়া কল্পনা করতে পারছি সেহেতু আত্মা অবশ্যই শরীর থেকে আলাদা কিছু, যা শরীরের মত কোন বস্তু নয়, বরং অশরীরী (Immaterial)—মন ও আত্মার দ্বৈত (Dualist) তত্ত্বে বিশ্বাসী কার্টেসিয়ান বা দেকার্তের অনুসারিরা একে প্রমান হিসেবে উপস্থিত করে।

[দেকার্তে দর্শনে অস্তিত্বের জন্য অবশ্যম্ভাবী হচ্ছে চিন্তা করার ক্ষমতা কারণ দেকার্তে বলছে ‘আমি ভাবি, তাই আমি আছি’ (I think, therefore I am—Cogito, ergo sum)].

আত্মার অস্তিত্বের বিষয়ে সক্রেটিসরও এমনই ধারণা (প্লেটোয় বর্ণিত সক্রেটিস হেমলক পানে মৃত্যুর আগে তাঁর অনুসারিদের সাথে কথোপকথনের সময় এসব ব্যাখ্যা দিয়ে যায়। প্লেটো সক্রেটিসকে দ্বৈতবাদি হিসেবেই চিত্রিত করেছে, প্লেটো নিজেও তাই)। সক্রেটিসে আত্মা হচ্ছে সেই আলাদা অস্তিত্ব যেটা চিন্তার দিকটাই কেবল দেখে; ইচ্ছা, আকাঙ্খা, অনুভূতি ইত্যাদি শারীরিক বিষয়ের সাথে আত্মার কোন সম্পর্ক নাই, এসব কেবলই শরীরের বিষয়। সুতরাং আত্মা হচ্ছে যৌক্তিক/বুদ্ধিবৃত্তিক। তাছাড়া সক্রেটিসের কথোপকথনে আত্মার অস্তিত্ব আছে কি নেই সেই ব্যাপারে এমন কোন জোড়ালো যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করা নেই, কেননা আত্মার অস্তিত্বের বিষয়ে সক্রেটিসে এটিকে পূর্ব-ধারণা হিসেবে সুনিশ্চিত বলেই ধরে নেয়া হয়েছে। সক্রেটিসের প্রশ্ন তাই আত্মা আছে কি নেই তা নয় বরং আত্মা অবিনশ্বর কিনা সেই বিষয়কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। তার মূল প্রশ্ন বরং আত্মা শরীরের মৃত্যুর পরও বেঁচে যাবে কিনা তাই নিয়ে, এবং সেই প্রশ্নেও সক্রেটিসের সিদ্ধান্ত যে আত্মা অবিনশ্বর। আরেকটা বিষয়, সক্রেটিসে আত্মা বরং সৌন্দর্য্য বা ন্যায্যতার মত এরকম আরও বিমূর্ত ধারণার বিষয়ে চিন্তা করে, প্লেটোর দর্শনেও তাই।

প্লেটোর দর্শনে যেহেতু বাস্তব পৃথিবীতে পরিপূর্ণ সৌন্দর্য্য বা সম্পূর্ণ ন্যায্যতার কোন বাস্তবিক উদাহরণ নেই, আছে কেবল প্রায়-সুন্দরের ধারণা বা প্রায়-ন্যায্য সমাজ, তাই এসব কেবল আত্মাই ভাবতে পারে। একারনেই সৌন্দর্য্য বা ন্যায্যতার মত বিমূর্ত ধারণাকে বলা হয় প্লেটোনিক; অন্যদিকে, শরীর কেবল এসব সৌন্দর্য্য বা ন্যায্যতার মত বিমূর্ততার সাথে এক ধরনের মিথস্ক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে। একটা উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে, ধরা যাক সংখ্যা, আমাদের মন সংখ্যা ভাবতে পারে—যেমন দুই (২) সংখ্যাটা। কিন্তু সংখ্যার ধারণা এমন একটা ধারণা যেটা প্রাকৃতিক জগতে অনস্তিত্বমান, এটিকে দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না, খাওয়া যায় না, কেবল চিন্তা দিয়ে একে ভাবতে পারা যায় বা কল্পনায় আনতে পারে—এসবই প্লেটোনিক বিমূর্ত ধারণা যা মনই কেবল ভাবতে পারে। দেহ এই বিমূর্ত ধারণার সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে কেবল, যেমন চোখ দুটি বস্তু দেখতে পায়, কিন্তু এমন নয় যে দুই সংখ্যাটার কোন বাস্তবিক অস্তিত্ব আছে, আদতে কোন সংখ্যারই কোন অস্তিত্ব নেই, কিন্তু আমরা চিন্তার মাধ্যমে অংক করতে পারি, এসব প্লেটোনিক আরও বিমূর্ততাকে চিন্তা করতে পারি।

প্রতি উত্তর
এর বিপরীতে যারা আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না (Physicalist) তারা আরেকটি উদাহরণ উপস্থাপন করে। দেকার্তের সেই থট এক্সপেরিমেন্টের আদলে কল্পনা করি এমন একটা পৃথিবী যেখানে শুকতারা নেই কিন্তু সন্ধ্যা তারা আছে, এরকম একটা কল্পনা করা সম্ভব নয়। আমি এটি সম্ভব বলে ভাবলেও আসলে এটি কল্পনা করা যাবে না, কারণ শুকতারা ও সন্ধ্যাতারা মূলত একই, যা আদতে কোন আলাদা তারাতো নয়ই বরং এটি শুক্র গ্রহ। সুতরাং, গ্রহটি সন্ধ্যায় থাকবে আর ভোরে থাকবে না এই কল্পনা অসম্ভব, যেহেতু এটি একই বস্তু। তাছাড়া, প্রথমাবস্থায় আমি এমনটা কল্পনা করতে পারছি মনে হলেও প্রকৃতপ্রস্তাবে আমি এটি কল্পনা করতে পারি না। একই ভাবে, আসলে দেহহীন আত্মার অস্তিত্বের বিষয়ে আমি কল্পনা করতে পারছি এটি ভাবলেও আদতে দেহ ছাড়া আত্মার অস্তিত্ব চিন্তা করা যায় না...।
সুতরাং দেহের মৃত্যুর পর আত্মার টিকে থাকার সম্ভবনাও এই দর্শনে খারিজ করে দেয়া হচ্ছে। দেহহীন আত্মার অস্তিত্ব বলে কিছু নেই, এই দর্শনে আত্মার অস্তিত্ব বা চিন্তা করাকে ক্ষমতাকে দেহের এক বিশেষ দক্ষতা হিসেবেই দেখা হয়।

কিন্তু মজার বিষয় হলঃ দেকার্তের চিন্তা পরীক্ষাটা শুকতারা ও সন্ধ্যাতারার (শুক্রগ্রহের) ক্ষেত্রে পরীক্ষা করতে গিয়ে ঠিক কোথায় যেয়ে যে গলদটা হয় সেটা চিহ্নিত করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।

২১ আগষ্ট, ২০২০

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:২৬

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: আত্মা , মানুষ সৃষ্টি লক্ষকোটি বছর আগেও ছিল এবং মরনের পরেও থাকবে।দেহ থেকে আত্মার বিচ্যুতিতে দেহের মরন হয় কিন্তু আত্মা বেঁচে থাকবে অসীম কাল।

২| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৭

ফটিকলাল বলেছেন: দর্শন আমার পছন্দের বিষয়। সরাসরি প্রিয়তে

৩| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:১৩

রাসেল বলেছেন: Thanks for your topic. though not clear yet. Pray to post regularly such type of topics.

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:১৭

শানরাইনা বলেছেন: এটি আরও আছে, হয়ত আরও পরিষ্কার করে বোঝা যাবে পরবর্তিতে।

৪| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: খুব কঠিন বিষয় নিয়ে লিখেছেন। এসব আমার মাথায় ঢুকবে না।

৫| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আত্মা কি?
মানব দেহের চালিকা শক্তি। যা চলে গেলে দেহ নিথর হয়ে পড়ে।

যদিও আত্মা বা রুহ এর পরিচয় সরাসরি বলা নেই -শুধু স্রষ্টার ফুৎকার বা আদেশ হিসেবেই
সীমিত আকারে বর্ণনা পা্ওয়া যায়।

বাস্তবতায় আমাদের অনুভবে যা পাই- নিত্য চলমান ক্রিয়াশীলতাই জীবন। মানে একটা শক্তির খেলা
আর যদি নূর যার অর্থ আলো+শক্তি তাতেও ভাবনাটা মিলে যায়।

এবার আসুন শক্তির শক্তির অবিনশ্বরতা বা নিত্যতা বা সংরক্ষণশীলতা নীতি: ও শক্তিররূপান্তর: নীতির দিকে তাকাই।

শক্তি যখন একরূপ থেকে অন্যরূপে পরিবর্তিত হয় তখন শক্তির কোনো ক্ষয় হয় না। এক বস্তু যে পরিমাণ শক্তি হারায় অপর বস্তু ঠিক সেই পরিমাণ শক্তি লাভ করে। প্রকৃতপক্ষে আমরা নতুন কোনো শক্তি সৃষ্টি করতে পারি না বা শক্তি ধ্বংসও করতে পারি না। অর্থাৎ বিশ্বের সামগ্রিক শক্তি ভাণ্ডারের কোনো তারতম্য ঘটে না। এ বিশ্ব সৃষ্টির প্রথম মুহূর্তে যে পরিমাণ শক্তি ছিল আজও মহাবিশ্বে সেই পরিমাণ শক্তি বর্তমান। এটাই শক্তির অবিনশ্বরতা বা নিত্যতা বা সংরক্ষণশীলতা।

শক্তিররূপান্তর: নীতি : আমরা আগেই বিভিন্ন প্রকার শক্তির কথা বলেছি সেগুলো সকলেই পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত। অর্থাৎ কোনো একটা থেকে অন্যটাতে পরিবর্তন সম্ভব। এ পরিবর্তনকে শক্তির রূপান্তর বলে। আসলে প্রায় প্রত্যেক প্রাকৃতিক ঘটনাকেই শক্তির রূপান্তর হিসেবে ধরা যেতে পারে।

তাহলে হিসাবটা খুব সহজ হয়ে গেল। আত্মা দেহ ছেড়ে অন্য কোন রুপ লাভ করে অন্য শক্তি হিসেবে বিরাজ করে।
সেখানেই তার কর্মফল অনুযায়ী ভাল বা মন্দ দুটো অবস্থার একটা লাভ করতে হয়। দেহটা প্রাকৃতিক নিয়মেই শক্তির রুপান্তর সূত্রে আবার প্রকৃতিতে মিশে গিয়ে ব্যালেন্স ঠিক রাখে। তা কবর দিয়ে হোক বা পুড়ে বা অন্য উপায়ে!
প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মেই তা পরিচালন করে।
এখানেই পুনর্জন্ম তত্বের বিকাশ ঘটে। তা যেমন হিন্দু ধর্মে তেমনি কোরআনে বিবৃত হয়েছে। আবার কারো কারো মতে হাশর বা কর্মফল এই দুনিযাতেই। নিত্য ঘটছে। মানুষ যা করছে তারই প্রতিফল সে পাচ্ছে। তার কর্মানুপাতেই মৃত্যুর পর তার শক্তির উন্নতি বা অবনতি ঘটবে -মূল শক্তি জগতে।

ভাবনাটা কেমন লাগলো? ;)

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:০০

শানরাইনা বলেছেন: শক্তির অবিনশ্বরতা বা নিত্যতার নীতি প্রসঙ্গে দেহকে এটমিক লেভেল থেকে দেখে এত সহজেই হিসাবটা মিলিয়ে দিতে পারলে আমিও বেশ সুখিই হতাম। বিষয়টা বোঝার জায়গা থেকেই তাই এমন চটজলদি সরলীকরণে আমি ঠিক সন্তুষ্ট হতে পারলাম না বলেই এই আলোচনার সূত্রপাত। আর "যা চলে গেলে দেহ নিথর হয়ে পড়ে" বলে যাকে ইঙ্গিত করছেন সেই বিষয়েই দ্বৈতবাদি এবং দেহবাদির (Physicalist), যাকে বস্তুবাদিও বলা হত, এই বিতর্কের সূত্রপাত। তবে আলোচনায় ভিন্ন মতের জন্য ধন্যবাদ।

৬| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩২

চাঁদগাজী বলেছেন:


বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন:, "ভাবনাটা কেমন লাগলো?"

-ভাবনাটা ভুল, অপক্ক, অকাজা, লিলিপুটিয়ান, পিগমী টাইপের।

৭| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৫৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হা হা হা

চাঁদজাগী ভায়া -বারবার কেন প্রমাণ দেন সেই প্রবাদ বাক্যের : যে নিজে যেমন সে অন্যকে ভাবে তেমন!

আমিতো স্বকীয়তায় নিজের মতও করে ভাবতে পারি। আপনি?
খালি অন্যের পশ্চাতে আঙলী করে বেড়ান!!! ছে ছে ছে!
শেষ বয়সে এইটা কুন কাম হইলো :P

অন্যের পিছে না লেগে আপনার নির্ভুল, পক্ক, কাজা, গালিভারিয়ান, টাইপে ভাবনা শেয়ার করুন!
জাতি উপকৃত হোক।আর পৃথিবীর বিপন্ন প্রায় পিগমী জাতিদের নিত্য অপমানের জন্য আপনেরে কেউ রেসিস্ট কইলে আবার আমারে দুষ দিয়েন না ;)

৮| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৫

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: বাহ, খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন। ++

৯| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৫৫

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: আত্মা আছে এমন কোন বৈজ্ঞানিক প্রমান নেই।থাকলে বলুন।
চিন্তা করে মস্তিস্ক আত্মা নয়।

১০| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪৩

রাসেল বলেছেন: The comments in serial 5 and response also enjoyable. It makes this blog fruitful.
Some people wants to make garbage. I think they know better than much of us but act to implement any Agenda of any Group.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.