নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভোর সাড়ে চারটায় ফোন, "কিরে উঠেছিস? উঠে পড় মামা আজকে সকাল সকাল বেরুতে হবে।" রমিন, চিরাচরিত রমিন। ক্যারা উঠেছে বলতে হবে। মানে ঘুরুন্তিস এর পাগলামি যে তার নিয়মিত ওঠে বা সে যে প্রায়ই খুব প্রো-এ্যাকটিভ হয়ে ওঠে সেটা বলছি না। কিন্তু যখন ওঠে তখন সেটাকে দমিয়ে রাখা বিশেষভাবে কঠিন। যাই হোক যাত্রার শুরুটা গত রাতেই হতে পারতো কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত আর হয়ে ওঠেনি। আমাদের টিম মানে অলোক, রমিন, রেদোয়ান আর আমি একসাথে ঘোরাঘুরি করি বেশ কয়েক বছর ধরেই। লং ড্রাইভ, বাইক রাইড, বাস, ট্রেন, লঞ্চ, প্লেন কোনকিছুই বাদ নেই। সকালের এ্যাটেডেন্স শেষ করতে পারলাম না, আবারো রমিন, “ওঠ তোর বাসার নীচে”। বাববাহ। রমিন সর্ম্পকে অনেক ভালো কথা বলা হয়ে যাচ্ছে আসলে। আশাকরি এই ভালোটা সে নিয়মিত থাকবে। নীচে নেমে প্রথম প্রশ্ন, “অলোক?” আমাদের টিমের সবচেয়ে ভালো ছেলে, সবচেয়ে জেন্টেলম্যান, সবচেয়ে উপকারী, সবচেয়ে সতর্ক, সবচেয়ে আবেগী এবং সবচেয়ে লেইট। সময় ওর কাছে স্থিরক্ষেত্র। আইনস্টাইন এর আপেক্ষিকতার সূত্র যদি কেউ সত্যিকার অর্থে যাপণ করে থাকে সে অলোক। “আমি তিনবার ফোন দিসি আর পারবো না (তবে এরমধ্যে অলোক কিন্তু ফোন ধরেছে, সেট ভুলে গেলে চলবে না।)”, রমিনের সাফ জবাব। রমিন আর অলোকের সর্ম্পক অতি মধুর, বিশেষভাবে সময় নিয়ে। খ্যাকখ্যাক, খ্যাকখ্যাক। গাড়ীতে উঠে বসতেই, নানান কসরৎ করে যখন রমিনের বাসার কাছাকাছি পৌছালাম, তখন দেখি রেদোয়ান, ঘুমের সবটুকু আবেশ মুখে মেখে সটান দাঁড়িয়ে। রেদোয়ান, বিশেষভাবে পরিচয় করিয়ে দেবার প্রয়োজন আছে। আমাদের মধ্যে ভীষণ দায়িত্বশীল, নিয়মানুবর্তী, ভারসাম্যকারী, দারুণ স্ট্যামিনা শুধু একটাই সমস্যা বিশেষ রকমের দায়িত্বশীল, মানে অতিমানবিক পর্যায়ের। সবকিছু দায়িত্ব নিয়ে ঠিক রাখতে রাখতে ওকে পাওয়াটাই ক্রমাগত দুর্লভ হয়ে উঠেছে। মানে, সবাইকে সুখী করার দায়িত্ব প্রিয় বন্ধুটি একাই নিয়ে ফেলেছে। ওহ! অলোকের কথাতো ভুলেই গেছিলাম, ওকে ফোন দেয়াতে ও জানালো যে ইতোমধ্যেই বাসা থেকে নামবে বলে মনোস্থির করতে পেরেছে। বাহ!। কিন্তু লিফট বন্ধ থাকায় সিঁড়ি দিয়ে নামতে ওর সমস্যা হচ্ছে। মানে দেরী হচ্ছে। অলোকের ধীরে বহে মেঘনা স্বভাবের সাথে রমিনের ও ইয়েস এখনি গাড়ী চালানোয় স্পিড বেড়ে গেলো কয়েকগুণ। ফলে ভোরের আলোতে আমরা যখন অলোকের বাসার গলিতে, তখন দূর থেকে দেখা গেল তিনি আসছেন। একহাতে ছোট একটা পোটলা আর আরেকহাতে গোসল/চেঞ্জ ইত্যাদির জন্য থ্রীকোয়ার্টার। পুরাই জমিদারী চাল। গাড়ীতে বসতেই প্রথম কথা “নে খা”, দেখলাম গত রাতের শবে বরাতের হালুয়া আর বরফী। এই যাত্রায় ওর শ্লো-মোশনের ভর্তুকি ভালৈ হল। আমরা আর কিছু বললাম না। আমি আর রেদোয়ান যখন ভীষণ মনযোগ দিয়ে সকালের আহারে ব্যাস্ত, তখনি জাতির বিবেকের কাছে প্রথম প্রশ্ন, “আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
আরে তাইতো। গতকাল না হয় অলোককে সিলেট যাবার প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। আজকে নতুন দিন। সামনে গোটা বাংলাদেশ উন্মুক্ত। অনেক ভেবেচিন্তে আমার মাথায় একটা উত্তর আসলো, “আপাতত সিএনজি নিতে”। তো নীলক্ষেত থেকে সিএনজি নিয়ে, বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে আমরা রওনা দিলাম নদীর কাছে, মানে মাওয়া। এই তো দেখতে দেখতে চলে যাব। রমিনের হাতে স্টিয়ারিং, অলোক প্রস্তুতি নিচ্ছে, গাড়ী দেখলেই বলবে “রমনি, সাবধান! আস্তে”। আমি আর রেদোয়ান পেছনের সিটে বসে সিগারেট শেয়ার করছি। ঢাকা শহর জেগে উঠছে পেছনে, আর সামনে নদীর ডাক।
বুড়িগঙ্গা সেতুতে সকালের আলোয় বন্ধুরা
সকালের বুড়িগঙ্গা
ঢাকা আদিরূপ কেমন হোত?
সামনে অবারিত সবুজ
মাওয়া ঘাট
বিস্তৃর্ণ পদ্মা
কীভাবে নদী পার হতে হবে সেটাই যেন দেখাচ্ছে রেদোয়ান
অসম্ভবকে সম্ভব করাই যেহেতু অলোকের কাজ তাই নোঙ্গর তোলার দায়িত্ব সে নিজেই নিয়েছে
যদিও ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী তখন গদ্যময়, সময় হয়েছে সকালের নাস্তা করার
ফেরি আসতে অনেক দেরী, এখনি খেয়ে নেন বলে আশ্বস্ত করছিল দোকানের মালিক। আর করবেনাই বা কেন? ইলিশ! এমন সাজানো সুন্দর ইলিশ; এই সকালে। নেহায়েত
ফেরী কাছে চলে এসেছিল বলে পরোটা; ভাজি আর ডিম দিয়ে নাস্তা সারলাম। তখনি সিদ্ধান্ত হল, মাওয়া তো দেখা হলই এবার ওপাড়ে যাওয়া যাক। গোপলগঞ্জ টুঙ্গিপাড়াটা দেখে আসা যাক।
ফেরি নোঙ্গর করছিল। আর তখনি জানতে পারলাম, ফেরির জন্য আলাদা টিকিট। তাহলে মাওয়ার ঢোকার জন্য যে টিকিট কাটলাম তার কি হল? সেই দুর্লভ ৫০টি টাকা?
ফুটবল উন্মাদনা যে কি পর্যায়ে রয়েছে এই দেশে তা আবার প্রমাণিত হল।
মাওয়াকে বিদায় জানিয়ে এবার আমরা ওপাড়ের পথে। আপাতত গন্তব্য গোপালগঞ্জ।
তবে বেশিক্ষণ বিস্তৃত পদ্মায় থাকার সুযোগ হল না। ফেরি ঢুকে পড়ল খালে।
এই ঠেলেনেয়া ফেরিটা বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হল
ফুটবল উন্মাদনার নজির কিন্তু দেখা গেল জলপথের সবখানেই
প্রতিটা লঞ্চ একএকটা হোটেল, খাবার হোটেল থাকার হোটেল, চায়ের দোকান সবকিছুর এক বিচিত্র মিশ্রণ। তাই খুব সকালেই সেখানে ভাতের আয়োজন। বার্বুচি তরকারী কুটছে, প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কেউ বা ব্যস্ত হাল ফ্যাশানে নিজেকে একটু দেখে নিতে।
সবারই অপেক্ষা গন্তব্যে পৌছানোর
কিন্তু গন্তব্য আসলে কি, ছায়া নাকি কায়া?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই তরী ভিড়লো। সময় লাগলো এক ঘন্টারও কম। আবার শুরু হল লং ড্রাইভ, সেই গল্প আর ছবি পরবর্তী পর্বে।
২২ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৯:০৯
শরৎ চৌধুরী বলেছেন: গ্রানমা, একদম নষ্টালজিক এক স্মৃতি গাহন। নগরবাড়ি টু আরিচা ফেরি পারাপারে কতই না গল্প কতই না ইতিহাস। রাজধানীতে পৌছানো কতই না কঠিন ছিল আবার ছিল নতুন নতুন সম্র্পক তৈরির হাতছানি। শুভেচ্ছা অশেষ।
২| ২০ শে জুন, ২০১৪ ভোর ৬:১৯
মেহেদী_বিএনসিসি বলেছেন: মাওয়ার ইলিশ খেয়ে আমার এক ঈদের ছুটিই পন্ড হতে বসেছিলো..... তারপরেও জীবনে যদি আবার কখোনো যাওয়া হয়......ইলিশ না খেয়ে আসবোনা।
২২ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৯:১০
শরৎ চৌধুরী বলেছেন: হাহাহাহাহা ইলিশের লোভ, এই লোভ এড়ানো অসম্ভব। ইলিশ না খেয়ে আসলে আপনাকে জরিমানা করা হবে কিন্তুক। শুভেচ্ছা মেহেদী।
৩| ২১ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:৩৭
মামুন রশিদ বলেছেন: ঘুরন্তিস ভাল্লাগছে । স্টুডেন্ট লাইফে বন্ধুদের নিয়ে চলে যেতাম আরিচা ঘাট । আরিচা-নগরবাড়ি ফেরিতে আপডাউন, বিনে পয়সায় আড্ডায় আড্ডায় রাত্রি পার ।
২২ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৯:১১
শরৎ চৌধুরী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মামুন ভাই। "স্টুডেন্ট লাইফে বন্ধুদের নিয়ে চলে যেতাম আরিচা ঘাট । আরিচা-নগরবাড়ি ফেরিতে আপডাউন, বিনে পয়সায় আড্ডায় আড্ডায় রাত্রি পার ।" কেবলমাত্র জাবির লোকজন জানে এর মর্মার্থ। কি যে অনবদ্য এক্সপেরিয়েন্স তা সবার জন্য উপলব্ধি করা সহজ নয়।
৪| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৪০
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: ফাটাফাটি ভ্রমণ । আফসোস কখনই আপনার সাথে যাইতে পারলাম না! :/ সেই রাতারগুলেই সবচেয়ে কাছাকাছি সুযোগ আসছিল। :/
৫| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:১২
বিদগ্ধ বলেছেন:
চমৎকার সব ছবি। মজার সব বর্ণনা।
৬| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:৩৫
মনিরা সুলতানা বলেছেন: হাহাহা একেকজনের যে বর্ননা দিলেন মাশা আল্লাহ বন্ধুতা চীরদিন থাক।
দারুন লেখা সুন্দর সব ছবি।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ১২:৩৩
স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
আগে নগরবাড়ি টু আরিচা ফেরি পার হতে হতো !
আপনার পোস্ট দেখে অনেক দিন পর খুব ইচ্ছে
করছে ফেরিতে চড়তে, নদীর হাওয়া খেতে !
অনেক ভালোলাগা রইল !