নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাট ইয়োর বডি এর্কোডিং টু ইয়োর ইমেজ

শরৎ চৌধুরী

তুমি তোমার ইমেজ মতইপ্রোফাইল বানাওকি ব্লগেকি জীবনে

শরৎ চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গুনে গুনে সাত দিন: অফলাইনে, ওজন কমানোর অব্যর্থ তরিকা

১০ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:১৯

সেদিন, আমার এক স্বাস্থ‍্যশীল বন্ধু হন্তদন্ত হয়ে জানালেন, 'শরৎ বিপদে পড়েছি সাহায‍্য দরকার'।
আমি বললাম, 'কি বিপদ'?
তিনি বললেন, 'দ্রুত ওজন কমাতে হবে'।
আমি বললাম, 'কত দ্রুত'?
তিনি বললেন,'গুণে গুণে সাত দিন'।
'মাত্র সাত দিন! সম্ভব না। এই জিনিস সাত দিনে হয় না।'
তিনি বললেন, 'না না না সাত দিন, এর পরে হলে দেরী হয়ে যাবে'।
তো আমি বললাম 'সাত দিন পরে কতটুকু কমাতে চাও তুমি?'
তিনি বললেন, 'সুন্দর, স্মার্ট একদম চিকন যাতে হই'।
আমি বললাম, 'এখন ওজন কত? ৯৭?'
তিনি বললেন, 'ঐ রকমই, তুমি বোঝ না?'
'সাত দিনে তো সম্ভব না।
আর এত তাড়া কিসের'?
তিনি বললেন, 'আরে মিয়া পাত্রীপক্ষ আসবে একটা ব‍্যাপার আছে না'।
আমি বললাম,'ও এই ঘটনা? ঠিক আছে বুঝলাম। কিন্তু সাত দিনে সম্ভব না।'
তিনি বললেন, 'না না না সাত দিনই'।
আমি বললাম, 'তাহলে জিম ছাড়া উপায় নাই। এখনি জিমে জয়েন করো। সকালে কার্ডিও ১ঘন্ট। সন্ধ‍্যায় ৩ সেট ১০ রিপিট ক্রাঞ্চ, স্কয়াট, পুশ আপ, সাঁতার
আর নো রাইস, সব্জি আর গুড প্রোটিন, শুধু মাছ হলে ভালো, শশা আর লেবু যত পারো।'
তিনি বললেন, 'কি বল এসব পাগলের মত? জিম! খাওয়া বাদ? ভাত বাদ? আমি এগুলা করতে পারবো না। অন‍্য বুদ্ধি দাও।'
আমি বললাম, 'তাহলে সম্ভব না।'
তিনি বললেন, 'না না না সাত দিনই। সবাই করতাছে আমি দেখছি না অনলাইনে। সাত দিনই সিক্স প‌্যাক।'
তুমি মিয়া কিসের অনলাইন এক্সপার্ট; কিসব মোটিভেশনাল ভিডিও শেয়ার দাও। এখন সেগুলো থেকে এমন একটা বুদ্ধি বাইর করো।
ওজন কমবে, তবে আরামে।'
আমি বললাম, 'পাত্রীর বাসা কই'?
তিনি বললেন, 'গ্রীনরোড'
আমি বললাম, 'তোমার বাসা কই'?
তিনি বললেন, 'তুমি মিয়া আমার বাসা ভুইলা গ‍্যাছো। আমি তো থাকি ধানমন্ডি।'
আমি বললাম, 'তাইলে তো আর চিন্তাই নাই। বন্ধু তোমার সব সমস‍্যার সমাধান হয়ে গেছে। কি খাওয়াইবা বল।'
তিনি খুবই উত্তেজিত হয়ে বললেন, 'আরে বল কি! বুদ্ধিটা বাইর কইরা ফেলছো? বল বল, কি খাবা বল, এখনি অনলাইনে অর্ডার দিতাছি।'
আমি বললাম, 'আরে মামা থ্যাঙ্কু, থ্যাঙ্কু, অর্ডার লাগবে না। জাঙ্ক ফুড বন্ধ করতেছি। তুমি এত অস্থির হইয়ো না। বলতেছি।
তো বন্ধু; তোমার এলাকায় অন্ধকার ভেজাভেজা জায়গা আছে না?'
তিনি বললেন, 'আছে আছে'।
আমি বললাম, 'বন্ধু তুমি ঐসব জায়গায় গেছো কেন? কি কামে?'
তিনি আগের চেয়েও বেশি উত্তেজিত হয়ে বললেন, 'আরে মিয়া খালি পেচাও। আমি আর কি কামে যাবো?
ঢাকার সবখানেই তো এরকম জায়গা আছে। ক্যান বস্তি আছে না? ঝিলের পার আছে না?'
আমি বললাম, ' উত্তেজিত হয়োনা বন্ধু। আমি কিছু মিন করি নাই তো। এবার বল, গ্রীণ রোডে এরকম আছে না?'
তিনি ভীষণ উত্তেজিত হয়ে বললেন, 'আছে আছে, থাকতে পারে।'
আমি বললাম, 'বন্ধু তুমি গ্রীণরোডেও গেছো? কি করছো এসব জায়গায়? ক্যামনে চেনো?
বন্ধু কবে থেকে যাও তুমি'?
তিনি বললেন, 'আবার প‌্যাচায়, এত প‌্যাচাও কেন?'
আমি বললাম, 'তাইলে তো তোমার ওজন আগেই অর্ধেক হয়ে যাওয়ার কথা বন্ধু'।
তিনি বললেন, ' আরে মিয়া তোমারে কি কই আর তুমি কি কও। এগুলা দিয়ে কি হবে? কথাটা কি এখনি বলবা নাকি আমি যাবো গা'?
আমি বললাম, 'বন্ধু তুমি এত অস্থির যে কেনো। হইয়ো না, হইয়ো না অস্থির হইয়ো না। বলতেছি বলতেছি। শোনো;
আমার সাথে কথা শেষ করেই, প্রথমে তোমার এলাকার যে ভেজাভেজা অন্ধকার জায়গাটা আছে; সোজা সেখানে যাবা। বুঝছো? তারপর..'
তিনি বললেন, 'তারপর কী?'
আমি বললাম, 'তারপর, সেখানে আধাঘন্টা থাকবা। সেখানে আধাঘন্টা থেকে অতিঅবশ্যই হেঁটে হেঁটে তুমি এবার ভাবীর এলাকায় যাবা। সেইরকম দেখে ভেজাভেজা অন্ধকার জায়গা বের করবা। একদম সেইরকম হইতে হবে কিন্তু, বস্তি হইলে ভালো। বা না হইলেও চলবে।
আর সেখানেও ন্যুনতম আধাঘন্টা থাকবা। পারলে বেশি কইরা থাকবা।'
তিনি বললেন, ' আরে মিয়া যায়া করবো টা কি?'
আমি বললাম, 'যাবা, দেখবা থাকবা। ওজন কমাতেই হবে না?'
দিনে তো যাবাই, রাতেও যাবা। এইটা খালি নিয়মমত চালাইতে পারলে তুমি সুন্দর ওজন কমায়ে সেইরকম স্মার্ট হয়ে যাবা কোন মিস নাই। ভাবী তোমাকে দেখেই কবুল বলে ফেলবে ইনশাল্লাহ।'
তিনি বললেন, ' ও, তুমি হাঁটার বুদ্ধি দিসো? হাঁটতেই হবে? সাতদিন?'
আমি বললাম, 'কপাল ভালো থাকলে দুই দিনেই হইতে পারে।'
তিনি বললেন, 'ক্যামনে ক্যামনে?'
আমি বললাম, 'কেন বন্ধু পত্রিকায় দেখো নাই; ঢাকার ধানমন্ডি, কলাবাগান, গ্রীনরোড, হাতিরপুল, লালমাটিয়া, মালিবাগ ইত্যাদি এলাকায় চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেশি। একবারে খালি একটু করে তোমারে ধরে। তুমি গুনেগুনে সাত দিনে চিকন হয়ে যাবা আমি নিশ্চিত। একটু ব্যাথা থাকবে কিন্তু তুমি তো বিয়ে করতে যাইতেছো। বিয়ের জন্য এতটুকু কষ্ট কি তুমি করবা না?'


বি:দ্র: চিকুন গুনিয়া একটি ভয়াবহ কষ্টকর রোগ। আমার পরিচিত অনেক বন্ধুই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন এখনো পাচ্ছেন। ফলে তাদের কষ্টের প্রতি বিদ্রুপ করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। এই মহানগরের কোটি মানুষের এমন নিত্য নতুন সম্ভাব্য সকল মহামারীর কথা ভেবেই লেখা। আমার প্রায়ই বিস্ময় জাগে, নগরের দালানের বাইরে কিংবা একদম লাগোয়া ঝিলে, উচা উচা রাস্তার কোণায় এত এত মানুষ ঘরহীন, আশ্রয়হীন, মশারিহীন, এ্যরোসল, কয়েলহীন থাকেন। ক্যামনে সামলান? উত্তর নগর হয়েছে দক্ষিণ নগর হয়েছে। কত্তবড় মহানগর, কত কত পিতা। পিতারা তাকিয়ে আছেন মশাদের দিকে। সম্ভবত মশাদের সিদ্ধান্তের উপর আমরা বেশি নির্ভর করে ফেলেছি। শত হোক তারাও তো মশা, কখন কামড়ে দেয়।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:০৮

সুমন কর বলেছেন: লেখার শেষটাই মূল বিষয়। মজা করে, শেষে ভালো লিখেছেন।

২| ১২ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:১৩

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আর আমি কি না, ভাবছিলাম কি টুইষ্ট যেন আসে।। এসেছেও ঠিক।। বর্তমানের সেরা সমস্যাটা নিয়ে।।
ধন্যবাদ।।

৩| ১২ ই জুলাই, ২০১৭ ভোর ৫:১৭

সোহানী বলেছেন: সুপার লাইক...............

৪| ১২ ই জুলাই, ২০১৭ ভোর ৬:৫২

ঢাকাবাসী বলেছেন: দারুণ লাগল। স্বাস্হ্য নিয়ে এত অবহেলা পৃথিবীর কোন স্বাস্হ্য মন্ত্রী বা সরকার করে বলে আমার জানা নেই।

৫| ১৪ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৪২

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: চিকনগুনিয়া নিয়ে বেশ লিখেছো । শেষ মুহূর্তে এসে সেটার অবতারনা দারুন হয়েছে ।+

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.