নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানব প্রজাতি প্রাণীকূলকে বশে আনিয়াছে তাও কয়েক সহস্র বছর তো হইবেই। মানবের ভাষাতেও যে প্রাণীকূল বন্দী হইয়া যাবে তাহা হয়তো তাহারা কল্পনাও করেন নাই।
দৈনন্দিন ইঁদুর দৌড়, স্বভাব তার কুত্তার লেজ, বাঘের মত শক্তিশালী, হাতির মত দেহ, কর্পোরেট শার্ক, শকুনের চোখ, হায়েনার মত রাতের অন্ধকারে..., সিংহের মত রাজসীক। হেন কোন প্রাণী নাই যাহাদের উপর বৈশষ্ট্য চাপাইয়া মানবজাতি নিজেদের মত ব্যবহার করে নাই। প্রাণীদের কি আর করা।
শার্ক-তো আসিয়া বলিতে পারে না
"ভাই কর্পোরেটে আমারে টানেন ক্যান?"
"পড়েন মাথায়; আবার হেলমেটের নাম শার্ক । আপনার মাথা কি হাঙ্গরের মত?"
মোটো দ্বিচক্রে এসব কথাই ভাবিতেছিলাম। তাই সমুদ্র থেকিয়া এবার বরং শহরের দিকে আসি। তো যেই মহানগর খানার কথা আমি কহিতেছি তাহা আপনাদের সকলেরই পরিচিত। সেইখানে জনসমুদ্র নামে প্রতিদিন সকালে। ঢল বলিলেও অত্যুক্তি হইবেনা। বিভিন্ন পাড়া, মহল্লা, কন্ডোমেনিয়াম, সেমি স্কাইক্র্যাপার, বাংলো, প্রাসাদ, এপার্টমেন্ট, টিনের ঘর, ঝাঁপি হইতে পা দু-খানা লইয়া, সাইকেল, মোটরবাইক, গাড়ী, বিরাট গাড়ী, অতিকায় গাড়ী, রিকশা, সিএনজি, অটো, স্কুটি, ন্যানো লইয়া জনঢল যার যার গন্তব্যের উদ্দেশ্য বাহির হন। তাহাদের বাসনা থাকে স্থলমন্দিরে যাইবার।
ঐ বাসনাটুকুই থাকে। তবে সুনির্দিষ্ট সময়ে তাহারা সেখানে পৌছাইতে পারিবেন কিনা আবার একই দেহ-পরিস্থিতি লইয়া ফিরিতে পারিবেন কিনা তাহা লইয়া পরিবারের লোকজন যপতপ করিতে থাকেন। বেশ ধার্মিক একটি বিষয়। প্রত্যুষে এবং সান্ধ্যে এই ঢল একটি দেখিবার মত বিষয়। তবে সেটি হেলিকপ্টার থেকিয়াই বা অধুনা ড্রোণ দিয়া দেখিতেই আরাম।
কসরৎ-কায়দা-কৌশলের সে এক অনন্য সিম্ফোণী। মাননীয় বেটোভেন মহাশয় যদি একালে বাঁচিয়া থাকিতেন তবে তিনি সমধুর ধ্রুপদী সংগীত রচনায় উজ্জীবিত হইতেন আমি নিশ্চিত। তবে প্রথমত তাহাকে এই মহানগরের একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের সদস্য হইতে হইতো। আর দ্বিতীয়ত; তাহাকে সেই বিশেষ সম্প্রদায়ের সদস্যই হইতে হইতো। কেননা সংগীত রচনার হেতু; যে ন্যুনতম স্বস্তিখানি একান্ত দরকার তাহা সেই সম্প্রদায়েরই কেবল রহিয়াছে বলিয়া অনেকে অনুমান করিয়া থাকেন।
এই প্রসঙ্গে মোটো-দ্বিচক্র যানের জনৈক চালক বলেন,
"আরে বাআল হর্ণের হান্দানীতেই কান শ্যাষ আর সঙ্গীত! কানে বাড্স লাগাআআ"। (ভাষা, ক্ষমাঘেন্না করবেন)।
এই প্রসঙ্গে আরো একজনকে দেখা যায়; যিনি নিজের যানের পশ্চাতে লিখিয়া রাখিয়াছেন, "আমার উড়ালপঙ্খী উড়তে পারেনা, অযথা হর্ণ দিবেন না, সে উড়িয়া যাবে না"।
নিশ্চয়ই অনুমান করিয়াছেন উনারা ত্যক্ত রহিয়াছেন। আর থাকবেন নাই কেন। স্থলমন্দিরে যাইবার জন্য উহাদের প্রচেষ্টার কিছু বিবরণ দেয়া যাক। তাহারো আগে আপনাদের স্মরণ করিয়া দিতে চাই যে এই মহানগর-কে কেউ কেউ জঙ্গল হিসেবেই ডাকে। তবে এটি ক্ষনেক্ষনে রুপ পরিবর্তনকারী জঙ্গল; ইহার রাস্তা ও নির্দেশনা দিনে কয়েকবার বদলায়। আপনি মহাহালি হইতে দাদানী উড়ালপথে যাইবেন ভাবিলেন। আপনি রওয়ানাও করিলেন। কিন্তু আপনার পথসমূহ কি কি হইবে ভাবিয়াছেন?
ঝট করিয়া চাবাইল যন্ত্র খুলিয়া ঘুগোল হাতাইয়া দেখিলেন মহাহালি মোড়ে কয়েক সহস্র হালি বাক্স দাঁড়ানো, অতএব সেদিক-এ বাদ। ভুলশানের পবিত্র জমিতে পিচ চাষ চলিতেছে। অতএব সেদিক-এও বাদ।
আপনি ভাবিলেন, দাদানী বনেদী পাড়ায় যাইবেন সুপারম্যান গলি দিয়া। এদিকে গলিতে গিয়া দেখিলেন অতিকায় খোলা বাক্স নগরের আবর্জনা পিঠে লইয়া সুবাস ছড়াইতাছেন। সুবাস এড়াইয়া আপনি ধড়ইল হস্তির পাশ দিয়া ঘুরিয়া আসিয়া মনে করিলেন আরে! দাদানী ১১ তো যাওয়া যাইতে পারে। আপনি স্কন্ধ বাঁকাইয়া মোড়ে আসিতেই দেখিলেন দুই হাত উচুঁ করিয়া পথ দেবতা অন্ড কান্ধে তুলিয়া ফেলিয়াছেন। আপনি তাহার চক্ষু অন্ডকে শান্ত করিয়ে ডান দিকে বাঁক লইয়া কিছুদূর যাইবার পরই বাম হস্তে খাইবার পাস। তিনতলায় নীল চাঁদ পানীয়খানা আর নীচতলায় তুর্কি বরফ ক্রীমের আহবান এড়াইয়া, বাম দিক ঘুরাইয়া আপনি ছুটিলেন নাক বরাবর।
কিন্তু সেখানেও পথ দেবতা। দুই হাত উচুঁ করিয়া পথ; অন্ড কান্ধে তুলিয়া...। আপনার মনে তবুও আশা এই তো আরেকটু পথ পাড়ি দিলেই দাদানী চিরনিদ্রা স্থানের পাশ দিয়া যাইবার সৌভাগ্য হইবে। আপনার আশা পূরণ হইল। আপনার মনে বেটোভেনের সঙ্গীত উথলাইয়া উঠিল। আপনি মোটোদ্বিক্রে টান দিলেন। আপনার অবনেদী মন দাদানী চিরনিদ্রা স্থানের পাশ দিয়া যাইবার সৌভাগ্যে উদ্বেলিত হইয়া উঠিল। আপনি যেই পৌছে যাইবেন যাইবেন করিতেছেন তখনি!
এক হালি পথ দেবতা আট হাত উচুঁ করিয়া অন্ডসমূহ কান্ধে তুলিয়া ফেলিয়াছেন। আপনি তাহাদের চক্ষু অন্ডসমূকে আর শান্ত করিতে পারিলেন না। আপনার বিটোভেন একবারে বাস্তবে হাজির হইল। সমধুর ধ্রুপদী সংগীত রচনায় উজ্জীবিত হইবার জন্য প্রথমত, দ্বিতীয়ত এবং তৃতীয়ত তাহাকে যে এই মহানগরের একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের সদস্য হইতে হইতো তাহা আপনার স্মরণে আসিলো।
পথ দেবতা আপনাকে জানাইয়া দিলেন, আপনি সেই বিশেষ সম্প্রদায়ের অর্থাৎ পিইআভি-র সদস্য হইতে পারেন নাই। আপনার কলা, কৌশল এবং কসরৎ পিইআভি-র কেশখন্ডের অবহেলিততম ভগ্নাংশের কাছে পরাজিত হইল। এই যে পথে পথে আপনি একের পর এক বাঁক বদলাইয়াছেন তাহা পিইআভি-র অসামান্য মাননীয়তার সাথে তাল মেলাতেই। তাহা আপনি জানিতেন না। এখন জানিলেন। আপনি তুচ্ছ ধুলিকণা আপনি কি করিয়া জানিবেন!
আপনার আবারো স্মরণে আসিলো, আরে তাইতো, সেদিন এক বন্ধু বলিতেছিলেন, সপ্তাহের বিভিন্ন দিন তাহারো স্থলমন্দির বন্ধ থাকে। কেননা দাদানী চিরনিদ্রা স্থানে প্রায়শই পিইআভিগণের আনাগোনা থাকে। পিইআভি-র শান এ কোন গুস্তাখী যাতে না হয় সে কারণে এলাকা বন্ধ থাকে। আপনার অন্তঃস্থল টগবগাইয়া উঠিল। মনে হইতে থাকিলো আর যাহাই হোক আপনার চিরনিদ্রাস্থানটুকু যেন দাদানী চিরনিদ্রা স্থানে হয়। এই ভাবিয়া আপনি আবারো আপনার মোটোদ্বিচক্র নিয়া বাঁকালীর দিকে ছুটিলেন, যদিও সেখানেও পথদেবতা গণ আবারো জানাইলেন "উহু স্পিকটি নট! কোন ডান হবে না, পিইআভি-র শান এ কোন গুস্তাখী..."
আপনি আরো আগাইয়া চলিলেন, মহাহালির দিকে। দাদানী ১১, এর পরের বামপন্থী সবই বন্ধ; পিইআভি-র শান এ কোন গুস্তাখী যাতে না হয় সে কারণে। যাইতে যাইতে আপনি অবশেষে একটি ডানপন্থী বাঁক পাইলেন, আর ভাবিলেন, "সেই তো প্রথম থেকেই তো আবার শুরু, গত দেঢ় ঘন্টাটা তাহলে...। এদিকে বেটোভেনের সুরও ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে মনে"।
পথেপথে পথদেবতাদের চক্ষুস্কন্ধের সাথে মোকাবিলা করিতে করিতে আপনার স্মৃতিশক্তিও জাগ্রত হইয়া উঠিয়াছে। আবার শুরু করিয়া আরো আধাঘন্টা পর আপনি সেই জায়গাখানাই অতিক্রম করিবার সুযোগ পাইতেছেন,যাহা আপনি আগে পান নাই। এবার আপনার ডান দিকে খানিক দূরে দেখা যাইতেছে দাদানী চিরনিদ্রা স্থান। পিইআভি-র শান এর জৌলুসে উজ্জ্বল, তবে এবারে আপনার স্মৃতিশক্তি ভিন্ন বিষয়ের দিকে নিবিষ্ট হইল।
স্মরণে ইহা আসিলো যে, একদিন আমাদের সকলেরই কোননা কোন নিদ্রাস্থানে যাইতে হইবে। পবিত্র গ্রন্থে উল্লেখ রহিয়াছে, মৃত্যুর পর ব্যক্তির কেবল কিছু আমলই গ্রহণযোগ্য হয়। যাহাতে ঐ ব্যক্তির কোন হাতই থাকে না। এমনকি তিনি পিইআভি হইলেও; তাহার কর্মই কথা বলে। তাহলে যে বিপুল সংখ্যক মানুষ পিইআভির শানের কারণে...
ঠিক তখনি আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন আর যাই হোক পিইআভি হইয়া জীবিত বা মৃত কোনটাই আপনি হইতে চান না। আর তখনি পিছন হইতে বিকট শব্দে একটি অতিকায় বাক্স হর্ণ দিয়া উঠিল, আপনি ত্রস্তে বামপন্থে সরিয়া গেলেন, ডানপন্থী গমগম করিয়া যেন একটি বাইসনের মত চলিয়া গেল। আপনার আবারো মনে পড়িল মানুষ, প্রাণী জগতকে কত কাজেই-না নামাকরণ করিয়াছে। বাম দিকে সরিয়া আসিতেই একটি কুকুর কূঁই করিয়া উঠিল, অন্ধকার থাকায় প্রথমে দৃষ্টিতে আসেনি। যেন স্বতস্ফূর্ত হইয়াই বলিয়া উঠিলেন, Sorry. তিনিও যেন বুঝলেন। আর দূরের বাইসনের মত বাক্সখানার পেছনে দেখলেন লেখা রহিয়াছে: VIP.
শরৎ চৌধুরী, ঢাকা ৩রা নভেম্বর বাইশ।
০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৪১
শরৎ চৌধুরী বলেছেন: প্রিয় রাজীব আমার তো মনে হয়ে আপনি একেবারেই উপযুক্ত পাঠক। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
২| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৩৩
গেঁয়ো ভূত বলেছেন: পিইআভি-র শান এ কোন গুস্তাখী... !
আহা পিইআভি ! তোমার মর্মার্থ উদ্ধারে একেবারে শেষ লাইন পর্যন্ত যেতে হয়েছে, তার আগে সম্ভব হয়নি কিছুতেই। লেখাটি দারুন সুখপাঠ্য ছিল। খুব খেয়াল পিইআভি রা আবার মাইন্ড খাইতে পারে। ভালো থাকুন। শুভকামনা।
০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৪২
শরৎ চৌধুরী বলেছেন: আপনার মন্তব্যেই তো পুরা লেখাটার পরিশ্রম সার্থক হল। অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর কৃতজ্ঞতা।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: আর একটু সহজ করে লিখলে আমার মতো পাঠকদের জন্য সুবিধা হতো।