নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাট ইয়োর বডি এর্কোডিং টু ইয়োর ইমেজ

শরৎ চৌধুরী

তুমি তোমার ইমেজ মতইপ্রোফাইল বানাওকি ব্লগেকি জীবনে

শরৎ চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাটি না থাকলে "কুড়া পক্ষী শূন্যে উড়ে" নামবে কই? (একটি- অরিভিউ)

১১ ই নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৪২




১৪ মিনিট পর থেকে

ঢাকায় আপাতত শেষ প্রদর্শনী বলে "কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া" দেখতে অফিস থেকে পরীক্ষা শেষ করে সিনেপ্লেক্সে পৌছানোর পরীক্ষায় নামলাম। রাজনৈতিক সমাবেশের চাপে মহাখালী দিয়ে নাবিস্কো কিংবা গুলশান হাতির ঝিল দিয়ে বিএফডিসি কোনটাতেই কুলিয়ে উঠতে পারা যাচ্ছিলো না। গুগোল ম্যাপের কসরত দেখে হাসি-ই পাচ্ছিল। নাবিস্কোর রাস্তায় বাইকাররা বামদিকের ফুটপাতে বাইক ওঠাবে ওঠাবে করছিলেন। জ্যামে আটকে আছি। তখনি কিছুটা দূর থেকে দেখা গেল ফায়ার ব্রিগেডের পাশের টং এ বসে, শৃঙ্খলা বাহিনী-র একজন টাকা গুনছেন। এরইমধ্যে একদল বাইকার ফুটপাতে বাইক উঠিয়েই দিলেন। অনেকেই অনুসরণ করলেন। এসবের মিনিট খানেকের মধ্যেই পেছনে উচ্চস্বরে শোনা গেল,

“কিন্তু অন্য বাইকাররাও তো উঠেছেন”।
প্রতি উত্তর আসলো, “ঠিক! কিন্তু ওনারা ধরা পড়েন নি”।

বচসা-টা চলছে বাইকার এবং বাহিনী-র একজনের সাথে। সেই বাইকার তখনো চওড়া ফুটপাতে, আর বাকীরা ইতোমধ্যে পথে নেমে পড়েছেন বা নামি নামি করছেন। বাহিনীর একজন ক্রেডিট কার্ডের মেশিনটার মত যন্ত্রটা হাতে নিয়েছেন। ঘটনাটা তখনো যতটা না রাস্তা আর ফুটপাতের সূক্ষ হিসাব তারও অধিক মর্জিও বটে। আইন-চেতনা জেগে ওঠার যে মানবিক মাহেন্দ্রক্ষণ, সেটিরও বটে। আর বাকী বাইকাররা “ধরা না পড়ার” জন্য আরো বেশি করে রাস্তায় চেপে আসছেন, বাকীরা জায়গা করে দিচ্ছেন, একটা মুহুর্তের গভীর ভাতৃত্ববোধ তৈরি হচ্ছে এবং দূরত্ববোধও যিনি “ধরা” পড়ে গেছেন তার থেকে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আরেকজন বাহিনী সদস্যকে দেখা গেল দিব্যি ফুটপাত দিয়ে হেলমেট ছাড়া চলে যাচ্ছেন। জ্যাম কিছুটা ছেড়েছে, ব্রাদারহুড ভেঙ্গে গেল। আমরা ধেই ধেই করে ছুটতে শুরু করলাম। মর্জি আর মানুষ বড়ই রহস্যময়।
তো এইসব পরস্পর-বিরোধীতার মধ্য দিয়ে যখন সিনেমা হলে নিজের জায়গা খুঁজে পেলাম ততক্ষণে ১৪ মিনিট পার হয়ে গেছে। চোখ সয়ে আসতে আরো মিনিট দশেক। ততক্ষণে শিশুদের দল পাখি দেখতে হাওড়ের নীচু জমিতে ঘাপটি মেরে থেকে এরপর ছুট দিয়েছেন। দৃশ্যটা সুন্দর।

দর্শকত্ব:

অডিও ভিস্যুয়াল: এই সিনেমায় আমি গভীরভাবে সুখ পেয়েছি প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতি মনোযোগ দেখে। এই সিনেমায় আমার কাছে ভিস্যুয়ালী মূল চরিত্র হাওর এবং প্রকৃতি। প্রতিটি ধাপে ধাপে প্রকৃতির নানান রূপ; দৃশ্যে উঠে এসেছে তা বিষ্ময়কর, সুখকর। প্রতিটি ঋতু, প্রতিটি পরিবর্তন, হাঁস, মেঘ, বৃষ্টি, শব্দ, ভিস্যুয়াল ক্ল্যারিটি। সেসবের জন্য যে গভীর গবেষণা, মনোনিবেশ এবং যে একাগ্র পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় তার প্রতি হ্যাটস অফ। একই ফ্রেমে পানির উচ্চতার পরিবর্তন, এবং সেটা ট্রাইম ফ্রেমে আলাদা আলাদা করে বোঝানো কঠিন কাজ। প্রকৃতির সাথে রিচুয়ালের সম্পর্ক, রাজনৈতিক অর্থনীতি, ইতিহাস, মিথ এবং সমসাময়িক বাস্তবতা; সেটার সাথে সিনেমার দাবী-“ভাটির দেশের মাটির ছবি” সেটি সার্থক হয়েছে। ফলে দর্শক সাঁরিতে বা বাইরে যারা “অথেনটিক” হাওর অঞ্চলের ভাষা নিয়ে অনুযোগ করছিলেন সেটাকে ভিন্নভাবে দেখার অবকাশ আছে।
এই ডিটেইল বর্ননার জন্যই আমি এটিকে একটি এথনোগ্রাফিক ফিল্ম হিসেবে রেকোমেন্ড করবো।
এক্সপোজারের ভিত্তিতে “হাওয়ার” অডিও-ভিস্যুয়াল এর সাথে তুলনা আসা স্বাভাবিক, যেমনটা ডিসকভারী, ন্যাশনাল জিওগ্রাফীর সাথে তুলনাও। সেদিক দিয়েও এটি অনন্য। ফলে ডকুমেন্টারীর পেছনে রাশভারি কন্ঠের বর্ননার বদলে গল্পের চরিত্র দিয়ে গল্পটা বলার পদ্ধতিটা আলাদা হয়েছে। তবে আরো ভিন্ন হতে পারতো।

শক্তির জায়গা:

এটি যে সত্যজিৎ রায় বা রাবীন্দ্রিক হয়ে উঠতে চায়নি সেটি এটির শক্তির জায়গা। যেসব সুর এবং সংগীতের ব্যবহার তা যে মধ্যবিত্তের জন্য উপযোগী করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করেনি সেটা সচেতন সিদ্ধান্ত হলে ঠিক হয়েছে। যা যেখানে যেমন তা সেভাবে বলার চেষ্টা বরং রুচি সাম্রাজ্যকে আঘাত করে বেশি। বলে আমার কানে যা কর্কশ/মিহি নয় তারজন্য সবসময় সিনেমা পরিরর্তন হতে হবে কেন, আমার দর্শকত্ব আরো ভার্সেটাইল হতে পারে।
এটি যেই রাজনেতিক অর্থনীতির বয়ান হাজির করে এবং সুস্পষ্ট করে সেটি; এখন সাহসী বলে গণ্য হয়। কি বিচিত্র সময়েই না আমরা আছি। ক্ষুদ্র ঋণ, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক, এনজিও … এই সোশ্যাল কমেন্টারিগুলো এসেছে। বিকল্প চলচিত্র আন্দোলনের এই রেশটুকুর শক্তিতে আমি খুশি হয়েছি। মানে হল নিওলিবারেল আপনারে যতই “উন্নয়ন” দেখাক না কেন যেটা যা; সেটাকে দেখা দরকার, দেখানোও দরকার। গ্ল্যামার লাগবে কেন? আর এটাকেই নিওলিবারেল চোখ “ক্লিশে” বলে অপবাদ দেয়। নিপিড়ীত মানুষের গল্প যতই ক্লিশে দেখাক তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। সেই বাস্তবতা তো আপনার “কুল” না হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে নেই। ফলে সেটা সব সময়ই প্রাসঙ্গিক। আপনার কাছে “কুল” না হলে বরং আপনার সমস্যা। আপনি ফ্রেমে শুধু আরাম খুঁজবেন তা হলে তো হবে না।

দূর্বলতা:

চরিত্রগুলোর মিশে যাওয়ার বিষয়ে অনেকগুলো খটকা তৈরি হয়। কন্টিনিউটি নিয়েও। যদিও কলাকূশলীদের পরিশ্রমকে কূর্ণিশ। এখানে আমার বারবারই পরিচালকের ষাটের দশকের মডার্ণ-এ্যস্থেটিকস আর (নিশ্চিত জানিনা) মঞ্চের প্রভাব স্পষ্ট রয়েছে। সেটা হাওয়ার ক্ষেত্রেও আমার হয়েছে, তবে এতটা তীব্র নয়। এবং চঞ্চল চৌধুরীকে আমার লাউড মনে হয়েছে। এবং উনার প্রচেষ্টাকেও কুর্ণিশ।
প্রথম অনেকটুকুর মধ্যে আমি ঠিক গল্পে ডুবে যেতে পারিনি। বিরতির পরের অংশে যুক্ততা বোধ করতে শুরু করি। ছোট শিশুটির পানিতে ডুবে যাওয়ার সাথে আমি যুক্ত হতে পারিনি। বৃদ্ধ চরিত্রের ইতিহাস বর্ননা আর দর্শনের (যেটা পরিচালকের কথাই যেন বলছেন) সাথে সব সময় যুক্ত বোধ করিনি। আমার কাছে খুব শক্তিশালী মনে হয়েছে বরং পাশের ঘরের খালাকে এবং তার স্বামীকে। যথার্থ।
হিমু-র সিলেকশনটা ইন্টারেস্টিং। একটা বিহ্ববলতা সবসময় থেকেছে। এটা ঠিক মধ্যবিত্তের বিহ্ববলতা নয়। রুকুর মায়ের চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন, তিনি ভিস্যুয়ালি তীক্ষ্ণ। উনাকে সেই সেটিং এ কল্পনা করা কঠিন। মানে মধ্যবিত্ত চরিত্রে এতটাই মানানসই যে তাকে হাওরের সেই গ্রামে সিচুয়েট করা কঠিন। যেমন আপনি জানেন যে শাবানা দরিদ্র চরিত্রে অভিনয় করছেন এবং তিনি শাবানাও, অনেকটা এরকম। মঞ্চের রেশ বেশ টের পাওয়া গেছে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কন্ট্রিবিউশন:

এই সিনেমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কেবল ডকুমেন্টশন নয়। সব হারানোর; মাটিহীন হয়ে পড়ার শূণ্য অনুভূতি নয়। ইনল্যান্ড মাইগ্রেশন নয়। “নারী”-র রুটলেসনেসও নয়। বর্ননাও নয়। হিউম্যান স্টোরীও নয়। আমার কাছে এই সিনেমার সবচেয়ে শক্তশালী অংশটি হল সেই শেষ শট। হাওরের পানিতে ঘেরা একটা গ্রাম যেখান থেকে ক্যামেরা সরে আসছে; দর্শকও ক্রমশ সরে আসতে বাধ্য হচ্ছে। আস্তে আস্তে বোঝা যাচ্ছে গ্রামটা আলাদা হয়ে পড়ছে। আশ্রয়টা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। নারী-পুরুষের কাছে আত্ম পরিচয়- অর্থীনীতি, নারীর কাছে নিজের পুরুষ, অর্থীনীতি, শিশুটির কাছে পিতা-শৈশব, বৃদ্ধের কাছে কবর, গ্রামের মানুষের কাছে ধান, মানুষের নিজের আশ্রয় যে হারিয়ে যাচ্ছে সেটাকে পরিষ্কার করে দেখিয়ে দেয়া। উচ্ছেদের বেদনা।

আমার কাছে কেন্দ্রীয় চরিত্র তাই হাওর। তবে এই গল্পে হাওর আমার কাছে শত্রু নয়। হাওর আমার কাছে পরাস্ত করার লক্ষ্যও নয়। এবং একটা রিমাইন্ডার যে বিত্ত আর এসথেটিক নিয়ে তর্কের লাক্সারি বেশিদিন থাকবেনা যদি-না প্রকৃতির সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সহবস্থানে আমরা না যেতে পারি। কুড়া পক্ষী শূন্যে উড়াল দিয়া কোথায় নামবে যদি মাটি-ই না থাকে?

কি বিচিত্র! কি নিয়ে লিখবো ভাবছিলাম আর কি লিখলাম।

শরৎ চৌধুরী, ১১+১১=২২, ঢাকা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: ইউটিউবে কবে আসবে?

১১ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৫২

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: আমার কোন ধারণা নাই রাজীব। আসবে নিশ্চয়ই, ইউটিউব ছেড়ে পালানোর জো আছে?

২| ১২ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৮:২৬

রানার ব্লগ বলেছেন: দেখবো আশাকরি!!

১৩ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৫২

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: দেইখেন; ইন্টারেষ্টিং। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.