নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাট ইয়োর বডি এর্কোডিং টু ইয়োর ইমেজ

শরৎ চৌধুরী

তুমি তোমার ইমেজ মতইপ্রোফাইল বানাওকি ব্লগেকি জীবনে

শরৎ চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুক রিভিউ অথবা আমার চিন্তাব্যাখ্যার ব্যায়াম সিরিজঃ ১

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:০৮



বইয়ের নামঃ অহেতুক আলেবালে জলসেচনে ক্ষতি নাই
কবিঃ আদনান আলী
প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
প্রকাশকঃ চন্দ্রবিন্দু


‘বুক রিভিউ’ নামক শব্দ যুগলের পেছনে ছায়ার মত যে শরীরী চিত্রকল্প জেগে উঠতে পারে সেটাকে বাংলা ভাষার শক্তি ও ইংরেজি ভাষার দূর্বলতা না বলাটা অন্যায়ই হবে। ‘বুক’-কে ইংরেজি অর্থেই বুঝতে হবে এমন দাবী আমি আপাতত মানছিনা। আর ‘রিভিউ’ শব্দে যে শীতল দূরত্ব এবং কতৃত্ব রাজত্ব করে সেটাকেও দূরে রাখলাম। নারীর বুক আমার প্রিয়, আরো বহুকিছুই । আবার, আমার চিত্রকল্পের পেছনে যে যৌন-আবেশ সেটাকে ঘ্যাঁচ করে কেটে দেবার জন্য যেসব সমালোচক প্রায় জনদাবী তুলে ফেলবেন বলে অনুমান করি, তাদের মুখগুলো কল্পনা করে একচোট হাসলামও। একসময় হলে সিনেমা দেখে ফিরেও কিন্তু মানুষজন বলতেন, ‘শালা! কি একটা বই-ই বানাইছে’। আশাকরি অনেকের মনে পড়বে। আর যাদের মনে পড়ছে না তারা শিখলেন বিষয়টা। শিখতে তো ক্ষতি নাই। ফলে ‘কবিতার বই পর্যালোচনা’ বাক্যে যে গুরুগম্ভীর ভাব সেটাকেও সরিয়ে রাখা যেতে পারে। পুরো বিষয়টি আমার চিন্তাব্যাখ্যার ব্যায়াম। এই কসরৎ-কে ক্ষমা করবেন পাঠক এবং কবি স্বয়ং।

ডিসক্লেইমার এই যে, ‘কবিতার বহি পাঠ করিবার’ ব্যায়ামে কোন প্রকার আর্থিক প্রণোদনা আদনান আলী প্রদান করেন নাই। এই বস্তুটি যে লিখিত হইতেছে সেই বিষয়ে তাহার অনুমানও নাই। তবে, তিনি অতি-চালাক মানুষ। স্বভাবজাত বিনয়, আমার পুস্তকের এবং কবিতার প্রতি উনার লম্বা সময়ের আগ্রহ যে তলেতলে আমাকে উনার বই সম্পর্কে ঘনিষ্ট করে তুলতে পারে সেই কৌশল তাঁর না-জানার কথা নয়। তবে এসব যাপিত কৌশলের জালের বাইরে আমাদের নিবিষ্ট আড্ডাসমূহ এই বুক রিভিউ লিখতে উৎসাহ দিচ্ছে তা নিশ্চিত। ব্যবচ্ছেদে আমার আগ্রহ না থাকলেও এই নিষ্ঠুর দুনিয়া আমাকে মর্গের ডাক্তার বানিয়ে রেখেছেন বেশ ছোটবেলা থেকে, তাই ফ্রীজারে বহু লাশ, সেইসব লাশদের আমি ভালোবাসি। আর সেখান থেকেই কবিতা।

আদনান আলী-র এই কাব্যগ্রন্থকে আমার সেরকমই মনে হয়েছে। উনচল্লিশ পৃষ্ঠার কবিতা ‘তন্দ্রামেদুর নেক্রোপলিসে’ এর সুস্পষ্ট প্রতিফলন। এখানে যে একগুচ্ছো ‘নাই’ হতে থাকার বেদনা-প্রতিবেদন, সেখানে আকুতি যতটা কবিতা ততটা নাই। আছে দৃশ্যপট পাল্টে যাবার গল্প, আছে শ্রেণী বিশ্লেষণ। মজার বিষয় হল এর আগের কবিতার শিরোনাম, ‘আত্মলেহন’। প্রায় কাব্যিক জাস্টিসের মত দুটো কবিতা হাত ধরে আছে। গুমোট অভিমান, তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ এবং এমন এক নিয়তির কথা বলা যা আমরা সবাই জানি, হয়ত বিবমিষা নিয়ে দেখি। কেউ ভাষা দেই; কেউ পারিনা। আদনান আলী ভাষা দিয়েছেন, তিনি যে কবি মানস ধারণ করেন তার কিছু নিদর্শন পাওয়া যায় এর পরম্পরায়। যদিও এই শহরে এই সুর বেজে গেছে বেশ আগেই, মেঘদলের গানই বা যদি স্মরণ করি, “কিছু বিষাদ হোক পাখি…”। এ প্রসঙ্গে আমার প্রশ্ন তাই এই প্রেক্ষাপটে আদনান আলী নতুন কি হাজির করলেন শিল্প উপলব্ধিতে কিংবা প্রকাশে?

‘নশ্বর বিকেলে’ কবিতা-প্রচেষ্টাটি আসলে “মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে-অকারণে বদলায় - মুনীর চৌধুরী”-র এই জনপ্রিয় প্রবচনের পুনরুৎপাদনই মনে হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি আদনান আলী এই লাইনে না গেলেই ভালো করবেন। কারণ কবি হিসেবে ওনার অর্ন্তগত সুর আমার মতে ‘দেহলতা’ (পৃ: ৩১)। এটা পড়বেন আপনারা। তেমনি ‘ঠিকানা’, (পৃ: ২৮)। ‘সৃষ্টিপর্ব’ , ‘মূষিক সমাচার’, ‘প্রাগৈতিহাসিক’, ‘রুদ্ধ আগামীকালের জন্য মর্সিয়া’ এগুলো প্রথম কবিতার বইয়ের দোষে দুষ্ট। কিছু একটা করে ফেলবো, বলে ফেলবো ধরণের। আর আছে উনার ‘সৃষ্টির আদিকালজনিত ফেটিশ’। আমি ঠিক জানিনা কোন কোন কবি বা কবিতা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি এই লাইনটি নিয়েছেন। সতর্ক হতে অনুরোধ করি। ‘দিকচক্রবালে উনি কে’ এটিও দূর্বল। কবিতা জীবন উপলব্ধির ছোটছোট বয়ানের জিনিস নয় বলে আমার মনে হয়।

‘কাঠগড়ায় কৈবর্ত’-(পৃ:২৬)। এই কবিতায় আমি আদনান আলী-র দারুণ সম্ভাবনাকে দেখতে পাই। একটা ঝাঁকি দিয়ে কবিতার যে শুরু এবং প্রথম ছয় লাইনের যে দুনিয়া নির্মাণ তা দারুণ। এরপর রুপকের মোক্ষম ব্যবহার, বয়স্ক আদনান আলীর জন্য কবিতা লিখছেন যেন তরুণ আদনান। “তবু্‌ও তিনিই ছিলেন দেশের প্রধানতম অপরাধী” যাদুবাস্তবতার সাবলীল অনুপ্রবেশ এবং ক্রমশ মানবিক হতে থাকার গল্প। আমার প্রিয় কবিতা।

‘অন্য কোনো মাহবুবুর রহমান’ এই বইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কবিতা, (পৃ:১০)। কবিতা, নতুন যে বিশ্বে যাওয়ার সৌভাগ্য পাঠককে প্রদান করে সেটার একটা সহজ উদাহরণ হল এই কবিতা। কবিতাটা সরল এবং তাই মেধাবী। আলংকারিক বোঝাহীণ, সম্পূর্ন স্বপ্নময়, আবেগী এবং সংক্রামক একটি কবিতা যেটির শিরোনাম আমার বহুদিন মনে থাকবে। আমি মনে করি যে আদনান বইটিরও শিরোনাম এটিই দিতে পারতেন। আদনানের বহুবিধতা, পর্যবেক্ষণ এবং উপলব্ধিকে একেবারেই খাটো না করে বলতে চাই যে পুরো বইটিতে আদনান ‘অন্য কোনো মাহবুবুর রহমান’-কেই খুঁজে বের করতে চেয়েছেন। এই মাহবুবুর রহমান উনি নিজেই অথবা আমরা সবাই। এমনটাই আমার উপলব্ধি।

আলাপ শুরু করেছিলাম বিমানবিক ‘নাই’ হয়ে যাওয়াকে আশ্রয় করে। এমন এক নিষ্ঠুর সময়, যেখানে ‘নাই’ হয়ে যাওয়া বিক্রী হচ্ছে নস্টালজিয়া হিসেবে। আমাদের সময়ের চালুশব্দ হিসেবে আদরও পাচ্ছে বেশ। তবুও এই সময়টা মুষড়ে পরার নয়। বিষণ্নতায় ডুবে যাবার নয়। আমি মনে করি যে এই সময়টাই জ্বলে ওঠার। সমস্বরে ডিলান থমাসের মত বলে উঠতে, Rage, rage against the dying of the light.

আদনানও হয়তো তেমনটাই মনে করে থাকবেন, তা না হলে এই আকালে কবিতার বই বের করার মত অসফল বিনিয়োগে উনি কেনইবা নিযুক্ত হলেন?

শরৎ চৌধুরী, কবি। ২৩শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:২১

এম ডি মুসা বলেছেন: কোন প্রকাশনা বই বিক্রি বেশি হয়। সেটা থেকে বই প্রকাশ কি বেশি বেঁচা কেনা হয়?

২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্ট পড়লাম।

৩| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:২০

আডআম বলেছেন: এই বইটিতে খুব ভাল বিষয়বস্তু রয়েছে এবং আমি মনে করি এটি পড়ার পরে লোকেরা অনেক কিছু শিখবে। https://slitherio.online

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.