| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জননীর শেষ পত্রের শেষ লাইনটুকু ধার নিলাম ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। তাই গোলাম আযম ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখী করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের দায়িত্বভার আমি আপনাদের, বাংলাদেশের জনগণের হাতে অর্পণ করলাম। নিশ্চিত, জয় আমাদের হবেই।’
জননী জাহানারা ইমাম আপনি এ গানের শুরুটা করে দিয়েছিলেন। বছরে বছরে আমাদের দেয়াল ও টেবিলের বর্ষপঞ্জিকা বদলে যেতে থাকলো। বদলালো বর্ষপঞ্জিকার রঙ ডিজাইন ফটোগ্রাফি, ছবির ক্যাপশন। আঁতাতের রাজনীতিতে নিজামী মুজাহিদের গাড়ীতে জোড় করে বেঁধে দেওয়া হল জাতীয় পতাকা। সেই পতাকাগুলো মূলত প্রথম দিনেই আত্মহত্যা করেছিল। এ ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না তাদের। আর যা আমরা উড়তে দেখেছিলাম তা কেবল পতাকার শরীর।
জননী আপনার লেখা গান রিমেক হয়েছে। ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেমে [সোস্যাল নেটওয়ার্ক] রেকর্ড হয়। ছড়িয়ে পড়ে সুর, কথা, নতুন মিউজিক। নেট দুনিয়ায় হুলুস্তুল। হেমিলনের বাঁশিওয়ালার মত ঘর, দোকান, সাইবার ক্যাফে, প্রেমিকার হাত, আরো কত মায়ার ফাঁদ থেকে এক মতে এবং পথে নামিয়ে নিয়ে আসে আমাদের। গানের পরের লাইনগুলোও লেখা হল। তড়তড়িয়ে লেখা হয়ে গেল। ভয়াবহ আবেগের আর যুক্তির মিলনে নতুন গানের কথার জন্ম হতে দেখি আমরা।
শুরুর পরের লাইনগুলান লেখা হল ঠিকই, কিন্তু গানের শেষ লাইনটা লেখা হয়নি বন্ধু। নানা গীতিকার বর্তমান রয়েছেন আন্দোলনের ময়দানে এবং মঞ্চে। রয়েছেন কেউ কেউ ঘরে এবং আড়ালে। এ সকলই আমাদের জানা । জনগণের কাঁধে বন্দুক রেখে রঙিন বেলুন ফুটানো শুরু হয়েছে তাও আমরা জানি। এবং এও জানি এ ফসল কৃষের ঘরে যাবে না। কৃষক হয়তো বীজ ধান পাবে। আগামীতে ফসল ফলানোর জন্য। যারা আন্দোলনের প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির হিসাব কষা শুরু করেছেন তাদের বলে রাখি ইতিহাসবীদদের মতে প্রকৃত ইতিহাস রচনা হতে ৫০ বছর সময় লাগে। ৫০ বছর হয়তো আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
এখন কথা হচ্ছে এই গীতিকাররা কি পারবেন গানের শেষ লাইনটা লিখতে ? কারণ এই গীতিকারদের এতদিনে নিজস্ব কথা বলার ভঙ্গি দর্শন ও চিন্তার জায়গাটায় সুগন্ধী ফুলের ছোঁয়া লেগেছে। ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না তাদের। এই সরকার যে কটা রাজাকারকে খাঁচায় ভরছে এদের সাজা বা ফাঁসি হলেই কি এই আন্দোলনের যোদ্ধাদের কাজ শেষ? তাদের তো শেষ লাইন লেখতে হবে। প্রত্যেক দলের ছাতার নিচে যে রাজাকার আশ্রয় নিয়েছে তাদেরও ফাঁসি চাই। দিতে হবে। এই কাজ স্বল্প সময়ে ঘটানো সম্ভব না। কারণ যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকবেন তারা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তকমা হিসেবে এটা রাখবনে। বিএনপি অলরেডি বলে ফেলেছে তারা ক্ষমতায় আসলে সকল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করবে। সিরাজ শিকদার হত্যারও বিচার করতে চান তারা। এ কথা কি অর্থ বহন করে তা আমরা বুঝি। কথা হচ্ছে এই প্রাণের উত্তাপ গনজাগরণ বাংলাদেশের গত ৪২ বছরের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে দিচ্ছে। একটি সূত্রে জেনেছিলাম জামায়াতের তরুণ নেতারা চেয়েছিলেন এই চিহ্নিত যুুদ্ধাপরাধীদের বিচারে তারা নিরব ভূমিকা পালন করবে। এবং জায়মায় শিবির যেন রাজাকার শব্দটি থেকে মুক্ত হয় তাই তারা চাচ্ছিলেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা! এখন সময় হয়েছে তরুণদের কথা শোনার। তাদের কথার গুরুত্ব দেবার।
জামায়াত শিবিরের রাজনীতি আইন করে বন্ধ করো...এটা শাহবাগ আন্দোলনের একটি স্লোগান। জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ হল। কিন্তু তারা যে আবার নতুন রুপে নতুন নামে হাজির হবে না এর নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ করবে সরকার এবং করবে কি করবে না এ বিষয়টা ঝুলিয়ে রাখবে দীর্ঘদিন তা নিয়ে রাজনৈতকি খেলা চলবে। ভোটের বাজারে এই বিজ্ঞাপনচিত্র প্রচার করা হবে। ভোট কমবে না বাড়বে নানা হিসাব হবে। আহারে মাথাটাই গরম হয়ে যায় এত হিসাব বুঝি না!!! মাথা খারাপ অবস্থা ম্যান...
এসব ভেবে লাভ নাই...হুদাই। বন্ধু গানের শেষ লাইনটা লিখতে হবে আমাদের। হ্যাঁ আলবত লিখতে হবে। পারতেই হবে আমাদের। আমরা পারক্ষো, আমরা লিখবো।
শাহবাগে এখনো দীর্ঘ রাত পর্যন্ত যে মঞ্চটি জেগে থাকে, তার নাম গণজাগরণ সংস্কৃতিক মঞ্চ। মুল মঞ্চ ঘুমিয়ে পড়লেও নিরলস জেগে থাকে সংস্কৃতিক মঞ্চ। আর এখানেই আমরা খুঁজে পেতে পারি আমাদের গানের শেষ লাইনের আইডিয়া।
স্লোগান, মিছিল আর বক্তিতা আন্দোলনের একটি সাময়িক রুপ মাত্র। শুধুমাত্র স্লোগান, মিছিল আর বক্তিতা দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদি আন্দোলন করা সম্ভব না। এখন আমাদের দীর্ঘ মেয়াদি আন্দোলনের দিকে যেতে হবে। শাহবাগে এসে নেতা নেত্রীর জড়ো হওয়া, মঞ্চে বক্তিতা আর রুটিন কর্মসূচি ও টেলিভিশনে চেহারা দেখানোর মধ্যেই আন্দোলন কেমন যেন বন্ধী হয়ে পড়ছে। হয়তো কাধে বন্ধুক রাখার কারণে সবার শরীর ভারি হয়ে পড়েছে।
এখনই সময় সারা দেশে সংস্কৃতিক আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার। প্রতিটা জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়–ক সংস্কৃতিক আন্দোলন। আর এ দায়িত্ব নিতে পারতো সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গ্র“প থিয়েটার ফেডারেশান এবং বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। কিন্ত তারা ব্যর্থ হয়েছেন। ব্যর্থ শব্দটা বললে ভূল হবে প্রকৃত অর্থে তারা তাদের রাজনৈতিক সমীকরণ করেছেন। ফলে তাদের অ্যাক্টিভিটিস ছিল হতাশা জনক। কারণ তারা আন্দাজ করতে পারছিলেন না আন্দোলনটা কি সরকারের পক্ষে যাবে না বিপক্ষে যাবে। আমাদের এই তিনটি সংগঠন থেকে অনেক বেশি সংগঠিত শিবিরের সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠি।
যেহেতু তারণ্যের আন্দোলন তাই প্রবীণ সংগঠনগুলোর জন্য ওয়েট করে বসে থাকেনি শাহবাগ। ৫ ফেব্র“য়ারি থেকে শাহবাগেই আন্দোলনের ময়দানে গড়ে ওঠেছে বেশ কিছু নতুন সাংস্কৃতিক সংগঠন। আর এর সঙ্গে যুক্ত হয় বেশ কিছু তরুণ সংগঠন। এর মধ্যে নাটকের দল তীরান্দাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। পুরো আন্দোলনটা মাতিয়ে রাখে তারা। ৫ ফেব্র“য়ারি থেকে যে কালচারাল সংগঠনগুলো কাজ করে আসছিল নিজেদের মত করে। শিল্পের মাধ্যমে প্রতিবাদের ভাষা ছড়িয়ে দিয়েছে মানুষের হৃদমূলে। তেমনি ২৯টি ছোট ছোট সংগঠন মিলে গড়ে ওঠে ‘গণজাগরণ সংস্কৃতি মঞ্চ’। উদ্দেশ্য একটাই মানবতাবিরোধী সকল অপরাীদের বিচারের দাবি। গান, কবিতা, নাটক, চলচ্চিত্রের ভাষায় আমরা আমাদের প্রতিবাদের ভাষা ছড়িয়ে দিতে চাই। খেলতে চাই টেস্ট ম্যাচ। যারা টি টোয়েন্টি খেলতে এসেছিলেন এবং খেলা দেখতে এসেছিলেন তারা ঘরে ফিরে গেছেন। আমরা ঘরে ফিরিনি। দেশময় আমাদের প্রতিবাদি গান, কবিতা, নাটক, চলচ্চিত্র পৌঁছে দিতে চাই। পাড়া মহল্লায় যেন আর কোন যুদ্ধাপারাধীদের বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে হুজুরের ডাকে আর কোন নিরিহ মানুষ পথে নেমে তাদের প্রাণ না হারায়। এই গ্রামের সহজ সরল মানুষের মনে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি নিয়ে যে ভ্রান্ত ধারণা লালন করে আছেন তা দূর করতে হবে। ধর্ম বিক্রেতাদের হাত থেকে সাবধান করতে হবে প্রান্তিকজনকে। আর সেখানেই হয়তো আমরা পেয়ে যাবো আমাদের এই গানের শেষ লাইন। আর এ কাজটি করতে শাষক শ্রেণী কখনই উদ্যোগী হয় না। উদ্যোগটা আমাদেরই নিতে হবে। কারণ এই গণজাগরণ থেকে কিছু বীজ ধান পেয়েছি আমরা। এই বীজ ধান নষ্ট করা যাবে না। তাই আমরা নতুন বসন্তে নতুন ফসলের স্বপ্ন দেখতেই পারি।
রুপনগর
৫/৩/২০১৩
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:০৮
মায়াবতী বািলকা বলেছেন: ভালো লেখেন আপনি। বিষয় এবং বক্তব্যের সাথে সহমত।