নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গল্পকার

গ্রিন জোন

গল্পকার

গ্রিন জোন › বিস্তারিত পোস্টঃ

হুমায়ুন আজাদের আমার অবিশ্বাসের ভূমিকা

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪৯

বিশ্বজগত এখনো দাড়িয়ে আছে বিশ্বাসের ভিত্তির ওপর। গত তিন শতকে বিজ্ঞান বেশ এগিয়েছে, পৃথিবীকে মহাজগতের কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দিয়েছে এক গৌণ এলাকায়, মহাজগতকে এক বদ্ধ এলাকার বদলে ক'রে তুলেছে অনন্ত; এবং মানুষকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ, অমৃতের পুত্র প্রভৃতি আত্মগর্বিত সুভাষণ থেকে বিচ্যুত করে পরিণত করেছে নগ্ন বানরে; কিন্তু মানুষের চেতনার বিশেষ বদল ঘটে নি। মানুষ আজো আদিম। মানুষের চোখে আজো সব কিছুই অলৌকিক রহস্যে পরিপূর্ণ; আকাশে আজো তারা অনন্ত নক্ষত্রপুঞ্জ বা নিরন্তর বিস্ফোরিত গ্যাসকুণ্ডের বদলে দেখতে পায় বিভিন্ন বিধাতা; দেখতে পায় মনোরম স্বৰ্গ আর ভীতিকর নরক। সভ্যতার কয়েক হাজার বছরে মানুষ মহাজগতকে উদ্ঘাটিত করার বদলে তাকে পরিপূর্ণ করেছে অজস্র রহস্যে, ধারাবাহিকভাবে ক'রে চলছে বিশ্বের রহস্যীকরণ; বা সত্যের অসতীকরণ। মহাজগতের রহস্যীকরণে অংশ নিয়েছে মানুষের প্রতিভার সব কিছু: পুরাণ, ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, এবং আর যা কিছু আছে। তার শক্তির সব কিছুই মানুষ ব্যবহার করেছে মহাজগতকে রহস্যে ভরে তুলতে; তাকে পরিচিত করার বদলে করেছে অপরিচিত, আলোকিত করার বদলে করেছে তমসাচ্ছন্ন। আদিম মানুষ যখন রহস্যীকরণ শুরু করেছিলো, তার কোনো দুরভিসন্ধি ছিলো না, সে শুধু গিয়েছিলো ভুল পথে; কিন্তু পরে সমাজপ্রভুরা দেখতে পায় বিশ্বের সত্য বের করার বদলে তাকে রহস্যে বোঝাই ক’রে তুললেই সুবিধা হয় তাদের। মহাজগতের রহস্যীকরণে ধর্ম নেয় প্রধান ভূমিকা; তার কাজ হয়ে ওঠে রহস্যবিধিবদ্ধকরণ, আলো সরিয়ে অন্ধকার ছড়ানো, মানুষের মনে বিশ্বাস সৃষ্টি করা সে-সব সম্বন্ধে যা সম্পূর্ণরূপে অস্তিত্বহীন। ওই রহস্যের পায়ের নিচে নানা তাত্ত্বিক কাঠামো স্থাপন করে দর্শন, জন্ম দেয় বহু বিখ্যাত ধাধা, করে রহস্যের দর্শনীকরণ। দর্শনের লক্ষ্য ছিলো সত্য আবিষ্কার, কিন্তু দর্শন আসলে বেশি সত্য বের করতে পারে নি; কিন্তু মিথ্যে প্রতিষ্ঠায় তার কাজ অতুলনীয়। প্লাতো-আরিস্ততল সত্য বের করেছেন খুবই কম, তবে মিথ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিপুল। সাহিত্য ও শিল্পকলা রহস্যকে রূপময় ক’রে তীব্র আবেগের সাথে সঞ্চার করেছে মানুষের মনে। বিশ্বসাহিত্যের বড়ো অংশই দাড়িয়ে আছে ভুল ভিত্তির ওপর। তাই মহাজগত এখনো রহস্যময়; মহাজগতকে এখনো বোঝার উপায় হচ্ছে বিশ্বাস। এই রহস্যময়তা ও বিশ্বাস ক্ষতিকর মানুষের জন্যে; এখন দরকার মহাজগত ও মানুষের মনকে অলৌকিক রহস্য থেকে উদ্ধার করা, অর্থাৎ দরকার মহাজগতের বিরহস্যীকরণ। মানুষের জন্যে যা কিছু ক্ষতিকর, সেগুলোর শুরুতেই রয়েছে বিশ্বাস; বিশ্বাস সত্যের বিরোধী, বিশ্বাসের কাজ অসত্যকে অস্তিত্বশীল করা। বিশ্বাস থেকে কখনো জ্ঞানের বিকাশ ঘটে না; জ্ঞানের বিকাশ ঘটে অবিশ্বাস থেকে, প্রথাগত সিদ্ধান্ত দ্বিধাহীনভাবে না মেনে তা পরীক্ষা করার উৎসাহ থেকে। বাঙলার মহাপুরুষগণ, বিদ্যাসাগর ও আরো দু-একজন বাদে, সবাই বিশ্বাসী; তারা আমাদের জন্যে সৃষ্টি করে গেছেন ভুল কল্পজগত। রাজনীতিবিদেরা আজ মেতে উঠেছে বিশ্বাস ও মিথ্যের প্রতিযোগিতায়; তারা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিকর মানবগোত্র। আমার অবিশ্বাস-এ সাতটি প্রবন্ধ রয়েছে, তবে বইটি প্রবন্ধের বই নয়; আমি ধারাবাহিকভাবে একটি বই-ই লিখতে চেয়েছিলাম, তবে পাঠকদের কথা ভেবে বইটিকে সাত শিরোনামে ভাগ ক’রে দিলাম। আমি আনন্দিত যে বইটি বিপুল সাড়া জাগিয়েছে, বাঙালির বিশ্বাসের মেরুদণ্ডে কিছুটা ফাটল ধরাতে পেরেছে। সংশোধিত এ-সংস্করণে শুদ্ধ ক'রে দেয়া হলো কয়েকটি মুদ্রণ ত্রুটি, বদল করা হলো একটি বাক্য, কবিতার অনুবাদেও বদল করা হলো কয়েকটি শব্দ। নতুন অক্ষরে বইটি এবার বিন্যস্ত হলো বলে কয়েকটি পাতা কমলো, কিন্তু আর কিছু কমে নি, বরং কিছুটা বেড়েছে।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৩

বিজন রয় বলেছেন: গ্রেট!

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০৫

গ্রিন জোন বলেছেন: সব কিছুতে অবিশ্বাস আবার ঠিক নয়- আমার মনে হয়। জীবনের প্রতি বিশ্বাস তো রাখতেই হবে। সামনে আকাশ পেছনে সমুদ্র এসব অবিশ্বাস করা যায় না। ওই যে টেবিলটা ....ওটা কেউ তৈরি করেছে.......এটা মানতেই হয়। এখান থেকেই তো জ্ঞান অর্জন হতে পারে। তাহলে বিশ্বাস থেকে জ্ঞান অর্জন হয় না ক্যামনে?

২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০৮

বিজন রয় বলেছেন: যে কোন উৎসহ হতে জ্ঞান অর্জন সম্ভব।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১৬

গ্রিন জোন বলেছেন: তাহলে হুমায়ুন আজাদ ওই কথাটা কেন বললেন? তিনি জ্ঞানি মানি। তাই বলে যুক্তিহীন কোনো কথা মানি না।

৩| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৪

আব্দুল্লাহ্ আল আসিফ বলেছেন: এই দিনে হুমায়ুন আজাদকে খুব মনে পড়ছে।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১০

গ্রিন জোন বলেছেন: বিজ্ঞান নিজেই তো অদৃশ্যের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে চলছে। কোয়ান্টাম পদার্থ বিজ্ঞান তো পুরোটাই বিজ্ঞানের আর্টিকেল অব ফেইথ। ফোটন কণাকে বলা হচ্ছে স্থির অবস্থায় শূন্য আর গতিশীল অবস্থায় অনির্ণেয়। তাহলে বিজ্ঞান কি সত্যের অসতীকরণ করছে না.........

৪| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫৫

গেম চেঞ্জার বলেছেন: সমাজপ্রভুরা দেখতে পায় বিশ্বের সত্য বের করার বদলে তাকে রহস্যে বোঝাই ক’রে তুললেই সুবিধা হয় তাদের। মহাজগতের রহস্যীকরণে ধর্ম নেয় প্রধান ভূমিকা; তার কাজ হয়ে ওঠে রহস্যবিধিবদ্ধকরণ, আলো সরিয়ে অন্ধকার ছড়ানো, মানুষের মনে বিশ্বাস সৃষ্টি করা সে-সব সম্বন্ধে যা সম্পূর্ণরূপে অস্তিত্বহীন। ওই রহস্যের পায়ের নিচে নানা তাত্ত্বিক কাঠামো স্থাপন করে দর্শন, জন্ম দেয় বহু বিখ্যাত ধাধা, করে রহস্যের দর্শনীকরণ। দর্শনের লক্ষ্য ছিলো সত্য আবিষ্কার, কিন্তু দর্শন আসলে বেশি সত্য বের করতে পারে নি; কিন্তু মিথ্যে প্রতিষ্ঠায় তার কাজ অতুলনীয়। প্লাতো-আরিস্ততল সত্য বের করেছেন খুবই কম, তবে মিথ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিপুল। সাহিত্য ও শিল্পকলা রহস্যকে রূপময় ক’রে তীব্র আবেগের সাথে সঞ্চার করেছে মানুষের মনে। বিশ্বসাহিত্যের বড়ো অংশই দাড়িয়ে আছে ভুল ভিত্তির ওপর।
সভ্যতার কয়েক হাজার বছরে মানুষ মহাজগতকে উদ্ঘাটিত করার বদলে তাকে পরিপূর্ণ করেছে অজস্র রহস্যে, ধারাবাহিকভাবে ক'রে চলছে বিশ্বের রহস্যীকরণ; বা সত্যের অসতীকরণ।

উনি এগুলো ভাল বলেছেন। আমার চিন্তাধারার সাথে বেশ মিল আছে এখানে। সমাজপতিদের কারণে আমরা বারেবারে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রা বিলম্বিত হয়েছে তাদের কারণে। এখন অবশ্য বিজ্ঞান এতোটা আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা নয়। আশা আছে তাই, বিজ্ঞানের হাত ধরে মানবসভ্যতা এগিয়ে যাবে।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৩

গ্রিন জোন বলেছেন: বিজ্ঞান নিজেই তো অদৃশ্যের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে চলছে। কোয়ান্টাম পদার্থ বিজ্ঞান তো পুরোটাই বিজ্ঞানের আর্টিকেল অব ফেইথ। ফোটন কণাকে বলা হচ্ছে স্থির অবস্থায় শূন্য আর গতিশীল অবস্থায় অনির্ণেয়। তাহলে বিজ্ঞান কি সত্যের অসতীকরণ করছে না.........

৫| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০৫

মহা সমন্বয় বলেছেন: হুমায়ুন আজাদ এত্তগুলো ভাল বলেছেন এবং আমি পুরোপুরি একমত।
ধর্ম মানুষকে শিখিয়েছে জ্বীন,পরি,ভুত,প্রেত যাদু, টোনা তাবিজ,কবজ মিথ্যা আশ্বাস সীমাহীন মুর্খতা আর অন্ধকার। অবশ্য ধর্মে ভাল অনেক কিছুও আছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

আর বিজ্ঞান যদি অদৃশ্যের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে তবে আমরা আছি বিজ্ঞানের সাথে কিন্তু ধর্মের অন্ধকারের সাথে নয়।
বিজ্ঞানের হাত ধরে মানবসভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৭

গ্রিন জোন বলেছেন: জ্বীন,পরি,ভুত,প্রেত যাদু, টোনা তাবিজ,কবজ এসব ধর্ম শেখায়নি। ধর্মকে পুঁজি করে এক শ্রেণির ভণ্ডরা ব্যবসা করে যাচ্ছে। এরা ধর্ম শেখার নামে অধর্মকেই শিখছে। কারণ আসল ধর্ম তাদের বাপ দাদার চরিত্রকে ঘৃণা করে। এজন্য তারা ধর্মকে বিকৃতির আদলে ব্যবহার করছে। সঠিক ধর্ম ব্যবহারকারীরা ভ্রান্তদের বাড়া ভাতে হাত দেয় বলেই তাদের এতো জ্বালা।

৬| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৫

গেম চেঞ্জার বলেছেন: লেখক বলেছেন: বিজ্ঞান নিজেই তো অদৃশ্যের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে চলছে। কোয়ান্টাম পদার্থ বিজ্ঞান তো পুরোটাই বিজ্ঞানের আর্টিকেল অব ফেইথ। ফোটন কণাকে বলা হচ্ছে স্থির অবস্থায় শূন্য আর গতিশীল অবস্থায় অনির্ণেয়। তাহলে বিজ্ঞান কি সত্যের অসতীকরণ করছে না.........

শুন্য আর গায়েবী একই ব্যাপার মনে করেন কি?

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৪০

গ্রিন জোন বলেছেন: হুমায়ুন আজাদের শূন্য গায়েবই ..........

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.