নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসিফ আমি আস্তিক

প্রগতিশীলতা আর নগ্নতা এক নয়

শেখ আসিফ

আমার লেখা আমার নিজস্ব অভিমত। সবার পছন্দ হবার জন্যে লিখিনা। কারও মনে কষ্ট দিলে দুঃখিত।

শেখ আসিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারীর দৈহিক প্রদর্শনীঃ একটি inferiority complex

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৬

রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিল অপ্সরা। অপ্সরা নিজেও বুঝতে পারে যে ও কতটা সুন্দরী। আজকে ও খুব সাজগোজ করে বেড় হয়েছে। টাইট থ্রি কোয়ার্টার জিন্স ও শর্ট টপস। আধুনিক মেয়ে, এসব তো পরতেই পারে, এ আর কীইবা তেমন। কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়। ওর টপস তা খুব আঁটসাঁট, দেহের সাথে মিশে আছে। দেহের সাথে জামাকাপরের এমন মিতালি খুব দৃষ্টিকটু। কারন এ অবস্থায় কোনটা দেহ, কোনটা জিন্স আর কোনটা টপস তা বোঝা স্পষ্ট বোঝা যায় না। এসব পোষাকে দেহের সামগ্রিক গড়ন বুঝতে খুব একটা কষ্ট হয়না। এমনি এক ড্রেস আপে অপ্সরা সেদিন বের হয়েছিল। হেটে যাচ্ছিল রাস্তা দিয়ে। পায়ের ঝনঝন নুপুরের স্পন্দন শব্দ আর গায়ের উচ্চমাত্রিক গন্ধের পারফিউম একটা উঠতি বয়সের ছেলেকে আকর্ষণ করতে যথেষ্ট ছিল।



শ্রাবন আর অন্তু- ঘনিষ্ঠ বন্ধু- বয়স ১৮ কি ১৯ হবে। মোড়ে দারিয়ে আড্ডা দিচ্ছিল দুইজন। হটাত একটা সুগন্ধ নাকে এসে লাগল। ব্যাপন প্রক্রিয়ার ব্যাপারে চিন্তা করার আগেই কানে পৌঁছল নুপুরের ঝনঝন শব্দ। নাহ, অপ্সরার রুপের বাহার সেদিন ওদের অডিটরি স্নায়ু নিয়েও ভাবতে দিলনা। অপ্সরার চুয়ে পড়া রুপ সুষমায় ওরা আবেগের নিয়ন্ত্রন হারাল। এরপর, এরপর যা হবার তাই।

-ইসস। দেখছস অন্তু! পুরা item.

- ইংরেজি মারাইস না। বাংলায় “মাল” কহ। শুনতে ভাল্লাগে।

-এই, মালটা সম্পর্কে তোর experience কি কয়?

-মনে তো কয় 36-24-36.

- আইলা। তোর তো দেখি দারুন অভিজ্ঞতা।

আরে ব্যাটা জানসি তো ,practice makes a man perfect. এসব মালের বডি নিয়া কত practice কল্লাম।



এইসব মন্তব্য শুনতে শুনতে অপ্সরা অতিস্ট হয়ে উঠছিল। তাড়াতাড়ি রিক্সা নিয়ে নিল একটা। যতক্ষন রিক্সায় ছিল ততক্ষন নির্ঝঞ্ঝাট কাটল সময়টা। রিক্সা থেকে নামতেই গতানুগতিক অবস্থা। এখন হয়তোবা দৃশ্যপটে শ্রাবন বা অন্তু নেই। দৃশ্যপটে হাজির অপ্সরার classmates কাব্য আর রিগান। কাব্যই শুরু করল প্রথমে,

-এই রিগান দেখ তো। আমার জিন্স টা কি বেশি আঁটসাঁট?

-কই না তো। বেশি একটা না।

-আর বলিস না। এইরকম জিন্সটাই আমার পড়তে আর খুলতে খুব কষ্ট হয়। আর অপ্সরার মত মাইয়ারা যে কেমনে ওইসব টাইট জিন্স পড়ে তা বুঝিনা। আচ্ছা এদের কি এসব খোলার সময় কোন problem হয়না।

-কি জানি। আমি বাবা ওইসব পরিওনা, জানিওনা। এ নিয়া বিস্তারিত গবেষণার দরকার আছে। ও পাড়ার অন্তুরে জিগামুনে। ঐ ভাল কইতে পারব।





আমি এই কাহিনি নিয়ে আর অগ্রসর হতে চাই না। কারন গল্প লেখা আমার উদ্দেশ্য নয়। আর এ ধরনের গল্পের শেষ পরিনতিটা যে কি তা পাঠক সমাজ জানেন। কয়টা ধর্ষণের খবরই আমরা পাই। শহরে, গ্রামে, আনাচে কানাচে যতগুলো ধর্ষণ হচ্ছে তাঁর কয়টা রিপোর্ট আমরা কাগজে দেখি? তদুপরি রাস্তাঘাটে অপ্সরার মত নাম না জানা কত মেয়ে যে ভার্চুয়াল ধর্ষণের শিকার হচ্ছে তাঁর কথা নাইবা বললাম। অবস্থার অবনতি চোখের সামনে দেখছি। সাম্প্রতিক কালে এই সমাজের ড্রেস কোডের যে কতটা উন্নতি(!!!) হয়েছে তা সবাই জানেন। মফস্বলে এসব ঘটনা বেশি দৃষ্টিগোচর না হলেও নিতান্ত কম নয়। আর দূরদর্শীর কাজই হচ্ছে অগ্রিম কিছু চিন্তা করা।



আসলে এটা একটা চিন্তা করার মত বিষয় যে কেন নারীরা তাদের দেহকে সকলের দর্শনের বস্তু বানিয়েছে। আমি যতদুর চিন্তা করলাম তাতে যে উত্তরটি মাথায় আসল তা হচ্ছে inferiority complex. এসব দৈহিক প্রদর্শনীর মুলে আছে হীনমন্যতা। নারীরা আগেও নিজেদের পুরুষের সমকক্ষ মনে করেনি আজ আধুনিক যুগেও পারছেনা। এই হীনমন্যতাকে recover করার জন্য এবং complex টাকে কাটিয়ে উঠার পন্থা হিসেবে তারা এক মারাত্মক উপায় বেছে নিয়েছে। নারীও মানুষ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তারা নিজেরাই নিজেদের ভোগের বস্তু হিসেবে দাড় করিয়েছে।নয়তো কি? আধুনিক যুগে কি কাপড়ের অভাব ছিল। তাহলে কেন আজকাল বড় বড় পার্টিগুলোতে পুরুষ সমাজ suited-booted হয়ে আসে, মুখ ও হাত ছাড়া তাদের কিছুই দেখা যায় না। পক্ষান্তরে নারীগুলো এমনভাবে দেহ প্রদর্শনে লিপ্ত হয়;মনে হয় যেন একটু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে গিয়ে দেখি আসলেও নারীর জন্যে বস্ত্রশিল্পে অনুদান কম আছে কিনা। আসলে এসব কিছুই না। আধুনিক পুঁজিবাদী ও ভোগবাদী সমাজব্যাবস্থাই নারীর মনে হীনমন্যতা সৃষ্টি করে তাকে পন্যে পরিণত করেছে।



আপনারা দেখে থাকবেন আজকে মিডিয়ায় পন্যের প্রসারে যেসব বিজ্ঞাপন দেয়া হয় সেখানে কোন প্রয়োজন ও প্রসঙ্গ ছাড়াই নারী মডেল জুড়ে দেয়া হয়। সেখানেও পোশাকের অতি কৃত্রিম স্বল্পতা। বিলবোর্ড, পোস্টার, --কোথায় নেই আজ নারী দেহ? একটা বিজ্ঞাপনের কথা বললে ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়। একবার একটা বিখ্যাত গাড়ি কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেয়া হল। সেখানে দেখা গেল একটা সুন্দর গাড়ি আর তাতে হেলান দিয়ে আছে দু চিলতে কাপড় তথা বিকিনি পড়া তদাপেক্ষা সুন্দর নারী। আর সেখানে সুন্দর করে লিখা, “Test drive it now”. দর্শক মাত্রেরই এই বিজ্ঞাপন দেখে কৌতূহল জাগে কাকে test drive কোরতে বলছে- গাড়ি নাকি ঐ হাস্যময়ী লাস্যময়ী নারীকে।



আগে কিন্তু দেশের অবস্থা এমন ছিলনা। চল্লিশের দশকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই ধরেন। একটি লেখা পড়ে জানলাম তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা পবিত্র পরিবেশ বিরাজ করত। ছাত্রীরাও ক্লাসে আসত শালীনভাবে, বাংলার ঐতিহ্যবাহি পোশাক শাড়ি পড়ে। বোনের দৃষ্টিতে দেখতে বাধ্য ছিল সবাই। আজকের মত অশ্লীলতার কারখানা ছিলনা। অনিবার্য ফলস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষাবিজ্ঞানী ডঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ, বিশ্ব নন্দিত বিজ্ঞানী সত্যেন বোস। আর এদের হাতেই তৈরি হয়েছিল মুনির চৌধুরীর মত ছাত্র। আর আজকে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর যে অবস্থা তাতে ধর্ষণে সেঞ্চুরি মারা ছাত্র ছাড়া আর কীইবা আশা করা যায়।



বুঝতেই পারেন শালীনতার গুরুত্ব কতটুকু। “লজ্জা নারীর ভূষণ”–কথা সত্য। মুখ্য কথা হচ্ছে প্রথমত আপনাকে শালীন হতে হবে। মাত্রা নির্ধারণের কাজটা ধর্মের কাছে ন্যাস্ত করলাম। তবে এক্ষেত্রে ইসলাম এর “হিজাব” ব্যাপারটা খুব সুন্দর। আমি ব্যাক্তিগতভাবে একে পছন্দ করি। আর দেশের অতি সুশীল যারা একে নারীর পশ্চাতপদতা হিসেবে দেখতে চান তাদেরকে এক মহান নারীর বানী শুনাতে চাই। ওনারা আবার বাণী ছাড়া কিছু শুনতে রাজি হন না। বাণীতেই ওনাদের পরম সুখ। শান্তিতে নোবেলবিজয়ী তাওয়াক্কুল কারমান যাকে বলা হয় 'The mother of Yemen's revolution,' তাকে যখন হিজাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় তখন তিনি বলেন , “Man in early times was almost naked, and as his intellect evolved he started wearing clothes. What I am today and what I’m wearing represents the highest level of thought and civilization that man has achieved, and is not regressive. It’s the removal of clothes again that is a regression back to the ancient times.



এভাবেই যুগে যুগে মনিষীরা(তথাকথিত সুশীল নয়) শালীনতার গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন। পক্ষান্তরে যেসব নারীই inferiority complex এ ভুগেছে তারা সবাই নিজ দেহকে মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজিয়ে কামুক ও লম্পট পুরুষদের সামনে পরিবেশন করেছে। অশ্লীলতা আর নগ্নতা যে আধুনিকতা নয় তা এরা বুঝতে পারে না। আর এই inferiority complex এর মারাত্মক পরিণতি নিয়ে আলোচনা করলে লেখার পরিসর আরও বাড়বে। থাক, সেসব নিয়ে আরেকদিন কথা হবে। তদুপরি আমি নারী নই; নারী সম্বন্ধে বেশি কথা বললে ভুলও হয়ে যেতে পারে। বস্তুত আমি যা বলেছি তার সবগুলোই উপলব্ধি আর অভিজ্ঞতার ফসল। এর ১০০% ই যে নির্ভুল হবে তা নয়। তবে আজকের প্রেক্ষাপটে এটা কতটা সঠিক তার বিচার করবেন সম্মানিত পাঠকসমাজ।

বি দ্র ঃ লেখাটি পূর্বে ফেসবুকে পাবলিশ হয়েছে.।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:১২

আরজু পনি বলেছেন:

আজকাল নিজেকে সেক্সি হিসেবে প্রমাণ করতে চা্ওয়া্ও নারীদের মধ্যে ব্যাপক দেখা যাচ্ছে, এটা তখনই মূলত হয়, যখন মেধার মূল্যায়ন যথার্থভাবে হয় না বা মেধাহীনরাই নিজেদেরকে এভাবে উপস্থাপন করে থাকে ।

পুরুষের সমকক্ষ হতে পোষাকের এই হাল, তেমনটি বোধ হয় না ।

২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:১৩

নেক্সাস বলেছেন: আরজুপনি বলেছেন:

আজকাল নিজেকে সেক্সি হিসেবে প্রমাণ করতে চা্ওয়া্ও নারীদের মধ্যে ব্যাপক দেখা যাচ্ছে, এটা তখনই মূলত হয়, যখন মেধার মূল্যায়ন যথার্থভাবে হয় না বা মেধাহীনরাই নিজেদেরকে এভাবে উপস্থাপন করে থাকে ।

পুরুষের সমকক্ষ হতে পোষাকের এই হাল, তেমনটি বোধ হয় না ।


আরজুপনিপা কে সমর্থন দিলাম

৩| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:১৭

রুমি৯৯ বলেছেন: mY OPENION SAME TO YOU

৪| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: ভালো লিখেছেন। এখন চলছে আমাদের ভলকানিক বিস্ফোরণ। একেবারে উত্তপ্ত অবস্থা। সব দূষিত পদার্থ বের হয়ে আশাকরি ধীরে ধীরে আবারো শান্ত, স্নিগ্ধ, ঠান্ডা হয়ে যাবে এ গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে দেয়া উত্তপ্ত সাংস্ক্বতিক আগ্রাসনের পরিবেশ।

৫| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৪

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: ভাল লিখেছেন, নারীদের ভাবতে হবে তারা নিজেদের সম্মান করতে চায় কি না...

৬| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪২

অচেনাআমি বলেছেন: সবার আগে নিজের চোখ আর মন চেঞ্জ করতে হবে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.