নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!

শেরজা তপন

অনেক সুখের গল্প হল-এবার কিছু কষ্টের কথা শুনি...

শেরজা তপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি বাড়ি যায়

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:২১

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~আজ তাঁর জন্মদিন।
১৯৪৮ সনের প্রথম দিকে,তখনো পাসপোর্ট প্রথা প্রচলিত হয়নি। জনৈক যোগানন্দ গুপ্ত কার্যোপলক্ষে শিলং থেকে বাসে সিলেট যাচ্ছিলেন। বেলা প্রায় আড়াইটা নাগাদ-ডাউকী সীমান্তে পৌছেন। সেখানে তাঁর এক অতি পরিচিত কাস্টমস অফিসার আলাপ প্রসঙ্গে জানালেন যে,কর্তব্যের খাতিরে অনিচ্ছাসত্ত্বেও দু’জন খ্যাতিমান ব্যক্তিকে; এদের একজন ব্যবসায়ী এবং অপরজন বিখ্যাত পণ্ডিত ও সাংবাদিক- কর্তব্য হিসেবে যাত্রাপথে বাধা দিতে হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে বেশ কিছু পরিমাণ পানীয় দ্রব্য ছিলো। বাধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদ্বয় তখন ডাক বাঙলোতে বিশ্রাম করছিলন। “ আমি (যোগানন্দ গুপ্ত) আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে সীমান্ত অতিক্রম করার সময় দেখি সেই খ্যাতি মান ব্যক্তিদ্বয় স্বয়ং সৈয়দ মুজতবা আলী এবং তাঁর বন্ধু,প্যারীমোহন মুখার্জী। দু’ জনই আমার পরিচিত। তাঁরা প্রাইভেট কারে সিলেট যাচ্ছেন। সীমান্ত অতিক্রম করার সময় সৈয়দদা মনোরম ভঙ্গীতে সিলেটী সংলাপে আমার পরিচিত সেই কাস্টমস অফিসারকে বললেন,
“কিতা বা!-আর দরতায় নি?পেটো করি নিলাম।”
ডঃ আলীর মদ্যাসক্তি সম্পর্কে কিছ ,ঘটনা শোনা যায় -তার অনেকগুলোই বেশ মুখরোচক।
ব্যক্তি হিসেবে মুজতবা ছিলেন অতুলনীয়। তাঁর বন্ধু,বাৎসল্য এবং স্নেহকোমল অর্ন্তলোক আমাদের আলোচনায় এসেছ। মদ্যাসক্তি সীমা লঙ্ঘন করলেও মুজতবার ভেতরকার অনিন্দ্যসুন্দর মানুষটির কোমল রূপকখনো বিনষ্ট হয়নি।
সাহিত্যিক শ্রীযুক্ত প্রমথনাম বিশী -আলী সাহেবের অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন। শান্তিনিকেতনের প্রাক্তন বিদ্যার্থীদের মধ্যে যাঁরা সাহিত্যচর্চা করেছেন, তাঁদের মধ্যে ডঃ আলী শ্রীযুক্ত বিশীকে শ্রেষ্ঠ মনে করতেন। তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্কও ছিলে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ন।
দিল্লীতে গ্রীষ্মের দ্বি-প্রহরে কোন এক বাড়ীতে নিমন্ত্রিতদের মধ্যে শ্রী প্রমথনাথ বিশী এবং মুজতবা আলীও ছিলেন। নানারকম পানীয়ের মধ্যে প্রমথ বিশী ঘোলের শরবৎই পান করলেন। কেননা,পরিবেশিত অন্য কোন পানীয়ের প্রতি তাঁর আসক্তি ছিলো না। অভ্যাসও ছিলো না।
রাত্রিতে সেই বাড়ীতেই পুনরায় যখন পানীয় পরিবেশন করা হলো। প্রমথনাথ বিশী বলছেন; তখন শুধুমাত্র আমি যে গোঁড়া নই তা প্রমাণ করবার জন্য ঈষৎ বিয়ার পান করলাম। তাতে অবস্থার কোন ইতরবিশেষ আমি বুঝতে পারিনি। কিন্তু যখন ঘরে প্রত্যাবর্তন করলাম এবং সৈয়দের কানে গেল আমি বিয়ার পান করেছি, সে আমার পা জড়িয়ে ছেলেমানুষের মতো হাঁউ মাউ করে কেঁদে উঠলো
বিশীদা-ওটা আর খাবেন না। আমি বললাম,‘ আরে না,মাত্র একদিন। ওতে কিছু হবে না।'
সৈয়দ বললে,-না,না। ওভাবেই ওগুলো নেশা ধরিয়ে দেয়। আমিও ওভাবেই ধরেছিলাম। আজ আমার অবস্থা দেখুন। না খেলে আমি থাকতে পারি না? আমি শেষ হয়ে গেলাম!!!

তাঁর জীবনের করুণ পরিণতি ভয়াবহ এবং ত্বরান্বিত করার পশ্চাতে মুখ্য কারণ মদ্যপানের তৃষ্ণা। মদই মুজতবা আলীকে গ্রাস করেছে। তাঁর পানাসক্তি প্রসঙ্গে তাঁর ভৃত্য শেখ দিলজান বলেছেন,“ ..সাহেব মদ্য একটু, বেশী মাত্রায় পান করতেন। অনেক সময় রাত্রে ঘুম ভেঙ্গে গেলেও মদ চাইতেন। ঘরে না থাকলে মধ্যরাত হলেও আমাকে দোকান থেকে মদ আনতে হতো। যখন কোলিকাতা থেকে সাহেবের বন্ধু-বান্ধবরা আসতেন তখন একটু বেশী মাত্রায় খেতেন এবং লেখার কাজকর্ম বন্ধ করে শুধু গল্প করতেন। ”
মদের এই ভয়াবহ গ্রাস থেকে আলী সাহেব নিজেকে আর কখনো রক্ষা করতে পারেননি। এবং সে — চেষ্টাও নির্লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে সৈয়দ মুজতবা আলী’র -গেলাস বন্ধুদের অবদানও কম ছিল না। এদের অনেকে অলী সাহেবের পয়সায় দিনের পর দিন মদ খেয়েছেন। আবার অনেকে স-বোতল স-বান্ধব হাজিরা দিতেন তাঁদের আকর্ষণ স্বয়ং মুজতবা আলী ।
ডঃ আলীর সঙ্গে শংকরের মানে দুই বাংলার জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক মনিশংকরের শেষ সাক্ষাৎ ৫ নং পাল রোডে।- তিনি নিজের ছোট্ট ঘরে বিছানার ওপরে আধশোয়া অবস্থায় ছিলেন। সামনে সেই পরিচিত হইস্কির বোতল। নিজের অসহায় কর্রুণ অবস্থার কথা অসঙ্কোচে এককালের প্রিয় শিষ্যের নিকট ব্যক্ত করেন;
-এখন মুজতবা আলী গলিতনখদন্ত-এখন লোকে তার লেখা দয়া করে পড়ে। তার মাথায় আর আইডিয়া আসতে চায় না।
‘ অনেকটা স্বগতোক্তির মতোই যেন উচ্চারণ করেন,“ সংস্কৃতে একটা গল্প আছে। এক তৃষ্ণার্ত হাতি সরোবরের ধারে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সামনে পাঁক থাকায় জলের ধারে যেতে পারছে না । একটা কাক কেমন নির্ভয়ে তরতর করে কাদার ওপর দিয়ে হেটে গিয়ে তৃষ্ণা নিবারণ করে চলে গেল । আমি হচ্ছি ওই হাতি — আমার পাণ্ডিত্যই আমার শত্রু। সুতরাং ভ্রাতঃ , ... কখন হাতী হবার চেষ্টা কোরো না!!!!
৩ রা জুন,১৯৬৯। এডভোকেট অংশ কুমার চট্টোপাধ্যায়কে লিখেছেন,
- আমি ... এখানে (১১ ডি,নাসিরউদ্দিন রোড )অন্তত:কয়েক মাসের জন্য ,চিকিৎসার স্বার্থে ডেরা পেতেছি। ড: আলী সম্ভবত: অল্পদিনের মধ্যেই বাড়ী পরিবর্তন করে ৫ নং পাল রোডে উঠে যান। এবং কোলকাতার শেষ দিন পর্যন্ত ডঃ আলী সেখানেই ছিলেন। (মরহুম )আবু সয়ীদ আইয়ুবও ছিলেন এ বাড়ীর অন্যতম ভাড়াটে। এ ঠিকানা থেকে '৬৯ —এর অক্টোবরে লেখা পত্র আমাদের হাতে রয়েছে । মুজতবা আলী 'সাইরো-সিস’( লিভার সিরোসিস) ভুগছিলেন। ১৯৭০ -এ ইউরোপে ভ্রমণের সময় এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর শ্রীযুক্ত দ্বারিকানাথ মিত্র তাঁকে সম্পূর্ণ নিজ ব্যয়ে প্রেসিডেন্সি নাসিং হোমে-দীর্ঘ তিন মাস রেখে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং আলী সাহেব সম্পূর্ণ নিরাময় হয়ে বাড়ী ফেরেন।
ত্যধিক পানাসক্তি ,অনিয়ম ,আর্থিক অনটন — সবকিছু মিলিয়ে আলী সাহেবের কোলকাতার শেষ দিনগুলো ছিলো অত্যন্ত করুণ,নির্মম -যদিও তিনি সর্বদা এদিকটা সংগোপনে,অন্যের অগোচরে রেখেছেন।
নিষ্ঠাবান ও রক্ষণশীল পরিবারের সন্তান মুজতবা আলী ১৯২৯ সালে জার্মানি গেলে তাঁর এক শিক্ষক যুবা ছাত্রটিকে যে দুটো বিশেষ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ছিলেন — 'সেখানকার তরুণী সম্প্রদায় হৃদয়বতী এবং পানীয় অতি সস্তা' -দুটো বস্তুই তরুণটিকে অকির্ষণ করেছিলো এবং আমত্যু সে -আকর্ষণে ভাটা পড়েনি। বরঞ্চ উত্তরোত্তর তৃষ্ণা বেড়েছে।
বাঙলার এক কালের দারুন নন্দিত লেখকের এই পরিণতি সম্পুর্ণ তার নিজেরই সৃষ্টি। শেষদিকে মুজতবার দেহ-মন দুই — ই ভেঙ্গে গিয়েছিলো। মমত্ব এবং অন্যান্য কারণে ও দেশ ত্যাগ করেননি। আবার ওখানকার কিছু ঘটনায় মানসিক চাঞ্চল্য তাঁকে স্বাভাবিক মানুষের ব্যতিক্রম হিসেবে চিহ্নিত করেছে অনেক সময়। মানসিক দিক থেকে এই প্রাণবান পুরষটি ছিলেন বড় অসুখী। অত্যন্ত একা একটা যন্ত্রণায় ছিলেন আজীবন কাতর।
সৈয়দ মুজতবা আলী ডায়েরীতে পুত্রদের উদ্দেশে কতগুলো পত্র লিখে গেছেন -বড় হয়ে তারা পড়বে, সে প্রত্যাশাতেই। প্রতিটি চিঠিতে সন্তান বৎসল পিতৃহৃদয়ের বুভুক্ষা ও আর্তি সপ্রকট।
-একটিতে লিখেছেন,
আজ সপ্তদশী। এখন আটটা বেজেছে। সপ্তদশীর চাঁদ কখন ওঠে ঠিক জানিনে। বাইরে অন্ধকারটা জমাট নয়। আকাশ যেন কোন ঘোরে রঙের চশমা পরে তাকিয়ে আছে। বাতাস যেন ভিজে কাঁথা পরে আমার চতুর্দিকে ঘোরাফেরা করছে ।... সমস্ত জীবন কাটলে। এই রকম একা বসে বসে।
আমাদের দু'জনের কথা এবং অন্যান্য- গৌরী আইয়ুব (২০১৩) তার বিশাল গ্রন্থে- আলী সাহেবকে নিয়ে আলাদা একটা পরিচ্ছেদ লিখেছেন;
সৈয়দ মুজতবা আলী বন্ধুবরেষু ~শিরোনামে। সেখানে বেশ পরিশীতল ভাষায় তিনি মুজতবা আলীর শেষের বেহড মাতাল হয়ে থাকার দিনগুলোর কথা স্মরণ করেছেন এভাবে। তবে শেষের এই দিনগুলোতে তার এতবেশী মদ্যপান করার পেছনে বিশেষ একটা কারন ও তিনি উল্লেখ করেছেন;
এই বাড়ির বৃদ্ধ মালিক এবং তাঁর স্ত্রীও ইহলোক ত্যাগ করেছেন আমাদের উপরের ফ্ল্যাটে থাকতেন কেবল সেই গৃহস্বামীর অকৃতদার কনিষ্ঠ পুত্র কচি। তিনিই মুজতবা সাহেবকে আবার তিনতলার ঘরে এনে প্রতিষ্ঠিত করেন। ব্যাপারট সহজে ঘটেনি । কারণ কচির এই কাজটায় তার ভাইবােনেরা কেউ কেউ অত্যন্ত বিরক্ত হয়েছিলেন । যাই হোক , মুজতবা সাহেব যে উপরের ঘরে এসে থাকতে শুরু করলেন। কিন্তু দেখা গেল যে মানুষটি ৫৬ সালে এই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন আর যিনি ৭১ সালে ফিরে এলেন,তারা যেন আর একই মানুষ নন। ইতিমধ্যে দেশ পত্রিকা মারফৎ বাংলা সাহিত্যে তার স্থায়ী আসন বহুকাল ধরেই সংরক্ষিত হয়ে গিয়েছিল । দেশ পত্রিকায় নিয়মিত নানা লেখা বার হচ্ছিল বলে তার অনেকটা আর্থিক সমস্যারও সমাধান হয়েছিল। কোনও রকমে 'সেই লেখাটুকু লিখতেন,কিন্তু অবশিষ্ট সময়ে আগের মতো পড়াশুনা করার অভ্যাস আর রাখতে পারেননি। যোগ্য- অযোগ্য নানা ব্যক্তির সঙ্গে আড্ডা দিয়েই সময় কেটে যেত এবং পানের অভ্যাসও অনেকখানি বেড়ে গিয়েছিল। তাকে সংযত করার সাধ্য আমাদের কারও ছিল না। তার মানসিক বিষাদের কারণও যথেষ্ট ছিল ,সেকথাও অস্বীকার করা যাবে না। সারা একাত্তর সালটি তার পক্ষে সবচেয়ে কষ্টের কাল ছিল। তার স্ত্রী,পুত্র যে ঢাকাতেই রয়ে গিয়েছিলেন সেজন্য পূর্ব পাকিস্তানের খান সেনাদের দৌরাত্ম্যের সব খবর পেয়েও মুখ বন্ধ করে থাকা ছাড়া তার উপায় ছিল না। এর জন্যও তার এখানে নানাজনের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছিল। স্বামী ভারতীয় এই অপরাধেই তার স্ত্রীর উপরে কত যে নিগ্রহ হতে পারত সেই সব কথা ভেবেই তিনি অন্য ভারতীয় মুসলিম ইনটেলেকচুয়ালদের মত সরাসরি বাংলাদেশে পাকিস্তানী বর্বরতার নিন্দা করতেও পারছিলেন না । আবার নীরবে সহ্য করাও বড় কঠিন ছিল । এ সময় বার বার অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন।

নে হয় নিজেকে ধ্বংস করাই ছিল মুজতবা আলীর শেষ জীবনের ব্রত !সকাল থেকে গভীর রাত অবধি চলত নিরলস বিরামহীন মদ্যপান। লেখার ক্ষমতাও গিয়েছিলো কমে। স্মৃতিশক্তির প্রবাদ বাক্যতুল্য ধার অনেকটা নিষ্প্রভ! আহারের প্রতিও বিমনা। এমনি অবস্থার প্রত্যক্ষদর্শী শ্রীযুক্ত গৌরী আইয়ুব আমাদের ধারণা হয়েছিলো যে একমাত্র তাঁর (মুজতবার )স্ত্রী বা সন্তানরাই তাকে এ ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে পারেন। আমরা মিসেস আলীকে অনুরোধও করেছিলাম তাঁকে ঢাকা নিয়ে যেতে । এতে আলী সাহেব আমাদের ওপর অত্যন্ত বিরক্তও হয়েছিলেন । তাঁকে বেপরোয়া জীবন থেকে রক্ষার জন্যেই আমরা মুজতবা সাহেবকে ঢাকা পাঠাতে চেয়েছিলাম । কিন্তু তিনি আমাদের কিছুটা ভুল বোঝেন। এবং অভিমান ভরে বলেছিলেন,’তোমরা আমাকে এ বাড়ী থেকে তাড়াতে চাইছো "কিন্তু শ্রীমতী গৌরী কথিত আলী সাহেবের উক্তি যে নিছক ‘অভিমান’।
১৯৭৩ এ পাল রোডে তাঁকে দেখে শ্রীঅমিতাভ চৌধুরীরও বিস্ময়ের অবধি থাকে না। প্রথম দেখা মুজতবার সঙ্গে আজকের সৈয়দদার সদৃশ্য কোথায়? কিছুদিন আগেই কোলকাতায় তিনি ~সেরিব্রাল থম্বোসিস এ আক্রান্ত হয়েছিলেন। সদা সপ্রতিভ সুবেশী সৈয়দদা শুয়ে আছেন। দাড়ি কামানো হয়নি। ময়লা লুঙ্গি,গেঞ্জি পরিহিত। রীতিমতো একটা নোংড়া বিছানা ও পরিবেশে পড়ে আছেন । ... সৈয়দদা শুয়ে শুয়েই কথা বলছিলেন। তাঁর একটি হাত অসাড় হয়ে আসছিলো। সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, বিধিদত্ত আঙ্গুলগুলো আর বোধ হয় কাজে লাগাতে পারবো ন। কন্ঠে তাঁর বিষণ্ণতা। হঠাৎ তিনি বললেন,আমি যে এ অবস্থায় আছি, একথা কাউকে বলবে না। এমনকি কানাইকেও না। আমি চাইনে,কেউ এসে আমাকে সহানুভূতির নামে করুণা প্রদর্শন করুক।
নিঃসঙ্গ জীবনের দুঃখবোধটা যতদূর সম্ভব অলক্ষ্যেই রাখতে চেষ্টা করেছেন। শ্রীদ্বারিক মিত্রের ভাষায়,-কোলকাতায় মুজতবা আলীর শেষ দিনগুলো ছিলো দুর্বিষহ- অবর্ণনীয়্! প্রথমতঃ আর্থিক অস্বাচ্ছন্দ্য,তদুপরি অনাচারের পঙ্কিল আবর্তে তখন তিনি আকণ্ঠ নিমজ্জিত। শেষ বয়সে আলী সাহেব পূর্ব বঙ্গেই স্থায়ীভাবে বসবাস করার ইচ্ছে অন্ততঃ একসময় পোষন করতেন। -ভেবেছিলেন বাড়ী করবেন, জমি থাকবে,ধান ফলবে,মুরগী পুষবেন - ইত্যাদি ।
সৈয়দ মুজতবা আলীকে সবশেষ দর্শনের বর্ণনায় শ্রীযুক্ত গৌরকিশোর ঘোষ লিখেছেন ,... গত বছরেই (১৯৭৩ এ )শেষ সাক্ষাৎ। কোথায় সেই উজ্জল কান্তি। অবসন্ন পণ্ডর চেহারাটাকে একটা নকসী কাঁথায় ঢেকে রেখেছিলেন;
নকশী কথার মালা গেথে বরাবরই যেমন ঢেকে রাখতেন আপন স্বরূপ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি বলি কি; মৃত্যুতো কোন না কোনভাবে আসবেই। দুর্ঘটনা, রোগে শোকে, উসৃঙ্খল জীবনাচরণে বা অন্যকোনভাবে। হয়তো তিনি আর দশ/বিশ বছর আগে কোন দুর্ঘটনায় প্রান হারাতে পারতেন। বাংলা সাহিত্য যেটুকু তাঁর কাছ থেকে পেয়েছে তাই-ই এখনো আমরা হজম করে উঠতে পারিনি। এটা ঠিক তাঁর আরো অনেক অনেক কিছু দেবার ক্ষমতা ছিল তবে তিনি এও বলেছিলেন;
~ আমি মা গঙ্গায় কোমর অব্দি ডুবিয়ে তাবা-তুলসী স্পর্শ করে, মাতায় কোরান শরীফ রেখে,যজ্ঞোপবীত উত্তোলন করে তথা ক্রুশিচহ্ন ভক্তিসহ স্পর্শ করে বলছি, বৌদ্ধদের ত্রি-শরণের দ্বিতীয় শরণ স্মরণ করে’ ধর্মং শরণং গচ্ছামি’ ধর্ম জানেন আমি ক-কখনো কস্মিনকালেও সজ্ঞানে অজ্ঞানে সাহিত্যিক হতে চাইনি।
সত্যিই তিনি যদি আদৌ লেখালেখি না-ই করতেন তাহলে? তাহলে মদ ও মদ্যপান নিয়ে লেখা তাঁর এই সরস প্রবন্ধটা বাংলা সাহিত্য ভীষণ মিস করত; ভাগ্যিস আমার গুরু শুঁড়ি বাড়ি যেতেন-

হুশিয়ার আমরা মফস্বলের লোক। কলকাতা শহরে কি হয়,না হয় আমাদের পক্ষে খবর রাখা সম্ভবপর নয়। বয়েসও হয়েছে , ছেলেছোকরাদের মতিগতি, কাম -কারবারের সঠিক খবরও কানে এসে পৌছোয় না। মাস কয়েক পুর্বে পূর্ব-পাকিস্তানে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানকার এক কাগজে পড়লম ইউনেস্কো নাকি কিছুদিন পবে পৃথিবীর বড় বড় শহরে মদ্যপান কোন বহরে বাড়ছে , তার একটা জরিপ নেন এবং ফলে একটি মারাত্মক তত্ত্ব আবিষ্কৃত হয়েছে ; সেটি এই পৃথিবীর বড় বড় শহরের যে কটাতে মদ্যপান ভয়ঙ্কররপে (ইন,এ্যান এলার্মিং ডিগ্রী )বেড়ে যাচ্ছে ,কলকাতা তার মধ্যে প্রধান স্থান ধরেন। বাঙালী সব দিক দিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে , কিন্তু অন্তত একটা দিকে এগিয়ে যাচ্ছে শুন as we stand আমার উল্লাস বোধ করা উচিত ছিল,কিন্তু বহু চেষ্টা করেও পারলাম না ।
ঢাকার এক আমওলাকে যখন বলেছিলাম যে তার আম বড় ‘ছেডো’।
তখন সে একগাল হেসে দেমাক করে বলেছিল ,কিন্তু ,কত্তা ,আডি গলাইন,বরো আছে !'
সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে যাবার ‘আম ছোট ,আর মদ্যপানের 'আডিডা 'বড়ো এ - চিন্তাটা রসাল নয় কোন অর্থেই !

ফেরার মুখে কলকাতাতে ডেকে পাঠালুম দ্বিজেনকে। কলেজের ছোকরা - অর্থাৎ কলেজ যাওয়ার নাম করে কফি হৌস যায়,বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ ;শুনেছি এদের মাথায় পেরেক পুঁতলে ‘ই’ হয়ে বেরোয়- মগজে এ্যাসন প্যাঁচ! তদুপরি আমার শাগরেদ!
তাকে আমার অধুনাল মাদকীয় জ্ঞানটুকু জানিয়ে বললাম,'আমি তো জানতুম ,ইন্ডিয়া শনৈঃ শনৈঃ ড্রাই হয়ে যাচ্ছে- এ আবার কি নতুন কথা শুনি? গুরুকে জ্ঞানদান করতে পারলে শিষ্য মাত্রই পুলকানভব করে - কাবেল, নাবালক যাই হোক না কেন।
ক্ষণতরেও চিন্তা না করে বললে, মদ্যপান কলকাতাতে কারা বাড়াচ্ছে। জানি নে ,তবে একটা কথা ঠিক ঠিক বলতে পারি ,কলেজের ছোকরাদের ভিতর ও জিনিসটা ভয়ঙ্কর বেড়ে যাচ্ছে; সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। 'ভয়ঙ্কর,ভীষণ,দারুন কথাগুলো আমরা না ভেবেই বলে থাকি,কিন্তু ইউনেস্কো যখন-এলার্মিং 'নশব্দটি ব্যবহার করেছেন,তখন সঠিক ‘ভয়ঙ্করই’ বলতে চেয়েছেন। দ্বিজেন সেটা কনফার্ম করলে।
(কলেজের ছোকরারা আমার উপর সদয় থাকুন ;এটা আমার মত নয়,দ্বিজেনের।) সে বললে,এবারে যে মধুপরে আপনার সঙ্গে দেখা করতে পারি নি,তার কারণ আমি আদপেই মধুপুর যাই নি। যখন শুনলুম,ইয়াররা যাচ্ছেন বিয়ার পার্টি করতে সেখানে। ওদের চাপ ঠেকানো আমার পক্ষে অসম্ভব হত। এদিকে মায়ের পা ছুঁয়ে কিরে কেটেছি। মদ খাব না।
শ্রাদ্ধ তাহলে অনেকখানি গড়িয়েছে। সে সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে দেখি,মেলাই কলেজের ছেলেমেয়ে এসেছে।

মার ভাতিজীর ইয়ারী -বক্সিনী,বন্ধুবান্ধব। মাঝে - মধ্যে ওদের সঙ্গে বসলে ওরা খুশীই হয়। ইচ্ছে করেই ফুর্তি-ফার্তির দিকে কথার নল চালালাম। চোর ধরা পড়লো। অর্থাৎ মদ্যপানের কথা উঠল। সেদিন আমার বিস্তর জ্ঞান সঞ্চয় হয়েছিল। একের অজ্ঞতা যে অন্যের জ্ঞান সঞ্চয়ের হেতু হতে পারে ,সে -কথা এতদিন জানতুম না।
এক গুণী -হঠাৎ বলে উঠলো,বিয়ারে আবার নেশা হয় !আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম,-বলিস কি রে? ইয়োরোপের শতকরা ৮৫ জন লোক যখন নেশা করতে চায়,তখন তো বিয়ারই খায়। ওয়াইন খায় কটা লোক?
সে বাঁধা দিয়ে বললে ,-বিয়ারও তো ওয়াইন!!!!!

আমি আরো আশ্চর্য হয়ে বললাম ,-তওবা,তওবা !শুনলে গুনাহ হয়। ওয়াইনে কত পার্সেন্টেজ এলকহল ,আর বিয়ারে কত পার্সেন্ট , আর স্পিরিটে ?
-বাই উয়েইট অথবা ভলুম – দিশীটা,মানে ভদকার খুড়তুতো ভাই? তার হিসেব আন্ডার প্রুফ,অভার প্রুফ লিক্যোর
- মানে লিকার?
আমি প্রায় বাক্যহারা! লিক্যোর তো আবিষ্কার করেছে প্রধানতঃ ক্যাথলিক সাধু সন্ন্যাসীরা (মঙ্ক)। বেনিড্কটিন-
-সাধুসন্তরা আবিষ্কার করলেন,মদ !
পূর্বেই বলেছি ,সেদিন আমার বিস্তর জ্ঞানার্জন হয়েছিল। ওদের অজ্ঞতা থেকর। তারো পুর্বে বলা উচিত ছিল যে আমি মদ্যপানবিরোধী । তবে সরকার যে পদ্ধতিতে এগোচ্ছেন ,তার সঙ্গে আমার মতের মিল হয় না।
সে কথা আরেকদিন হবে। ঔষধার্থে ডাক্তাররা কখনো কখনো মদ দিয়ে থাকেন। ব্র্যান্ডির চেয়েও শ্যাম্পেন গিলিয়ে দিলে ভিরমি কাটে তাড়াতাড়ি । কিন্তু ব্র্যান্ডির চেয়ে শ্যাম্পেন খরচ বেশী পড়ে বলে কন্টিনেন্টের ভালো ভা্লো নার্সিংহোম ছাড়া অন্য কোথাও বড় একটা ব্যবহার করা হয় না । কৃত্রিম ক্ষুধা উদ্রেকের জন্যও শেরি বা পোর্ট ব্যবহৃত হয়। এ সব ব্যাপার সম্বন্ধে আমার হাঁ,না,কিছু বলার নেই।
তবে শীতের দেশে ব্র্যান্ডি না খেয়ে গুড়ের সঙ্গে কালো কফি খেলেও শরীর গরম হয় এবং প্রতিক্রিয়াও কম।
বহু ধর্মপ্রাণ হিন্দু এবং মুসলমান, কবরেজ –হেকিমের আদেশ সত্ত্বেও সুরাপান করেন নি, ভয়ঙ্কর একটা - কিছু ক্ষতি হতেও শুনি নি। মোদ্দা কথায় ফেরা যাক । বিয়ারে নেশা হয় না ,এর মত মারাত্মক ভুল আর কিছুই নেই। পুর্বেই বলেছি ,ইয়োরোপে শতকরা ৮৫ জন ল লোক বিয়ার খেয়েই নেশা করে ,মাতলামো করে। -
‘ওয়াইন’ বলতে যদিও সাধারণত মাদক বোঝায় ,তবে ,এর আসল অর্থ অঙুর পচিয়ে যে সুরা প্রস্তুত হয়,তারই নাম ওয়াইন। দ্রাক্ষাসব - এর শব্দের অনুবাদ (অবশ্য বাজারে যে - সব তথাকথিত দ্রাক্ষাসব আছে ,তার ভিতর কি বস্তু আছে আমার জানা নেই )। বিয়ারে ৪ থেকে ৬ পারসেন্ট এলকহল থাকে-বাদবাকি প্রায় সবটাই জল। নেশা হয় এই এলকহলেই। ওয়াইনের পার্সেন্টেজ দশ থেকে পনেরো। তবে ,বিয়ার খেয়েই নেশা করে বেশী লোক। ওয়াইন খান গুণীরা এবং ওয়াইন মানুষকে চিন্তাশীল ও অপেক্ষা কৃত বিমর্ষ করে তোলে।
পৃথিবীতে সব চেয়ে ভালো ওয়াইন হয় ফ্রান্সে । বোর্দো ( Bordeaux )অঞ্চলে তৈরী হাল্কা লাল রঙের এই ওয়াইনকে ইংরিজীতে বলা হয় ক্ল্যারেট। তাছাড়া আছে বার্গেণ্ডি এবং শ্যাম্পেন অঞ্চলের বিখ্যাত ওয়াইন । এসব ওয়াইন আঙুর পচিয়ে ফার্মেন্ট করার সময় যদি কার্বন ডায়োকসাইড বেরিয়ে না যেতে দেওয়া হয় ,তবে সেটাকে ‘সফেন ‘ওয়াইন (এফারভেসেণ্ট )বলা হয়। বোদো বাগেণ্ডি বুজবুজ করে না ,শ্যাম্পেন করে। শ্যাম্পেন খোলা মাত্রই তাই তার কক লাফ দিয়ে ছাতে ওঠে এবং তার বুদ্বুদ পেটের ইনটেসটিনাল ওয়ালে খোঁচা মারে বলে নেশা হয় তাড়াতাড়ি (ভিরমি কাটে তড়িঘড়ি )এবং স্টিল (অর্থাৎ -ফেনাহীন ' ) ওয়াইনের মত কিছুটা বিমর্ষ - বিমর্ষ সে তো করেই না উল্টে চিত্তাকাশে উড়ুক্কু– উড়ুক্কু ,ভাবটা হয় তাড়াতাড়ি ।

জার্মানীর বিখ্যাত ওয়াইন রাইন (ইংরিজীতে ‘হক’ )ও মোজেল। রাইন ওয়াইনের শ্যাম্পেনও হয়,তবে তাকে বলা হয় জেকট।
শ্যামেগনের(সামাগন-রুশীয়) তুলনায় জেকট নিকৃষ্ট। অথচ এই জেকট ফ্রান্সে বেঁচে হের ফন ‘রিবেনট্রপ’ প্রচুর পয়সা কামান।
হিটলার নিজে মদ খেতেন না,কিন্তু যখন শুনলেন রিবেনট্রপ শ্যাম্পেনের দেশে ওঁচা জেকট বিক্রি করতে পেরেছেন,তখন বিমোহিত হয়ে বললেন,যে ব্যক্তি জেকটের মত রদ্দি মাল ফ্রান্সে বেচতে পারে সে পয়লা নম্বরী সেলসম্যান। একে আমার চাই-এ আমার আইডিয়াজি ইংলণ্ডে বেঁচতে পারবে।
সবাই জানেন ,ইনি পরে হিটলারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হয়েছিলেন ও সর্বশেষে ন্যুরনবেগে ফাঁসীকাঠে ঝুঁলেছিলেন।
হাঙ্গেরির বিখ্যাত ওয়াইন ‘টকাই’ ও ইতালির ‘কিয়ান্তি’।
কাশ্মীরের আঙুর দিয়ে ভালো ওয়াইন হওয়ার কথা। তাই তৈরী করে চীন , জাপান,অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকায় চালান দেওয়ার আমি পক্ষপাতী। অবশ্য ওরা যদি কখনো ড্রাই হতে চায় ,তবে অন্য কথা । আপেল ফার্মেন্ট করে হয় সাইভার ,মধু ফার্মেন্ট করে হয় মীড (সংস্কৃত মধু- থেকেউ ‘মধ্বী’,গ্রীকে মেথু-মানে মদ,জর্মনে মেট - সব শব্দই সংস্কৃত মধু থেকে)
আমের রস ফার্মেন্ট করে খেতেন বিখ্যাত কবি গালিব।
আনারস ও কালোজাম পঁচিয়েও নাকি ভালো ওয়াইন হয়।


সাঁওতাল ,আদিবাসী ও বিস্তর পার্বত্য জাতি ভাত পচিয়ে বিয়ার বানিয়ে খায়;কিন্তু ফার্মেন্ট করার ভালো কায়দা জানে না বলে তিন সাড়ে তিনের(পার্সেন্ট) চেয়ে বেশী এলকহল -পচাইয়ে তুলতে পারে না। এদের সরল আত্মার সর্বনাশ করেছে ইংরেজ -চোলাই (ডেসটিলড ) ধান্যেশ্বরী কালী মার্কা এদের মধ্যে চালু করে। এই ‘ধানন্যবরী’ একেবারে সম্পূর্ণ বন্ধ না করা পর্যন্ত এদের উদ্ধার নেই।
জাপানীদের ‘মাকে’ মদ ভাতেরই পচাই , চীনাদের পচাই-চু’-য়ে কিঞ্চিৎ ভুট্টা মেশানো।
ভারতবর্ষের তাড়ি (ফার্মেন্টেজ খেজুর কিংবা তালের রস )বস্তুটিকে ওয়াইন পর্যায়ে ফেলা যেতে পারে। পৃথিবীর তাবৎ মাদক দ্রব্যের ভিতর এই বস্তুটিই অনিষ্ট করে সব চেয়ে কম।
একমাত্র এই জিনিসটাই সম্পূর্ণ বন্ধ করা উচিত কি না সে বিষয়ে আমার মনে কিঞ্চিৎ সন্দেহ আছে । তবে খাঁটি তাড়ি সচরাচর পাওয়া যায় না ; লোভী শুঁড়িরা তাড়ির সঙ্গে দিশী চোলাই মদ (ধ্যানেশ্বরী )মিশিয়ে তার এলকহল বাড়িয়ে বিক্রি করে।
মাতালরাও সচরাচর নির্বোধ হয়।
এতক্ষণ পচাই অর্থাৎ ফার্মেন্টেড বস্তু সম্বন্ধে বর্ণনা হচ্ছিল। এবারে ডেসটিলড বা চোলাই। চোলাই বস্তুর নাম স্পিরিটস-যদিও শব্দটি সর্বপ্রকার মাদক দ্রব্যের জন্যও ব্যবহার হয়।
আঙুর পচিয়ে ওয়াইন বানিয়ে সেটাকে বক যন্ত্র দিয়ে চোলাই করলে হয় ব্র্যান্ডি অর্থাৎ ব্র্যাণ্ড করা বা পোড়ানো হয়েছে। একমাত্র ফরাসী দেশের ব্র্যান্ডিকেই (তাও সব ব্র্যান্ডি নয় )বলা হয় কন্যাক (Cognac রুশ ‘কনিয়াক’)।
মল্ট বার্লিকে পঁচিয়ে হয় বিয়ার ;সেটাকে চোলাই করলে হয় হইস্কি । তাড়ি চোলাই করলে হয় এরেক (শব্দটা আসলে ‘আরক’ কিন্তু আরক অন্য অর্থেও ব্যবহৃত হয় বলেই এস্থলে এরেক প্রয়োগ করা হল)। সেটাকে দুবার চোলাই করে খেতেন বদ্ধ মাতাল বাদশা জাহাঙ্গীর। এরেকে ষাট পার্সেন্ট এলকহল হয় -ডবল ডেসটিল করলে আশী পর্যন্ত ওঠার কথা। সেইটে খেতেন নির্জলা !
আখের রস ফার্মেন্ট করার পর চোলাই করলে হয় –রাম’। সংস্কৃতে –‘গৌড়ী’ গুড় থেকে হয় বলে। জামেকার রাম বিশ্ববিখ্যাতি । কিন্তু ভারতীয় রাম,যদি সযত্নে তৈরী করে চালান দেওয়া হয় ,তবে জামেকাকে ঘায়েল করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব নয়।
রামে এত লাভ যে তারই ফলে চিনির কারবারীরা চিনি সস্তা দরে দিতে পারে। জাভার চিনি একদা এই কারণেই সস্তা ছিল।
জিন তৈরি হয় শস্য দিয়ে এবং পরে জেনিপার জামের সঙ্গে মেশানো হয়। খুশবাইটা ঐ জেনিপার থেকে আসে। এসব চোলাই করা স্পিরিটসে ৩৫ থেকে আরম্ভ করে ৮০ ভাগ এলকহল থাকে। হইস্কি ব্যাণ্ডির চেয়ে রামে এলকহল বেশী ,তার চেয়ে বেশী ডবল - চোলাই এরেকে এবং সব চেয়ে বেশী আবস্যাঁতে !তাই ওটাকে -সবুজ শয়তান’ বলা হয়। শুনেছি ,ও জিনিস বছর তিনেক নিয়মিত ভাবে খেলে মানুষ হয় পাগল হয়ে যায় ,না হয় আত্মহত্যা করে কিংবা ডেলিরিয়াম ট্রেমেনসে মারা যায়। ইয়োরোপের একাধিক দেশে এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। সচরাচর মানুষ এসব স্পিরিটস নির্জলা খায় না। হইস্কিতে যে পরিমাণ সোডা বা জল মেশানো হয় তাতে করে তার এলকহল ডাইলুটেড হয়ে শক্তি কমে যায়। ফলে এক গেলাস হইস্কি – সোডাতে যতখানি নেশা হয় ,দু’গেলাস বিয়ারে তাই হয় । অবশ্য নির্জলা হইস্কি যতখানি খেয়ে স্বাস্থ্যের সর্বনাশ করা যায়, বিয়ারে প্রচুর জল আছে বলে ততখানি পেটে ধরে না বলে খাওয়া যায় না। তবে অবশ্য কেউ যদি অতি ধীরে ধীরে হইস্কি খায় এবং অন্যজন সাততাড়াতাড়ি বিয়ার খায় তবে দ্বিতীয় জনেরই নেশা হবে আগে।
অতএব বিয়ারে নেশা হয় না ,এ বড় মারাত্মক ভুল ধারণা ভুবনবিখ্যাত ম্যুণিক বিয়ারে তো আছে কুল্লে তিন,সাড়ে তিন পারসেন্ট এলকহল। যারা রাস্তায় মাতলামো করে ,তারা তো ঐ খেয়েই করে।
এদেশে আরেকটা বিপদ আছে। আর সহজে পাওয়া যায় না বলে এদেশের অনেক ব্রাণ্ডিতেই আছে ডাইলুটেড এলকহল এবং তার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে ব্র্যান্ডির সিনথেটিক সেন্ট অর্থাৎ আঙুরের রস এতে নেই। অনেক সরল লোক -সর্দি সারাবার জন্যে , কিংবা দুর্বল রোগীর ক্ষুধা বাড়াবার জন্য এই ব্র্যান্ডি খাইয়ে রোগীর ইষ্টের পরিবর্তে অনিষ্ট ডেকে আনেন। এ - বিষয়ে সকলেরই সাবধান হওয়া উচিত - বিশেষ করে যে সব লোক নিজে নিজের বা আত্মীয়স্বজনের ডাক্তারী করেন ।
ফ্রান্সে অত্যধিক মদ্যপান এমনি সমস্যাতে এসে দাঁড়িয়েছে যে ,তার একটা প্রতিবিধান করা বড়ই প্রয়োজন হয়ে উঠেছে । কিন্তু কেউই সাহস করে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারছেন । প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাঁদেজফ্রাঁস চেষ্টা করেছিলেন ; অনেকে বলেন প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান তিনি প্রধানত এবং গুহ্যত এই কারণে । আমেরিকা ও নরওয়েও চেষ্টা করেছিল সফল হয় নি। আবসাঁতের শোচনীয় পরিণাম সম্বন্ধে একটি ফরাসী গল্পের অনুবাদ করেছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর , নাম ‘সবুজ শয়তান’। বসুমতী গ্রন্থাবলী।
রাজা যদিও আইনের বাইরে তবু নরওয়ের রাজা একদিন দুঃখ করে বলেছিলেন’
'দেখা যাচ্ছে , মদ না -খাওয়ার আইন একমাত্র আমিই মানি,আর সবাই তো শুনি বে -আইনী খেয়ে যাচ্ছে। '

বৈদিক,বৌদ্ধ ও গুপ্ত যুগে মাদকদ্রব্য সেবন করা হত ও জুয়াখেলার রেওয়াজ ছিল।
আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস শঙ্করাচার্য যে নব হিন্দু ধর্ম প্রচার করলেন সেই সময় থেকেই জনসাধারণে মদ্যপনি ও জুয়াখেলা প্রায় বন্ধ হয়ে যায় (অবশ্য মুনি -ঋষিরা মাদক দ্রব্য ও ব্যসন বারণ করেছিলেন খন্টের পরেই )এবং পাঠান -মোগল যুগে রাজারাজড়া ও উজীর -বাদশারাই প্রধানত মাদক দ্রব্য সেবন করেছেন।
চরমে চরম মিশে বলেই বোধ হয় অনুন্নত সম্প্রদায় ও আদিবাসীরাও খেয়েছে। ভারতবর্ষ কোন অবিশ্বাস্য অলৌকিক পদ্ধতিতে এদেশে একদা মদ জুয়া প্রায় নির্মল করতে সক্ষম হয়েছিল সেটা আমি আবিষ্কার করতে পারি নি। পারলে আজ কাজে লাগানো যেত । ইংরেজ আমলে মদ্যপানের কিছুটা প্রচার হয় - মাইকেল ও শিশির ভাদুড়ী নীলকণ্ঠ হতে পারলে ভালো হত।
ঐ সময় ব্রাহ্মসমাজ ,বিবেকানন্দ ,অরবিন্দ ,রবীন্দ্রনাথ,গাঁধী যে জীবন ও আদর্শ সামনে ধরেন তার ফলে মদ্যপান প্রসার লাভ করতে পারে নি।
ইতিমধ্যে কলকারখানা হওয়ার দরুন চা -বাগানে জুট মিলে মদ ভয়ঙ্কর মতিতে দেখা দিল। মাঝিমাল্লারা অর্থাৎ সেলাররা মাতলামোর জন্য বিখ্যাত কিন্তু আশ্চর্য,ভারতীয় ও পাকিস্তানী খালাসীরা মদ খায় না। আমাদের সৈন্যবাহিনীতে যেটুকু মদ্যপান হয় তাও তুচ্ছ। কলকাতার শিখেদের দেখে কেউ যেন না ভাবেন যে,দিল্লী -অমৃতসরের সভ্রান্ত শিখরা মদ খান। ধর্মপ্রাণ শিখ মদ্যপানকে মুসলমানের চেয়েও বেশী ঘৃণা করেন ও বলেন, ইংরেজ শিখকে পল্টনে ঢুকিয়ে মদ খেতে শেখায়।
হিন্দু ,বৌদ্ধ ,জৈন ধর্ম ও ইসলামে মদ্যপান নিন্দিত - ইহুদী খৃষ্টান ও জরথুশ্রী ধর্মে পরিমিত মদ্যপানকে বরদাস্ত করা হয়েছে। এবং ঐ সব ধর্মের বহ ,প্রগতিশীল গুণী -জ্ঞানীরা অধুনা মদ্যপান বিরোধী। মদ্যপান এখনো এদেশে ভয়ঙ্কর রুপে দেখা দেয় নি ,কিন্তু আগের থেকে সাবধান হওয়া ভালো।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
~কেন এত মদ খান আপনি কোন এক শুভানুধ্যায়ীর এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন এই বাগ্মী রসিক পণ্ডিত;
আমার মনটা ভুতের মত । তাকে সর্বক্ষণ কাজ না দিলে সে আমার ঘাড় মটকাতে চায়। তখন তাকে মদ খাইয়ে মাতাল করে দিই।

তবুও শিল্প-সাহিত্যের সঙ্গে পানীয়ের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ অবশ্যম্ভাবী’এই ভণ্ডামিকে তিনি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
মদ্যপান করলে ভাল লেখা বেরয় এ কথা আমি বিশ্বাস করিনে।
মেঘনাদ কাব্য রচনার সময় মাইকেল ক্লান্তি দুর করার জন্য অল্প খেতেন, শেষের দিকে যখন মাত্রা বেড়ে গেল, তখন দু-চারপাতা লেখার পরেই বেএক্তেয়ার হয়ে ঢলে পড়তেন-তার গ্রন্থাবলী সেইসব অসমাপ্ত লেখায় ভর্তি। এবং এর চেয়েও বড় কথা আমি মাইকেল নই। একখানা মেঘনাদ লিখুন; তারপর না হয় মদ খেয়ে লিভার পচান কেউ আপত্তি করবেনা।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
(লেখায় কিছু কাট ছাঁট, শব্দাবলী সংযোজন বিয়োজন করা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত যে কোন ভুল ভ্রান্তির জন্য সব দায়ভার লেখকের।)

#স্যার সৈয়দ মুজতবা আলীকে নিয়ে কোন প্রসংগ আসলেই আমার সর্বপ্রথম যার কথা মনে আসে- তিনি একসময়ের জনপ্রিয় ব্লগার সুপ্রিয় রেজোওয়ানা’র কথা। তাঁর সাথে আমার কলম বন্ধুত্বের শুরু মুজতবা আলীর সুত্র ধরে। আমরা দু’জনই ছিলাম তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত। বেশ কিছুদিন দু’জনের মধ্যে মেইল-ম্যাসেজ চালাচালি হয়েছিল যার মুল এবং একমাত্র বিষয়বস্তু ছিল সৈয়দ সাহেব। ~একদিন উনিও হারিয়ে গেলেন, আমিও ভুলে গেলাম। বহুদিন আগে তাকে খুঁজতে গিয়ে দেখি -১৭ ই জুন, ২০১৪এর পরে তার ব্লগ বাড়ি থেকে তিনি উধাও!! তিনি এক্কেবারে হারিয়ে গেলেন। এই লেখাটা তাঁকে উতসর্গ করছি; তিনি যেখানেই থাকেন যেন ভাল থাকেন সুস্থ্য থাকেন।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যদ্যপি আমার গুরু - নামে শ্রদ্ধেয় আহমেদ ছফার একটা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ আছে- সেটার দ্বারা অনুপ্রাণিত নয়।

লেখা সুত্রঃ
সৈয়দ মুজতবা আলীঃ জীবন কথা- স্যার নুরুর রহমান খান
সৈয়দ মুজতবা আলীর 'রচনাবলী'।
আমাদের দুজনের কথা এবং অন্যান্য- গৌরী আইয়ুব
ভবঘুরে ও অন্যান্য সহ বিভিন্ন সুত্র

মন্তব্য ৫৮ টি রেটিং +১১/-০

মন্তব্য (৫৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৪৭

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: আপনার লেখার শুরুতে আমি মনে করেছিলাম সেই সময়কার সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে পাসপোর্ট তৈরির বিড়ম্বনার উপর সৈয়দ আলীর একটি লেখা নিয়ে আপনি বোধ হয় পোস্টাইতে যাচ্ছেন। কিন্তু আমার ধারণা ভুল করে আপনি আপনার ঐতিহ্য বজায় রাখলেন ! রুশ থেকে স্থান, কাল ও পাত্র পরিবর্তন করে এখন উপমহাদেশের দারু ও তার সমজদারদের নিয়েই আপনি কি দারুন এক পোস্ট করলেন ভ্রাতা !

সৈয়দ সাহেব আমার খুব প্রিয় লেখক। টিউশনি করে আমি তার রচনাসমগ্র কিনে ফেলেছিলাম - সবুজ মলাটে বাধা বইগুলোর কথা এখনো মনে পড়ে। আর শবনম পড়ে তো আমি সেই বয়সে পুরো কুপোকাত হয়ে পড়েছিলাম।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:০২

শেরজা তপন বলেছেন: এই এতক্ষনে বেশ ফ্রি হলাম! মন্তব্যের উত্তর দিতে দেরি হবার জন্য দুঃখিত
আপনার কথিত 'ঘোষ এন্ড মিত্র' প্রকাশনীর সেই সবুজ মলাটের বইগুলো এখনো আমার সামনে আছে। নিউ মার্কেট থেকে কিনেছিলাম! তখন এতগুলো টাকা বেরিয়ে গেল দেখে বেশ কষ্ট হলেও- বই পড়ে কষ্ট দূর হয়েছিল। আমার আরেকটু গুছিয়ে আরো কিছু তথ্য যোগ করে লেখার ইচ্ছে ছিল- তবে করোনাকালীন ছুটির সময়ে হলে সেটা সম্ভব ছিল।
শবনমের শেষ দিকে কেমন গুলিয়ে ফেলেছিলাম। তবে প্রথম অর্ধেক মারাত্মক ছিল -শবনমকে নিয়ে কত সপ্ন দেখেছি :) প্রথম মন্তব্য ও দারুন এই মনকাড়া মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও ভালবাসা।

২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:০৫

জুল ভার্ন বলেছেন: চমতকার লেখা!!!

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৫১

শেরজা তপন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আপনাকে পেয়ে অভিভুত হলাম।
ভাল থাকুন নিরন্তর।

৩| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩৭

জাতিস্মরের জীবনপঞ্জী বলেছেন: বাংলাদেশে আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখকের সম্পর্কে কিছু তথ্য শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। সৈয়দ মুজতবা আলীকে আমি আমার গুরু মানি।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৫৩

শেরজা তপন বলেছেন: আপনি সম্ভবত এই প্রথমবার আমার ব্লগে আসলেন- আমার ব্লগবাড়িতে স্বাগতম।
আমিও তাকে গুরু মানি। এখনো ছাপার অক্ষরে বই পড়লে তারটাই পড়া হয় বেশী সময় ধরে- বার বার বহুবার, আঁশ মেটেনা।
ভাল থাকুন নিরন্তর। সামুর সাথে থাকুন।

৪| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩৯

কামাল১৮ বলেছেন: পড়লাম(মিছা কথা)এবং অনেক কিছু জানলাম(সত্যি কথা)এখান থেকে ওখান থেকে পড়ে পড়ে বেশ কিছু জানলাম।লেখাটির প্রতি আকর্ষণ আছে ,এমনি এমনি এক সময় সবটাই পড়া হয়ে যাবে।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৫৬

শেরজা তপন বলেছেন: কোন সময়ে পুরো লেখাটা পড়ে শেষ করার আগ্রহ প্রকাশ যে করেছেন তাতেই আমি তৃপ্ত ও আনন্দিত!

আলী সাহেব এমন একজন লেখক যার লেখায় ডুবে গেলে আর নিস্তার নেই!
বরাবর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ভাই। আপনি একেবারে হাত গুটিয়ে বসে থাকেন- কিছু লিখুন...

৫| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৪২

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: রম্য রচনা এবং ভ্রমণ কাহিনীর ওস্তাদ সৈয়দ মুজতবা আলী সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানলাম। আমাদের স্কুলের বইয়ে ওনার 'রসগোল্লা' নামে একটা গল্প ছিল। পরিশ্রমী লেখার জন্য ধন্যবাদ।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৫৮

শেরজা তপন বলেছেন: এত ছোট্ট মন্তব্যেতো আঁশ মিটলনা ভ্রাতা!! আজকে কি লেখার মুড নেই- অতি সংক্ষেপে সারলেন যে?
আপনার মন্তব্য আমাকে ইদানিং বেশ অনুপ্রাণিত করে। ভাল থাকুন সব সময়

৬| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:০০

জুন বলেছেন: দুবার পড়তে হলো রসাস্বাদনের জন্য শেরজা । মধুসুদন দত্ত প্রচন্ড সুরা রসিক ছিলেন এটা জানতাম কিন্ত আমাদের প্রিয় লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীও যে এ পথের পথিক ছিলেন তা জানা ছিল না । মানে এই মদই তাকে শেষ করেছিল এটা জানতাম না । আসলে তখন বৃটিশদের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে অর্থাৎ বৃটিশ হতে গিয়ে কলকাতার কলেজের অনেক ছাত্ররাই মদ পানকে আভিযাত্যের লক্ষন বলে মনে করতো। আর বাবা মায়ের পাঠানো টাকায় হোস্টেলে মদের আসর বসাতো। বড় উদাহরন মাইকেল মদুসুদন দত্ত ।
আপনার লেখায় প্রমথ নাথ বিশীর কথা উল্লেখ করেছেন , উনি আমার অত্যন্ত প্রিয় লেখক। তাঁর লেখা বিখ্যাত উপন্যাস কেরী সাহেবের মুন্সী আমি শতাধিক বার পড়েছি। তিনি যে মদ্যপায়ী ছিলেন না জেনে ভালোলাগলো ।
সবশেষে ওমর খৈয়ামের একটি রুবাই দিয়ে শেষ করি আমার মন্তব্য তপন:)
দ্রাক্ষা মধু নয় কি বধু সৃষ্টি বিধাতার
নিন্দা করে আংগুর রসের স্পর্ধা এত কার !
কে বলে এ পাপের ফাদ ?
এ যে বিধির আশীর্বাদ
পাত্র ভরে সমাদরে নিত্য করো পান
হয় যদি এ অভিশাপই ---
সেও তো তারই দান ।

+

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:২৮

শেরজা তপন বলেছেন: ওমর খৈয়ামের রুবাঈয়াতের প্রতিটা শব্দই মনে গেথে যায়- অনুবাদ কার?

শ্রদ্ধেয় প্রমথ নাথ বিশীর একটা কথা আমার খুব মনে ধরেছিল;
ডাক্তার যখন ঈশ্বরের নাম নেয় আর সিংহে যখন ঘাস খায়- তখন বুঝতে হবে সর্বনাশ হবার বেশী বাকি নেই!!! :)
কেরী মুন্সী আমার পড়া হয়নি- রেফারেন্স পেলাম পড়বখন।

* এখন খানিকটা ব্যাস্ত - পরে সময় নিয়ে বাকি মন্তব্যের উত্তর দিব

৭| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:০১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আসলে অফিসে তো, বেশী কিছু লিখতে পারলাম না। আমি রাতে একটা বড় মন্তব্য করবো ইনশাল্লাহ। অনেক কিছু লেখার আছে। আপনার কথায় অনুপ্রেরণা পেলাম। কারণ অনেকে আবার বড় মন্তব্যের সমালোচনা করে।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:২৪

শেরজা তপন বলেছেন: আমাকে কি সেরকম মনে হয়? নিজের যা ভাল মনে হয় তাই করবেন।
অন্যের সমালোচনায় গুল্লি মারেন।

ভাল লাগল ফের আপনাকে পেয়ে- অপেক্ষায় রইলাম...

৮| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:১৪

রোকসানা লেইস বলেছেন: সৈয়দ সাহেবের মতন এমন রসিক সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যে আর নাই। আর এমন পাণ্ডিত্য তাঁর।
যখন তাকে পড়তে শুরু করেছিলাম তখন বোঝার বয়সটা এত কম ছিল অনেক কিছুই ভালো বুঝতে পারতাম না তারপরও কি এক আগ্রহে তার লেখার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ছিলাম।
গুণিজনরা অন্য রকম কিছু করতে চান। তিনিও নিজেকে ডুবিয়ে দিলেন সুরার রসে। সত্যি তা না করলে হয়ত আরো অনেক লেখা পাওয়া যেত কিন্তু এই অদ্ভুত আচরণের মানুষটাকে চেনার সুযোগ হতো না।
মির্জা গালীব বলেছিলেন,
'শরাব পিনে দে
মসজিদ মে ব্যায়ঠ কার,
ইয়া ও জাগা বাতা
যাঁহা খুদা নেহি।'
শরাব খাওয়ার নেশায় কাতর হওয়া মানুষগুলো কিন্তু নিজের ধারনা খুব সুন্দর ভাবে বর্ণনা করে গেছেন।
ভালোলাগল উপস্থাপনা। অনেকগুলো বই থেকে কোড করেছেন বেছে বেছে। বেশ গবেষনায় একসাথে জড়ো করে লেখা।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:২৪

শেরজা তপন বলেছেন: মীর্জা গালিবের এঈ শের-টা নিয়ে আমার একটা লেখা আছে- নাসরেদ্দিন হোদজা আর মীর্জা গালিবের ফিউশান লেখায়।
মুজতবা আলী বহুবার মদ ছাড়তে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি, প্রমথনাথ বিশীর সাথে আলোচনাতেই সেটা বোধগম্য হয়।
শেষ দিকে অনেকটা ইচ্ছের বিরুদ্ধে ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহন। বাধ্য হয়ে তার অপরিশীম ভালবাসার স্থান বিশ্বভারতী থেকে ফিরে আসা, পাকিস্থানী চর সন্দেহে তাকে নাস্তানাবুদ করা, দেশে স্ত্রী সন্তান আত্মীয় স্বজন নিয়ে ভয়াবহ উদ্বেগ, একাকীত্ব, বোতল ইয়ারদের সঙ্গ, প্রকাশক ও আপনমানুষদের দ্বারা প্রতারণা, অর্থাভাব সহ বিবিধ কারনে তিনি ধীরে ধীরে নেশায় আরো বেশী করে ডুবে গিয়েছিলেন।
তবুও বাঙলা সাহিত্যকে তিনি যা দিয়ে গেছেন সেইটেই অনেক অনেক বড় পাওনা।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অপরিসীম কৃতজ্ঞতা- এমন সুন্দর একটা মন্তব্যের জন্য।
ভাল থাকুন নিরন্তর।

৯| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:১২

হাবিব বলেছেন: পড়ে কেমন লাগলো পরে জানাবো

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১২

শেরজা তপন বলেছেন: ঠিক আছে অপেক্ষায় রইলাম...

১০| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:০৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়াটা ছিলো ভয়ংকর।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৫

শেরজা তপন বলেছেন: সেতু মানে মুজতবা আলীকে তাঁর মা প্রচন্ড স্নেহ করতেন। তাঁর শান্তিনিকেতনে যাবার কথা শুনেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন! সম্ভবত জার্মানীতে থাকা অবস্থায় তাঁর মা মারা যান। এই কষ্ট বেদনাবোধ ও অপরাধবোধ সারা জীবন ভুগিয়েছে তাকে। তিনি আসলে এক সময় অনেক বেশী পালটে গিয়েছিলেন-পাল্টে যাওয়া এই মানুষটা আর তেমন করে তাঁর পরবারের সাথে আন্তরিক হয়ে মিশতে পারেননি।
নিজের আদিবাস ছেড়ে একাকী, স্ত্রী সন্তানহীন, ভাই বোন আত্মীয়হীন জীবনযাপন আসলেই ভয়ঙ্কর!
আপনার কি অবস্থা?

১১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১০

ইসিয়াক বলেছেন: এখনও পড়ে শেষ করতে পারিনি। আবার সময় নিয়ে আসছি।.. …

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৬

শেরজা তপন বলেছেন: সারাক্ষনতো ভাবের ঘোরে থাকেন :) পড়ার সময় কই! অপেক্ষায় রইলাম...

১২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: শেরজা তপন,




শান্তি নিকেতনে যখন প্রথমবার সৈয়দ মুজতবা আলী যান ছাত্র হিসেবে তখন রবীন্দ্রনাথ তাকে দেখে বলেছিলেন, তাঁর মুখে নাকি কমলালেবুর গন্ধ!
সেই ছাত্রের মুখে‌ই এ যে দেখছি - দ্রাক্ষারসের গন্ধ! :||

সুন্দর লেখা হয়েছে।
রসের গোলক যে রসগোল্লা এটা যিনি লিখেছেন সেই লেখকের জন্ম দিনে রসগোল্লা শুভেচ্ছা।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১৬

শেরজা তপন বলেছেন: রসগোল্লা বাংলা সাহিত্যে রম্য ছোট গল্পের এক মাইলফলক! তবে তিনিতো গল্প লিখেননি- লিখেছেন কাহিনী
এ নিয়ে আমার একটা লেখা আছে~ ফের রসগোল্লা' শিরোনামে।
আমি জানিনা রবীন্দ্রনাথের মত শুদ্ধচারী মানুষ তাঁর প্রিয় ছাত্রের খারাপ নেশার কথা জানতেন কি-না জানা নেই। তবে জেনে থাকলে কষ্ট পেয়েছেন নিশ্চিত।

আপনার মন্তব্যে সবসময় নতুন কিছু থাকে। বেশ ভাল সাহিত্যের আলোচনা করতে- আমার জানার পরিধি খানিকটা করে বাড়ে।
ভাল থাকুন।

১৩| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:১২

সোহানী বলেছেন: বাবা ছিলেন সৈয়দ সাহেবের ভক্ত। বাবার কারনেই উনার বইগুলো পড়েছিলাম আর মুগ্ধ হয়েছিরাম। তিনি যখন সিলেটে ছিলেন তখন বাবার সাথে খুব ভালো পরিচয় ছিল। আমার বাবা সিলেট এমসি কলেজের ছাত্র ছিলেন। ও প্রথম চাকরীও ছিল সিলেটে। উনার এ মদ্যপানের অভ্যাসের কথা বাবার কাছ থেকেই জেনেছিলাম।

সৈয়দ সাহেবের মদ্যপানের সাথে যাবতীয় শূরার খবরও পেয়ে গেলাম বোনাস হিসেবে।

পশ্চিমা কালচারে থাকি বলে এখানকার মদ্যপানের খবর কিছুটা জানি। তবে কানাডায় বরাবরেই এ নিয়ে প্রচুর প্রচারনা করা হয় মদ্যপানের বিপক্ষে। যদিও এখানে গাজাও বৈধ, তারপরও বলবো মদ/গাজা খেতে দেকা যায় কিন্তু খুব বেশী পপুলার নয়।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:২৫

শেরজা তপন বলেছেন: তাই নাকি- বেশ দারুন একটা খবর তো!!
তাহলে আপনার বাবার কাছ থেকে তাঁর সন্মন্ধে অনেক অজানা তথ্য জেনেছেন নিশ্চয়ই?? তিনি কি বর্তমান?


তিনি একবার নাকি পুর্ববঙ্গের ফেরিওয়ালারা কখন কি স্বরে কি ভাষায় কিভাবে ডাকে সেই নিয়ে ঘন্টা তিন গল্প করেছিলেন!!
কি দারুন বিদগ্ধ পন্ডীত ব্যক্তি ছিলেন তিনি!
গাঁজাটা বৈধ হওয়া খারাপ নয় :) অন্তত মদের থেকে ভাল।
ফের অনেক ধন্যবাদ- ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। ভাল থাকুন নিরন্তর!

১৪| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:১৪

রাজীব নুর বলেছেন:

১৯৪৭ সালের ৩০শে নভেম্বর এক সাহিত্য সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন- ‘পৃথিবীর কোন শিক্ষিত সভ্য দেশ মাতৃভাষা ছাড়া অন্য মাধ্যমে শিক্ষা দিচ্ছে? এমন কোন দেশ আছে সেখানকার লোক আপন মাতৃভাষাকে অবমাননা করে আপন দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে?’

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১৯

শেরজা তপন বলেছেন: আমাদের মাতৃভাষা আন্দোলনের পথিকৃত ছিলেন তিনি! তিনি সর্বপ্রথম এর পক্ষে কলম ধরেন।
আমরা এই গুণী মানুষের কদর করতে পারিনি।
ধন্যবাদ আপনাকে। সাহিত্য সভাটা কোথায় হয়েছিল-জানেনকি?

১৫| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:২০

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই লেখাটা মুলত তথ্যমুলক এবং অনেক ক্ষেত্রে রম্যধর্মী। এটাকে আমার জন্য একটা টিউটোরিয়াল ক্লাস বলা যেতে পারে। এই পোস্টে আমার কোন মতামত নাই বরং অনেক কিছু জেনেছি। ডঃ আলীর মদের আসক্তি যেমন বেশী ছিল আবার বিভিন্ন ধরণের মদ সম্পর্কে ওনার জ্ঞানও গভীর ছিল। সৈয়দ মুজতবা আলী জীবনের শেষ অংশে মদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। ওনার শারীরিক ও মানসিক কষ্টের অন্যতম কারণ ছিল এই মদ। ফলে শেষ বয়সে এই মহান লেখকের কাছ থেকে আরও যা পাওয়ার আশা ছিল তা বাধাগ্রস্ত হয়। আমি এই লেখা থেকে মুলত মদ সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি ডঃ আলীর বয়ানে। মদ সম্পর্কে আমার জ্ঞান ছিল শূন্যের কোঠায়। এখন কিঞ্চিৎ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই লেখায় যা আমাকে আকৃষ্ট করেছে এবং আমি যা জানতে পেড়েছি সেটা সম্পর্কে আমি নীচে সংক্ষেপে লিখলাম।

ওনার লিভার সিরোসিস হয়েছিল তবে পরে সেরে যায়। মদ ও নারীর প্রতি টান ছিল আজীবন। মদের ব্যাপারটা পরিষ্কার কিন্তু নারীর ব্যাপারটা মনে হয় এই লেখায় নাই। আশা করি আপনি শীঘ্রই এই ব্যাপারে একটি পোস্ট দিয়ে আমাদের তৃষ্ণা নিবারণ করবেন। তিনি ছিলেন অসুখী, নিঃসঙ্গ এবং সর্বদা একটা মন যন্ত্রণায় কাতর থাকতেন। তার সাথে মনে হয় কিছুটা তুলনা করা যায় তলস্তয়ের সাথে। তিনি মাতাল থাকতেন শেষ বয়সেও। তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব কেন গ্রহণ করেছিলেন এটা আমার জানতে ইচ্ছে করছে। ওনার থ্রম্বসিস হয়েছিল। এক সময় কলকাতায় তার জীবন ছিল দুর্বিষহ। অর্থ সঙ্কটেও ছিলেন। তিনি শপথ করে বলেছেন যে তিনি সাহিত্যিক হতে চাননি।

তার কাছ থেকে জানতে পারি লিকার আবিষ্কার করেছে সাধু সন্ন্যাসীরা। ওষুধ হিসাবে ব্রান্ডি দেয়া হত। এই কথাটা অবশ্য আমি আমার আব্বার কাছে শুনেছিলাম। শ্যাম্পেনের দাম বেশী তাই ওষুধ হিসাবে দেয়া হয় না। শেরি আর পোর্ট হোল ক্ষুধা বৃদ্ধির জন্য। গুরের সাথে কালো কফি খেলে ব্রান্ডির মত গাঁ গরম থাকে। বিয়ারে নেশা হয় এই ব্যাপারটা অনেকে জানে না। ইউরোপের ৮৫% লোক বিয়ার খেয়েই নেশা করতো সেই সময়। আঙ্গুর পচিয়ে ওয়াইন তৈরি করা হয়। বিয়ারে ৪ থেকে ৬ % এলকোহল থাকে। ওয়াইনে থাকে ১০ থেকে ১৫%। গুনি লোকেরা ওয়াইন খায় এবং এটার প্রভাবে কিছু সময়ের জন্য চিন্তাশীল এবং বিষণ্ণ হয়। সব চেয়ে ভালো ওয়াইন হয় ফ্রান্সে। শ্যাম্পেন খোলা মাত্র এটার কক লাফ দিয়ে ওঠে। এটা থেকে দ্রুত নেশা হয় এবং উড়ুক্কু ভাব হয়।
সফেন ওয়াইন, স্টিল ওয়াইন হোল ওয়াইনের দুইটা ধরণ। রিবেন ট্রপের কাহিনীটা মজার। ফ্রান্সে তার মদ বিক্রির দক্ষতা দেখে হিটলার তাকে মন্ত্রী বানান পরে ফাসিতে ঝোলেন হলকাস্তের অপরাধে। কাশ্মিরের আঙ্গুর দিয়ে ডঃ আলী মদ বানাতে চেয়েছিলেন। আপেল, মধু, আনারস, কালোজাম এবং আম থেকে মদ হয়। আমের মদ খেতেন মির্জা গালিব। ভাত পচিয়ে বিয়ার বানায় সাওতালরা। এতে সাড়ে তিন পারসেনট এলকোহল থাকে। জাপানিরা ভাত পচিয়ে মদ বানায়। চীনাদেরটায় ভুট্টাও মিশ্রিত থাকে। খেজুর এবং তালের রস থেকে হয় তাড়ি, এটা এক ধরণের ওয়াইন। এটাতে ক্ষতি সবচেয়ে কম।

আঙ্গুরের ওয়াইনকে চোলাই করলে হয় ব্রান্ডি। বার্লি থেকে হয় বিয়ার। বিয়ারকে চোলাই করলে হয় হুইস্কি। তাড়িকে দুইবার চোলাই করে খেতেন বাদশাহ জাহাঙ্গীর। এতে ৮০% পর্যন্ত এলকোহল থাকে। আখের রসকে চোলাই করলে হয় রাম। জিন তৈরি হয় শস্য দিয়ে। এতে ৮০% পর্যন্ত এলকোহল থাকতে পারে। এবসাকে সবুজ শয়তান বলে, কারণ এতে এলকোহল সব চেয়ে বেশী থাকে। মদ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ফ্রান্সের এক প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিত্ব হারান। নরওয়ের সবাই আইন ভেঙ্গে মদ খায়। সেখানকার রাজার আইন মানতে হয় না তবুও তিনিই শুধু মদ পরিহার করেন।

দুঃখজনক ঘটনা হোল উনি মদের ভালো-মন্দ এতো কিছু জানার পরও আসলে উনি মদ খাননি বরং মদই ওনাকে খেয়েছে। উনি মদের নেশা ছাড়তে পারলে বাংলা সাহিত্য আরও ওনার কাছে ঋণী হত। আপনি অনেক শ্রম এই লেখায় দিয়েছেন। আপনি ডঃ আলীর উপর মোটামুটি বিশেষজ্ঞ। আরকজন ছিলেন যার নামে এই লেখা উৎসর্গীকৃত। তিনি ২০১৪ থেকে লাপাত্তা। ফলে এই লেখার পুরো ক্রেডিট আপনার। কোরআনে বলা আছে যে মদের মধ্যে কিছু ভালো ব্যাপার আছে কিন্তু খারাপের পরিমান অধিক। এই কারণে পর্যায়ক্রমে মদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। সূরা বাকারার ২১৯ নাম্বার আয়াতে আছে "ওরা তোমাকে মদ-মাদক এবং জুয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে, বলে দাও, এই দুটোতেই বিরাট পাপ, ক্ষতি রয়েছে এবং মানুষের জন্য কিছু উপকারও। কিন্তু এই দুটো থেকে যে পাপ, ক্ষতি হয়, তা তাদের উপকার থেকে অনেক বেশি।"

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৩৭

শেরজা তপন বলেছেন: 'মদ ও নারীর প্রতি টান ছিল আজীবন। মদের ব্যাপারটা পরিষ্কার কিন্তু নারীর ব্যাপারটা মনে হয় এই লেখায় নাই। আশা করি আপনি শীঘ্রই এই ব্যাপারে একটি পোস্ট দিয়ে আমাদের তৃষ্ণা নিবারণ করবেন।'
~উনি একমাত্র প্রেমের গল্প লিখেছেন 'শবনম' শিরোনামে- সেই একটাই শেষ! প্রেম আর নারীঘটিত ব্যাপারে তিনি ছিলেন বেশ রক্ষনশীল। অনেক সময়ই তিনি নারী বেষ্টিত থাকলেও- কেউ চারিত্রিক ব্যাপার বা বেলাল্লাপনা নিয়ে কখনো কিছুই বলেননি। এই ব্যাপারে সবাই কেন চরম নিশ্চুপ আমি সেটা জানিনা।
~ আমি যতদুর জানি তলস্তয়ের অসুখীর কারন মুলত তাঁর স্ত্রী ছিল। আর আলী সাহেবের গিন্নির সাথে কালে-ভদ্রে দেখা হোত। তিনি সরকারি চাকুরী করতেন।
~ ছোট বেলায় আমি মক্তবে(স্বাধীনতার পরে) আরবীর সাথে উর্দুও পড়েছি। কোরান পড়েছি না বুঝে। পরে বাঙ্গলায় পড়েছি।
আপনার মন্তব্য আমার লেখাকে অনেক বেশী অলঙ্কারিত করল।
এমন মন্তব্যের উত্তর দু-চার লাইনে দেয়া যায়না। আপনিতো কঠিন ছাত্র হে ভ্রাতে। আমি ছিলাম চরম ফাকিবাজ। তাই আমার চরিত্র মাফিক উত্তর দিলাম।
আপনার সুখী জীবন ও সু-সাস্থ্য কামনা করছি।

১৬| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:২০

কামাল১৮ বলেছেন: লিখার থেকে পড়া সহজ ,সেটাই পাড়ি না,আর লেখা।রোজ দুই চার লাইন করে নাহয় লেখলাম ,কিন্তু কপি পেষ্ট করবো কি ভাবে সেটাই জানি না।লিখতে বলার জন্য ধন্যবাদ।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:০২

শেরজা তপন বলেছেন: বুঝলাম সেটা বেশ কষ্টের- এরপরে নানান কিসিমের মন্তব্যের হ্যাপা সামলানোও বেশ কঠিন কর্ম
তবুও একখানা লেখা না দিলে ক্যামনে হবে!!! কিছু একটা দিয়ে শুরুতো করেন
আপনার মন্তব্যের ভারে বোঝা যায় আপনি হতাশ করবেন না
দিন যত যাবে তত পোষ্ট দেয়া কঠিন হয়ে যাবে- ওজন বাড়তে থাকবে :) দাড়ি-পাল্লায় মিলবে না

১৭| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৪৬

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: ভাগ্যিস আমার গুরু শুড়ি বাড়ি যেতেন। আজ এই পর্যন্ত পড়েছি।কি অসহায় জীবন।এতো সম্মান এতো বিদ্যা থেকেও নিঃসঙ্গতা তারই ঠিকানা হয়েছিল। ভীষণ কষ্ট পেলাম ওনার শেষের সে দিনের পরিচয় জেনে।
আমারও আজ আরো একটি কমেন্ট জমে গেছে।সময় নিয়ে আগের ও্ এই পোস্টেল জন্য আবার আসছি।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:১৩

শেরজা তপন বলেছেন: কত গুছিয়ে সময় নিয়ে পড়েন আপনি পদাতিক ভাই।
ঠিক বলেছেন নিঃসঙ্গ জীবন বড়ই ভয়াবহ! এরপরে অসুস্থ্যতা দারিদ্রতা আরো বেশী কষ্টকর।

অপেক্ষায় রইলাম আপনার পরবর্তী কমেন্টের-বাকিটুকু আলী সাহেবের নিজের লেখা। সেটুকুর জন্য তাকেই বলতে হবে :)

১৮| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:০৩

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন রত্ন। তিনি জানতেন না এমন কিছুই হয়তো ছিলো না।সাহিত্য,সংগীত, দর্শন, ইতিহাস সবকিছুতে পারদর্শী। যেখানে যা আলাপ করেছেন একেবারে ইন ডিটেইলে। দেশে বিদেশে গ্রন্থে পুরো একটি অধ্যায়ে যেভাবে প্রাচীন থেকে তাঁর সমসাময়িক আফগানিস্তানের ইতিহাস তুলে ধরেছেন সেটা অবিশ্বাস্য। তিনি যে শুধু বেহেড মাতাল ছিলেন তা কিন্তু নয়, তিনি একজন ভোজনরসিকও ছিলেন। রান্না সম্পর্কিত একটি প্রবন্ধে (নামটা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না) তিনি শুধু দেশি মাছ, সব্জির এতগুলো পদের নাম উল্লেখ করেছেন যে সেগুলো খাওয়া তো দূরের কথা তাদের নামও শুনিনি। তিনি মদ্যপ ছিলেন ঠিকই, কিন্তু শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ধারেকাছেও তিনি নেই(শক্তি বাবু একেবারে ক্লাসিক আলকাশ।মাতলামোর সময়ে তাকে পুলিশও ধরতো না। কারণ তিনি পুলিশকে জড়িয়ে ধরে বলতেন," ধরলি ক্যান বাবা?টাকা দে।মদ খাবো।)।

গুরুদেব রবীন্দ্রনাথকে মারাত্মক ভক্তি করতেন। এজন্য রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকাকালে কিছুই লেখেন নি। তাঁর ধারণা ছিলো গুরুদেব বেঁচে থাকতে কিছু লেখাটা ধৃষ্টতা হবে , কারণ তিনি রবীন্দ্র প্রতিভার কাছে কিছুই নন।এজন্য আমারা তাঁর প্রথম জীবনে সাহিত্যচর্চার কোনো নিদর্শন পাই না।রবীন্দ্রনাথ আরো কিছুদিন বেঁচে থাকলে হয়তো এখন যা আছে তাও পেতাম না আমরা।

তাকে নিয়ে খুব সুন্দর একটি লেখা লিখেছেন।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:২৪

শেরজা তপন বলেছেন: তাই নাকি !! শক্তি চট্টোপাধ্যায় দেখি গুরুর গুরু :)
মোহাম্মদপুরের এক মাতালকে জানতাম আমি( শিক্ষিত ও ধনবান) মদ খেয়ে বেহড মাতাল হয়ে রাত দশটার পরে ঘুরতে বের হোত।
রাস্তায় সবাইকে শুধু গালিগালাজ করত- সবচেয়ে বেশী গালি দিত পুলিশকে।
পুলিশ তাঁর চরিত্র বুঝে তাঁর দিকে ফিরেও তাকায় না- গালি হজম করে হাসে!!!

হ্যা হ্যা কবি গুরুর প্রতি তাঁর ভক্তি প্রবাদপ্রতিম! কবি মারা যাবার পরেও প্রথম পুস্তক বের করতে বেশ সময় নিয়েছিলেন। আসলে তিনি কখনোই সাহিত্যিক হতে চাননি।

আপনি নিশ্চিতভাবে অনেক অনেক কিছু জানেন তাকে নিয়ে। ধন্যবাদ সুন্দর তথ্যগুলো শেয়ার করার জন্য। ভাল থাকুন।

১৯| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:১৩

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: রুবাইয়্যাৎ-ই-ওমর খইয়্যামের দুটো বিখ্যাত অনুবাদ আছে বাংলায়। সবচেয়ে বিখ্যাত আর সাহিত্যমান সম্পন্ন অনুবাদ হচ্ছে কাজী নজরুল ইসলামের টা।এরপরই আছে সৈয়দ মুজতবা আলীর টা। ইংরেজি অনুবাদও আছে যা স্কট ফিটজেরাল্ড দ্বারা অনুপ্রাণিত। তবে সেখানে ভেজাল আছে। তিনি বেছে বেছে এমন সব রুবাই অনুবাদ করেছেন যা পড়লে ওমর খৈয়ামকে সকলের নাস্তিক আর মদ্যপ বলে মনে হবে। অর্থাৎ শুধু ভোগবাদী সত্তাকেই তুলে ধরেছেন।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:১৯

শেরজা তপন বলেছেন: ওমর খৈয়ামতো মুলত একজন দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদ! সম্ভবত কবি পরিচিতি তাঁর সর্বশেষে ছিল- ধারনা করা হয় আমরা যে রুবাই গুলো তাঁর বলে জানি সেগুলোর বেশীরভাগই তাঁর রচিত নয়।
ভাল কিছু তথ্য পেলাম।

আপনার কথা ঠিক- যারা যেটা পছন্দ করে আর কি :)

২০| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ ভোর ৪:১৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অনেক পরিশ্রম করে লেখাটা তৈরি করেছেন। সব মন্তব্যও পড়লাম

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:২৭

শেরজা তপন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে- আগামী ২০ তারিখে আরেকজন বিখ্যাত ব্যক্তিকে নিয়ে একটা লেখা দিব। খানিকটা কষ্ট করেছি সেখানে- এখানে সে তুলনায় কম। কেননা তাঁর ব্যাপারে কোন পত্রিকা, অনলাইন মিডিয়া আর উইকিতে কোন তথ্য নাই প্রায় বলা চলে। তাঁকে নিয়ে বাঙ্গালী সাহিত্যে তেমন চর্চা হয়নি। তিনি বড় অভাগা সাহিত্যিক- সেটা পড়বেন আশা করি।

আপনাকে ইদানিং বেশ কম দেক্ষা যায় ব্লগে- খুব ব্যাস্ত নাকি ব্লগের প্রতি বিরূপ?

২১| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৫২

জ্যাকেল বলেছেন: এতো বড় লেখা আমি পড়ি না কিন্তু মুজতবা আলীর নাম থাকায় মনযোগ না দিয়ে পারলাম না। শরাব তথা ম্মদ্য সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করতে পারলাম। শুধুএকটা জিনিস আমি বুঝতে পারলাম না। মুজতবা আলী পুরো না পড়লে বুঝতে পারব না। শুড়ি গুরু হয় কি ক্রে?

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:২০

শেরজা তপন বলেছেন: যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি বাড়ি যায়- এটা সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষ্য!
শুঁড়ি-টা সম্ভবত তিনি অন্য অর্থে ব্যবহার করেছেন- মানে গুরু যা করবেন সেইটেই ঠিক। উনি শুঁড়ি বাড়ি গেলেও শিষ্য তার পিছু পিছু যাবেন।
সম্ভবত আমার ব্লগে আপনার প্রথম মন্তব্য- স্বাগতম আমার ব্লগ বাড়িতে। কষ্ট করে এত বড় লেখা পড়ার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা!

২২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:১০

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: এই বেলা ভাই মদ খেয়ে নাও, কাল নিশিতের ভরসা কই;
চাঁদনী জাগিবে যুগ যুগ ধরে, আমরা তো আর রবনা সই।

- খৈয়াম

শ্রদ্ধা লেখকের প্রতি।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:২২

শেরজা তপন বলেছেন: আমার ~আলকাশ সিরিজ পড়েছিলেন আপু? আলকাশ মানেই হল বদ্ধ মাতাল :)
খৈয়ামের এই রুবাঈ টা পড়িনি- ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
আপনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা- ভাল থাকুন

২৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৫৪

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: "ইংরেজি অনুবাদও আছে যা স্কট ফিটজেরাল্ড দ্বারা অনুপ্রাণিত"

এখানে অনুপ্রাণিত এর জায়গায় অনুবাদিত হবে। অনুবাদ স্কট ফিটজেরাল্ড নিজেই করেছিলেন।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:২৪

শেরজা তপন বলেছেন: জ্বী বুঝতে পারলাম! বাঙ্গলা ভাষায় আমি অত দক্ষ নই- কোন ভুল দেখতে পাইনি তখন :) এখন বুঝলাম

২৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৩৮

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: বাবারে! এতক্ষণে শেষ হলো। একেবারে ম্যারাথন পোস্ট। প্রথমে সৈয়দ মুজতবা আলী ও তার সুরা আসক্তি সম্পর্কে পড়লাম। বলা ভাল মদ কীভাবে এমন গুণী একজন মানুষের জীবন পর্যুদস্ত করেছিল তার এক সুদীর্ঘ ইতিহাস জানলাম। খুব ই বেদনার ওনার এই সময়কার দিনগুলো।
পরে জানলাম বিশ্ব মদ ইতিহাসে বিশ্বের নামিদামি মদের পরিচয় তাদের জন্ম বৃত্তান্ত ও তুল্যমূল্য আলোচনা।মদ না খেয়েও হিটলারের মদ প্রেমের ইতিহাস ভালো লাগলো। বিষয়টা একেবারে নুতন।

আচ্ছা সৈয়দ মুজতবা আলীর সমাধিটি ঢাকাতে না? উনি যেমন একাধিক ভাষা জানতেন তেমনি বহু বার ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।পরে বহুজনের ডক্টরেট গাইড হন। সম্ভবত ডক্টরেট মেকার হাওয়ায় নিজে কখনও নামের আগে ড. শব্দটি ব্যবহার করেননি।আর করবেনই কেন,নিজে যেখানে ডক্টরেট দেওয়ার মাস্টার তাঁর নামের আগে সত্যিইতো এমন শব্দ বড় নিষ্প্রভ। কিন্তু দুঃখজনক যে ওনার সমাধি ফলকের উপর নাকি ড. সৈয়দ মুজতবা আলী লেখা আছে।



১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১১

শেরজা তপন বলেছেন: কাল থেকে বার বার সময় বের করার চেষ্টা করেছি- আপনার মন্তব্যের প্রতিউত্তর দেবার।
দুর্ভাগ্য যে, সময় বের করতে পারিনি।
এটা বড়ই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক ব্যাপার যে মদ খেয়ে তাঁর মত বিরল প্রতিভাবান একজন সাহিত্যকের জীবনাবসান হল অকালেই বলা চলে।
জ্বী তাঁর কবর ঢাকাতে। আমার কখনো যাওয়া হয়নি সেখানটায়। আপনার কাছেই শুনিলাম প্রথম তাঁর এফিটাপে ' দ। সৈয়দ মুজতবা আলী লেখা আছে। সম্ভবত সম্মান জানাবার অন্য কোন ভাষা পায়নি কেউ।
~পরে বহুজনের ডক্টরেট গাইড হন। সম্ভবত ডক্টরেট মেকার হাওয়ায় নিজে কখনও নামের আগে ড. শব্দটি ব্যবহার করেননি।'
তিনি নিজেকে নিয়ে কখনোই উচ্চধারনা পোষন করতেন না। সবক্ষেত্রেই নিজেকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতেন।
আমি শুনেছি জর্মনের কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে একটা চেয়ার এখনো তাঁর নামে সংরক্ষিত আছে।
সত্যিকারে এই গুণী মানুষটার কদর আমরা করতে পারিনি।এবার খুব কম মিডিয়া তাঁর জন্মদিনের কথা স্মরণ করেছে। দেশ পত্রিকা কি করেছে?

অনেক অনেক ধন্যবাদ ও মন্তব্যে ভাললাগা ভাই।

২৫| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৮:১৬

জ্যাকেল বলেছেন: লেখক বলেছেন: যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি বাড়ি যায়- এটা সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষ্য!
শুঁড়ি-টা সম্ভবত তিনি অন্য অর্থে ব্যবহার করেছেন- মানে গুরু যা করবেন সেইটেই ঠিক। উনি শুঁড়ি বাড়ি গেলেও শিষ্য তার পিছু পিছু যাবেন।

ধন্যবাদ

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:০১

শেরজা তপন বলেছেন: ভাল কি বলেছি? এমনইতো হবার কথা না-কি?

২৬| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৮

অর্ক বলেছেন: জ্যোতিচিহ্ন, স্পেসের নিয়মিত উল্টাপাল্টা ভুলভাল ব্যবহার কোনওরকমেই আর এগোতে দিলো না, সাথে থেকেথেকে সাধারণ শব্দের বানান ভুলও বিরক্তিকর। এতো বড়ো একজন মহান সাহিত্যিককে নিয়ে এরকম একটা অযত্নের দায়সারা লেখা আপনার মতো পুরনো ব্লগারের কাছে আশা করিনি। পড়ে মনে হলো, কোনওরকম এডিটিংয়ের ধার কাছ দিয়েও যাননি। একটানা লিখে পোস্ট। এ মন্তব্য অন্যভাবে নেবেন না দয়া করে। সত্য হলো যে, জ্যোতিচিহ্ন, স্পেসের নিয়মিত উল্টাপাল্টা ভুলভাল ব্যবহার ও বানান ভুল আমাকে কোনওরকমেই এগোতে দিলো না। আশা করি আগামীতে এরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লেখা পোস্টের ক্ষেত্রে আরও যত্নবান হবেন। ভেবেছিলাম স্কিপ করে যাই। কিন্তু আপনি অসন্তুষ্ট হতে পারেন ভেবে মন্তব্য করলাম। আপনাকে কোথাও বলতে দেখেছিলাম যে, যারা আমার পোস্টে মন্তব্য করে না, আমিও তাদের পোস্টে মন্তব্য করি না এরকম কিছু। কাছাকাছি সময় আমার লেখায় বেশ কিছু মন্তব্য পেয়েছি।

যাই হোক আগামীতে আরও কথা হবে আশা করি। শুভেচ্ছা রইলো।

*
আগের মন্তব্যে ভুল আছে। দয়া করে ওটা ডিলিট করে দিন।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৫৯

শেরজা তপন বলেছেন: আগের মন্তব্যটা মুছে দিয়েছি আপনার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে।
প্রথমেই এতসব ভুল ভালের জন্য প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কবিদের ভাষাজ্ঞান আমার মত লিখতে লিখতে শেখা সাহিত্যিকদের
থেকে অনেক বেশী হবারই কথা!
তবে ভুলগুলো আপনার চোখে এতই বেশী ধরা পড়ল যে- আপনি পড়তেই পারলেন না!!!
অবাক করলেন ভাই। শুধু অমন ভাষাজ্ঞান জানা লোকেরাই যদি লেখালেখি করত বা এমন কোন নিয়ম নীতি থাকত যে, আমার
মত ঠেকে ঠেকে ভাষা শেখা লোকজন এমন বিখ্যাত লোকদের নিতে লিখতেই পারবে না তাহলে হয়তো ব্লগের ছায়াও মারাতাম
না।
কই এসব শ্রদ্ধাভাজন বিখ্যাত ব্যক্তির জন্মদিনে আপনাদের মত ঋদ্ধ কোন ব্লগার এক কলম তো লিখলনা?? আপনারা লিখেন দু
চার ছত্র, তখন আমরা না হয় পড়েই আঁশ মেটাব!
আপনার এই মন্তব্যতেও কিছু ভুলভাল আছে না কি?
আমরা আপনাদের মত খুব ভাল লিখতে পারিনা বলে-এমন তাচ্ছিল্য করা শোভন নয়।
আপনি যে, দোষটা চাপালেন আমার উপর; আপনাকে কোথাও বলতে দেখেছিলাম যে, যারা আমার পোস্টে মন্তব্য করে না, আমিও তাদের পোস্টে মন্তব্য করি না এরকম কিছু।' এটার সপক্ষে কোন প্রমান সম্ভবত আপনি দিতে পারবেন না। আমি সম্ভবত লিখেছিলাম, যারা শুধু নিজের লেখায় মন্তব্য পাবার অপেক্ষা করে, অন্যের লেখায় মন্তব্য করে না আমি তাদের লেখায় মন্তব্য করি না- এমন কিছু।
ফের আমার লেখার সামগ্রিক ভুলত্রুটির জন্য আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ব্যস্ততার কারনে এডিট করতে পারিনি সেটা সত্য-কিন্তু এডিট করেও খুব বেশী লাভ হোত না। আমার ভাষার দৌড় অতটুকুই
ভাল থাকুন।

২৭| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৩৬

শায়মা বলেছেন: আমার মায়ের প্রিয় লেখক।
আমি আমার ছোটবেলায় মায়ের লাইব্রেরী থেকে প্রায় সব বই পড়েছি। কিন্তু ......মুজতবা আলীর লেখা রম্য পড়ে মায়ের সমান প্রিয় মনে হয়নি কেনো জানিনা। . :(

যাইহোক আমি আবার রম্য লেখায় শিবরাম লেখার পোকা ছিলাম। আর বাকী সব রোমান্টিক রোমান্টিক লেখার। :)

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১৮

শেরজা তপন বলেছেন: আপনিতো আপাদমস্তক রোমান্টিকতায় মোড়া! রোমান্টিকতার নতুন বাংলা শব্দার্থ -শায়মা করার দাবী জানাচ্ছি :)

কি বলেন তাঁর রসগোল্লা পড়ে কোন রস আস্বাদন করেননি। দেশে-বিদেশের মত এপিক রম্য ভ্রমন কাহিনী আর কে লিখেছেন বাঙ্গলা সাহিত্যে? চাচা কাহিনী, ভবঘুরে ও অন্যান্য। ওদিকে করুন রস রম্য 'পন্ডিত মশাই' তো তাঁর অনন্য সৃষ্টি।
তবে তিনি অনেক লেখায় শব্দের মারপ্যাচে বেশ কঠিন করে ফেলেছেন। সেটায় খানিকটা রম্যে উচ্ছে ব্যাঞ্জন হয়েছে অনেকের কাছে।
নতুন করে ফের পড়ুননা প্লিজ- ওই বয়সের ভাল লাগা আর এই বয়সের ভাললাগা ভিন্নতর হবে নিশ্চিত।

আমি আরো বড় মন্তব্য আশা করেছিলাম আপনার থেকে। আপনি দিন দিন কেপ্পন হয়ে যাচ্ছেন :(

২৮| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৩১

আখেনাটেন বলেছেন: লেখা ভালো লেগেছে......তবে মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে ফেলছিলাম....আরেকটু গোছালো হলে......।

'সাঁওতাল ,আদিবাসী ও বিস্তর পার্বত্য জাতি ভাত পচিয়ে বিয়ার বানিয়ে খায়;কিন্তু ফার্মেন্ট করার ভালো কায়দা জানে না বলে তিন সাড়ে তিনের(পার্সেন্ট) চেয়ে বেশী এলকহল -পচাইয়ে তুলতে পারে না।' -- এটি মনে হয় ঠিক নয়। আমাদের ওখানের সাঁওতালরা (আসলে ওঁরাও) ভাত পচিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে 'চোয়ানি' নামের এক ধরনের পানীয় তৈরি করে যা রেক্টিফাইড স্পিরিট সমতুল্য (৯৫.৪ শতাংশ) অ্যালকোহল। ফলে তারা তা খেতে মাংসসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী ব্যবহার করে। এবং মাঝে মাঝে 'র' খেতে গিয়ে মৃত্যুবরণের ঘটনাও বিরল নয়।

চমৎকার লেখাটির জন্য ধন্যবাদ। অনেক কিছু জানা হলো। :D

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৫২

শেরজা তপন বলেছেন: তা ঠিক অনেকগুলো ভুল রয়ে গেছে। তাড়াহুড়ো করে পোষ্ট টা দিয়েছিলাম। ভাল করে এডিটিং ও রিভিশন করা হয়নি।
এর পর থেকে আরেকটু সতর্ক হব।
আপনার কষ্ট করে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
হ্যা -দো চোয়ানি'তে বেশ উচ্চমাত্রার এলকোহল আছে, এছাড়া বান্দরবানে মৌরি দিয়ে দারুন সুগন্ধযুক্ত একটা মদ করে সেটার এলকোহল ৫০/৬০% এর কম নয়।
উনি কেন ভাত পচিয়ে বিয়ারের কথা বলেছেন আমার বোধগম্য নয়।
মদের গুনগত মান ও এলকোহলের মাত্রা নির্ভর করে গাঁজন ,পাঁচন ও ডিস্টিলারি বা শোধন প্রক্রিয়ার উপর।
আপনার দারুন তথ্যবহুল মন্তব্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

২৯| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৫৫

জ্যাকেল বলেছেন:
লেখক বলেছেন: ভাল কি বলেছি? এমনইতো হবার কথা না-কি?

আপনাকে ধন্যবাদ দিলাম। ওই অংশটুক শুধু কোট করা ছিল।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৪৫

শেরজা তপন বলেছেন: হ্যা আমি তা বুঝেছিলাম। প্রশ্নটা অন্য কারনে করেছিলাম।
যাহোক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ফের আসার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.