![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
...
ছয় সাত বছরের এক দঙ্গল ছেলে মেয়ে ছিল। চিল্লাচিল্লি চেঁচামেঁচি করে সারাক্ষন বাড়ি মাথায় রাখত। নতুন বিয়ে করা মামা মামীর এত সব গ্যাঞ্জাম ভালো লাগে না। নতুন মামী সুন্দর মুখ করে বসে থাকে, কিছু বলে না। মামা চেহারা কালো করে নাম ওদের নাম দিলেন 'গ্যাঞ্জাম পার্টি'। একটু প্রাইভেসির আশায় দরজা আটকে বসতেই দরজায় দুমাদুম কিল। গ্যাঞ্জাম পার্টি নতুন মামীর সাথে কথা বলতে চায়। কানে কানে। মামা পারলে ঘাড় ধরে বিদায় করেন। ঘাড় ধরে তো আর বিদায় হয় না, কখনও হাতে চকলেট ধরিয়ে দিতে হয়, কখনও আচারের টাকা। মাঝে মাঝে একটা বিকট হুংকার ছাড়তে হয়। তাতেও গ্যাঞ্জাম পার্টি দমে না। মিছিলের ভঙ্গিতে দুই হাত মুঠি করে উপরে তুলে 'গ্যাঞ্জাম পার্টি, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ' বলে মহা শোরগোলে এ ঘর থেকে ও ঘর ছুটে বেড়ায়।
গ্যাঞ্জাম পার্টির সব সদস্যরা বড় হয়ে গিয়েছে, পৃথিবীর এ কোণ ও কোণ চষে বেড়াচ্ছে, শুধু একজন ছাড়া। ও ঠিক সাত বছর বয়সে আটকে আছে। চোদ্দ বছর ধরে ঠিক এক জায়গায় আটকে আছে, গ্রামের এক শান্ত সবুজ কোণে। টলটলে শ্যামলা মুখে মোটা কাঁচের চশমা পড়া মায়া ভরা মুখটা সেই কবে মাটির নিচে চলে গেল, আর দেখা দেখি নেই। কত্ত ঝগড়া করেছি, চার চারটে মাসের বড় আমি, আমাকে তবু 'আপু' ডাকতে চাইত না ছেলেটা! নাম ধরে ডাকত!
কত্ত বড় স্পর্ধা!
মানাতে না পেরে শেষ মেষ কথাই বন্ধ করে দিতাম। সেই ঝগড়াটার আর মিটমাট হলো না। মাটির নিচে লুকিয়ে গেল জেদী ছেলেটা।
পনের বছর আগের কথা।
ঝম ঝম বৃষ্টিতে গ্রামের বাড়িতে উঠোন পিচ্ছিল। বিয়ে বাড়ি ভর্তি মানুষ। ছুটিতে নানুবাড়ি আসা গ্যাঞ্জাম পার্টির সদস্যদের বড় করুণ অবস্থা। এই বৃষ্টিতে শহুরে সবগুলো ছেলেমেয়েকে ঘরের ভিতর থাকার হুকুম জারি করা হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজার অনুমতি নেই। বারান্দায় বসে বসে কাহাতক আর টিনের চাল থেকে গড়িয়ে পড়া জলের সূতো গোণা যায়! শেষ মেষ না পেরে, সেই জেদী ছেলেটা সব আইনের মাথায় পানি ঢেলে রওনা দিল পূবের ঘরে। ওর 'খুব জরুরি' কি যেন আনা লাগবে। এই যাবে আর আসবে। পা টিপে টিপে যাওয়া শুরু করতেই পা পিছলে চিৎপটাঙ। ধবধবে হালকা নীল গেঞ্জি কালো কাদায় একাকার। বারান্দায় দাঁড়ানো সবাই স্টেডিয়ামের দর্শকের মত হো হো করে হেসে উঠলো।
পিছলে পড়ে ব্যাক সাইডে হালকার উপর পাতলা ব্যাথা, তার উপর সারা গায়ে কাদা, এখন আর চুপি চুপি কাজ সেরে আসা আসি নাই। ওর বাপ দেখলে... তারও উপর একদল দর্শকের হো হো হাসি। বেচারা, ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কাঁদবে কিনা ভাবতে বসে গেল। তখনই হলো অভাবনীয় কান্ডটা।
গ্যাঞ্জাম পার্টির একজন সমস্ত নিষেধাজ্ঞা থোড়াই কেয়ার করে লাফিয়ে নেমে গেল উঠোনে, তারপরে ইচ্ছা করেই পা ছড়িয়ে ধপাশ! এতক্ষন বৃষ্টির জন্য বন্দী গ্যাঞ্জাম পার্টির সদস্যদের মধ্যে হেব্বি সাড়া পড়ে গেল! বাকিরাও মুহূর্তেই ছুটে এসে নেমে গেল, উঠোনের উপরের পলি মাটির আস্তরে পা পিছলে সোজা চিৎ! বড়রা খবর পেয়ে বের হয়ে আসতে আসতে একেক জন আগা গোড়া কাদা মেখে ভূত।
আজও বৃষ্টি পড়ছে খুব। বৃষ্টিতে কাউকে ভিজতে দেখলেই আমার সেদিনের কথা মনে হয়। মনে আছে, মা বারান্দায় এসে সব দেখে হতভম্ব। আমরা ততক্ষনে মহা উৎসাহে 'পিছলা পিছলি' খেলছি। প্রতিবার নতুন উদ্দোমে 'ধপাশ'! ব্যাক সাইডের হালকা ব্যাথাকে পাত্তা দেয়া হচ্ছে না। মা বকা দিতে মুখ খুলতেই মধ্যবয়স্ক বড় মামা নেমে গেলেন কাদায়। নিজে একটা পিছলা খেয়ে বারান্দায় দাঁড়ানো মায়ের দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন, 'আয়!'
মা বলে, 'মাথা খারাপ?'
মামা এবার ধমকের সুরে, 'আয় নাম!'
মা হেরে যাওয়া সুরে বলে, 'আচ্ছা, আপনি এইটা কি বলেন? ভালো সেলোয়ার কামিজ পরা তো!'
মামা দ্বিতীয় কথাটা না শুনে হাত ধরে হেচকা টানে উঠোনে নামিয়ে আনলেন ছোট্ট বোনকে। তারপরে, বড়রা, ছোটরা সবাই মিলে সে কি পিছলা পিছলি!
একটু পরে নানু এসে চিল্লানো শুরু করলো, 'এমন করলে উঠোনের মাটি সরে যাবে, উঠোন নষ্ট হয়ে যাবে, ধান কে শুঁকাবে!' কিন্তু কে শুনে বুড়ির কথা! শেষ মেষ হাল ছেড়ে দিয়ে নানু নিজেও মজা দেখতে দাঁড়িয়ে গেলেন!
পিছলা পিছলি উৎসবের পরে কাদা মাখা ভূতেরা সব দল বেঁধে গিয়েছিলাম বাড়ির সামনের সবুজ পুকুরে গোসল করতে। তখনও ঝিম বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির মধ্যে পুকুরের পানিতে নামলে একটা মজা হয়। বৃষ্টির হিম শীতল পানির তুলনায় পুকুরের পানি তখন কুসুম গরম ঠেকে। আর নাক চেপে ধরে পানিতে ডুব দিলে অপার্থিব একটা ঝিমঝিমে শব্দ শোনা যায়। বৃষ্টির ঝিম ঝিম শুনতে শুনতে এখনও, কখনও সখনও সেই শব্দটা শুনতে পাই...
যখন ভাবতে বসি, তখন এতসব মরচে পড়া স্মৃতিকে মনে হয় অন্য কোন জীবনে ঘটে যাওয়া গল্পরাজি!
২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:০৮
ফারজানা১৬ বলেছেন: কীভাবে মারা গেল?
ধুর মিয়া, প্রথম পোষ্ট পড়েই গেলোতো মুডটা!
১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:১২
সন্ধ্যাবাতি বলেছেন: ইস, ওটা লিখা উচিত হয় নি না?
অনেক আগের কথা তো, ও একদম নিষ্পাপ অবস্থায় মারা গিয়েছে। এত আগের কথা যে এখন ওর কথা ভাবলে শুধু ছোট্ট ছেলেটাকে ভাবি, এত দিনে রীতিমত বড় ছেলে হতো, ওর ছোট্ট ভাইটার মত ফেইসবুকে মেয়ে বন্ধুদের নিয়ে আমার কাছে মাঝে মাঝে মিষ্টি ঝাড়ি খেত, এরকম মনে হয় না। ক্যান্সার হয়েছিল।
ও অনেক আগে 'নাই' হয়ে গিয়েছিল, এখন আর পৃথিবীর চলা বা থামাকে এফেক্ট করে না!
বৃষ্টিবিলাসের গল্প ভালো লাগে নাই?
৩| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:২২
শাপলা বলেছেন:
+
৪| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৩১
আবূসামীহা বলেছেন: বৃষ্টি ভেজা উঠোনে কাদা মাখামাখি খেলা; বর্ষার প্রচণ্ড দাপটকে উপেক্ষা করে স্কুলের মাঠে কাদা মাখা ফুটবল খেলা; প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বলে নয় পানিতে লাথি দিয়ে তাদের মুখে ছিটিয়ে দেয়া; অথবা স্কুল ছুটি শেষে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা না করে কাপড়ের কোচরে বই মুড়িয়ে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে ঝেড়ে দৌড়, আরো কত কি! সেসব এখন ঝাপসা স্মৃতি।
মনে করিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ।
আর সে ছেলেটির জন্য দু'আ। তোমার জন্যও।
৫| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৩২
ফারজানা১৬ বলেছেন: তবে আন্টিকে মামা যেভাবে বৃষ্টিতে নামতে বাধ্য করলেন, হি হি, পড়ে মজা পেয়েছি খুব!
৬| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ৮:০৫
ভাইটামিন বদি বলেছেন: ফ্রীডম কামস্ উইথ রেসপনসিবিলিটি.....
বড় হয়ে গেছি....অনেক ফ্রীডম....
কিন্তু ফ্রীডম এর সেই আনন্দ কি আছে...!!! জানিনা...
৭| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ৮:১৭
বজলু মহাজন বলেছেন: কারো কারো লেখা নিয়া নতুন কইরা মন্তব্য করনের কিছু নাই। খালি মনে হয় কেউ কেউ জন্ম থেইকা সোনার কলম হাতে নিয়া জন্মায়........
+
৮| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ৮:৪০
অ্যামাটার বলেছেন: নস্টালজিক....
ছোটবেলায় নানাবাড়িতে গেলে এরকম কত্তো মজা করতাম....
এখন তো আর যাওয়াই হয়না । +
৯| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ৯:১১
একেমন দেখা বলেছেন: প্রানবন্ত লিখা। শুধুই অতীতকে মেলে ধরি এমন লিখায়। ব্যস্ততার মাঝে অতীতকে তুলে ধরার সময় একদম পাই না। তাই বেশী ভাল লাগল.................এই আর কি।
+
১০| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ৯:১৩
চতুরভূজ বলেছেন: নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত করে দিলেন আমায়.....
+
১১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সকাল ১১:৩৮
পান্জেরী বলেছেন: +
১২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১:৫১
মামু বলেছেন: আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি
তোমাকে দিলাম....
শুধু শ্রাবন সন্ধাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম....
১৩| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সকাল ১০:১২
মুনিয়া বলেছেন:
মন খারাপ করে দিলে... তোমাকে ধরে আছাড় মারতে ইচ্ছা করছে....
যারা লুকিয়ে থাকে তাদের লুকিয়ে থাকতে দাও না কেন?
১৪| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সকাল ১০:৩৫
কবিতা বালিকা বলেছেন: ভাল লাগা ছেয়ে গেল
১৫| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:৫২
মাহবুবা আখতার বলেছেন: ইসসস... অনেক ছোট ছোট মিষ্টি মধুর ঘটনা মনে পড়ে গেল।
এত চমৎকার লেখো কি করে বল তো?
১৬| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৩:১২
মুনশী বলেছেন:
ভালা পুস্ট হৈছে।
১৭| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সকাল ৮:৪২
ইছামতীর পাড়ে বলেছেন: আহ্!
+
১৮| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৫:১৭
ঝড়ো হাওয়া বলেছেন: এতো বড় কেন ?
১৯| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৫:২১
আবু সালেহ বলেছেন: পড়তে পড়তে ফিরে গেলাম শৈশবে...+++
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:০৯
অনন্য মানুষ বলেছেন: আপনার লেখা পড়তে পড়তে আনমনা হয়ে যাচ্ছিলাম। মনে পড়ে যাচ্ছিল আমার ছোটবেলাকার স্মৃতি। ভাবি ছোটবেলার দিনগুলো কতইনা মজার ছিল। অথচ ছোট থাকতে ভাবতাম, বড়দের কত্ত মজা। বকার কেউ নেই, পড়াশুনার ঝামেলা নেই, যেথায় খুশি সেথায় ঘুরে বেড়াও, বাসায় ফিরতে দেরী হলে কেউ বকেনা। হায়!! সবই মরীচিকা।
ধন্যবাদ, সুন্দর প্রাণবন্ত লেখার জন্য।