![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্ল্যাকহোল কিঃ
আমাদের এই মহাবিশ্ব বস্তু ও বিকিরণ সমৃদ্ধ। একমাত্র কৃষ্ণ বস্তু (Dark matter) ছাড়া সকল বস্তুই বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গে বিকিরণ করে। তবে কোন্ তরঙ্গ দৈর্ঘে বেশি করবে তা নির্ভর করে বস্তুর তাপমাত্রার উপর। একটি বস্তু যদি দৃশ্যমান আলোক তরঙ্গ দৈর্ঘে বিকিরণ করে অথবা কোন উৎস থেকে আগত আলো প্রতিফলিত করে তাহলে বস্তুটিকে আমরা খালি চোখেই দেখতে পাই। যদি আলোক তরঙ্গ বিকিরণ না করে অন্যান্য তরঙ্গে বিকিরণ করে তাহলে বস্তুটি পর্যবেক্ষণের জন্য আমাদের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু কোন বস্তু যদি আদৌ বিকিরণ না করে, কিংবা অন্য কোন উৎস থেকে আগত বিকিরণ প্রতিফলিত না করে? তখন কিন্তু বস্তুটির সঙ্গে যোগাযোগ করার কোন পথ খোলা থাকে না। বস্তুটি তখন আর দেখা যায় না। স্থান-কালের বুকে হারিয়ে যায়। মহাকাশের বুকে এরূপ কিছু কিছু অঞ্চল আছে যেখান থেকে কোনরূপ বিকিরণ আসে না, বা কোন প্রকার তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে না। বর্হিজগতের সঙ্গে সম্পুর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে আত্মগোপণ করে থাকে। স্থান-কালের বুকে আত্মগোপণ করে থাকা এইসব অঞ্চলকে বলা হয় ব্ল্যাকহোল (Black Hole) বা কৃষ্ণগহবর। যেহেতু কোন বিকিরণ করে না তাই ব্ল্যাক বা কৃষ্ণ। আশ্চর্যের বিষয়, ব্ল্যাকহোলের বাস্তব অস্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও তাকে সনাক্ত করা যায় না। স্থান-কালের বুকে লুকিয়ে থাকে। লুকোচুরি খেলার জন্য ব্ল্যাকহোল কিন্তু অতি চমৎকার জায়গা। ব্ল্যাকহোল সর্বগ্রাসী। প্রতিবেশে যা কিছু পায় তা সবই গ্রাস করে নেয়। কিছুই ফিরিয়ে দেয় না।
মানুষের ভ্রান্ত ধারণাঃ
অনেকে মনে করেন যে ব্ল্যাকহোল আমাদের আশেপাশেই ছড়িয়ে আছে। এমনকি অনেকে এও বিশ্বাস করেন যে বারমুডা ট্র্যায়াংগেল থেকে বিমান বা জাহাজের কথিত অন্তর্ধান রহস্যের কারণও এই ব্ল্যাকহোল।
বারমুডা ট্র্যায়াংগেল হল, উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিমাংশের ত্রিভুজ আকৃতির একটি অঞ্চল। কথিত আছে যে এই অঞ্চলের উপর দিয়ে কোন জাহাজ বা বিমান যেতে গেলেই রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়। এই অঞ্চলটি Devil's Triangle নামেও পরিচিত। সাধারণ বিশ্বাস যে, এইসব জাহাজ বা বিমান ব্ল্যাকহোল গ্রাস করে ফেলে। কিন্তু না, আমাদের আশেপাশে কোন ব্ল্যাকহোল নেই। সাম্প্রতিককালে (১৯৯৯ সালে) V4641Sgr ব্ল্যাকহোলটি আমাদের নিকটতম ব্ল্যাকহোল বলে ধারণা করা হয়। এর দূরত্ব এক হাজার ছয়শত আলোকবর্ষ।
ইতিহাসঃ
মহাবিশ্বের সবচাইতে রহস্যময় বস্তু হল ব্ল্যাক হোল। মহাবিশ্বের কিছু স্থান আছে যা এমন শক্তিশালী মহাকর্ষ বল তৈরি করে যে এটি তার কাছাকাছি চলে আসা যেকোন বস্তুকে একেবারে টেনে নিয়ে যায়, হোক তা কোন গ্রহ, ধুমকেতু বা স্পেসক্রাফট, তাই ব্ল্যাক হোল। পদার্থবিজ্ঞানী জন হুইলার এর নাম দেন ব্ল্যাক হোল। কেন? কারন ব্ল্যাক হোলের মহাকর্ষ বল এতই বেশি যে এর আকর্ষন থেকে এমনকি আলোও (ফোটন) বের হয়ে আসতে পারে না। ১৯১৬ সালে আইনস্টাইন তার জেনারেল রিলেটিভিটি তত্ত্ব দিয়ে ধারনা করেন ব্ল্যাক হোল থাকা সম্ভব। আর মাত্র ১৯৯৪ সালে এসে নভোচারিরা প্রমাণ করেন আসলেই ব্ল্যাক হোল আছে। এটি কোন সাইন্স ফিকশন নয়। জার্মান বিজ্ঞানী কার্ল শোয়ার্জস্কাইল্ড ১৯১৬ সালেই দেখান যেকোন তারকা ব্ল্যাক হোলে পরিণত হতে পারে। সূর্যের ব্যাসার্ধ (৮৬৪,৯৫০মাইল) যদি কমতে কমতে সঙ্কুচিত হয়ে ১.৯ মাইলে পরিণত হয় তাহলে সূর্যও ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে। তিনি ঘটনা দিগন্তের ব্যাসার্ধ মাপতে সক্ষম হন। ঘটনা দিগন্ত হল কোন এলাকা ব্যাপী ব্ল্যাক হোলের প্রভাব থাকবে সেই এলাকার ব্যাসার্ধ। বিজ্ঞানীরা প্রথম Cygnus X-1 নামক তারকারাজি থেকে মাত্রাতিরিক্ত এক্সরে রেডিয়েশন বেরুচ্ছে খেয়াল করেন। ১৯৭১ সালে বিশ্বের প্রথম এক্সরে স্যাটেলাইট এই এক্সরে রেডিয়েশনের মূল সূত্র বের করে হতবাক হয়ে দেখেন এটা একটা অতি বৃহৎ কিন্তু অদৃশ্য বস্তু থেকে আসছে। চতুর্মাত্রিক মহাবিশ্বের দ্বিমাত্রিক চিত্রায়ন করার চেষ্টা ব্ল্যাক হোলের একটা বিশেষত্ব হচ্ছে এর
চারপাশে যখন আকর্ষিত গ্যালাক্সি এসে পড়ে তখন এটি গ্যালাক্সি বা যেকোন মহাজাগতিক
বস্তুকে স্পাইরাল একটা ওয়ে(WAY) তে শুষে নিতে থাকে। এটা অনেকটা এমন যে একটা টেবিলের মাঝখানে ফুটো করে সেই ফুটোটা যদি টেবিলের লেভেল থেকে একটু নিচে থাকে তাহলে একটা বল
টেবিলে ছেড়ে দিলে তা ঘুরতে ঘুরতে সেই ফুটোতে পতিত হবে একসময়। ব্ল্যাক হোল একটা গ্যালাক্সিকে শুষে নিচ্ছে ব্লাক হোল আসলে মৃত তারকা। তারকা মানে হল উজ্জ্বল নক্ষত্র। যাদের আলো আছে। যেমন – সূর্য। ভারতের অসাধারন মেধাসম্পন্ন বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর সুব্রাহ্মন কোন তারা ব্লাক হোল হতে পারে তার
একটা সীমা ঠিক করে দিয়েছেন। তা হল সুর্যের ভরের ১.৫ ভাগ বেশি ভরের সব তারা নিজেদের জ্বালানী শেষ হয়ে গেলে নিজেদের ভরে নিজেরাই সঙ্কুচিত হয়ে সসীম আয়তন কিন্তু অসীম ঘনত্বের ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে। বাকিরা পালসার বা নিউট্রন তারকা হবে।
আজ এ পর্যন্তই...আগামীতে ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানানো হবে। সাথেই থাকুন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
©somewhere in net ltd.