নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পৃথিবীর সন্তান।

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন

এই ব্লগের সকল প্রকার তথ্য কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে ।

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি নিয়মিত ভুলে যাই। নিয়ম করে ভুলে যাই । কিন্তু আমার মস্তিকের কিছু অংশে আমার নিয়ন্ত্রণ নেই।

১২ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:১৯

তিতাস আমার এলাকার নদী। তাই কিছুটা সংকোচহীন ভাবেই বলতে হয়। দেশের শতাধিক নদীর মাঝেও এই নদীর নামই আমার হৃদয়ে একটা ভিন্ন উম্মাদনা সৃষ্টি করে । আমাদের এলাকার এক বড় বোন পুকুর পাড়ে দাড়িয়ে গড়গড় করে এই কবিতাটি পড়ত। পাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে এই কবিতাটা কতবার পড়েছে, তা সে নিজেও বলতে পারবে না।

আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।
নদীর কাছে গিয়েছিলাম, আছে তোমার কাছে ?
-হাত দিওনা আমার শরীর ভরা বোয়াল মাছে।
বললো কেঁদে তিতাস নদী হরিণবেড়ের বাঁকে
শাদা পালক বকরা যেথায় পাখ ছড়িয়ে থাকে।

তখনো আমরা এই নিয়েই গর্ব করি এই কবিতার কবি আমাদের এলাকার। কবিতা নয় শুধু এলাকার কবি বলে হয়ত একটা বিশেষ আগ্রহ ছিল তার প্রতি। একটু বড় হবার পর গণগ্রন্থাগারে আল-মাহমুদের কবিতার বই পেয়ে যাই।

তারপর থেকে এখনো তিতাসের নাম অথবা আমার এলাকার কথা থাকলে আমি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে সেই কবি, কবিতাকে একটু বিশেষ ভাবে দেখি।

ভর দুপুরে -আল মাহমুদ
......
......
মেঘনা নদীর শান্ত মেয়ে তিতাসে
মেঘের মত পাল উড়িয়ে কী ভাসে!
মাছের মত দেখতে এ কোন পাটুনি
ভর দুপুরে খাটছে সখের খাটুনি।
ওমা এ-যে কাজল বিলের বোয়ালে
পালের দড়ি আটকে আছে চোয়ালে

মাঝে মাঝে রাতে বাসায় ফেরা পথে আমি স্কুটিতে বসে নিজে নিজে জাবর কাটি

কাঁপুনি -আল মাহমুদ
......
......
আমি চলে গেলে এ পারে আঁধারে কেউ থাকবেনা আর
সব ভেসে গেছে এবার তবে কি ভাসাবো অন্ধকার?
আলো-আঁধারির এই খেলা তবে আমাকে নিয়েই শেষ
আমার শরীর কাঁপছে যেমন কাঁপছে বাংলাদেশ।

আমাদের শিল্পজ্ঞানবোধ সম্পন্ন রুবি প্রায়ই আড্ডায় হরহর করে পড়ত। তবে দেশে ছেড়ে দেওয়ার আগে রুবির হাজার আক্ষেপের মধ্যে একটা ছিল, এই একটা জুইতের লোককে তোর বামাতি বলে প্রতিভার বালাৎকার করে দিলি। তারপরও ফেবুতে রুবিকে দেখলেই আমার বলতে ইচ্ছে হয়, রুবি একবার পড়তো কবিতাটা।

রবীন্দ্রনাথ -আল মাহমুদ
........
..........
.............
বুঝি না, রবীন্দ্রনাথ কী ভেবে যে বাংলাদেশে ফের
বৃক্ষ হয়ে জন্মাবার অসম্ভব বাসনা রাখতেন।
গাছ নেই নদী নেই অপুষ্পক সময় বইছে
পুনর্জন্ম নেই আর, জন্মের বিরুদ্ধে সবাই
শুনুন, রবীন্দ্রনাথ আপনার সমস্ত কবিতা
আমি যদি পুঁতে রেখে দিনরাত পানি ঢালতেথাকি
নিশ্চিত বিশ্বাস এই, একটিও উদ্ভিদ হবেনা
আপনার বাংলাদেশ এ রকম নিষ্ফলা, ঠাকুর!

রাজনীতিতে ভিন্নমত হওয়ার পরও নিসংকোচে এই কবির কবিতা পড়ে যাই কারণ তার কবিতায় মনে হয় আমার কথাই বলছে। যেমন

প্রত্যাবর্তনের লজ্জা -আল মাহমুদ

শেষ ট্রেন ধরবো বলে এক রকম ছুটতে ছুটতে স্টেশনে পৌঁছে দেখি
নীলবর্ণ আলোর সংকেত। হতাশার মতোন হঠাৎ
দারুণ হুইসেল দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে।
যাদের সাথে শহরে যাবার কথা ছিল তাদের উৎকণ্ঠিত মুখ
জানালায় উবুড় হয়ে আমাকে দেখছে। হাত নেড়ে সান্ত্বনা দিচ্ছে।
আসার সময় আব্বা তাড়া দিয়েছিলেন, গোছাতে গোছাতেই
তোর সময় বয়ে যাবে, তুই আবার গাড়ি পাবি।
আম্মা বলছিলেন, আজ রাত না হয় বই নিয়েই বসে থাক
কত রাত তো অমনি থাকিস।
আমার ঘুম পেলো। এক নিঃস্বপ্ন নিদ্রায় আমি
নিহত হয়ে থাকলাম।
অথচ জাহানারা কোনদিন ট্রেন ফেল করে না। ফরহাদ
আধ ঘণ্টা আগেই স্টেশনে পৌঁছে যায়। লাইলী
মালপত্র তুলে দিয়ে আগেই চাকরকে টিকিট কিনতে পাঠায়। নাহার
কোথাও যাওয়ার কথা থাকলে আনন্দে ভাত পর্যন্ত খেতে পারে না।
আর আমি এঁদের ভাই
সাত মাইল হেঁটে শেষ রাতের গাড়ি হারিয়ে
এক অখ্যাত স্টেশনে কুয়াশায় কাঁপছি।
......
.......
......
আর আমি মাকে জড়িয়ে ধরে আমার প্রত্যাবর্তনের লজ্জাকে
ঘষে ঘষে
তুলে ফেলবো।

ইদানিং আমাকে কবির প্রকৃতি নিয়ে কবিতা হৃদয়ের শূণ্যতাগুলো আরো বাড়িয়ে দেয়। তারচেয়ে বরং ছড়াতে সুখ পাই মাঝে মাঝে

ট্রাক ! ট্রাক ! ট্রাক !
শুয়োরমুখো ট্রাক আসবে
দুয়োর বেঁধে রাখ।
কেন বাঁধবো দোর জানালা
তুলবো কেন খিল ?
আসাদ গেছে মিছিল নিয়ে
ফিরবে সে মিছিল।
ট্রাক ! ট্রাক ! ট্রাক !
ট্রাকের মুখে আগুন দিতে
মতিয়ুরকে ডাক।
কোথায় পাবো মতিয়ুরকে
ঘুমিয়ে আছে সে !
তোরাই তবে সোনামানিক
আগুন জ্বেলে দে।

মাঝে বিক্ষিপ্ত মস্তিকে আমার অজান্তে বাজতে থাকে

আমি আর আসবো না বলে -আল মাহমুদ
......
......
আর আসবো না বলে
সংগঠিত করে তুলি মানুষের ভিতরে মানুষ।
কথার ভেতরে কথা গেঁথে দেওয়া, কেন?
আসবো না বলেই।
বুকের মধ্যে বুক ধরে রাখা, কেন?
আর আসবো না বলেই।
আজ অতৃপ্তির পাশে বিদায়ের বিষণ্ণ রুমালে
কে তুলে অক্ষর কালো, ‘আসবো না’
সুখ, আমি আসবো না।
দুঃখ, আমি আসবো না।
প্রেম, হে কাম, হে কবিতা আমার
তোমরা কি মাইল পোস্ট না ফেরার পথের ওপর?


প্রিয় আল-মাহমুদ। লোকে যে যাই বলুক। এখনো লক্ষ লক্ষ রুবি মস্তিক জুড়ে তুমি আছো। দেশ ছাড়ার আগে রুবিরা অনেক কিছুর সাথে তোমার কবিতা বই নিয়ে যায়। আল মাহমুদের রচনাবলি ১৩ খন্ডের প্রকাশিত হবে সেই খবর ঢাকায় আমি জানার আগেই রুবি নিউইয়ক থেকে টাকা পাঠায়। ঐতিহ্য চিনিস তো? ফেবুতে লিখে দেয়। জানি তুই সব ভুলে যাস। এটা ভুলে গেলে তোর খবর আছে।

আমি নিয়মিত ভুলে যাই। নিয়ম করে ভুলে যাই । কিন্তু আমার মস্তিকের কিছু অংশে আমার নিয়ন্ত্রণ নেই। সেখানে বাজতে থাকে।

জেলগেটে দেখা - আল মাহমুদ
....
.......
মাগুর মাছের ঝোল ছড়িয়ে দিতে দিতে কানের কাছে মুখ আনলে ,
অমুক বিপ্লবী আর নেই
আমি মাথা নামালাম । বললে , ভেবোনা ,
আমরা সইতে পারবো । আল্লাহ , আমাদের শক্তি দিন ।
তারপর আমরা পরস্পরকে দেখতে লাগলাম ।

যতক্ষণ না পাহারাদারদের বুটের শব্দ এসে আমাদের
মাঝখানে থামলো ।

সৌরভ ভাই একবার বলেছিলেন বাংলার কবিতার রস পেতে হলে আল মাহমুদের ঘাটে জল খেতেই হবে। সে তুমি যতই কবি আর কবিতা বুঝ না কেন।

সৌরভ ভাই
তোমার ভালবাসার কবির জন্মদিনে আমাকে বলতেই হয়।রাজনীতিতে মতের যতই অমিল যাই থাক না কেন। তোমার প্রিয় কবি আল মাহমুদকে কবি হিসেবে ভালবাসি,শ্রদ্ধা রইল তার প্রতি।

সে ভালবাসা থেকেই আজ সকালে পড়া তারই কবিতা

এ বিষণ্ণ বর্ণনায় আমি কি অন্তত একটি পংক্তিও হবো না
হে নীলিমা, হে অবগুণ্ঠন?
লোকালয় থেকে দূরে, ধোঁয়া অগ্নি মশলার গন্ধ থেকে দূরে
এই দলকলসের ঝোপে আমার কাফন পরে আমি কতকাল
কাত হয়ে শুয়ে থেকে দেখে যাবো সোনার কলস আর বৃষের বিবাদ?

শুভ জন্মদিন #আল_মাহমুদ

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৪০

তারেক ফাহিম বলেছেন: আল-মাহমুদে কবিতা ছোটদের বেশ প্রিয়।

মায়েরা বাচ্চাদের পড়াতে গিয়ে বড়দেরও প্রিয় হয়ে উঠে B-)

১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:০৭

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন বলেছেন: আমার যে কেন হল

২| ১২ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: কবি আল মাহমুদ এর কবিতা আমার খুব ভালো লাগে ।
তার উপন্যাসও আমি মুগ্ধ হয়ে পড়ি। বিশেষ করে 'কাবিলের বোন' আর ' উপমহাদেশ'।

১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:০৮

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন বলেছেন: আপনি যে কি পড়েন না। তাই বলা মুসকিল। আপনার পরিধি ব্যাপক। ধন্যবাদ আপনাকে

৩| ১২ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৫

নীল শিখা বলেছেন: Mind blowing

১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:০৮

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ১৩ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৪০

আলআমিন১২৩ বলেছেন: আমারও গ্রামের বাড়ি তিতাস পাড়ে।তবে সারা শৈশব ঘুরে বেড়িয়েছি বিভিন্ন যায়গায়। কবি ও লেখক কে শুভেচ্ছা।

১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:০৮

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন বলেছেন: আমার বাড়িও সেখানে

৫| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:৩০

অন্তরন্তর বলেছেন: আমার গ্রাম তিতাসের পাড়ে। যে হরিণবেড়ের বাঁকে তিতাস নদী কবি লিখেছেন সেই হরিণবেড় আমার নানা বাড়ি। নস্টালজিক করে দিলেন। কবির জন্মদিনে শুভেচ্ছা এবং আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর করে লিখার জন্য।

১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:১০

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার স্মৃতিতে নাড়া দেওয়ার জন্য

৬| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৫২

আখেনাটেন বলেছেন: কবির কিছু কবিতা বাংলা কবিতার জগতে অনন্য সংযোজন। 'সোনালী কাবিন' কাব্যগ্রন্থ তো বাংলা কবিতা প্রেমিকদের অবশ্য পাঠ্য।

ভালো লাগল লেখাটুকু পড়ে।

১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:১১

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.