![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“উসুল এ সাব’আ” বা সপ্তকর্ম পদ্ধতি
বর্তমান অতি কামনা ও কঠোর হাড়ভাঙা পরিশ্রমের যুগে সহজসাধ্য উপায়ে মানবাত্মার নফস বা কুপ্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণ ও রূহে ইনসানীর সুপ্রবৃত্তির জাগরণ তথা কলবকে আলোকিত করে চারিত্রিক শুদ্ধির মাধ্যমে খোদায়ী সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের মানসে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের আধ্যাত্মিক শরাফতের প্রতিষ্ঠাতা, মাইজভাণ্ডারী তরীকার প্রবর্তক, খাতেমুল অলদ, গাউসুল আজম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী(কঃ) সহজে পালনীয় একটি কর্মপদ্ধতির নির্দেশ দেন। রিপুর বিনাশের ত্রিবিধ উপায় বা ‘ফানায়ে ছালাছা’ ও সংসার মোহমুক্তির চতুর্বিধ পন্থা বা ‘মউতে আরবা’র সমন্বয়ে নির্দেশিত উক্ত পন্থাই ‘উসুলে সাব’আ’ বা সপ্তপদ্ধতি। উসূল এ সাব’আর পরিচয় প্রদানে অছি এ গাউসুল আযম সৈয়দ দেলাওর হোসেইন মাইজভাণ্ডারী(কঃ) তাঁর প্রখ্যাত ‘বেলায়েতে মোতলাকা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন-
“এই সপ্ত পদ্ধতি ইসলামী সূফী মতবাদ মতে ‘ফানায়ে নফছী’ বা প্রবৃত্তির বিনাশ এবং ‘বাকাবিল্লাহর’ বিভিন্ন উসুল বা পদ্ধতির মধ্যে তুলনামূলকভাবে সহজসাধ্য ও ঝামিলামুক্ত। অন্যান্য বিশ্বধর্মীয় সাধনাসিদ্ধির নিয়মানুবর্তিতার সঙ্গে বিরোধাত্মক নহে বরং উৎসাহবর্ধক, বাস্তববোধ জাগরণকারী, বিশ্বসমস্যার সমাধানকারী মুক্তির দিশারী। কর্মে ও মর্মে মানবতার উন্নয়নকারী, ইহা পীরী ব্যবসাদারীর সমর্থক নহে বরং নেহায়েত নিষ্কাম খোদা অনুরাগী। এই পীরী ব্যবসাদারী পতন যুগে ইহা নৈতিক ধর্মের জীবনদানকারী ধ্রুবতারা।
মাইজভাণ্ডারী দর্শনের মূল নির্যাসঃ “উসূল এ সাব’আ” বা সপ্ত পদ্ধতি
ফানায়ে ছালাছা
১। ফানা আনিল খাল্ক
‘কাহারো নিকট কোনরূপ উপকারের আশা বা কামনা না করা’ - এতে মানব মন আত্মনির্ভরশীল হয় এবং স্রষ্টাপ্রদত্ত স্বীয় সামর্থ্য ও শক্তির প্রতি যথাযথ আস্থা জন্মে।
২। ফানা আনিল হাওয়া
‘অনর্থ পরিহার করা’ অর্থাৎ যা না হলেও চলে এরূপ কথাবার্তা, কাজকর্ম পরিহার করা। এতে জীবনযাত্রা সহজ ও ঝামেলামুক্ত হয়।
৩। ফানা আনিল এরাদা
‘খোদায়ী ইচ্ছাশক্তিকেই প্রাধান্য দেয়া অর্থাৎ খোদায়ী ইচ্ছাশক্তির কাছে নিজের ইচ্ছা বা বাসনাকে তুচ্ছ বা বিলীন করা’
মউতে আরবা বা চতুর্বিধ মৃত্যু
৪। মউতে আবয়্যাজ(সাদা মৃত্যু)
‘উপবাস এবং সংযমের মাধ্যমে আত্মার উজ্জ্বলতাকে বৃদ্ধি করা’
৫। মউতে আসওয়াদ(কালো মৃত্যু)
‘সমালোচনাকারীর সমালোচনাকে সহজভাবে গ্রহন করে আত্ম
সমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির প্রচেষ্টায় রত হওয়া’
এতে যেরূপ একদিকে সত্য পথ যাত্রী নিজের দোষ ত্রুটি অনুধাবনে সমর্থ হন, অপরদিকে দোষের অনুপস্থিতিতে মানব হৃদয়ে পরমতসহিষ্ণুতা এবং স্রষ্টার প্রতি সন্তুষ্টি সৃষ্টির মাধ্যমে এক রূহানী শক্তির সমাবেশ ঘটে।
৭। মউতে আহমর(লাল মৃত্যু)
‘কামভাব ও লালসা হতে অন্তরকে মুক্ত ও পবিত্র করা’ - এর মাধ্যমে বেলায়ত অর্জিত হয়।
৮। মউতে আখজার(সবুজ মৃত্যু)
‘বিলাসিতা ও আভিজাত্য পরিহারপূর্বক নির্বিলাস জীবন যাপনের মাধ্যমে স্রষ্টার অনুসন্ধান করা’ - এতে মানব অন্তরে স্রষ্টার প্রেম ভালবাসা ব্যতিরেকে অন্য সকল কামনা-বাসনা দূরীভূত হয়।
বিশ্বের সকল ধর্মানুসারীদের আচার ধর্মে হস্তক্ষেপ ব্যতিরেকে নৈতিক দীক্ষার আহবানে সমস্ত মানবজাতিকে তৌহিদ বা খোদায়ী একত্ববাদের সমাবেশস্তরে একত্রিত করতে সমর্থ হযরত আকদাসের এই বিশ্বত্রাণকর্তৃত্ববাণী- উসুলে সাব’আ। অছি এ গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারীর ভাষায়-
“হযরত আকদাসের এই সপ্ত পদ্ধতি বেলায়ত রহস্য, তাঁহার বিশ্ব ত্রাণকর্তৃত্ব সম্পন্ন গাউসিয়তের এক উজ্জ্বল নজীর। হাফেয সিরাজী (রঃ)এর পরিভাষায় বলিতে হয়- তোমার চক্ষের পলক যখন বিশ্ববিজয়ী অসি বাহির করিল, তখন দিল ঘায়েল জিন্দা মানুষগুলি একের উপর অপর ঝাঁপাইয়া পড়িতে আরম্ভ করিল।
তথ্যসূত্রঃ বেলায়তে মোতলাকা (অছি এ গাউসুল আজম সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী)
©somewhere in net ltd.