নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাখাওয়াত হোসেন সুজন

সাখাওয়াত হোসেন সুজন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পোস্টমর্টেম আয়নাবাজি

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৫

এ মুহূর্তে ঢাকাই চলচ্চিত্র যে ‘আয়নাবাজি’র ভেলকিতে মাতোয়ারা সে কথা নতুন করে বলার কিছু নেই।মূলত সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারণা সিনেমাটিকে তরুণ দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় করে তুলেছে। এক্ষেত্রে ছবির বিচিত্র সব প্রচারণাকে সাধুবাদ জানাই। আসুন দেখি কি আছে এই ছবিতে। অমিতাভ রেজা চৌধুরীর প্রথম সিনেমা আয়নাবাজি, তিনি বিজ্ঞাপন এবং নাটকে অত্যন্ত সুনামের সাথে তার কাজের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন কিন্তু সিনেমাতে অমিতাভ রেজা তার নামের প্রতি সবিচার করতে পারেননি বলে আমার একান্ত ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়েছে। ফিল্ম প্রযোজক হিসেবে গাউসুল আলম শাওন ও আদিল ভাইকে অনেক অনেক সাধুবাদ এবং বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই তাদের এই সফল চেষ্টার জন্য, আশা করছি তাদের এই সফলতার পর আরও অনেক নতুন নতুন প্রযোজ্ক বাংলা সিনেমাতে তাদের অর্থের বিনিয়োগ করবেন।
অভিনয়ে চঞ্চল চৌধুরী দশে দশ পাবেন চঞ্চলের অভিনয়ের স্কেল মাপা এই ছবিতে কষ্টের। এই ছবিতে চঞ্চল অনেক গুলো চরিত্রকে অনুকরণ করছেন। পার্থ বড়ুয়ার ক্যারেক্টারের গুরুত্ব থাকলে ও মনে হলো তিনি সেটা দেখানোর সুযোগ কম পেয়েছেন। তবে তিনি সাবলীল ছিলেন। লুৎফর রহমান জর্জ,বৃন্দাবন দাস-সহ প্রত্যেকেই অসাধারণ অভিনেতা। নাবিলাকে হৃদি চরিত্রে সিম্পল উপস্থাপন অনেক ভালো লেগেছে। ছবিটির সিনেমাটোগ্রাফি একদম আলাদা লেভেলের হয়েছে। রাশেদ জামান রিয়েলি ট্যালেন্ট । এরিয়াল শট সহ প্রত্যেকটা সিনই আমার দুর্দান্ত লেগেছে। কাহিনী সর্বোপরি ভালো ছিল কিন্তু ডায়লগে দুর্বলতা ছিল। চিরচেনা ঢাকাকে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপনের জন্য অব্যশই ডিরেক্টারকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। বুড়িগঙ্গা নদীতে যে এখনো অনেক লুকায়িত সৌন্দর্য আছে তিনি দর্শকদের সামনে তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।ছবিটির সূচনা সংগীতে অর্ণবের ‘প্রাণের শহর’ গানটির দৃশ্যধারণের কাজেও ছিল বেশ স্নিগ্ধতা ও মায়াময়তার ছোঁয়া। এছাড়া চঞ্চল-নাবিলার চুম্বন দৃশ্যটাকে আবেগময় ও রোমান্টিকভাবে পর্দায় উপস্থাপনের কৃতিত্ব অনেকাংশেই যাবে চিত্রগাহকের ঝুলিতে। ছবিটির কারিগরি দিকটি ছিল বেশ নিখুঁত। শব্দ ও সম্পাদনার কাজে ছিল দক্ষতার ছাপ। ছবির সুন্দর প্রিন্ট, স্পষ্ট সংলাপ ও আহব-শব্দের ব্যবহার ছিল উন্নতমানের। বেশ কিছু দৃশ্যে ড্রোনের ব্যবহার ছিল চমকপ্রদ। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্যামেরা অ্যঙ্গেলের কারণে সিনেম্যাটিক ফিলের জায়গায় দৃশ্যগুলোকে টিভি নাটকের মতো মনে হয়েছে।
এবার আসি আমার চোখে ছবির যে দুর্বলতাগুলো ধরা পরেছে।
১। নাবিলা যখন কেক নিয়ে চঞ্চলের বাসায় আসে তখন কোন বৃষ্টি ছিল নাহ। কিন্তু রুমের ভেতরে আসার পর জানালা দিয়ে বাহিরের বৃষ্টির দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল। ইন্সারট দৃশে দেখানো হয় পাশের বাড়ির ছাদে বাচ্চারা খেলা করছে। নাবিলা রুম থেকে ছাঁদে যাওয়ার সময় ও জানালাতে বৃষ্টি ছিল অথচ ছাঁদে কোন বৃষ্টি ছিল নাহ।
২। আলুপুরিওয়ালা কি আয়নার সব আগে থেকেই জানত?
৩। আয়নার দ্বিতীয়বার জাহাজ ভ্রমণের সময় চুল ছোট ছিল। কিন্তু জাহাজ যাত্রা শেষে গোসলের সময় চুল বড় হয়ে গেল কিভাবে?
৪। কনডেম সেলে কি তালা দেওয়া হয় না?দেওয়া হলেও কারো কাছে দাম না পাওয়া সাধারণ পুলিশের কাছে কি করে চাবি থাকে ?
৫। পার্থ দার ঘন ঘন মদ্যপান দৃশ্যগুলোর অবতারণা নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। আরেকটা ব্যাপারে খটকা লেগেছে,যে লোক প্রতিদিন আয়নার বাসার সামনে এসে সারাদিন দাড়িঁয়ে থাকে,আয়নার বাসা খোজাঁ এবং বদলানোর সময়ই তাকে অনুপস্থিত থাকতে দেখা যায়।
সর্বোপরি বলতে পারি বাংলা সিনেমার নতুন যে ধারার শুরু হয়েছে একে এখন সকলে মিলে ধরে রাখা উচিত। আয়নাবাজির মাধ্যমে আবারো প্রমান হয়েছে যে, আমাদের দেশের জনগন যে হলমুখী হয়েছে।আমরা দর্শকরা এখনো ভালো সিনেমার কাঙ্গাল। ভালো সিনেমা পেলে আমরা বেশী দাম দিয়ে টিকেট কেটে হলে গিয়ে মুভি দেখতে ও ভাবি না।
সর্বশেষ আমিতাভ রেজা চৌধুরীকে শুভেচ্ছা জানাই তার প্রথম চলচ্চিত্রের সফলতা প্রাপ্তিতে।
বাংলা চলচ্চিত্রের জয় হোক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.